বিশেষ সংবাদ
অগ্নি নিরাপত্তা: ঢাকার অভিজাত এলাকার রেস্টুরেন্টগুলো কতটা নিরাপদ?
রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত ধানমন্ডি, গুলশান ও বনানী এলাকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য রেস্টুরেন্ট। যেগুলোর বেশিরভাগই করা হয়েছে বহুতল ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব এলাকার বেশির ভাগ রেস্টুরেন্টে নেই অগ্নি নিরাপত্তা। লিফট ও একটি সিঁড়ি ছাড়া জরুরি বহির্গমনে আর কোনো সিঁড়িও নেই অধিকাংশের।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। বেইলি রোডের ঘটনায় মানুষের মধ্যে এখন একটি আতঙ্ক কাজ করছে।
আরও পড়ুন: রেস্টুরেন্টে খেতে লাগবে ভ্যাকসিন কার্ড: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
ধানমন্ডি-গুলশান-বনানীর বিভিন্ন এলাকায়ও যত্রতত্র গড়ে উঠেছে এমন বহু রেস্টুরেন্ট। অগ্নি নিরাপত্তা লাইসেন্স ছাড়া বছরের পর বছর চলছে এসব রেস্টুরেন্ট। আবাসিক ভবনগুলো বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এলাকার বাসিন্দা ও রেস্টুরেন্টগুলোতে খেতে আসা অনেকেই বলছেন, বেইলি রোডের আগুনের ঘটনার মতো অগ্নিকাণ্ডের আতঙ্ক আছে ধানমন্ডি-গুলশান-বনানী এলাকাতেও। আগে থেকে ব্যবস্থা না নিলে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, এসব এলাকার প্রায় প্রতিটি অলিগলিতে রয়েছে ক্যাফে ও রেস্টুরেন্ট। কিছু ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে রয়েছে রেস্তোরাঁ। এসব ভবনের প্রায় পুরোটাই কাচে ঘেরা। ফলে, বাইরে থেকে ভেতরে আলো-বাতাস ঢোকার কোনো ব্যবস্থা নেই। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে বা আগুন লাগলে কাচ ভাঙা ছাড়া ভেতরে পানি দেওয়ারও কোনো উপায় নেই।
এসব ভবনে ছোট পরিসরে সিঁড়ি রয়েছে। ওই সিঁড়ি দিয়ে জরুরি বহির্গমনের সুযোগ খুব কম। কারণ সিঁড়িগুলোতে হয় বিভিন্ন মালামাল রাখা, নয়তো রেস্টুরেন্টগুলোর ভেতর থেকে সিঁড়িতে যাওয়ার গেট বন্ধ থাকে। সেক্ষেত্রে রেস্টুরেন্টগুলোতে কখনো আগুনের ঘটনা ঘটলে রেস্টুরেন্টে খেতে আসা মানুষ বুঝতেই পারবে না সিঁড়ি কোনদিকে আছে।
গুলশানে বসবাসকারী ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান ইউএনবিকে বলেন, ‘বেইলি রোডের ঘটনার পর গুলশান-বনানী এলাকায় রেস্টুরেন্টেগুলোতে পরিবার নিয়ে যেতে চাইলে আতঙ্ক কাজ করছে। কোন রেস্টুরেন্টে ফায়ার সেফটি আছে বা নেই আমাদের জানা নেই।’
একই ভাবে বনানীতে বসবাসকারী আরেক ব্যবসায়ী দিদারুল হক সানি ইউএনবিকে বলেন, ‘বেইলি রোডের ঘটনার পর আপাতত রেস্টুরেন্টে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। কারণ অগ্নি নিরাপত্তা এখন বড় একটি ইস্যু। গুলশান-বানানী এলাকায় রেস্টুরেন্টে নেই ফায়ার সেফটি।এ বিষয়ে রাজউক দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সঠিকভাবে তদারকি করলে সব রেস্টুরেন্টে ফায়ার সেফটি মানতে বাধ্য হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান ইউএনবিকে বলেন, ‘ধানমন্ডি-গুলশান-বনানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রায় প্রতিটি অলিগলিতে রয়েছে ক্যাফে ও রেস্টুরেন্ট। কিছু কিছু ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে রয়েছে রেস্টুরেন্ট। এসব ভবনের প্রায় পুরোটাই কাচে ঘেরা। ফলে, বাইরে থেকে ভেতরে আলো-বাতাস ঢোকার কোনো ব্যবস্থা নেই। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে বা আগুন লাগলে কাচ ভাঙা ছাড়া ভেতরে পানি দেওয়ারও কোনো উপায় নেই।’
আদিল বলেন, বেইলি রোডের ঘটনার পর মানুষের মধ্যে একটি আতঙ্ক কাজ করছে। বেইলি রোডের মতো আর পুনরাবৃত্তি না হয়, সেজন্য রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনি ব্যবস্হা নিতে হবে। না হলে আবার আরেক জায়গায় আগুনের ঘটনা ঘটবে।
তিনি আরও বলেন, বেইলি রোডের মতো ধানমন্ডি, গুলশান ও বনানী এলাকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য রেস্টুরেন্ট। এসব রেস্টুরেন্টে ফায়ার সেফটি আছে কি না রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে রেস্টুরেন্টের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ ৩
ড. আদিল বলেন, ‘বহুতল ও বিশেষ ব্যবহারের ভবনে অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফায়ার এক্সটিংগুইশার, ফায়ার এলার্ম এগুলো ছিল কি না তা তদারকি করা প্রয়োজন। ভবনের সেফটি অডিট করানোর উদ্যোগ নিতে হবে।’
‘অনেক ভবন নিয়ম অনুযায়ী ২টি সিঁড়ি রাখলেও ফায়ার বহির্গমনের সিঁড়িটা অনেকে গুদামঘর হিসেবে ব্যবহার করে। এক্ষেত্রে জরুরি বহির্গমনের সিঁড়ি অন্য কোনো কাজে বা উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিরৎসাহিত করতে হবে।’
অনেকেই ভবনের ব্যবহার পরিবর্তন করে অ-আবাসিক ক্যাটাগরিতে ফেলে। এই “অ-আবাসিক” নাম ব্যবহার করে আবাসিক ভবন বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে হবে বলে জানান অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান।
এ বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা ইউএনবিকে বলেছেন, বেইলি রোডের মতো যেন আর ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। সেসব রেস্টুরেন্টে ফায়ার সেফটি নেই সেগুলো আমরা ব্যবস্হা নেব। ফায়ার সেফটি নিশ্চিত করতে কাজ করছি।
চেয়ারম্যান বলেন, যেসব আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি। আবাসিক ভবনের নামে অনুমোদন নিয়ে সেখানে রেস্টুরেন্ট গড়ে তোলা হয়েছে, অথচ তাদের বাণিজ্যিক অনুমোদন নেই। এ বিষয়ে আমরা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, রাজউক থেকে নকশা অনুমোদন নেয় একভাবে আর বিল্ডিং করে নকশা বহির্ভূতভাবে। আবাসিক ভবন বাণিজ্যিক ব্যবহার করছে অনুমোদনের বাইরে। এসব বিষয়ে যখনই নজরে আসছে তখনই ব্যবস্হা নিচ্ছি। এ বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) থেকে জানা যায়, রাজধানীতে রাজউকের আওতায় ৫ লাখ ১৭ হাজার ভবন রয়েছে। এর মধ্যে অনুমোদন রয়েছে ২ লাখের। অনুমোদিত ভবনের মধ্যে ৯০ শতাংশ নকশার বিচ্যুতি ঘটিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: এক টাকার রেস্টুরেন্ট!
রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর গাফিলতির কারণেই বার বার আগুনের ঘটনা
রাজধানী ঢাকায় কয়েক দশক ধরেই ঢাকায় অগ্নিকাণ্ড গটে চলেছে। পর্যবেক্ষণ ও আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে বার বার প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর ক্রমাগত অবহেলা ও যথাযথ তদারকির অভাবের ফল এসব ঘটনা।
রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের নির্দেশনা পুরোপুরি না মেনে। এসব ভবনে অগ্নিসংকেতের ব্যবস্থা নেই। নেই পর্যাপ্ত পানি ও অগ্নিনির্বাপণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।
আরও পড়ুন: তালাক দেওয়ায় সাবেক স্ত্রীর গায়ে আগুন দিয়ে নিজেও পুড়ে মরল যুবক
আগুনের ঘটনায় গাফিলতির জন্য রাজউকসহ সংশ্লিস্ট সংস্থা, ভবন মালিকসহ যারা দায়ী তাদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত নজির সৃষ্টি করতে পারলে আগুনের ঘটনা কমবে। বিচারহীনতা সংস্কৃতির কারণে একটার পর একটা ঘটনা ঘটছে বলে নগর পরিকল্পনাবিদদরা মনে করেন।
প্রায় প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের পর তদন্ত কমিটি হয়। কিন্তু এসব তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেন বললেই চলে।
নানা অব্যবস্থাপনা ও ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল ভবন এবং রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার অনুমোদনের বাইরে ভবন ব্যবহার নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব কারণে নিমতলী, চূড়িহাট্টা, এফআর টাওয়ার, আরমানিটোলা, নিউমার্কেট, মগবাজার বিস্ফোরণ, গুলিস্তান ট্রাজেডিসহ একের পর এক হৃদয় বিদারক ঘটনার সাক্ষী হতে হয়েছে ঢাকার বাসিন্দাদের। সর্বশেষ এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে রাজধানীর বেইলি রোড ট্রাজেডি। নতুন করে মারা গেছেন ৪৬ জন। এসব প্রতিটি ট্রাজেডির পরেই সংশ্লিষ্ট সবারই মুখেই ঝুঁকিমুক্ত শহর গড়ার প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছুটেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সময়ের সঙ্গে আড়ালে চলে গেছে প্রতিটি ঘটনা।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে আগুনে পুড়েছে ৩টি ঝুটের গোডাউন
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান ইউএনবিকে বলেন, ‘আগুনের ঘটনায় ইমারত অনুমোদন ও তদারকির জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্হা, ভবন মালিকসহ যারা দায়ী তাদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে পারলে আগুনের ঘটনা কমবে, না হলে অতীতের মতো ছাড় দিলে একটার পর একটা ঘটনা ঘটবে।’
এসব অগ্নিকাণ্ডের দায় রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা, ভবন মালিকের পাশাপাশি জেনে শুনে ভাড়া নেওয়া দোকান মালিকদের নিতে হবে বলে জানান তিনি।
ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের মিশ্র ব্যবহার রাজধানীকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। পৃথিবীর কোথাও ঢাকার মতো মিশ্র ব্যবহারের উদাহরণ নেই। রাজউক বাইরের দেশের উদাহরণ দিচ্ছে, কিন্তু বাইরে হয়তো আবাসিক জোনে ছোট্ট একটা কফি শপ বা ছোট্ট কোনো দোকান আছে। কিন্তু ঢাকায় রাজউক যেভাবে আবাসিক ভবনকে বাণিজ্যিকে রূপান্তরের বৈধতা দিচ্ছে, এতে রাজধানীকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ঢাকার অধিকাংশ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের নির্দেশনা পুরোপুরি না মেনে। নেই পর্যাপ্ত পানি ও অগ্নিনির্বাপণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।’
আরও পড়ুন: নীলক্ষেতের গাউসুল আজম মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে
করোনা মহামারির পূর্বের অবস্থায় এখনও ফেরেনি বইমেলায় নতুন বইয়ের সংখ্যা
এ যাবৎকালের দীর্ঘতম বইমেলার পর্দা নেমেছে গতকাল শনিবার (২ মার্চ)। এবারের মেলায় মোট ৬০ লাখ দর্শনার্থী এসেছেন এবং মোট ৩ হাজার ৭৫১টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। বই বিক্রি হয়েছে প্রায় ৬০ কোটি টাকার।
বাংলা একাডেমি থেকে নতুন বই প্রকাশনা সম্পর্কে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তে দেখা যায়, কোভিড-১৯ মহামারির আগের তুলনায় নতুন বই প্রকাশনার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং গত বছরের তুলনায় এ বছর বাড়লেও তা এখনও প্রাক-কোভিড পর্যায়ে ফিরে যায়নি।
২০১৯ সালে বইমেলার মঞ্চ থেকে মোট ৪ হাজার ৮৩৪টি নতুন বই প্রকাশিত হয়। ২০২০ সালে নতুন বই প্রকাশনার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৯১৯টিতে। মহামারি আঘাত হানার পর ২০২১ সালের বইমেলায় নতুন বই প্রকাশের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৬৪০টিতে। তবে ২০২১ সালের পর থেকে নতুন বই প্রকাশনার সংখ্যা ধীরে হলেও বাড়তে শুরু করে।
আরও পড়ুন: বইমেলার সমাপ্তি: ৩১ দিনে ৬০ কোটি টাকার বিক্রি
২০২২ সালে নতুন বইয়ের সংখ্যা ২ হাজার ৬৪০ থেকে বেড়ে ৩ হাজার ৪১৬টিতে উন্নীত হয় এবং ২০২৩ সালের বইমেলায় মোট ৩ হাজার ৭৩০টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
সংগৃহীত তথ্যে দেখা যায়, ২০২০ সালের বইমেলায় বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত ১৪৪টি নতুন বই প্রকাশিত হয়। ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত বই ২০২০ সালের মেলার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হ্রাস পেয়ে ৫১টিতে পৌঁছায় এবং ২০২২ সালে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত ৭৭টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। ২০২৩ সালে আবার সংখ্যা কমে ৩৫-এ নামে এবং এ বছর অমর একুশে বইমেলার বই উন্মোচন মঞ্চ থেকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত মাত্র ২৭টি বই প্রকাশিত হয়।
কবিতা বিভাগে ২০২০ সালে ১ হাজার ৫৮৫টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়, যা ২০২১ সালে কমে দাঁড়ায় ৮৯৮টিতে। ২০২১ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৬০টিতে। এরপর ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ২৫৭ এবং এ বছর তা কমে ১ হাজার ১৯২টিতে নেমে আসে।
আরও পড়ুন: অমর একুশে বইমেলা-২০২৪ এর সময় বাড়ল ২ দিন
এ ছাড়া বইমেলা থেকে নতুন গবেষণা কর্ম প্রকাশের সংখ্যাও গত ৫ বছরে কমেছে। ২০২০ সালে বইমেলার প্রাঙ্গণ থেকে গবেষণা বিষয়ক মোট ১১২টি বই প্রকাশিত হয়। ২০২১ সালে এ সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৪৭-এ। তবে ২০২২ সালে নতুন গবেষণা সংক্রান্ত প্রকাশনার সংখ্যা ছিল ১০২টি। কিন্তু গবেষণাভিত্তিক বই প্রকাশনার সংখ্যা আবার ৭৫-এ নেমে এসেছে এবং ২০২৩ সাল থেকে একই রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিভাগে ২০২০ সালে মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ থেকে মোট ১৫২টি নতুন বই উন্মোচিত হয়। ২০২১ সালে বইয়ের সংখ্যা ছিল ৮৪টি। ২০২২ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বইয়ের সংখ্যা ছিল ১০২টি। এরপর এই ক্যাটাগরির নতুন বইয়ের সংখ্যা ৭৫ নম্বরে পৌঁছায় এবং একই থাকে।
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গল্পের বই, উপন্যাস, স্বাস্থ্য বিষয়ক বই, অনূদিত বই, নাটক, বিজ্ঞান বিভাগের বইয়ের মতো নতুন বই প্রকাশের সংখ্যার পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে কোভিড-১৯ মহামারি অমর একুশের বই প্রকাশকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেছে।
আরও পড়ুন: ছুটির দিনে প্রাণবন্ত বইমেলার শিশুচত্বর
ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ককে পরবর্তী পর্যায়ে নেওয়ার চাবিকাঠি সদিচ্ছা, কৌশলগত বিবেচনা ও ভূ-রাজনৈতিক কারণ
