পদ্মার পানি হরিরামপুর উপজেলার চত্বরে ঢুকে পড়েছে। পানির তোড়ে মানিকগঞ্জ-হরিরামপুর সড়কের কয়েকটি স্থানে রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় হরিরামপুরের সাথে সড়ক পথে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। হরিরামপুর উপজেলা সদরের লোকালয়েও পানি ঢুকে পড়েছে। ওই চার উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ। বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, যমুনা নদীর পানি আরিচা পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মার পানিও বিপদসীমার অনেক ওপর দিয়ে বইছে।
যমুনায় পানি বাড়ার কারণে দৌলতপুর উপজেলার বাচামারা, চরকাটারী, বাঘুটিয়া ও জিয়নপুর ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ওই উপজেলায় প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে পাঁচ শতাধিক বাড়িঘরে। এসব মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
বন্যার পানি থেকে রক্ষায় কোনো কোনো এলাকায় ঘরবাড়ি ছেড়ে মানুষ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন বানভাসি মানুষ। পানিতে চারদিক তলিয়ে যাওয়ায় গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে শতাধিক পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। এদের চাল, ডালসহ শুকনো খাবার দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
এদিকে, পদ্মায় পানি বাড়ায় হরিরামপুর উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। হরিরামপুর উপজেলা কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে পানি ঢুকে পড়েছে। এছাড়া হরিরামপুর-মানিকগঞ্জ সড়কের কয়েকটি স্থান বানের পানির তীব্র স্রোতে ভেঙে যাওয়ায় সড়ক পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের সবকটিতে পানি ঢুকে পড়েছে। প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি পানিবন্দী মানুষ রয়েছে লেছড়াগঞ্জ, আজিমনগর, ধূলশুড়া, হারুকান্দি, বয়ড়া, সূতালড়ি, কাঞ্চনপুর ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নে। এসব ইউনিয়নে পানিবন্দী যেসব মানুষের খাবার সংকট রয়েছে তাদের খাবার দিয়ে সহযোগীতা করা হচ্ছে।’
এ পর্যন্ত ৬০০ পরিবারকে খাবার দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় এ পর্যন্ত ৭৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে জেলার ৭ হাজার ৩০৬ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ৬৮৮টি পরিবার মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকায় ১৩০ মেট্রিক টন চাল এবং ১ হাজার ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার সহায়তা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২০ মেট্রিক টন চাল, ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশুখাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা এবং গো-খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা মজুত রয়েছে।
জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস বলেন, ‘পদ্মা ও যমুনায় পানি বাড়ায় চারটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জেলায় বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যকর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে খাবার পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। তাদের আশ্রয়ের প্রয়োজন হলে আশ্রয়কেন্দ্র এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’