লাইফস্টাইল
পুষ্টিগুণ অটুট রেখে শীতকালীন সবজি খাওয়ার সঠিক উপায়
শীতকালে বিভিন্ন ধরনের সবজি খাবারে স্বাদের ভিন্নতা আনার পাশাপাশি অনেক পুষ্টি যোগায়। কিন্তু বাজার থেকে ঘরে আনার পর রান্না করা সেই সবজিতে সম্পূর্ণ পুষ্টি আর পাওয়া যায় না। বিভিন্ন মশলার সংযোজনে হয়ত রান্নাটা বেশ সুস্বাদু হয়ে উঠছে, কিন্তু তাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পুষ্টিগুণ হারিয়ে যাবার ফলে শীতের সবজি দিয়ে শরীর গঠনের কাজটা পুরোপুরি ব্যাহত হচ্ছে। এমতাবস্থায় বাইরে থেকে আনার পর সবজিগুলো পরিষ্কার করার পর সঠিক উপায়ে সেগুলো রান্না করা আবশ্যক। তাই চলুন জেনে নিই, পুষ্টিগুণ অটুট রেখে শীতকালীন সবজি খাওয়ার জন্য প্রস্তুত করার সেরা কয়েকটি উপায়।
শাকসবজি বেশি ছোট করে না কাটা
সবজি ছোট ছোট টুকরো করে কাটলে রান্নার সময় অতিরিক্ত অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে তাদের শুধু পুষ্টিই ধ্বংস হয় না, অল্প রান্নাতেই বেশি পুড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে স্বাদও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুন: বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরা শীতের সবজি
সবজি বেশিক্ষণ ভিজিয়ে না রাখা
অনেকেই শাকসবজি ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখেন। সবজি কেটে রাখার পর বেশিক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখা উচিত নয়। শাকসবজিকে দীর্ঘক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখলে প্রায় ৪০ শতাংশ দ্রবণীয় ভিটামিন ও মিনারেল নষ্ট হয়ে যায়। তাই অল্প সময়ের জন্য ভিজিয়ে রাখা যেতে পারে। অবশিষ্ট পানি উদ্ভিজ্জ স্টক হিসাবে অথবা স্যুপ তৈরিতে ব্যবহার করা যায়।
শিকড় জাতীয় সবজি খোসা ছাড়ানোর আগে সিদ্ধ করে নেয়া
আলুর ক্ষেত্রে সিদ্ধ করার পরে খোসা ছাড়িয়ে নিলে, এগুলোর ত্বকে উপস্থিত পুষ্টিগুলো নষ্ট হবে না। এর ফলে অন্য খাবারের সাথে গ্রহণের সময় সহজেই সমস্ত পুষ্টি শোষণ করা সম্ভব হবে।
যেগুলোর ক্ষেত্রে খোসা না ছাড়িয়ে উপায় নেই সেগুলো খুব পাতলা করে খোসা ছাড়ানো যেতে পারে। খেয়াল রাখা দরকার যে সব শাকসবজিরই পুষ্টিগুণ ত্বকের ঠিক নিচে থাকে। শুধু তাই নয়, সিদ্ধ করার আগে শাকসবজির খোসা ছাড়ালে তা থেকে ভিটামিন সি, ফলিক অ্যাসিড এবং অন্যান্য ভিটামিন আলাদা হয়ে যায়। গাজর, মুলা, লাউ এবং আদার সম্পূর্ণ খোসা ছাড়ার পরিবর্তে ওপরের আবরণ থেকে হাল্কাভাবে চেঁছে ফেলা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: হার্ট অ্যাটাক: করণীয় এবং প্রতিরোধে যে সকল পদক্ষেপ নিতে হবে
আর্দ্র-তাপে রান্না যেমন সিদ্ধ করা স্বাস্থ্যকর রান্নার পদ্ধতি
সিদ্ধ করা বা শুধু আর্দ্র-তাপে গরম করা সবজি প্রস্তুত করার সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর উপায় কারণ এতে তুলনামুলক কম তাপমাত্রা ব্যবহৃত হয়।
ডুবো তেলে ভাজা খাবার এড়িয়ে চলুন কারণ এটি খাবারের স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ বাড়ায়। এছাড়াও এটি ওজন বৃদ্ধি ও কোলেস্টেরল বৃদ্ধির প্রধান কারণ।
রান্নার সময়ে সাইট্রাস ব্যবহার
অভ্যন্তরীণ পুষ্টিগুণ অব্যাহত রেখে রান্নার মাধ্যমে সবজিকে খাবার জন্য উপযোগী নরম করা দরকার। এর জন্য সাইট্রাস ব্যবহার করে সবজির তন্তুযুক্ত টিস্যুকে নরম করা যায়। লেবুর রস বা চালের ভিনেগারের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে সাইট্রাস থাকে।
আরও পড়ুন: লাল চাল: কেন খাবেন এবং কারা এড়িয়ে চলবেন?
