এ ঘটনায় রবিবার সদর থানায় অজ্ঞাত পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন জানান, ওই নারী প্রতি বছর ধান কাটার মৌসুমে স্বামীর সাথে মজুর খাটতে ঝিনাইদহের শৈলকুপা থেকে মাগুরা আসেন। এবার তারা দিনের বেলা কাজের পর রাতে খেতের পাশেই ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে থাকছিলেন।
শনিবার সারা দিন কাজ শেষে তারা যথারীতি জাগলা গ্রামের মাঠের মধ্যে ঝুপড়িতে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে অজ্ঞাত পাঁচ যুবক ঝুপড়ির মধ্যে ঢুকে ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে স্বামীকে খেতের পাশে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে বেঁধে রেখে তারা ৪৫ বছর বয়সী ওই নারীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন। তারা ফিরে যাওয়ার সময় এ বিষয়ে কাউকে কিছু না জানাতে হুমকিও দিয়ে যায়।
ঘটনার পর ভুক্তভোগীরা স্থানীয় গ্রামবাসীদের কাছে অভিযোগ দেন এবং তাদের পরামর্শে রবিবার দুপুরে সদর থানায় হাজির হয়ে মামলা করেন।
আরও পড়ুন: স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে বগুড়ায় যুবক গ্রেপ্তার
ওসি জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘থানায় লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর ওই নারীর মেডিকেল পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। আসামিদের গ্রেপ্তার করতে ইতোমধ্যে পুলিশের অভিযান শুরু করা হয়েছে।’
বাংলাদেশে ধর্ষণ
বিচার না হওয়া এবং নৈতিক অবক্ষয়সহ বিভিন্ন কারণে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে যৌন হয়রানি দেশের সবচেয়ে বিপজ্জনক বিপত্তি হিসেবে দেখা দিয়েছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) মতে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ২০৮ জন সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষিত হওয়াসহ ৯৭৫ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪৫ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এবং ১২ জন আত্মহত্যা করেছেন।
আসক আরও জানায়, এ সময়ে ১৬১ নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন এবং তাদের মাঝে ১২ জন আত্মহত্যা করেছেন।
আরও পড়ুন: রাজধানীতে কিশোরীকে ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণ’
আসক আরও বলছে যে যৌন হয়রানির ঘটনার প্রতিবাদ করার জন্য তিনজন নারী এবং নয়জন পুরুষকে হত্যা করা হয়েছে।
এছাড়া, ৬২৭ শিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে, ২০ ছেলেকে নিপীড়ন করা হয়েছে এবং ২১ নারী এসিড আক্রমণের শিকার হয়েছেন।
ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড
ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে গত ১৭ নভেম্বর সংসদে বহুল আলোচিত ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) বিল, ২০২০’ পাস হয়েছে। ধর্ষণ মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করতে বিলটি সংশোধন করা হয়।
প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। সংশোধনের আগের আইন অনুযায়ী এ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
ধর্ষণের বিরুদ্ধে সম্প্রতি দেশব্যাপী আন্দোলনের মুখে সরকার আইনের এ সংশোধন আনে।
জাতিসংঘের উদ্বেগ
বাংলাদেশে নারীদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সেই সাথে সংস্থাটি ভুক্তভোগী ও সাক্ষীদের সমর্থন ও সুরক্ষা প্রদান এবং বিচারের ক্ষেত্রে দ্রুততা আনয়নে ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার জরুরি সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে।
৭ অক্টোবর জাতিসংঘের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জাতিসংঘ বাংলাদেশে নারীদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এগুলো গুরুতর অপরাধ এবং মানবাধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘন।’