লাইফস্টাইল
চীবর দানোৎসবে মুখর পাহাড়
দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসবকে ঘিরে মুখরিত পাহাড়ি জনপদ। রাঙ্গামাটির বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে চলছে মাসব্যাপী বৌদ্ধদের প্রধান দানোৎসব কঠিন চীবর দান।
এ উপলক্ষে ধর্মীয় নানা আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে লংগদু উপজেলার আটরকছড়া ইউনিয়নের করল্যাছড়ির আর্যগিরি বনবিহারে বৃহস্পতিবার সকালে থেকে শুরু হয়ে শুক্রবার বিকালে দু’দিন ব্যাপী উদযাপিত হয়েছে ৪র্থ তম দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব।
কর্মসূচির মধ্য বুদ্ধপূজা, বুদ্ধমূর্তিদান, সংঘদান, অষ্টপরিষ্কার দান, কঠিন চীবর দান, পঞ্চশীল প্রার্থনা, সূত্রপাঠ, ধর্মীয় দেশনা, হাজার বাতি দান, কল্পতরু প্রদক্ষিণ ও উৎসর্গসহ নানাবিধ দান উল্লেখযোগ্য।
আরও পড়ুন: পানছড়িতে দিনব্যাপী কঠিন চীবর দান
উৎসবে বিশ্বের সকল প্রাণীর হিতসুখ ও মঙ্গল কামনায় এবং মহামারি করোনাভাইরাস থেকে পরিত্রাণের জন্য ভিক্ষু সংঘের সমীপে নিবেদন করা হয়েছে বিশেষ প্রার্থনা। স্মরণ করা হয় মহাসাধক সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তেকে। ভগবান বুদ্ধের জয়ধ্বনিতে হাজারো পুণ্যার্থীদের ভক্তি ও শ্রদ্ধায় মুখর হয়ে উঠে পুরো বিহার প্রাঙ্গণ।
শুক্রবার দুপুরে কল্পতরু ও কঠিন চীবরকে পুরো বিহার এলাকা প্রদক্ষিণ করে আনন্দ শোভাযাত্রা করা হয়। পরে উদ্বোধনী ধর্মীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্যদিয়ে কঠিন চীবর দানোৎসব শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে রুপেল চাকমার পরিচালনায় পঞ্চশীল পাঠ করেন বিহার পরিচালনা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক দিবাকর চাকমা। বিশেষ প্রার্থনা পাঠ করেন বৈশাখী চাকমা। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি অজয় চাকমা (মিত্র) ও বিহার পরিচালনা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক দিবাকর চাকমা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা টিটন খীসা, ১নং আটরকছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঙ্গল কান্তি চাকমাসহ প্রমুখ।
আরও পড়ুন: খাগড়াছড়িতে বৌদ্ধ বিহারে দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত
ধর্মীয় বনভান্তের অমৃতময় বাণীর উদ্ধৃতি দিয়ে পুণ্যার্থীদের মাঝে ধর্মদেশনা দেন, সাধনাটিলা বনবিহারের বিহার অধ্যক্ষ ভদন্ত শ্রীমৎ বুদ্ধবংশ মহাস্থবির, রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের ভিক্ষু ভদন্ত শ্রীমৎ মুদিতা বংশ মহাস্থবির, রাজবন বিহারের আবাসিক ভিক্ষু ভদন্ত শ্রীমৎ গিরিমানন্দ স্থবির ও জয়বর্ধন স্থবিরসহ প্রমুখ। এসময় আটকরকছড়া আর্যগিরি বনবিহারের বিহার অধ্যক্ষ ভদন্ত শ্রীমৎ অমর রতন্ন স্থবিরসহ অন্যান্য প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সুলতানের শিল্পকর্ম গবেষণায় অর্থায়ন করবে যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের অর্থায়নে প্রথমবারের মতো এসএম সুলতানের শিল্পকর্ম নিয়ে তিন বছরব্যাপী যুগান্তকারী গবেষণা ও পুনরুদ্ধার কাজ শুরু হচ্ছে। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্টদূত আর্ল মিলার এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ নুরুল হুদা ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে এসএম সুলতানের শিল্পকর্ম বিষয়ক এই সংস্কৃতি সংরক্ষণ প্রকল্প উদ্বোধন করেন।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের 'অ্যাম্বাসেডরস ফান্ড ফর কালচারাল প্রিজারভেশন' এর ২০ বছর পূর্তি এবং বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তীর সম্মানে যুক্তরাষ্ট্র এসএম সুলতানের চিত্রকর্ম নিয়ে গবেষণা এবং পুনরুদ্ধারে কাজ করার জন্য বেঙ্গল ফাউন্ডেশনকে অর্থায়ন করছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা মুক্ত দেশের তালিকা ২০২১