হিমায়িত সবজি রান্না করা
টাটকা সবজি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হলেও গ্রাম থেকে শহরে আসতে অথবা দোকানে অনেক পড়ে থাকার দরুন পুষ্টিহীন হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে বাইরে থেকে সবজি ঘরে এনে ফ্রিজে রেখে দেয়া যায় যেটা এখন সবাই করে থাকেন। হিমায়িত শাকসবজিতে থাকে ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, ভিটামিন এবং খনিজ-এর মত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি। হিমায়িত সবজি রান্নার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে।
চুলার উপর পাত্রে মাত্র দুই বা তিন ইঞ্চি পানি রেখে তা ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর ফুটন্ত পানির ঠিক উপরে একটি চালনি রাখতে হবে। প্রয়োজনে পাত্র থেকে কিছু পানি ঝরিয়ে নেয়া যেতে পারে।
চালনী বসানোর পর তাতে হিমায়িত সবজি দিয়ে পুরো পাত্রটি একটি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। পুরো রান্না শেষ হওয়ার সময়টি নির্ভর করে কি ধরনের সবজি রান্না হচ্ছে তার উপর। তাই যাতে পুড়ে না যায় সেজন্য সতর্ক খেয়াল রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: লবঙ্গের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ও ঝুঁকি
শেষাংশ
উপরোল্লিখিত পদ্ধতিগুলো শীতকালীন সবজি রান্নায় পুষ্টিগুণ বজায় রাখার পাশাপাশি খাবারের স্বাদও উন্নত করবে। শীতকাল শরীরচর্চার জন্যও অনেকের কাছে বেশ আরামপ্রদ একটা সময়। তাদের জন্যও এই পুষ্টি ধরে রাখা সবজি খাওয়ার উপায়গুলো বেশ উপযুক্ত হবে। সর্বপরি, সুস্থতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য খাবারের তথা রান্নার ক্ষেত্রে যত্নশীল হওয়া বাঞ্ছনীয়।
বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরা শীতের সবজি
ঠান্ডা আবহাওয়া এবং দীর্ঘ রাতের শুষ্কতার দরূণ মানবদেহ অনবরত মস্তিষ্ক থেকে অধিক শক্তি-ঘন খাবারের জন্য সংকেত পেতে থাকে। মানুষের পাকস্থলি এবং মস্তিষ্কের মধ্যে একটি শক্তিশালী যোগসূত্র হচ্ছে এই যে, আরামদায়ক খাবার খাওয়া 'সুখী হরমোন' বা সেরোটোনিন এবং ডোপামিন নিঃসরণ করে যা মানুষকে আরামপ্রদ অনুভূতি দেয়। এই সুখী হরমোন নিঃসরণের জন্য মুল ভূমিকা পালন করে সূর্যালোক এবং ব্যায়াম। শীতের মাসগুলোতে এই দুটিই হ্রাস পায়। তবে এই অভাবটা পুষিয়ে নেয়া যায় শীতের সবজির মাধ্যমে। এই ফিচারটিতে শীতের সবজিগুলো ও তাদের পুষ্টিগুণ নিয়েই আলোচনা করা হবে।
পুষ্টিগুণে ভরা কয়েকটি শীতের সবজি
বাঁধাকপি
বাঁধাকপিতে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এতে থাকা ভিটামিন সি ত্বক, পেশী, হাড় এবং রক্তনালীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অদ্রবণীয় ফাইবার সমৃদ্ধ বাঁধাকপি মানবদেহের বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যাকটেরিয়ার জ্বালানি সরবরাহ করে এবং পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে। বাঁধাকপির অ্যান্থোসায়ানিন নামক শক্তিশালী পিগমেন্ট হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। বাঁধাকপির মতো পটাসিয়াম-সমৃদ্ধ খাবারের পরিমাণ বাড়ালে তা উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। বাঁধাকপি ভিটামিন কে-এর একটি চমৎকার উৎস যা রক্ত জমাট বাঁধার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।
আরও পড়ুন: লবঙ্গের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ও ঝুঁকি
ফুলকপি
ফুলকপি প্রচুর পরিমাণে ফাইবারে ভরপুর। আর এই ফাইবার হজমের সুস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য এবং প্রদাহজনক অন্ত্রের রোগের মতো বেশ কিছু দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহকারী ফুলকপি প্রদাহ কমাতে পারে। এটি উদ্ভিদ যৌগ সালফোরাফেন সমৃদ্ধ সবজি যা হৃদরোগ, ক্যান্সার এবং ডায়াবেটিস সহ বেশ কয়েকটি রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ফুলকপিতে ক্যালোরি কম কিন্তু ফাইবার এবং পানির পরিমাণ বেশি। ফলে ওজন কমাতে পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে পারে ফুলকপি।
লাউ
লাউ সবচেয়ে কম-ক্যালরির সবজি হওয়ায় ওজন-নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাজা লাউতে অল্প পরিমাণে ফোলেট থাকে। এটি নবজাতকের নিউরাল টিউব ত্রুটির ঘটনা কমাতে সাহায্য করে। তাজা লাউ ভিটামিন সি-এর পরিমিত উৎস। লাউ হজমে এবং শরীর থেকে নির্গত না হওয়া পর্যন্ত অন্ত্রের মধ্যে খাবারের চলাচলের সুবিধা দেয়। এভাবে এটি বদহজম এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও এটি উদ্ভিজ্জ থিয়ামিন, নিয়াসিন (ভিটামিন বি-৩), প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি-৫), পাইরিডক্সিন (ভিটামিন বি-৬) এবং ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক, পটাসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজে ভরপুর।
পড়ুন: লাল চাল: কেন খাবেন এবং কারা এড়িয়ে চলবেন?
