সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০ জন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ এবং বিভিন্ন মিডিয়া হাউসের ১৬ জন সাংবাদিক স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক ড. সাখাওয়াত আলী খান, অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকসহ অন্যরা।
এছাড়া সাংবাদিক নাদিম কাদির, সুকান্ত গুপ্ত অলোক, জ ঈ মামুন, অশোক চৌধুরী, নজরুল ইসলাম মিঠু, মুন্নি সাহা, সাইফুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ওই যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কোভিড-১৯ গোটা বিশ্বকে একটি নজিরবিহীন বহুমুখী সংকট ও অনিশ্চয়তার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিক ও প্রতিটি খাত এ সংকটের মুখোমুখি। করোনাভাইরাস মানুষের জীবনকে কত ধরনের বিপদের মুখে ফেলেছে ও ফেলছে তা আমরা সবাই জানি। এমন অনিশ্চিত মহাসংকটে যার যতটুকু সামর্থ্য আছে তা নিয়েই সবার পাশে সবাই দাঁড়াবে, সহযোগিতার হাত বাড়াবে, টিকে থাকতে শক্তি ও সাহস যোগাবে- এটাই মানব সমাজের ধর্ম এবং সব মানুষের কাছে প্রত্যাশিত।’
‘কোভিড-১৯ মোকাবিলার জন্য মার্চ মাসের শেষে সাধারণ ছুটি ঘোষিত হওয়ার এক মাসের মাথায় অনেক সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক/কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ঈদের বোনাস না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে কোনো কোনো গণমাধ্যম বেতন কমানোসহ বিনা বেতনে সাংবাদিকদের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো এমনকি বিপুল সংখ্যক সংবাদকর্মীকে চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করছে,’ বলা হয় বিবৃতিতে।
সব প্রতিকূল বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়ে সংবাদপত্র, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলসহ সব গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের মালিক ও সম্পাদকের কাছে আবেদন জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আপনাদের প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ না করে, সংবাদকর্মী ছাঁটাই না করে, কারও বেতন ভাতা না কমিয়ে কীভাবে এ মহাসংকটে সবাইকে সাথে রেখে প্রতিষ্ঠান চালানো সম্ভব সেই উপায় ও কৌশল আপনারা সম্মিলিতভাবে বের করুন। নিজেদের ঐক্যবদ্ধ চিন্তাশক্তি, সৃজনশীল উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও আর্থিক সক্ষমতাকে কাজে লাগালে, আমাদের বিশ্বাস, কাউকে বাদ না দিয়েও এ কঠিন সময়ে আপনারা জয়ী হবেন। সংবাদকর্মী ছাঁটাই ও চাকরি থেকে অব্যাহতি আর্থিক সংকট মোকিবেলার সাধারণ পন্থা। আধুনিক চিন্তাচেতনা ও প্রযুক্তির এ সময়কালে ছাঁটাইয়ের মতো পুরনো কৌশলের আশ্রয় না নিয়ে কী করে সব সংবাদকর্মীর জীবন-জীবিকাকে নিশ্চিত রেখে আপনাদের প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করা যায় সেই ভাবনা এখন জরুরি।’
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজে শক্তিশালী স্বাধীন গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা অপরিহার্য উল্লেখ করে এতে আরও বলা হয়, ‘সাংবাদিকতা, গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের জীবন সুরক্ষায় সরকারি, বেসরকারি উভয় খাতেরই দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসা এ মহাসংকটে আরও জরুরি।’
‘আমাদের এ আহ্বানের একটাই উদ্দেশ্য- এ সংকটকালে যেন একজন সংবাদকর্মীও বেকার না হন। আপনারা সবাই সামান্য ত্যাগ স্বীকার করে হলেও প্রত্যেক সংবাদকর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবন, জীবিকা এবং সুস্থভাবে বেঁচে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত রাখবেন,’ এ আবেদন জানান শিক্ষাবিদ ও পেশাজীবী সাংবাদিকরা।
নিজেদের প্রতিষ্ঠানগুলো সচল রাখতে কর্মী ছাঁটাই বা তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ না করে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর পরিবর্তে মালিক ও সম্পাদকরা আধুনিক এবং আরও অনেক ভালো উদ্ভাবনী ধারণা নিয়ে এগিয়ে আসবেন বলে আশা প্রকাশ করা হয় যৌথ বিবৃতিতে।