ইউরোপ
রুশ নিয়ন্ত্রিত জাপোরিঝঝিয়া পরমাণু কেন্দ্রে ড্রোন হামলা
রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউক্রেনের সামরিক ড্রোন দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তারা।
রবিবার এ হামলা চালানো হয়।
প্ল্যান্ট কর্তৃপক্ষের মতে, কোনো গুরুতর ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি এবং প্ল্যান্টে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা স্বাভাবিক ছিল।
রবিবার আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) বলেছে, তাদের বিশেষজ্ঞদের ড্রোন হামলা সম্পর্কে জানানো হয়েছে। এ ধরনের বিস্ফোরণ আইএইএর পর্যবেক্ষণের সঙ্গে মিলে যায়।
এ ধরনের হামলার নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থার প্রধান রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ তিনি বলেন, ‘আইএইএর ৫টি নীতির পরিপন্থী এবং পরমাণু নিরাপত্তাকে বিপন্ন করে এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি আমি।’
২০২২ সালে মস্কো ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর পর থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামরা হচ্ছে এবং কিছু সময়ের মধ্যেই দখল হয়ে যায়। সম্ভাব্য পারমাণবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কার মধ্যে ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আইএইএ বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয়ই নিয়মিতভাবে একে অপরকে প্ল্যান্টে আক্রমণ করার জন্য অভিযুক্ত করছে।
কয়েক মাস ধরে প্ল্যান্টের ৬টি চুল্লি বন্ধ থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ কুলিং সিস্টেম এবং অন্যান্য সুরক্ষা বৈশিষ্ট্যগুলো পরিচালনা করার জন্য এখনও বিদ্যুৎ সরবরাহ ও যোগ্য কর্মী প্রয়োজন রয়েছে।
আঞ্চলিক গভর্নর ওলেহ সিনিহুবভ জানিয়েছেন, রবিবার ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় খারকিভ অঞ্চলে রুশ গোলাবর্ষণে ৩ জন আহত হয়েছেন।
রাশিয়ার আঞ্চলিক গভর্নর ভিয়াচেস্লাভ গ্লাদকভ জানান, ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী রাশিয়ার বেলগোরোদ অঞ্চলে ৬ জনের একটি পরিবারকে বহনকারী গাড়ির ওপর ইউক্রেনীয় ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ পড়লে এক বালিকা নিহত ও ৪ জন আহত হয়েছে।
প্রিন্সেস ক্যাথরিনের সাহসিকতায় গর্বিত রাজা চার্লস
প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনের সাহসিকতার জন্য গর্ববোধ করেছেন রাজা চার্লস। ‘ক্যান্সারে আক্রান্ত’ হয়েছেন জানিয়ে একটি বিবৃতি দেন ক্যাথরিন। এরপর প্রিন্সেস অব ওয়েলস সম্পর্কে রাজা চার্লস এই অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
রাজা চার্লস বলেন, 'ক্যাথরিনের মতো কথা বলার সাহসের জন্য তিনি গর্বিত।’
বাকিংহাম প্যালেসের বরাতে সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বর্ধিত প্রস্টেটের চিকিৎসার পর ক্যান্সারে আক্রান্ত চার্লসের সঙ্গে এখনও তার ‘প্রিয় পুত্রবধূর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে।’
আরও পড়ুন: ক্যান্সারে আক্রান্ত রাজা চার্লস: বাকিংহাম প্যালেস
রাজপ্রাসাদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, 'এই কঠিন সময়ে পুরো পরিবারের প্রতি ভালোবাসা ও সমর্থন অব্যাহত রাখবেন দুই রাজা ও রানি।’
১৬ জানুয়ারি তার পেটে সফল অস্ত্রোপচারের পর প্রিন্সেসের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্ত্রোপচারের পর তিনি ১৩ দিন লন্ডনের একটি হাসপাতালে ছিলেন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সুস্থ হয়ে ওঠার সময় লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান।
গত সপ্তাহে স্বামী প্রিন্স উইলিয়ামের সঙ্গে কেট একটি খামারের দোকানে গেলে জানুয়ারির পর প্রথমবারের মতো জনসম্মুখে দেখা যায় তাকে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সঙ্গে শক্তিশালী, ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্ব চান রাজা চার্লস
প্রিন্সেস ক্যাথরিন ক্যান্সার থেকে সুস্থ হয়ে উঠবেন, প্রিন্স হ্যারি-মেগানের আশা
প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিন তার ক্যান্সার শনাক্তের ঘোষণা দেওয়ার পর ‘সুস্থতা ও রোগমুক্তি’ কামনা করেছেন ডিউক প্রিন্স হ্যারি ও ডাচেস অব সাসেক্স মেগান।
তাদের বিবৃতির বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিস জানায়, ক্যাথরিন ও তার পরিবার 'ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করে শান্তিপূর্ণভাবে' সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রিন্স হ্যারি ও মেগান।
