লাইফস্টাইল
ক্রেডিট কার্ড কীভাবে করবেন
ব্যাংক কর্তৃক জারি করা প্লাস্টিকের পাতলা আয়তক্ষেত্রাকার কার্ড বা এক কথায় ক্রেডিট কার্ড এর ধারকদের যে কোন পণ্য ও পরিষেবা ক্রয়ের জন্য অর্থ ঋণের সুবিধা দিয়ে থাকে। প্রযোজ্য সুদসহ এই ঋণকৃত অর্থটি কার্ডধারককে ফেরত দিতে হয় একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। ব্যাংকগুলো প্রধানত ভিসা, মাস্টারকার্ড, ডিসকভার এবং আমেরিকান এক্সপ্রেস- এই চার মূল ধরনের ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের সরবরাহ করে থাকে। কেবল অর্থ ঋণই নয়; বিভিন্ন উপলক্ষে এই কার্ডগুলো গ্রাহকদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। চলুন জেনে নিই, কীভাবে একটি ক্রেডিট কার্ড করা যায়।
ক্রেডিট কার্ড-এর সুবিধাগুলো
দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন পণ্য বা পরিষেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড-এর আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধাগুলোর কারণে প্রতিদিনি এই কার্ডের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
> ব্যয়বহুল পণ্য বা পরিষেবা তাৎক্ষণিকভাবে কেনা যায়।
> অনলাইনে কোন ঝামেলা ছাড়াই কেনাকাটা করা যায়।
> ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কেনাকাটায় রিওয়ার্ড পয়েন্ট-এর সুযোগ থাকে, যেটি বাড়ার ফলে ক্রেডিট কার্ড থেকে খরচের মাধ্যমেই আয়সহ বিভিন্ন মূল্যছাড় এমনকি ফ্রিতে পণ্য বা পরিষেবা ক্রয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
> যথেষ্ট পরিমাণে কেনাকাটার পাশাপাশি সময়মত ক্রেডিট কার্ড-এর বিল প্রদান করলে ক্রেডিট কার্ডধারীর সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে ঋণ লাভের যোগ্যতার সূচক সংখ্যা বা সিআইবি রেকর্ড বাড়ে।
> ব্যবহৃত ক্রেডিট কার্ড-এর চার্জ বেশি বা অন্য কোন ক্রেডিট কার্ড-এর সুযোগ-সুবিধা মনে হলে সহজেই বর্তমান কার্ড থেকে সেই কার্ড-এ স্থানান্তরিত হওয়া যায়।
> পেমেন্ট গেটওয়ে বা মার্চেন্ট সেবায় কোনো অসামঞ্জস্যতা ধরা পড়লে ক্রেডিট কার্ড-এ সহজেই টাকা ফেরতের জন্য আবেদন করা যায়, যার জন্য কাগজের চেক অপেক্ষা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার অধিক নিরাপদ।
> ক্রেডিট কার্ড চুরি বা হারিয়ে গেলে নিকটবর্তী সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে দ্রুত অর্থ ফেরত সহ একদম নতুন কার্ড পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: স্মার্ট আইডি কার্ড: জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল থাকলে যেভাবে সংশোধন করবেন
ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার পূর্বশর্ত
ক্রেডিট কার্ড-এর মাধ্যমে মূলত গ্রাহককে পণ্য বা পরিষেবা ক্রয়ের জন্য অর্থ ঋণ দেয়া হয়। তাই এই কার্ড দেয়ার পূর্বে ক্রেডিট কার্ড ইস্যুকৃত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে যাচাই করে নেয় যে গ্রাহকের সেই অর্থ পরিশোধের সক্ষমতা আছে কি না।
গ্রাহকের যোগ্যতার উপর নির্ভর করে অর্থ খরচের একটি সীমা নির্ধারণ করা হয় যাকে ক্রেডিট লিমিট বলে। এর অতিরিক্ত খরচ করা যায় না।
ক্রেডিট কার্ড নেয়ার জন্য মাসিক আয় কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা হতে হয়। মাসিক আয় যত বেশি হয় সেই আয়ের ধরন ও ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী ক্রেডিট লিমিটের পরিমাণও বেড়ে যায়।
যেমন প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় হলে ১ লাখের আশেপাশে (কম-বেশি) কোন পরিমাণ ক্রেডিট লিমিট পাওয়া যায়।
ক্রেডিট কার্ড আবেদনকারীদের যোগ্যতার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো সাধারণত চাকরিজীবীদের নূন্যতম ৬ মাস চাকরি এবং ব্যবসায়ীদের কমপক্ষে ১ বছরের ব্যবসায়ীক লেনদেন যাচাই করে থাকে।
কিছু ব্যাংক ফিক্সড ডিপোজিটের উপর ভিত্তি করে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে থাকে। ডাচ-বাংলা, ইস্টার্ন ব্যাংক ৫০ হাজার টাকা ফিক্সড ডিপোজিটের উপর ক্রেডিট কার্ড সরবরাহ করে থাকে।
ক্রেডিট কার্ড আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
→ প্রার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্র
→ দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
→ টিআইএন (ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার) সার্টিফিকেট
→ চাকরিজীবীর ক্ষেত্রে নিয়োগপত্র কিংবা স্যালারি সার্টিফিকেট, যেখানে কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকার সালারি হতে হবে, এবং ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
* ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স, ম্যামোর্যান্ডাম অব এ্যাসোসিয়েশন, ১০ লাখ টাকার ব্যবসায়িক লেনদেন সহ ১ বছরের ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
*অন্যান্য পেশাজীবীদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পেশা নিয়োগের সনদপত্র এবং রেফারেন্স হিসেবে ইউটিলিটি বিলের কপি।
→ রেফারেন্স।
আরও পড়ুন: ২০২২ সালে হজের জন্য নিবন্ধন করবেন যেভাবে
ট্রেড লাইসেন্স করার পদ্ধতি: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, খরচ ও সময়
প্রতিটি উদ্যোক্তার জন্য তার পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের সাপেক্ষে সর্বপ্রথম করণীয় হচ্ছে ট্রেড লাইসেন্স করা। ট্রেড লাইসেন্স ব্যবসায়ীকে দেশের যে কোন স্থানে তার ব্যবসাটি পরিচালনা করার স্বাধীনতা দেয়। ব্যবসায়ের অনুকূলে যে কোন কার্যক্রমের জন্য ট্রেড লাইসেন্স একটি অবধারিত নথি। কেননা এর মাধ্যমেই যে কোন ব্যক্তি পরিপূর্ণভাবে একজন ব্যবসায়ী হওয়ার পাশাপাশি ব্যাংক থেকে ঋণ এবং ব্যবসায়িক সংগঠনের সদস্যতা পেয়ে থাকেন। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানের পরিব্যপ্তি বৃদ্ধির নেপথ্যে একটি মোক্ষম বাহক হিসেবে কাজ করে এই অনুমতি পত্রটি। তাই চলুন, জেনে নিই ট্রেড লাইসেন্স করার পদ্ধতি।
ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য কোথায় যেতে হয়
ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য আবেদনকারীকে প্রথমেই ঠিক করতে হবে যে তার ব্যবসাটি আসলে কোন স্থানীয় সরকারের অধীনে পরিচালিত হবে। স্থানীয় সরকার বলতে সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা বা উপজেলা পরিষদকে বোঝায়। একটি অফিসের নিমিত্তে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে দেশব্যাপী ব্যবসা করা যায়। তবে ব্যবসা প্রসারের স্বার্থে অন্য স্থানীয় সরকারের অধীনে শাখা অফিস করতে হলে সেখানকার জন্য পৃথক ট্রেড লাইসেন্স করতে হবে।
ঢাকা শহরের ক্ষেত্রে কোন অঞ্চল ভিত্তিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালিত হবে তা নির্বাচন করতে হবে। ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রত্যেকটিতে অঞ্চল রয়েছে দশটি করে। অঞ্চলের অফিস থেকেই ট্রেড লাইসেন্স-এর জন্য আবেদন ফর্ম পাওয়া যাবে এবং সেখান থেকেই চূড়ান্তভাবে ট্রেড লাইসেন্সটি প্রদান করা হবে।
আরও পড়ুন: মোটর ড্রাইভিং লাইসেন্স করার পদ্ধতি: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও খরচ
ট্রেড লাইসেন্স-এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
ব্যবসার ধরনের উপর ভিত্তি করে ট্রেড লাইসেন্স-এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রেও ভিন্নতা আসে।
স্বত্বাধিকারী ব্যবসার ক্ষেত্রে
→ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের অফিস বা দোকান ভাড়ার চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি
অফিস বা দোকান ব্যবসায়ির নিজের জায়গা হলে ইউটিলিটি বিল এবং হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের ফটোকপি। এই অফিস বা দোকানটি অবশ্যই বাণিজ্যিক স্থাপনায় হতে হবে। সাধারণত কোন এলাকায় ভবন দুইভাবে নির্মিত হয়- এক. আবাসিক ও দুই. বাণিজ্যিক। যে কোন ধরনের ব্যবসার অফিস অবশ্যই বাণিজ্যিক ভবনে নিতে হবে, নতুবা ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করা হয় না।
→ স্বত্বাধিকারীর তিন কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
→ স্বত্বাধিকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র
আরও পড়ুন: ২০২২ সালে হজের জন্য নিবন্ধন করবেন যেভাবে
অংশীদারী ব্যবসার ক্ষেত্রে
→ অফিস বা দোকান ভাড়ার চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি
জায়গাটি অংশীদারদের কারোর নিজের হলে ইউটিলিটি বিল এবং হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের ফটোকপি।
→ ৩০০ টাকার দলিলে অংশীদারী ব্যবসার চুক্তিপত্র
→ ম্যানেজিং পার্টনারের তিন কপি ছবি
→ ম্যানেজিং পার্টনারের জাতীয় পরিচয়পত্র
কোম্পানির ক্ষেত্রে
→ অফিস বা দোকান ভাড়ার চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি
জায়গাটি অংশীদারদের কারোর নিজের হলে ইউটিলিটি বিল এবং হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের ফটোকপি।
→ কোম্পানির সার্টিফিকেট অফ ইন-কর্পোরেশন
→ কোম্পানির মেমরেন্ডাম ও আর্টিকেল অফ এসোসিয়েশন
→ ম্যানেজিং ডিরেক্টরের তিন কপি ছবি
→ ম্যানেজিং ডিরেক্টরের জাতীয় পরিচয়পত্র
ট্রেড লাইসেন্স করতে প্রয়োজনীয় খরচ ও সময়
ব্যবসার ধরনের উপর ভিত্তি করে যেভাবে লাইসেন্স পরিবর্তিত হয় ঠিক সেভাবেই বিভিন্ন ব্যবসার লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় খরচের মধ্যেও বেশ তারতাম্য ঘটে।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করতে এই অঙ্কটি নিম্নে এক থেকে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এক নামে একাধিক ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যবসার ধরণ অনুযায়ী খরচ আরও বৃদ্ধি পাবে। তবে কোম্পানির ক্ষেত্রে সকল ধরনের ব্যবসা এক লাইসেন্স দিয়ে স্বল্প খরচে করা যাবে। সিটি কর্পোরেশন আদর্শ কর তফসিল, ২০১৬-এর বিধিমালা অনুযায়ী ট্রেড লাইসেন্সের এই খরচ-এর হার সমূহ নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়া এর সাথে আকৃতি অনুসারে সাইনবোর্ড ফি, লাইসেন্স বই-এর খরচ ও এগুলোর উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট-এর খরচ আছে।
ট্রেড লাইসেন্স-এর আনুষঙ্গিক খরচাদি আবেদন ফর্মে উল্লেখিত ব্যাংক সমূহে জমা দেয়ার মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।
ট্রেড লাইসেন্স প্রক্রিয়ায় সময় লাগতে পারে আবেদন ফর্ম জমা দেয়ার দিন থেকে পাঁচ অথবা সাত কর্মদিবস।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা মুক্ত দেশের তালিকা ২০২১
ধাপে ধাপে ট্রেড লাইসেন্স করার পদ্ধতি
ধাপ-১/ সর্বপ্রথম কাজ হচ্ছে ব্যবসায়িক কেন্দ্রের জন্য সঠিক অঞ্চল নির্ধারণ করা।
ধাপ-২/ আই ফর্ম ও কে ফর্ম নামে ট্রেড লাইসেন্স আবেদনের দুটি ভিন্ন ধরনের ফরম আছে। ছোট কিংবা সাধারণ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য আই ফর্ম এবং বড় ব্যবসার ক্ষেত্রে কে ফর্ম সংগ্রহ করতে হয়। প্রতিষ্ঠানটি যে অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত সেই অঞ্চলের অফিস থেকেই এই ফর্মগুলো সংগ্রহ করা যাবে, যেগুলোর প্রতিটির দাম ১০ টাকা।
ধাপ-৩/ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে ট্রেড লাইসেন্স-এর ফি ভ্যাটসহ জমা দিয়ে রশিদ সংগ্রহ করতে হবে।
ধাপ-৪/ ব্যবসার ধরন অনুযায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন ফর্মটির সাথে ব্যাংকে ফি জমা রশিদটি সংযুক্ত করে স্থানীয় সরকারের অফিসে জমা দিতে হবে।
ধাপ-৫/ স্থানীয় সরকারের অধীভূক্ত আঞ্চলিক অফিস থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা ব্যবসায়িক কেন্দ্রটি পরিদর্শন করে অফিসে রিপোর্ট করবেন।
ধাপ-৬/ পূর্ববর্তী প্রতিটি ধাপ সঠিকভাবে সম্পন্ন হলে এই চূড়ান্ত পর্যায়ে ট্রেড লাইসেন্স পাওয়া যাবে সেই আঞ্চলিক অফিস থেকে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও খরচ
ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন
প্রতিটি নতুন ট্রেড লাইসেন্স-এর মেয়াদ থাকে এক বছর। স্বভাবতই ট্রেড লাইসেন্স এর কার্যকারিতা বহাল রাখতে হলে প্রতি বছরই ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়।
ট্রেড লাইসেন্স নতুন করার সময় যে সরকারি ফিগুলো প্রদান করা হয় তা হলো, ট্রেড লাইসেন্স ফি, সাইন বোর্ড ফি এবং এই দুটো মিলে যত টাকা হয় তার উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট। আর ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের সময় এই খরচগুলোর সাথে যোগ হয় উৎসকর, যেটি সিটি করপারেশনের ক্ষেত্রে ৩,০০০ টাকা। ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার ক্ষেত্রে এটি কিছুটা কম হয়।
শেষাংশ
ব্যবসাকে বৈধকরণের জন্য ট্রেড লাইসেন্স একটি অপরিহার্য সনদ। ট্রেড লাইসেন্স দেয়া এবং এর নবায়ন স্থানীয় সরকারের কর আদায়ের একটি মাধ্যম। এটি ছাড়া যে কোন ব্যবসা প্রতারণার সামিল হবে। এ অপরাধে এমনকি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রতারণার হিসেবে দেওয়ানী বা ফৌজদারি মামলাও হতে পারে। তাই সঠিক ও বৈধ ভাবে ব্যবসা পরিচালনায় ট্রেড লাইসেন্স-এর কোন বিকল্প নেই।
আরও পড়ুন: স্মার্ট আইডি কার্ড: জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল থাকলে যেভাবে সংশোধন করবেন
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আফসান চৌধুরীসহ ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার পেলেন ৬ লেখক
বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এবং গবেষক ও সংবাদ সংস্থা ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশের (ইউএনবি) এডিটর এট লার্জ আফসান চৌধুরীসহ ছয়জনকে ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ২০১৯ ও ২০২০ সালের পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করা হয়।
২০২০ সালে প্রবন্ধ, আত্মজীবনী, ভ্রমণ ও অনুবাদ বিভাগে আফসান চৌধুরী ‘১৯৭১ গণনির্যাতন – গণহত্যা, কাঠামো, বিবরণ ও পরিসর’ শিরোনামের বইটির জন্য পুরস্কার জিতেছেন। কবিতা ও উপন্যাস বিভাগে ‘পথিক পরাণ’ শিরোনামের বইয়ের জন্য কবি মোহাম্মদ রফিক এবং ‘হুমায়ূন আহমেদ তরুণ লেখক’ বিভাগে ‘বাংলাদেশের লোকধর্ম’ শিরোনামের বইটির জন্য রঞ্জনা বিশ্বাস পুরস্কার জিতেছেন।
আরও পড়ুন: ফরিদা হোসেন: বাংলা সাহিত্যের এক স্বপ্ন শিল্পী
২০১৯ সালে প্রবন্ধ, আত্মজীবনী, ভ্রমণ ও অনুবাদ বিভাগে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তার ‘দীক্ষাগুরুর তৎপরতা’ শিরোনামের বইয়ের জন্য পুরস্কার জিতেছেন। কবি হেলাল হাফিজ কবিতা ও উপন্যাস বিভাগে তার ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’ শিরোনামের বইয়ের জন্য, মোজাফফর হোসেন তার ‘পাঠে বিশ্লেষণে বিশ্বগল্প: ছোটোগল্পের শিল্প ও রূপান্তর’ শিরোনামের বইটির জন্য ‘হুমায়ূন আহমেদ তরুণ লেখক’ বিভাগে পুরস্কার বিজয়ী হয়েছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
এই দুই বছরে তিন ক্যাটাগরির পুরস্কারের জন্য এক হাজারের বেশি বই জমা পড়েছে। তার মধ্য থেকে সেলিনা হোসেন, খালিকুজ্জামান ইলিয়াস, বিশ্বজিৎ ঘোষ এবং আবিদ আনোয়ারের সমন্বয়ে গঠিত জুরি প্যানেল প্রতি বছর তিনটি সেরা বই নির্বাচিত করেন।