তিন-বছরের এই উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মর্যাদাপূর্ণ অ্যাম্বাসেডরস ফান্ড ফর কালচারাল প্রিজারভেশন (এএফসিপি) থেকে অর্থায়ন করা হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের অন্যতম বিখ্যাত শিল্পী সুলতানের শিল্পকর্ম নিয়ে গবেষণা, বিশ্লেষণের পাশাপাশি তার চিত্রকর্মগুলো পুনরুদ্ধার করা হবে। মূল্যবান এই শিল্পকর্মগুলো পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে এই প্রকল্পটি বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কে সামষ্টিক বোঝাপড়া বাড়াতে সহায়তা করবে এবং ভবিষ্যত্ প্রজন্মের জন্য এই শিল্প ও ইতিহাস সংরক্ষণ করবে।
রাষ্ট্রদূত মিলার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পের ঘোষণা দেয়ার জন্য বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরীর হাতে ঘোষণাফলক তুলে দেন এবং তিনি বেঙ্গল গ্যালারিতে চলমান সুলতানের কয়েকটি বিখ্যাত শিল্পকর্মের প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন।
দূতাবাস জানায়, এএফসিপি বিদেশে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক উদ্যোগগুলোর অন্যতম। গত ২০ বছরে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারমূলক ১২টি এএফসিপি প্রকল্পে ৮ লাখ ৭০ হাজার আমেরিকান ডলার এরও বেশি আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।
পড়ুন: পানছড়িতে দিনব্যাপী কঠিন চীবর দান
ভ্যালি সিটি: পূণ্যভূমি সিলেটে বাংলাদেশের লন্ডনি পাড়া
বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা মুক্ত দেশের তালিকা ২০২১
যে কোন আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য সরকার কর্তৃক ভ্রমণকারীর পরিচয় ও জাতীয়তা প্রত্যয়নকৃত নথি; অথবা খুব ছোট করে বলতে গেলে পাসপোর্টের সাথে ভিসার কথাটা সহসাই চলে আসে যেখানে ভিসা নামের এই অনুমতি পত্রটি একটি দেশ কোন বিদেশী নাগরিককে প্রদান করে থাকে সেই দেশে প্রবেশ ও একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে অবস্থান করার জন্য। একটি দেশে প্রবেশ ও অবস্থানের সময়সীমা সহ যাবতীয় নিয়ম-কানুন নির্ভর করে পাসপোর্টধারীর দেশটির উপর। কখনো এই নিয়মে খুবই কড়াকড়ি, আবার কোন কোন ক্ষেত্রে একদম শিথিল। চলুন জেনে নিই, বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা কোন কোন দেশে ভিসা ছাড়াই যেতে পারবেন।
বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা মুক্ত দেশের তালিকা
ইন্টার্ন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অথোরিটির ডাটার উপর ভিত্তি করে হেনলি পাসপোর্ট ইন্ডেক্স প্রতিবছর ২২৭টি গন্তব্যে ১৯৯টি পাসপোর্টের ভিসা প্রক্রিয়া যাচাই করে বিশ্বের দেশগুলোর র্যাংকিং প্রকাশ করে। ২০২১ এর সংস্করণ অনুসায়ী বাংলাদেশ-এর র্যাংকিং ১০৮-এ, যা গত বছরের তুলনায় ১০ ধাপ নিচে। এই র্যাংকিং-এ বাংলাদেশি বৈধ পাসপোর্টধারীরা বিশ্বের মোট ৪০টি দেশে ভিসা ছাড়াই যাতায়াত করতে পারবেন।
তন্মধ্যে ১৯টি দেশে রয়েছে অন-অ্যারাইভাল ভিসা, অর্থাৎ গন্তব্যের দেশটিতে পৌঁছে প্রবেশের ঠিক আগ মুহুর্তেই আবেদন করে ভিসা পাওয়া যাবে। ইলেক্ট্রনিক ভিসা পাওয়া যাবে শুধুমাত্র এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কায় প্রবেশের সময়। এছাড়া বাকি ২০টি দেশে প্রবেশের সময় কোন ধরনের ভিসা সংক্রান্ত কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে যেতে হবে না।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও খরচ
অন-অ্যারাইভাল ভিসার ১৯টি দেশ
আফ্রিকার ১৩টি দেশের মধ্যে রয়েছে মাদাগাস্কার, মৌরিতানিয়া, মোজাম্বিক, রুয়ান্ডা, সেনেগাল, সেশেলস, সিয়েরা লিওন, সোমালিয়া, টোগো, উগান্ডা, কেপ ভার্দে দ্বীপপুঞ্জ, কোমোরস দ্বীপপুঞ্জ ও গিনি-বিসাউ।
এশিয়ার যে তিনটি দেশে পৌছার পর ভিসা পাওয়া যাবে সেগুলো হলো মালদ্বীপ, নেপাল, ও তিমুর-লেস্তে। আমেরিকার শুধু বলিভিয়াতে অন-অ্যারাইভাল ভিসা পাওয়া যাবে। ওশেনিয়ার দেশগুলোর মধ্যে থাকছে সামোয়া ও টুভালু।