কয়েক মাস ধরে ভীষণ কঠিন সময় পার করার পর শুক্রবার (২২ মার্চ) ক্যাথরিন জানান, তিনি ‘ভালো’ আছেন এবং ‘প্রতিদিন তার অবস্থা আরও ভালো হচ্ছে’।
তবে ক্যান্সারের সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। কেনসিংটন প্যালেসের খবরে বলা হয়েছে, প্রিন্সেস পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে নিশ্চিত।
জানুয়ারিতে ক্যাথরিনের পেটে অস্ত্রোপচার হয়েছিল। যদিও সেসময় ক্যান্সারের উপস্থিতি জানা যায়নি।
পরীক্ষার পরে ক্যান্সারের উপস্থিতির কথা জানানো হয়েছিল।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যের পদ থেকে সরে দাঁড়ান হ্যারি ও মেগান।
ছেলে আর্চিকে বড় করার জন্য আরও জায়গার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তারা জুনে ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে যান। পরের বছর দ্বিতীয় সন্তান লিলিবেটের জন্ম হয়।
রাজা চার্লসও সম্প্রতি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং হ্যারি চিকিৎসা শুরু করার ঠিক একদিন পরে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে তার বাবার সঙ্গে দেখা করতে লন্ডনে গিয়েছিলেন। তবে সে সময় তিনি তার বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করেননি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রাজকীয় দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে ভাইয়ের সঙ্গে হ্যারির সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে।
বড় ভাই উইলিয়ামের সঙ্গে নিজের মনোমালিন্যের কথা ‘স্পেয়ার' বইয়ে লিখেছেন হ্যারি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই ভাইকে খুব কমই একসঙ্গে দেখা গেছে।
গাজা-ইউক্রেন বিষয়ে 'দ্বৈত নীতি' পরিহার করতে ইইউর প্রতি জাতিসংঘ মহাসচিবের আহ্বান
ইউক্রেনকে সমর্থন করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি যেমন শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা, ঠিক একইভাবে মারাত্মক খাদ্য ঘাটতিতে থাকা লাখ লাখ ফিলিস্তিনি এবং দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে থাকা গাজার ক্ষেত্রে একই ধরনের মনোভাব প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
বৃহস্পতিবার(২১ মার্চ) ব্রাসেলসে ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনে বর্ণিত মানদণ্ডের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে দৃঢ় ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের মূল নীতি হচ্ছে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়া। ইইউ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেলের পাশে দাঁড়িয়ে গুতেরেস সাংবাদিকদের বলেন, ইউক্রেনের মতো গাজাতেও আমাদের অবশ্যই নীতিতে অটল থাকতে হবে।
জাতিসংঘের খাদ্যবিষয়ক একটি সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, গাজার উত্তরাঞ্চলে দুর্ভিক্ষ আসন্ন। এদিকে, ইসরায়েল দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহয় স্থল আক্রমণ শুরু করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে মনে হচ্ছে, যেখানে অনেক লোক যুদ্ধ থেকে বাঁচতে আশ্রয় নিয়েছে।
আরও পড়ুন: কয়েক মাস ধরে দুর্ভিক্ষের সতর্কতার পর গাজায় বাড়তে শুরু করেছে শিশুদের মৃত্যু
২৭ জাতির ইইউ দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে গভীরভাবে বিভক্ত। ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের বিধ্বংসী হামলা এই বিভক্তির সৃষ্টি করেছে। তবে গাজায় নিহতের সংখ্যা প্রায় ৩২ হাজার বেড়ে যাওয়ায় আরও অনেক দেশ যুদ্ধবিরতির আহ্বানকে সমর্থন করছে।
অন্যদিকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধকে অস্তিত্বের হুমকি হিসেবে দেখছে প্রায় পুরো জোট। তারা দেশটিকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সহায়তা করার জন্য শত শত কোটি ইউরো ঢালছে জোটটি।
আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী লিও ভারাদকার বলেছেন, 'ফিলিস্তিনের ভয়াবহ সংকট মোকাবিলা ইউরোপের জন্য মোটেও উপযুক্ত সময় ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এটি ইউক্রেনকে রক্ষার জন্য আমাদের প্রচেষ্টাকে হ্রাস করছে কারণ গ্লোবাল সাউথের অনেক দেশ ইউক্রেন ও ফিলিস্তিনের বিষয়ে ইউরোপের পদক্ষেপকে দ্বৈত অবস্থান হিসাবে ব্যাখ্যা করে। আমি মনে করি, এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি আছে।’
বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডি ক্রু গাজায় ঘটে যাওয়া ঘটনাকে 'নাটকীয়' বলে বর্ণনা করেছেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা আজ এমন মানুষদেরও দেখতে পাচ্ছি যারা ঘাস খেয়ে নিজেদের পেট ভরানোর চেষ্টা করছে। যারা দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। ইউরোপকে নেতৃত্ব দিতে হবে, অনুসরণ করা নয়। আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করার সময় এসেছে: অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি দাবি করা, জিম্মিদের মুক্তির দাবি করা।’
শীর্ষ সম্মেলনের উপসংহারে নেতারা ‘বেসামরিক মানুষের নজিরবিহীন প্রাণহানি এবং গুরুতর মানবিক পরিস্থিতি’ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ইউরোপীয় কাউন্সিল অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানিয়েছে, যার ফলে একটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতি হবে।
আরও পড়ুন: যুদ্ধবিরতি আলোচনা থমকে যাওয়ায় গাজায় ত্রাণের জন্য আলোচনায় সমুদ্রপথ
জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলছেন, ইসারায়েল-হামাস যুদ্ধ গাজার ২৩ লাখ ফিলিস্তিনির জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ তাদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত হয়েছেন। জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ ক্ষুধার্ত রয়েছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজা থেকে শুরু হওয়া অতর্কিত হামলায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা প্রায় ১২০০ জন ইসরাইলিকে হত্যা করে এবং আরও ২৫০ জনকে অপহরণ করে। হামাস এখনও প্রায় ১০০ জনকে জিম্মি করে রেখেছে বলে মনে করা হয়। পাশাপাশি আরও ৩০ জনের লাশও তাদের জিম্মায় রয়েছে।
মিশর সীমান্তের কাছে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহয় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আসন্ন স্থল অভিযানের বিষয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এটি এমন একটি পরিকল্পনা যা সেখানে আশ্রয় নেওয়া কয়েক হাজার বেসামরিক নাগরিকের ক্ষতির আশঙ্কায় বিশ্বে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
আরও পড়ুন: বড় বাধার মুখে ফিলিস্তিনের নতুন প্রধানমন্ত্রীর সংস্কারের পরিকল্পনা
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, রাফাহয় অভিযান না চালিয়ে হামাসের বিরুদ্ধে 'সম্পূর্ণ বিজয়ের' লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না ইসরায়েল।
ইইউ নেতারা ইসরায়েলি সরকারকে রাফাহতে স্থল অভিযান থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এটি 'এরই মধ্যে মানবিক বিপর্যয়ের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পরিণত হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় মৌলিক সেবা ও মানবিক সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে।’
ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস রবিবার দেশটি সফর করে বলেছেন, 'আমরা রাফাহয় বড় ধরনের আগ্রাসনের পক্ষে নই। আমি নিজেই ইসরায়েলে এটির ওপর জোর দিয়েছি। আমরা আশা করি যে এখন একটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতি সম্ভব হবে। সমস্ত জিম্মির মুক্তি এবং নিহতদের লাশ হস্তান্তর করা হবে।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেন, 'গাজায় আজ যা ঘটছে তা মানবতা রক্ষার ব্যর্থতা। এটা কোনো মানবিক সংকট নয়। এটা মানবতার ব্যর্থতা।’
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'এটা ভূমিকম্প নয়, বন্যা নয়। এটা বোমা হামলা।’
আরও পড়ুন: গাজায় দুর্ভিক্ষ ‘আসন্ন’, উত্তরাঞ্চলের প্রধান হাসপাতালে আবারও ইসরায়েলি হামলা
রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণ শুরুর পর ৩১ হাজার ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হয়েছে: জেলেনস্কি
রাশিয়া পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণ শুরু করার পর থেকে গত দুই বছরে ৩১ হাজার ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
রবিবার(২৬ ফেব্রুয়ারি) কিয়েভ ফোরামে ‘ইউক্রেন ইয়ার-২০২৪’ -এ এই তথ্য জানান প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
জেলেনস্কি বলেন, এই সংখ্যা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সরকারের দেওয়া অনুমানের চেয়ে অনেক কম।
তিনি বলেন, ‘এই যুদ্ধে ৩১ হাজার ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হয়েছে। তিন লাখ বা দেড় লাখ নয়, বরং পুতিন ও তার প্রতারক চক্র যা বলছে তা মিথ্যা। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমাদের এই প্রতিটি ক্ষতি একটি মহান ত্যাগ।’আরও পড়ুন: রুশ অধিকৃত ইউক্রেনের বাজারে গোলাবর্ষণে নিহত ১৩