বাংলাদেশের নির্বাচনের পর দুই দেশের সম্পর্ক পর্যবেক্ষণ করে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন, প্রাক-নির্বাচনি রাজনৈতিক মতপার্থক্য পেছনে ফেলে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত বিবেচনা, ভূ-রাজনৈতিক কারণ এবং নতুন ক্ষেত্রে সম্পর্ক সম্প্রসারণের অকৃত্রিম ইচ্ছা দুই দেশের সম্পর্ককে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যাবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শাহাব এনাম খান চলতি সপ্তাহে ইউএনবিকে বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রতিটি ক্ষেত্রেই দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ ও পুরোনো সম্পর্ক রয়েছে। সম্পর্কের নতুন অধ্যায় দেখে মনে হচ্ছে, দেশ দুটির ব্যাপক রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও তাদের সম্পর্ক আরও গভীর হবে।’
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার এবং অভিন্ন স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করে।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের (এনএসসি) দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক এইলিন লুবাখার, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) এশিয়া অঞ্চলের সহকারী প্রশাসক মাইকেল শিফার এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আখতার।
আরও পড়ুন: সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঢাকার জিরো টলারেন্স নীতিকে স্বাগত জানিয়েছে ওয়াশিংটন
তাদের আলোচনায় জলবায়ু পরিবর্তন, বাণিজ্য, রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট ও শ্রম অধিকার নিয়েও আলোকপাত করা হয়। প্রতিনিধি দলটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী নির্বাহী, নাগরিক সমাজের সংগঠন এবং শীর্ষ বিরোধী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে।
বাংলাদেশ সেন্টার ফর ইন্দো-প্যাসিফিক অ্যাফেয়ার্সের নির্বাহী পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অধ্যাপক শাহাব মনে করেন, বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও ইন্দো-প্যাসিফিক এজেন্ডার বিষয়গুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
তাই প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, অপ্রথাগত নিরাপত্তা ও মানব নিরাপত্তা ইস্যুতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন গতি পাবে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারকেও জেগে ওঠার আহ্বান এটি। এ থেকে বোজা যায়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে তৃতীয় কোনো দৃষ্টিকোণ থেকে দেখবে না।’
বরং তিনি মনে করেন, আগামী দিনগুলোতে উভয় দেশই তাদের পারস্পরিক স্বার্থের সমন্বয় ঘটাতে পারে। ‘সর্বোপরি বাংলাদেশ পরাশক্তিগুলোর কাছে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য দেশ, কারণ আঞ্চলিক প্রতিবেশীদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে কোনো ফাটল ধরেনি বা কোনো রাজনৈতিক বা নিরাপত্তার বিষয়ও নেই।’
অধ্যাপক শাহাব বলেন, এই দুটি বিষয় বাংলাদেশকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনীয় আঞ্চলিক নিরাপত্তার গ্যারান্টার করে তোলে।
নতুন অধ্যায় ও অগ্রাধিকার
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনার বিষয়ে অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র হেইনেস মাহনি বলেন, বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের অংশীদার এবং বাংলাদেশের সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের বৃহত্তম উৎস যুক্তরাষ্ট্র।
তিনি বলেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল যাতে অবাধ, উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ থাকে তা নিশ্চিত করতে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা বিস্তৃত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছি।’
হেইনেস বলেন, 'প্রেসিডেন্ট বাইডেন যেমন বলেছেন, আমরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমিত করতে এবং জনগণের জন্য বিনিয়োগে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার উপায়গুলো নিয়ে কাজ করব; যাতে তারা স্বাস্থ্যকর ও আরও সমৃদ্ধ জীবনযাপনের সুযোগ পায়।’
বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গি দেখে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র। তিনি মনে করেন, অর্থনৈতিক বিনিয়োগ, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করা এবং দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তারা যা করার চেষ্টা করছে তার 'সত্যিকারের প্রতিফলন'।
হেইনেস বলেন, বাংলাদেশ অবশ্যই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশগুলোর অন্যতম এবং এই প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।
অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বেসরকারি খাতের মাধ্যমে উন্নয়নে তাদের বিনিয়োগকে কাজে লাগাতে এবং যুবকদের সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে তারা ক্রমবর্ধমানভাবে মনোনিবেশ করছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ী নেতা ও যুবকদের একত্রিত করছি যাতে বাজারে চাহিদা আছে এমন বিষয়ে তরুণদের আরও দক্ষ করে গড়ে তোলা যায়। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে বৃহত্তর সাফল্যের দিকে নিয়ে যেতে এবং বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশকে আরও প্রতিযোগিতামূলক হতে সহায়তা করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতাসম্পন্ন মেধাবী কর্মী বাহিনী তৈরি করতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র বলেন, তারা দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করার উপায় নিয়ে গবেষণা করছেন। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে আমাদের একসঙ্গে কাজ করার সময় যাতে দেশের প্রতিটি এলাকার জনগণ স্বাস্থ্যকর এবং সমৃদ্ধ জীবনযাপনের ন্যায়সঙ্গত সুযোগ পায়।
তিনি বলেন, 'আমরা বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নে সহযোগিতা করার বিষয়েও কাজ করছি। একই সঙ্গে উপকূলীয় সীমান্তে কী ঘটছে এবং আকাশ, স্থল ও সমুদ্রপথে কী আসছে তা বোঝার জন্য সামুদ্রিক ডোমেন সচেতনতায় বিনিয়োগ করতে সক্ষম।’
আরও পড়ুন: ইউনূসকে নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টে বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে, বিবৃতি নয়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
জিএসওএমআইএ ও এসিএসএ সম্পর্কিত সমস্যাগুলো
জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন এগ্রিমেন্ট (জিএসওএমআইএ) এবং অ্যাকুইজিশন ক্রস-সার্ভিসিং এগ্রিমেন্টের (এসিএসএ) অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে হেইনেস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে জিএসওএমআইএ বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ উভয় পক্ষ 'আরও বাস্তব ও গভীর' সম্পর্কের সুযোগ খুঁজছে।
তিনি বলেন, চুক্তিটি কার্যকরভাবে একটি প্রতিশ্রুতি, যা প্রতিটি পক্ষ কার্যকরভাবে অন্য পক্ষের কাছ থেকে প্রাপ্ত যেকোনো তথ্য বা সংবেদনশীল সামগ্রী সুরক্ষিত রাখবে।
অন্যদিকে, তিনি বলেন, এসিএসএ অংশীদার সামরিক বাহিনীর মধ্যে লজিস্টিক সহায়তা বিনিময়কে সহজতর করে এবং অর্থবহ সম্পৃক্ততার সুযোগ বাড়ায়।
হেইনেস বলেন, যদিও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে এসিএসএ নিয়ে কোনো আলোচনা নেই, তবে দুই পক্ষ যদি মনে করে যে এটি যথেষ্ট সুবিধা দেবে তবে ভবিষ্যতে এটি পরিবর্তন হতে পারে।
মিয়ানমার পরিস্থিতি ও তার প্রভাব
মুখপাত্র বলেন, 'অবশ্যই আমরা খুবই উদ্বিগ্ন এবং বার্মার (মিয়ানমার) ঘটনাবলী নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। বার্মায় (মিয়ানমার) চলমান সংঘর্ষ খুবই উদ্বেগজনক। এটি কেবল এই অঞ্চলের জন্যই নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্যও এটি খুবই উদ্বেগের বিষয়।’
তিনি বলেন, মিয়ানমারে চলমান সংকট উদ্বেগজনক বিষয় এবং মিয়ানমারে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারসহ বর্তমান সংকটে মানবিক সহায়তা হিসেবে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