কোন রকম ভিসা কার্যক্রম ছাড়া ২০টি দেশ
আফ্রিকার ২টি দেশ গাম্বিয়া ও লেসোথো। এশিয়ার ২টি দেশ ভুটান এবং ইন্দোনেশিয়া,ক্যারিবিয়ান ১১টি দেশের মধ্যে থাকছে বাহামা, বার্বাডোস, ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ, ডোমিনিকা, গ্রেনাডা, হাইতি, জ্যামাইকা, মন্টসেরাট, সেন্ট কিট্স এবং নেভিস, সেন্ট ভিন্সেন্ট ও গ্রেনাডাইন্স এবং ত্রিনিদাদ ও টোবাগো। ওশেনিয়ার ৫টি দেশের মধ্যে রয়েছে ভানুয়াতু, কুক দ্বীপপুঞ্জ, ফিজি, মাইক্রোনেশিয়া এবং নিউ।
আরও পড়ুন: ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসে ই-পাসপোর্ট সেবা
বাংলাদেশি পাসপোর্টের সামগ্রিক অবস্থা
হেনলি পাসপোর্ট ইন্ডেক্স ২০২১ অনুযায়ী বাংলাদেশের সাথে একই সারিতে রয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশ কসোভো ও উত্তর-আফ্রিকার দেশ লিবিয়া। এই দেশ দুটিতেও বিশ্বের ৪০টি দেশে ভ্রমণের পূর্বে নিজেদের দেশে কোন রকম ভিসা সংক্রান্ত কর্মকান্ডের মুখোমুখি হতে হবে না।
বিগত দুই দশক জুড়ে বাংলাদেশের পাসপোর্টের অবস্থা বিবেচনা করলে পশ্চাদমুখী দৃশ্য দৃষ্টিগোচর হয়। ফ্রি ভিসায় বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশী দেশ ভ্রমণের সুযোগ ছিলো ২০১০ এবং ২০১৪ সালে। বিশ্বের মোট ৪২টি দেশে ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করা যেতো। বছর দুটিতে বাংলাদেশের র্যাংকিং ছিলো যথাক্রমে ৮৫ এবং ৮৬।
২০০৬ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিলো সর্বোচ্চ ৬৮তম। অবশ্য সে সময় হেনলি পাসপোর্ট ইন্ডেক্সের হিসেবকৃত গন্তব্যের সংখ্যা এখনকার (২২৭) তুলনায় অনেক কম ছিলো। ২৮টি দেশে ভিসা ছাড়া পার্মিট ছিলো বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের।
২০০৯ থেকে ২০২১ পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য ভিসা মুক্ত দেশের সর্বনিম্ন সংখ্যা ছিলো ৩৮ এবং বছরটি ছিলো ২০১৭। অন্যান্য বছরগুলোতে সংখ্যাটি ৩৯ থেকে ৪১ এ উঠানামা করেছে সেই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ এর সংখ্যাটিই (৪০) এ বছর আবার ফিরে এসেছে।
আরও পড়ুন: ১৩৯৩১ বাংলাদেশির বৈধ দ্বৈত পাসপোর্ট রয়েছে
শেষ কথা
ইন্টার্ন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অথোরিটির ডাটা মতে র্যাংকিং-এর দিক থেকে বাংলাদেশ ক্রমাগত পিছিয়েই চলেছে। ২০১২ থেকে ২০১৩ তে ৯৩ থেকে ৮৫তম স্থানে এসেছিলো। ২০১৫ থেকে ২০১৭ তে পর পর তিন বছরে র্যাংকিং ৯৯ থেকে ৯৬; অতঃপর ৯৫তে উঠেছিলো। ২০১৮ থেকে ২০২০ এর পরিসংখ্যানটাও একই। ১০০ থেকে ক্রমান্বয়ে ৯৮। কিন্তু ২০২১ সালের রেকর্ডটা গতছয় বছরের অল্প অল্প করে ওপরে ওঠার মাত্রাটাকে একদম ম্লান করে দিয়েছে।
পানছড়িতে দিনব্যাপী কঠিন চীবর দান
খাগড়াছড়ির পানছড়ি তারাবন ভাবনা কেন্দ্রে ৮ম দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুই প্রু চৌধুরী অপু।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠান মালার মধ্যে সকালে বৌদ্ধ নর-নারীদের পঞ্চশীল গ্রহণ, বৌদ্ধ মুর্তি দান, সংঘদান, অষ্ট পরিস্কার দান, চীবরদান, কল্পতরু দান ও বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পিন্ডদানসহ নানা বিধ দান করা হয়।
আরও পড়ুন: খাগড়াছড়িতে বৌদ্ধ বিহারে দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত
অনুষ্ঠানে প্রধান ধর্মীয় আলোচক হিসেবে ছিলেন, সংঘ প্রধান শ্রীমৎ বৌধিপাল মহাস্থবির ভান্তে, রাঙ্গামাটি বনবিহারের আবাসিক প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির, শ্রীমৎ জ্ঞান জ্যোতি ভান্তে ও তারাবন ভাবনা কেন্দ্রের বিহারাধ্যক্ষ আদি কল্যান স্থবির।
আরও পড়ুন: প্রবারণা পূর্ণিমা: পাহাড়ে সম্প্রীতির কল্প জাহাজ ভাসলো
দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানে ধর্মীয় দেশনায় দেশ জাতি সকলের মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করা হয়।
