বিশেষ সংবাদ
অতিরিক্ত বিদ্যুৎ থাকা সত্ত্বেও ২৯ প্রকল্পের আরও ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রক্রিয়াধীন
অতিরিক্ত ৪০ শতাংশ উৎপাদনের ব্যয় পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছে বিদ্যুৎ খাত। এরই মধ্যে ১০ হাজার ৮৮১ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আরও ২৯টি বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প নির্মাণাধীন।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সম্প্রতি প্রকাশিত 'বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২২-২৩'-এ নির্মাণাধীন ২৯টি বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, 'বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে বহুমুখী জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্প্রসারণ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বর্তমানে ১০ হাজার ৮৮১ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২৯টি বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প নির্মাণাধীন। এর মধ্যে আইপিপি খাতের মাধ্যমে ৭৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৫টি প্রকল্প এবং ৪ হাজার ২৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৭টি প্রকল্পের নির্মাণ সরাসরি বাস্তবায়ন করছে বিপিডিবি।’
বার্ষিক প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘এই পরিকল্পনায় ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এরই মধ্যে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭২৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হয়েছে।’
আরও পড়ুন: যৌথভাবে রেলসংযোগ ও বিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন হাসিনা-মোদি
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত থাকার মধ্যেই আগামী তিন বছরে জাতীয় গ্রিডে আরও ১০ হাজার ৮৮১ মেগাওয়াট যোগ হলে স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিক ও বেসরকারি খাত সংশ্লিষ্টদের ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের বোঝা আরও বাড়বে।
বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- মোট ২৯টি প্রকল্পের মধ্যে ৫টি সরকারি খাতে এবং ১৭টি স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদক (আইপি প্রকল্প) হিসেবে বেসরকারি খাতে রয়েছে। বাকি ৭টির মালিকানার কাঠামো স্পষ্ট নয়, যৌথ মালিকানা সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, দেশের সামগ্রিক বিদ্যুৎ উৎপাদন, সমন্বিত গ্রিড ও অফ-গ্রিড (প্রধানত ক্যাপ্টিভ) বিদ্যুৎ ২০২৩ সালে প্রায় ৫ হাজার মেগাওয়াট বাড়িয়ে নতুন একটি মাইলফলক হিসেবে ৩০ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে পৌঁছে গেছে। যদিও চাহিদা না বাড়ায় এটি সরকারের জন্য বেশি ক্যাপাসিটি চার্জের বাড়তি বোঝা হিসেবে বিবেচিত হবে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত থাকা সত্ত্বেও মেয়াদ বাড়ছে ব্যয়বহুল ভাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি), বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এবং টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
৫ হাজার মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদনের মধ্যে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি ও নতুন স্থাপিত স্থানীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদনের মাধ্যমে ৩ হাজার ৩৪৩ মেগাওয়াট জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে এবং প্রায় ১ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট অফ-গ্রিড ক্যাপটিভ ও অফ-গ্রিড সৌরবিদ্যুৎ থেকে এসেছে বলে বিপিডিবির তথ্য থেকে জানা গেছে।
এতে আরও দেখা যায়, দেশের গ্রিড-সংযুক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩ হাজার ৩৪৩ মেগাওয়াট বেড়ে ২০২৩ সালের ৩০ ডিসেম্বরে ২৫ হাজার ৯৫১ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। এর আগে ২০২২ সালে এর পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৬০৮ মেগাওয়াট।
বিইআরসির তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় গ্রিডের বাইরে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদন ১ হাজার ৩৭৯ মেগাওয়াট বেড়ে ২০২৩ সালে ৪ হাজার ৭৬০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। ২০২২ সালের এই পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৩৮১ মেগাওয়াট।
গ্রিডে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের নিশ্চয়তা না থাকায় মূলত শিল্প কারখানাগুলো নিজস্ব ব্যবহারের জন্য ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়।
বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, দেশে ৪০ শতাংশের বেশি উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও এখনো অনেক শিল্প নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের জন্য তাদের ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পছন্দ করে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত থাকা সত্ত্বেও মেয়াদ বাড়ছে ব্যয়বহুল ভাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের
নতুন অফ-গ্রিড ক্যাপটিভ পাওয়ার এবং গ্রিড-সংযুক্ত বিদ্যুৎ একত্রে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০২৩ সালে ৩০ হাজার ৭১১ মেগাওয়াটে উন্নীত করেছে। ২০২২ সালের শেষে এর পরিমাণ ছিল প্রায় ২৫ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট।
কর্মকর্তারা বলেন, ভারতের আদানি গ্রুপ থেকে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি এবং দেশে বেশ কয়েকটি কয়লাভিত্তিক নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে এক বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৫ হাজার মেগাওয়াট বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
বিপিডিবি কর্মকর্তারা আরও বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে এই সক্ষমতা বৃদ্ধি আপাতদৃষ্টিতে উন্নয়ন মনে হলেও ক্রমবর্ধমান উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ ক্যাপাসিটি চার্জও বাড়বে। এর ফলে সরকার বিদ্যুৎ না নিলেও আইপিপিগুলো সরকারের কাছ থেকে তাদের প্রয়োজনীয় অর্থ পাবে।
তারা বলেন, গ্রিডে যুক্ত হওয়া নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আইপিপি বা স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী (বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ করেছে- বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও পরিচালনা করে) স্থাপন করেছে। বিপিডিবির তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যাতে তাদের বিনিয়োগ নষ্ট না হয় বা লোকসানে না পড়ে। লোকসানের কারণে তারা বিদ্যুৎ খাত থেকে বেরিয়ে গেলে তা হবে বিপিডিবির দীর্ঘমেয়াদি ভিশনের জন্য বড় ধাক্কা।
দেশে বিরাজমান ডলার সংকট অব্যাহত থাকলে ক্যাপাসিটি চার্জ প্রদানের ক্রমবর্ধমান বোঝা সরকারের পাশাপাশি ভোক্তাদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলতে পারে।
আরও পড়ুন: নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার
ঢাকাভিত্তিক থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি পেমেন্ট ২০১৭ সালে ৫ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে আনুমানিক ২৮ হাজার কোটি টাকা হয়েছে।
বিপিডিবির এক শীর্ষ কর্মকর্তার মতে, ২০২৪ সালে উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বিদ্যমান ৪০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, কারণ দেশের পিক আওয়ার চাহিদা প্রায় ১৬ হাজার মেগাওয়াট। এর ফলে সর্বোচ্চ চাহিদার সময়ও, অর্ধেক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রয়োজনের তুলনায় উদ্বৃত্ত থাকবে এবং এইভাবে অলস পড়ে থাকবে।
সম্প্রতি সরকারি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত নগদ অর্থ, বিশেষ করে মার্কিন ডলার সংকটে পড়েছে। এর ফলে তাদের আমদানি বিল পরিশোধে বড় ধরনের বকেয়া রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ খাতের ক্রমবর্ধমান বকেয়া বিল এখন প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার বা ৪৩ হাজার ৯৩ কোটি টাকা এবং বাকি ১ বিলিয়ন জ্বালানি খাতে।
এর আগে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও সংকটের ভয়াবহতা স্বীকার করেছেন।
সম্প্রতি ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আসলে সংকটটা স্থানীয় মুদ্রার নয়। যেভাবেই হোক আমরা ম্যানেজ করতে পারব। তবে মূল সংকট ডলার নিয়ে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আমরা চাহিদা মতো ডলার পাচ্ছি না।’
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ উৎপাদনে হাইড্রোজেন ও অ্যামোনিয়া কীভাবে ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে কাজ করছে সরকার: নসরুল হামিদ
বইমেলায় জমজমাট উপস্থিতির প্রত্যাশা প্রকাশকদের
অমর একুশে গ্রন্থমেলা বা বইমেলা দরজায় কড়া নাড়ছে। সাহিত্য উৎসবে রূপ নেওয়া মাসব্যাপী বইমেলার আয়োজনের অংশ হিসেবে বাংলা একাডেমি ইতোমধ্যে প্রকাশকদের জন্য স্টল ও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দিয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলা প্রাঙ্গণ ও বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণ ঘুরে ইউএনবি দেখতে পায়, ২৩ জানুয়ারি বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে প্রকাশকরা তাদের স্টল ও প্যাভিলিয়ন প্রস্তুতের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
প্রকাশকদের পছন্দসই নকশা অনুযায়ী শ্রমিক ও কাঠমিস্ত্রিদের নির্দেশনা দিতে দেখা গেছে। কিছু স্টল ও প্যাভিলিয়ন বেশ সাদামাটাভাবে তৈরি কড়া হচ্ছে, অন্যদিকে কিছু বেশ জাঁকজমকভাবে।
মেলা প্রাঙ্গণে ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে প্রকাশকরা নগরীতে মেট্রোরেল চালু হওয়ায় অতীতের তুলনায় আরও বেশি উপস্থিতি প্রত্যাশা করছেন। তারা মেলা প্রাঙ্গণের কাছে অবস্থিত দুটি মেট্রো স্টেশনের (শাহবাগ ও টিএসসি) কথা উল্লেখ করেছেন। এর মাধ্যমে দূরবর্তী স্থান থেকে সহজেই সাধারণ মানুষ মেলায় আসতে পারবেন।