ইউক্রেনের এই নেতা বলেন, কতজন সেনা আহত বা নিখোঁজ হয়েছেন তা তিনি প্রকাশ করবেন না। তিনি আরও বলেছিলেন যে ইউক্রেনের অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে ‘কয়েক হাজার বেসামরিক নাগরিক’ নিহত হয়েছে, তবে যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সঠিক কোনও পরিসংখ্যান পাওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, ‘আমরা জানি না তারা আমাদের কতজন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে। আমরা জানি না।’
আরও পড়ুন: রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সমর্থন দিতে ইউক্রেনে ৮০০টিরও বেশি ড্রোন পাঠাবে কানাডা
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই প্রথম কিয়েভ ইউক্রেনের ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যা নিশ্চিত করল।
তবে হতাহতের আনুষ্ঠানিক কয়েকটি পরিসংখ্যান জানিয়েছে রাশিয়া। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিকতম তথ্যে ৬ হাজারের বেশি মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের প্রতিবেদনে এই সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে প্রকাশিত মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ধারণা করা হয়েছিল যে ইউক্রেনে ৩ লাখ ১৫ হাজার রুশ সেনা নিহত বা আহত হয়েছে। যদি এই সংখ্যা সঠিক হয়, তাহলে যুদ্ধের আগে রাশিয়ার কাছে থাকা ৩ লাখ ৬০ হাজার সেনার ৮৭ শতাংশই হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
রাশিয়ার স্বাধীন সংবাদমাধ্যম মিডিয়াজোনা শনিবার জানিয়েছে, ২০২২ ও ২০২৩ সালে যুদ্ধে প্রায় ৭৫ হাজার রুশ পুরুষ নিহত হয়েছেন।
রাশিয়ার আরেক স্বাধীন সংবাদ মাধ্যম মিডিয়াজোনা ও মেদুজা প্রকাশিত এক যৌথ তদন্তে দেখা গেছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্ষয়ক্ষতির হার কমছে না এবং মস্কো দৈনিক প্রায় ১২০ জন করে সেনাকে হারাচ্ছে।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী আজ রাতে ঢাকায় যাত্রাবিরতি করবেন
রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সমর্থন দিতে ইউক্রেনে ৮০০টিরও বেশি ড্রোন পাঠাবে কানাডা
কানাডার সরকার সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বলেছে, তারা এই বসন্তের শুরু থেকেই ইউক্রেনে ৮০০টিরও বেশি ড্রোন পাঠাবে।
ডিপার্টমেন্ট অব ন্যাশনাল ডিফেন্স এক বিবৃতিতে বলেছে, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইউক্রেনের জন্য ড্রোন গুরুত্বপূর্ণ সক্ষমতা হয়ে উঠেছে। ড্রোনগুলো নজরদারি ও তথ্য সংগ্রহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং যুদ্ধাস্ত্রসহ সরবরাহ স্থানান্তরের জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে।
এগুলোর জন্য ৯৫ মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলারের (৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বেশি খরচ হবে এবং এগুলো ইউক্রেনের জন্য পূর্বে ঘোষিত ৫০০ মিলিয়ন কানাডিয়ান (৩৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) সামরিক সহায়তার অংশ।
আরও পড়ুন: ক্রেমলিনের শত্রু অ্যালেক্সেই নাভালনির মৃত্যু পশ্চিমা ক্ষোভকে উস্কে দিয়েছে, তবে পুতিনকে থামানো যায়নি
স্কাইরেঞ্জার আর৭০ মাল্টি-মিশন মানবহীন এরিয়াল সিস্টেমগুলো অন্টারিও প্রদেশের ওয়াটারলুতে অবস্থিত টেলিডাইন-এর তৈরি।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের দুই বছর পূর্তির কয়েকদিন আগে এই ঘোষণা এলো।
কানাডা এর আগে ইউক্রেনকে ১০০টি উচ্চ-রেজুলেশনের ড্রোন ক্যামেরা দিয়েছিল এবং গত দুই বছরে সামরিক সহায়তায় ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার (১ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
আরও পড়ুন: রুশ অধিকৃত ইউক্রেনের বাজারে গোলাবর্ষণে নিহত ১৩
ইউক্রেনে ক্যাফেতে রুশ হামলায় ৫১ জন নিহত
ক্রেমলিনের শত্রু অ্যালেক্সেই নাভালনির মৃত্যু পশ্চিমা ক্ষোভকে উস্কে দিয়েছে, তবে পুতিনকে থামানো যায়নি
ক্রেমলিনের প্রধান শত্রু অ্যালেক্সেই নাভালনির মৃত্যুতে বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পশ্চিমা ক্ষোভের প্রতি কান দিচ্ছেন না। কারণ তিনি আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে তার ২৪ বছরের শাসনের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং রাশিয়াজুড়ে পুলিশ যেকোনো প্রতিবাদ প্রচেষ্টা দমন করছে।