ভ্যালি সিটি: পূণ্যভূমি সিলেটে বাংলাদেশের লন্ডনি পাড়া
একটি সুন্দর বাসস্থান, নিরাপদ সড়ক, বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশি পাড়া। শুধু মৌলিক চাহিদাই নয়, শত কষ্টের জীবিকা নির্বাহের পর স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ জীবনের জন্য অতি যত্নে লালিত স্বপ্নের নামান্তর। এর সাথে যদি যুক্ত হয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য তাহলে জীবনে আর কিছুই চাওয়ার থাকে না। ঠিক এরকমই এক জায়গার সন্ধান মিলবে পূণ্যভূমি সিলেটের পূর্ব শাহী ঈদগাহ, টিভি গেট এলাকায় প্রবেশ করলে। প্রবেশদ্বার সংলগ্ন দেয়াল জুড়ে গোটা গোটা অক্ষরে ভ্যালি সিটি লেখাটা প্রথমেই জায়গাটার নান্দনিকতা নিয়ে একটা ধারণা দিয়ে দিবে। চলুন, সিলেটে বাংলাদেশের লন্ডনি পাড়া খ্যাত এই জায়গাটার ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নিই।
ভ্যালি সিটির লন্ডনি পাড়া নামকরণ
লন্ডনের কর্মরত বাংলাদেশিরা সম্পূর্ণ লন্ডনের বাড়িগুলোর আদলে বানিয়েছে এখানকার বাড়িগুলো। ডুপ্লেক্স বাড়ি আর বিদেশি ঘরানার রাস্তাঘাট দেখে নিমেষেই এর নামকরণের সার্থকতা টের পাওয়া যায়। এছাড়া সিলেটের লোকদের সাথে বিলেতের সম্পর্কটা সবারই জানা। ইংল্যান্ড ও আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় ২৫ লাখ সিলেটি বাস করে। তার মধ্যে শুধু যুক্তরাজ্যেই আছেন ৯৮ ভাগ সিলেটি। তাই সিলেটিরা বাংলাদেশে লন্ডনি হিসেবে পরিচিত। তাদের তৈরি এই বাড়িগুলোও স্থানীয়দের সবাই লন্ডনি বাড়ি নামেই ডাকে। তারই ধারাবাহিকতায় ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা এই সুন্দর ভ্যালি সিটিটা সবার কাছে এখন লন্ডনি পাড়া।
আরও পড়ুন: সেরাস্পেস: বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন ইনটেরিয়র ডিজাইন প্লাটফর্ম
বাড়ির মালিকেরা নিজেদেরকে ভ্যালি সিটি ফ্যামিলি বলে থাকেন। পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি নিয়ে একটি সুন্দর সম্প্রদায় গড়ার নিমিত্তেই লন্ডনি পাড়ার গোড়াপত্তন।
কীভাবে গড়ে উঠলো বাংলাদেশের লন্ডনি পাড়া
ড. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী সর্বপ্রথম ২০১০ সালে এই উদ্যোগটি গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তাঁর সাথে ইংল্যান্ডের আরও কিছু ডিরেক্টর অংশীদার হন। প্রায় দশ বছর সময় লেগেছে পুরো আবাসন প্রকল্পটি শেষ হতে। বর্তমানে মালিকদের শতকরা ৫০ ভাগ প্রবাসী, আর বাকি ৫০ ভাগ দেশে চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্য করেন। বর্তমানের সিলেটের এই ভ্যালি সিটির মালিক সমিতির সভাপতির দায়িত্বে আছেন শহিদ আহমদ চৌধুরী।
পড়ুন: বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও খরচ
সেরাস্পেস: বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন ইনটেরিয়র ডিজাইন প্লাটফর্ম
আপনি কখনও নিজ থেকে গৃহ সজ্জা করেছেন? কিংবা এটি করতে গিয়ে কঠিন মনে হয়েছে? সম্ভবত আপনি প্রফেশনাল কোনো ডিজাইনার দিয়ে কাজটি করাতে চেয়েছেন। কিন্তু অত্যধিক খরচ, সমন্বয় করার ভোগান্তি কিংবা দীর্ঘ সময়রেখা আপনাকে তা করতে নিরুৎসাহিত করেছে।
সেরাস্পেস, অনলাইন ইনটেরিয়র ডিজাইন প্লাটফর্ম, কম খরচে, স্বল্প মেয়াদে অনলাইন সমাধানের মাধ্যমে ইনটেরিয়র ডিজাইন সকলের সাধ্যের মধ্য দিয়ে এসেছে। তাদের অনলাইন ইনটেরিয়র ডিজাইন কনসালটেশন সেবা প্রথাগত সেবার সম্পূর্ণ বিকল্প।
মাত্র দুই হাজার ৮০০ টাকার ফি প্রদান করে সেরাস্পেস থেকে আপনি পাচ্ছেন আপনার গৃহের ইনটেরিয়র ডিজাইনের জন্য একজন প্রফেশনাল ইনটেরিয়র ডিজাইন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ।
সেরাস্পেস বিশ্বাস করে আপনার বাসা কিংবা বাজেট কোনো বিষয় না। আপনি এমন একটি গৃহের দাবি রাখেন যা আপনার রুচি ও লাইফস্টাইলের প্রতিফলন করে। আর এ বিশ্বাস থেকেই সেরাস্পেসের উদ্দেশ্য ইনটেরিয়র ডিজাইনকে সকলের সাধ্যের মধ্যে নিয়ে আসা।