উচ্ছ্বাস প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী আহমেদ মুনীরের আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করেন- এবারের মেলায় আগের চেয়ে অনেক বেশি উপস্থিতি দেখা যাবে। পাঠক ও দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়বে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও অনেকে আসবেন, কারণ সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন অনেক ভালো। তাই পাঠকরা আগের চেয়ে খুব সহজে ও কম সময়ে মেলায় আসতে পারবেন।
ঠাকুরগাঁওয়ে সরিষার আবাদ বেশি হওয়ায় মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌয়ালরা
ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন উপজেলার মাঠে মাঠে এখন শোভা পাচ্ছে সরিষা ফুলের হলুদ আভা। সে যেন অপরূপ দৃশ্য! চোখ মেললেই মন জুড়িয়ে যায় মাঠজুড়ে হলুদ গালিচায়।
সরিষার রূপ আর গন্ধে মাতোয়ারা চারিধার। মৌমাছি, প্রজাপতির অবিরাম খেলা গ্রামীণ জনপদকে আরও মুগ্ধ করে তুলেছে। এই সরিষা খেতগুলোতে যেমন রয়েছে চাষিদের পদচারণা, তেমনি মধু সংগ্রহে মেতে উঠেছেন মৌয়ালরা।
ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, জেলায় এবার সরিষার আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে। যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর বেশি।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি উপজেলায় সরিষার আবাদ বেড়েছে। বাজারে সরিষার তেলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সরিষার আবাদ বেড়েছে।’
আরও পড়ুন: ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে ঝালকাঠিতে বেড়েছে সরিষা চাষ
রানিশংকৈল কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে রানিশংকৈল উপজেলায় এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ৮৯০ হেক্টর বেশি।
এখন অনেক জায়গায় চলছে মধু সংগ্রহ। সরেজমিনে দেখা গেছে, মৌচাষিরা সাধারণত পছন্দের একটি সরিষা খেতের পাশে খোলা জায়গায় চাক ভরা বাক্স ফেলে রাখেন। একেকটি বাক্সে ৮-১০টি মোম দিয়ে তৈরি মৌচাকের ফ্রেম রাখা হয়।
প্রতিটি বাক্সের ভেতরে রাখা হয় রানি মৌমাছি। ফুল থেকে মৌমাছিরা মধু এনে বাক্সের ভেতরের চাকে জমা করে। বাক্সে একটি রানি মৌমাছি রাখা হয় ৷ রানি মৌমাছির কারণে ওই বাক্সে মৌমাছিরা আসতে থাকে। চাকের বাক্সের মাঝখানের নিচে ছিদ্র করে রাখা হয়। সে পথ দিয়ে মৌমাছিরা আসা-যাওয়া করতে থাকে।
রানিশংকৈল উপজেলার গোগর এলাকার মৌচাষি নজরুল ইসলাম জানান, সরিষা খেতে মধু চাষ খুবই লাভজনক। এতে কৃষক ও মধু চাষি— দু’পক্ষই লাভবান হন৷ বাক্সের ভেতরের চাকগুলো মধুতে পরিপূর্ণ হতে সময় লাগে ছয় থেকে সাত দিন। এরপর মধু চাষিরা বাক্স খুলে চাকের ফ্রেম থেকে মেশিনের মাধ্যমে মধু বের করে নেন। ফুলে ফুলে ঘুরে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে মৌমাছির ব্যাপক পরাগায়নে সরিষার বাড়তি ফলন পান কৃষক, আর মৌচাষিরা পান মধু।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে ১৫১.৩৮ কোটি টাকার সরিষার ফলনের প্রত্যাশা চাষিদের
উচ্চ ফলনশীল গাজরের জাত উদ্ভাবন, হেক্টরপ্রতি ফলন ৩০ টন
দেশি ও বিদেশি ৮০টি জাতের গাজর নিয়ে গবেষণা করে উচ্চ ফলনশীল গাজরের জাত উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হারুন অর রশিদ ও তার গবেষকদল।
ইউএসএআইডি, ইউএসডিএ/এআরএস ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের যৌথ অর্থায়নে যুক্তরাষ্ট্রের ৫৬টি ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ২৪টি জাতের গাজর নিয়ে গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়েছে।
দেশে প্রচলিত পদ্ধতিতে গাজরের হেক্টরপ্রতি ফলন গড়ে ১০ টন হলেও গবেষণায় উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল গাজরগুলোর জাত থেকে হেক্টরপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ টন ফলন পাওয়া যাবে। এছাড়া গাজরগুলো দেশের উষ্ণ ও খরাপ্রবণ অঞ্চলেও চাষের উপযোগী ।
উচ্চ ফলনশীল এসব জাতের গাজর চাষ সম্পর্কে অধ্যাপক বলেন, ৭০ থেকে ৮০ দিনেই গাজরগুলোর ফলন পাওয়া যায় এবং এক একটি গাজরের ওজন প্রায় দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ গ্রাম পর্যন্ত হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘গাজরগুলো দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন খরাপ্রবণ এলাকায় যেমন রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা, লালমনিরহাট ও পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় মাঠ পর্যায়ে চাষ করে সফলতা পেয়েছি। তাছাড়া যেসব অঞ্চলে আলুর ফলন বেশি হয় সেখানে এসব গাজরের চাষ কৃষকদের ভাগ্য বদলাতে সাহায্য করবে।’
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে তীব্র শীতে বোরোর বীজতলা নষ্টের আশঙ্কা
সরকারি বিএল কলেজে আবাসন-পরিবহন সংকট চরমে
খুলনার সরকারি ব্রজলাল কলেজ (বিএল কলেজ) প্রতিষ্ঠার ১২১ বছর পার হলেও শিক্ষার্থীদের আবাসন ও পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে ভোগান্তির যেন শেষ নেই। বছরের পর বছর এ দুই সংকটে পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটছে শিক্ষার্থীদের।
খুলনা মহানগরী থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে দৌলতপুরের ভৈরব নদের তীরে অবস্থিত এ কলেজে ১৯০২ সালের ২৭ জুলাই থেকে পাঠদান শুরু হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ৪৯ জন ছাত্র নিয়ে এফএ (ফার্স্ট আর্টস) ক্লাস শুরু হয়। আবাসিক কলেজ হিসেবে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল এবং এটি ছিল অবিভক্ত বঙ্গদেশের প্রথম আবাসিক কলেজ।