পুরস্কার বিজয়ী লেখক ও কলামিস্ট আফসান চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে আমাদের দেশে সবার বদলে গুটিকয়েক মানুষের ইতিহাস লিখেছি আমরা। বিদ্রোহী কৃষক সমাজের নেতৃত্বে ২০০ বছরের দীর্ঘ সংগ্রামের পর বাংলাদেশের জন্ম। ১৯৭১ সেই মুহূর্ত যখন এই সংগ্রাম সফল হয়েছিল। এটি কেবল একটি রাষ্ট্র বা সমাজের নয়, সকলের। তাই আমাদের গুটিকয়েক বা গোষ্ঠীর বদলে সবার ইতিহাস লিখতে হবে।
আরও পড়ুন: ‘মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা অস্বীকার করা মানে বাংলাদেশকে অস্বীকার করা’
টাইমস মিডিয়া লিমিটেডের এমডি এ কে আজাদ বলেন, ‘সমকালের জন্য এটা আনন্দের এবং গর্বের বিষয় যে আমরা লেখক ও সাহিত্যিক ব্যক্তিত্বদের অনুপ্রাণিত ও সম্মানিত করতে পেরেছি।’
ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি ও সিইও সেলিম আর এফ হুসেন বলেন,‘এই পুরস্কারটি বাংলা সাহিত্য জগতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে এবং আমরা এটির অংশ হতে পেরে সম্মানিত।’
মেরামতের পর উন্মুক্ত হলো সুলতানের ৩ ছবি
প্রায় এক বছর পর শিল্পী সুলতানের ৩টি ছবি সুলতান কমপ্লেক্সে ফিরে এসেছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মাধ্যমে ঢাকায় মেরামত ও সংস্কার করতে নেয়া দুটি ড্রইং ও একটি পেইন্টিং ছবি ছবি ‘ফসল সংগ্রহ’, ‘মাছ শিকার ও ‘জমি তৈরি’ সুলতান কমপ্লেক্সে প্রতিস্থাপন করে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে শিল্পকলা একাডেমির একটি টিম ছবিগুলো উন্মুক্ত করে।এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক সৈয়দা মাহবুবা করিম, এনডিসি জাহিদুল ইসলাম, জেলা কালচারাল অফিসার ও সুলতান কমপ্লেক্সের কিউরেটর হায়দার আলী, জেলা শিল্পকলা একাডেমির বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক মলয় কুন্ডু, জেলা শিল্পকলা একাডেমির কর্মকর্তা শেখ হানিফ প্রমুখ।
আরও পড়ুন: অন্ধত্ব নিয়ে প্রাণে বেঁচে আছেন সুলতানের পালিত কন্যা নিহার বালা
এদিকে শিল্পীর জীবনের শেষ মুহূর্তে আঁকা অসমাপ্ত দু’টি ছবি ‘স্নানরত কলসি কাঁখে নারী’ ও ‘কাজিয়া (কাইজ্যা)’ ছবি মেরামতের জন্য জরুরি হলেও এখনও তা মেরামতের কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না জানা গেছে।
সৈয়দা মাহবুবা করিম জানান, শিল্পীর নষ্ট হওয়া ‘স্নানরত কলসি কাঁখে নারী’ও ‘কাজিয়া (কাইজ্যা)’ দু’টি ছবি এ মুহূর্তে নেয়া হচ্ছে না। তবে শিল্পকলা একাডেমির নিদের্শনা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে এসব ছবি সংস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।
সুলতান কমপ্লেক্সের জন্য একটি আধুনিক পরিবেশসম্মত গ্যালারির প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, বর্তমানে যে গ্যালারিতে শিল্পীর ছবি রাখা হয়েছে এখানে অনেক সমস্যা রয়েছে। তবে ছোট ছোট সমস্যা যাতে ঠিক করা যায় সে জন্য জেলা প্রশাসন এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমিকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: এস এম সুলতানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নড়াইলে আর্ট ক্যাম
এসএম সুলতান কমপ্লেক্সের কিউরেটর ও জেলা কালচারাল অফিসার হায়দার আলী জানান, নষ্ট হয়ে যাওয়া বাকি ছবিগুলো রিপিয়ারের জন্য জেলা শিল্পকলা একাডেমি একটি প্রস্তাবনা দিবে। তার ভিত্তিতে পরবর্তীতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পর্যায়ক্রমে ছবি সংস্কারের ব্যবস্থা করবে।
‘মাসুদ রানা’র লেখক-প্রকাশক কাজী আনোয়ার হোসেন আর নেই
জনপ্রিয় রহস্যধর্মী সিরিজ ‘মাসুদ রানা’র লেখক ও প্রকাশক কাজী আনোয়ার হোসেন মারা গেছেন। বুধবার বিকালে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
কাজী আনোয়ার হোসেনের পুত্রবধূ মাসুমা মাইমুর এক ফেসবুক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি লেখেন, ‘গত অক্টোবরের ৩১ তারিখ প্রোস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়ে আব্বার (কাজী আনোয়ার)। মাঝে পাঁচ বার হসপিটালাইজড ছিলেন। চিকিৎসার সুযোগ খুব একটা পাওয়া যায়নি। একটা ব্রেইন স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক হয়ে সব শেষ হয়ে গেল। ১০ জানুয়ারি থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি।’
কাজী আনোয়ার হোসেনের বোন ও ছায়ানটের সভাপতি সানজিদা খাতুন জানান, গতকাল তাকে বারডেমে ভর্তি করে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেয়া হয়।
আরও পড়ুন: বাঙালি কার্টুনিস্ট নারায়ণ দেবনাথ আর নেই
আগামীকাল সকালে তার নামাযে জানাজা ও দাফন হবে বলেও জানান তিনি।
জাতীয় অধ্যাপক, বিজ্ঞানী, লেখক ও শিক্ষাবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ও সাজেদা খাতুনের ঘরে ১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন কাজী আনোয়ার হোসেন।
তিনি ১৯৫২ সালে সেন্ট গ্রেগরি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। তিনি জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে বিএ এবং ১৯৮১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
পাঠন নন্দিত রহস্যধর্মী সিরিজ ‘মাসুদ রানা’র জন্য ব্যাপক পরিচিত কাজী আনোয়ার হোসেন ১৯৬৩ সালে সেগুনবাগিচায় ‘সেগুনবাগান প্রকাশনী’ হিসেবে তার প্রথম প্রেস ব্যবসা শুরু করেন। তার প্রথম প্রকাশনার নাম ছিল ‘কুয়াশা-১’ এবং এটি প্রকাশিত হয় ১৯৬৪ সালের জুন মাসে।
আরও পড়ুন: ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট ডেভিড সাসোলি আর নেই
পরবর্তীতে প্রকাশনা সংস্থার নাম পরিবর্তন করে ‘শেবা প্রকাশনী’ রাখেন তিনি। কাজী আনোয়ার হোসেন ১৯৬৬ সালে ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের প্রথম সংস্করণ ‘ধ্বংস পাহাড়’ প্রকাশ করেন।
কাজী আনোয়ার হোসেন বিখ্যাত গায়িকা ফরিদা ইয়াসমিনকে বিয়ে করেন। তাদের তিন সন্তান হলেন- ছেলে কাজী মাইমুর হোসেন, কাজী শাহনূর হোসেন ও মেয়ে শাহরিন সোনিয়া।
বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য কাজী আনোয়ার হোসেন ১৯৭৯ সালে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, ১৯৭৪ সালে ‘মাসুদ রানা’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্য ও সংলাপের জন্য বাচসাস পুরস্কার এবং ১৯৬৬ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল হাজারী আর নেই
মোটর ড্রাইভিং লাইসেন্স করার পদ্ধতি: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও খরচ
শুধুমাত্র যে কোন ধরনের মোটর গাড়ির চালানোর জন্য স্বীকৃতি স্বরূপ অনুমতিপত্র নয়, বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক কার্যকলাপে ব্যক্তির পরিচয় শনাক্তকরণের ক্ষেত্রেও ড্রাইভিং লাইসেন্স একটি অপরিহার্য নথি। তাছাড়া এর সাথে চালকের কারিগরি দক্ষতার পাশাপাশি পথচারি এমনকি চালকের নিজেরও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িয়ে থাকে। বাংলাদেশের মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ৩ নং ধারা অনুযায়ী, ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া কোন ব্যক্তি সর্বসাধারণের ব্যবহৃত কোন রাস্তায় গাড়ি চালাতে পারবেন না। সুতরাং দেশের যে কোন স্থানে গাড়ি চালানোর জন্য বৈধতার ক্ষেত্রে ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিকল্প নেই। চলুন জেনে নেয়া যাক ড্রাইভিং লাইসেন্স করার পদ্ধতি।
বিআরটিএ বাংলাদেশ ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য নূন্যতম যোগ্যতা
বাংলাদেশের মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ যে কোন নাগরিক ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে এখানে কিছু প্রাথমিক শর্ত আছে।
→ আবেদনকারীকে ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণি পাশ হতে হবে। অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে নূন্যতম এসএসসি পাশ দেখাতে হয়।