বাংলাদেশে অনলাইন ইনটেরিয়র ডিজাইন কনসালটেশন সেবার ধারণা প্রথম নিয়ে আসে সেরাস্পেস। ২০২০ সালের মে মাসে এ প্লাটফর্ম যাত্রা শুরু করে।
আরও পড়ুন: ফ্রাঙ্কফুর্ট ৭৩তম আন্তর্জাতিক বইমেলা: বাংলাদেশ স্টলের উদ্বোধন
সেরাস্পেসের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেড় বছর ধরে এ সেবার চাহিদা বেড়ে চলেছে। এ সেবা যে কোনো স্থান থেকেই পাওয়া যাবে। এর জন্য কাস্টমারকে ভ্রমণ, অপেক্ষা কিংবা খরচ করতে হবে না। সেরাস্পেস এমন একটি প্রয়োজন চিহ্নিত করেছে যা নিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে আগে কাজ হয়নি।
সেরাস্পেস টিম নিয়মিত ও ক্রমাগত তাদের সুবিধা বাড়িয়ে চলছে এবং সেবার মান আরও বাড়াতে শিগগিরই তারা আরও প্রযুক্তি যোগ করছে।
কোম্পানিটি ঢাকাসহ সারাদেশে এখন পর্যন্ত চার হাজারের বেশি গৃহের ইনটেরিয়র ডিজাইন করেছে।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও সারজিনা মাওদুদের নেতৃত্বে ৩৫ জনের একটু তরুণ দল সেরাস্পেস পরিচালনা করছেন।
আরও পড়ুন: কালিদাস কর্মকারের স্মরণে গ্যালারি কসমসের দিনব্যাপী আয়োজন
আপন ঠিকানা : হারানো স্বজনদের খুঁজে পেতে আরজে কিবরিয়ার মহৎ উদ্যোগ
আপন ঠিকানা : হারানো স্বজনদের খুঁজে পেতে আরজে কিবরিয়ার মহৎ উদ্যোগ
‘ত্রিশ বছর পর জাহানারা খুঁজে পেলো তার পরিবার’, ‘ভাইবোনকে খুঁজে পেতে মানসিক ভারসাম্যহীন ফজলুর আপ্রাণ চেষ্টা’, ‘বাইশ বছর পর বাবা-মার বুকে ফিরে গেলো তানজিমা’; এরকম আরও অনেক ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে আরজে কিবরিয়ার আপন ঠিকানা অনুষ্ঠানটি।
যথাসম্ভব সঠিক তথ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে হারিয়ে যাওয়া মানুষটির স্বজনদের খুঁজে পেতে সাহায্য করে আপন ঠিকানা টিম। ২০২১ সালের প্রারম্ভে এই মহান উদ্দেশ্য নিয়ে এগোতেই গণ ও সামাজিক মাধ্যমগুলো থেকে ব্যাপক সাড়া আসে। চলুন, গণমাধ্যম কর্মী আরজে কিবরিয়ার এই অভিনব উদ্যোগের ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নিই।
আপন ঠিকানার শুরুর গল্প
ঢাকা এফএম ৯০.৪ এ লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড নামে একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতেন আরজে কিবরিয়া। সেখানে অতিথিরা নিজেদের হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের কথা বলতেন। অতঃপর শ্রোতাদের মধ্যে থেকে তাদের স্বজনদের পরিচিত অথবা স্বজনরা লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড টিমের সাথে যোগাযোগ করতো। এভাবে হারানো স্বজনদের খুঁজে পেতো তাদের পরিবার।
আরও পড়ুন: ২০০ কেজি সোনায় কারুকার্যমণ্ডিত হতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পবিত্র কোরআন
এই লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড শোয়ের আঙ্গিকেই জনপ্রিয় আরজে কিবরিয়া নিজের ইউটিউব চ্যানেলে আপন ঠিকানা অনুষ্ঠানটি শুরু করেন। অনুষ্ঠানটি মূলত তার নিজের প্রতিষ্ঠিত স্টুডিও অফ ক্রিয়েটিভ আর্টসের প্রথম প্রোজেক্ট। প্রথম ভিডিও প্রকাশ করেন ২০২১ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি নাসিমা নামে এক মেয়ে তার মাকে খুঁজে পাওয়ার গল্প নিয়ে। তিন দিন পর ৯ ফেব্রুয়ারি ভিডিটি নিজের ফেসবুক পেজেও প্রকাশ করেন আরজে কিবরিয়া।
সামাজিক মাধ্যম জুড়ে আপন ঠিকানা
আরজে কিবরিয়ার সাথে সারা দেশের লাখ লাখ মানুষ শরীক হয়েছে হারানো স্বজনদের খুঁজে বের করার প্রচেষ্টায়। অনুষ্ঠানটি শুরুর পর কয়েক মাসেই আপন ঠিকানা টিমের কর্মতৎপরতা সবার নজরে আসে। প্রতিটি সন্ধানের সময় হারিয়ে যাওয়া মানুষটির কাছ থেকে যথাসম্ভব সব রকম তথ্য নিয়ে তা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পরিবারের লোকজনদের দেয়া তথ্যের সাথে মিলিয়ে দেখা হয়।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও খরচ
