বিশেষ সংবাদ
সর্বজনীন পেনশন স্কিম: ৬ মাসে ১৯,১৫৮ জনের ২৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা জমা
সর্বজনীন পেনশন প্রকল্পে (ইউপিএস) বিভিন্ন খাতের মানুষের অংশগ্রহণ বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আকর্ষণীয় প্রস্তাব দেওয়ার কর্মসূচি শুরু করেছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ (এনপিএ)।
এ লক্ষ্যে বেসরকারি ব্যাংকের কর্মীসহ প্রবাসী, বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের মধ্যে সুবিধাগুলোকে তুলে ধরা, তালিকাভুক্তির সহজ প্রক্রিয়া ও সুবিধা প্রদানের বিষয়ে কাজ করছে এনপিএ।
ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে এই প্রকল্প জনগণের সাড়া কম পাওয়া প্রসঙ্গে এনপিএ'র সদস্য (সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে) ও অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, জাপান ও কোরিয়ার মতো বিভিন্ন উন্নত দেশ ১৯৬০ সালে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছে। এত বছর পর সেসব দেশে সর্বজনীন পেনশন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে।
‘আমাদের এত সময় লাগবে না। সর্বজনীন পেনশনের বিষয়ে ওই দেশগুলোর অভিজ্ঞতা আমরা দেখেছি,’ বলেন তিনি।
তিনি বলেন, 'শুরুর দিকে তাদেরও আমাদের মতো বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। আমি মনে করি, সেসব দেশের তুলনায় অনেক আগেই সর্বজনীন পেনশন স্কিমে আমরা সফল হব।’
আরও পড়ুন: সুরক্ষা স্কিম: স্ব-নিযুক্ত বা অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মীরা যেভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে রেজিস্ট্রেশন করবেন
তিনি বলেন, প্রায় ৬ মাসে ১৯ হাজার ১৫৮ জন ইউপিএসে যুক্ত হয়েছেন এবং এ পর্যন্ত প্রায় ২৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ফান্ডে জমা হয়েছে।
গোলাম মোস্তফা বলেন, এনপিএ জনগণের আমানত রক্ষায় অত্যন্ত সচেতন। এ তহবিল থেকে সরকার কোনো ঋণ নিতে পারবে না।
বরং ‘আমরা ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করি, যেখানে বিল ও বন্ডে বিনিয়োগের আয় নিশ্চিত হয়। ফলে এই তহবিল নিয়ে মানুষের মধ্যে কোনো শঙ্কা-দ্বিধা থাকবে না।’
দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট বহুল আলোচিত অভিন্ন পেনশন স্কিমের যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। এই উদ্যোগ ১৮ বছরের বেশি বয়সী দেশের সমস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য। এই স্কিমের অধীন প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী নাগরিকরা ৬০ বছর বয়স হওয়ার পর থেকে আজীবন পেনশন সুবিধা উপভোগ করতে শুরু করবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ এখনও এই আর্থিক সুরক্ষা সম্পর্কে সচেতন নয়। এজন্য এনপিএ প্রবাসীদের অংশগ্রহণ আরও সহজ করতে চায়। পাশাপাশি দেশের মানুষের মধ্যে ইউপিএস প্রচারে আকর্ষণীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশনে উৎসাহিত করতে তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে (সিইও) নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আরও পড়ুন: সমতা স্কিম: স্বল্প আয়ের ব্যক্তিরা যেভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিম-এ রেজিস্ট্রেশন করবেন
জাতীয় পেনশন স্কিম বাস্তবায়নে নতুন উদ্যোগের অংশ হিসেবে গত ৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ এ নির্দেশনা দেয়। উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য সব ব্যাংকের এমডিদের কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়, সরকার সর্বস্তরের মানুষকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা চক্রে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। সরকারের এ উদ্দেশ্য পূরণে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংক ব্যতীত অন্যান্য ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশ নিতে পারবেন।
তাই বেসরকারি ব্যাংকের এমডিদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
পাশাপাশি সরকারি পেনশন স্কিমে ব্যাংক হিসাবের উৎসে কর ও আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর পেনশন স্কিমে বিনিয়োগের ওপর কর রেয়াত এবং পেনশন আয়ের ওপর কর অব্যাহতি প্রদানের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
আরও পড়ুন: জাতীয় পেনশন স্কিম: প্রবাসীদের আকৃষ্ট করছে না প্রবাস স্কিম
এই পর্যায়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বাণিজ্যিক ব্যাংকে পরিচালিত সরকারি পেনশন স্কিমের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে উৎসে কর ও আবগারি শুল্ক মওকুফ করা প্রয়োজন। বর্তমানে ব্যক্তি, কোম্পানি ও অন্যান্য তহবিল নির্বিশেষে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের স্থিতি অনুসারে আবগারি শুল্ক কাটা হয়।
অর্থনীতিবিদ ড. এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, জনগণের মধ্যে আস্থার অভাব এবং প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনের অভাবের কারণে পেনশন স্কিমের প্রতি মানুষের আগ্রহ কম।
তিনি বলেন, পেনশন প্রকল্পের টাকা কোথায় বিনিয়োগ হবে, কীভাবে লাভবান হবে বা লোকসান হবে সে সম্পর্কে মানুষ এখনও সচেতন নয়।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ ধরনের প্রকল্পের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ে।
তিনি বলেন, ‘তবে তাদের সুষ্ঠু প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনও রয়েছে, যেটির অভাব এখানে রয়েছে। তাই আগামী দিনে এই প্রকল্পের কী হবে তা সময়ই বলে দেবে।’
আরও পড়ুন: সর্বজনীন পেনশন স্কিম: প্রথম মাসে নিবন্ধন ১৩ হাজারের নিচে