তিনি বলেন, সংকটের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করা, স্থিতিশীলতা জোরদার করা এবং টেকসই ও মানবিক সমাধান খুঁজে বের করা অপরিহার্য।
ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর কল্যাণ এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে ‘বিস্তৃত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক’ পদ্ধতির উপর জোর দেন তারা। একই সঙ্গে মায়ানমারের পরিস্থিতির ফলে সৃষ্ট ঝুঁকি কমিয়ে আনতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন তারা।
মুখপাত্র বলেন, 'বার্মায় সংঘর্ষের কারণে বার্মায় অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত এবং বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গা শরণার্থী উভয়ের জন্য সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তাও আমরা স্বীকার করি।’
এ বছরের শুরুর দিকে, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখতে অতিরিক্ত ৮৭ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যা শরণার্থীদের জন্য মাসিক খাদ্য রেশন প্রতি মাসে ১০ ডলারে উন্নীত করতে সহায়তা করেছে।
মুখপাত্র বলেন, ‘তাদের সুস্থ থাকার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। আমরা বাংলাদেশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে চাকরি-দক্ষতা ও ব্যবসায় প্রশিক্ষণসহ বহুপক্ষীয় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান অব্যাহত রেখেছি যাতে জনগণকে তাদের জীবনযাত্রার উন্নয়নে সহায়তা করতে পারে।’
উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক এবং ফরেন পলিসির সাপ্তাহিক দক্ষিণ এশিয়া ব্রিফের লেখক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও ইতিবাচক দিকে গেছে; যেই নির্বাচনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও সুষ্ঠু নয় বলে বর্ণনা করেছিল।
তিনি এর কারণ ব্যাখ্যা করে বলেছেন, এই পরিবর্তন আসলে যতটা মনে হয় ততটা তীক্ষ্ণ নয়। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্পষ্ট পরিবর্তনের মধ্যে এই সফর হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পাঠানো বার্তা ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ইঙ্গিতের কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি।
বাংলাদেশের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের কয়েক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা, ভিসা নিষেধাজ্ঞা ও সমালোচনাসহ মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের উন্নয়নে জোরালো পদক্ষেপ নেয়।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এই ভোটকে অবাধ ও সুষ্ঠু নয় বলে উল্লেখ করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন, যাতে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের 'পরবর্তী অধ্যায়কে' স্বাগত জানানো হয়েছে; সেখানে অধিকার বা গণতন্ত্রের কথা বলা হয়নি।
চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদসহ বাংলাদেশি কর্মকর্তারা নতুন অধ্যায় শুরুর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, 'নির্বাচন এখন অতীতের বিষয়।’ নানা ক্ষেত্রে অংশীদারিত্বের উল্লেখসহ উভয় পক্ষের বার্তা উষ্ণ ও কার্যকরী ছিল।
ঘুরে দাঁড়ানোর কারণ কী- এ প্রসঙ্গে মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, একটি সম্ভাব্য কারণ হচ্ছে, ওয়াশিংটন ঢাকার উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিবেশ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিতে চায়।
মেট্রোরেলের সক্ষমতা বাড়ায় মিরপুর-মতিঝিল রুটে কমেছে বাস চলাচল
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল পরিষেবা চালু হওয়ার পর সড়কে এই রুটে গণপরিবহন ব্যবস্থাকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করেছে। বিশেষ করে বলতে হয় মিরপুর-আগারগাঁও-ফার্মগেট-পল্টন রুটে বাসের কথা।
এই আধুনিক যোগাযোগের মাধ্যম শুরু পর বাসে এই রুটে যাত্রী সংখ্যা বেশ কমেছে। এতে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা ৩০-৪০ শতাংশ বাসের সংখ্যা কমে গেছে বলে জানিয়েছেন।
গরমের দিনগুলোতে আরও বাস সংখ্যা কমে যাবে বলে তারা জানিয়েছেন। কারণ মেট্রোরেল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারবেন।
সকাল ৭টা ১০মিনিট থেকে শুরু করে রাত ৮টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করায় আর্থিক বিষয় পরিবহন সংশ্লিষ্টদের ভাবিয়ে তুলেছে। তারা আশঙ্কা করছেন, তাদের হয় রুট পরিবর্তন করতে হবে অথবা বাহন বিক্রি করতে হবে।
শিকড় পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহজাহান বলেন, ‘মিরপুর-আগারগাঁও-ফার্মগেট-পল্টন রুটে মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, সদরঘাটসহ বিভিন্ন গন্তব্যে প্রতিদিন প্রায় ৩০০-৪০০ বাস চলাচল করছে। তবে অতীতে এই রুটে ৫০০-৬০০ বাস চলাচল করত।’
প্রতিদিন শিকড় পরিবহনের ৮৫-৯০টি বাস চলাচল করলেও এখন সেই সংখ্যা ৬০-৬৫ এ নেমে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিহঙ্গ পরিবহন, বিকল্প অটো সার্ভিসসহ অন্যান্য বাস কোম্পানিগুলোরও একই পরিণতি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: কারিগরি ত্রুটির কারণে ১ ঘণ্টা বন্ধ ছিল মেট্রোরেল
ঢাকা বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের কাজ শেষ হবে ৫ এপ্রিলের মধ্যে
বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের কাজ চলতি বছরের ৫ এপ্রিলের মধ্যে শতভাগ সম্পন্ন হবে। আশা করা হচ্ছে আগামী অক্টোবর থেকে পুরোদমে এই টার্মিনালের কার্যক্রম শুরু হবে। এটি দেশের বিমান অবকাঠামোর সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।
তৃতীয় টার্মিনালের কাজ শেষ হলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাছে থেকে টার্মিনালের দায়িত্ব বুঝে নেবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এরপর শুরু হবে পুরোনো টার্মিনাল থেকে নতুন টার্মিনালে স্থানান্তরে অপারেশন রেডিনেন্স অ্যান্ড এয়ারপোর্ট ট্রান্সফার (ওআরএটি) প্রকল্পের কাজ।
আরও পড়ুন: থার্ড টার্মিনালের ৬০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন: বিমান প্রতিমন্ত্রী
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের প্রকল্প পরিচালক এ কে এম মাকসুদুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, তৃতীয় টার্মিনালের সিভিলসহ সব ধরনের কাজ প্রায় শেষ। অল্প কিছু যা বাকী রয়েছে তা নির্ধারিত সময় অর্থাৎ আগামী এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই শেষ হবে। এরপর টার্মিনালটি বুঝে নিবে বেবিচক।
তিনি বলেন, সিডিউল অনুযায়ী আগামী ৫ এপ্রিল তৃতীয় টার্মিনালের সব কাজ শেষ হওয়ার সময় নির্ধারিত। ৬ এপ্রিল থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে টার্মিনালটি বুঝে নেবে বেবিচক। বেবিচকের ব্যবস্থাপনায় আগামী অক্টোবর থেকে টার্মিনালটি পুরোদমে চালু করতে কাজ চলছে। এজন্য অপারেশন রেডিনেন্স অ্যান্ড এয়ারপোর্ট ট্রান্সপার (ওআরএটি) বিষয়ক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এরই মধ্যে সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন ও ক্যালিবেরেশনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যা একাধিক যাচাই বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।
আরও পড়ুন: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল: ৭ অক্টোবর উদ্বোধনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ
রমজানের আগে বেড়েই চলেছে দ্রব্যমূল্য, সংকটে ভোক্তারা