কলেজটিতে উচ্চ মাধ্যমিক, সম্মান এবং স্নাতকোত্তর পর্যায় পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। বর্তমানে কলেজটিতে উচ্চ মাধ্যমিকসহ ২১টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) এবং ২২ বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্সে ২৫ হাজার ৬০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে কলেজটির একাডেমিক ভবনসহ অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়ন হয়নি শুধু আবাসিক হলের। নির্মিত হয়নি নতুন কোনো ছাত্রাবাস। ২৫ সহস্রাধিক ছাত্র-ছাত্রীর জন্য আটটি আবাসিক হলে আবাসন সুবিধার রয়েছে মাত্র সাড়ে সাতশ’ ছাত্র-ছাত্রীর। এর মধ্যে পাঁচটি ছাত্রাবাসে ৪৩১ জন ছাত্র এবং তিনটি ছাত্রীনিবাসে ৩১৯ জন আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য।
আরও পড়ুন: গ্রামে নগরায়নের ছোঁয়া, খুলনায় মিলছে না খেজুরের রস
শিক্ষার্থীরা জানান, কলেজের পাঁচটি ছাত্রাবাসের বেহাল অবস্থা। কক্ষের বিভিন্ন স্থানে ফাটল। পলেস্তারা খসে পড়েছে অনেক স্থানে। গ্রিলগুলো বাঁকা হয়ে গেছে। পিলারের ঢালাই খুলে রড বেরিয়ে আছে। এর মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে ছাত্রাবাসে থাকছেন শিক্ষার্থীরা।
শহীদ তিতুমীর, ড. জোহা এবং হাজী মহসীন হলের প্রায় তিনশ’ ছাত্র জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে হলে থেকে পড়াশোনা করছেন। কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং সুবোধ চন্দ্র হলের ছাত্ররা টিনের চালের ঘরের হলে থাকেন। ২০২২ সালে সর্বশেষ বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব নামে একটি ছাত্রীনিবাস তৈরি করা হয়।
২৫ হাজারের অধিক ছাত্র-ছাত্রী পরিবহনের জন্য কলেজটিতে বাস রয়েছে মাত্র ছয়টি। প্রতিদিন নওয়াপাড়া থেকে ডুমুরিয়া পর্যন্ত ছয়টি রুট থেকে ছাত্র-ছাত্রী আনা-নেওয়া করা হয়। প্রতিটি ৭০ সিটের বাসে ১৩০ থেকে ১৪০ জন ছাত্র-ছাত্রী আনা-নেওয়া করা হয়।
কলেজের শিক্ষার্থী হাসান উজ জামান বলেন, ‘বিএল কলেজে পাঁচটি ছাত্রাবাস রয়েছে। যেগুলোর অবস্থা জরাজীর্ণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। শহীদ তিতুমীর, ড. জোহা এবং হাজী মহসীন হলে প্রায় তিনশ’ ছাত্র থাকে। অধিকাংশরা ঝুঁকি নিয়ে হলে থেকে পড়াশোনা করে। কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং সুবোধ চন্দ্র হলে ছাদ না থাকায় গরমের দিনে অনেক গরম সহ্য করা লাগে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রায় ২৫ হাজারের অধিক ছাত্র-ছাত্রীর জন্য আটটি আবাসিক হলে আবাসন সুবিধা রয়েছে মোটে এক হাজারের মতো। এজন্য সবদিক বিবেচনা করে আমাদের আবাসন সংকট কাটিয়ে উঠতে অধ্যক্ষ মহোদয়ের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’
আরও পড়ুন: উদ্বোধনের দুই মাস পরও চালু হয়নি খুলনা-মোংলা রেললাইন
হাজী মুহাম্মদ মহাসীন হলের ছাত্র মো. আলিম হোসেন জানান, হলে খাওয়ায় অনেক সমস্যা। ঠিকমতো মিল চললেও খাবারের মান অনেক নিম্নমানের। পাশাপাশি আলোর একটু স্বল্পতা রয়েছে। এর স্থায়ী সমাধানের জন্য বিদ্যুতের ওয়ারিং ব্যবস্থা নতুন করে করতে হবে।
মন্নুজান হলের ছাত্রী সুতপা বসু বলেন, ‘অনেকদিন ধরে আমাদের হলটা সংস্কারের অভাবে পড়ে আছে। বাধ্য হয়ে আমাদের অন্য হলে গিয়ে থাকতে হয়। এজন্য দ্রুতই মন্নুজান হলটা সংস্কার করা হলে মেয়েদের আবাসন সংকট অনেকটা কমবে।’
দৌলতপুরের একটি মেসে থাকেন এম এম মিলন নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘কলেজে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজারের বেশি। কিন্তু সে তুলনায় হলগুলোতে সিটের সংখ্যা অনেক কম। এজন্য চাইলেও আমরা হলে থাকতে পারি না। নতুন করে আরও দু-একটি হলের ব্যবস্থা হলে আমাদের সবার জন্য সুবিধা হতো।’
পরিবহন সংকট প্রসঙ্গে শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ জ্বালানি সাশ্রয়ের কথা বলে বাসের দুটি ট্রিপ থেকে একটি ট্রিপ বন্ধ করে দেয়। ফলে বিভিন্ন রুটের শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। বাসে সিটের অপ্রতুলতায় দাঁড়িয়ে পর্যন্ত যাওয়ার জায়গা হচ্ছে না। ফলে বাড়তি টাকা খরচ করে কলেজে যাওয়া-আসা করা লাগছে।
পরিবহন ও আবাসন সংকট সম্পর্কে জানতে চাইলে সরকারি বিএল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শরীফ আতিকুজ্জামান বলেন, ‘আবাসন সমস্যা দীর্ঘদিনের। সরকারের এ নিয়ে আপাতত কোনো পলিসি নেই। ছাত্রী হল তৈরি হয়, কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে ছাত্রদের কোনো হল তৈরি হয় না। কোনো কোনো জায়গায় ছাত্রদের হল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের এখানে যে ছাত্র হলগুলো আছে সেগুলো আমরা সংস্কারের ব্যবস্থা করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘গাড়িতো ছাত্রদের অর্থায়নে কেনা ও তত্ত্বাবধায়ন করা হয়। এ খাতে সরকারের কোনো বরাদ্দ থাকে না।’
আরও পড়ুন: খুলনায় সরিষার বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা
জলাবদ্ধতায় খুলনার ‘বিল ডাকাতিয়া’ আর্শিবাদ নয় এখন অভিশাপ!