গাঁজর
গাঁজরে প্রায় শতকরা ১০ ভাগ কার্বোহাইড্রেট, স্টার্চ, ফাইবার এবং সাধারণ শর্করা থাকে। এতে ফ্যাট এবং প্রোটিন অত্যন্ত কম। গাঁজর বিটা ক্যারোটিন আকারে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন কে এবং পটাসিয়ামের একটি ভালো উৎস। এছাড়া গাঁজরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে উদ্ভিদ যৌগ, বিশেষ করে ক্যারোটিনয়েড, যেমন বিটা ক্যারোটিন এবং লুটেইন থাকে।
গাঁজর খাওয়া ক্যান্সার এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করার পাশাপাশি চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য বেশ উপকারি। উপরন্তু, এই সবজি কার্যকরভাবে ওজন কমানোর জন্য খাদ্যের একটি মূল্যবান উপাদান হতে পারে।
শালগম
শালগম এবং শালগম শাক দুটোতেই ভিটামিন সি রয়েছে। শালগম ফোলেট, ভিটামিন কে, এবং প্রোভিটামিন এ-এর একটি বড় উৎস। শালগমের ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান প্রদাহ বিরোধী, ক্যানসার প্রতিরোধী এবং ব্যাকটেরিয়ারোধী প্রভাব প্রদান করতে পারে। শালগমের একটি বড় সুবিধা হল এটি কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে যা হৃদরোগের বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। মাত্র এক কাপ রান্না করা শালগম শাক প্রতিদিনের ভিটামিন কে-এর চাহিদার ৬০০ শতাংশেরও বেশি সরবরাহ করে, যা হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং হাড় ভাঙা প্রতিরোধে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। শালগম শাকে ক্যারোটিনয়েড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা চোখের রোগ প্রতিরোধ করতে পারে।
পড়ুন: বুক ব্যথার নানা ধরন: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা
শেষাংশ
সুস্থ জীবন যাপনের একমাত্র উপায় হল স্বাস্থ্যের প্রতি সামগ্রিক দৃষ্টি রাখা। নিয়মিত ব্যায়ামের সাথে পুষ্টিকর খাবারকে অন্তর্ভুক্ত রাখা জরুরি। উপরোল্লিখিত শীতের সবজি দিয়ে ঠান্ডা দিনগুলোর প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা গঠন করা যেতে পারে। তাছাড়া এভাবে সময়ের সাথে সুষম খাদ্যের তালিকা পরিবর্তন করা মৌসুমি সবজিগুলো খাওয়ার সর্বোত্তম উপায়।
সীতাকুণ্ড ডে ট্যুর: একদিনে ঘুরে আসুন চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মহামায়া লেক
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বিভাগে যাওয়ার মাঝের পথটুকুতে সবচেয়ে সুন্দর প্রাকৃতিক নৈসর্গে ভরপুর দুটি উপজেলা হচ্ছে মীরসরাই ও সীতাকুণ্ড। সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ের মূল আকর্ষণ এক হাজার ১৫২ ফুট উচ্চতার পর্বতশৃঙ্গে অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দির। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এই তীর্থস্থানটি চট্টগ্রাম জেলার সর্বোচ্চ স্থান। আর মীরসরাইয়ের পূর্বের ছোট-বড় পাহাড়গুলো সান্ত্রীর মত দাঁড়িয়ে থেকে ঘিরে রেখেছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ মহামায়া লেক। এই মনোরম স্থান দু’টিতে ঢাকা থেকে পুরো একদিনে ঘুরে আসা যায়। আর সেই ট্যুর প্ল্যান নিয়ে এই ভ্রমণ বিষয়ক ফিচার।
চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মহামায়া লেক
চন্দ্রনাথ মন্দিরের আগে আধমাইল দূরত্বে আছে বিরুপাক্ষ মন্দির এবং এই দুই জায়গা থেকে আশপাশের পাহাড়সহ দূরের বঙ্গোপসাগর চোখে পড়ে। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশের সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক এবং সুপ্তধারা ও সহস্রধারা পাহাড়প্রেমীদের অপার্থিব উন্মাদনায় যোগ করে জীবনের স্পন্দন।
মহামায়া লেকটি মূলত জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির লক্ষ্যে ১৯৯৯ সাল থেকে চালু হওয়া সরকারের একটি সেচ প্রকল্প। রাবার ড্যাম, ঝর্ণা ও পাহাড়ি গুহার রোমাঞ্চ ছাড়াও মহামায়া লেক কায়াকিং-এর জন্য উপযুক্ত জায়গা।
আরও পড়ুন: বগালেক, দার্জিলিং পাড়া হয়ে কেওক্রাডং মানেই হারিয়ে যাওয়া রূপকথার রাজ্যে
বগালেক, দার্জিলিং পাড়া হয়ে কেওক্রাডং মানেই হারিয়ে যাওয়া রূপকথার রাজ্যে