যশোরের ৮১% প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই শহীদ মিনার
যশোরে ১ হাজার ২৮৯ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১ হাজার ৩৯টিতে শহীদ মিনার নেই। অর্থাৎ, আছে মাত্র ২৫০টি বিদ্যালয়ে।
যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই সেখান শিক্ষার্থীদের কলাগাছ, কাঠ অথবা মাটি দিয়ে তৈরি অস্থায়ী শহীদ মিনার কিংবা অন্য প্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনারে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হয়। এ নিয়ে নানা ধরনের বিরূপ মন্তব্য রয়েছে মানুষের মধ্যে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, যশোরের ৮ উপজেলায় মোট ১ হাজার ২৮৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৫০, চৌগাছায় ১৩৯, ঝিকরগাছায় ১৩১, কেশবপুরে ১৫৮, শার্শায় ১২৫, অভয়নগরে ১১৭, মণিরামপুরে ২৬৭ ও বাঘারপাড়ায় ১০২টি।
তথ্যানুযায়ী এসব প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৪টি, চৌগাছায় ৮টি, ঝিকরগাছায় ১৯টি, কেশবপুরে ১৭টি, শার্শায় ২৪টি, অভয়নগরে ৫৩টি, মণিরামপুরে ৮৫টি ও বাঘারপাড়ায় ২০টিতে শহীদ মিনার রয়েছে।
আরও পড়ুন: ২১শে ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাতায়াতের রুট নির্ধারণ
উপজেলা
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা
শহীদ মিনারের সংখ্যা
সদর
২৫০
২৪
চৌগাছা
১৩৯
৮
ঝিকরগাছা
১৩১
১৯
কেশবপুর
১৫৮
১৭
শার্শা
১২৫
২৪
অভয়নগর
১১৭
৫৩
মণিরামপুর
২৬৭
৮৫
বাঘারপাড়া
১০২
২০
কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানীয়ভাবে অনুদান সংগ্রহ করে শহীদ মিনার নির্মাণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এর জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ নেই। আর শিক্ষকরা বলছেন, স্থানীয়ভাবে অনুদান সংগ্রহ করা কঠিন ব্যাপার। তাছাড়া, একটি শহীদ মিনার নির্মাণে কয়েক হাজার টাকা দরকার। যা কোনোভাবেই স্থানীয়ভাবে জোগাড় করা সম্ভব না।
আরও পড়ুন: নড়াইলে ৪৪৪ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার!
শিক্ষাবিদরা বলছেন, ‘সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন খাতে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা অনুদান দিচ্ছে। যার একটি বড় অংশ লুটপাট হয়ে যায়। বহু স্কুলে এসব খাতের টাকার একটি অংশ ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আর প্রধান শিক্ষকরা ভাগাভাগি করে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও কোনো কোনো স্কুলে বরাদ্দের পুরো অর্থ ব্যয় হয়ে থাকে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ওইসব স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সততা আর দৃঢ়চেতা মনোভাবের কারণে এটি সম্ভব হয়।’
তারা আরও বলেছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করে সরকার ভবন নির্মাণ করছে। অনেক স্কুলে অহেতুক ভবন করা হচ্ছে। অথচ শহীদ মিনার নির্মাণ করে দিচ্ছে না।
যশোর শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আমিরুল আলম খান বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো পুরোপুরি সরকারি অর্থায়নে চলে। এ কারণে শহীদ মিনার নির্মাণের দায় একেবারেই সরকারের। সরকারি উদ্যোগেই শহীদ মিনার হওয়া উচিৎ।
সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকা জরুরি। কিন্তু সরকারিভাবে বরাদ্দ না থাকায় তা হচ্ছে না। যেগুলোতে আছে সেগুলো স্থানীয়ভাবে করা হয়েছে। শহীদ মিনারের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দ থাকলে ভালো হয়।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফুল আলম বলেন, ‘শহীদ মিনার নির্মাণে সরকারিভাবে বরাদ্দ না থাকায় অনেক স্কুলে তা নেই। তারপরও সব স্কুল কর্তৃপক্ষকে স্থানীয়ভাবে অর্থ জোগাড় করে শহীদ মিনার নির্মাণে উদ্বুদ্ধ করা হবে। গোটা বিশ্বে ভাষার জন্য জীবনদানের নজির একমাত্র বাংলাদেশে। আর শহীদ মিনার ভাষা শহীদদের জীবনদানের স্মৃতি চিহ্ন।’
ভাষা আন্দোলনের রক্তরাঙা পথ ধরে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়। দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয় তার অনুপ্রেরণা ছিল ভাষা আন্দোলন। সেই ভাষা আন্দোলনের প্রতীক শহীদ মিনার স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ না হওয়া দুঃখজনক বলে মনে করেন অনেক শিক্ষাবিদ।
আরও পড়ুন: রাণীশংকৈলে অধিকাংশ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই
উন্নতির দাবি তিতাসের, তবে ঢাকা-গাজীপুর-নারায়ণগঞ্জের শিল্প-কারখানায় এখনো তীব্র গ্যাস সংকট
ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের শিল্প-কারখানায় তীব্র গ্যাস সংকট অব্যাহত। এরপরও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিবেশক তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি দাবি করছে, পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
এর আগে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, মধ্যাঞ্চলের এই জেলাগুলোর শিল্পাঞ্চলের পোশাক ও বস্ত্র খাতগুলো গত কয়েক মাস ধরে তীব্র গ্যাস সংকটে ভুগছে।
গাজীপুরের গ্রুপ অব টেক্সটাইল কারখানার শীর্ষ পর্যায়ের ব্যবস্থাপক ইউএনবিকে বলেন, 'কারখানাগুলো ভয়াবহ সংকটে রয়েছে।’
আরও পড়ুন: পিজিসিএলের আওতাধীন এলাকায় ৬০ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধের ঘোষণা
তিনি অভিযোগ করেন, গাজীপুরের বেশিরভাগ শিল্প কারখানা তাদের উৎপাদনের সময়ে পর্যাপ্ত গ্যাস পায় না। অথচ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সময়েই তাদের মেশিনগুলো চালু রাখা দরকার। অপর্যাপ্ত সরবরাহের কারণে গ্যাসের চাপ খুবই কম থাকে।
কম চাপসম্পন্ন গ্যাসের প্রবাহ কম ভোল্টেজের বিদ্যুতের মতো - বৈদ্যুতিক চার্জ থাকা সত্ত্বেও অনেক যন্ত্রপাতি চলবে না।