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিল- ‘বিল ডাকাতিয়া’। এটি খুলনা জেলার ফুলতলা ও ডুমুরিয়া এবং যশোর জেলার অভয়নগর ও কেশবপুর উপজেলা নিয়ে বিস্তৃত। বিলটিতে চাষাবাদযোগ্য জমি রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার একর। এক সময় বিল ডাকাতিয়ার ৫৫ শতাংশ পরিবার ছিল কৃষিজীবী। বিলটি এক সময় এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের জন্য ছিল আশীর্বাদ। উৎপাদন হতো প্রচুর পরিমাণ ধান, সবজি এবং মাছ। কৃষি নির্ভর অর্থনীতিতে এ অঞ্চলে তখন বিরাজ করতো একটি বর্ণাঢ্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আবহ। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই বিল ডাকাতিয়া এখন এ অঞ্চলের মানুষের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর একমাত্র কারণ জলাবদ্ধতা ও পানিনিষ্কাশন সমস্যা।
বিগত ১৫ বছর ধরে এ অঞ্চলের কৃষিজীবী মানুষ জলাবদ্ধতার কারণে অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। আর গত ৫ বছর ধরে এ সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। স্থায়ী জলবদ্ধতার কারণে এ অঞ্চলের কৃষিজীবী মানুষগুলো পরিণত হচ্ছে জেলেতে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ অন্যত্র চলে গেছে। বিল ডাকাতিয়ার জলাবদ্ধতা নিরসনে অনেক সভা, সেমিনার, আলোচনা সভা, মানববন্ধন হলেও স্থায়ী সমাধানে সরকারের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নেই বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
আরও পড়ুন: জলাশয় সংস্কার: হাওরপাড়ের মৎস্যজীবী ও কৃষকেরা আশাবাদী হয়ে উঠছেন
জানা যায়, বিল ডাকাতিয়ার অনেকগুলো পকেট গেট রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো ডুমুরিয়া উপজেলার রংপুর ইউনিয়নের মোজারগুটা, কৃষ্ণনগর, বটভিরা গ্রাম নিয়ে মোজারগুটা বিল। স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে এ তিনটি গ্রামের কয়েকশ’ কৃষিজীবী পরিবারকে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়। জমি থাকলেও তাতে ফসল উৎপাদন করতে না পারায় মাঝে মধ্যে তাদেরকে থাকতে হয় অনাহার অর্ধাহারে।
এছাড়া স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষদের দুর্ভোগের শেষ নেই। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে দুর্ভোগের মাত্রা বহুগুনে বেড়ে যায়। তখন বসতভিটা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উপাসনালয় পানির নিচে তলিয়ে যায়। বর্ষা মৌসুমে মোজারগুটা গ্রামের আড়াই থেকে ৩ হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র ইটের সড়কটি পানির নিচে তলিয়ে যায়। তখন তাদের আর দুর্ভোগের সীমা থাকে না।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) খুলনা অঞ্চল থেকে গত ২২ জানুয়ারি মোজারগুটা বিলের জলবদ্ধতা নিরসনে ৫টি এলএলপি পাওয়ার পাম্প স্থাপন করলেও এর সুফল নিয়ে স্থানীয় কৃষিজীবীদের মধ্যে রয়েছে নানা সংশয়।
মোজারগুটা গ্রামের কৃষিজীবি প্রভাত মন্ডল বলেন, এই এলাকা এবং এর আশেপাশের এলাকার আমরা যত মানুষ আছি, সবাই আমরা এই জমিতে চাষাবাদ করে জীবন জীবিকা চালাই। কিন্তু স্থায়ী জলবদ্ধতার কারণে আমাদের সে জীবিকা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমার ৫ থেকে ৭ বিঘা জমি থাকলেও না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। প্রত্যেক বছর বর্ষা মৌসুমে জলবদ্ধতার কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এ বছর আমার ৩টা ঘেরের মাছ ভেঁসে প্রায় তিন লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের এই বিলে পাম্প বসাইছে কিন্তু আশেপাশের বিলগুলোতে পানি থেকে যাচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনের আশ্বাস সবাই দিচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে কিছু হচ্ছে না।
আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় তীব্র গরমে জলাশয়ের মাছ মরে যাচ্ছে
তিনি আরও বলেন, এ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা রোধ করতে হলে শোলমারি সুইচগেট সংস্কার করতে হবে। ভবদহে যেমন মটর (পাম্প) বসাইছে আমাদের এখানেও এরকম মটর বসাতে হবে।
একই গ্রামের কৃষিজীবী পল্টু মন্ডল বলেন, বিল ডাকাতিয়া তলায় যাচ্ছে। আমরা ধান চাষ, মাছ চাষ, সবজি চাষ কিছুই করতে পারছি না। বর্ষা মৌসুমে রাস্তায় পানি উঠে যায়। এই পানি নিষ্কাশনের জন্য শোলমারি সুইচ গেটে মোটর বসাতে হবে, তাহলে আমাদের বিল ডাকাতিয়া উঠবে।
মোজারগুটা গ্রামের অধিবাসী ও কৃষ্ণনগর হাই স্কুলের শিক্ষক গণপতি মন্ডল বলেন, নদী নালা নেই। এখন পানি সরার আর কোন ব্যবস্থা নেই। এখানে বহু লোকের বসবাস, বহু জমি-জমা। এই এলাকায় যদি ফসল না হয় তাহলে তো এলাকার মানুষ সব মারা যাবে। এ বছর আমার নিজের ৩টা মাছের ঘের পানিতে ভেসে গেছে। সব মিলিয়ে ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ঋণী হয়েছি। এই মোজারগুটা বিলে ৪০০ থেকে ৫০০ একর জমি আছে। বিএডিসির লোকজন পাম্প বসানো বাবদ জমির মালিকদের কাছ থেকে বিঘা প্রতি ২ হাজার টাকা করে নিয়ে এই বিলটা উঠানোর চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, এলাকার উন্নয়ন হচ্ছে, সবকিছু ভালো হচ্ছে, কিন্তু আমরা খাবো কি? এই নিয়ে গবেষণা চলছে। এই এলাকার জলবদ্ধতা নিরসনে উপর মহলকে জানাই, কিন্তু জানিয়ে কাজ না হলে আমরা কি করতে পারি?