→ যে কোন ধরনের ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রথম ও আবশ্যকীয় ধাপ হলো লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ।
→ অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর আবেদনের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর এবং পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য বয়স কমপক্ষে ২০ বছর। পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর তিনটি ধরন আছে।
ক/ হালকা মোটরযানের(ওজন ২৫০০ কেজির নিচে) জন্য প্রার্থীর নূন্যতম বয়স ২০ বছর।
খ/ মধ্যম মোটরযানের(ওজন ২৫০০ থেকে ৬৫০০ কেজি) জন্য কমপক্ষে ২৩ বছর তবে এ ক্ষেত্রে প্রার্থীর কমপক্ষে ৩ বছর ব্যবহৃত হালকা মোটরযান ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে।
গ/ ভারী মোটরযানের(ওজন ৬৫০০ কেজির বেশি) জন্য নূন্যতম বয়স ২৬ বছর এবং এ ক্ষেত্রে প্রার্থীর কমপক্ষে ৩ বছরের মধ্যম মোটরযানের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে।
আরও পড়ুন: ২০২২ সালে হজের জন্য নিবন্ধন করবেন যেভাবে
অনলাইনে বিআরটিএ বাংলাদেশ ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য
অনলাইনের মাধ্যমে খুব সহজেই লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য আবেদন করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে আগে থেকেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের স্ক্যান কপি প্রস্তুত রাখতে হবে।
১। প্রার্থীর ৩০০ x ৩০০ পিক্সেল সাইজের সর্বোচ্চ ১৫০ কিলোবাইটের ছবি
২। রেজিষ্টার্ড ডাক্তারের সাক্ষরসহ পূরণকৃত মেডিক্যাল সার্টিফিকেট ফর্ম (https://bsp.brta.gov.bd/resources/pdf/Editable_BRTA%20Application%20Form-Medical%20Report.(English)_converted.pdf) স্ক্যান কপিটি অনুর্ধ্ব ৬০০ কিলোবাইট হতে হবে।
৩। জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ বা পাসপোর্ট (অনূর্ধ্ব ৬০০ কিলোবাইট)।
৪। বর্তমান ঠিকানার গ্যাস, বিদ্যুৎ বা পানির বিল (সর্বোচ্চ ৬০০ কিলোবাইট)।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা মুক্ত দেশের তালিকা ২০২১
ফরিদা হোসেন: বাংলা সাহিত্যের এক স্বপ্ন শিল্পী
মুহাম্মদ নিযামুদ্দীন
গুণমুগ্ধ ও ভক্তদের কাছে তিনি ফরিদা আপা হলেও তাঁর পুরো নাম ফরিদা হোসেন। প্রতিভা তাঁর বহুমুখী - সৃষ্টির আনন্দে তিনি সুখী। কি গল্প লেখায়, কি উপন্যাস লেখায়, কি নাটক লেখায়, কি গান রচনায়, কি সুরারোপে, কি আবৃত্তিতে, কি সংগঠক হিসেবে, কি সাহিত্যপত্র সম্পাদনায়, কি সমাজসেবায় - সকল ক্ষেত্রে তাঁর সমান ও স্বচ্ছন্দ বিচরণ। তাঁর কাছে জীবনে থেমে যাওয়া বলে কিছু নেই। ঝর্ণার মতো চলাই তাঁর ছন্দ, চলাতেই আনন্দ। বয়সে তিনি প্রবীণ হলেও সৃজনে-মননে তিনি অরুণ রাঙা তরুণদের সমান বয়সী।
তাঁর জন্ম ১৯ জানুয়ারি কলকাতায়। তাঁর বাবার নাম ফয়েজ আহমেদ এবং মায়ের নাম বেগম ফয়েজুন্নেসা। তাঁর বাবা ছিলেন আইনবিদ এবং উপমহাদেশের শ্রম আন্দোলনের পথিকৃত। তাঁর পৈত্রিক নিবাস চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার শায়েরখালি গ্রামে। পাঠ্যাবস্থা থেকে প্রতিভাবান ছিলেন তিনি। ষাটের দশকে ছাত্রী থাকা অবস্থায় পাইওনিয়ার পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর গল্পগ্রন্থ 'অজান্তা', যার প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন প্রখ্যাত শিল্পী ও টিভি ব্যক্তিত্ব মোস্তফা মনোয়ার। গল্প, উপন্যাস ও নাটক মিলে এ পর্যন্ত তার ৪০টির মতো বই প্রকাশিত হয়েছে। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৪ সালে তিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার একুশে পদক লাভ করেন। দীর্ঘকাল পর্যন্ত তিনি আন্তর্জাতিক সাহিত্য সংগঠন পেন বাংলাদেশ শাখার সভাপতি ছিলেন। পেন-এর আমন্ত্রণে পৃথিবীর বহু দেশ সফর করেন তিনি। পেন ছাড়াও বাংলা একাডেমি (জীবন সদস্য), বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ (সহ-সভানেত্রী ও জীবন সদস্য), আঞ্জুম শিশু কল্যাণ সংস্থা (প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রী), গুলশান লেডিস কমিউনিটি ক্লাব (সদস্য), গুলশান ক্লাবসহ বিভিন্ন ক্লাব , সংগঠন ও সেবামূলক সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত তিনি। 'অবিনশ্বর' নামে যে একটি সাহিত্যপত্র দীর্ঘকাল থেকে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে, তিনি তার সূযোগ্য সম্পাদক। যখন তিনি কথা বলেন, মিরসরাইয়ের মেয়ে হলেও উচ্চারণে আঞ্চলিকতার কোনো আছর তার মধ্যে মোটেও পরিলক্ষিত হয় না। মনে হয়, উচ্চাঙ্গের উচ্চারণে কেউ বাংলাভাষার আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিত্ব করছেন। তাঁর মুখের ভাষা বেশ মোলায়েম ও মধুর এবং সর্বোপরি তিনি একজন মানবিক গুণসম্পন্ন মননশীল মানুষ।
আরও পড়ুন: বিটিভির মাধ্যমে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও বিকাশের উদ্যোগ
২০১৮ সালের দিকে আমার মেয়ে আনিকা আঞ্জুমের পড়ালেখার প্রয়োজনে আমাকে নয় মাস থাকতে হয়েছিল ঢাকায়। মেয়ে তখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউআইটিএস-এ বিবিএ অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্রী। যমুনা ফিউচার পার্কের সামান্য সামনে বাঁশতলায় বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাস। এর চট্টগ্রাম ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেয়ার কারণেই মেয়েকে ঢাকার ক্যাম্পাসে ভর্তি করাতে বাধ্য হই। তখন আমরা মিরপুর ২-এ সনি সিনেমা হলের পিছে থাকতাম আত্মার আত্মীয় শিহাবের পাঁচতলা ভাড়া বাসায়। মিরপুর থেকে বাঁশতলায় বাসে যাওয়া-আসা করাটা ছিল তখন আমাদের প্রতিদিনের বাস্তবতা। বাঁশতলার কাছাকাছি গুলশানে ফরিদা আপার বাসা। তিনি প্রায়ই তাঁর ব্যক্তিগত পিএস সেলিমকে পাঠাতেন আমাকে তাঁর বাসায় নিয়ে যেতে। তেমনি একটি দিন ছিল ২০১৬ সালের ৭ আগস্ট। মেয়েকে ক্যাম্পাসে পৌঁছে দিয়ে সেলিমের সঙ্গে যাই ফরিদা আপার বাসায়। তখন সকাল সাড়ে দশটা কি এগারটা। বাসায় প্রবেশের পাঁচ মিনিট পরেই অতিথি কক্ষে আসেন ফরিদা আপা। সালাম বিনিময়ের পর প্রথমেই তাঁকে তাঁর প্রয়াত বাবার ওপর প্রকাশিতব্য পুস্তকের প্রুফ দেখা কপিগুলো দেই, যেগুলো তিনি আমাকে দিয়েছিলেন প্রুফ দেখে দিতে। এরপর উঠে আসে সৈয়দ আলী আহসানের ওপর 'অবিনশ্বর'-এর প্রকাশিতব্য সংখ্যাটির কথা, যেটির অতিথি সম্পাদক হওয়ার জন্য তিনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন আমাকে। লক্ষ্য করেছি, সৈয়দ আলী আহসান সম্পর্কে কিছু বলার সময় তাঁর অবয়বে আবেগ ও শ্রদ্ধার শুদ্ধ ও শুভ্র প্রকাশ। সৈয়দ আলী আহসান সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘স্যার আমাকে বলতেন, যেখানেই বাস করো না কেন, সেই স্থানকে যদি আনন্দের স্থান হিসেবে গড়ে তুলতে পার, তবে কাজ করতেও আনন্দ পাবে, সাফল্য পাবে।’
আরেক স্মৃতিচারণে তিনি বলেন, “একবার আমি ওমরা করতে যাবো, গিয়েছি আলী আহসান স্যারের বাসায়- তাঁর কাছ থেকে ওমরা সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিতে। স্যার হেসে আমাকে বলেন, 'সবাই আসে আমার কাছে তদবির নিয়ে - কেউ চাকুরির তদবির নিয়ে, কেউ লেখা প্রকাশের তদবির নিয়ে। এই প্রথম কেউ এলো ওমরা সম্পর্কিত পরামর্শ নিতে।’ এরপর স্যার হাত তুলে আমার জন্য দোয়া করে দেন।"
এরই মধ্যে চলে আসে চা-নাস্তা। নিজের প্রথম গল্পগ্রন্থ 'অজান্তা'র একটি আদি কপি দেখিয়ে তিনি বলেন, "তখন আমি ছিলাম প্রচারবিমুখ। নিজেকে আড়ালে রাখতাম সবসময়। আমার বিয়ের যিনি উকিল ছিলেন, তিনি ছিলেন আব্বার পূর্ব পরিচিত। তিনি একদিন আসেন আমাদের বাসায়। এসে কাছে ডাকেন আমাকে এবং বলেন, নিজেকে আড়ালে রাখলে প্রতিভা প্রকাশ পাবে কি করে?"