প্রকৃতিকে দু’চোখ ভরে দেখার পাশাপাশি যদি তাকে জয় করার ব্যাপার যুক্ত হয় তাহলে সেই অভিযাত্রা আরও রোমাঞ্চকর ও দুঃসাহসিক হয়ে যায়। বগালেক থেকে দার্জিলিং পাড়া হয়ে কেওক্রাডং যাত্রাটাও ঠিক তেমনি এক অপার সৌন্দর্য্যকে জয় করার শামিল। বগালেকের পৌরাণিক ড্রাগনের কথা সবারই জানা। আর দার্জিলিং পাড়া পেরোবার সময় বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম হিসেবে এর সুখ্যাতির কারণটা খুব ভালো ভাবেই বোঝা যায়। এরপর কেওক্রাডং-এর দিকে যতই এগোনো হয়, ৩১৭২ ফুট উচ্চতার মাধ্যাকর্ষণ টান ঠিক ততটাই যেন পিছু টেনে ধরে। এই অভিযাত্রার আদ্যোপান্ত নিয়েই এবারের ভ্রমণ ফিচার।
বগালেক, দার্জিলিং পাড়া অতঃপর কেওক্রাডং
বান্দরবানের রামু উপজেলায় প্রথমে বগালেক তারপর দার্জিলিং পাড়া হয়ে যেতে হয় কেওক্রাডং। স্বভাবতই এই ভ্রমণের প্রবেশদ্বার হিসেবে স্থলাভিষিক্ত করা যেতে পারে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উচ্চতার স্বাদু পানির হৃদ বগালেককে। শঙ্খ নদীর তীরে পলিতাইন পর্বতশ্রেণিতে বসবাসরত আদিবাসীদের একটি বম। এই বম’দের ভাষায় বগা বলা হয় ড্রাগনকে। এ নিয়ে দারুণ সব লোককাহিনী শোনা যায়, যেগুলোর কোন প্রমাণ না থাকলেও মৃত আগ্নেয়গিরি জ্বালামুখের মত লেকটির গঠনটা পিলে চমকে দেয়ার মত।
শঙ্খ নদীর তীর ঘেষে সবুজ কেওক্রাডং-এর দানবীয় সৌন্দর্য্যকে দৃষ্টি সীমানায় ধারণ করার সকল প্রচেষ্টা যখন ব্যর্থ হবে তখনি উপত্যকার ছোট অদ্ভূত গ্রামটি দৃষ্টিতে পরম শান্তির পরশ বুলিয়ে দেবে। মেঘের সামিয়ানার নিচে ফুলেল গ্রামটি এই দুর্গম বিশালতায় একদম-ই বেমানান। কেওক্রাডং-এর নিঃসীম দানবীয়তা ভেদ করে যেন হঠাৎ উদয় হয়েছে এক টুকরো দার্জিলিং। এই পরিচ্ছন্ন বসতিটিই পর্বতারোহীদের প্রস্তুত করে দেয় বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ পাহাড় কেওকাডং জয় করার জন্য।
আরও পড়ুন: সাজেক ভ্রমণ: ঘুরে আসুন মেঘে ঢাকা স্বর্গে
ঢাকা থেকে বান্দরবান যাত্রা
ঢাকা থেকে এই তিন জায়গা দেখতে যেতে হলে প্রথমেই চলে আসতে হবে বান্দরবানে। গাবতলি, কলাবাগান অথবা যাত্রাবাড়ি, সায়েদাবাদ থেকে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে বাস পাওয়া যাবে, যেগুলোর নন-এসিতে ভাড়া নিবে ৬২০ থেকে ৬৮০ টাকা আর এসিতে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা।
বান্দরবানে নেমে প্রথমে রুমা বাস স্ট্যান্ড থেকে বাসে করে রুমা যেতে হবে। ৩ ঘন্টার এই জার্নিতে ভাড়া লাগবে জনপ্রতি ১২০ টাকা করে। এছাড়া চান্দের গাড়ি অথবা জীপ রিজার্ভ নিয়ে সরাসরি রুমা বাজার যাওয়া যায়। এরকম গাড়িতে লোক ধরে সর্বোচ্চ ১৫ জন আর ভাড়া পড়তে পারে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। এভাবে গেলে ২ ঘণ্টাতেই রুমা পৌঁছে যাওয়া যাবে।
পড়ুন: নাজমুন নাহার: পৃথিবীর ১৫০তম দেশ ভ্রমণ করে ইতিহাস সৃষ্টিকারী বাংলাদেশি পরিব্রাজক
পৃথিবীর সবচেয়ে দামী পানির বোতল অ্যাকোয়া ডি ক্রিস্টালো ট্রিবিউটো আ মোদিগ্লিয়ানি
পানি জীবনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোর মধ্যে একটি। পানি পান শ্বাস-প্রশ্বাসের মতই খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। পার্থক্য শুধু পানি কিনে খেতে হয় এবং কখনো কখনো তা একটু বেশি দাম দিতে হয়। বেঁচে থাকার জন্য সবাই এই অমূল্য সম্পদটি যথাযথ মূল্য দিয়ে কিনে নেয়। কিন্তু এক বোতল পানির মূল্য সর্বোচ্চ কত হওয়া উচিত বা কত হতে পারে! হাজারো যুক্তি-তর্কের পর প্রশ্নটিকে একদম ম্লান করে দেবে অ্যাকোয়া ডি ক্রিস্টালো ট্রিবিউটো আ মদিগ্লিয়ানি। এর পিলে চমকানো দাম শুনে যে কারো নাভিঃশ্বাস উঠে যাবে। এবার আশ্চর্য এই পানির বোতল সম্পর্কে কিছু জেনে নিন
পানির বোতলের আকাশচুম্বী দামের কারণ
২০১০ এর ৪ মার্চ মেক্সিকো সিটির হাসিয়েন্দা ডি লস মোরালেস রেস্টুরেন্টে প্ল্যানেট ফাউন্ডেশন এসি দ্বারা আয়োজিত একটি নিলামে সবচেয়ে ব্যয়বহুল পানির বোতলটি ৬০,০০০
মার্কিন ডলার বাংলাদেশি টাকায় ৫ লাখেরও বেশি দামে বিক্রি হয়। এখন পর্যন্ত এটি বিশ্ব রেকর্ডের গিনেস বুকে সবচেয়ে দামী পানির বোতলের রেকর্ডটি দখল করে আছে।
আরও পড়ুন: বুক ব্যথার নানা ধরন: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা
হস্তনির্মিত ৭৫০ মিলি-লিটার কাঁচের বোতলটি ২৪ ক্যারেট স্বর্ণ ও প্লাটিনাম দ্বারা আবৃত। এটি প্রয়াত ইতালিয় শিল্পী অ্যামেদিও ক্লেমেন্ত মোদিগ্লিয়ানির শিল্পকর্মের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে। শিল্পকর্মটি মূলত শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ বানানো হয়েছিল।