আরও পড়ুন: গোয়াহরি বিলে পলো বাওয়া উৎসব
ঠাকুরগাঁওয়ে তীব্র শীতে বোরোর বীজতলা নষ্টের আশঙ্কা
ঠাকুরগাঁওয়ে টানা বেশ কিছুদিনের শৈত্যপ্রবাহ ও কুয়াশার কারণে বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হচ্ছে। এছাড়াও কুয়াশা পড়ার কারণে বীজতলায় ঠান্ডা পানি জমছে। এই পানির কারণে চারা তুলনামূলকভাবে বড় হচ্ছে না।
বেশ কিছু এলাকায় গিয়ে ইউএনবির এই প্রতিবেদক দেখতে পান, বীজতলা হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। মৌসুমের শুরুতেই এমন হওয়ায় কৃষকেরা পড়েছেন দুঃশ্চিন্তায়।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এ বছর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কিছু কিছু স্থানে বীজতলা প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে দিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে করে ক্ষতির পরিমাণ কম হবে বলে ধারণা করছেন তারা। ঠাকুরগাঁওয়ে বেশ কয়েকদিন থেকে শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাপমাত্রা ৮ থেকে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করছে। এ অবস্থায় জেলার কৃষকেরা বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হচ্ছে। সমস্যায় পড়েছেন তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা রাসেল ইসলাম বলেন, ‘ইতোমধ্যে কৃষকদের শুকনো, ভেজা, ভাসমান- তিন ধরনের বীজতলার বিষয়ে তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। বীজতলা তৈরিতে স্থান, জমি তৈরি, শেড তৈরি, সার প্রয়োগ, বীজ বপন, বীজ জাগ দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেন কৃষকদের।’
আরও পড়ুন: তীব্র শীতে বোরো ধানের বীজতলা ও সবজির ক্ষতির আশঙ্কায় যশোরের কৃষকরা
তিনি আরও বলেন, ‘শুকনো বীজ একটানা কত ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং কোন জায়গায় রাখতে হবে সে বিষয়েও বিস্তারিত তথ্য তাদের দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ভালো চারা উৎপাদনের জন্য বীজের ভ্রুণ জাগরিত বিষয়ে দিক নির্দেশনা নিয়মিত দেওয়া হচ্ছে।’
সদর উপজেলার রুহিয়া রামনাথ এলাকার কৃষক সুধির রায় জানান, প্রত্যেক বছর তিনি কমপক্ষে দেড় একর (১৫০ শতক) জমিতে বোরো ধান লাগান। এ বছরও তিনি বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করেছেন। কিন্তু তীব্র শীতে বেশিরভাগ চারা গাছ মারা যাচ্ছে।
শীতের প্রকোপে চারাগুলো বড়ো হচ্ছে না বলে জানান তিনি। শীতের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পেলে চারা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের ভেলাজান গ্রামের কৃষক সামশুল হক জানান, প্রত্যেক বছর তিনি প্রায় সোয়া দুই একর (২২৫ শতক) জমিতে বোরো ধান চাষ করে থাকেন। এ বছরও বোরো ধান রোপণের কাজ শুরু করবেন। আপাতত বোরো ধানের বীজতলা করেছেন, শীতের জন্য তিনিও সমস্যায় পড়েছেন বলে জানান তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বোরো ধানের আবাদ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা রাসেল ইসলাম জানান, এ বছর জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬২ হাজার ৮০ হেক্টর জমির। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২ লাখ ৮০ হাজার ৬৩২ মেট্রিক টন।
বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) পর্যন্ত জেলায় মোট ৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে।
তিনি জানান, গত বছরে ৬০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২ লাখ ৬৭ হাজার ৯৪০ মেট্রিক টন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সিরাজুল ইসলাম জানান, কৃষি বিভাগ থেকে ইতোমধ্যে কৃষকদের বিভিন্ন তথ্য প্রদানসহ সহযোগিতা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত শীতের কারণে বেশ কিছু এলাকায় সামান্য কোল্ড ইনজুরিতে বোরো বীজতলার ক্ষতির খবর পাওয়া গেলেও, সেটি বড় সমস্যা নয়।
জেলার কৃষকদের প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে দেওয়ার প্রশংসা করে জানান, বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমনের মতো বোরো ধানেরও বাম্পার ফলন হবে এবং লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন তিনি।
আরও পড়ুন: হাওরে ৭০ ভাগ বোরো ধান কাটা হয়ে গেছে: কৃষি মন্ত্রণালয়
জলবায়ু পরিবর্তন ও নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করা উচিত: ট্রিশ ডগলাস
বাংলাদেশ থেকে শুরু করে যুক্তরাজ্য ও চীন পর্যন্ত সর্বত্র জলবায়ু পরিবর্তনের বিপজ্জনক প্রভাব মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী পরিবেশ দূষণ বিশেষ করে প্লাস্টিক দূষণকে গুরুত্বের সঙ্গে মোকাবিলার পরামর্শ দিয়েছেন সফররত ইন্টান্যাশনাল ইনার হুইলের প্রেসিডেন্ট ট্রিশ ডগলাস।
বৃহস্পতিবার নিউজ এজেন্সি ইউনাইটেড নিউজ অফ বাংলাদেশকে (ইউএনবি) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জলবায়ু পরিবর্তন, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, মানবাধিকার ও পথশিশুদের উন্নত ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করেন।
আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইনার হুইল ক্লাবের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছেন ডগলাস। ইনার হুইল ডিস্ট্রিক্ট ৩২৮ হোটেল রেডিসন ব্লুতে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে ট্রিশ ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সিসেল এইচ মাইকেলসেন রয়েছেন।
শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে ডিস্ট্রিক্ট চেয়ারম্যান শাহিনা রফিকের নেতৃত্বে আহ্বায়ক নাজনীন মাহবুব, সহ-আহ্বায়ক নাহিদ নওয়াজ, নায়ার ইসলাম ও নাজ আফরিনসহ একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
শুক্রবার সাভারের আশুলিয়ায় ট্রিশ ডগলাস ও ইনার হুইলের সদস্যরা বৃক্ষরোপণ, ১০০টি হুইল চেয়ার, ১০০টি নেবুলাইজার ও ২০০ কম্বল বিতরণ করেন।
ভ্রমণের সময় তিনি পূর্বনির্ধারিত শিশুদের আঁকা চিত্রকর্মের একটি প্রদর্শনীও ঘুরে দেখেন।
ইনার হুইলেল বিভিন্ন ক্লাবের অংশগ্রহণকারী, ডিস্ট্রিক্ট-৩২৮ ইসির সদস্য এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ঢাকা ও সাভারের এই আয়োজনে যোগ দেন।
ঢাকায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশ নেন আইআইডব্লিউর প্রেসিডেন্ট। সেখানে বিশ্বের শীর্ষ চার কার্বন দূষণকারী দেশ চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো একটি দেশ দায়ী না হওয়া সত্ত্বেও এই বোঝা বহন করতে হচ্ছে।
সীতাকুণ্ডে উৎপাদিত শিম যাচ্ছে ইতালিতে, নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন
শিমের রাজ্য হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই পাশে বিস্তীর্ণ জমিতে চোখে পড়ে শিম আর শিম। শুধু ফসলি জমি নয় পাশাপাশি জমি পৃথকীকরণের সীমানার উঁচু অংশ, মেঠোপথ, রেললাইনের দুই পাশ থেকে শুরু করে পতিত ভূমিতেও চোখে পড়ে শিমের মাচা। বেড়িবাঁধ আর পাহাড়ি ঢাল- বাদ নেই কিছুই। এখানে উৎপাদিত শিম দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ছাড়িয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। তবে এবারই প্রথমবারের মতো এই শিম ইউরোপের দেশ ইতালিতে রপ্তানি হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। আর এর মাধ্যমেই দেশের অর্থনীতিতে উন্মোচন হতে পারে নতুন সম্ভাবনার দ্বার।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলাকে বলা হয় ‘সবজি ভাণ্ডার’। সারা বছর বিপুল পরিমাণ সবজির আবাদ হয়ে থাকে এই উপজেলায়। তবে শীত মৌসুমে এ উপজেলা হয়ে ওঠে শিমের রাজ্য। দিগন্ত জোড়া মাঠের যেদিকেই চোখ যাবে চার দিকে চোখে পড়বে শুধেই শিম।
চাষিরা জানান, মৌসুমে কাঁচা শিম বিক্রি হলেও শিমের শুকনো বিচি বিক্রি হয় সারা বছরই। এবারের অনুকূল আবহাওয়ায় ভালো ফলন ও বাড়তি দাম পেয়ে সন্তুষ্ট কৃষকরা।
এদিকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলছেন, সীতাকুণ্ডের মাটি শিম চাষের উপযোগী এবং শিম চাষ বোরো ধানের চেয়ে লাভজনক। তাই এ উপজেলায় এবার ২ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে এবার শত কোটি টাকা মূল্যের ৪৭ হাজার মেট্রিক টন শিমের ফলন হবে। শিমের কাঁচা ও শুকনো বিচির দাম হিসাব করলে তা আরো বাড়বে বলছেন কৃষিবিদরা।
আরও পড়ুন: সাতক্ষীরায় হলুদ তরমুজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে, বিঘাপ্রতি লাভ লাখ টাকা
পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন পাহাড় ও টেরিয়াইল,বারৈয়াঢালা, বাড়বকুণ্ড ও ভাটিয়ারী, কুমিরা, পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে শিমের আবাদ হয়েছে। একদিকে যেমন শিমের মৌসুমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে, অন্যদিকে আর্থিকভাবেও লাভবান হওয়ার পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতেও বিরাট ভূমিকা রেখে চলেছেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কৃষক পরিবারগুলো।
উপজেলার ইদিলপুর গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা সৌখিন কৃষক মো. হাসান জানান, ঢাকার যাত্রাবাড়ীর ‘লা আমরে ইমপেক্স’ নামক একটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান তার থেকে ৬০ টাকা কেজি হিসেবে ৫০০ কেজি শিম ইতালিতে রপ্তানি করার উদ্দেশ্যে প্রথমবারের মতো কিনে নিয়ে গেছেন। প্রথমে ৫০০ কেজি শিম নিয়ে তা প্যাকেট করে পরীক্ষামূলকভাবে আকাশপথে ইতালিতে পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘এ বছর দুই হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে প্রায় ২৫ হাজার কৃষক শিম চাষ করেছেন। এখান থেকে ৪৭ হাজার মেট্রিক টন শিমের উৎপাদন হবে বলে আশা করছি। যার বাজারমূল্য ১০০ কোটি টাকারও বেশি।’
তিনি বলেন, স্থানীয় শিম আগেও দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। তবে এবার প্রথমবারের মতো ৫০০ কেজি শিম আকাশপথে ইউরোপের দেশ ইতালিতে যাচ্ছে। এটি আমাদের দেশ ও সীতাকুণ্ডবাসীর জন্য অনেক গর্বের বিষয়। এই রপ্তানি অব্যাহত থাকলে দেশ লাখ লাখ ডলার আয় করে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে। সচ্ছল হবে কৃষকরা।
আরও পড়ুন: শেষ মৌসুমে ‘গৌড়মতি’ আম চাষে মামা-ভাগ্নের সাফল্য
৩০০ বছরের পুরোনো দেশের সর্ববৃহৎ সরোজগঞ্জ গুড়ের হাট
জমে উঠেছে চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জের কয়েকশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী খেজুর গুড়ের হাট। শীতের এই সময়ে গুড় কিনতে বিভিন্ন জেলা থেকে আসছেন পাইকাররা।