নিজের স্বামী মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন সম্পর্কে বলেন, "বিয়ের আগে তিনি আমার গল্পগ্রন্থ 'অজান্তা' পড়েছেন এবং সেটি সবসময় তাঁর বালিশের নিচে থাকতো। একদিন তিনি টিভি ভবনে যান তাঁর বন্ধু জাকিউদ্দীন আহমদকে নিয়ে। তখন টিভি ভবন ছিল ডিআইটি'তে। আমি তখন টিভি'র জন্য নাটক লিখতাম, পরিচালনা করতাম। আমার বড় ভাই ছিলেন তখন টিভি'র চীফ ক্যামেরাম্যান। আমি সেদিন নাটক নির্দেশনার কাজে ব্যস্ত ছিলাম। আমাকে দেখে এসে পরে তারা মন্তব্য করেছিলেন - মেয়ে তো নয়, যেন আগুন!”
আরও পড়ুন: ‘মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা অস্বীকার করা মানে বাংলাদেশকে অস্বীকার করা’
তিনি আরও বলেন, "সেসময় আমি কাজের অবসরে এক জায়গায় বসে থাকতাম, হৈ-হুল্লোড় করা থেকে দূরে থাকতাম। কেউ এসে আমার পাশে বসলে, উঠে যেতাম ; ভাবতাম- পুরুষ কখনও ভালো হতে পারে না। পাশে বসার সুযোগ নিয়ে একসময় হাতের ওপর হাত রাখবে, তারপর বলে বসবে- আমি তোমাকে ভালোবাসি! পুরুষ সম্পর্কে তখন আমার ধারণা ইতিবাচক ছিল না।”
বিয়ের পরের দিনগুলো সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, "বিয়ের পর বহু স্ট্রাগল করতে হয়েছে আমাকে। দশ বছর পর্যন্ত তো কোনো লেখালেখিই করতে পারিনি! সংসার সামলাতে হয়েছে। শ্বাশুড়ি, দেবর, ননদ এবং নিকট আত্মীয়স্বজন সকলকে দেখতে হয়েছে আমাকে। কত কষ্ট যে করেছি, স্ট্রাগল করেছি, বলে শেষ করা যাবে না। শ্বশুর পক্ষের কোনো কোনো মহিলার উপহাসও শুনতে হয়েছে। কিন্তু আমি কিছু বলতাম না। চুপ থাকতাম। বিয়ের পর কেউ কেউ তো এমনও বলেছে - কি বউ আনলো ঘরে, কেঁচকি মাছও রাঁধতে জানে না। আমার বড় ভাই আমার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে চুপ থাকতে পারতেন না, প্রতিবাদ করতেন। তিনি তাদেরকে বলতেন, সে কেঁচকি মাছ রাঁধতে জানে না - সেটাই শুধু তোমরা দেখলে, কিন্তু সে যে গল্প লিখে, গান লিখে, কবিতা লিখে, সেটা তোমাদের চোখে পড়ে না! দেখি, সে জাতীয় কিছু তোমরা নিজেরা লিখে দেখাও তো!"
নিজের স্বামীর সুনাম করতে গিয়ে ফরিদা হোসেন বলেন, "আমার স্বামী সবসময় আমাকে সমর্থন করতেন, সব সংকটে সঙ্গে থাকতেন। তাঁর সহযোগিতা-সমর্থন ছাড়া আজ আমি এ পর্যায়ে পৌঁছতে পারতাম না। তিনি লেখালেখি করতেন না ঠিকই, কিন্তু ভালো সাহিত্য বুঝতেন। বিয়ের পর ব্যবসায়িক কারণে যখন করাচি থাকতেন, আমাকে না লিখলেও আমার বোনদেরকে চিঠি লিখতেন। পরে সেসব দেখিয়ে বোনেরা আমাকে বলতো, দেখ আপা, পড়ে দেখ, দুলাভাই কি সুন্দর ভাষায় চিঠি লিখেছেন!"
আরও পড়ুন: শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ১০৭তম জন্মবার্ষিকী আজ
ফরিদা আপার সঙ্গে এরকম আরও একদিন আলাপ হয়েছিল তাঁর বাসায়। সেদিন ছিল ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর। সেদিন কথায় কথায় চলে আসে সৈয়দ রশিদ আহমদ জৈনপুরী (র.)-এর প্রসঙ্গ। জৈনপুরী (র.)-কে তিনি বাবা হুজুর বলে ডাকতেন। তাঁকে তিনি ও তাঁর স্বামী খুব শ্রদ্ধা করতেন। একবার জৈনপুরী হুজুরের সঙ্গে তিনি হজ্বেও গিয়েছিলেন। সে কাফেলায় বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক ড. হারুন-উর-রশীদসহ আরও অনেকেই গিয়েছিলেন। সেই হজ্ব চলাকালীন সময় একদিন বাথরুমে পিছলে পড়ে প্রচুর ব্যথা পেয়েছিলেন ফরিদা আপা। পরদিন কাবা শরীফ তাওয়াফে যেতে পারবেন কিনা সংশয়ে ছিলেন। বাবা হুজুর তথা জৈনপুরী হুজুরকে ব্যথার কথা বললে তিনি রুম থেকে এনে কি একটা ওষুধ দেন ফরিদা আপাকে এবং খেতে বলেন। খেতে দিয়ে হুজুর বলেন, ইনশাআল্লাহ ভালো হয়ে যাবেন। পরদিন সকালে ফরিদা আপা দেখেন তিনি পুরোপুরি ব্যথামুক্ত এবং দিব্যি হাঁটতে পারছেন। এবং তাওয়াফসহ হজ্বের যাবতীয় নিয়মকানুন পালন করতে পারছেন। নিজের অবস্থা দেখে আপা অবাক হয়ে যান! আরেকদিন আপা নাকি তাঁর এক আত্মীয়ের বাসায় যাওয়ার সময় জৈনপুরী হুজুরকে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে দেখেন। বাসায় গিয়ে দেখেন হুজুর ছাদের ওপর হাঁটাহাঁটি করছেন। একই ব্যক্তিকে কয়েক মিনিটের ব্যবধানে দু'জায়গায় দেখতে পেয়ে তিনি অবাক হয়ে যান! আপা জৈনপুরী হুজুরের বহু কেরামতির কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে শোনান আমাকে।
উল্লেখ্য, এর দেড় দশক আগে দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকায় হুজুরের ধারাবাহিক 'সংলাপ' পড়ে আমিও মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম, নিজের অজান্তে তাঁর ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। তখন ব্যক্তিগত এক ব্যাপারে আমি এতই বিক্ষুব্ধ ও বিপর্যস্ত ছিলাম যে, কোনোমতেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলাম না। হুজুরের একটি 'সংলাপ' পড়ে আমি শান্ত হয়ে যাই, শান্তি লাভ করি। সেই লেখাটি পড়ে আমার অন্তরের আগুন পানিতে পরিণত হয়। আমার কাছে তখন কেন জানি মনে হয়েছিল, দূর থেকে হলেও আমি তাঁর রুহানি ফয়েজ উপলব্ধি করতে পারছিলাম। যতটুকু মনে পড়ে, লেখাটির উপশিরোনাম 'ক্রোধের আগুন ও বিনয়ের পানি'-এ জাতীয় কিছু ছিল। সেটি প্রকাশিত হয়েছিল দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকায়। আজ সেসব স্মৃতিরা পোহায় রোদ্দুর।
আরও পড়ুন: কসমস আতেলিয়ার৭১ এর আয়োজনে 'আর্টিস্ট রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম'
২০২২ সালে হজের জন্য নিবন্ধন করবেন যেভাবে
মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় বৈশ্বিক সম্মেলন এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান হজ। প্রতি বছর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সৌদি আরবের মক্কা গমনকারীদের বৃহৎ মিলনায়তনে শামিল হন বাংলাদেশের মুসলমানরাও। করোনার প্রকোপে ২০২০ থেকে এই আন্তর্জাতিক ধর্মীয় সম্মেলনটি শুধুমাত্র সৌদির হজপালনকারীদের জন্য সীমাবদ্ধ করায় বিশ্বের অন্যান্য তীর্থযাত্রীদের ন্যায় বাংলাদেশিরাও বঞ্চিত হয়েছেন হজে অংশগ্রহণ থেকে। এ বছর যথাযথ সতর্কতা মেনে সৌদি হজ কর্তৃপক্ষের প্রণীত নীতিমালা অনুসরণের মাধ্যমে হজের জন্য প্রস্তুতি নেয়া যাবে। চলুন জেনে নিই ২০২২ সালে কিভাবে হজের জন্য নিবন্ধন করবেন।
হজের নিবন্ধন পদ্ধতি
বাংলাদেশে প্রতি বছর সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের নিবন্ধন নেয়া হয়। তবে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়া হজ যাত্রীর সংখ্যা মোট হজ যাত্রীর মাত্র ৫ শতাংশ। সরকারি-বেসকারি উভয় ক্ষেত্রেই যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো প্রাক-নিবন্ধন।
হজের জন্য সৌদি আরবের হজ ও উমরাহ কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর পৃথিবীর সকল দেশের একটি নির্দিষ্ট কোটা নির্ধারণ করেন দেয়। মক্কা-মদীনায় থাকা-খাওয়া সংক্রান্ত জরুরি সেবা প্রদানের জন্য ধারণ ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে এই কোটা বরাদ্দ হয়ে থাকে।
