আফ্রিকা
লিবিয়ার উপকূলীয় শহর দেরনায় বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১,৩০০: রেড ক্রিসেন্ট
লিবিয়ার উপকূলীয় শহর দেরনায় ভারী বর্ষণে দুটি বাঁধ ভেঙে ব্যাপক বন্যার পর অনুসন্ধান অভিযান অব্যাহত থাকায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১ হাজাত ৩০০ জনে দাঁড়িয়েছে।
বৃহস্পতিবার লিবিয়ার রেড ক্রিসেন্ট বিষয়টি জানিয়েছে।
সহায়তা গ্রুপটির সেক্রেটারি জেনারেল মারি এল-ড্রেস ফোনে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেন, ভূমধ্যসাগরীয় শহরটিতে আরও ১০ হাজার ১০০ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা গেছে।
এর আগে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ দেরনায় মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ৫০০ বলে জানিয়েছিল।
ঝড়ে দেশের অন্যান্য স্থানেও প্রায় ১৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
২০১১ সালের গণঅভ্যুত্থানে মুয়াম্মার গাদ্দাফির দীর্ঘদিনের শাসনামলের পতন হওয়ার পর থেকে সংঘাতে জর্জরিত তেল সমৃদ্ধ দেশটিতে রবিবার রাতে বন্যায় দেরনা ভেসে গেছে এবং দেশটির ঝুঁকিপূর্ণ দিকগুলো প্রকাশ পেয়েছে।
আরও পড়ুন: লিবিয়ার বন্যার্তদের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে আজ
লিবিয়ায় ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েল ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
লিবিয়ায় বন্যায় ২ হাজার মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা
ভূমধ্যসাগরীয় ঝড় ড্যানিয়েল লিবিয়ায় বিধ্বংসী বন্যার সৃষ্টি করেছে। যার ফলে উত্তর আফ্রিকার এই দেশটির পূর্বাঞ্চলের একাধিক উপকূলীয় শহরে বাঁধ ভেঙে আশেপাশের এলাকাগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে।
দেশটির একজন নেতা স্থানীয় সময় সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) বলেছেন, দুই হাজারের মতো মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে লিবিয়ায় চলমান বিশৃঙ্খলার মধ্যে ইসলামিক চরমপন্থীদের দখলে থাকা শহর দেরনায় সবচেয়ে বেশি ধ্বংসলীলা দেখা দিয়েছে। শহরটি পুরো বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।
লিবিয়ার প্রশাসন দুটি পক্ষে বিভক্ত, একটি পূর্বে এবং একটি পশ্চিমে। দুই পক্ষই মিলিশিয়া ও বিদেশি সরকার দ্বারা সমর্থিত।
স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, বন্যায় সোমবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৬১ জনে দাঁড়িয়েছে। তবে এই তালিকায় দেরনা অন্তর্ভুক্ত ছিল না। কারণ এই এলাকাটি দুর্গম এবং সেখানে দুটি উজানের বাঁধ ভেঙে পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এই এলাকার হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শহরের বাসিন্দাদের অনলাইনে পোস্ট করা ভিডিওতে বড় ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ দেখানো হয়েছে।
সোমবার মোবাইলে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে পূর্ব লিবিয়ান সরকারের প্রধানমন্ত্রী ওসামা হামাদ বলেছেন, দেরনায় দুই হাজার জন নিহত হওয়ার এবং হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, দেরনাকে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে।
পূর্বে অবস্থিত দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র আহমেদ আল-মোসমারি একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, দেরনায় মৃতের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
তিনি বলেন, পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার মানুষ নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন: লিবিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন ১৫১ বাংলাদেশি
আল-মোসমারি এই বিপর্যয়ের জন্য কাছাকাছি দুটি বাঁধ ভেঙে যাওয়াকে দায়ী করেছেন। যার কারণে এই প্রাণঘাতী আকস্মিক বন্যা হয়েছে।
২০১১ সালের বিদ্রোহে দীর্ঘ সময়ের শাসক মোয়াম্মার গাদ্দাফির পতন এবং পরে নিহত হওয়ার পর থেকে লিবিয়ায় একটি কেন্দ্রীয় সরকারের অভাব রয়েছে। এর ফলে দেশটি বিপর্যয় নেমে এসেছে।
দেশটি এখন পূর্ব ও পশ্চিমে প্রতিদ্বন্দ্বী সরকারের মধ্যে বিভক্ত, প্রতিটি মিলিশিয়াদের দ্বারা সমর্থিত।
সিরতে শহরের সঙ্গে দেরনা নিজেই বছরের পর বছর ধরে চরমপন্থী গোষ্ঠী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। এক পর্যায়ে যারা ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর প্রতি আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, যতক্ষণ না পূর্ব-ভিত্তিক সরকারের প্রতি অনুগত বাহিনী ২ সালে তাদের বহিষ্কার করেছিল।
শহরের প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রধান আবদেল-রহিম মাজেক জানিয়েছেন, পূর্বাঞ্চলীয় বায়দা শহরে অন্তত ৪৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