নাভালনির মৃত্যু ও ইউক্রেনে ক্রেমলিনের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। কিন্তু ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সহায়তা কংগ্রেসে আটকে রয়েছে এবং ইউরোপে ন্যাটো মিত্ররা শূন্যস্থান পূরণের জন্য লড়াই করছে। তাই অনেকে ভাবছেন যে পশ্চিমারা ক্রেমলিনের নির্মম নেতাকে থামাতে আসলে কী করতে পারবে? কারণ এর আগে একাধিক বার তাকে শাস্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছে তারা।
লন্ডনভিত্তিক মায়াক ইন্টেলিজেন্স কনসালটেন্সি ফার্মের প্রধান মার্ক গালিওটি ইউটিউব মন্তব্যে উল্লেখ করেছেন, ‘রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোনো বড় মূল্য নেই।’ কারণ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নিষেধাজ্ঞা পাওয়া দেশগুলোর একটি দেশ হলো রাশিয়া।
গালিওত্তি বলেন, এর পরিবর্তে পশ্চিমাদের উচিত নাভালনির মিত্রদের সঙ্গে কাজ করা এবং ক্রেমলিনের প্রচারণা মোকাবিলায় সাধারণ রুশদের তথ্য চ্যানেলে প্রবেশাধিকার পেতে সহায়তা করা।
নাভালনির মৃত্যুকে পুতিনের 'হাইব্রিড কর্তৃত্ববাদ' থেকে 'নৃশংস ও ধ্বংসাত্মক স্বৈরতন্ত্র'তে রূপান্তরের আরেকটি পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন গালিওত্তি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো মিত্ররা ইউক্রেনের পক্ষে সমর্থন জোরদার করার জন্য আরও পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করছে। যেখানে রাশিয়ান সামরিক বাহিনী চার মাসের ভয়াবহ লড়াইয়ের পরে ইউক্রেনীয় সেনাদের মূল পূর্বাঞ্চলীয় শক্ত ঘাঁটি আভদিভকা থেকে পিছু হটতে বাধ্য করেছে। মিত্ররা রাশিয়ার কাছে যুদ্ধের ব্যয় বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করেছে যাতে পুতিনকে পিছু হটতে বাধ্য করা যায়।
তবে ৭১ বছর বয়সী নেতা তার কোনো অর্জন ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে গত সপ্তাহে ফক্স নিউজের সাবেক উপস্থাপক টাকার কার্লসনের কাছে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, পশ্চিমারা তার শর্তে 'আজ হোক বা কাল হোক' কোনো না কোনো চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে বাধ্য হবে।
বেলারুশে সাবেক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ও লন্ডনের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের রাশিয়া ও ইউরেশিয়াবিষয়ক সিনিয়র ফেলো নাইজেল গোল্ড-ডেভিস বলেন, নাভালনির মৃত্যু পুতিনের 'সম্পূর্ণ নির্মমতা ও অবজ্ঞা... পশ্চিমা ও আন্তর্জাতিক উভয় পরিপ্রেক্ষিতে।’
শুক্রবার মিউনিখে এক নিরাপত্তা সম্মেলনে পশ্চিমা নেতারা জড়ো হওয়ার পর নাভালনির মৃত্যুর ঘোষণা দেয় রাশিয়া।
গোল্ড-ডেভিস বলেন, পুতিন ‘পশ্চিমাদের উদ্দেশে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। আমরা যখন (ইউক্রেন) যুদ্ধের দ্বিতীয় বার্ষিকীতে দাঁড়িয়ে আছি, তিনি আবারও পশ্চিমা সংকল্পের পরীক্ষা নিচ্ছেন।’
গোল্ড-ডেভিস বলেন, নাভালনির মৃত্যু কংগ্রেসে ইউক্রেনের জন্য সহায়তার বিরোধিতা করা মার্কিন রিপাবলিকানদের জন্য "জেগে ওঠার আহ্বান" হিসেবে কাজ করা উচিত। একই সঙ্গে ইউরোপীয় ন্যাটো মিত্রদের ইউক্রেনকে তাদের সহায়তা জোরদার করতে উৎসাহিত করা উচিত।
তিনি বলেন, 'শেষ পর্যন্ত এটা নির্ভর করছে পশ্চিমারা কী শিক্ষা নেয় তার ওপর।’
কিন্তু নাভালনির মৃত্যু শুক্রবার মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকারকে ইউক্রেনের জন্য প্রস্তাবিত ৬১ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্যাকেজের প্রতিশ্রুতি দিতে উদ্বুদ্ধ করেনি, যা ইউক্রেনের বিজয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে, সোভিয়েত একনায়ক জোসেফ স্ট্যালিনের পর সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা রুশ নেতা পুতিন ক্রেমলিনবান্ধব দলগুলোর মনোনীত তিন প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। আরও ছয় বছরের জন্য ক্ষমতায় আসছেন তিনি। উদারপন্থী রাজনীতিবিদ বরিস নাদেজদিন, যিনি ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানকে তার প্রধান নির্বাচনি স্লোগান বানিয়েছিলেন, নির্বাচনি কর্মকর্তারা তাকে নির্বাচনে অংশ নিতে নিষেধ করেছিলেন।
‘নির্বাচনে পুতিনের জয় নিয়ে সংশয় না থাকলেও নাভালনির মৃত্যু প্রমাণ করে 'তিনি নাভালনিকে কতটা হুমকি হিসেবে দেখছেন', বলেন গোল্ড-ডেভিস।
তিনি আরও বলেন, ‘ক্রেমলিন এখন পর্যন্ত যেভাবে নির্বাচনি প্রচার চালিয়েছে তাতে বোঝা যায় যে তারা আত্মবিশ্বাসী নয়। এমনকি কারাগার থেকেও নাভালনি তার কণ্ঠস্বর বের করতে সক্ষম হয়েছেন।’