বস্ত্র গ্রুপের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্যাস সরবরাহ না থাকায় বিভিন্ন কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং সেগুলো বন্ধের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।
চলমান গ্যাস সংকটে কারখানার ডাইং সেকশনের জেনারেটর, ব্রয়লারের মতো গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি চালানো হচ্ছে না। এতে শিল্প উৎপাদন অব্যাহত রাখতে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে এবং বিপুল আর্থিক ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এক শিল্প মালিক বলেন, ‘পরিস্থিতির উন্নতি না হলে অনেক শিল্প কারখানা আসন্ন ঈদে বেতন ও উৎসব বোনাস দিতে পারবে না।’
খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, গাজীপুরের কালিয়াকৈরসহ অন্যান্য এলাকায় তিন শতাধিক কারখানা রয়েছে।
এই সমস্ত শিল্প তীব্র গ্যাস সংকটে ভুগছে এবং তাদের মধ্যে কয়েকটি তাদের উৎপাদন বন্ধ রেখেছে।
প্রতিটি কারখানায় এক হাজারের বেশি শ্রমিক রয়েছে। কিন্তু গ্যাস সংকটের কারণে তাদের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা কমাতে হচ্ছে। আবার তাদের কেউ কেউ তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য উচ্চ মূল্যে সিএনজি ব্যবহার করছে।
মিরপুর, টঙ্গী ও নারায়ণগঞ্জ এলাকাতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) কার্যকরী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
তিনি বলেন, দাম বাড়ালেও সরকার পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না।
তিনি বলেন, ‘গ্যাসের অভাবে পোশাক কারখানার উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। এরই মধ্যে অনেক ক্রেতা নির্ধারিত সময়ে পণ্য সরবরাহে ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে জাহাজের পরিবর্তে বিমানে পণ্য পাঠানোর জন্য চাপ দিচ্ছেন। কিছু ক্রেতা দামের ক্ষেত্রে ছাড় চাইছেন।’
তিনি বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে কিছু গ্রাহক বিরক্ত হয়ে অর্ডার বাতিল করেন।’
সম্প্রতি বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজও (বিসিআই) অভিযোগ করেছে, গ্যাস সংকটের কারণে দেশের কোনো শিল্পই সম্পূর্ণ সক্ষমতা অনুযায়ী চলতে পারছে না।
আরও পড়ুন: আগামী ৪ বছরের মধ্যে গ্যাসের শতভাগ প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হবে: প্রতিমন্ত্রী
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের কার্যালয়ে সাক্ষাতের সময় বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরীর (পারভেজ) নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এ অভিযোগ করেন।
শিল্প খাতের এ সংগঠন বলছে, সরকার তাদের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করবে এই আশায় আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ানোর অজুহাতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে।
বিসিআইয়ের এক বিবৃতেত বলা হয়, ‘তবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম কমার প্রবণতা থাকলেও আবারও বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে বলে শোনা যাচ্ছে।’
এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান দরকার। ‘বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে শিল্প খাতকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দিলে সে অনুযায়ী এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।’
তিতাস গ্যাসের মহাব্যবস্থাপক অর্পনা ইসলাম গ্যাস সংকটের কথা স্বীকার করেছেন। তবে সম্প্রতি গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর পদক্ষেপের ফলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
অদূর ভবিষ্যতে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতির কোনো সম্ভাবনা আছে কি না- জানতে চাইলে তিনি পেট্রোবাংলার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
পেট্রোবাংলার পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, গত এক মাসে সারা দেশে গ্যাসের সরবরাহ বেড়েছে দৈনিক মাত্র ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফডি) বা তার কাছাকাছি, যার ফলে উৎপাদন ও সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে প্রায় দেড় হাজার এমএমসিএফডি।
পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, চার হাজার এমএমসিএফডি চাহিদার বিপরীতে ১৬ ফেব্রুয়ারি বিদেশ থেকে আমদানিসহ ২ হাজার ৬৭১ এমএমসিএফডি গ্যাস উৎপাদন হয়েছে।
তিতাস গ্যাসের তথ্যে আরও দেখা যায়, গ্যাস সংকটের কারণে প্রায় ৩০টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যক্রম এখন বন্ধ রয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটের কৈলাশটিলায় আরও ১.৬ টিসিএফ গ্যাস পাওয়া যাবে: প্রতিমন্ত্রী
সুন্দরবন দিবস: বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনে বাড়ছে পর্যটকের সংখ্যা
আজ সুন্দরবন দিবস। বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়গুলোর অন্যতম সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। এটির রয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমিরও খ্যাতি। প্রাণ ও প্রকৃতির এক লীলাভূমি এই বনে রয়েছে নানা প্রজাতির উদ্ভিদ, পাখি, উভচর, সরীসৃপ ও স্তন্যপায়ী প্রাণী।
ভালোবাসাময় সুন্দরবনকে দেখতে প্রতিবছর দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে আসছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। সঙ্গে বেড়েছে রাজস্ব আয়ও।
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মূলত অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীত মৌসুমে সুন্দরবনে পর্যটকরা আসেন। সেই সময়ের সুন্দরবনের নদী এবং খালগুলো যথেষ্ট ঠান্ডা থাকে এবং আবহাওয়া অনুকূল থাকে।