অ্যাম্বুলেন্স ও ইমার্জেন্সি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উত্তর-পূর্ব লিবিয়ার উপকূলীয় শহর সুসায় আরও সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওসামা আব্দুলজালিল বলেছেন, শাহাত ও ওমর আল-মোখতার শহরে আরও সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রবিবার মারজ শহরে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
লিবিয়ান রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, দেরনায় পরিবারকে সাহায্য করতে গিয়ে তাদের তিনজন কর্মী মারা গেছে।
এর আগে রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছিল, তারা তাদের এক কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়েছে। কারণ তিনি বায়দায় একটি আটকে থাকা পরিবারকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছিল।
পূর্ব লিবিয়া সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসাম আবু জেরিবা বলেছেন, দেরনায় পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ নিখোঁজ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, নিহতদের অনেকেই ভূমধ্যসাগরে ভেসে গেছে।
তিনি সৌদি মালিকানাধীন স্যাটেলাইট নিউজ চ্যানেল আল-আরাবিয়ায় একটি টেলিফোন সাক্ষাত্কারে বলেছেন, ‘পরিস্থিতি দুঃখজনক’।
তিনি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে সাহায্যের আহ্বান জানিয়েছেন।
লিবিয়ার জন্য জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয়কারী জর্জেট গ্যাগনন বলেছেন, প্রাথমিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে বেশ কয়েকটি গ্রাম এবং শহর ‘গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ... ব্যাপক বন্যা, অবকাঠামোর ক্ষতি ও প্রাণহানি হয়েছে।’
তিনি এক্স-এ (টুইটার) লিখেছেন, ‘দেশে (ঝড়) ড্যানিয়েলের মারাত্মক প্রভাবে আমি গভীরভাবে দুঃখিত ... আমি স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের পূর্ব লিবিয়ার জনগণকে জরুরি মানবিক সহায়তা করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
এক্স-এর একটি পোস্টে লিবিয়ায় মার্কিন দূতাবাস বলেছে, তারা জাতিসংঘ এবং লিবিয়ান উভয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। কীভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সাহায্য পৌঁছে দেওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
লিবিয়ার পূর্ব উপকূলে অবস্থিত ব-দ্বীপ ওয়াদি দেরনায় ভারী বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণে শহরের বেশিরভাগ অংশ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরে পূর্ব লিবিয়া সরকারের প্রধানমন্ত্রী ওসামা হামাদ দেরনাকে একটি দুর্যোগ আক্রান্ত অঞ্চল ঘোষণা করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীও তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছেন এবং সারা দেশে পতাকা অর্ধনমিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: লিবিয়ায় আধা সামরিক দুই বাহিনীর সংঘর্ষে ২৭ জন নিহত
পূর্ব ও পশ্চিম লিবিয়া নিয়ন্ত্রণকারী কমোডোর খলিফা হিফটার বেনগাজি এবং অন্যান্য পূর্বাঞ্চলীয় শহরগুওলোতে বাসিন্দাদের সাহায্য করার জন্য সৈন্য মোতায়েন করেছিলেন।
হিফটার বাহিনীর একজন মুখপাত্র আহমেদ আল-মোসমারি বলেছেন, তারা পাঁচজন সৈন্যের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়েছে; যারা বায়দায় অবরুদ্ধ পরিবারগুলোকে সহায়তা করছিল।
সোমবার সন্ধ্যায় বিদেশি সরকারগুলো সমর্থনের বার্তা পাঠিয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ডব্লিউএএম জানিয়েছে, দেশটির প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান বলেছেন, তার দেশ পূর্ব লিবিয়ায় মানবিক সহায়তা এবং অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল পাঠাবে।
তুরস্ক, যা পশ্চিমে দেশটির ত্রিপোলি-ভিত্তিক সরকারকে সমর্থন করে, তারাও প্রতিবেশি আলজেরিয়া, মিশর ও ইরাকের সঙ্গে শোকপ্রকাশ করেছে।
ঝড় ড্যানিয়েল সোমবার পশ্চিম মিশরের কিছু অংশে আঘাত হানবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দেশটির আবহাওয়া কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য বৃষ্টি এবং খারাপ আবহাওয়া সম্পর্কে সতর্ক করেছে।
আরও পড়ুন: অবৈধ অভিবাসন রোধে বাংলাদেশ লিবিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে চায় বাংলাদেশ
সুদানের খার্তুমের বাজারে ড্রোন হামলায় ৪০ জন নিহত
সুদানের রাজধানী খার্তুমের একটি বাজারে সেনাবাহিনীর ড্রোন অভিযানে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৪০ জন। রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) ওই হামলায় আরও ৭০ জন গুরুতর আহত হয়েছে।
সুদানের নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশটির সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) যুদ্ধের মধ্যে এ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
ভারতের গণমাধ্যম এএনআইয়ের এক প্রতিবেদনে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরার বরাতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিশ্ববাসীর মূল্যায়ন: অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন ইস্যুতে ফোকাস করতে জি২০’র প্রতি আহ্বান