এরপরেও প্রতি বছর এই কোটার বাইরেও বহু সংখ্যক আবেদন জমা পড়ে। আর এই জন্যই বাংলাদেশের হজ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সৌদি ই-হজ সিস্টেমের সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রাক-নিবন্ধন পদ্ধতির অবতারণা। প্রাক-নিবন্ধিত লোকদের ভেতর থেকে প্রতি বছর কোটা অনুসারে হজে পাঠানো হয়। এক্ষেত্রে অপেক্ষমান যাত্রীদের পরের বছরে হজে যেতে হয়।
আরও পড়ুন: স্মার্ট আইডি কার্ড: জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল থাকলে যেভাবে সংশোধন করবেন
হজের প্রাক-নিবন্ধন পদ্ধতি
প্রার্থীরা অনলাইনের মাধ্যমে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের অন্তর্গত হজ যাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধন সিস্টেম থেকে প্রাক-নিবন্ধন করতে পারবেন। এর জন্য প্রয়োজনীয় ধাপগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
→ সরকারি তত্ত্বাবধানে হজ যাত্রায় প্রাক-নিবন্ধনের জন্য নিম্নলিখিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে আবেদন করা যাবে।
১। ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র (ইউডিসি)
২। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়
৩। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যালয়
৪। পরিচালক, হজ অফিস, আশকোনা, ঢাকা
আরও পড়ুন: স্মার্ট আইডি কার্ড: জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল থাকলে যেভাবে সংশোধন করবেন
বেসরকারি ভাবে প্রাক-নিবন্ধনের জন্য যেতে হবে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত বৈধ হজ এজেন্সিগুলোতে।
→ আবেদন করার জন্য প্রথমে জিমেইল আইডি দিয়ে লগ-ইন করতে হবে।
→ লগ-ইন করার পর প্রার্থীর তথ্য প্রদানের পালা। একাধিক আবেদনের ক্ষেত্রে ‘নতুন আবেদন’ বাটনে ক্লিক করতে হবে । তথ্যগুলো অবশ্যই জাতীয় পরিচয় পত্রের অনুরূপ হতে হবে। অনূর্ধ্ব ১৮ বছর বয়সের ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদের তথ্যানুসারে ফরম পূরণ করতে হবে।
→ এবার ‘পেমেন্ট আবেদন’ বাটনে ক্লিক করে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ব্যাংক-এর তথ্য প্রদান করতে হবে।
→ অতঃপর ‘ভাউচারের জন্য আবেদন করুন’ অপশনে যেতে হবে।
→ ভাউচার তৈরি হয়ে গেলে প্রার্থীর জিমেইলে একটি মেইল যাবে এবং প্রদানকৃত মোবাইল নাম্বারে একটি এসএমএস যাবে। ভাউচার ডাউনলোড করার জন্য জিমেইল থেকে অথবা প্রাক-নিবন্ধন সিস্টেমে লগ-ইন করে পেমেন্ট আবেদন লিস্ট থেকে ‘পেমেন্ট ভাউচার ডাউনলোড করুন’ বাটনে ক্লিক করতে হবে।
→ অবশেষে ভাউচারটি প্রিন্ট করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে প্রাক-নিবন্ধন ফি জমা দিতে হবে। টাকা জমা হওয়ার পর ব্যাংক থেকে সিরিয়াল নাম্বার সহ প্রাক-নিবন্ধন সনদ প্রদান করা হবে। সেই সাথে মোবাইল নাম্বারে একটি পেমেন্ট নিশ্চিতকরণ ম্যাসেজ যাবে। এমনকি জাতীয় হজ নীতিমালা অনুযায়ী প্রার্থীর প্রাক-নিবন্ধন নম্বর চলতি বছর হজ গমনের জন্য নির্বাচিত হলে তা জানিয়ে প্রার্থীর মোবাইল এবং জিমেইলে ম্যাসেজ দেয়া হবে।
→ হজ গমনের জন্য নির্বাচিত হলে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হজ প্যাকেজের অবশিষ্ট টাকা পরিশোধ করতে হবে।
→ তারপর হজ অফিস বা সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সি পরিশোধ নিশ্চিত করলে হজ্জযাত্রীর জন্য একটি অপরিবর্তনযোগ্য পিলগ্রিম আইডি (পিআইডি) তৈরি হবে, যা হজযাত্রীর মোবাইল নম্বরে এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হবে। এই পিআইডি প্রাপ্তির মাধ্যমেই হজ নিবন্ধন চূড়ান্তভাবে সম্পন্ন হয়। প্রাক-নিবন্ধনে প্রাপ্ত তথ্যাবলি পুলিশের বিশেষ শাখার মাধ্যমে যাচাই করা হয়ে থাকে।
এছাড়া প্রাক-নিবন্ধন সম্বন্ধে আরও তথ্য জানার জন্য যোগাযোগের ঠিকানা: হজ তথ্য সেবা কেন্দ্রে, ফোন নাম্বার- +৮৮০৯৬০২৬৬৬৭০৭, স্কাইপে- hajjcallcenter, ই-মেইল- [email protected]।
আরও পড়ুন: হিমাচল, জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ ভ্রমণ: দর্শনীয় স্থান ও খরচ
বিশ্বে প্রথমবারের মতো মানবদেহে সফলভাবে শূকরের হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন
এক সময় অচিন্তনীয় ঘটনা হলেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্রমবিকাশে পশু ও মানুষের মাঝে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের বিষয়টি ধীরে ধীরে পরিণত হচ্ছে স্বাভাবিক অভিজ্ঞতায়। পূর্বে জীন প্রকৌশলের মাধ্যমে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। আর এবার সম্ভব হলো মানবদেহে শূকরের হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন। এই অভিনব সার্জারিটি সফলতার সাথে সম্পন্ন করলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড মেডিকেল স্কুলের চিকিৎসকরা। যুক্তরাষ্ট্রের ৫৭ বছর বয়সী ডেভিড বেনেট হচ্ছেন সেই মানুষ যিনি শূকরের হৃৎযন্ত্র বুকে নিয়ে এখন পর্যন্ত সুস্থ আছেন। চলুন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই যুগান্তকারী অনবদ্য সংযোজনটির ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নিই।
মানবদেহে শূকরের হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন
এরকম ভিন্ন প্রজাতির মধ্যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের নিরীক্ষণের প্রচেষ্টাটা (মেডিকেল শাস্ত্রে যাকে বলা হয় জেনোট্রান্সপ্লান্টেশন) শুরু হয় ১৭ শতকে। প্রাথমিক গবেষণাটি কেন্দ্রীভূত ছিল স্তন্যপায়ী গোত্রভুক্ত আদিম প্রাণীদের বা প্রাইমেটদের উপর। কিন্তু এই ধরনের সকল প্রচেষ্টা বারবার ব্যর্থ হয়েছে মানবদেহের আভ্যন্তরীণ কাঠামোর সাথে সেই সব প্রাণীর অঙ্গগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ার কারণে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে নিকট অতীতের ঘটনা- শিশু ফা-এর কথা। ১৯৮৪ সালে শিশুটি একটি বেবুনের হৃৎপিণ্ড নিয়ে ২১ দিন বেঁচে ছিল।
অতঃপর ২১ শতকের এই তৃতীয় দশকের প্রারম্ভে মেরিল্যান্ডের ড. বার্টলি গ্রিফিথ ও তাঁর দলের অস্ত্রোপচারটি যুগান্তকারী একটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করল। প্রায় আঠ ঘণ্টা লেগেছিল শূকরের হৃৎযন্ত্রটিকে ৫৭ বছর বয়সী ডেভিড বেনেটের বুকে প্রতিস্থাপন করতে। তাই ২০২২ এর ৭ জানুয়ারি শুক্রবার দিনটি বেনেটের পরিবারের পাশাপাশি তাঁর চিকিৎসকদের জন্যও বেশ উত্তেজনাকর ছিল।
সর্বমোট ১০টি অনন্য জীনের উপর কাজ করার জন্য ছয়টি মানব জীন প্রবেশ করানো হয়েছিল জীনোমে। এই জীনগত প্রকৌশলটি সম্পাদন করেছিল ২০২১ এর সেপ্টেম্বরে ভার্জিনিয়ার বায়োটেক ফার্ম রেভাইভিকোর। তারা অস্থায়ীভাবে একটি মৃত মানুষের শরীরে একটি শূকরের কিডনি সংযুক্ত করেছিলেন এবং এটি কাজ করতে শুরু করেছিল। আর মেরিল্যান্ড ট্রান্সপ্লান্ট তাদের সেই পরীক্ষাকে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যায়। তারা এমন একটি শূকরের হৃৎপিণ্ড ব্যবহার করেছিলেন, যেটি তার কোষে চিনি অপসারণের জন্য জীনগত প্রকৌশলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। এই শূকরগুলোর আকার, দ্রুত বৃদ্ধি এবং দ্রুত বংশবৃদ্ধি বৈশিষ্ট্যের কারণে আদর্শ দাতা হিসেবে তৈরি হয়।