গত ৫ অর্থ বছরে বেড়েছে সুন্দরবনে দেশি-বিদেশি পর্যটক। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে সুন্দরবনে দেশি-বিদেশি পর্যটক এসেছিলেন ১ লাখ ৮৯ হাজার ৫৭০ জন। যার মধ্যে দেশি পর্যটক ছিলেন ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩০৯ জন এবং বিদেশি পর্যটক ২ হাজার ২৬১ জন। এতে রাজস্ব আয় হয় ১ কোটি ৫১ লাখ ৭৪ হাজার ৩৯০ টাকা।
২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে সুন্দরবনে এসেছেন ১ লাখ ৭২ হাজার ৯৭৯ জন পর্যটক। যার মধ্যে দেশি পর্যটক ছিলেন ১ লাখ ৭০ হাজার ৬৩ জন এবং বিদেশি পর্যটক ২ হাজার ৩১৭ জন। এতে রাজস্ব আয় হয় ১ কোটি ৮৭ লাখ ৬৫ হাজার ৮ টাকা।
আরও পড়ুন: উপকূলে ‘সুন্দরবন দিবস’ পালন
বিদ্যুতের দাম বাড়ানো বা লোকসান কমাতে আরও বন্ড ইস্যু নিয়ে দ্বিধায় সরকার
বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ও বিক্রয় থেকে উৎপন্ন রাজস্বের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনতে সঠিক বিকল্প বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার দ্বিধায় রয়েছে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারের বিদ্যুতের দাম আরও বাড়ানো উচিত নাকি ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে আরও বন্ড ইস্যু করা উচিত তা নিয়ে শীর্ষ নীতিনির্ধারকরা বিভক্ত।’
তিনি বলেন, সরকার যদি বিদ্যুতের দাম বাড়াতে চায়, তাহলে হয় রমজানের আগে করতে হবে বা রমজানের পরে- এই প্রশ্নগুলো প্রায় প্রতিদিনই নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচিত হচ্ছে।
বিপিডিবির ক্রমবর্ধমান লোকসানের বোঝা কমাতে তারা আরও বন্ড ইস্যু করার প্রভাবও বিশ্লেষণ করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ১২ টাকা, যেখানে বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৬ টাকা ৭০ পয়সা দরে।
বিপিডিবির এক শীর্ষ কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, এর অর্থ সরকারকে প্রতি ইউনিটে ৫ দশমিক ৩ টাকার অতিরিক্ত বোঝা বহন করতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: জরুরি ভিত্তিতে অবৈধ বিদ্যুতের লাইন বিচ্ছিন্ন করার সুপারিশ সংসদীয় কমিটির
বিপিডিবির ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, একক ক্রেতা হিসেবে বিপিডিবি এই অর্থবছরে মোট ৯৮ হাজার ৬৪৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮৭ হাজার ২৪ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে।
এর প্রতি ইউনিটের উৎপাদন খরচ ১১ টাকা ৩৩ পয়সা এবং প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করতে খরচ হয়েছে ৬ টাকা ৭০ পয়সা, লোকসান হয়েছে প্রায় ৪ টাকা ৬৩ পয়সা।
সর্বশেষ গত বছরের জানুয়ারিতে পাইকারি শুল্ক ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ বাড়িয়ে প্রতি ইউনিট ৬ টাকা ২০ পয়সা থেকে ৬ টাকা ৭০ পয়সা করা হয়। সেটি কার্যকর হয় একই বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে।
এর বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব আয় হয়েছে ৫০ হাজার ৮৫৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা, যার ফলে লোকসান হয়েছে ৪৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
এই বিশাল লোকসানে সরকার চরম বিপাকে পড়েছে কারণ বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে ৮২ হাজার ৭৭৮ কোটি ২৫ লাখ টাকার বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে। একই সময় নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কেন্দ্র থেকে ১৩ হাজার ৩০৬ কোটি ৬২ লাখ টাকার বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।
বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিপিডিবির নিজস্ব কেন্দ্রে গড়ে প্রতি ইউনিট উৎপাদন খরচ ৭ টাকা ৬৩ পয়সা, স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান (আইপিপি) থেকে ১৪ টাকা ৬২ পয়সা, রেন্টাল কেন্দ্রে ১২ টাকা ৫৩ পয়সা, পাবলিক প্লান্টে ৬ টাকা ৮৫ পয়সা এবং ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের খরচ ৮ টাকা ৭৭ পয়সা।
সরকার বেসরকারি খাত ও ভারত থেকে ডলারে বিদ্যুৎ কেনে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, সরকারের জমা হওয়া বকেয়া বিল এখন প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এরমধ্যে বিদ্যুৎ খাতে বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৪৩ হাজার ৯৩ কোটি টাকা) এবং বাকি ১ বিলিয়ন ডলার জ্বালানি খাতে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও সংকটের ভয়াবহতার কথা স্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আসলে সংকটটা স্থানীয় মুদ্রার নয়। যেভাবেই হোক আমরা ম্যানেজ করতে পারব। তবে মূল সংকট ডলার নিয়ে। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আমাদের চাহিদা অনুযায়ী ডলার পাচ্ছি না।’
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ঋণ পরিশোধের জন্য প্রতি মাসে কমপক্ষে ১০০ কোটি ডলার প্রয়োজন।
এমন পরিস্থিতিতে বিপিডিবির কিছু পাওনা পরিশোধের সুবিধার্থে সরকার সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি বন্ড চালু করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিপিডিবির ওই কর্মকর্তা বলেন, 'প্রাথমিকভাবে আমরা ৫ হাজার কোটি টাকার বন্ড ছেড়েছি এবং এটি বেড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এজন্য সরকারকে বিদ্যুতের দাম আরও বাড়াতে হবে বা আরও বন্ড চালু করতে হবে। যদি আরও বন্ড দেওয়া হয় তবে এটি ব্যাংকিং খাত থেকে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহকে সংকুচিত করতে পারে।’
তবে তারা কী করবেন সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও ঝুলে রয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে আরও ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত রপ্তানির প্রস্তাব আদানি গ্রুপের: সূত্র
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ইউটিউব দেখে চিয়া সিড চাষে উদ্বুদ্ধ, লাভের প্রত্যাশা
ইউটিউব দেখে চিয়া সিড চাষে উদ্বুদ্ধ হন চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার কালুপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল জাব্বার। এরপর কৃষি বিভাগের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে ৩ বিঘা জমিতে চিয়ার আবাদ করেন তিনি।
শুরুতে মনে কিছুটা সংশয় থাকলেও এখন জমিতে ফসল দেখে তার চোখে-মুখে আশার ঝিলিক দেখা দিয়েছে। আর ক’দিন পরেই ঘরে তুলবেন ফসল এবং লোকসান নয়, বরং লাভের আশা করছেন তিনি।
জেলার সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের ঠাকুরপালশা এলাকায় দেখা যায় চিয়া সিডের খেত। সেখানে কথা হয় চাষি আব্দুল জাব্বারের সঙ্গে।
তিনি বলেন, প্রথমে আমি ইউটিউব থেকে চিয়া সিডের চাষ সম্পর্কে জানতে পারি। এরপর উপজেলা কৃষি অফিসের একটি প্রশিক্ষণে বলা হয় চিয়ার চাষ সম্পর্কে। কৃষি কর্মকর্তা বলেন যে আপনি যদি চিয়া সিডের চাষ করেন তাহলে আপনাকে সহায়তা করা যাবে।
আরও পড়ুন: পঞ্চগড়ে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে চিয়া সিড
আব্দুল জাব্বার বলেন, ‘আমি ৩ বিঘা জমিতে চিয়া সিডের চাষ করেছি। কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে বীজ, সার ও পরামর্শ যা লাগে তা দিয়েছে। ৭৫০ গ্রাম বীজ, ইউরিয়া ১০০ কেজি, ডিএপি ১৫০ কেজি, এমওপি ১০০ কেজি আর ভার্মিকম্পোস্ট ৩০০ কেজি পেয়েছি। পরে ১০০ কেজির মতো ইউরিয়া ও ভার্মিকম্পোস্ট নিজে কিনে জমিতে দিয়েছি আর দুই বার সেচ দিয়েছি।’
তিনি বলেন, বর্তমানে ফসলের চেহারা বেশ ভালো আছে। ফুল থেকে ফল পাকতে শরু করেছে। অল্প ক’দিন পরে ফসল কাটা শুরু করব। বিঘায় প্রণোদনা বাদে খরচ ২ হাজার টাকার মতো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কৃষি কর্মকর্তরা বলেন যে এক বিঘায় ২ থেকে আড়াই মণ অর্থাৎ ৮০ থেকে ১০০ কেজি ফলন পাওয়া যায়। তবে আমার জমিতে যদি বিঘায় ৬০ থেকে ৭০ কেজিও ফলন হয় তাতেও আমার লাভ হবে। কারণ, বাজারে এই ফসল ৫০০-৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পারব।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে চাষ হচ্ছে ওষুধি ও পুষ্টিগুণের বিদেশি ফসল চিয়া সিড
জাব্বার জানান, এ ফসলের সব থেকে ভালো দিক হচ্ছে এর কোনো রোগ-বালাই নেই। পোকা বা রোগ-বালাই দমনে কোনো ধরনের স্প্রে করতে হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ‘এটি সম্ভাবনাময় একটি ফসল। প্রথম দিকে কিছুটা সংশয় থাকলেও এখন বলব এ বছর নতুন হিসেবে খারাপ হবে না। আগামীতে আরও ভালো করব আশা করছি।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে কৃষকদের চিয়া সিড চাষে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষে এবার কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় প্রথমবারের মতো জেলার ৮৫ জন কৃষককে বিনামূল্যে বীজ, রাসায়নিক সার, জৈব সার ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
পরীক্ষামূলকভাবে জেলার ৫ উপজেলায় মোট ৭ হেক্টর জমিতে চিয়া সিডের চাষ হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাটি ও আবহাওয়া অনুকূল থাকায় চিয়া সিডের ফলন ভালো হবে এবং চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
আরও পড়ুন: যশোরের কৃষকদের আশা দেখাচ্ছে ‘চিয়া’ চাষ
খুলনার আবু নাসের হাসপাতালে জনবল সংকট, সেবা দিতে হিমশিম
জনবল সংকট সমস্যার সমাধান যেন নেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের।
২০১০ সালে ৩০ মার্চ মাত্র ৩০টি শয্যা নিয়ে শুরু হয় এ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। বর্তমানে ২৫০শয্যায় উন্নীত হলেও রয়েছে জনবল সংকট।
এতো বড় হাসপাতালে মাত্র ১ জন ফার্মাসিস্ট রয়েছেন। তাছাড়া চিকিৎসক ও মেডিকেল অফিসার সংকটতো রয়েছেই। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দ্বারা কাজ চালানো হচ্ছে।
এছাড়া গেল কয়েক মাস আগে পদোন্নতি পেয়ে অন্যত্র বদলি হয়ে গেছেন কয়েকজন সিনিয়র কনসালটেন্ট। আর সেই সঙ্গে আরও কয়েকজন চিকিৎসক বদলি হওয়ার আদেশের অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।
হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিন হাজারো মানুষ ১০ টাকার টিকিট কেটে সেবা নিচ্ছেন। যেখানে রয়েছে কার্ডিওলজি বিভাগ সিসিইউ, পোস্ট সিসিইউ, গাইনি, নিউরোলজি, নেফ্রোলজি, ইউরোলজি, অর্থপেডিক্স মেডিসিন, ডায়াবেটিস, নিউরো মেডিসিন, মেডিসিন, ফিজিওথ্যারাপি, নিউরো সার্জারি, হোমো ডায়ালাইসিস, দন্ত বিভাগ, বার্ন এন্ড প্লাস্টিক ইউনিটসহ ইনটেনসিভ কেয়ার আইসিইউ সাপোর্টের ব্যবস্থা।
আরও পড়ুন: খুলনায় ২৭০ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে লাইসেন্স আছে ৯৮টির
এক সময় যা গরীব অসহায় মানুষের জন্য এ সব ব্যয়বহুল চিকিৎসা ছিল শুধুই স্বপ্ন। পাশাপাশি মুমূর্ষু রোগীদের জন্য কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য মনিটর, আলট্রাসনো, সিটিস্কান, এমআরআই, ইকো, ইটিটি, ইসিজি, ইটিটি, ডক শর্ট দেওয়ার ব্যবস্থাসহ কার্ডিয়াক মনিটর, লাইফ সাপোর্ট ভেন্টিলেটার ও স্বল্প খরচে প্যাথলজি পরীক্ষার সুবিধা রয়েছে।
হাসপাতালটিতে গরীব অসহায় রোগী ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোনো টাকা নেওয়া হয় না। এ ছাড়া স্বল্প খরচে এমআরআই, এক্স-রে, সিটিস্ক্যান, আল্ট্রাসনোগ্রাম ও ইকোসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুবিধা রয়েছে। তবে এত সব থাকলেও নেই চাহিদামতো জনবল। বিশেষ করে ৪র্থ শ্রেণীর চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী সংকট আরও তীব্র হচ্ছে।
এখানে প্রতিনিয়ত বহির্বিভাগের সামনে রোগীদের চিৎকার, চেঁচামেচি শোনা যায়। তবে, এর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। একজন মাত্র টেবিল বয়কে রোগীর টিকিট জমা নিতে দেখা গেছে।
ভুক্তভোগী রোগী শেখ রহিমা বলেন, ‘আমি কার্ডিওলজি বিভাগে ১১২নং কক্ষে টিকিট জমা দিতে পারিনি। কারণ হলো অতিরিক্ত রোগীর চাপ, আর দায়িত্বে আছে মাত্র একজন টেবিল বয়। আমি এতো ভিড়ের মধ্যে টিকিট জমা দিতে পারিনি। এখন বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে। এর থেকে ভালো হবে টাকা কিছু খরচ করে ডাক্তারের ব্যক্তিগত চেম্বারে গিয়ে নিরিবিলি সেবা নেওয়া।’
আরও পড়ুন: পরিবেশগত ছাড়পত্রের মেয়াদ অনেক আগেই শেষ, খুলনায় তবুও চলছে ইটভাটা
নাম না প্রকাশ করার শর্তে চুক্তিভিত্তিক এক কর্মচারী বলেন, ‘প্রতিদিন হাজার, হাজার রোগী বহির্বিভাগে সেবা নিতে আসেন। আমাদের উপর মারাত্মক চাপ পড়ে। তারপরও চাকরি করতে হয়। এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে কী করব!’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে তিন শিফট ডিউটি করতে হয়। আমাদের ১৩৩ জন চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী রয়েছেন। এর মধ্যে চালক, মালীসহ অন্যান্য কর্মচারী আছেন। যারা রোগীর সেবার কাজে নিয়োজিত নেই। অন্যান্য হাসপাতালে সরকারিভাবে ৪র্থ শ্রেণী কর্মচারী থাকলেও আমাদের নেই। প্রতি বছর শোনা যায় জনবল বৃদ্ধি হবে, কষ্ট কম হবে। তবে এখনও আগের মত অবস্থানে আছে।’
এ ব্যাপারে হাপাতালের পরিচালক ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, জনবল সংকট আছে। এছাড়া আরও কিছু শয্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। যে কারণে আরও জনবল সংকট হয়ে গেছে। বিশেষ করে ফার্মাসিস্ট, মেডিকেল অফিসার ও আনসার সদস্য, চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী।
তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালে জনবল ঘাটতি থাকলেও সেবা বন্ধ করা যাবে না। হয়তো একটু বেশি পরিশ্রম করতে হবে। চুক্তিভিত্তিক জনবল সংকট আছে, বৃদ্ধিকরণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স কাউন্টার!
নওগাঁয় রঙিন ফুলকপি চাষে সফলতা
নওগাঁয় রঙিন (বেগুনি ও হলুদ) ফুলকপি চাষ করে সফল হয়েছেন কৃষক জালাল হোসেন।
সদর উপজেলার হাপানিয়া ইউনিয়নের কসবা গ্রামে বাড়ির পাশে এই কৃষক ১২ শতক জমিতে চাষ করেছেন রঙিন ফুলকপি। বাহারি রঙের ফুলকপি চাষ করে এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছেন তিনি।
প্রতিদিনই হলুদ, বেগুনি রঙের ফুলকপি দেখতে ও কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। আকারে বড় এবং দামেও বেশি এসব ফুলকপি থেকে লাভের মুখ দেখছেন তিনি।
কৃষক জালাল হোসেন বলেন, গত বছর তিনি নওগাঁর স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা ‘মৌসুমী’ থেকে কৃষি বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণে ভিডিও ফুটেজে রঙিন ফুলকপি চাষ দেখে সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সংস্থাটির কারিগরি সহযোগীতায় প্রথমবারের মতো এক হাজার চারা এনে জমিতে রোপণ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি যখন জমিতে ফুলকপি চাষ করি, তখন অনেকেই বলছিলেন এই ফুলকপি এই এলাকায় ভালো হবে না। খেতে যদি খারাপ লাগে তখন কে নেবে?’
আরও পড়ুন: উচ্চ ফলনশীল গাজরের জাত উদ্ভাবন, হেক্টরপ্রতি ফলন ৩০ টন
জালাল বলেন, ‘তাদের কথায় ভেঙে পড়িনি। আমার মনে জোর ছিল যে বাজারে বিক্রি করতে পারব। সেই আশায় চাষ করে বেশ সাড়া পেয়েছি এবং আর্থিকভাবেও সফল হয়েছি। ১২ শতক জমিতে দুই রকমের ফুলকপি চাষ করেছি। খরচ হয়েছে প্রায় ৮ হাজার টাকা। প্রতি পিচ কপি ৪০-৫০টাকা দামে বিক্রি করছি। এখন পর্যন্ত ২০ হাজার টাকার মতো কপি বিক্রি করেছি।’
তিনি বলেন, ‘জমিতে যে পরিমাণ ফুলকপি আছে, তা বর্তমান বাজার দরে আরও ২৫ হাজার টাকা বিক্রি করা যাবে। ৮ হাজার টাকা খরচ করে ৪৫ হাজার টাকার রঙিন ফুলকপি বিক্রি করতে পারব। আমার জমিতে রঙিন ফুলকপি চাষ দেখে এলাকার কৃষকরা বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আগামী বছর অনেকেই বাহারি রঙের ফুলকপি চাষ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বাহারি রঙের ফুলকপি চীনে খাওয়া হয় সালাদ হিসেবে। সাদা ফুলকপির চেয়ে রঙিন ফুলকপির পুষ্টিগুণ বেশি। বাজারেও চাহিদা বেশি। দেখতে সুন্দর এ কপি আধাসিদ্ধ করেই খাওয়া যায়। কম খরচ ও কম পরিশ্রমে চাষ করে লাভবান হওয়া সম্ভব।
এক্ষেত্রে জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের বদলে ব্যবহার করা হয়েছে জৈব সার ও ফেরোমন ফাঁদ। চারা রোপণের ৭০-৮০ দিনের মধ্যেই কপি বিক্রি করা যায়। একেকটি কপির ওজন হয় প্রায় দুই কেজি।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে সরিষার আবাদ বেশি হওয়ায় মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌয়ালরা
কসবা গ্রামে রঙিন ফুলকপি দেখতে ও কিনতে আসেন একই গ্রামের মোখলেছুর, আসাদুজ্জামান, সেলিনা ও মোরশেদা। তারা বলেন, ‘প্রথমবার এমন বাহারি রঙের ফুলকপি দেখলাম। জালাল ভাইয়ের কাছ থেকে হলুদ ও বেগুনি রঙয়ের ফুলকপি কিনলাম। বাহারি রঙের ফুলকপি দেখতেও বেশ ভালো লাগছে।’
মৌসুমী’র কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান আরিফ বলেন, ‘উচ্চ ফলনশীল ও উচ্চমূল্যের নতুন ফসলজাত প্রচলন প্রদর্শনীর আওতায় হলুদ রঙের ভ্যালেন্টিনা এবং বেগুনি রঙের ক্যারেটিনা জাতের এ ফুলকপি পরীক্ষামূলক প্রদর্শনী হয়েছে। সফলতা আসায় আগামীতে এ অঞ্চলে সবজিটি ব্যাপকভাবে চাষাবাদ করানো হবে। কৃষক জালাল হোসেনের মাধ্যমে এ বাহারি ফুলকপির আবাদ করানো হয়। নওগাঁয় এটাই প্রথম রঙিন জাতের ফুলকপি চাষ।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমার জানা মতে নওগাঁয় প্রথমবার জালাল হোসেন বাহারি রঙের ফুলকপি চাষ করে সফল হয়েছেন। যা এলাকার অন্য কৃষকদের মাঝে বেশ আগ্রহ তৈরি করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রঙিন ফুলকপিতে ভিটামিন এ সি কে, ফলিক অ্যাসিড, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, এন্টিঅক্সিডেন্টসহ মানবদেহে উপকারী বিভিন্ন উপাদান আছে। সাধারণ ফুলকপি যেখানে ২০-৩০ টাকায় বিক্রি হয়; সেখানে এটি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়। আশা করা যাচ্ছে, আগামীতে রঙিন ফুলকপি চাষ অনেকটাই বাড়বে।’
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে ফুলকপি ও বাঁধাকপির বাম্পার ফলন
অরক্ষিত রেলক্রসিং: ফেনীতে ৪ মাসে ৮ জনের মৃত্যু
অরক্ষিত রেলক্রসিং আর অসচেতনতায় ফেনীতে ট্রেনে কাটাপড়ে গত ৪ মাসে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন।
কেউ সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মারা গেছেন, মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রেললাইন দিয়ে হাঁটার সময়ও ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন কেউ। আবার কেউ হেডফোনে গান শুনতে শুনতে ট্রেনে কাটা পড়েছেন। অনেক সময় চালক ও পথচারীরা দ্রুত রেললাইন পার হওয়ার চেষ্ঠা করে দুর্ঘটনার শিকার হন তারা।
বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ফেনী রেলস্টেশনের কাছে সহদেবপুর রেলক্রসিং এলাকায় রেললাইন পারাপারের সময় ট্রেনের ধাক্কায় এক নারী দলিল লেখক নিহত হয়েছেন।
নিহত নারীর নাম স্বপ্না রানী দেবী (৪২)। তিনি ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের সেকান্দরপুর গ্রামের পরিমল চন্দ্র ভৌমিকের স্ত্রী।
আরও পড়ুন: অরক্ষিত রেলক্রসিং অধিকাংশ রেল দুর্ঘটনার জন্য দায়ী
গত ৪ মাসে (অক্টোবর থেকে জানুয়ারি ) রেলপথের ফেনী অংশে ট্রেনে কাটা পড়ে ৮ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। নিহত ৮ জনের ৩ জন অজ্ঞাত, এছাড়া ফরিদা ইয়সমিন (৩৩), মো. রুবেল (৪৫), মো. শরীফ (২৭), ও শহীদুল ইসলাম (২৫) মারা যান। এ ছাড়া গত ২০২২ সালের ১১ অক্টোবর ভোরের দিকে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফতেহপুর রেলক্রসিংয়ে যাত্রীবাহী বাস রেললাইনে উঠে পড়লে ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটে। এতে ৪ জন প্রাণ হারান।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ফেনী অংশে শশর্দী থেকে মুহুরীগঞ্জ পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ২৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে অনুমোদনহীন অরক্ষিত ১২টি ও ২২টি অনুমোদিত রেলক্রসিং রয়েছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) রিটন চাকমা বলেন, ‘প্রতিনিয়ত ইচ্ছেমতো রেলের ওপর দিয়ে পথ তৈরি করা হচ্ছে। অনুমোদনহীন এসব ক্রসিংগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে মুহুরীগঞ্জে। এখানে ৬টি অনুমোদনহীন রেলক্রসিং তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া শর্শদী, দেওয়ানগঞ্জ, ফাজিলপুরে রয়েছে আরও ৬টি। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে মুহুরীগঞ্জ। অনুমোদনহীন অরক্ষিত রেলক্রসিং বন্ধ করা হলেও মানুষ নতুন করে পথ তৈরি করে থাকে।’
ফেনীর বারাহীপুর রেলক্রসিং এলাকার দায়িত্বে থাকা গেটম্যান জীবন বলেন, ‘ট্রেন আসার আগেই গেট বন্ধ করা হয়। কিন্তু গাড়ির চালক ও পথচারীরা দ্রুত রেললাইন পার হওয়ার চেষ্ঠা করে থাকেন। এতে অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হন তারা। এক পাশের গেট ফেলে অন্য পাশে যেতে না যেতেই লোকজন সেই গেট তুলে পার হয়ে যান। নিষেধ করলেও শোনেন না। অনেক সময় তাদের মারতেও তেড়ে যাই। আর দুর্ঘটনা ঘটলে দোষ হয় গেটম্যানদের।’
আরও পড়ুন: অরক্ষিত রেলক্রসিং: ফেনীতে ৭ মাসে ৯ জনের মৃত্যু
খুলনায় ২৭০ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে লাইসেন্স আছে ৯৮টির
খুলনা মহানগরীতে লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে ১০টি। এছাড়া অনলাইনে শুধু আবেদনের ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এমন সংখ্যা ১৪।
লাইসেন্স পেলেও বছরের পর বছর নবায়ন না করেই ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চলছে এমন সংখ্যাও কম নয়। স্বাস্থ্য বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশ এবং সঠিক তদারকি না থাকায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির ব্যাপারে ছাড় না দেওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এসব অননুমোদিত ও লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল বন্ধ করে দিতে হবে।’
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, খুলনা শহরে ২৭০টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে। এর মধ্যে ২০২৪ সাল পর্যন্ত লাইসেন্স নবায়ন রয়েছে ৯৮ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের। এছাড়া নবায়ন হয়নি এমন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ১৫৭। এর মধ্যে ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে ১০২টি ও ক্লিনিক ৫৫টি। এগুলোর মধ্যে ৪ বছর ধরে নবায়ন হয়নি এমন প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
আরও পড়ুন: যশোরের অভয়নগরে ৩টি ক্লিনিককে ১.৫৫ লাখ টাকা জরিমানা
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে, নগরীতে কোনো আবেদন ছাড়াই এমন লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে ১০টি। এর মধ্যে রয়েছে খুলনা শিশু হাসপাতাল (ক্লিনিক), খুলনা শিশু হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার (ডায়াগনস্টিক), খুলনা ডায়াবেটিক হাসপাতাল, ডায়াবেটিক সমিতি খুলনা (ডায়াগনস্টিক), সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক-১ (ডায়াগনস্টিক), সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক-২ (ডায়াগনস্টিক), জাপান মেডিকেল সেন্টার (খুলনা শাখা-১) এবং নিউ পথ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র।
এছাড়া নগরীতে শুধু অনলাইনে আবেদন করেই বছরের পর বছর ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনা করছে কিন্তু লাইসেন্স নেই এমন অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ১৪। এর মধ্যে রয়েছে- বয়রা সেন্ট্রাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বয়ো ল্যাব ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার, নূরজাহান ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার, কালিয়া ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কালিয়া ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পাল্প ডেন্টাল সেন্টার, স্বাস্থ্য সেবা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগণস্টিক সেন্টার, স্বাস্থ্য সেবা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগণস্টিক সেন্টার, মাই মেডিকেল ল্যাব ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার, জেনারেল ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড রির্সোস সেন্টার, বেস্ট কেয়ার ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার-১, বেস্ট কেয়ার ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার-২, রহিমা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার এবং শাবাব ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার।
আরও পড়ুন: খুলনায় নিবন্ধনহীন ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকা করছে সিভিল সার্জন অফিস
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৮২ সালের মেডিক্যাল অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিস অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া কোনো হাসপাতাল, ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালানোর সুযোগ নেই। এসব বৈধ-অবৈধ অনেক হাসপাতালে প্রায়ই ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়ে থাকে।
ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে জড়িত এমন একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্লিনিকের জন্য লাইসেন্স প্রতি বছর নবায়ন করতে খরচ হয় ৫০ হাজার টাকা এবং ভ্যাট দিতে হয় ৭ হাজার ৫০০ টাকা। সব মিলে নবায়নে খরচ পড়ে ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা।
এছাড়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নবায়ন করতে খরচ পড়ে ২৫ হাজার টাকা। যার ভ্যাট হয় ৩ হাজার ৭৫০ টাকা। এর বাইরে ট্রেড লাইসেন্স, পরিবেশগত ছাড়পত্র, নারকোটিক পারমিট, কর সার্টিফিকেট, ভ্যাট সার্টিফিকেট এবং ফায়ার সার্ভিসের ক্ষেত্রে নবায়নে আলাদা টাকা খরচ করতে হয়। সেই হিসাবে ওই দুইটি নবায়নের জন্য খরচ ধরলে এক বছরে ১৫৭ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মোট সরকার রাজস্ব আয় হবে ৫৭ লাখ ২৩ হাজার ২০০ টাকা।
খুলনা বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মো. মনজুরুল মুরশিদ বলেন, ‘লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি। অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
খুলনা সিভিল সার্জন ডা. মো. সবিজুর রহমান বলেন, ‘খুলনা জেলায় ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অনিয়ম পাওয়ায় এ পর্যন্ত ৫-৬টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার ১৪টি
লাইসেন্সবিহীন ও অবৈধ ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারেরর বিরুদ্ধে অভিযানের পাশাপাশি যাদের লাইসেন্স আছে কিন্তু শর্ত অনুযায়ী পরিচালনা করছেন না তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, খুলনা জেলায় অনিবন্ধিত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার কতগুলো আছে সে বিষয়ে খোঁজ নিতে একটি টিম মাঠে কাজ করছে।
খুলনা জেলা প্রশাসকের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘খুলনায় চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম, অনুমোদনহীন ল্যাব পরিচালনা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অপারেশন পরিচালনার নগরীতে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও লাইসেন্সের কাগজপত্রে ত্রুটি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানা যায়, একটি হাসপাতাল পরিচালনার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বৈধ সনদ, নিয়মিত নবায়ন, নারকোটিক পারমিট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), পরিবেশগত ছাড়পত্র, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (ক্ষতিকর ও অক্ষতিকর) সংক্রান্ত ছাড়পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সত্যায়িত কপি সংরক্ষণ করতে হয়।
বিশেষ সেবার ক্ষেত্রে প্রতিটির শয্যা সংখ্যা, সেবা প্রদানকারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের নাম-ঠিকানা, ছবি, বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন, বিশেষজ্ঞ সনদ, নিয়োগ ও যোগদান বা সম্মতিপত্রের প্রয়োজন হবে।
এছাড়া, চিকিৎসা সাহায্যকারীদের তালিকা, যন্ত্রপাতির তালিকা, বর্তমানে যেসব অস্ত্রোপচার ও এ সম্পর্কিত যন্ত্রপাতির তালিকা হাসপাতাল প্রধানের সইসহ সংরক্ষণ করতে হবে।
আরও পড়ুন: অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর