মধ্যপ্রাচ্য
সৌদি আরবে আজ রোজা শুরু
সৌদি আরবে রবিবার(১০ মার্চ) সন্ধ্যায় পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেছে। তাই আজ সোমবার (১১ মার্চ) পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে।
এর আগে মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখার আহ্বান জানিয়েছিল সৌদি আরব। খালি চোখে বা দূরবীন দিয়ে যারাই অর্ধচন্দ্র দেখবেন, তাঁদের নিকটস্থ আদালতে রিপোর্ট করতে এবং পর্যবেক্ষণ নথিভুক্ত করতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট।
অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও ব্রুনাইসহ আরও কয়েকটি দেশ ১২ মার্চ থেকে রমজান মাস হিসেবে ঘোষণা করেছে।
ওমানও ঘোষণা দিয়েছে যে তারা ১২ মার্চ, মঙ্গলবার পবিত্র রমজান মাস শুরু করবে, কারণ রবিবার সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা যায়নি।
যুদ্ধবিরতি আলোচনা থমকে যাওয়ায় গাজায় ত্রাণের জন্য আলোচনায় সমুদ্রপথ
অবরুদ্ধ গাজার ২৩ লাখ মানুষের মধ্যে খাদ্য সংকট ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগ বাড়ার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ একটি সমুদ্রপথ খুলে দিতে চাইছে, যা গাজায় মানবিক ত্রাণ পৌঁছে দেবে।
তবে ত্রাণ কর্মকর্তারা বলছেন, স্থলপথে ট্রাক পাঠানোর চেয়ে জাহাজ বা সাম্প্রতিক এয়ারড্রপের মাধ্যমে সরবরাহ অনেক বেশি ব্যয়বহুল এবং অপর্যাপ্ত।
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুক্রবার গাজায় এয়ারড্রপ কার্যক্রমে বিপর্যয় ঘটে তা নিচে থাকা মানুষদের আঘাত করে এবং বাড়িঘরের উপর পড়ে। এতে ৫ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হন।
পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের পর গাজার বেশির ভাগ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
জাতিসংঘ বলছে, দেশটির এক-চতুর্থাংশ মানুষ অনাহারের মুখোমুখি। গাজার উত্তরাঞ্চলে এখনো বসবাসরত আনুমানিক তিন লাখ মানুষের অনেকেই বেঁচে থাকার তাগিদে পশুখাদ্যে নির্ভর করছে। তা-ও কমে আসছে।
আরও পড়ুন: কয়েক মাস ধরে দুর্ভিক্ষের সতর্কতার পর গাজায় বাড়তে শুরু করেছে শিশুদের মৃত্যু
কয়েক মাস ধরে দুর্ভিক্ষের সতর্কতার পর গাজায় বাড়তে শুরু করেছে শিশুদের মৃত্যু
ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ, হামলা ও অবরোধের মুখে গাজায় গত কয়েক মাস ধরেই দুর্ভিক্ষের সতর্কতা দেওয়া হচ্ছিল। এবার সেখানে শিশু মৃত্যুর হার বাড়তে শুরু হয়েছে।
বিশেষ করে বিচ্ছিন্ন উত্তর গাজায় দীর্ঘ সময় ধরে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ থাকায় তীব্র আকার ধারণ করেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উত্তরের কামাল আদওয়ান ও শিফা হাসপাতালে অপুষ্টি ও পানিশূন্যতার কারণে কমপক্ষে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের অধিকাংশই শিশু - যাদের বয়স ১৫ বছরের মধ্যে আর একজন ৭২ বছর বয়সী পুরুষ।
অন্যদিকে দক্ষিণ গাজায় সাহায্য মিললেও দুর্বল শিশুরা মারা যেতে শুরু করেছে।
গত পাঁচ সপ্তাহে অপুষ্টিজনিত কারণে ১৬টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে বার্তা সংস্থা এপিকে জানিয়েছে রাফাহর এমিরাতি হাসপাতালের একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক।
এই সপ্তাহের শুরুতে ইউনিসেফের মধ্যপ্রাচ্য প্রধান অ্যাডেল খোদর এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা যে শিশু মৃত্যুর আশঙ্কা করছিলাম তা শুরু হয়ে গিয়েছে।’
ইউনিসেফের শিশু পুষ্টি বিশেষজ্ঞ অনুরাধা নারায়ণ বলেন, বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশনের অভাবে গাজায় ডায়রিয়াজনিত রোগ বাড়ছে যার ফলে অনেকেই ক্যালরি ধরে রাখতে পারছে না।
এপির প্রতিবেদনে জানা যায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। কিছু দোকানে মিললেও দাম অনেক বেশি।
বেশিরভাগ লোক ‘খুবাইজা’ নামে লতা-পাতা সিদ্ধ করে খেয়ে বেঁচে থাকছে। উত্তর গাজায় দুই ছেলে এবং তাদের সন্তানদের সঙ্গে বসবাসকারী ৭০ বছর বয়সী ফাতিমা শাহীন বলেন, সিদ্ধ খুবাইজা তার প্রধান খাবার এবং খুব হিসাব করে খাবার তৈরি করতে হচ্ছে।
শাহীন বলেন, আমরা এক টুকরো রুটির জন্য মরছি।
গাজার উত্তরাঞ্চলের আরেক বাসিন্দা ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটরের গবেষক এবং অর্থনৈতিক সাংবাদিক কামার আহমেদ জানান, তার ১৮ মাস বয়সী মেয়ে মীরা বেশিরভাগ সেদ্ধ লতা-পাতা খায়। তার বয়সের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো খাবার নেই।
কামাল আদওয়ান হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ডা. হুসাম আবু সাফিয়া এপিকে বলেন, তার কর্মীরা বর্তমানে দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ শিশুর চিকিৎসা করেন এবং তাদের মধ্যে ৭৫ শতাংশই অপুষ্টিতে ভুগছে।
আবু ইউসুফ নাজ্জার হাসপাতালের শিশুদের জরুরি বিভাগের প্রধান ডা. জাবর আল-শায়েরের মতে, খাবারের অভাবে শিশুদের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও হাসপাতালে আরও অপুষ্টির শিকার ৮০ শিশু রয়েছে।
এমিরাতি হাসপাতালের নার্সারি ইউনিটের ডেপুটি হেড ডক্টর আহমেদ আল-শাইর বলেন, অকাল শিশুদের মৃত্যুর মূল কারণ মায়েদের মধ্যে অপুষ্টি। অপুষ্টির কারণে কম ওজনের শিশুর জন্ম ও মৃত্যু হচ্ছে। যুদ্ধের সময় এ মৃত্যু বেড়েছে বলে জানান চিকিৎসকরা।
চিকিৎসক আল-শাইর বলেন, হাসপাতালে ফেব্রুয়ারিতে ১৪টি এবং মার্চে এ পর্যন্ত আরও দুটি শিশু মারা গেছে। বর্তমানে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ১০ দিনের কম বয়সী ৪৪টি শিশু রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখন তাদের চিকিৎসা করি কিন্তু ভবিষ্যৎ কী হবে আল্লাহ জানেন।’
গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর গাজায় পাল্টা আক্রমণ চালায় ইসরায়েল। এরপর থেকে খাবার-পানি-ওষুধসহ সব ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। শুধু দক্ষিণে দুটি ক্রসিং দিয়ে দুই-একটি সাহায্যকারী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেয়।
গাজায় ক্রমবর্ধমান ক্ষুধার জন্য জাতিসংঘের এজেন্সিগুলোকে দায়ী করে ইসরায়েল বলেছে, গাজা ক্রসিংয়ে তারা সাহায্য দ্রব্যগুলো বিতরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ প্রসঙ্গে গাজায় জাতিসংঘের বৃহত্তম সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানায়, ইসরায়েল কিছু পণ্য প্রবেশের অনুমতি দেয় না আর জটিল নিয়ম আরোপ করে যে কারণে ত্রাণ প্রবেশের গতি কমে যায়।
এছাড়াও গাজায় বিতরণ ব্যবস্থা প্রায় পঙ্গু হওয়ার পথে। যেসব সাহায্য বহনকারী ট্রাকগুলো ইসরায়েলি বাহিনী ফিরিয়ে দেয়। সেগুলো ফেরার সময় তারা কোনো নিরাপত্তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। যার ফলে ফেরার পথে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা ট্রাকে হামলা চালিয়ে সাহায্য ছিনিয়ে নেয়।
এছাড়াও খাবার বিতরণকালে সাহায্যের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনী গুলি চালায়, যার ফলে ১২০ জনের মৃত্যু হয়। ইসরায়েল দাবি করে খাদ্য বিতরণকারী ট্রাকগুলোতে ফিলিস্তিনিরা হামলা করছিল তাই আত্মরক্ষার্থে গুলি চালানো হয়।
তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইসরায়েল জানিয়েছে, শিগগিরই উত্তর গাজায় সাহায্যের জন্য ক্রসিং খোলা হবে এবং সমুদ্রপথে চালান আসার অনুমতি দেওয়া হবে।
গাজার হাত ও পরিবার হারানো শিশু ওমরের দ্বিতীয় জীবন শুরু
গাজার হাত ও পরিবার হারানো শিশু ওমরের দ্বিতীয় জীবন শুরু
সাব- কৃত্রিম হাত দেখিয়ে বলে, ‘আমার বাহু সুন্দর’
ওমর আবু কুওয়াইক গাজার নিজ বাড়ি থেকে এখন অনেক দূরে। ইসরায়েলি বিমান হামলায় বাবা-মা ও বোনের মৃত্যুর পাশাপাশি নিজ হাতের একটি অংশ হারিয়েছিল ৪ বছর বয়সী শিশুটি।
তবে খানিকটা ভাগ্যবান বরা যেতে পারে শিশুটিকে। পরিবার ও অপরিচিতদের প্রচেষ্টায় ওমরকে গাজা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসা হয়, যেখানে একটি কৃত্রিম হাতসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পায়। নিউ ইয়র্ক শহরে দাতব্য চিকিৎসালয় পরিচালিত একটি বাড়িতে ফুফুর সঙ্গে দিন কাটিয়েছে শিশু ওমর।
অবশেষে ফিলাডেলফিয়ার শ্রীনার্স চিলড্রেনস হাসপাতালে বুধবার কৃত্রিম হাত পায় এবং মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে, ‘আমার বাহু সুন্দর।’
দুর্ভোগের সমুদ্রে এটি ওমর ও তার ফুফু মাহা আবু কুওয়াইকের জন্য অনুগ্রহের ছিটাফোটা মাত্র। তারা একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে ছিল। যারা এখনও গাজায় আটকে আছে তাদের জন্য দুঃখ ও হতাশা সব সময়ই অদূরে।
মাহা এ নিয়ে খুশি যে তিনি তার প্রিয় ভাইয়ের ছেলের জন্য এই ব্যবস্থা করতে পেরেছিলেন। ওমরকে তিনি এখন নিজের চতুর্থ সন্তান বলে মনে করেন।
কিন্তু এটি তার জন্য খুবই কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল। ওমরের সঙ্গে যাওয়া মানে গাজার দক্ষিণতম শহর রাফাহতে তাবু ক্যাম্পে নিজের স্বামী ও তিন কিশোর সন্তানকে রেখে যাওয়া। রাফাহসহ যেসব এলাকায় বেসামরিক লোকদের আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে এমন এলাকাগুলোতে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালিয়েছে। মাহা জানেন, তিনি তার পরিবারকে আর কখনও দেখতে পাবেন না।
তিনি বলেছিলেন,‘আমার বাচ্চারা ওমরকে খুব ভালোবাসে। তারা আমাকে বলেছিল, আমরা আর শিশু নই। যাও, ওমরের চিকিৎসা হোক। এটি ওর জন্য সবচেয়ে ভালো এবং এটি ওর একমাত্র সুযোগ।’
তিনি বলেন, ওমর বেশ চটপটে এবং তার প্রকৌশলী বাবার মতোই বুদ্ধিমান ছিল। কিন্তু এখন প্রায়ই সে হাল ছেড়ে দেয় আর কান্নায় ভেঙে পড়ে।
ওমরকে কিছু জিজ্ঞাসা করা হলে সে ডান হাত ও বাম হাতের বাকি অংশ দিয়ে কান চেপে ধরে বলে, ‘আমি কথা বলতে চাই না।’
অবশেষে ওমর বলেছে,‘বিদ্যালয় ভালো ছিল এবং আমি প্রথম দিনেই খুশি ছিলাম।’ যুদ্ধ শুরুর কয়েক সপ্তাহ আগে বিদ্যালয়ে যাওয়া শুরু করেছিল সে। কিন্তু এখন আর বিদ্যালয়ে যেতে চায় না সে। সে এখন ফুফুর কাছ থেকে দূরে যেতে ভয় পায়।
যদিও নিউইয়র্কে উড়ে যাওয়ায় নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে ওমর।
‘যখন আমি বড় হব, আমি পাইলট হতে চাই,’ ওমর বলছিল, ‘যাতে আমি মানুষকে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে আসতে পারি।’
ওমরই গাজার প্রথম ফিলিস্তিনি শিশু যাকে গ্লোবাল মেডিকেল রিলিফ ফান্ডের অধীনে নেওয়া হয়েছিল। স্টেটেন আইল্যান্ড দাতব্য সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা এলিসা মন্টান্টি, যুদ্ধ বা বিপর্যয়ে অঙ্গ হারানো শত শত বাচ্চাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করতে এক চতুর্থাংশ সময় কাটিয়েছেন।
কয়েক দশক ধরে চলে আসা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনা ঘটে গত ৭ অক্টোবর। গাজার চারপাশে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে ইসরায়েলি সম্প্রদায়গুলোতে ঢুকে পড়ে হামাস। প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করা হয়।
পাল্টা জবাবে ইসরায়েল গাজাকে ধ্বংস করেছে। পাঁচ মাসের যুদ্ধে, গাজার ২.৩ মিলিয়ন লোকের মধ্যে ৮০ শতাংশ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার গাজায় মৃতের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে, ৭০ হাজারেরও বেশি আহত হয়েছে। নিহতদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ নারী ও শিশু। ইসরায়েল বেসামরিক মৃত্যুর জন্য হামাসকে দায়ী করে বলেছে, সশস্ত্র বিদ্রোহীরা জনগণের মধ্যে কাজ করছে।
যুদ্ধ শুরুর ২ সপ্তাহ পর ওমর ও মাহা অল্পের জন্য মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান। ইসরায়েলি বিমান হামলায় ভবনগুলো মাটিতে মিশে যাওয়ার আগে তারা বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল।
এই দুই পরিবার বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে থাকতে চলে যায়।
৬ ডিসেম্বর, নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ওমরের দাদা-দাদির বাড়িতে দুটি ইসরায়েলি বিমান হামলা চালায়। বিস্ফোরণে তার মুখের চামড়া উঠে যায়। বাম হাতের কনুইয়ের নিচ থেকে হারিয়ে ফেলে সে। পা ও ঘাড় পুড়ে যায়। বাবা-মা, ৬ বছর বয়সী বোন, দাদা-দাদি, দুই ফুফু এবং এক চাচাতো ভাইয়ের মৃত্যু হয়।
ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে ওমর। উদ্ধারকারীরা খনন করে যখন তার ছোট্ট দেহটি খুঁজে পায়, তখন তার শরীর রক্তাক্ত ছিল।
ইউএস-ভিত্তিক দাতব্য সংস্থা রাহমা ওয়ার্ল্ডওয়াইডের ভাইস প্রেসিডেন্ট আদিব চৌকি বলেন, ‘আমাদের মনে হয়েছিল, গাজায় থাকার চেয়ে অন্য যেকোনো জায়গাই তার জন্য ভালো।’
গাজাবাসীর চলাচল সীমাবদ্ধ করে প্রতিদিন মাত্র কয়েক শতাধিক মানুষকে ওই অঞ্চল ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছে, যাদের বেশিরভাগেরই বিদেশি নাগরিকত্ব রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ২ হাজার ২৯৩ জন রোগী গাজা ত্যাগ করেছে। যাদের মধ্যে ১ হাজার ৪৯৮ জন আহত ও ৭৯৫ জন অসুস্থ। আর তাদের সঙ্গী হিসেবে ১ হাজার ৬২৫ জন গাজা ছেড়ে যেতে পেরেছেন। এখনও প্রায় ৮ হাজার রোগী বিদেশে যাওয়ার জন্য অপেক্ষায় আছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা।
ফিলিস্তিনি, ইসরায়েলি ও মিশরীয় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আদিব চৌকি ওমর এবং মাহা আবু কুওয়াইকের জন্য নতুন পাসপোর্ট এবং তাদের মিশরে যাওয়ার জন্য ইসরায়েলি নিরাপত্তা ছাড়পত্র পেয়েছেন।
একটি অ্যাম্বুলেন্স তাদের সীমান্তে নিয়ে আসে, যেখানে সিনাই মরুভূমি দিয়ে একটি মিশরীয় অ্যাম্বুলেন্স তাদের নিয়ে আসে।
১৭ জানুয়ারি নিউ ইয়র্কে উড়ে যেতে ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশনের সবুজ বাতির জন্য মিশরীয় একটি হাসপাতালে কয়েক সপ্তাহ ধরে অপেক্ষা করছিল ওমর আর তার ফুফু।
ফিলাডেলফিয়ার শ্রীনার্স চিলড্রেনস হাসপাতালে, ওমরের পায়ে পোড়ার জন্য স্কিন গ্রাফ্ট সার্জারি হয়েছিল। সে তার নতুন কৃত্রিম হাত পাওয়ার অপেক্ষায় ছিল। অবশেষে বুধবার সেটি দেখতে পেয়ে ধরতে হাত বাড়িয়ে দেয় আর দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে, ‘আমার বাহু সুন্দর।’
ওমর ও তার ফুফু পরের দিন কায়রোর উদ্দেশে একটি বিমানে উঠেছিলেন। সঙ্গে তাদের দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ও ছিলেন। স্থায়ী আবাস না হওয়া পর্যন্ত মিশরে তার বাড়িতেই থাকবেন তারা।
মাহা আবু কুওয়াইক বলেন, ‘আমি প্রায় ঘুমাই না । আমি ওমরের কথা ভাবি এবং আমি আমার বাচ্চাদের কথা ভাবি । তারা সেখানে তাঁবুতে বসবাস করছে এখনো।’
খাদ্যের অভাব। ইসরায়েলের হাতে গাজার অবরোধ অর্ধ মিলিয়নেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে অনাহারের দিকে ঠেলে দিয়েছে এবং আসন্ন দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা তৈরি করেছে।
তিনি বলেন, তার পরিবার একটি তাঁবুতে ৪০ জনের সঙ্গে ভাগ করে থাকছে যা ঝড়-বৃষ্টি থেকে সামান্যই সুরক্ষা দেয়। আর একজন অসুস্থ হলে অসুখ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে।
যুদ্ধের কারণে গাজায় সেলফোন এবং ইন্টারনেট পরিষেবা বারবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আবু কুওয়াইক ‘যখন নেটওয়ার্ক থাকে’ যোগাযোগ রাখে।
মিশরে ফেরার পর ওমর এবং তার ফুফুর ভবিষ্যৎ অস্পষ্ট; কেননা তাদের নির্বাসনে যেতে হতে পারে।
আবু কুওয়াইকের জন্য, যদিও, ওমরের ফিরে যাওয়ার জন্য কোনো বাড়ি নেই।
তিনি বলেন, ‘আমি কল্পনাও করতে পারি না, যে আমি গাজায় ফিরে যাব। তার জীবন কী হবে? কোথায় তার ভবিষ্যৎ?’
উত্তর গাজায় সাহায্যের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের হত্যার নিন্দা জাতিসংঘ প্রধানের
উত্তর গাজায় সাহায্যের অপেক্ষায় থাকা ১০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এ কথা জানান জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক।
উত্তর গাজায় হামলার নিন্দা জানিয়ে দুজারিক বলেন, ‘গাজার উত্তরাঞ্চলের হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন মহাসচিব, যেখানে জীবন রক্ষা করার জন্য সাহায্য চাইতে গিয়ে ১০০ জনেরও বেশি লোক নিহত বা আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। গাজার আহত বেসামরিক নাগরিকদের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন, যার মধ্যে অবরুদ্ধ উত্তরাঞ্চলের লোকজনও রয়েছে। সেখানে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ত্রাণ সরবরাহ করতে পারেনি জাতিসংঘ।’
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানান, বৃহস্পতিবার গাজা উপত্যকার পশ্চিমে সাহায্যের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলিবর্ষণ করে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে ১০৪ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়। আহত হয় ৭৬০ জনেরও বেশি।
আরও পড়ুন: উপহার-অনুগ্রহ নয়, রাষ্ট্রকে একটি আন্তর্জাতিক আইনি অধিকার মনে করে ফিলিস্তিনিরা
ইসরায়েলি বাহিনীর এক মুখপাত্র দাবি করেন, ভোরে গাজা উপত্যকায় প্রবেশের অপেক্ষায় থাকা ট্রাকগুলোতে আক্রমণ করে লুটপাট চালায় গাজাবাসীরা। এ সময় আত্মরক্ষা করতে গুলি চালায় ইসরায়েলি বাহিনী।
জাতিসংঘের কেউ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না জানিয়ে দুজারিক বলেন, ঘটনার তদন্ত করে জবাবদিহির ব্যবস্থা করা হবে।
জাতিসংঘের মহাসচিব অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতি এবং সমস্ত জিম্মিদের নিঃশর্ত মুক্তির আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন জানিয়ে মুখপাত্র বলেন, গুতেরেস আবারও জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন যাতে গুরুত্বপূর্ণ মানবিক সহায়তা গাজায় সবার কাছে পৌঁছাতে পারে।
গাজা সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৩০ হাজারেরও বেশি মৃত্যু এবং ৭০ হাজারেরও বেশি আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। মৃত্যুর এই মর্মান্তিক সংখ্যা দেখে গুতেরেস আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বলে জানান দুজারিক। এছাড়াও ধ্বংসস্তূপের নিচেও অনেকে আটকে আছেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৭০
ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৭০
গাজা শহরে মানবিক সহায়তার জন্য অপেক্ষারত ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলের হামলায় কমপক্ষে ৭০ জন নিহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে নিহতের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার জবাবে ইসরায়েলের আকাশ, সমুদ্র ও স্থল আক্রমণের প্রথম লক্ষ্য ছিল গাজা শহর ও গাজার বাকি অংশগুলো। এলাকাটি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়েছে এবং কয়েক মাস ধরে বাকি অঞ্চল থেকে মূলত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তবে সহায়তা পেয়েছে সামান্যই।
ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, গাজার বেশির ভাগ এলাকায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ত্রাণবাহী গাড়িবহরে সাহায্যপ্রত্যাশী মানুষের মরিয়া হয়ে হামলে পড়াও এর একটি কারণ বলে জানায়।
জাতিসংঘ বলছে, গাজার এক চতুর্থাংশ মানুষ অনাহারে ভুগছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কিদরা বলেন, বৃহস্পতিবারের হামলায় আরও ২৮০ জন আহত হয়েছেন।
কামাল আদওয়ান হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের প্রধান ফারেস আফানা বলেন, ঘটনাস্থলে পৌঁছে চিকিৎসকরা কয়েকশ মানুষকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেছেন।
তিনি বলেন, মৃত ও আহতদের নিয়ে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স নেই এবং কয়েকজনকে গাধার গাড়িতে করে হাসপাতালে আনা হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা এসব প্রতিবেদন খতিয়ে দেখছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই যুদ্ধে ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা ৩০ হাজার ৩৫ জনে দাঁড়িয়েছে এবং আহত হয়েছেন ৭০ হাজার ৪৫৭ জন।
তবে এর মধ্যে কতজন বেসামরিক ও যোদ্ধা তা আলাদা করে বলতে পারেনি মন্ত্রণালয়। নিহতদের দুই-তৃতীয়াংশই নারী ও শিশু বলে জানানো হয়েছে।
হামাস নিয়ন্ত্রিত সরকারের অংশ এই মন্ত্রণালয় হতাহতের বিস্তারিত রেকর্ড রাখে। এর আগে যেসব যুদ্ধ হয়েছে সেসবের হতাহতের যে হিসাব এই মন্ত্রণালয় দিয়েছে, তা অনেকাংশে জাতিসংঘ, স্বাধীন বিশেষজ্ঞ এমনকি ইসরাইলের নিজস্ব পরিসংখ্যানের সঙ্গেও মিলেছে।
ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের হামলায় ১,২০০ মানুষ নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক এবং প্রায় ২৫০ জন জিম্মিকে করে হামাস। নভেম্বরে সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতির সময় হামাসের জিম্মায় প্রায় ১৩০ জন রয়েছে বলে ইসরায়েলের দাবি। যাদের মধ্যে এক চতুর্থাংশ মারা গেছে বলেও মনে করা হচ্ছে।
ফিলিস্তিন সরকারের পদত্যাগের ফলে সংস্কারের দ্বার উন্মোচনের সম্ভাবনা
ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শাতায়েহ বলেছেন, তার সরকার পদত্যাগ করছে, যা মার্কিন সমর্থিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কারের দ্বার উন্মুক্ত করতে পারে।
আরও পড়ুন: রমজানে গাজা সংঘাত সম্প্রসারণের বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ
সোমবার জমা দেওয়া ওই পদত্যাগপত্রের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তিনি শাতায়েহ ও তার সরকারের পদত্যাগ গ্রহণ করবেন কি না। কিন্তু এই পদক্ষেপ পশ্চিমা সমর্থিত ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের নড়েচড়ে বসেছে এবং এটা মেনে নিতে ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে পুনরুজ্জীবিত করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের সূচনা করতে পারে।
যুদ্ধ শেষ হলে গাজা শাসনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি সংস্কার করা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। চায় কিন্তু সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে এখনও অনেক বাধা রয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণ শুরুর পর ৩১ হাজার ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হয়েছে: জেলেনস্কি
'আর গণহত্যায় জড়িত থাকব না' বলে নিজের গায়ে আগুন দিলেন মার্কিন সেনা
রমজানে গাজা সংঘাত সম্প্রসারণের বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ
পবিত্র রমজান মাসে গাজায় অব্যাহত যুদ্ধ সংঘাত প্রসারিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ।
রবিবার(২৫ ফেব্রুয়ারি) আম্মানে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে এক বৈঠকে এই সতর্কবার্তা দেন তিনি।
রয়্যাল হাশেমি কোর্টের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাদশাহ আবদুল্লাহ গাজায় তাৎক্ষণিক ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা এবং নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: উপহার-অনুগ্রহ নয়, রাষ্ট্রকে একটি আন্তর্জাতিক আইনি অধিকার মনে করে ফিলিস্তিনিরা
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জর্ডান গাজার জনগণকে মানবিক, ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে।
এতে আরও বলা হয়, বাদশাহ পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকাকে বিচ্ছিন্ন করার যে কোনও প্রচেষ্টাকে জর্ডান প্রত্যাখ্যান করবে বলে তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের ভিত্তিতে ফিলিস্তিনি সমস্যার ন্যায়সঙ্গত সমাধান খুঁজে বের করতে আরও সমন্বয় অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তিনি।
হামাস-ইসরায়েল সংঘাতে জর্ডানের দৃঢ় অবস্থানের প্রশংসা করেন মাহমুদ আব্বাস। ফিলিস্তিনিদের স্বার্থে কাজ করতে এবং শহরের পবিত্র স্থানগুলো রক্ষায় উভয় পক্ষের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় ও পরামর্শ অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তিনি।