আরও পড়ুন: স্মার্ট আইডি কার্ড: জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল থাকলে যেভাবে সংশোধন করবেন
আর এই হৃৎপিণ্ডটি সরবরাহ করেছে সেই বায়োটেক ফার্ম রিভাইভিকোর। অঙ্গটি অস্ত্রোপচারের আগ পর্যন্ত সচল রাখার জন্য একটি অঙ্গ-সংরক্ষণ মেশিনে রাখা হয়েছিল। পাশাপাশি তাতে একটি পরীক্ষামূলক নতুন অ্যান্টি রিজেকশান ওষুধও ব্যবহার করা হয়, যেটি তৈরি করেছিল কিনিক্সা ফার্মাসিউটিক্যাল্স।
এই পরীক্ষামূলক অস্ত্রোপচারটির সবচেয়ে কঠিন দিক ছিল রোগীকে পুরো ব্যাপারটা জানানো। আর এই কাজটি বেশ বুদ্ধিমত্তার সাথেই করেছেন এই অস্ত্রোপচারের প্রধান চিকিৎসক ডা. বার্টলি গ্রিফিথ। প্রথম চিকিৎসা হওয়াতে পুরো ব্যাপারটিতে ছিল আদ্যোপান্ত অনিশ্চয়তা। এর আগে ডা. প্রিফিথ পাঁচ বছরে প্রায় ৫০টি বেবুনে শূকরের হৃদয় প্রতিস্থাপন করেছেন। অস্ত্রোপচার পরীক্ষামূলক ছিল এবং এর ফলাফল অনিশ্চিত ছিল।
আরও পড়ুন: অতিরিক্ত আবেগ হতে পারে শরীরের ক্ষতির কারণ
শূকরের হৃৎপিণ্ডধারী প্রথম মানুষ আমেরিকান ডেভিড বেনেট
ডেভিড বেনেট তাঁর সারাটা জীবন পুল মেরামত, গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ, পেইন্টিং সহ বৈচিত্র্যপূর্ণ কাজের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। প্রায় এক দশক আগে একটি শূকরের ভাল্ব লাগিয়েছিলেন।
বেশ কয়েকবার হৃৎপিণ্ড দাতার খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরে, কয়েকটি হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন পরীক্ষায় অযোগ্য হওয়ার পর একদম হতাশ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। শারীরিক অবস্থা, হার্ট ফেইলিওর এবং অনিয়মিত হৃদস্পন্দন তাকে কৃত্রিমভাবে হার্ট পাম্পের জন্য অযোগ্য করে তুলেছিল। এভাবে নিজের হৃৎপিণ্ডটাকে বাঁচানোর জন্য দুই মাস চেষ্টা করেও কাজ হয়নি।
এই সবকিছু ভেবে শেষমেষ ডা. গ্রিফিথের প্রস্তাবে অনেকটা জুয়া খেলার মত করেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন বেনেট।
আরও পড়ুন: ঢাকার কাছেই প্রকৃতির মাঝে ক্যাম্পিং সাইট
জটিল অস্ত্রোপচারের পর রোগীর বর্তমান অবস্থা
অস্ত্রোপচারের পর প্রথম ৪৮ ঘণ্টা গুরুতর কোন ঘটনা ছাড়াই কেটেছে। গত সোমবার থেকে অবস্থার বেশ উন্নতি পরিলক্ষিত হয়েছে। তখনো হার্ট-ফুসফুস বাইপাস মেশিনের সাথে সংযুক্ত ছিলেন বেনেট, এমনকি সে অবস্থায় নিজে নিজেই শ্বাস নিতে পারছিলেন। অবশ্য তবে এটি সদ্য নতুন হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপিত হওয়া রোগীর ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক নয়।
এখনো তার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রতিক্রিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ঝুঁকি যদিও কম এরপরেও তার শূকর ভাইরাস বা পোরসিন রেট্রোভাইরাস-এর সংক্রমণের দিকটাও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
তবে এ ধরনের প্রাথমিক স্টেজের প্রতিস্থাপন শেষ পর্যন্ত কাজ করতে পারে কিনা তা অন্বেষণ করার জন্য এটি আরও বেশি সময় প্রয়োজন। এখনো সম্ভাবনার দোলাচলটা থেকেই যাচ্ছে। এরপরও বেনেট আশা করেন যে, এটা চূড়ান্তভাবে কাজ করবে এবং পরবর্তীতে তিনি মানুষের হৃৎপিণ্ডও নিজের বুকে প্রতিস্থাপন করতে পারবেন।
আরও পড়ুন: স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পিংক সল্ট বা হিমালয় লবণের উপকারিতা
পরিশিষ্ট
মানবদেহে সফলভাবে শূকরের হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন একটি যুগান্তকারী উদ্ভাবন, যার চূড়ান্ত ব্যবহারিক সফলতা জন্মগত বিকলাঙ্গ সহ অন্যান্য শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত লক্ষাধিক রোগীদের আশা উদ্রেক করবে। রোগীদের সংখ্যার তুলনায় অধিক হারে অঙ্গগুলোর সরবরাহ মিলবে। গত বছর প্রায় ৩ হাজার ৮১৭ আমেরিকান রোগী মানব হৃৎপিণ্ড পেয়েছে। সংখ্যাটি পূর্বাপেক্ষা বেশি হলেও সম্ভাব্য চাহিদা আরও বেশি। তবে মেরিল্যান্ডের চিকিৎসকরা এই চিকিৎসাটিকে ওয়াটারশেড-এর সাথে তুলনা করেছেন। অর্থাৎ এটি অনেক বড় সাফল্যের একটা ছোট ফলাফল। বেনেটের বুকে স্থাপিত হৃৎপিণ্ডটি যে শূকরের ছিল তার গোত্রের উপর জীনগত প্রকৌশল চলার কারণে বাই প্রোডাক্ট হিসেবে এই হৃৎপিণ্ডে মানুষ বাঁচানোর বৈশিষ্ট্যগুলো পাওয়া গেছে। সুতরাং হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে খুব শিগগিরই একটা বড় পরিবর্তনের আশা রাখা যায়।
স্মার্ট আইডি কার্ড: জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল থাকলে যেভাবে সংশোধন করবেন
নিত্য নৈমিত্তিক জীবনধারায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যকলাপে প্রয়োজনীয় একটি নথি হলো স্মার্ট আইডি কার্ড। বাংলাদেশে প্রতিটি নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহ করা হচ্ছে ২০০৮ সালের ২২ জুলাই থেকে। ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর থেকে চালু হয় ইলেকট্রনিক চিপযুক্ত স্মার্ট আইডি কার্ড। ২০২০ থেকে শুরু হয়ে গেছে এর অনলাইন সেবাও। অনলাইন থেকেই আবেদন সহ স্মার্ট আইডি কার্ড সংক্রান্ত বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। অনেক সময় জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যগুলো অসাবধানতা বশত ভুল হয়ে যায়। তাই চলুন, স্মার্ট কার্ডের ভুল সংশোধন নিয়ে বিস্তারিত জেনে নিই।
এক নজরে স্মার্ট আইডি কার্ড সংশোধন পদ্ধতি
স্মার্ট আইডি কার্ডের অনলাইন সেবাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি সেবা হলো জাতীয় পরিচয়পত্র বা এর তথ্য-উপাত্ত সংশোধন। বাংলাদেশ এনআইডি পোর্টাল থেকে খুব সহজেই এই সেবাটি পাওয়া যেতে পারে। এর জন্য নিচের ক্রমধারাটি অনুসরণ করতে হবে-
১। এনআইডি নাম্বার দিয়ে অ্যাকাউন্ট তৈরি করা
২। স্মার্ট আইডি কার্ড সংশোধন ফি জমা প্রদান
৩। প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র আপলোডের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলোর সম্পাদন
এই পদ্ধতিতে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদনের নির্ধারিত কার্যদিবস পর মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে ফি পরিশোধের সময় যে মোবাইল নাম্বার দেয়া হয়েছিল তাতে সংশোধন অনুমোদনের বার্তা আসবে। সেই সাথে সংশোধিত এনআইডি কার্ডটিও ওয়েবসাইটে প্রদর্শন করা হবে। অতঃপর সেটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করার পর লেমিনেটিং করে ব্যবহার যোগ্য করা যাবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, ইলেক্ট্রনিক চিপযুক্ত সংশোধিত জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে পাওয়ার জন্য প্রার্থীকে তার ভোটার অঞ্চল থেকে সরাসরি গিয়েই সংগ্রহ করতে হবে।
এছাড়া এনআইডি কার্ড সংক্রান্ত আরও কোন তথ্য পেতে হলে সরকারি কর্ম দিবসগুলোতে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে যেকোন সময় যোগাযোগ করা যাবে ১০৫ নাম্বারে।
আরও পড়ুন: সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র জাল, তবুও তিনি শিক্ষক!
স্মার্ট আইডি কার্ড সংশোধন ফি ও কার্যদিবস
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফি মূলত দুটি ক্ষেত্রে ধার্য হয়ে থাকে।
১। স্মার্ট কার্ড-এর সামনের ও পেছনের পৃষ্ঠে কিছু তথ্য প্রদর্শন করা থাকে যেগুলো নিবন্ধনের সময় নাগরিকরা ফরম-২-এর মাধ্যমে প্রদান করে থাকেন। এগুলোর মধ্যে সামনের পৃষ্ঠে বাংলা ও ইংরেজিতে জাতীয় পরিচয়পত্রধারীর নাম, বাংলায় পিতা ও মাতার নাম, ইংরেজিতে জন্ম তারিখ ও এনআইডি নাম্বার, স্বাক্ষর এবং পেছনে বাংলায় ঠিকানা, ইংরেজিতে রক্তের গ্রুপ ও জন্মস্থান অন্তর্ভুক্ত। এগুলোর মধ্যে যেকোনো তথ্য পরিবর্তন করতে হলে প্রথমবার আবেদনের সময় ২৩০ টাকা, দ্বিতীয়বার ৩৪৫ টাকা এবং তারপর থেকে প্রতিবার আবেদনের জন্য ৫৭৫ টাকা জমা দিতে হবে।
২। নিবন্ধনের সময় নাগরিকরা সেই ফরম-২-এর মাধ্যমে কিছু তথ্য প্রদান করেন, যেগুলো এনআইডি কার্ডে প্রদর্শন করা থাকে না। যেমন- প্রার্থীর পেশা, পাসপোর্ট ও মোবাইল নাম্বার, শিক্ষাগত যোগ্যতা ইত্যাদি। এগুলোর সংশোধন ফি ১১৫ টাকা।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফি বিকাশ, রকেট, ওকে ওয়ালেট ও টি ক্যাশ-এর মাধ্যমে ঘরে বসেই পরিশোধ করা যায়।
নির্ধারিত ফি পরিশোধের ৩০ মিনিট পর থেকে তথ্য সম্পাদন শুরু করা যাবে। আর সংশোধিত স্মার্ট আইডি কার্ড হাতে পেতে সর্বোচ্চ দুই মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও খরচ
স্মার্ট আইডি কার্ড সংশোধনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
ফি পরিশোধের পরপরই আসবে তথ্য সম্পাদনের স্ক্রিন। এ অংশে তথ্য জমা দেয়ার পাশাপাশি তথ্যের সাথে প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র আপলোড করতে হয়।
→ প্রার্থীর নাম অথবা জন্ম তারিখ সংশোধন করতে হলে প্রার্থীর যে কাগজগুলো সংযুক্ত করতে হয় সেগুলো হলো-
১। জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র
২। কমপক্ষে মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষার সনদপত্র
*শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক বা সমমানের নিচে হলে এবং প্রার্থী সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, আধা-স্বায়ত্বশাসিত অথবা সংবিধিবদ্ধ কোনো সংস্থায় কর্মরত হলে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে চাকরির বই বা মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার (এমপিও) বা ড্রাইভিং লাইসেন্স বা পাসপোর্ট বা ট্রেড লাইসেন্স লাগবে।
৩। বিবাহিতদের ক্ষেত্রে স্ত্রী বা স্বামীর এনআইডি কার্ড এবং কাবিননামার সত্যায়িত কপি লাগবে।
আরও পড়ুন: ঢাকার কাছেই প্রকৃতির মাঝে ক্যাম্পিং সাইট
*বিবাহ সংক্রান্ত কোন কারণে নারীদের নামের পরিবর্তন করতে হলে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কাবিননামা বা তালাকনামা বা স্বামীর মৃত্যু সনদ, ম্যাজিস্ট্রেট আদালত কর্তৃক হলফনামা বা বিবাহ বিচ্ছেদ ফরমানের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে।
৪। ধর্ম পরিবর্তন অথবা অন্য কোন কারণে পুরো নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট কর্তৃক হলোফনামা, জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির কপি, ওয়ারিশ সনদপত্র, ইউনিয়ন বা পৌর বা সিটি কর্পোরেশন থেকে প্রার্থীর নাম সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র বা চাকরির বই বা এমপিও বা ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন হবে।
→ পিতা বা মাতার নাম সংশোধনের সময়, যদি পিতা বা মাতার নাম উল্লেখ থাকে তবে প্রার্থীর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের সনদপত্র, প্রার্থীর পিতা, মাতা, ভাই ও বোনের এনআইডির সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে।
*পিতা বা মাতার নামের পূর্বে ‘মৃত’ সংযোজন করতে হলে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পিতা বা মাতার মৃত্যু সনদের সত্যায়িত কপি, জীবিত থাকলে সেই সূত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউপি (ইউনিয়ন পরিষদ)-এর চেয়ারম্যান বা পৌর মেয়র বা ওয়ার্ড কাউন্সিলরের প্রত্যয়নপত্র, পিতা বা মাতার এনআইডি কার্ডের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে।
→ ঠিকানা সংশোধনের জন্য বাড়ির দলিল বা টেলিফোন, গ্যাস বা পানির বিল, বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্র বা বাড়িভাড়ার রশিদের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে।
→ রক্তের গ্রুপ সংশোধনের জন্য প্রয়োজন হবে ডাক্তারী সনদপত্র।
→ প্রার্থীর সর্বশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্রের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে শিক্ষাগত যোগ্যতা সংশোধন করার জন্য।
এ কাগজগুলো যারা সত্যায়িত করতে পারবেন তারা হলেন সংসদ সদস্য, স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, গেজেটেড সরকারি কর্মকর্তা এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান।
আরও পড়ুন: হিমাচল, জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ ভ্রমণ: দর্শনীয় স্থান ও খরচ
শেষাংশ
স্মার্ট আইডি কার্ড সংশোধনের ক্ষেত্রে বিশেষত কার্ডে প্রদর্শিত তথ্যসমূহের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। নিজের নাম, পিতা-মাতার নাম, জন্ম তারিখ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন এ তথ্যগুলো প্রদানের সময় বারবার ভুল না হয়। এই ভুলগুলো এড়ানোর জন্য নিবন্ধনের সময়েই প্রতিটি তথ্য হুবহু জন্ম নিবন্ধন ও মাধ্যমিক পরিক্ষার সনদের তথ্যের সাথে মিল রাখা উচিত।