সরকার লাগাম টেনে ধরার পরও রোজার মাস রমজানে বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। বাজার জরিপে এমন চিত্রই উঠে এসেছে।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে এই প্রতিবেদক দেখেন, সম্প্রতি সরকার যেসব পণ্যে ভ্যাট-করের হার কমিয়েছে, সেগুলোও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজার, মহাখালী, ফকিরাপুল, শান্তিনগর, মালিবাগ, রামপুরা, বনশ্রীর মতো কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এই প্রতিবেদক গত কয়েক মাসে বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের ক্রমাগত দাম বৃদ্ধির চিত্র দেখতে পেয়েছেন।
আরও পড়ুন: ক্ষমতাসীন দলের ব্যবসায়ী চক্র দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে লুটপাটে মরিয়া হয়ে উঠেছে: রিজভী
মঙ্গলবার(২৭ ফেব্রুয়ারি) এসব বাজারে দেশি রসুনের কেজি ২৫০ টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৫০ টাকা।
দেশি হলুদ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি, যা দুই মাস আগে ছিল ২৪০ টাকা। আমদানি করা হলুদ বিক্রি হচ্ছে ২৯০ টাকা কেজি, যা গত বছরের চেয়ে ৮০ টাকা বেশি। দেশি আদা পাওয়া যাচ্ছে ২৮০ টাকায়, যা গত বছর ছিল ২০০ টাকা।
খুচরা বাজারে দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নভেম্বর মাসে প্রতি কেজি চিনি ১৩৫ টাকায় পাওয়া গেলেও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তা বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৫০ টাকায়। ভালো মানের মসুর ডাল নভেম্বরে প্রতি কেজি ১৩০ টাকা এবং ফেব্রুয়ারিতে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নভেম্বরে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হয়েছে ৮৫ টাকা এবং ফেব্রুয়ারিতে এসে সেটি বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়।
ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে নভেম্বর মাসে খোলা (লুজ) সয়াবিন তেল লিটার প্রতি ১৫০ টাকায় পাওয়া গেছে। ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬০ টাকায়। নভেম্বরে বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬৮ টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ১৭২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। নভেম্বর মাসে তিউনিসিয়ার খেজুর ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এখন ফেব্রুয়ারিতে তা বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজি দরে।
নভেম্বরে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকায়। ফেব্রুয়ারির শুরুতে ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা সর্বোচ্চ ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া নভেম্বর মাসে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়, যা ছিল ১৮৫ টাকা। তবে নভেম্বর থেকে গরুর মাংসের দাম কমছে। সে সময় প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭০০ টাকায়।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান ইউএনবিকে বলেন, বাংলাদেশে পণ্যের দাম একবার বাড়লে তা আর কমে না।
আরও পড়ুন: রমজানে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা হবে: প্রাণিসম্পদমন্ত্রী
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ২০১৩ সালে ৩৬ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি হতো। ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭০ টাকায়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কেজিতে লাফিয়ে ওঠে ৮০-৮৫ টাকায়। একইভাবে বেড়েছে মাংস, মুরগির মাংস, সয়াবিন তেল, ডিমসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম।
তিনি আরও বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মূল্যস্ফীতির হার। ২০১২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল বছরে ৬ দশমিক ০৫ শতাংশ। ২০২৩ সালে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, যা গত অক্টোবরে এই দশকের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হার ছিল ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এক্ষেত্রে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেশি।’
বিশ্বব্যাংকের ২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশের ৭১ শতাংশ পরিবার খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বিগ্ন। এ ছাড়া দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মানুষের ক্রয় ক্ষমতাকে সীমিত বা কমিয়ে দিচ্ছে।
জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় জনসংখ্যার একটি অংশকে দারিদ্র্যসীমার নিচে ঠেলে দিয়েছে। নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত পর্যন্ত সবাইকে প্রভাবিত করছে।
আরও পড়ুন: দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের চেষ্টার পাশাপাশি সবারই সহযোগিতা প্রয়োজন: দীপু মনি
অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর ইউএনবিকে বলেন, বাজার মনিটরিং, ওএমএস, টিসিবি কার্ড ইস্যু এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মতো পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ সত্ত্বেও বাজার নিয়ন্ত্রণহীন রয়েছে।
তিনি বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ তখনই ফলপ্রসূ হবে যখন আমদানিকারকরা ব্যাংক থেকে নির্ধারিত হারে মার্কিন ডলার পাবেন এবং মুদ্রা ছাপানোর পরিমাণ সর্বনিম্ন পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেরিতে উদ্যোগ নিচ্ছে এবং সেসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নেও বিলম্ব হচ্ছে। ফলে অর্থনীতি সংক্রান্ত নীতি কাজ করছে না।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামও।
তিনি বলেন, আয় না বাড়লেও সব শ্রেণির মানুষের ব্যয় বাড়ছে।
ক্যাব সভাপতি বলেন, ‘যৌক্তিকভাবে পণ্যের দাম বেড়েছে কি না তা সংশ্লিষ্টদের দেখতে হবে। কোনো অনিয়ম পাওয়া গেলে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে এবং ভোক্তাদের স্বস্তি দেওয়া উচিত।’আরও পড়ুন: রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য ঠিক রাখতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে: প্রাণিসম্পদমন্ত্রী
রবির কলড্রপের হার দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম: সিইও
২০২২ সালের অক্টোবরে রবি আজিয়াটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন রাজীব শেঠি। এর আগে তিনি মিয়ানমারের মোবাইল অপারেটর ওরেডুর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি এয়ারটেল আফ্রিকার প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া ভোডাফোন, এইচপি, হাচিসন টেলিকম ও এশিয়ান পেইন্টসের মতো বিখ্যাত কোম্পানিগুলোতেও নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কেটিং, ফাইন্যান্স ও অপারেশনে এমবিএ করা শেঠির পরিচয় নতুন নয়। এর আগে তিনি গ্রামীণফোনের সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ইউএনবির সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে রবির প্রবৃদ্ধি, বাংলাদেশের টেলিকম খাতে তার অভিজ্ঞতা এবং আরও অনেক কিছু নিয়ে কথা বলেন শেঠি।
ইউএনবি: ২০২৩ সালে রবির আয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে। মুনাফাও বেড়েছে ৭৪ শতাংশ। এ বিষয়ে বিস্তারিত বলবেন কি?
রাজীব শেঠি: রেকর্ড গড়া জরুরি নয়। ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য প্রতি বছর নিজস্ব রাজস্ব রেকর্ড ভাঙা সাধারণ। তবে ২০২৩ সালে রবির ব্যবসা সম্প্রসারণের হার চোখে পড়ার মতো। প্রতিষ্ঠানটির ২৭ বছরের ইতিহাসে গত বছর সর্বোচ্চ রাজস্ব ও মুনাফা প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এছাড়া ২০২৩ সালে রবির প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের অন্য সব টেলিকম কোম্পানিকে ছাড়িয়ে গেছে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মোবাইল অপারেটরদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, রবির প্রবৃদ্ধি ছিল অতুলনীয়।
ইউএনবি: এই সাফল্যের পেছনে কোন বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে আপনি মনে করেন?