বাশাইর ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের প্রতিরোধ কমিটি ও দুই স্বাস্থ্যকর্মী জানিয়েছেন, খার্তুমের মায়ো এলাকায় অন্তত ৭০ জন আহত হয়েছেন।
আল জাজিরা জানিয়েছে, ড্রোন হামলাটি সুদানের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চালানো হয়েছে। তবে নিহতদের সবাই বেসামরিক নাগরিক কি না তা স্পষ্ট না। আহতদের জন্য চিকিৎসা সহায়তার জরুরি প্রয়োজন।
প্রতিরোধ কমিটি ও বাশাইর ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের দুই স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের মতে, আহতদের অনেকের অঙ্গচ্ছেদের প্রয়োজন হবে।
এ বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফুটেজ পোস্ট করেছে প্রতিরোধ কমিটি। এতে দেখা যাচ্ছে যে হাসপাতালের একটি খোলা উঠানে সাদা চাদরে লাশগুলো মোড়ানো।
আল জাজিরা জানিয়েছে, সুদানের যুদ্ধে উভয় পক্ষের নির্বিচারে গোলাবর্ষণ এবং বিমান হামলা সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে। যা বৃহত্তর খার্তুম এলাকাকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করেছে।
আল জাজিরার মতে, সংঘাতের পাঁচ মাস পরও আরএসএফ ও সুদানের সেনাবাহিনীর মধ্যে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি।
এদিকে সুদানের সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান জোর দিয়ে বলেন, সেনাবাহিনী জেদ্দা ফোরামসহ বিভিন্ন উদ্যোগকে স্বাগত জানায় কিন্তু কোনো অগ্রহণযোগ্য হস্তক্ষেপের অনুমতি দেবে না।
আল জাজিরা জানিয়েছে, আল-বুরহানের নেতৃত্বে সুদানের সামরিক বাহিনী এবং জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালোর নেতৃত্বে আরএসএফ- এর মধ্যকার উত্তেজনা প্রকাশ্য লড়াইয়ে পরিণত হওয়ায় সুদান এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে সহিংস হামলার সাক্ষী হয়ে আসছে।
সিএনএন অনুযায়ী গত মাসে জাতিসংঘ সুদানে গৃহযুদ্ধ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে যে এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। কারণ এপ্রিল থেকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষ দেশ ছেড়ে চলে গেছে। দুই দলের লড়াই দেশটিকে একটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করেছে।
এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে, সুদানের সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের (আরএসএফ) মধ্যে প্রচণ্ড লড়াই শুরু হয়। এর ফলে পূর্ব আফ্রিকার দেশটি থেকে বিপুল সংখ্যক শরণার্থী পালিয়ে যায়। এদিকে মিলিশিয়া জোটের বিরুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা, বাড়িঘর লুটপাট এবং জাতিগত নির্মূলের অভিযোগে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
সিএনএন জানিয়েছে, যুদ্ধের চার মাস ধরে যৌন নিপীড়নসহ লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার ঘটনাগুলো ৫০ শতাংশ বেড়েছে।
জাতিসংঘের মতে অপর্যাপ্ত সাহায্য, বিদ্যুৎ ঘাটতি ও যুদ্ধের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হাসপাতালগুলোর কারণে ইতোমধ্যেই ভঙ্গুর স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উপর চাপ তৈরি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মরক্কোয় শক্তিশালী ভূমিকম্পে ২ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত, মারাকেচে ঐতিহাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত
আফ্রিকান ইউনিয়ন জি২০-তে যোগ দিচ্ছে
মরক্কোয় শক্তিশালী ভূমিকম্পে ২ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত, মারাকেচে ঐতিহাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত
মরক্কোতে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানায় মানুষ তাদের বিছানা থেকে রাস্তায় ছুটে এসেছে, আসছে এবং পাহাড়ি গ্রাম ও প্রাচীন শহরগুলোর ভবন ভেঙে পড়েছে। যেগুলো এই ধরনের শক্তিশালী ভূমিকম্প সহনীয় করে নির্মিত হয়নি।
২ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং শনিবার দুর্গম এলাকায় উদ্ধারকর্মীদের পৌঁছাতে লড়াই করতে হয়েছে। ফলে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
৬ দশমিক ৮ মাত্রার এই ভূমিকম্পটি উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে ১২০ বছরের মধ্যে আঘাত হানা সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প। এতে শুক্রবার গভীর রাতে আতঙ্ক ও অবিশ্বাসের মধ্যে মানুষদেরকে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়তে হয়।
আরও পড়ুন: মরক্কোয় শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ৮০০, মারাকেশে ঐতিহাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত
এদের মধ্যে একজন বলেন, থালাবাসন ও দেয়ালের ঝুলন্ত জিনিসপত্র বৃষ্টির মতো পড়তে শুরু করে এবং মানুষরা তাদের পায়ে দাঁড়াতে পাড়ছিল না। ভূমিকম্পে পাথর দিয়ে তৈরি দেয়াল ভেঙ্গে পড়ে এবং পুরো সম্প্রদায় যেন ধ্বংসস্তূপে ঢেকে যায়!