উদ্যোগটি গ্রহণের ১০ মাসের মাথায় আপন ঠিকানার মোট এপিসোড সংখ্যা ৮১টি। লাখ লাখ দর্শকদের কাছে জনপ্রিয়তা পাওয়া এই এপিসোডগুলোতে উঠে এসেছে হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর দুঃখময় জীবনের কথা।
মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ১১ বছর ধরে নিখোঁজ সুরভীর দুঃখ ভারাক্রান্ত বাবা-মার আর্তনাদ, অন্য পরিবারে বেড়ে ওঠা মেয়ে কেয়ার আসল পরিবারে ফিরে যাওয়া, ২০ বছর পর বাবাকে চিন্তে না পারায় অস্বস্তি ও উদ্বেগের দোলাচলে থাকা ঝর্ণার গল্প নিয়ে বহুল আলোচিত হয়েছে সামাজিক মাধ্যম জুড়ে। আর এই গল্পগুলো সারা দেশের মানুষ শেয়ারের কারণে আপন ঠিকানার প্রতি দর্শকদের প্রতিক্রিয়া বুঝার পাশাপাশি সম্ভব হয়েছে স্বজনহারা মানুষগুলোকে নিজেদের পরিজনদের কাছে সফলভাবে পৌঁছে দেয়া।
বেতার মাধ্যমে জনপ্রিয় নাম আরজে কিবরিয়া
ক্যারিয়ারের শুরুটা ছিল ২০০৬ সালে রেডিও টুডেতে কথাবন্ধু হিসেবে যোগ দেয়ার মাধ্যমে। তারপর থেকে বেতার মাধ্যমে ১৪টি বছর কাটিয়ে দিয়েছেন মো. গোলাম কিবরিয়া সরকার বা সবার প্রিয় আরজে কিবরিয়া। আরজে, টিভি উপস্থাপক, কনটেন্ট নির্মাতা কিবরিয়া বর্তমানে রেডিও আম্বার ১০২.৪ এর স্টেশন ইনচার্জ এবং ঢাকা এফএম ৯০.৪ এর নির্বাহী প্রযোজক। ইতোমধ্যে তিনি জীবন গল্প, সিক্রেটস, তারার রাত ও লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড অনুষ্ঠানগুলো সঞ্চালনের মাধ্যমে নিজের একটা ব্র্যান্ড তৈরি করে ফেলেছেন। স্টুডিও অফ ক্রিয়েটিভ আর্টস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের খাতায়ও নিজের নাম লেখালেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক প্রশাসন বিভাগে ১ম শ্রেণিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করা কিবরিয়া মানুষ ও মানুষের গল্প নির্ভর কনটেন্ট নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চান। বাংলাদেশের আরজেদের মধ্যে তিনিই প্রথম যিনি সর্বপ্রথম ইউটিউব সিলভার বাটন পাওয়ার সম্মান অর্জন করেছেন, তাও মাত্র পাঁচ মাসে।
আরও পড়ুন: তোগুড়: তরমুজের রস দিয়ে বানানো নতুন গুড়
আরজে কিবরিয়ার সঞ্চালিত প্রতিটি অনুষ্ঠান-ই জীবনধর্মী। তার কনেটেণ্টের বিশেষত্ব হলো, তিনি প্রতিটি মানুষের জীবনের গল্প সর্বস্তরের দর্শকদের জন্য আকর্ষণীয় ও শিক্ষণীয়ভাবে তুলে ধরেন। সেসব অনুষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি এই আপন ঠিকানা সামাজিক মাধ্যমের সঠিক প্রয়োগের উপায় এবং সুফলের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। শুধু বিনোদনের বাহন নয়, সামাজিক মাধ্যম হতে পারে দিন বদলের এক শক্ত হাতিয়ার।
জিআই স্বীকৃতি পেল রাজশাহীর ফজলি আম
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘রাজশাহীর ফজলি আম’ জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিকেশনের’ (জিআই) এই স্বীকৃতি মিলেছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলীম উদ্দীন।
গত ৬ অক্টোবর প্রকাশিত শিল্প মন্ত্রণালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব পেটেন্ট, ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেড মার্ক তাদের জিআই ১০ নম্বর জার্নালে এটি প্রকাশ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রবারণা পূর্ণিমা: পাহাড়ে সম্প্রীতির কল্প জাহাজ ভাসলো
এ ব্যাপারে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলীম উদ্দীন জানান, ২০১৭ সালের ৯ মার্চ রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্র থেকে এই স্বীকৃতির জন্য আবেদন করা হয়েছিল।
তিনি জানান, রাজশাহীর ৯ উপজেলাতেই ফজলি আমের চাষ হয়। এর মধ্যে বাঘা উপজেলার ফজলি আম খুবই পরিচিত। ২০০ বছর আগে কলকাতার বাজারে ফজলি আম বাঘা ফজলি হিসেবে পরিচিত ছিল। জিআই পণ্যের জন্য আবেদন করার সময় এই ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। এর পেছনের ঐতিহাসিক তথ্যও উপস্থাপন করা হয়েছে।