আরও পড়ুন: ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে ২৯ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত: গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে ২৯ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত: গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজা উপত্যকায় ২৯ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) অঞ্চলটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানান, এটি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক সহিংসতার আরেকটি ভয়াবহ মাইলফলক।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসের বিরুদ্ধে ‘পুরোপুরি বিজয়’ অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আক্রমণ অব্যাহত থাকবে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, সৈন্যরা শিগগিরই মিশরীয় সীমান্তের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় চলে যাবে। সেখানে গাজার অর্ধেকের বেশি অর্থাৎ ২৩ লাখ লোক আশ্রয় নিয়েছে।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ১৩ জনের মৃত্যু; রাফাহ অভিযান নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৭টি লাশ হাসপাতালে আনা হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ নিয়ে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৯২ জনে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিহতদের মধ্যে কতজন বেসামরিক ও কতজন সৈনিক তার হিসাব দিতে পারেনি। তবে নিহতদের দুই-তৃতীয়াংশই নারী ও শিশু বলে জানায়। এ যুদ্ধে ৬৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।
গাজায় হামাস পরিচালিত সরকারের অংশ হলেও হতাহতের বিস্তারিত রেকর্ড রাখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর হিসাব গাজায় আগের যুদ্ধগুলোর পরিসংখ্যান জাতিসংঘের সংস্থা, স্বাধীন বিশেষজ্ঞ ও ইসরাইলের নিজস্ব পরিসংখ্যানের সঙ্গে অনেকাংশে মিলে গেছে।
গত ৭ অক্টোবর হামাস নেতৃত্বাধীন শসস্ত্র বাহিনী গাজা থেকে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষকে হত্যা করে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক এবং প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে।
ইসরায়েলের হাতে বন্দি ২৪০ ফিলিস্তিনির বিনিময়ে নভেম্বরে সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতিতে শতাধিক বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়। হামাসের কাছে এখনও প্রায় ১৩০ জন জিম্মি রয়েছে, যাদের এক চতুর্থাংশ নিহত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০০৭ সাল থেকে হামাস শাসিত অবরুদ্ধ ভুখণ্ডে সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ও ধ্বংসাত্মক সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।
ইসরায়েল বলছে, তারা কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ১০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি জঙ্গিকে হত্যা করেছে। সামরিক বাহিনী বলছে, তারা বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতি এড়ানোর চেষ্টা করে। এত বেশি মৃত্যুর জন্য হামাসকে দায়ী তারা। কারণ এই গোষ্ঠী ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় হামলা করে। সামরিক বাহিনী জানায়, অক্টোবরের শেষ দিকে স্থল অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত তাদের ২৩৬ সেনা নিহত হয়েছেন।
জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের মতে, যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। গাজার প্রায় ৮০ শতাংশ ফিলিস্তিনিকে তাদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত করেছে এবং জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ অনাহারে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।
আরও পড়ুন: গাজায় গণহত্যা বন্ধ করুন: বিশ্ব নেতাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী
নেতানিয়াহুর তিন সদস্যবিশিষ্ট যুদ্ধ-মন্ত্রিসভার সদস্য ও অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল বেনি গান্টজ রবিবার হুঁশিয়ারি করেন, মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার আগেই জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া হলে এই আক্রমণ রাফা পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপবাসের পবিত্র মাসটি প্রায়ই এই অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধির একটি সময়। আগামী ১০ মার্চ থেকে রোজা শুরু হওয়ার সম্ভানা রয়েছে।