গোল্ড-ডেভিস বলেন, ১৫-১৭ মার্চের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে নাভালনির মৃত্যু সম্ভবত ভোটের আগে 'রাশিয়ার বিরোধীদের যেকোনো চিহ্নকে মুছে ফেলা ও চূর্ণ করার চূড়ান্ত কাজ' হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল।
কার্নেগি রাশিয়া ইউরেশিয়া সেন্টারের জ্যেষ্ঠ ফেলো তাতিয়ানা স্তানোভায়া বলেন, আগামী মাসে নিশ্চিত বিজয় সত্ত্বেও পুতিন এখনও নির্বাচনে পশ্চিমা হস্তক্ষেপের আশঙ্কা করছেন এবং নাভালনিকে 'জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থ ক্ষুণ্ন করার জন্য পশ্চিমাদের দ্বারা চালিত প্রতিপক্ষ' হিসেবে দেখেন।
একটি মন্তব্যে তিনি লিখেছেন, ‘তিনি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করেন যে পশ্চিমারা স্থিতিশীলতা হ্রাস করতে এবং তার প্রচারের রাজনৈতিক ক্ষতি করতে এই মুহূর্তটি ব্যবহার করবে।’
তিনি আরও লেখেন, ‘এটি তাকে যেকোনো প্রতিকূল প্রকাশের বিরুদ্ধে আরও কঠোর, আরও দমনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে বাধ্য করবে, যা তিনি এসব হস্তক্ষেপের বহিরাগত প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত করতে পারেন। এটি বিশেষ করে গণমাধ্যম ও সামাজিক নেটওয়ার্কগুলোর উপর হস্তক্ষেপ করতে পারে।’
৪৭ বছর বয়সি নাভালনি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে পুতিনের জন্য বড় হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। ২০১১-২০১২ সালে মস্কোতে পুতিনের শাসনের বিরুদ্ধে রাস্তায় ব্যাপক বিক্ষোভ জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। সরকারের দুর্নীতি উন্মোচন করার জন্য সফল প্রচার চালিয়েছিলেন।
গালেওত্তি বলেন, অনেক রুশ নাগরিকের কাছে নাভালনি ছিলেন আশার প্রতীক। এমনকি প্রত্যন্ত আর্কটিক কারাগার থেকেও “ভবিষ্যতের সুন্দর রাশিয়ার” একটি দর্শন পৌঁছে দিয়েছিলেন। রাশিয়ানদের প্রতি ক্রেমলিনের বার্তা "কেবল বেঁচে থাকুন, কেবল আপনার মাথা নিচু রাখুন” অগ্রাহ্য করে এটি একটি স্লোগান ছিল।
২০২০ সালে নাভালনি সাইবেরিয়ায় নার্ভ এজেন্টের বিষক্রিয়া থেকে অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিলেন, যার জন্য তিনি ক্রেমলিনকে দায়ী করেছিলেন। তিনি জার্মানিতে সুস্থ হয়ে উঠলেও ২০২১ সালের জানুয়ারিতে দেশে ফেরার পরপরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তিনি কারাগারে ছিলেন, চরমপন্থার অভিযোগে তিনবার দোষী সাব্যস্ত হন এবং ১৯ বছরের কারাদণ্ড দেওেয়া হয় তাকে।
নাভালনির মৃত্যুর বিষয়ে পুতিন কোনো মন্তব্য করেননি এবং ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ ক্রেমলিনকে দায়ী করে পশ্চিমা নেতাদের বিবৃতিকে 'জঘন্য ও অগ্রহণযোগ্য' বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
কিন্তু পশ্চিমা নেতারা ক্রেমলিনের এ ধরনের যেকোনো মন্তব্যকে সন্দেহের চোখে দেখছেন। যেমন সন্দেহের চোখে দেখছেন ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে সৈন্যদের সংক্ষিপ্ত বিদ্রোহের দুই মাস পর ভাড়াটে সেনাপ্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের বিমান দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার বিষয়টি। গত আগস্টের এই দুর্ঘটনাকে ব্যাপকভাবে বিদ্রোহের জন্য ক্রেমলিনের প্রতিশোধ হিসেবে দেখা হয়েছিল। ২০০০ সালে তার প্রথম নির্বাচনের পর থেকে পুতিনের শাসনের জন্য সবচেয়ে গুরুতর চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল এটি।
গোল্ড-ডেভিস বলেন, ‘প্রিগোজিনের মৃত্যুর মতোই নাভালনির মৃত্যুও প্রমাণ করে পুতিন কত নির্মম।’
রাজা তৃতীয় চার্লসের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ যত ঘটনা
এক অজানা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লস। বাকিংহাম প্যালেস জানিয়েছে, ৭৫ বছর বয়সী রাজা রাজপ্রাসাদের বাইরে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেওয়া শুরু করেছেন।
রাজা তৃতীয় চার্লসের জীবনে ঘটে যাওয়া নানা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা রয়েছে। সেসব ঘটনার কিছু অংশ আজ পাঠকদের সামনে তুলে হলো-
রাজা তৃতীয় চার্লস ১৯৪৮ সালের ১৪ নভেম্বর প্রিন্সেস এলিজাবেথ ও প্রিন্স ফিলিপের প্রথম সন্তান স্যান্ড্রিংহামের রাজকীয় এস্টেটে জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তার বাবা রাজা ষষ্ঠ জর্জের মৃত্যুর পর প্রিন্সেস এলিজাবেথ হয়ে যান রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
এরপর চার্লস আনুষ্ঠানিকভাবে প্রিন্স অব ওয়েলস হিসেবে অভিষিক্ত হন ১৯৬৯ সালের ১ জুলাই।