খরাপীড়িত ওয়রগান উপত্যকার মতো প্রত্যন্ত গ্রামগুলো বিদ্যুৎ ও মুঠোফোন পরিষেবা বিকল হয়ে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন: মরক্কোতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাতে শত শত নিহত
ঐতিহাসিক মারাকেচে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলে দেখা যায় রাস্তায় গুচ্ছ গুচ্ছ মানুষ অবস্থান নিয়েছে, যারা ভঙ্গুর ও অনিশ্চিত ভবনগুলোয় ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছেন। দ্বাদশ শতাব্দীতে নির্মিত শহরের বিখ্যাত কুতুবিয়া মসজিদটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, তবে এর পরিমাণ কত তা তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার হওয়া যায়নি। এর ৬৯ মিটার (২২৬ ফুট) উঁচু মিনারটি ‘মারাকেচের ছাদ’ নামে পরিচিত। মরক্কোর নাগরিকরা ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান এই বিখ্যাত লাল দেয়ালের ক্ষতিগ্রস্ত কিছু অংশের ভিডিও পোস্ট করেছেন।
মরক্কোর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শনিবার রাতে জানিয়েছে, ভূমিকম্পে কমপক্ষে ২ হাজার ১২ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই মারাকেচ ও উপকেন্দ্রের নিকটবর্তী পাঁচটি প্রদেশে ছিলেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২ হাজার ৫৯ জন, যাদের মধ্যে ১ হাজার ৪০৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আরও পড়ুন: প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্প, ভানুয়াতুতে ছোট সুনামি
মরক্কোয় শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ৮০০, মারাকেচে ঐতিহাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত
মরক্কোয় শুক্রবার রাতে শক্তিশালী ভূমিকম্পে কমপক্ষে ৮০০ জন নিহত হয়েছে এবং বহুসংখ্যক আহত হয়েছেন। শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে মরক্কোর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ভূমিকম্পে আটলাস পর্বতমালার গ্রামগুলো থেকে ঐতিহাসিক শহর মারাকেচ পর্যন্ত ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অনুসন্ধান অব্যাহত থাকায় এবং উদ্ধারকারীরা দুর্গম এলাকায় পৌঁছালে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মরক্কোর মিডিয়া জানিয়েছে, মারাকেচ শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত ঐতিহাসিক ভবনগুলোর মধ্যে একটি দ্বাদশ শতকের কৌতুবিয়া মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এর পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। এর ৬৯-মিটার (২২৬-ফুট) মিনারটি ‘মারাকেচের ছাদ’ নামে পরিচিত।
এছাড়াও মরক্কোর ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট মারাকেশে পুরনো শহরকে ঘিরে থাকা বিখ্যাত লাল দেয়ালের কিছু অংশের ক্ষতি হয়েছে।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি একটি শহরের মেয়র মরক্কোর নিউজ সাইট টুএম-কে বলেছেন, কাছাকাছি শহরের বেশ কয়েকটি বাড়ি আংশিক বা সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে এবং কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ ও রাস্তা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
তালাত এন'ইয়াকুব শহরের মেয়র আবদেররহিম আইত দাউদ বলেছেন, কর্তৃপক্ষ আল হাউজ প্রদেশে রাস্তা পরিষ্কার করার জন্য কাজ করছে, যাতে অ্যাম্বুলেন্স ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য সহায়তা বহনকারী গাড়িগুলো যাতায়াত করতে পারে।
তিনি বলেন, পাহাড়ি গ্রামের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে সময় লাগবে।
স্থানীয় মিডিয়া জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রের আশেপাশের পাহাড়ি অঞ্চলে যাওয়ার রাস্তাগুলোয় যানবাহন আটকে আছে। ধসে পড়া পাথরের কারণে এগুলো অবরুদ্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে উদ্ধার প্রচেষ্টা ধীরগতিতে চলছে।
শনিবার সারাবিশ্বের মানুষ এ দুর্ঘটনায় হতাহতদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছে।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ এক্স-এ (টুইটারে) শোক প্রকাশ করেছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন, ‘ভারত এই কঠিন সময়ে মরক্কোকে সমস্ত সম্ভাব্য সহায়তা দিতে প্রস্তুত।’
জাতিসংঘের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘জাতিসংঘ ক্ষতিগ্রস্ত জনসংখ্যাকে সহায়তা করার প্রচেষ্টায় মরক্কো সরকারকে সহায়তা করতে প্রস্তুত।’
আরও পড়ুন: মরক্কোতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাতে শত শত নিহত
ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে জানিয়েছে, রাত ১১টা ১১ মিনিটে আঘাত হানা ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬.৮। ঝাঁকুনি সহ যা কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয়েছিল।
মার্কিন সংস্থা জানিয়েছে, ১৯ মিনিট পরে একটি ৪.৯ মাত্রার আফটারশক আঘাত হানে।
শুক্রবারের কম্পনের কেন্দ্রস্থল ছিল আল হাউজ প্রদেশের ইঘিল শহরের কাছে, মারাকেচ থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার (৪৩ দশমিক ৫ মাইল) দক্ষিণে।
ইউএসজিএস বলেছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রটি পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে ১৮ কিলোমিটার (১১ মাইল) নীচে ছিল।
মরক্কোর সিসমিক এজেন্সি জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্র ১১ কিলোমিটার (৭ মাইল) নীচে ছিল। এই ধরনের অগভীর ভূমিকম্প বেশি বিপজ্জনক।
উত্তর আফ্রিকায় ভূমিকম্প তুলনামূলকভাবে বিরল।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব জিওফিজিক্সের সিসমিক মনিটরিং অ্যান্ড ওয়ার্নিং বিভাগের প্রধান লাহসেন মাহনি টুএম টিভিকে বলেছেন, এবারের ভূমিকম্পটি পাহাড়ি অঞ্চলে রেকর্ড করা সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল।
১৯৬০ সালে মরক্কোর আগাদির শহরের কাছে ৫.৮ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে এবং হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়।
আগাদির ভূমিকম্প মরোক্কোতে নির্মাণ নিয়মে পরিবর্তন আনে। কিন্তু অনেক ভবন, বিশেষ করে গ্রামীণ বাড়ি, এই ধরনের ভূমিকম্প সহ্য করার মতো করে নির্মিত হয় না।
২০০৪ সালে ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলীয় শহর আল হোসেইমার কাছে একটি ৬.৪ মাত্রার ভূমিকম্পে ৬০০ জনেরও বেশি লোক মারা গিয়েছিল।
শুক্রবারের ভূমিকম্পটি পর্তুগাল ও আলজেরিয়ার মতো দূরবর্তী স্থানেও অনুভূত হয়েছিল।
পর্তুগিজ ইনস্টিটিউট ফর সি অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ার এবং আলজেরিয়ার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সিতেও এর জরুরি প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্প: নিহতের সংখ্যা ৩৩ হাজার ছাড়াল, তুরস্কে ঠিকাদার আটক
তুরস্কে ফের ৫.৬ মাত্রার ভূমিকম্প, নিহত ১
মরক্কোতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাতে শত শত নিহত
শুক্রবার গভীর রাতে মরোক্কোতে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাতে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। মূল শহরগুলোতে ভবন এবং ঐতিহাসিক স্থাপনাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মরক্কোর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শনিবার ভোরে বলেছে, ভূমিকম্পের কাছাকাছি প্রদেশে কমপক্ষে ২৯৬ জন মারা গেছে। এছাড়াও, আহত আরও ১৫৩ জনকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় লিখেছে যে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে শহর ও শহরের বাইরে।
দালানগুলো ধ্বংসস্তূপের ধুলা কমে যাওয়ার পর ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট মারাকেচের পুরানো শহরকে ঘিরে থাকা বিখ্যাত লাল দেয়ালের কিছু অংশের ভিডিও পোস্ট করেছে মরক্কানরা।
এছাড়াও পর্যটক এবং অন্যরা শহরের রেস্তোরাঁগুলোকে স্পন্দিত ক্লাব সঙ্গীত বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চিৎকার ও খালি করার ভিডিও পোস্ট করেছেন তারা।
অনেক ভূমিকম্পের পরে ক্ষয়ক্ষতি এবং হতাহতের তথ্যগুলো নিশ্চিত করতে প্রায়ই সময় লাগে, বিশেষ করে যেগুলো মধ্যরাতে আঘাত হানে।
কংক্রিটের ভবনগুলোতে ফিরে যাওয়ার পরিবর্তে, পুরুষ, মহিলা এবং শিশুরা আফটারশক এবং অন্যান্য প্রতিধ্বনিগুলোর জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল যা তাদের বাড়িগুলোকে দুলাতে পারে।
মার্কিন জিওলজিক্যাল সার্ভে জানিয়েছে, রাত ১১টা ১১ মিনিটে(২২১১ জিএমটি) ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পটি ঝাঁকুনি সহ যা কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয়েছিল। মরক্কোর ন্যাশনাল সিসমিক মনিটরিং অ্যান্ড অ্যালার্ট নেটওয়ার্ক রিখটার স্কেলে এটিকে ৭ মাত্রায় পরিমাপ করেছে। মার্কিন সংস্থা জানিয়েছে, ১৯ মিনিট পরে একটি ৪ দশমিক ৯ মাত্রার আফটারশক আঘাত হানে।
প্রারম্ভিক পরিমাপের পরিবর্তনগুলো সাধারণ, যদিও হয় পড়া মরক্কোর বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হবে। যদিও উত্তর আফ্রিকায় ভূমিকম্প তুলনামূলকভাবে বিরল, তবে ৫ দশমিক ৮ মাত্রার একটি কম্পন আগাদিরের কাছে আঘাত হানে এবং ১৯৬০ সালে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটায়।
আরও পড়ুন: মরক্কোতে একসঙ্গে ৯ সুস্থ সন্তান প্রসব!