আলীম উদ্দীন বলেন, ফজলি রাজশাহীর এটি আর অস্বীকার করার উপায় নেই। জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃত পাওয়ার মধ্য দিয়ে রাজশাহীর ফজলি সারা দেশের সম্পদ হয়ে গেল।
আরও পড়ুন: খাগড়াছড়িতে বৌদ্ধ বিহারে দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত
উল্লেখ্য, ফজলি একটি নাবী মৌসুমী জাতের আম। জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এটি পাকে এবং আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত এটির সংগ্রহকাল। ফল পাড়ার পরে পাকতে ৭ থেকে ৮ দিন সময় লাগে। ফুল আসা থেকে ফল পরিপক্ব হতে প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস সময় লাগে। এই ফল বেশ বড়, লম্বাটে চ্যাপ্টা আকারের হয়ে থাকে। ফলটি গড়ে লম্বায় ১৩ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার, পুরুত্বে ৭ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার এবং গড় ওজন ৬৫৫ গ্রাম হয়।
পাকা ফলের ত্বকের বর্ণ প্রায় সবুজ থেকে হালকা হলুদাভ হয়। আর শাঁসের রং হলুদ। ফজলি আম খেতে সুস্বাদু ও মিষ্টি। খোসা পাতলা, আঁটি লম্বা, চ্যাপ্টা ও পাতলা।
খাগড়াছড়িতে বৌদ্ধ বিহারে দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ও নানা আনুষ্ঠানিকতায় খাগড়াছড়িতে ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ বিহারে দানোত্তম কঠিন চীবর দান হচ্ছে।
শুক্রবার য়ংড বৌদ্ধ বিহারের দায়ক দায়িকাদের আয়োজনে সকাল থেকে শুরু হয়েছে দিনব্যাপী কঠিন চীবর দান উৎসব। এই উপলক্ষে দূর দূরান্ত থেকে পূণ্য সঞ্চয় করার জন্য শতশত পূণ্যার্থীরা বিহারে সমাগম হয়েছে।
কঠিন চীবর দান উপলক্ষে বিহারে বুদ্ধ পূজা, পঞ্চশীল গ্রহণ, সংঘদান, অষ্ট পরিস্কার দান, পানীয়, কল্পতরু দানসহ সকল দানীয় বস্তু দান করা হয়। এসময় ধর্মীয় গুরুরা পুণ্যার্থীদের উদ্দেশে য়ংড বৌদ্ধ বিহারের বিহারাধ্যক্ষ ভদন্ত কেমাসারা থের ধর্ম দেশনা দেন। এসময় জগতের সকল প্রাণীর সুখ শান্তি ও মঙ্গল কামনা করা হয়।
আরও পড়ুন: প্রবারণা পূর্ণিমা: পাহাড়ে সম্প্রীতির কল্প জাহাজ ভাসলো
অনুষ্ঠানে মং সার্কেলের রাজা সাচিংপ্রু চৌধুরী, মারমা সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান চাইথোই অং মারমা, মারমা ঐক্য পরিষদ নেতা ম্রাসাথোয়াই মারমা, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কল্যাণ মিত্র বড়ুয়াসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় দায়ক দায়িকারা প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, ফুল-ফল, ছোয়াইং (খাবার) বৌদ্ধসহ ভান্তিদেরকে দান করেন। সন্ধ্যায় ভগবান বৌদ্ধের উদ্দেশে আকাশে প্রদীপ (ফানুস) উড়িয়ে দেয়া হবে।
আরও পড়ুন: ফ্রাঙ্কফুর্ট ৭৩তম আন্তর্জাতিক বইমেলা: বাংলাদেশ স্টলের উদ্বোধন
একইভাবে জেলা সদরের ধর্মপুর আর্য্য বন বিহারে দু’দিন ব্যাপী দানোত্তাম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান শেষদিন শুক্রবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। খাগড়াছড়ি সদরের কল্যাণপুর মৈত্রী বৌদ্ধ বিহারে দায়ক দায়িকা ও উপাসক উপাসিকাদের আয়োজনে ২৯তম দানরাজা দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব হয়েছে।
আরও পড়ুন: ২০০ কেজি সোনায় কারুকার্যমণ্ডিত হতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পবিত্র কোরআন
প্রসঙ্গত, আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় তার প্রধান সেবিকা মহা পূণ্যবর্তী বিশাখা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা তৈরি করে সুতাগুলো রং করে বয়ন করে সেলাই শেষে চীবর বিশেষ পরিধেয় বস্ত্র দান কার্য সম্পাদন করেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মহা যঙ্গ সম্পাদন করার কারণে বৌদ্ধরা এই ধর্মীয় উৎসবকে কঠিন চীবর দান বলে থাকে।
প্রবারণা পূর্ণিমা: পাহাড়ে সম্প্রীতির কল্প জাহাজ ভাসলো