বোতলের নকশা করেছেন বিশ্বনন্দিত বোতল ডিজাইনার ফার্নান্দো আলতামিরানো, যিনি এখন পর্যন্ত তৈরি ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের শ্যাম্পেইনের বোতলটি ডিজাইন করেছিলেন যেখানে হেনরি-৪ ডুডোগনন হেরিটেজ কগনাকের নাম খোদাই করা ছিল।
নিলাম থেকে উত্থাপিত তহবিল বিশ্ব উষ্ণায়ন-বিরুদ্ধ কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ফাউন্ডেশনে দান করা হয়েছিল।
অ্যাকোয়া ডি ক্রিস্টালো ট্রিবিউটো আ মোদিগ্লিয়ানির আরেকটি এডিশন প্লাটিনাম ও ৬০০০টি উচ্চ মানের হীরা দিয়ে তৈরি। এই বোতলটির আনুমানিক মূল্য ৪ মিলিয়ন ইউরো আর্থৎ বাংলাদেশি টাকায় ৩ কোটি ৯৫ লাখেরও বেশি। এখন পর্যন্ত এই সীমিত সংস্করণটির মাত্র একটি বোতল আছে। প্ল্যানেট, আলতামিরানো ফাউন্ডেশন সামাজিক কর্মকাণ্ডে ৫ লাখ ইউরো দান করবে।
আরও পড়ুন: লবঙ্গের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ও ঝুঁকি
সবচেয়ে ব্যয়বহুল এই পানির উৎস
অ্যাকোয়া ডি ক্রিস্টালো-এর প্রতিটি বোতলের পানি মুলত পৃথিবীর তিনটি ভিন্ন স্থান থেকে আগত। এই পানি দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপদেশ ফিজি এবং ফ্রান্সের প্রাকৃতিক ঝরনার পানির মিশ্রণ। এছাড়া এই পানির আরেক অংশ আইসল্যান্ডের হিমবাহ থেকে উৎসারিত হয়।
ক্ষারযুক্ত এই পানির প্রতি বোতলে মেশানো থাকে ২৩ ক্যারেট স্বর্ণের ৫ মিলি গ্রাম স্বর্ণের ভস্ম। এ কারণে অনেকেই এই পানি শরীরের জন্য উপকারি বলে মনে করেন। সবচেয়ে দামী এই পানির সাধারণ বাজারবিশ্ব জুড়ে যারা অ্যাকোয়া ডি ক্রিস্টালো-এর মত পানির বোতলের জন্য অর্থ ব্যয় করেন তাদের গ্রুপটা সুনির্দিষ্ট ও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপরিবর্তিত। এদের মধ্যে আছেন বিশ্বের প্রথম সারির ধনকুবেরের মধ্যে অন্যতম ভারতের মুকেশ আম্বানীর স্ত্রী নিতা আম্বানী।
অ্যাকোয়া ডি ক্রিস্টালো ট্রিবিউটো আ মোদিগ্লিয়ানি-এর সাশ্রয়ী বোতলও রয়েছে। এর বরফ নীল বোতলগুলো বিক্রি হয় ২৮৫ ডলারে (বাংলাদেশি টাকায় ২৪০০০+)। সলিড গোল্ড ছাড়াও অন্যান্য ডিজাইনের মধ্যে রয়েছে গোল্ড ম্যাট, সিলভার, সিলভার ম্যাট এবং ক্রিস্টাল। এই সবগুলো পানির বোতল স্বর্ণের বোতলের চেয়ে সস্তা, এবং সেগুলোতেও ফ্রান্স, ফিজি ও আইসল্যান্ডের পানির মিশ্রণ রয়েছে।
আরও পড়ুন: এসি রক্ষণাবেক্ষণ: দীর্ঘদিন ব্যবহারের উপযোগী রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ টিপস
এই পানির প্রতিটি বোতল কেনার সময় একটি সুন্দর চামড়ার কেসে প্যাকেজ করে দেয়া হয়। তাই অনেকে এটি বাড়িতে সাজিয়ে রাখা বা নিজের সংগ্রহে রাখার উদ্দেশ্যেও কিনে থাকেন।
পানি একটি জনসাধারণের মৌলিক বস্তু হলেও অ্যাকোয়া ডি ক্রিস্টালো একটি বিলাসবহুল পণ্য। স্বভাবতই নিছক তৃষ্ণা মেটানোটাই এই পণ্যের একমাত্র ও সর্বশেষ উদ্দেশ্য নয়।
উপাদানগত মূল্যের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ও শৈল্পিক মাত্রার সংযোজন এই পণ্যকে দিয়েছে রাজকীয় আভরণ। তাছাড়া বৈশ্বিক কল্যাণে বিক্রি পরবর্তী তহবিলের ব্যবহারটাও অন্যান্য আর পাঁচটা পানীয় জল থেকে একে আলাদা করেছে।
মাটিরাঙ্গায় বন বিহারে কঠিন চীবর দান
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার সাপমারা আর্য মার্গ বন বিহারে ৪র্থ তম দানোত্তম শুভ কঠিন চীবরদান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার সকাল থেকে দিন ব্যাপী কঠিন চীবরদান অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুই প্রু চৌধুরী অপু।
আরও পড়ুন: পানছড়িতে দিনব্যাপী কঠিন চীবর দান
চীবরদান অনুষ্ঠানে অংশ হিসেবে সকালে বৌদ্ধ নর-নারীরা পঞ্চশীল গ্রহণের পর কঠিন চীবরদান, মুর্তি দান, সংঘ দান, অষ্ট পরিষ্কার দান ও বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পিণ্ডদানসহ নানাবিধ দান করা হয়।
অনুষ্ঠানে ধর্মীয় আলোচক ছিলেন অগ্র জ্যোতি মহাস্থবির ভান্তে, দীপনন্দ মহাস্থবির ও বিহারধ্যক্ষ বুদ্ধজয় ভান্তে। দান অনুষ্ঠানে দেশ জাতি তথা সকলে মঙ্গল কামনা প্রার্থনা করা হয়।
বুক ব্যথার নানা ধরন: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা
মানুষের ইমার্জেন্সির রুমের শরণাপন্ন হওয়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলোর একটি হলো বুকে ব্যথা। বুকে ব্যথা ধারালো ছুরিকাঘাতের মত, পীড়ন বা বুক জ্বালা, বুকে হাল্কা চাপ অনুভূত হওয়া ইত্যাদির মত বিভিন্ন আকারে দেখা দিতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে ব্যথা ঘাড়, চোয়াল হয়ে পিছনে বা নীচে হাতে ছড়িয়ে পড়ে। এগুলোর মধ্যে হৃৎপিণ্ড বা ফুসফুস-এর সাথে জড়িত বুক ব্যথাগুলো জীবনের জন্য সবচেয়ে বেশি হুমকি হতে পারে। আবার অনেক সাধারণ কারণও এটি ঘটিয়ে থাকতে পারে। বিভিন্ন ধরনের এই বুক ব্যথার শনাক্তকরণ ও করণীয় নিয়েই এবারের ফিচার।
কি কি কারণে বুক ব্যথা হয়
হৃদপিণ্ড সম্পর্কিত কারণ
এই কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো হার্ট অ্যাটাক, যা হৃৎপিণ্ডে রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। এনজাইনার ফলে হৃদপিন্ডের দিকে পরিচালিত রক্তনালীতে বাধা সৃষ্টি হয়ে বুকে ব্যথা হয়। এছাড়া হৃৎপিণ্ডের চারপাশে থলির প্রদাহ বা পেরিকার্ডাইটিস, হৃৎপিণ্ডের পেশীর প্রদাহ বা মায়োকার্ডাইটিস, হৃৎপিণ্ডের পেশীর রোগ কার্ডিওমায়োপ্যাথি বুক ব্যথার কারণ হয়। বুক ব্যথার আরও একটি ভয়াবহ কারণ মহাধমনী ব্যবচ্ছেদ, যা এমন একটি বিরল অবস্থা যার ফলে মহাধমনী ছিঁড়ে হৃদপিণ্ডের সংযোগস্থল থেকে বেরিয়ে আসে।
আরও পড়ুন: লবঙ্গের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ও ঝুঁকি
পাকস্থলী ও অন্ত্র সম্পর্কিত কারণ
অ্যাসিড রিফ্লাক্স, বা অম্বল, খাদ্যনালীর ব্যাধির ফলে গলাধঃকরণে সমস্যা, পিত্তথলিতে পাথর, গলব্লাডার বা প্যানক্রিয়াসের প্রদাহ ইত্যাদি এই কারণগুলোর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত।
ফুসফুস সম্পর্কিত কারণ
এই কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে নিউমোনিয়া, ভাইরাল ব্রংকাইটিস, নিউমোথোরাক্স, রক্ত জমাট বাঁধা বা পালমোনারি এম্বুলাস। ফুসফুস সম্পর্কিত আরও একটি জটিলতা ব্রঙ্কোস্পাজম, যেটি সাধারণত এমন লোকেদের মধ্যে ঘটে যাদের হাঁপানি ও হাঁপানি সংক্রান্ত ব্যাধি আছে।
আরও পড়ুন: কোলেস্টেরল কমানোর কার্যকরী ঘরোয়া উপায়
পেশী- বা হাড় সম্পর্কিত কারণ
থেঁতলে যাওয়া বা ভাঙ্গা পাঁজর, পরিশ্রম বা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা থেকে কালশিটে পেশী, কম্প্রেশন ফ্র্যাকচার-এর স্নায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি করা প্রভৃতি থেকে বুক ব্যথা হতে পারে।
দাদ
চিকেনপক্স ভাইরাসের পুনঃসক্রিয়তার কারণে, দাদ হতে পারে এবং পিঠ থেকে বুকের প্রাচীর পর্যন্ত ফোসকা তৈরি করতে পারে।
আরও পড়ুন: এসি রক্ষণাবেক্ষণ: দীর্ঘদিন ব্যবহারের উপযোগী রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ টিপস
বিভিন্ন ধরনের বুক ব্যথার লক্ষণ
হৃদপিণ্ড সম্পর্কিত লক্ষণ
যদিও বুক ব্যথা হার্টের সমস্যার সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ, তবে বুকে ব্যথার পাশাপাশি অন্যান্য উপসর্গগুলোও অনুভূত হতে পারে। যেমন: বুকে চাপ, পিঠ, চোয়াল বা বাহুতে ব্যথা, ক্লান্তি, হালকা মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, নিঃশ্বাসের দুর্বলতা, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, এবং পরিশ্রমের সময় বুক ব্যথা।
এসি রক্ষণাবেক্ষণ: দীর্ঘদিন ব্যবহারের উপযোগী রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ টিপস
যে কোন যন্ত্রাংশের ক্ষয় অনিবার্য। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তা ব্যবহারের উপযোগী রাখার জন্য প্রয়োজন যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের। প্রতি বছর পাল্লা দিয়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে এয়ার কন্ডিশনার বা এসি এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ গৃহস্থালি যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। অন্যান্য যন্ত্রপাতির মত নতুন কিনে এসিটিও এক সময় অকেজো হয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নতুন থেকে নষ্ট হয়ে যাওয়ার মাঝের সময়টাকে আরেকটু বাড়িয়ে নিতেই প্রয়োজন যত্নের। নিয়ম মাফিক রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি কীভাবে ব্যবহার করা হলে দীর্ঘদিন ধরে কোন ঝামেলা ছাড়াই এসি ব্যবহার করা যাবে- তা নিয়েই এই ফিচার।
নিয়মিত এসি সার্ভিসিং-এর প্রয়োজনীয়তা
এসির কার্যক্ষমতার উন্নতি
সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়া এসির বার্ষিক কার্যক্ষমতা প্রায় পাঁচ শতাংশ লোপ পেতে পারে। নিয়মিত সার্ভিসিং এসি দ্রুত শীতল ও গরম করার ব্যবস্থা করে। পাশাপাশি এসি সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা সেটাও নিশ্চিত করে।
আরও পড়ুন: সাজেক ভ্রমণ: ঘুরে আসুন মেঘে ঢাকা স্বর্গে
বিদ্যুৎ খরচ সাশ্রয়
এসি অধিকাংশ ক্ষেত্রে অন্যান্য গৃহস্থালি যন্ত্রের তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এসির সামগ্রিক অবস্থা এমন হয় যে তা সাধারণ সময়ের তুলনায় আরও বেশি লোড টানে। নিয়মিত পর্যবেক্ষণ দীর্ঘ সময় এসি ব্যবহারে বিদ্যুৎ খরচ কমাতে সাহায্য করে। প্রকৃতপক্ষে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণকৃত যন্ত্রাদি থেকে মাসিক বিদ্যুৎ বিলগুলিতে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত সঞ্চয় করা যায়।
বাতাসের গুণগত মানোন্নয়ন
একটি ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা এয়ার কন্ডিশনার ইউনিট কার্যকরভাবে আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করে এবং সর্বাধিক শীতল করার মাধ্যমে বাড়ি বা অফিসকে আরও আরামদায়ক রাখে। নিয়মিত সার্ভিসিং-এর মাধ্যমে নিম্নমানের বাতাসের কারণে সৃষ্ট বেশিরভাগ স্বাস্থ্য সমস্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা যেতে পারে।
পড়ুন: 'ইনসাইড আউট’: শিশুদের জন্য গ্যালারি কসমসের দিনব্যাপী পেইন্টিং ও অরিগামি ওয়ার্কশপ
উত্তাপক ও বাতাস চলাচল ব্যবস্থার যন্ত্রাংশ রক্ষা
একটি এয়ার কন্ডিশনার প্রতিস্থাপন খুব ব্যয়বহুল। অন্যদিকে, নিয়মিতভাবে এসির সরঞ্জামের পরিচর্যা করলে এর আয়ু বাড়ে। ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক এক্সপার্টদের মতে, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে বেশিরভাগ এসি প্রতিস্থাপন এড়ানো যায়।
এছাড়াও, নির্ধারিত চেকআপ অপ্রত্যাশিত মেরামতের সম্ভাবনাকে কমিয়ে দেয়। এসি সার্ভিসিং-এর সময় টেকনিশিয়ানরা যেকোন জীর্ণ যন্ত্রপাতি এবং মেরামতের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অবহিত করে থাকে, যা পরিবর্তে আরও ক্ষতি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
সাজেক ভ্রমণ: ঘুরে আসুন মেঘে ঢাকা স্বর্গে
শরতের সাদা মেঘ দিয়ে আকাশ ক্যানভাসে আঁকিবুকি করার কোন দিন, অথবা শীতের কোন রৌদ্রস্নানের দিন! দীঘিনালা ছাড়িয়ে রাঙামাটির ছাদের খোঁজে কেউ এলে, রুইলুই ও কংলাক পাড়ার লুসাই, ত্রিপুরা বা পাংখোয়ারা এখন আর অবাক হয়না। যে কোন বইপোকার কাছে রাঙামাটির বাঘাইছড়ির বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়নটি হয়ত শুধুই একটি স্থানের নাম। কিন্তু ভারতের মিজোরাম সীমান্ত ঘেষা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮০০ ফুট উচু সাজেক ভ্যালির মেঘ ছোঁয়ার জন্য কোন পর্বতপ্রেমীর ছেলেমানুষী কোন কিছু দিয়েই তুলনা করা যাবে না। সেই পর্বতপ্রেমীদের জন্যই সাজেক ভ্যালির এই ভ্রমণ গাইড।
সাজেক ভ্যালির প্রাকৃতিক নৈসর্গ
লুসাই পাহাড় থেকে কর্ণফুলী স্রোতকে অনুসরণ করে এগোলে দেখা মিলবে সাজেক নদীর। আর সেই সাথে হৃদয়ঙ্গম হবে নৈসর্গিক এই উপত্যকার নামকরণের সার্থকতা। চান্দের গাড়ি চড়ে পাহাড়ী রাস্তা ধরে এগোনোর সময় আদিবাসী শিশুদের সঙ্গে স্বাগতম জানাবে পাহাড়ের ঢালের সবুজ বন। প্রবেশদ্বারের রুইলুইপাড়া থেকে সাজেকের শেষ প্রান্ত কংলাকপাড়ার মাঝে চোখ জুড়াবে উপত্যকা গ্রাম, হাজাছড়া ঝর্ণা, কমলক ঝর্ণা, দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রিজ ও বনবিহার আর দুরের নিস্তব্ধ নীলিমা। বিজিবি ক্যাম্পের হেলিপ্যাড থেকে মেঘের সমুদ্রে প্লাবিত সূর্যোদয়ের দৃশ্য যে কোন সতর্ক দৃষ্টিকে ভুলিয়ে দিবে যে সে দাড়িয়ে আছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিজিবি ক্যাম্পে। সূর্যাস্তের সময় আবার সেই রাজকীয় অগ্নিকুণ্ডের আত্মবিসর্জনে পুরো সাজেককে মনে হবে এক অপার্থিব তোরণ। রাতের আকাশে কোটি তারার লন্ঠন ছায়াপথ জুড়ে জমিয়ে রাখা মহাজাগতিক চলচ্চিত্রের বায়োস্কোপ দেখাবে।
মধ্য আগস্টের সকাল থেকে শুরু করে প্রথম নভেম্বরের প্রথম কুয়াশা; যে কোন দিন হতে পারে পর্বতপ্রেমীদের জন্য এমন স্বপ্নের দিন।
আরও পড়ুন: নাজমুন নাহার: পৃথিবীর ১৫০তম দেশ ভ্রমণ করে ইতিহাস সৃষ্টিকারী বাংলাদেশি পরিব্রাজক
'ইনসাইড আউট’: শিশুদের জন্য গ্যালারি কসমসের দিনব্যাপী পেইন্টিং ও অরিগামি ওয়ার্কশপ
শহরের শিশু শিল্পীদের সহজাত শৈল্পিক চেতনাকে উৎসাহিত করতে রাজধানীর মালিবাগের কসমস সেন্টারে 'ইনসাইড আউট' শীর্ষক দিনব্যাপী জলরঙের চিত্রকর্ম, প্রিন্টমেকিং ও অরিগামি ওয়ার্কশপের আয়োজন করেছে গ্যালারি কসমস ও কসমস অ্যাটেলিয়ার ৭১।
সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ২৫টিরও বেশি শিশু তাদের মা-বাবার সাথে কসমস অ্যাটেলিয়ার ৭১ এর ইভেন্টে যোগ দেয়। কর্মশালায় তাদের সৃজনশীল শিল্পকর্ম প্রদর্শন করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশ, কানাডা, ভারত, আয়ারল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পর্তুগাল এবং অন্যান্য দেশের শিল্পীরা এখানে অংশগ্রহণ করছেন।
মেয়েকে ওয়ার্কশপে নিয়ে আসা রোমান বলেন, এটি খুব অনন্য উদ্যোগ এবং এর মাধ্যমে আমরা ও আমাদের শিশুরা আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা লাভ করেছে। তারাই আজ এখানে প্রধান আকর্ষণ এবং আমরা এই অসাধারণ উদ্যোগের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাই। এখানে আমাদের বাচ্চারা তাদের শৈল্পিক স্বাধীনতা প্রদর্শন করছে।
আরও পড়ুন: কালিদাস কর্মকারের স্মরণে গ্যালারি কসমসের দিনব্যাপী আয়োজন
এই উদ্যোগের বিষয়ে বাংলাদেশি শিল্পী ও চীনের ইউনান আর্টস ইউনিভার্সিটির প্রভাষক মং মং শো ইউএনবিকে বলেন, শিশুদের শৈল্পিক আবেগের বিকাশ ও উদযাপনের জন্য এই ধরনের কর্মশালা সত্যিই প্রয়োজনীয়।
শো ইউএনবিকে আরও বলেন,যদিও শিশুরা সর্বজনীনভাবে সুন্দর, তবে তাদের আঞ্চলিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের কারণে তাদের বিভিন্ন সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। এই ধরনের কর্মশালাগুলি তাৎপর্যপূর্ণ এবং খুব প্রয়োজনীয়, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিশুরা জড়ো হয় এবং অবাধে তাদের হৃদয়ের ছবি আঁকে। তারা অনন্য শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গি ও শৈলী প্রদর্শন করছে এবং একসাথে তারা আমাদের দেশের শিশুদের সাথে একটি সাংস্কৃতিক বিনিময়ে অংশ নিচ্ছে।
প্রদর্শনীতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক আবু কালাম শামসুদ্দিন একটি অনন্য অরিগামি ওয়ার্কশপ পরিচালনা করেন।
তিনি ইউএনবিকে বলেন,অরিগামি হল একটি শিল্প যা দ্বি-মাত্রিক কাগজের একটি টুকরা নিয়ে গঠিত। যখন আমরা এই কাগজটিকে একটি পরিকল্পনা অনুযায়ী ভাঁজ করি, তখন এটি একটি বস্তুর নির্দিষ্ট ত্রিমাত্রিক (থ্রিডি) আকৃতি নেয়, যা আমাদের স্বপ্ন ও দৃষ্টিভঙ্গির সাথে খুব মিল। এটি অবচেতনভাবে শিশুদের আরও গভীরভাবে চিন্তা করতে সাহায্য করে, জীবনের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রশস্ত করে। শুধু প্রিন্টমেকিংয়ের জন্য নয়,অরিগামির জন্যও এমন একটি কর্মশালা প্রশংসার দাবিদার।
আরও পড়ুন: ইউরোপে প্রথম গ্যালারি অনিল অ্যাওয়ার্ড পেলেন শিল্পী নিলীমা সরকার
এই অনন্য উদ্যোগ এবং 'ইনসাইড আউট' নামটি সংজ্ঞায়িত করে, গ্যালারি কসমসের অর্টিস্টিক ডিরেক্টর কেট জারো খান ইউএনবিকে বলেন, এর উদ্দেশ্য ছিলো শিশুদের সহজাত সৃজনশীলতাকে প্রকাশ করতে সাহায্য করা, যা তারা তাদের সুন্দর মনের মধ্যে লালন করে।
তিনি বলেন,মহামারির সময়কালে লোকেরা বাইরে যেতে ও ভ্রমণ করতে পারেনি এবং বাচ্চারাও অনেক কিছু করতে পারেনি। আমাদের শহরের অভ্যন্তরে সুযোগগুলি অন্বেষণ করা দরকার।এই বিশেষ কর্মশালাটি শিশুদের সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গি ও তাদের মানসিক সুস্থতার জন্য আমাদের কাছ থেকে নিবেদিত একটি উপহার।
কর্মশালা শেষে আয়োজকদের পক্ষ থেকে অংশগ্রহণকারী শিশু শিল্পীদের সনদপত্র দেয়া হয়।
আরও পড়ুন: গ্যালারি কসমসের মাসব্যাপী ভার্চুয়াল চিত্র প্রদর্শনী ‘দ্য ব্ল্যাক স্টোরি’ শুরু
গ্যালারি কসমসের এক্সিকিউটিভ আর্টিস্টিক ম্যানেজার শিল্পী সৌরভ চৌধুরী ইভেন্টে একটি প্রিন্টমেকিং ওয়ার্কশপ পরিচালনা করেন। তিনি ইউএনবিকে জানান, অংশগ্রহণকারী শিশু শিল্পীরা প্রিন্টমেকিংয়ের মাধ্যমে তাদের শিল্পকর্মের একাধিক কপি রাখার পদ্ধতিগুলি অন্বেষণ করতে পেরে আনন্দিত।
উদ্যোগের বিষয়ে, তিনি আরও বলেন, দেশের ও বাইরের তরুণ শিল্পীদের সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গি বিকাশে সহায়তা করতে গ্যালারিটি অদূর ভবিষ্যতে এই ধরনের কর্মশালা ও ক্যাম্পের ব্যবস্থা করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ও নিবেদিত।