রাজীব শেঠি: এটা নিরন্তর প্রচেষ্টার ফল। আমরা আমাদের নেটওয়ার্ক উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করেছি। আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি, বর্তমানে ভয়েস কল ও ইন্টারনেট ব্যবহার উভয়ের জন্যই রবির উন্নত নেটওয়ার্ক রয়েছে। এটি আমাদের সাফল্যের একটি মূল কারণ। আমরা আমাদের ইন্টারনেট ও মিনিট প্যাকেজগুলো ব্যবহাকারীবান্ধব ও সহজ করেছি। আমাদের গ্রাহকদের চাহিদাগুলো পূরণ করে এমন প্যাকেজগুলো সরবরাহ করার চেষ্টা করেছি। আমাদের ব্র্যান্ডিং প্রচেষ্টাও সফল হয়েছে। আমরা 'পারবে তুমিও' নামে একটি নতুন ব্র্যান্ডিং ক্যাম্পেইন চালু করেছি।
ইতিবাচক ব্যবসায়িক ফলাফল এই সমস্ত প্রচেষ্টার চূড়ান্ত পরিণতি।
ইউএনবি: ১৯৯৭ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু করা সত্ত্বেও রবি কেন তার প্রতিযোগীদের মতো একই পর্যায়ে মুনাফা অর্জন করতে পারছে না?
আরও পড়ুন: অল্প সময়ের মধ্যে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেবে ইভ্যালি: সিইও রাসেল
রাজীব শেঠি: এখানে একাধিক ফ্যাক্টর কাজ করে। সংখ্যা ও গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানোর বিষয় এখানে জড়িত। গ্রাহক সংখ্যা যত বেশি, রাজস্ব ও মুনাফা তত বেশি। গ্রাহকের সংখ্যা বেশি হলে গ্রাহকপ্রতি পরিচালন ব্যয় কমে যায়। টেলিকম খাতের বর্তমান অবস্থা বিবেচনায়, ছোট অপারেটরদের পক্ষে মুনাফা বাড়ানো চ্যালেঞ্জিং।
বিশ্বব্যাপী, এই ছোট সংস্থাগুলো রক্ষার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশে এ বিষয় উত্থাপন করা হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এটা শুধু কোনো একক অপারেটরের লাভ-লোকসানের বিষয় নয়। বাজারে কোনো প্রতিষ্ঠানের একচেটিয়া আধিপত্য থাকলে গ্রাহকরাই লোকসানে পড়েন।
ইউএনবি: বাংলাদেশের টেলিকম সেক্টরের অভিজ্ঞতা আপনার আছে। এই খাতের নিয়মকানুন, নীতিমালা ও অন্যান্য বিধিবিধান সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
রাজীব শেঠি: এই প্রশ্ন বিভিন্ন উপায়ে করা যেতে পারে। একটি দৃষ্টিকোণ হলো, জনসংখ্যার অধিক ঘনত্বের কারণে বিনিয়োগের জন্য এই দেশের টেলিকম খাত আকর্ষণীয়, যা টেলিকম অবকাঠামো স্থাপনের জন্য সুবিধাজনক। জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য একটি অংশ তরুণ এবং নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনে তারা আগ্রহী। অনেক বাড়িতেই ব্রডব্যান্ড সংযোগ ছাড়াই টেলিকম খাতের জন্য বেশ সুযোগ করে দেওয়া হয়। তবে এই খাত অত্যন্ত উচ্চ করের বোঝায় জর্জরিত। ১০০ টাকা আয়ের বিপরীতে ৫৬ টাকা যায় সরকারের হাতে, যা প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় দ্বিগুণ। বিভিন্ন স্তরে টেলিকম পরিষেবা দেওয়ার জন্য সমন্বিত লাইসেন্সের অনুপস্থিতির কারণে কোনো সংস্থা স্বাধীনভাবে সব পরিষেবা সরবরাহ করতে পারে না এবং অবশ্যই টাওয়ার কোম্পানির উপর নির্ভর করতে হবে। এই নির্ভরশীলতা শুধু ব্যয়ই বাড়ায় না বরং পরিষেবার মানেও প্রভাব ফেলে।
ইউএনবি: বাংলাদেশে বসবাসরত একজন ভারতীয় হিসেবে আপনি দুই দেশের নেটওয়ার্কের মানের তুলনা কীভাবে করবেন?
রাজীব শেঠি: আসলে মানের উপর তুলনার নির্ভর করে। তবে এটুকু বলতে পারি, ঢাকায় আমি যে নেটওয়ার্কের যে মান অনুভব করি তা দিল্লির নেটওয়াকের মানকে ছাড়িয়ে গেছে।
ইউএনবি: বাংলাদেশে গ্রাহকদের কাছ থেকে সেবার মান নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে বাড়িতে নেটওয়ার্ক কভারেজের অভাব ও কল ড্রপ। এ বিষয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী?
রাজীব শেঠি: মানুষ যখন কোনো পরিষেবা নিয়ে অসন্তুষ্ট হয় তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের অভিযোগগুলো প্রকাশ করে এটি খুবই সাধারণ, যখন তারা সন্তুষ্ট থাকে এর ঠিক বিপরীত হয়। প্রতিদিন করা লাখ লাখ কল দেওয়া, ত্রুটিপূর্ণ রেডিও তরঙ্গের কারণে কয়েকটি কল ড্রপ অনিবার্য। কলড্রপের হার স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় মানের চেয়ে বেশি কি না তা মূল্যায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ। যেমন রবির কলড্রপের হার ০.২, যা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন। যাইহোক, আমরা ক্রমাগত আমাদের সেবা উন্নত করার চেষ্টা করি। আমরা কক্সবাজারের উখিয়ার মতো কিছু চ্যালেঞ্জিং স্থানে টাওয়ার স্থাপনের চেষ্টা করছি, কিন্তু টাওয়ার স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
ইউএনবি: ঢাকায় টাওয়ারের সংখ্যা বাড়ানোর প্রয়োজন আছে কি?
রাজীব শেঠি: অবশ্যই। আমাদের কাছে প্রায় ৬০০টি টাওয়ার স্থাপনের সরঞ্জাম রয়েছে, তবে স্থানের সীমাবদ্ধতার কারণে সেগুলো বর্তমানে আমাদের গুদামে অব্যবহৃত রয়েছে। আমরা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও টাওয়ার কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করছি। টাওয়ার বিনিময়ের ধারণাটি আশাব্যঞ্জক বলে মনে হচ্ছে এবং আমরা সেই সম্ভাবনা খুঁজছি।
ইউএনবি: বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়াতে কী কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে?
রাজীব শেঠি: বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ তাদের স্মার্টফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য, স্মার্টফোনগুলোকে আরও সাশ্রয়ী করা বা সামথ্যের মধ্যে আনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; বর্তমানে এ দেশে এটি বেশ ব্যয়বহুল। স্থানীয় কোম্পানিগুলো স্মার্টফোন উৎপাদন শুরু করেছে এবং কীভাবে তাদের দাম কমানো যায় সে বিষয়ে কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন: এজেন্ট ব্যাংকের আউটলেটে ১৪,৩০৫ কোটি টাকা জমা: ইসলামী ব্যাংকের সিইও
ইউএনবি: সরকার উচ্চগতির ৫-জি ইন্টারনেট পরিষেবা বাস্তবায়নের বিষয়ে আলোচনা করছে। পরিষেবা সরবরাহকারীরা কি প্রস্তুত এবং বাজারে কি ৫-জি’র চাহিদা রয়েছে?