প্রবারণা পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। এই উৎসবেরই একটা অংশ হচ্ছে ফানুস উড়ানো। ফানুসের আলোয় আলোকিত হওয়ার পর কল্প জাহাজ ভাসার আনন্দে মেতেছিল কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ।
বাঁশ, কাঠ, বেত ও রঙ-বেরঙের কাগজের কারু কাজে তৈরি দৃষ্টিনন্দন পাঁচটি কল্প জাহাজ ভাসালো রামুর চেরাংঘাট বাঁকখালী নদীতে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উৎসব হলেও এই দিন সনাতন, মুসলিম, খৃষ্টানসহ পর্যটকদের সম্প্রীতির মহা মিলনমেলায় পরিণত হয়।
সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পের এই সময়ে উৎসবটি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সম্প্রীতির মহা মিলনমেলায় পরিণত হয়। রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা ও জাহাজ ভাসা উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে শত বছরের অধিক সময় ধরে চলা এ উৎসব যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মহা মিলনমেলা।
আরও পড়ুন: ফ্রাঙ্কফুর্ট ৭৩তম আন্তর্জাতিক বইমেলা: বাংলাদেশ স্টলের উদ্বোধন
দেখা গেছে, কক্সবাজারের রামুর বাঁকখালী নদীতে দৃষ্টিনন্দন কল্প জাহাজে হাতি, সিংহ, ঘোড়া, ময়ুর ভাসলো। ২৮ বুদ্ধের আসন ও বৌদ্ধ প্যাগোডার আকৃতিতে দৃষ্টিনন্দন কল্প জাহাজে ভাসলো এসব প্রাণী। পাঁচটি কল্প জাহাজে ঢোল, কাঁসর, মন্দিরাসহ নানা বাদ্যের তালে তালে শিশু-কিশোর ও যুবকরা মেতে ওঠে বাঁধভাঙা আনন্দে। রঙ-বেরঙের কাগজে আকর্ষণীয় নির্মাণ শৈলীতে নদীর এপার থেকে ওপারে পাঁচটি কল্প জাহাজে ‘বুদ্ধ কীর্তন’ ও নানা বাদ্যের তালে তালে নাচ চলে। আর নদীর দু’পাড় ছিল বৌদ্ধ, সনাতন, খৃষ্টান, মুসলিম ধর্মাবলম্বী নানা বয়সী মানুষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিলন মেলা। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণে বারেবারেই ধর্মের সীমারেখা অতিক্রম করে এ উৎসব মূলত সার্বজনীনে পরিণত হয়।
আরও পড়ুন: রবীন্দ্র-নজরুল প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে নড়াইলে বিশেষ আয়োজন
সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাষ্পের এ যুগে অসাম্প্রদায়িক চেতনার সম্প্রীতির মহা মিলনমেলায় পরিণত হয় এ জাহাজ ভাসা উৎসব। আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূণির্মা পর্যন্ত তিনমাস বর্ষাব্রত পালনের শেষদিন প্রবারণা পূর্ণিমা অত্যন্ত জমকালোভাবে পালনের ধারাবাহিকতায় চলে জাহাজ ভাসা উৎসব। প্রবারণা পূর্ণিমা পালনের পরদিন বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা থেকে ঐতিহ্যবাহী কল্প জাহাজ ভাসা উৎসব চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। শত বছরের অধিক সময়ের ঐতিহ্যবাহী এ জাহাজ ভাসা উৎসব যেন নির্মল আনন্দ এবং সৌহার্দ্য সম্প্রীতির সুদৃঢ় বন্ধন। এটাই হোক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণের সহযোগী। এ উৎসবের মধ্যদিয়ে ছড়িয়ে পড়ুক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আসল বাংলাদেশের চিত্র।
আরও পড়ুন: ২০০ কেজি সোনায় কারুকার্যমণ্ডিত হতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পবিত্র কোরআন
রামুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রণয় চাকমা বলেন, ‘শুধু বৌদ্ধ সম্প্রদায় নয়, সকল সম্প্রদায়ের মানুষ জাহাজ ভাসা উৎসবে যোগ দিয়েছেন। ধর্ম যার যার, উৎসব হোক সবার। যে যার ধর্ম পালন করবে, কেউ কারো ধর্মে আঘাত করবে না, এটাই হোক আমাদের শিক্ষা।’
কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনে সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, প্রবারণা দিবসে সজ্জিত জাহাজে করে বৈশালী নগরবাসীর অন্তহীন দুর্দশা দূর করে বিম্বিসার রাজগৃহে ফেরার পথে মানুষ, দেবতা, বক্ষ্রা, নাগ সবাই মহামতি বুদ্ধকে পূজা করেছিলেন। সেই হৃদয়স্পর্শী স্মৃতিকে অম্লান রাখতে শত বছর ধরে রামুতে জাহাজ ভাসা উৎসব লালন করে আসছে।