১৯৮১ সালের ২৯ জুলাই তিনি লেডি ডায়ানা স্পেন্সারকে বিয়ে করেন। ১৬৬০ সালের পর তিনিই প্রথম রাজকীয় উত্তরাধিকারী হিসেবে একজন ইংরেজ নারীকে বিয়ে করেন।
১৯৮২ সালের ২১ জুন প্রথম পুত্র উইলিয়াম আর্থার ফিলিপ লুইয়ের জন্মের মধ্য দিয়ে বাবা হওয়ার আনন্দ উপভোগ করেন তিনি।
প্রায় দুই বছর পর ১৯৮৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় পুত্র হ্যারির (হেনরি চার্লস আলবার্টের ডেভিড) জন্ম হয়।
আরও পড়ুন: কমনওয়েলথ লিডার্স ইভেন্টে রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে মতবিনিময় প্রধানমন্ত্রীর
১৯৯২ সালের ১৫ জুন অ্যান্ড্রু মর্টনের বই 'ডায়ানা: হার ট্রু স্টোরি'তে বলা হয়, ক্যামিলা পার্কার বোলস নামে এক বিবাহিত নারীর সঙ্গে চার্লসের দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
১৯৯২ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়।
১৯৯৬ সালের ২৮ আগস্ট চার্লস ও ডায়ানার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।
১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট প্যারিসে গাড়ি দুর্ঘটনায় নিহত হন ডায়ানা।
২০০৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ক্যামিলা পার্কার বোলসকে বিয়ে করার জন্য বাগদানের ঘোষণা দেন চার্লস।
২০০৫ সালের ৮ এপ্রিল তিনি একটি নাগরিক অনুষ্ঠানে ক্যামিলাকে বিয়ে করেন; তিনি ডাচেস অব কর্নওয়াল উপাধি গ্রহণ করেন।
২০১১ সালের ২৯ এপ্রিল তার ছেলে প্রিন্স উইলিয়াম কেট মিডলটনকে বিয়ে করেন। একই বছরের ডিসেম্বর ব্লক করোনারি ধমনীর চিকিৎসার জন্য চার্লসকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আরও পড়ুন: শপথ নিয়ে মাথায় রাজমুকুট পড়লেন ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস
২০১৩ সালের জুনে পেটে অপারেশনের জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একই বছরের ২২ জুলাই উইলিয়াম ও কেটের জ্যেষ্ঠ সন্তান প্রিন্স জর্জের জন্মের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো দাদা হন তিনি। এই দম্পতির শার্লট ও লুইস নামে আরও দুই সন্তান রয়েছে।
২০১৮ সালের ১৯ মে তার দ্বিতীয় ছেলে হ্যারি মার্কিন অভিনেত্রী মেগান মার্কেলকে বিয়ে করেন।
২০০৫ সালের ৮ এপ্রিল তিনি একটি নাগরিক অনুষ্ঠানে ক্যামিলাকে বিয়ে করেন; তিনি ডাচেস অব কর্নওয়াল উপাধি গ্রহণ করেন।
২০১১ সালের ২৯ এপ্রিল তার ছেলে প্রিন্স উইলিয়াম কেট মিডলটনকে বিয়ে করেন। একই বছরের ডিসেম্বরে ব্লক হওয়া করোনারি ধমনীর চিকিৎসার জন্য চার্লসকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এর মাত্র দু’বছর পর ২০১৩ সালের জুনে পেটে অপারেশনের জন্য আবারও তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
২০২১ সালের ৯ এপ্রিল চার্লসের বাবা প্রিন্স ফিলিপ ৯৯ বছর বয়সে মারা যান।
আরও পড়ুন: ব্রিটিশ সিংহাসনে আরোহণে তৃতীয় চার্লসকে রাষ্ট্রপতির অভিনন্দন
২০২২ সালের ১০ মে চার্লস প্রথমবারের মতো রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্থলাভিষিক্ত হন। তিনি চলাফেরার সমস্যার কারণ দেখিয়ে অনুষ্ঠান থেকে সরে দাঁড়ান। রানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলোর মধ্যে একটি হলো এই প্রতিনিধত্ব করা। সেসময় এমন কার্যকলাপ রাজতন্ত্রের একটি রূপান্তর চলছে বলেই অনেকে ধারণা করেছিল।
২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর মা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর রাজা হন চার্লস।
২০২৩ সালের ৬ মে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে এক অনুষ্ঠানে রানি ক্যামিলার সঙ্গে তাকে মুকুট পরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ২০২৩ সালের ২৯ মার্চ রাজা হিসেবে প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে বার্লিন যান চার্লস। একই বছরের ৭ নভেম্বর পার্লামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো রাজার ভাষণ দেন তিনি।
২০২৪ সালের ২৬ জানুয়ারি বর্ধিত প্রস্টেটের চিকিৎসার জন্য তিন দিন থাকার জন্য লন্ডনের একটি হাসপাতালে প্রবেশ করেন চার্লস।
চার্লস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করে বাকিংহাম প্যালেস। রাজপ্রাসাদের বাইরে বহির্বিভাগের রোগী হিসেবে তিনি চিকিৎসা নেবেন বলেও জানানো হয়।
আরও পড়ুন: ক্যান্সারে আক্রান্ত রাজা চার্লস: বাকিংহাম প্যালেস
ক্যান্সারে আক্রান্ত রাজা চার্লস: বাকিংহাম প্যালেস
বাকিংহাম প্যালেসের পক্ষ থেকে সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) জানানো হয়েছে, রাজা তৃতীয় চার্লস এক ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন এবং তার চিকিৎসা শুরু হয়েছে।
