স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্রে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৯০ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৫৭ সেন্টিমিটার ও ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে রৌমারী, রাজিবপুর ও চিলমারী উপজেলা পরিষদসহ উপজেলা শহর প্লাবিত হয়েছে।
গত ১১ দিনে বন্যায় পানিতে ডুবে কুড়িগ্রামে অন্তত ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, বন্যার ফলে জেলার ৯ উপজেলায় ৫৭টি ইউনিয়নের ৮৯৪টি গ্রাম পানিবন্দী হয়ে পরেছে। এতে প্রায় ২ লাখ পরিবারের সাড়ে ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়েছে। ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে প্রায় ২ লাখ। ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০ হাজার হেক্টর। বন্যায় ৫শ কিলোমিটার রাস্তা, ৪০ কি.মি বাঁধ ও ৪১টি সেতু/কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৬৪ হাজার মানুষ ১৮৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। নলকুপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯ হাজার ৭৩৪টি।
জেলার ৯ উপজেলায় প্রায় ৮ লাখ মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে পানিবন্দী থাকায় তাদের মাঝে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নিজেদের খাদ্যের পাশাপাশি গো-খাদ্যের সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বানভাসী মানুষ। নৌকা দেখলেই তারা ত্রাণের আশায় ছুটতে থাকেন।
কুড়িগ্রাম জেলা মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান বক্সী জানান, গত ৫ দিন ধরে কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারী সড়কে পানি উঠায় জেলা সদরের সাথে নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়ী উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া চিলমারী সড়কেও পানি উঠায় কুড়িগ্রামের সাথে চিলমারীর সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
বন্যা কবলিত সাড়ে ৭ লাখ মানুষের জন্য সরকারিভাবে ৫০০ মেট্রিক টন চাল ও ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ৪শ ৫০টি তাবু বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। অন্যদিকে বেসরকারিভাবে এবং ব্যক্তি উদ্যোগে সামান্য পরিসরে ত্রাণ তৎপরতা শুরু হলেও বিপুল সংখ্যক বানভাসী মানুষ তা পাচ্ছে না।
বন্যা দুর্গতদের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ৮৫টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। ৫টি ওয়াটার ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও স্যালাইন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিতরণ করা হচ্ছে বলে কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা: এসএম আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন।
ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো: হাফিজুর রহমান জানান, সকল বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ পর্যন্ত জেলা প্রশাসন থেকে এখন পর্যন্ত ৮শ’ মেট্রিক টন জিআর চাল, ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৬ হাজার ৪২৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।