ইসরায়েল বলেছে যে, তারা রাফাহ থেকে বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। তবে বিধ্বস্ত অঞ্চলের কোথায় তারা যাবে তা পরিষ্কার নয়, যার বিশাল অঞ্চল সমতল হয়ে গেছে। মিশর সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে এবং সতর্ক করে দিয়েছে যে ফিলিস্তিনিদের যেকোনো গণ অনুপ্রবেশ ইসরায়েলের সঙ্গে কয়েক দশকের পুরোনো শান্তি চুক্তিকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
ইসরাইলের শীর্ষ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা এখনো আরেকটি যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তির মধ্যস্থতা করতে মিসর ও কাতারের সঙ্গে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছে। কিন্তু সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সেই প্রচেষ্টা থমকে গেছে বলে মনে হচ্ছে।
নেতানিয়াহু হামাসের 'বিভ্রান্তিকর' দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। হামাস বলছে, ইসরাইল যুদ্ধ শেষ না করা পর্যন্ত এবং গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তারা বাকি জিম্মিদের মুক্তি দেবে না। সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের সদস্যসহ শত শত ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তিও দাবি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: গাজার রাফায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ১০০ ছাড়াল
উপহার-অনুগ্রহ নয়, রাষ্ট্রকে একটি আন্তর্জাতিক আইনি অধিকার মনে করে ফিলিস্তিনিরা
ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার বলেছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কোনো উপহার বা অনুগ্রহ নয়, এটি আন্তর্জাতিক আইন ও বৈধ আন্তর্জাতিক রেজুলেশনের অধিকার।
যুক্তরাষ্ট্র ও আরব দেশগুলোর একটি ছোট গ্রুপের 'ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য একটি নির্ধারিত সময়সূচি' নিয়ে চলমান আলোচনার বিষয়ে বুধবার ওয়াশিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এরপরেই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ প্রত্যাখ্যান করার প্রতিক্রিয়ায় এটি বলেছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ফোনালাপে নেতানিয়াহু বলেন, 'ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে স্থায়ী সমঝোতার আন্তর্জাতিক নির্দেশনা আমরা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।’
আরও পড়ুন: রাফাহতে ইসরায়েলি হামলায় আরও ২৮ ফিলিস্তিনি নিহত
শুক্রবার এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় বলেছে, 'আন্তর্জাতিক ও জাতিসংঘের স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান করার ঘোষণা দিয়ে নেতানিয়াহু আবারও দখলদারিত্বের অবসান ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অধিকারের বিষয়ে আন্তর্জাতিক ও আমেরিকান ঐকমত্যকে চ্যালেঞ্জ করেছেন।’
বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্ব ও ফিলিস্তিনি জনগণের রাষ্ট্র গঠনের বিষয়ে যেকোনো প্রচেষ্টা বা ধারণা ব্যর্থ করে দিতে নেতানিয়াহু তার ঐতিহ্যগত শর্ত ফিলিস্তিনি জনগণ ও বিশ্বের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন। একই সঙ্গে তিনি আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ প্রত্যাখান করেন।
নেতানিয়াহুর এই অবস্থানকে 'শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে তুলনীয় এবং জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন ও সংযুক্তির প্রকৃত লক্ষ্যগুলোর একটি স্পষ্ট ব্যাখ্যা' হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
আরও পড়ুন: গাজার রাফায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ১০০ ছাড়াল