বাকিংহাম প্যালেস বলছে, রাজার সাম্প্রতিক প্রোস্টেট চিকিৎসার সঙ্গে ক্যান্সারের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে ৭৫ বছর বয়সী রাজা কি ধরনের ক্যান্সার হয়েছে তা জানানো হয়নি।
প্যালেস বলেছে, গত মাসে প্রোস্টেট বেড়ে যাওয়ায় চার্লসের চিকিৎসার সময় ‘উদ্বেগজনক পৃথক একটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছিল’। ডায়াগনস্টিক পরীক্ষায় ক্যান্সারের একটি রূপ শনাক্ত হয়েছে।
প্রাসাদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মহামান্য রাজার আজ নিয়মিত চিকিৎসার সময়সূচি ছিল। তখন ডাক্তাররা তাকে জনসাধারণের মুখোমুখি হতে হয় দায়িত্ব থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন। এই সময়ের মধ্যে মহামান্য রাজা যথারীতি রাষ্ট্রীয় বিষয় ও সরকারি কাগজপত্র গ্রহণ করতে থাকবেন।’
এতে আরও বলা হয়, চার্লস তার চিকিৎসা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ইতিবাচক রয়েছেন এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সম্পূর্ণ তার দায়িত্বে ফিরে আসার প্রত্যাশায় রয়েছেন।
আরও পড়ুন: শপথ নিয়ে মাথায় রাজমুকুট পড়লেন ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস
রাজা তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
চেক প্রজাতন্ত্রের প্রাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্দুকধারীর গুলিতে ১৪ জন নিহত
চেক প্রজাতন্ত্রের প্রাগের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রের গুলিতে অন্তত ১৪ জন নিহত এবং ২০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) এই হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
প্রাগের পুলিশ প্রধান মার্টিন ভন্ড্রাসেক জানিয়েছেন, চার্লস ইউনিভার্সিটির দর্শন বিভাগের ভবনে এই হামলার ঘটনা ঘটে। বন্দুকধারীও নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে তার নাম প্রকাশ করা হয়নি।
ভন্ড্রাসেক গতকাল সন্ধ্যায় বলেছেন ১৪ জন মারা গেছেন এবং ২৫ জন আহত হয়েছেন। এর আগে বলেছিলেন ১৫ জন মারা গেছেন এবং ২৪ জন আহত হয়েছেন। কিন্তু, নিহতের সংখ্যা পরিবর্তনের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেননি তিনি। তবে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ নিহতদের সম্পর্কে বা জান পালাচ স্কোয়ারের ভ্লতাভা নদীর কাছের ভবনে গুলি চালানোর সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে কোনও বিবরণ দেয়নি।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভিট রাকুসান বলেছেন, তদন্তকারীরা কোনও চরমপন্থী মতাদর্শ বা গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করছেন না।
ভন্ড্রাসেক বলেন, পুলিশ বিশ্বাস করে যে বন্দুকধারী বৃহস্পতিবার সকালে প্রাগের পশ্চিমে তার শহর হোস্তৌনে তার বাবাকে হত্যা করেছিল এবং তিনি আত্মহত্যার পরিকল্পনাও করেছিলেন। তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।
পরে বৃহস্পতিবার ভন্ড্রাসেক বলেন, তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বন্দুকধারীকে ১৫ ডিসেম্বর প্রাগে আরেক ব্যক্তি ও তার দুই মাস বয়সী মেয়েকে হত্যার ঘটনায় সন্দেহ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে হাইস্কুলে বন্দুক হামলায় নিহত ২, আহত ৫
পুলিশ প্রধান বন্দুকধারীকে একজন চমৎকার ছাত্র হিসাবে বর্ণনা করেছেন যার কোনও অপরাধের রেকর্ড নেই, তবে অন্য কোনও তথ্য সরবরাহ করেননি।
ভন্ড্রাসেক বলেন, বন্দুকধারী 'মারাত্মক আঘাত' পেয়েছেন। তবে তিনি আত্মহত্যা করেছেন নাকি কর্মকর্তাদের সঙ্গে গুলি বিনিময়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন তা পরিষ্কার নয়।’ ‘তার কোনও সহযোগী ছিল বলে মনে করার মতো কিছুই নেই।’
ভন্ড্রাসেক বলেন, বন্দুকধারীর কাছে আইনত বেশ কয়েকটি বন্দুক ছিল। পুলিশ বলেছে, বৃহস্পতিবার তিনি ভারী সশস্ত্র ছিলেন এবং প্রচুর গোলাবারুদ বহন করছিলেন। তিনি যা করেছিলেন তা ‘সুচিন্তিত একটি ভয়ঙ্কর কাজ’।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ভবনে নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
চার্লস ইউনিভার্সিটি এক বিবৃতিতে বলেছে, 'আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কমিউনিটির সদস্যদের প্রাণহানির ঘটনায় আমরা শোক প্রকাশ করছি, শোকসন্তপ্ত দের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি এবং যারা এই মর্মান্তিক ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ফের নিহত ২