রাজীব শেঠি: আমরা সার্ভিস প্রোভাইডাররা ৫জি-র জন্য তৈরি। তবে বাজারের প্রস্তুতি আলাদা বিষয়। তবে ৫-জি গড় ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনবে না, কারণ বর্তমান ইন্টারনেটে মুভি দেখার অভিজ্ঞতার মতোই হবে। ৫-জির আসল প্রয়োজনীয়তা শিল্প ও সেবা খাতে। এই খাতগুলোতে অটোমেশনের পরিমাণ মূল্যায়ন করা দরকার।
ইউএনবি: সম্প্রতি অ্যাক্সেনটেক ও আর-ভেঞ্চারস নামে রবির দুটি সাবসিডিয়ারি ফার্ম প্রতিষ্ঠা কারণ কী?
রাজীব শেঠি: এই সহায়ক সংস্থাগুলোর প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো ব্যবসায়িক সংস্থাগুলোতে ইন্টারনেট সেবা সরবরাহ করা। বর্তমানে, এই খাত থেকে আয় ন্যূনতম, তবে ভবিষ্যতে পরিষেবাগুলো প্রসারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নতুন সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং একজন নতুন সিইও নিয়োগ করা হয়েছে। এটি লক্ষণীয় যে প্রতিবেশী দেশগুলোতে এরকম ব্যবসায়িক রাজস্ব উল্লেখযোগ্য বেড়েছে।
ইউএনবি: রবি কি পুঁজিবাজারে অতিরিক্ত শেয়ার ইস্যু করার কথা ভাবছে?
রাজীব শেঠি: এটা পরিচালনা পর্ষদের আওতাভুক্ত। তবে আমার জানামতে আপাতত বিষয়টি বিবেচনায় আনা হচ্ছে না।
ইউএনবি: বাংলাদেশে বিনিয়োগের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা সম্পর্কে কোন কোন বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করবেন?
রাজীব শেঠি: বিনিয়োগকারীরা একটি স্থিতিশীল নীতিভিত্তিক পরিবেশ পছন্দ করে কারণ এটি কৌশলগত পরিকল্পনাকে সহজতর করে। বিনিয়োগ সম্পর্কিত সরকারি নীতিতে আকস্মিক পরিবর্তন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে। তৃতীয় পক্ষের বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থার উপস্থিতি ব্যবসার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এটি সাধারণত আদালতের মাধ্যমে করা হয়। বিনিয়োগের জন্য মৌলিক প্রয়োজন নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা। টেলিকম খাতে বিনিয়োগের জন্য যদি একটি দেশ নির্বাচন করা হয়, তাহলে বাংলাদেশ হবে প্রধান পছন্দ। দেশটিতে বিনিয়োগের জন্য অসংখ্য সুবিধা রয়েছে।
ইউএনবি: দীর্ঘ সময় ধরে এখানে কাজ করার পর বাংলাদেশিদের সম্পর্কে আপনার ধারণা কী?
রাজীব শেঠি: বাংলাদেশের প্রতি আমার গভীর অনুরাগ রয়েছে। এখানকার লোকেরা অবিশ্বাস্যভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ এবং জ্ঞান অর্জন ও শেখার জন্য তাদের গভীর আগ্রহ রয়েছে। ক্রিকেটের প্রতি তাদের আবেগ প্রগাঢ়। দেশটিতে অনেক প্রতিভা রয়েছে, যা বিশ্ব এখনো আবিষ্কার করতে পারেনি। আমরা ডিজিটাল সেক্টরে প্রতিভা অনুসন্ধানে কাজ করেছি এবং আমরা যে ব্যতিক্রমী তরুণ প্রতিভা পেয়েছি তা দেখে অবাক হয়েছি। তারা আমার মতো ৪০ থেকে ৫০ বয়সী নয়, এরা ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণ। তাদের দক্ষতা প্রদর্শনের জন্য উপযুক্ত একটি প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজন।
২০২৩ সালের জন্য রবির আর্থিক তথ্য
রবির রাজস্ব আয় হয়েছে ৯৯.৪২ বিলিয়ন এবং কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ৩.২১ বিলিয়ন টাকা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত কোম্পানিটির মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৩৮০ বিলিয়ন টাকা। কোম্পানিটির গ্রাহক সংখ্যা ৫৫.৭ মিলিয়ন। এটি ২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়, যার শেয়ার বাজার মূল্য ৩১.২০ টাকা এবং এর মধ্যে ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়া হয়।
রবির সংক্ষিপ্ত বিবরণ
রবিতে মালয়েশিয়াভিত্তিক আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদের ৬১ দশমিক ৮২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ভারতের ভারতী এয়ারটেলের হাতে রয়েছে ২৮ দশমিক ১৮ শতাংশ শেয়ার, বাকি ১০ শতাংশ বাংলাদেশের সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের হাতে। ১৯৯৭ সালে টেলিকম মালয়েশিয়া এবং এ কে খান অ্যান্ড কোম্পানি অব বাংলাদেশ একটেল ব্র্যান্ড নামে যৌথভাবে এই কোম্পানি চালু করে। ২০০৮ সালে এ কে খান অ্যান্ড কোম্পানি তাদের শেয়ার বিক্রি করে দেয়। ২০১০ সালে কোম্পানিটির নাম একটেল থেকে রবিতে পরিবর্তন করে পুনরায় ব্র্যান্ডিং করা হয়।
আরও পড়ুন: চ্যাটজিপিটি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের সিইও স্যাম আল্টম্যান বরখাস্ত
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সরকারি পরিকল্পনার বিরোধিতা করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা
বাংলাদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সরকারি প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা। তারা বিদ্যুৎ খাতের আর্থিক ব্যবস্থাপনার পুনর্মূল্যায়নের আহ্বান জানাচ্ছেন, বিশেষ করে এই খাতের আর্থিক দুর্দশার আরও কার্যকর সমাধান হিসেবে অতিরিক্ত ও বিতর্কিত ব্যয়ের দিকে ইঙ্গিত করছেন।
তারা পর্যবেক্ষণ করেছেন, বর্তমানে ৪২ শতাংশ বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত রয়েছে। ব্যয়বহুল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সরকারের চুক্তিকেই এর জন্য দায়ী করা যেতে পারে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এস এম শামসুল আলম বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানির বোর্ডের পারিশ্রমিক থেকে শুরু করে বড় আকারের বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি পর্যন্ত- ব্যাপক অযৌক্তিক খরচ রয়েছে। এছাড়া দাম বৃদ্ধির উপর আর্থিক সংশোধনের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেওয়া প্রয়োজেন।’
আরও পড়ুন: জরুরি ভিত্তিতে অবৈধ বিদ্যুতের লাইন বিচ্ছিন্ন করার সুপারিশ সংসদীয় কমিটির
সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বিদ্যুৎ, উৎপাদন খরচ ও বিদ্যুৎ বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ব্যবধান মোকাবিলায় মার্চ থেকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও জাতীয় অর্থনীতির ওপর থেকে আর্থিক চাপ কমানোর লক্ষ্যে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
খুচরা ভোক্তাদের ওপর এ প্রভাব সর্বনিম্ন রাখা হবে বলে আশ্বাস দিয়ে হামিদ বলেন, ‘উৎপাদন খরচ মেটাতে খুচরা ও পাইকারি উভয় পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করতে হবে। তবে গ্যাসের দাম শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সমন্বয় করা যেতে পারে।’
দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রথাগত শুনানি পাশ কাটিয়ে প্রশাসনিক আদেশের মাধ্যমে পাইকারি বিদ্যুতের দামে ৫ শতাংশ এবং খুচরা পর্যায়ে ৩ শতাংশ বৃদ্ধি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে সরকারের অভ্যন্তরের সূত্রগুলো।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) ২০২২-২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ১১ টাকা ৩৩ পয়সা এবং প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি হয়েছে ৬ টাকা ৭ পয়সা। এ সময় প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে প্রায় ৪ টাকা ৬৩ পয়সা।