বেচাকেনার জন্য এই হাটের ঐতিহ্য অনেক পুরোনো। দিনদিন বেড়েছে এই গুড়ের হাটের চাহিদা। কিন্তু সরবরাহ কম হওয়ায় বাইরের জেলা থেকে এসে পর্যাপ্ত গুড় না পেয়ে হাট থেকে ফিরে যাচ্ছেন বেপারীরা।
কৃষি বিভাগসূত্রে জানা যায় , দিনদিন খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় গুড় উৎপাদনের পরিমাণ কমে গেছে। গুড়ের চাহিদা পূরণ করার জন্য খেজুর গাছের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। খেজুর গাছ লাগাতে উৎসাহী করা হচ্ছে।
সরজমিনে হাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটের চারপাশে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাক ডাকে মুখর হয় এই খেজুর গুড়ের হাট। সপ্তাহের দু-দিন শুক্রবার ও সোমবারে খেজুর গুড়ের হাট বসে। এই হাটে এবার খেজুর গুড়ের চাহিদা বেশি কিন্তু সরবরাহ কম। কৃষকরা তাদের খেজুর গাছ কেটে ফেলছে। আবার অনেক খেজুর গাছের বয়স হয়ে যাওয়া তা থেকে রস পাওয়া যাচ্ছে না। তাই গাছের সংখ্যা যেমন কমে যাচ্ছে। ঠিক তেমনি দেশে খেজুর গুড়ের সরবরাহ কমে যাচ্ছে।
এদিকে জেলার কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, গুড়ের চাহিদা পূরণে গাছ বৃদ্ধি করে দেশে গুড়ের ঘাটতি কমানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যাতে তারা খেজুর গাছের সংখ্যা বাড়ায়। একই সঙ্গে গুড়ের চাহিদা ও সরবরাহ ঠিক রাখা যায়।
আরও পড়ুন: খেজুরের রস কাঁচা না খাওয়ার পরামর্শ খুলনার সিভিল সার্জনের
হাট সূত্রে জানা গেছে, এই ঐতিহ্যবাহী সরোজগঞ্জের গুড়ের হাটে প্রতি কেজি গুড় বিক্রি হয় ২০০- ২৫০ টাকা করে। প্রতি সপ্তাহে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকার গুড় বেচাকেনা হয়। প্রতিবছর এই হাট থেকে বেচাকেনার মোট পরিমাণ দাঁড়ায় ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা। এই হাটের গুড় দেশের জেলাগুলোর মধ্যে ঢাকা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, পাবনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, মাগুরা, রাজবাড়ী, পঞ্চগড়, সিলেট, খুলনা, রংপুর, রাজশাহীসহ আরও অন্যান্য জেলায় এই গুড় সরবরাহ এবং বিক্রেতারাও এই হাটে গুড় কিনতে আসেন। এই হাটে গুড় বেচাকেনা করে কৃষক ও হাটমালিকরাও লাভবান হয়। এছাড়া চিনির দাম বাড়াই এবার বলতে গেলে শতভাগ গুড় নির্ভেজাল।
নাম প্রকাশ করে এক গুড় প্রস্তুতকারী চাষি বলেন, গুড়ে চিনি মিশাবো কিভাবে, চিনির যে দাম। চিনি মিশালে উল্টো লস হবে।
জিল্লুর রহমান নামের এক গুড় ব্যবসায়ী বলেন, গুড়ের দাম বেড়েছে। এখন প্রতি ভাড় (গুড় রাখার পাত্র) গুড় চব্বিশ-পচিশ শ’ টাকা। তবে চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় গুড়ে ভেজাল বন্ধ হয়েছে। আমাদের এই হাটের ঝোলা গুড়-নলেন পাটালি সারা দেশেই বিখ্যাত। তবে অন্য বছরের তুলনায় এবার হাটে চাহিদা বেশি। তবে সরবরাহ অনেক কম। বাইরের ব্যাপারীরা অনেকেই ইচ্ছামতো গুড় কিনতে পারছেন না।
আরও পড়ুন: নিপা ভাইরাস এড়িয়ে খেজুর রস খাওয়ার উপায়
পাবনা থেকে আসা শহিদুল ইসলাম নামের এক গুড়ের ব্যাপারী বলেন, এবার গুড়ের দামও বেশি এবং সরবরাহ কম। তবে গুড়ে ভেজাল নেই। এছাড়া এই হাটে আসলে আমরা ব্যাপারীরা বেশ নিরাপত্তাও পাই। কিন্তু ইচ্ছামতো গুড় কিনতে পারছি না। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম।
চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার চুয়াডাঙ্গা সদরে ৯৮ হাজার ৫০০টি গাছ। আলমডাঙ্গায় ৪৫ হাজার ৫১০টি গাছ, দামুড়হুদায় নয় হাজার ২০০টি গাছ, জীবননগরে ৩৭ হাজার ৪৫০টি গাছ। এবার মোট দুই লাখ ৭১ হাজার ৯৬০টি খেজুর গাছ প্রস্তুত করা হচ্ছে। এতে এবার গুড়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। এই লক্ষ্যমাত্রা গুড়ের বিক্রির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রতিবার এই গাছ প্রস্তুতে কর্মসংস্থান হয় প্রায় ৩০ হাজার কৃষকের।
রাজবাড়ী থেকে আসা এক ক্রেতা বলেন, এবার এই গুড়ের হাটে চাহিদা ব্যাপক। কিন্তু তুলনামূলক সরবরাহ কমে গেছে। ফলে বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে পর্যাপ্ত গুড় না পেয়ে আমরা হাট থেকে ফিরে যাচ্ছি। খেজুর গাছের সংখ্যা এবার কমে গেছে। তাই গুড়ের চাহিদার আলোকে সরবরাহ হচ্ছে না।
স্থানীয় গুড় ব্যবসায়ী উজ্জ্বল কুমার অধিকারী বলেন, আমাদের এই গুড়টা সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, পাবনা ও ঢাকাসহ সারা দেশে যায়। বাপ-দাদার মুখে শুনে আসছি এটা তিনশ’ বছরের পুরোনো দেশের সর্ববৃহৎ হাট। আর আমাদের এই হাটের গুড়-পাটালির খুব চাহিদা আছে।
আরও পড়ুন: গ্রামে নগরায়নের ছোঁয়া, খুলনায় মিলছে না খেজুরের রস
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের গুড় ব্যবসায়ী বাবুল বলেন, এই হাট তিনশ’ বছরের আগের হাট। এই হাটে খাটি গুড় পাওয়া যায়। এখানকার গুড়ে কোনো ভেজাল নেই। বহু জায়গা থেকে ব্যাপারী আসে এখানে।
সামসুল মিয়া নামের একজন চাষি বলেন, গত বছর ২৫টি গাছ প্রস্তুত ছিল তার। এবার সে সংখ্যা মাত্র ১২টি গাছ প্রস্তুত হয়েছে। এই গাছ থেকে যেটুকু রস পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়েই গুড় তৈরি করা হচ্ছে। পরে তা হাটে তোলা হয়েছে। দামও এবার ভালো।