শুক্রবারের কম্পনের কেন্দ্রস্থল ছিল মারাকেচের প্রায় ৭০কিলোমিটার (৪৩ দশমিক ৫ মাইল) দক্ষিণে আটলাস পর্বতমালায়। এটি উত্তর আফ্রিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ তুবকাল এবং মরক্কোর একটি জনপ্রিয় স্কি রিসর্ট ওকাইমেডেনের কাছেও ছিল।
ইউএসজিএস বলেছে যে এপিসেন্টারটি পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে ১৮ কিলোমিটার (১১ মাইল) নীচে ছিল। আর মরক্কোর সিসমিক এজেন্সি এটি ৮ কিলোমিটার (৫ মাইল) নীচে রেখেছিল।
ভূমিকম্পের মাত্রার প্রতিবেদনের বাইরে, মরক্কোর কর্মকর্তা বা মরক্কোর সরকারি সংবাদ সংস্থা এমএপি শনিবারের প্রথম দিকে হতাহতের বা ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। সরকারি কর্মকর্তারা সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে তথ্য যোগাযোগের জন্য এজেন্সি ব্যবহার করে।
পর্তুগিজ ইনস্টিটিউট ফর সি অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ার এবং আলজেরিয়ার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি, যা জরুরি প্রতিক্রিয়া তত্ত্বাবধান করে, ভূমিকম্পটি পর্তুগাল এবং আলজেরিয়া পর্যন্ত অনুভূত হয়েছিল।
আরও পড়ুন: গভীর কুয়ায় আটকা পড়া মরক্কোর শিশুটি মারাই গেল
মালিতে আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট বিদ্রোহীদের হামলায় সেনা সদস্যসহ নিহত ৬৪: সেনাবাহিনী
মালিতে আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট বিদ্রোহীদের দুটি হামলায় ১৫ সেনা সদস্য ও ৪৯ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দেশটির অশান্ত উত্তরাঞ্চলীয় এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে দেশটির সামরিক জান্তা।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সামরিক জান্তার একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নাইজার নদীর তীমবুকটু শহরের কাছে একটি যাত্রীবাহী নৌকা এবং গাও অঞ্চলের আরও নিচের দিকে বাম্বাতে মালির একটি সামরিক অবস্থানে এই হামলা চালানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, আল-কায়েদার সঙ্গে যুক্ত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর একটি ছায়া জোট জেএনআইএম এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।
মালির সরকার হামলার জবাবে প্রায় ৫০ জন হামলাকারীকে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে।
হামলায় নিহত বেসামরিক ও সৈন্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শুক্রবার থেকে তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে দেশটিতে।
আরও পড়ুন: প্রতিদ্বন্দ্বী সশস্ত্র গোষ্ঠীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো জব্দ করল সুদানের সামরিক প্রধান
জাতিসংঘ গত মাসে একটি প্রতিবেদনে বলেছে, আল-কায়েদার সহযোগী এবং ইসলামিক স্টেট-সংযুক্ত গোষ্ঠীগুলো এক বছরেরও কম সময়ে মালিতে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলের পরিধি প্রায় দ্বিগুণ করেছে। কারণ তারা একটি দুর্বল সরকার এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ২০১৫ সালে করা শান্তিচুক্তির সুবিধা গ্রহণ করছে।
তারা বলেছে, শান্তি চুক্তির স্থবির বাস্তবায়ন এবং সম্প্রদায়ের উপর অবিরাম আক্রমণ আইএস গ্রুপ এবং আল-কায়েদার সহযোগীদের ‘২০১২ সালের পরিস্থিতি পুনরায় কার্যকর করার’ সুযোগ দিয়েছে।
ওই বছরই পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে এবং দুই মাস পর উত্তরাঞ্চলের বিদ্রোহীরা একটি ইসলামিক রাষ্ট্র গঠন করে। চরমপন্থী বিদ্রোহীরা ফরাসি নেতৃত্বাধীন সামরিক অভিযানের কারণে উত্তরের ক্ষমতা থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছিল। তবে তারা ২০১৫ সালে শুষ্ক উত্তর থেকে আরও জনবহুল মধ্য মালিতে চলে যায় এবং সক্রিয় থাকে।
২০২০ সালের আগস্টে মালির রাষ্ট্রপতি একটি অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন যার মধ্যে একজন সেনা কর্নেল ছিলেন যিনি দ্বিতীয় অভ্যুত্থান করেছিলেন এবং ২০২১ সালের জুনে প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেন। তিনি রাশিয়ার সামরিক বাহিনী এবং রাশিয়ার ওয়াগনার ভাড়াটে গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন যার প্রধান ছিলেন ইয়েভজেনি প্রিগোজিন। চলতি বছরের ২৩ আগস্ট রাশিয়ায় একটি বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন প্রিগোজিন।
আরও পড়ুন: কঙ্গোতে ভূমি অধিকার ও কর নিয়ে আন্তঃসাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নিহত ১০
মালিয়ান সেনাবাহিনী এই অঞ্চলে শক্তিবৃদ্ধি মোতায়েন করার পর থেকে টিমবুকটু সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো দ্বারা অবরুদ্ধ ছিল। বিদ্রোহীরা মরুভূমির শহরটিকে মৌলিক পণ্য সরবরাহ করার কাজে বাধা দিচ্ছে।
জাতিসংঘের মানবিক সংস্থার আগস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ৩০ হাজারেরও বেশি বাসিন্দা শহর এবং আশেপাশের অঞ্চল থেকে পালিয়ে গেছে।
সরকারের অনুরোধে মালি থেকে জাতিসংঘ তার ১৭ হাজার সদস্যের একটি শক্তিশালী শান্তিরক্ষা মিশন এমআইএনইউএসএমএ প্রত্যাহার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন সময়ে এই মারাত্মক হামলাগুলো ঘটে। এ বছরের শেষ নাগাদ প্রত্যাহার শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
২০১৩ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের মোতায়েন করেছিল এবং এমআইএনইউএসএমএ বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক জাতিসংঘের মিশন হয়ে উঠেছে, যেখানে ৩০০ জনেরও বেশি কর্মী নিহত হয়েছে।
মালিতে ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাহীনতা পশ্চিম আফ্রিকার অস্থির সাহেল অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা বাড়িয়েছে। ২০২০ সাল থেকে মালিতে দুটি অভ্যুত্থান হয়েছে যেখানে জিহাদি সহিংসতা বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সামরিক বাহিনী।
আরও পড়ুন: ইথিওপিয়ার আমহারা অঞ্চলে জুলাই থেকে অস্থিরতায় নিহত ১৮৩: জাতিসংঘ
দ. আফ্রিকায় একটি ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ৭৩ জনের মৃত্যু
দক্ষিণ আফ্রিকার বৃহত্তম শহর জোহানেসবার্গে একটি বহুতল ভবনে আগুন লেগে কমপক্ষে ৭৩ জন মারা গেছে।
বৃহস্পতিবার দেশটির জরুরি পরিষেবা বিভাগ এই তথ্য জানিয়েছে।
দেশটির ইমার্জেন্সি সার্ভিসের মুখপাত্র রবার্ট মুলাউদজি জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় ভোরে আগুন লেগে আরও ৪৩ জন আহত হয়েছেন। ফলে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
তিনি বলেন, অনুসন্ধান ও পুনরুদ্ধার অভিযান চলছে এবং অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা ভবনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে। উদ্ধারকারী দলটি এখন পর্যন্ত ৭৩টি লাশ বের করতে সক্ষম হয়েছে। আরও কিছু লোক ভিতরে আটকা পড়ে থাকতে পারে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ১৫তম ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে দ. আফ্রিকা যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
মুলাউদজি বলেন, নিহতদের মধ্যে অন্তত একজন শিশুও রয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগুন অনেকাংশে নিভিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে কালো হয়ে যাওয়া ভবনটির জানালা দিয়ে এখনও ধোঁয়া বেরোচ্ছে। কিছু জানালার বাইরে পর্দা এবং অন্যান্য সামগ্রীর স্ট্রিংগুলোও ঝুলছে। লোকজন নিজেদেরকে ও তাদের সম্পত্তি আগুন থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল কিনা সেটি স্পষ্ট নয়।
মুলাউদজি বলেন, ভবনটি কার্যকরভাবে একটি ‘অনানুষ্ঠানিক বাসস্থান’ যেখানে গৃহহীন লোকেরা কোনও আনুষ্ঠানিক ইজারা চুক্তি ছাড়াই বসবাস করছিলেন। তিনি বলেন, ভবনটি তল্লাশি করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিল্ডিংটিতে ২০০ জনের মতো মানুষ থাকতে পারে।
আরও পড়ুনদ. আফ্রিকায় অগ্নিকাণ্ডে ৪ বাংলাদেশি নিহত
ইথিওপিয়ার আমহারা অঞ্চলে জুলাই থেকে অস্থিরতায় নিহত ১৮৩: জাতিসংঘ
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর জানিয়েছে, ইথিওপিয়ার আমহারা অঞ্চলে গত জুলাই থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে অন্তত ১৮৩ জন নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার জাতিসংঘ দপ্তর আরও জানিয়েছে, ইথিওপিয়ায় মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে এবং অস্থিরতার কারণে চলতি মাসের শুরুতে জরুরি অবস্থা জারি করার পর এক হাজারেরও বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে।
আমহারা মিলিশিয়ার নাম উল্লেখ করে তারা বলেছে, ‘আটকদের মধ্যে অনেকেই আমহারা বংশোদ্ভূত যুবক বলে জানা গেছে, যাদের ফানোর সমর্থক বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। আগস্টের শুরু থেকে বাড়ি বাড়ি ব্যাপক তল্লাশি চলছে এবং আমহারা অঞ্চলের পরিস্থিতি কভার করার জন্য কমপক্ষে ৩ জন ইথিওপিয়ান সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে।’
আরও পড়ুন: কঙ্গোতে ভূমি অধিকার ও কর নিয়ে আন্তঃসাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নিহত ১০
জাতিসংঘের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মৌলিক সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই বন্দিদের ইমপ্রোভাইজড ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে। এতে নির্বিচারে আটক ব্যক্তিদের মুক্তি এবং কর্তৃপক্ষকে 'গণগ্রেপ্তার' বন্ধের আহ্বান জানানো হয়।
আমহারা যোদ্ধাদের দখলে থাকা শহরগুলো সামরিক বাহিনী পুনরুদ্ধার করেছে এবং মিলিশিয়া সদস্যরা গ্রামাঞ্চলে পালিয়ে যাচ্ছে বলে মানবাধিকার অফিস লড়াই বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে দেশটির এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেন, ফিনোট সেলাম সম্প্রদায়ের একটি জনবহুল শহরের স্কোয়ারে বিমান হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন। ফেডারেল সরকার এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
আরও পড়ুন: লিবিয়ায় আধা সামরিক দুই বাহিনীর সংঘর্ষে ২৭ জন নিহত
ইথিওপিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় টাইগ্রে অঞ্চলে ২ বছর ধরে চলা সংঘর্ষে আমহারা যোদ্ধারা সেনাবাহিনীর পাশাপাশি লড়াই করেছিল, যা নভেম্বরে একটি শান্তি চুক্তির মাধ্যমে শেষ হয়। সংঘাতটি আমহারা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে যখন টাইগ্রে বাহিনী এক পর্যায়ে রাজধানী আদ্দিস আবাবার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করে।
ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদের সরকার জাতিগত ভিত্তিতে প্রায়শই বিভিন্ন সংঘাত দমনের জন্য বছরের পর বছর ধরে লড়াই করে আসছে। আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম জনবহুল দেশটিকে দীর্ঘদিন ধরে হর্ন অব আফ্রিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা অংশীদার হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে সরকার সংঘাতের অপব্যবহারের সংখ্যা বোঝার জন্য জাতিসংঘের তদন্তকারীদের দ্বারা বহিরাগত প্রচেষ্টার সমালোচনা করেছে বা সীমিত করেছে।
আরও পড়ুন: মাদাগাস্কারে ইন্ডিয়ান ওশান আইল্যান্ড গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের স্টেডিয়াম বিধ্বস্ত, নিহত ১২
মাদাগাস্কারে ইন্ডিয়ান ওশান আইল্যান্ড গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের স্টেডিয়াম বিধ্বস্ত, নিহত ১২
মাদাগাস্কারের একটি স্টেডিয়াম বিধ্বস্তের ঘটনায় কমপক্ষে ১২ জন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (২৫ আগস্ট) ইন্ডিয়ান ওশান আইল্যান্ড গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ক্রীড়া অনুরাগীরা যোগ দিতে জড়ো হলে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় গণমাধ্যম এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ক্রিশ্চিয়ান এনটসে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, দুর্ঘটনায় প্রায় ৮০ জন আহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে ১১ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রাজধানী আন্তানানারিভোর মহামাসিনা স্টেডিয়ামের ওই অনুষ্ঠানে মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রি রাজোয়েলিনা উপস্থিত ছিলেন। এসময় নিহতদের জন্য কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করতে জনতাকে আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: জুয়াড়ি সন্দেহে চট্টগ্রাম স্টেডিয়াম এলাকা থেকে ৩ ভারতীয় আটক
প্রায় ৪১ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার জন্য নির্মিত স্টেডিয়ামটি এর আগেও মারাত্মক বিধ্বস্তের শিকার হয়েছিল। ২০১৮ সালে মাদাগাস্কার এবং সেনেগালের মধ্যে আফ্রিকান কাপ অব নেশনস সকার টুর্নামেন্টের জন্য বাছাইপর্বের খেলার আগে বিধ্বস্তের ঘটনায় একজন নিহত এবং কমপক্ষে ৩৭ জন আহত হয়েছিল। এছাড়াও ২০১৯ সালে ওই স্টেডিয়ামে একটি সঙ্গীত কনসার্টে পদদলিত হয়ে কমপক্ষে ১৫ জন মারা যায়।
ইন্ডিয়ান ওশান আইল্যান্ড গেমস হলো একটি বহুমাত্রিক খেলার একটি আসর, যেখানে এই অঞ্চলের দেশগুলোকে সম্পৃক্ত করা হয়। কোমোরোস, মালদ্বীপ, মৌতিরিয়াস, মায়োট, রিইউনিয়ন এবং সেশেলসের ক্রীড়াবিদরাও এই খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।
আরও পড়ুন: আফ্রিকা কাপ অব নেশনস: ক্যামেরুনে স্টেডিয়ামে পদদলিত হয়ে নিহত ৬