এই ভারসাম্যহীনতার কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪৭ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, কারণ বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক উৎস থেকে অতি উচ্চ মূল্যে বিদ্যুৎ কিনেছে সরকার।
বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে ৮২ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকার বিদ্যুৎ কিনে ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়েছে সরকার। একই সময় নিজস্ব কেন্দ্র থেকে ১৩ হাজার ৩০৭ কোটি টাকার বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে।
বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিপিডিবির নিজস্ব কেন্দ্রগুলো থেকে গড়ে প্রতি ইউনিট উৎপাদন খরচ ৭ টাকা ৬৩ পয়সা, সেখানে স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী বা আইপিপির (বেসরকারি খাত) বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ পড়েছে ১৪ টাকা ৬২ পয়সা। এ ছাড়া রেন্টাল প্ল্যান্টে প্রতি ইউনিটে খরচ হয়েছে ১২ টাকা ৫৩ পয়সা, পাবলিক প্লান্টে ৬ টাকা ৮৫ পয়সা এবং ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের খরচ ৮ টাকা ৭৭ পয়সা।
বিপিডিবি সূত্র জানায়, গত দেড় দশকে ১১ বার পাইকারি পর্যায়ে এবং ১৩ বার গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উৎপাদন খরচ ও বিক্রয় হারের মধ্যে ব্যবধান আরও বেড়েছে এবং এখন প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ব্যয় প্রায় ১২ টাকা এবং প্রতি ইউনিট বিক্রি হচ্ছে ৬ টাকা ৭ পয়সায়।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহসভাপতি অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) শুনানিতে রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিষ্ঠানে অন্যায্য ব্যয়ের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে।
এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইউএনবিকে বলেন, ‘কিন্তু বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় এসব সমস্যা সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বরং নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্তৃত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন করে তা অকার্যকর করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি কি আসন্ন?
তিনি বলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অন্যায্য ব্যয় কমাতে পদক্ষেপ নিতে সরকারের অনীহা দেখা গেছে।
তিনি আরও বলেন, অসহনীয় পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য সরকারকে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অপারেটরদের বিপুল পরিমাণ ক্যাপাসিটি চার্জ এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এখন বাস্তবতা হচ্ছে, ৪২ শতাংশ বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত থাকা সত্ত্বেও শীতকালেও দেশে ব্যাপক লোডশেডিং হয়।’
তিনি বলেন, এত উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ ও ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করা সত্ত্বেও সরকার বিদেশ থেকে ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে, এটা 'হাস্যকর'।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সম্প্রতি এক সেমিনারে একটি গবেষণা প্রতিবেদনে দেখিয়েছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল বিদ্যুৎ খাতে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট থেকে বেরিয়ে আসতে চায়।
তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে ঘোষিত আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে অতি উৎপাদিত বিদ্যুৎ সক্ষমতা হ্রাসের বিষয়টি অনুপস্থিত।
সার্বিক ব্যয় কমাতে ব্যয়বহুল রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো অবিলম্বে বন্ধের সুপারিশ করেন তিনি।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এম তামিম বলেন, খরচ না কমিয়ে উৎপাদন খরচ বাড়ানোর দায় ভোক্তার ওপর চাপানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে সরকারি ভর্তুকি কমানো যেতে পারে। কিন্তু এতে ডলার সংকটেরও সমাধান হবে না, জ্বালানি আমদানি সমস্যারও সমাধান হবে না। তাই বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে লোডশেডিং ঠেকানো যাবে না।’
আরও পড়ুন: বিদ্যুতের দাম বাড়ানো বা লোকসান কমাতে আরও বন্ড ইস্যু নিয়ে দ্বিধায় সরকার
বাগেরহাটে তৈরি কাঠের সাইকেল যাচ্ছে ইউরোপে
বাগেরহাটে বিভিন্ন কাঠ দিয়ে জনপ্রিয় সাইকেল তৈরি করা হচ্ছে। চাকা থেকে শুরু করে সাইকেল তৈরিতে ব্যবহৃত সব সরঞ্জামে কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। বিদেশের বাজারে পরিবেশ বান্ধব ‘বেবি ব্যালেন্স বাইকার’ বাহন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এই সাইকেল। বেবি ব্যালেন্স বাইকার নামে এসব সাইকেল ইউরোপের বাজার দখল করে নিয়েছে।
এরইমধ্যে গ্রিসে ২০ হাজার পিচ বেবি ব্যালেন্স বাইকার রপ্তানি করা হয়েছে। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বিদেশের মাটিতে নতুন বাজার সৃষ্টি করেছে কাঠের এই সাইকেল। সাইকেল বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রা আসছে দেশে। বিদেশের মাটিতে হাটতে শিখা ছোট শিশুরা এই সাইকেল ব্যবহার করছে।
বাগেরহাট বিসিক শিল্প নগরীতে ন্যাচরাল ফাইবার নামে একটি প্রতিষ্ঠানে তৈরি করা হচ্ছে নজরকাড়া কাঠের এই সাইকেল। কাঠের সাইকেলের পাশাপাশি ওই প্রতিষ্ঠানে কাঠ দিয়ে হোটেল বেড,সান বেড, কুকুর-বিড়ালের খেলনাসহ পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন ধরণের ফার্নিচার তৈরি করা হচ্ছে। বিশ্ববাজারে এসব কাঠের পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। নিজেদের হাতে তৈরি কাঠের সাইকেলসহ বিভিন্ন পণ্য বিদেশে রপ্তানি করতে পেরে উদ্যাক্তা এবং শ্রমিকরা বেজায় খুঁশি। সরকারি প্রণোদনা পেলে কাঠের এই সাইকেলে বিশ্ববাজার জয় করবে এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন উদ্যোক্ত মোস্তাফিজ আহম্মেদ।
জানা গেছে, ২০০৫ সালে বাগেরহাট বিসিক শিল্প নগরীতে ন্যাচরাল ফাইবার নামে এই প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। প্রথম দিকে নারকেলের ছোবড়া দিয়ে ম্যাট্রেস, কয়ার ফেল্ট,কোকা পিট, ডিসপোজেবল স্লিপারসহ ছোবড়ার বিভিন্ন পণ্য তৈরি করা হয়। ছোবড়ার ওই সব পণ্য দেশে বিক্রির পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করা হয়। আর ২০২৩ সাল থেকে কাঠের সাইকেল এবং কাঠের বিভিন্ন পণ্য তৈরি শুরু হয় এই প্রতিষ্ঠানে। বাগেরহাটে তৈরি কাঠের সাইকেলসহ কাঠের বিভিন্ন পণ্য বিশ্ববাজারে ক্রেতাদের নজর কেড়েছে। বিদেশের বাজারে চাহিদা থাকায় এই প্রতিষ্ঠানে‘বেবি ব্যালেন্স বাইকার’ এর পাশাপাশি বড়দের জন্যও তৈরি করা হবে কাঠের সাইকেল।
আরও পড়ুন: দেশের রপ্তানিযোগ্য পণ্যের নতুন বাজার খোঁজার নির্দেশ বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর