শিল্প-সংস্কৃতি
বাপ্পি লাহিড়ী: বলিউড সাম্রাজ্যে ডিস্কো সঙ্গীতের প্রবাদ পুরুষ
ভারতীয় উপমহাদেশের ডিস্কো সঙ্গীতের কথা বলতে গেলে যে নামটি বারংবার অনুরণিত হয়, তা হচ্ছে বাপ্পি লাহিড়ী। ৮০ ও ৯০ দশক জুড়ে বলিউডের সঙ্গীতাঙ্গন দাঁপিয়ে বেড়ানো এই কন্ঠের গায়কীর সমাপ্তি ঘটলো ৬৯ বছর বয়সে। গত মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে সকলের প্রিয় বাপ্পি দা ভক্তদের হাজারো নতুন গানের অপেক্ষায় রেখে নিরবেই পাড়ি জমালেন না ফেরার দেশে। বলিউড চলচ্চিত্রের উপর তাঁর কন্ঠের এতটাই প্রভাব যে, দর্শক মাতানো গান মানেই ভাবা হয় বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে আন্দোলিত হওয়া বাপ্পি লাহিড়ী কন্ঠের দীর্ঘ টান। এই সঙ্গীতজ্ঞের সঙ্গীত জীবনচরিত নিয়েই আজকের ফিচার।
সঙ্গীতজ্ঞ পরিবারের সৃষ্টি বাপ্পি লাহিড়ী
১৯৫২ সালের ২৭ নভেম্বর ভারতের জলপাইগুড়ির এক বাঙালি ব্রাহ্মণ পরিবার; গানের দম্পতি অপরেশ লাহিড়ী এবং বাঁসুরি লাহিড়ীর কোল আলোকিত করে এলেন অলোকেশ লাহিড়ী। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এবং শ্যামা সঙ্গীতে লাহিড়ী দম্পতির দুজনেরই বেশ ভালো দখল ছিল। গান ও তবলার সূত্রগুলো রপ্ত করতে একমাত্র সন্তান অলোকেশের তেমন বেগ পেতে হয়নি। ভারতের স্বনামধন্য গায়ক কিশোর কুমার ছিলেন তাঁর মামা। সঙ্গীতাঙ্গনে প্রবেশের পর এই অলোকেশ পরিণত হন বাপ্পি লাহিড়ীতে।
একজন সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে তাঁর নিজস্ব বেশভূষা তাকে অন্য শিল্পীদের থেকে আলাদা করে রাখতো। গায়কীর পাশাপাশি তাঁর বিশেষত্ব ছিল সোনার অলঙ্করণ, মখমলের কার্ডিগান এবং সানগ্লাস।
আরও পড়ুন: সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর: ভারতীয় সংগীতের জগতে অবিস্মরণীয় উজ্জ্বল নক্ষত্র
১৯৭৭ সালের ২৪ জানুয়ারি বাপ্পি লাহিড়ী চিত্রানি লাহিড়ীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বাপ্পি লাহিড়ীর মেয়ে রেমা লাহিড়ীও একজন গায়িকা। ছেলে বাপ্পা লাহিড়ী বাবা পথ অনুসরণ করে সঙ্গীত পরিচালনাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। বাপ্পা লাহিড়ীর ঘরে বাপ্পির এক নাতিও আছে; নাম কৃষ লাহিড়ী।
ডিস্কো কিং বাপ্পি লাহিড়ী ও সঙ্গীতের সোনালী অধ্যায়
সঙ্গীত জীবনের প্রথম ১৫ বছর সুরকার হিসেবেই কাজ করেছেন বাপ্পি লাহিড়ী। ১৯ বছর বয়সে মুম্বাই এসে দাদু (১৯৭৪) নামের পশ্চিমবঙ্গের একটি বাংলা সিনেমায় প্রথম সুযোগ পান। সেখানে তাঁর পরিচালনায় গান গেয়েছিলেন ভারতের বিখ্যাত শিল্পী লতা মঙ্গেশকর। ১৯৭৩-এর নানহা শিকারি ছিল প্রথম হিন্দি চলচ্চিত্র যার জন্য তিনি সঙ্গীত রচনা করেছিলেন। এখানে তাঁর রচিত গান ছিল তু হি মেরা চান্দা। তাঁর ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট ছিল ১৯৭৫ এর হিন্দি ছবি জাখমি। এই ছবির নাথিং ইজ ইম্পসিবল শিরোনামের গানটির সঙ্গীত পরিচালনায় তাঁর সাথে ছিলেন কিশোর কুমার এবং মহম্মদ রফি। এছাড়া তাঁর একক পরিচালনায় একই ছবির গান ‘জালতা হ্যায় জিয়া মেরা’ গানটি গেয়েছিলেন কিশোর কুমার ও আশা ভোশলে। ‘আভি আভি থি দুশমানি’ এবং ‘আও তুমে চান্দ’ গান দুটিতে কন্ঠ দিয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর। সবগুলো গান-ই সে সময় হিট করেছিল।
আরও পড়ুন: সংগীতশিল্পী বাপ্পি লাহিড়ী আর নেই
তাঁর সুরে কিশোর ও লতার ডুয়েট ‘ফির জানাম লেঙ্গে হাম’ গানটি ভারতবর্ষ জুড়ে বেশ সাড়া ফেলে দেয়। ১৯৭৬ এর চালতে চালতে চলচ্চিত্রের সমস্ত গানই ব্যাপকভাবে দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করে। ফলশ্রুতিতে জাতীয় অঙ্গনে সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে স্বীকৃতি পান বাপ্পি লাহিড়ী।
একই বছর নিজের গায়কী নিয়ে প্রথমবারের মত হাজির হন সুলক্ষণা পণ্ডিতের সাথে দ্বৈত গান ‘জানা কাহান হ্যায়’-এর মাধ্যমে।
১৯৭৯-এর আপ কি খাতির, দিল সে মিলে দিল, পতিতা, লাহু কে দো রাং, হাতিয়া এবং সুরাক্ষা’র মতো চলচ্চিত্রের গানগুলো তাঁর সুরেলা সঙ্গীত পরিচালনার জন্য বেশ খ্যাতি পেয়েছিল।
পড়ুন: চমকে দেওয়ার দিনটিই ছিল বাপ্পিজির সঙ্গে শেষ দেখা: রুনা লায়লা
লিটল ম্যাগাজিন প্রদর্শনীর সময় বাড়ল
দর্শকদের চাহিদার প্রেক্ষিতে লিটল ম্যাগাজিন প্রদর্শনীর সময় বাড়িয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।
প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রদর্শনী উপভোগ করা যাবে।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি দেশে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত ছোটকাগজ নিয়ে প্রদর্শনী আয়োজনসহ গুরুত্বপূর্ণ ছোটকাগজকে সম্মাননা জানানোর জন্য, ‘লিটল ম্যাগাজিন প্রদর্শনী ও সম্মাননা- ২০২২’ আয়োজন করেছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে লিটল ম্যাগাজিন সম্মননা প্রদান ও সপ্তাহব্যাপী প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন: লিটল ম্যাগাজিন প্রদর্শনীর উদ্বোধন
এবারের সম্মাননা প্রাপ্ত নির্বাচিত লিটল ম্যাগাজিন হলো: শহীদ ইকবাল সম্পাদিত ‘চিহ্ন’; আবদুল মান্নান স্বপন সম্পাদিত ‘ধমনি’; এজাজ ইউসুফী সম্পাদিত ‘লিরিক’; মিজানুর রহমান নাসিম সম্পাদিত ‘মননরেখা’ এবং ওবায়েদ আকাশ সম্পাদিত ‘শালুক’। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে তিনটি লিটল ম্যাগাজিনকে সম্মাননার জন্য নির্বাচন করা হয়েছে, জেলা শিল্পকলা একাডেমি রাজশাহী থেকে প্রকাশিত আসাদ সরকার সম্পাদিত ‘মহাকালগড়’; জেলা শিল্পকলা একাডেমি সিলেট থেকে প্রকাশিত অসিত বরণ দাশ গুপ্ত সম্পাদিত ‘সুরমাকপোত’ এবং মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘আরণ্যক’।
সম্মাননার জন্য লিটল ম্যাগাজিন নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করেছেন বিশিষ্ট লেখক-গবেষক জনাব মফিদুল হক, বিশিষ্ট অনুবাদক ও সাহিত্যিক অধ্যাপক আবদুস সেলিম এবং কবি ও অধ্যাপক খালেদ হোসাইন ।
উল্লেখ্য শিল্প-সাহিত্য চর্চার বিকাশে লিটল ম্যাগাজিন তথা ছোটকাগজ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বুদ্ধিবৃত্তিক ও সৃজনশীল চর্চার সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন সংগঠন বা গোষ্ঠীর মুখপত্র হিসেবেও লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ পেয়ে থাকে। দেশে ষাটের দশক থেকে একুশের চেতনাকে ধারণ করে লিটল ম্যাগাজিন চর্চা প্রসার লাভ করে। বিশিষ্ট কবি, লেখক, বুদ্ধিজীবীরা কোন না কোনোভাবে একসময় ছোটকাগজের সাথে যুক্ত ছিলেন। পাড়া-মহল্লা থেকেও বিভিন্ন দিবসে ও আয়োজনে একসময় ম্যাগাজিন প্রকাশিত হতো। আশির দশকে বাংলাদেশে লিটল ম্যাগাজিন চর্চা জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর: ভারতীয় সংগীতের জগতে অবিস্মরণীয় উজ্জ্বল নক্ষত্র
“ফুরালো প্রাণের মেলা, শেষ হয়ে এলো বেলা” যেন গানটির এই কথার পথ ধরেই ফিরে গেলেন আপন নীড়ে গানটির শিল্পী কোকিলকোন্ঠী লতা মঙ্গেশকর। দীর্ঘ ২৮ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ৬ ফেব্রুয়ারি ভারতের মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন এই সুরসম্রাজ্ঞী। শত পার্থিব পুরস্কারের ম্লান তেপান্তরে তাঁর সব থেকে অমূল্য বিষয়টি হচ্ছে, এখনো কোটি সঙ্গীতপ্রেমিদের কানে গুনগুন করে বাজে তাঁর কন্ঠটি। ভারতের নাইটিঙ্গেল খ্যাত এই বৈচিত্রপূর্ণ গানের পাখির বর্ণাঢ্য সঙ্গীত জীবনকে উদ্দেশ্য করেই আজকের ফিচার।
ব্যক্তি জীবনে একজন লতা মঙ্গেশকর
মারাঠি সঙ্গীত পরিবারে মেয়ে লতা মঙ্গেশকরের জন্ম ১৯২৯ এর ২৮ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ-অধীন ভারতের ইন্দো প্রদেশে, যেটি বর্তমানে মধ্য প্রদেশ হিসেবে পরিচিত। বাবা দীনানাথ মঙ্গেশকর ছিলেন মারাঠি এবং কোঙ্কনি সঙ্গীতের ধ্রুপদী গায়ক এবং থিয়েটার অভিনেতা। মা শেবন্তী ছিলেন একজন গুজরাটি মেয়ে।
জন্মের সময় লতার নাম রাখা হয়েছিল ‘হেমা’। তার বাবা-মা পরে তাঁর বাবার একটি নাটকের নারী চরিত্র লতিকার নামানুসারে তাঁর নাম পরিবর্তন করে লতা রাখেন।
পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে লতা সবার বড় এবং তাঁর ভাইবোন মীনা, আশা, ঊষা এবং হৃদয়নাথ, প্রত্যেকেই দক্ষ গায়ক এবং সঙ্গীতজ্ঞ।
লতা তাঁর প্রথম সঙ্গীত শিক্ষা লাভ করেন বাবার কাছ থেকে। পাঁচ বছর বয়সে তিনি তাঁর বাবার সঙ্গীত নাটকে অভিনেত্রী হিসেবে কাজ শুরু করেন।
আরও পড়ুন: চলে গেলেন সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর
লতা মঙ্গেশকর-এর সঙ্গীত শিল্পী হয়ে ওঠার গল্প
১৯৪২ সালে লতার বয়স যখন মাত্র ১৩, তখন তার বাবা হৃদরোগে মারা যান। নবযুগ চিত্রপট সিনেমা কোম্পানির মালিক এবং মঙ্গেশকর পরিবারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মাস্টার বিনায়ক দামোদর কর্ণাটকি তাদের দেখাশোনা করতেন। মুলত তাঁর হাত ধরেই লতার প্রথমে অভিনয় এবং পরবর্তীতে সঙ্গীত জগতে পদার্পন ঘটে।
১৯৪৮ সালে বিনায়কের মৃত্যুর পর, তৎকালীন প্রখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক গোলাম হায়দার তাকে শিল্পী হওয়ার জন্য দিক-নির্দেশনা দিতেন। তিনি লতাকে প্রযোজক শশধর মুখার্জির কাছে নিয়ে আসেন। মুখার্জি তখন শহীদ (১৯৪৮) চলচ্চিত্রের জন্য শিল্পী খুঁজছিলেন। তিনি লতার কণ্ঠকে "খুব চিকন" বলে উড়িয়ে দেন। এতে হায়দার বিরক্ত হয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন যে আগামী দিনে প্রযোজক এবং পরিচালকরা "লতার পায়ে পড়ে তাদের চলচ্চিত্রে গান গাওয়ার জন্য ভিক্ষা করবেন"।
হায়দার লতাকে মজবুর (১৯৪৮) চলচ্চিত্রে গান গাওয়ার সুযোগ করে দেন, যেখানে তাঁর "দিল মেরা তোড়া, মুঝে কাহিন কা না ছোরা" গানটি ছিলো তাঁর জীবনের প্রথম সফল চলচ্চিত্রের গান।
পড়ুন: লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে সঙ্গীতাঙ্গনে বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি হলো: প্রধানমন্ত্রী
লতা মঙ্গেশকর-এর সঙ্গীত জীবন: সঙ্গীতের সোনালী অধ্যায়
বাংলা গানে লতার আত্মপ্রকাশ হয়েছিল ১৯৫৬ সালে "আকাশ প্রদীপ জ্বলে" হিট গানের মাধ্যমে। ১৯৫০-এর দশকের শেষের দিকে প্রকাশিত হয় "যারে উড়ে যারে পাখি", "না যেওনা" এবং "ওগো আর কিছু তো নয়"-এর মতো তাঁর কয়েকটি হিট গান।
১৯৫৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মধুমতি সিনেমার গান "আজা রে পরদেশী" এর জন্য শ্রেষ্ঠ মহিলা প্লে-ব্যাক শিল্পী হিসেবে জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন লতা মঙ্গেশকর।
১৯৬০-এর দশকে তাঁর সেরা বাংলা গানগুলো ছিল "একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি", "সাত ভাই চম্পা", "কে প্রথম দেখেছি", "নিঝুম সন্ধ্যা", "চঞ্চল মন আনমোনা," "আষাঢ় শ্রাবণ," "বলছি তোমার কানে কানে", এবং "আজ মন চেয়েছে"।
১৯৬০-এর ছবি মুঘল-ই-আজম-এ লতার গাওয়া "পিয়ার কিয়া তো ডারনা কিয়া" গানটি এখনও বিখ্যাত।
১৯৬২ সালে "কাহিন দীপ জালে কাহিন দিল" গানের জন্য তিনি তাঁর দ্বিতীয় ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে ভূষিত হন।
২০২২ সালে একুশে পদক পাবেন ২৪ বিশিষ্ট নাগরিক
বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের ২৪ জন বিশিষ্ট নাগরিককে ২০২২ সালের একুশে পদক দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছেন।
২০২২ সালে একুশে পদকের জন্য মনোনীতরা হলেন- ভাষা আন্দোলনে অবদানের জন্য মোস্তফা এম.এ.মতিন (মরণোত্তর), মির্জা তোফ্ফাজেল হোসেন (মরণোত্তর)। শিল্পকলায় (নৃত্য) জিনাত বরকতউল্লাহ, নজরুল ইসলাম বাবু (মরণোত্তর) শিল্পকলা (সংগীত), ইকবাল আহমেদ শিল্পকলা (সংগীত), মাহমুদুর রহমান বেণু শিল্পকলা (সংগীত), খালেদ মাহমুদ খান (মরণোত্তর) শিল্পকলা (অভিনয়), আফজাল হোসেন শিল্পকলা (অভিনয়) ও মাসুম আজিজ শিল্পকলা (অভিনয়)।
আরও পড়ুন: একুশে পদকপ্রাপ্তদের সম্মান জানালো মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়
মুক্তিযুদ্ধ ক্ষেত্রে মনোনীতরা হলেন- মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব অধ্যক্ষ মো. মতিউর রহমান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী (মরণোত্তর), কিউ, এ. বি. এম রহমান ও আমজাদ আলী খন্দকার।
সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য এম এ মালেক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মো.আনোয়ার হোসেন, শিক্ষায় অধ্যাপক ড.গৌতম বুদ্ধ দাশ, সমাজসেবায় এস. এম. আব্রাহাম লিংকন ও সংঘরাজ জ্ঞানশ্রী মহাথের, ভাষা ও সাহিত্যে কবি কামাল চৌধুরী ও ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ, গবেষণায় ড.মো. আব্দুস সাত্তার মন্ডল, ড. মো. এনামুল হক (দলগত), (দলনেতা), ড. সাহানাজ্ সুলতানা (দলগত) ও ড. জান্নাতুল ফেরদৌস (দলগত) এই পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: লিটল ম্যাগাজিন প্রদর্শনীর উদ্বোধন
লিটল ম্যাগাজিন প্রদর্শনীর উদ্বোধন
জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে লিটল ম্যাগাজিন সম্মাননা প্রদান ও সপ্তাহব্যাপী প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টায় এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৮ জন লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদককে সম্মাননা তুলে দেয়া হয়। তাদের মধ্যে রয়েছেন শহীদ ইকবাল সম্পাদিত ‘চিহ্ন’; আবদুল মান্নান স্বপন সম্পাদিত ‘ধমনি’; এজাজ ইউসুফী সম্পাদিত ‘লিরিক’; মিজানুর রহমান নাসিম সম্পাদিত ‘মননরেখা’ এবং ওবায়েদ আকাশ সম্পাদিত ‘শালুক’।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে তিনটি লিটল ম্যাগাজিনকে সম্মাননার জন্য নির্বাচন করা হয়েছে, জেলা শিল্পকলা একাডেমি রাজশাহী থেকে প্রকাশিত আসাদ সরকার সম্পাদিত ‘মহাকালগড়’; জেলা শিল্পকলা একাডেমি সিলেট থেকে প্রকাশিত অসিত বরণ দাশ গুপ্ত সম্পাদিত ‘সুরমাকপোত’ এবং মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘আরণ্যক’।
আরও পড়ুন: রাজু ভাস্কর্যের সামনে নৃত্যরত ইরা: সপ্রতিভ উত্থানে এক বাংলাদেশি ব্যালেরিনা
সম্মাননার জন্য লিটল ম্যাগাজিন নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করেছেন বিশিষ্ট লেখক-গবেষক মফিদুল হক, বিশিষ্ট অনুবাদক ও সাহিত্যিক অধ্যাপক আবদুস সেলিম এবং কবি ও অধ্যাপক খালেদ হোসাইন ।
সম্মাননা হিসেবে কেন্দ্রীয় পাঁচটি লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদককে ৫০ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করা হয়। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নির্বাচিত তিনটি লিটলম্যাগাজিন সম্পাদককে ২৫ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করা হবে।
লিটল ম্যাগাজিনের আট শতাধিক সংখ্যা নিয়ে ১-৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ জাতীয় চিত্রশালার ৬নং গ্যালারিতে প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
লিটল ম্যাগাজিন অনুষ্ঠনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
আরও পড়ুন: ফরিদা হোসেন: বাংলা সাহিত্যের এক স্বপ্ন শিল্পী
রাজু ভাস্কর্যের সামনে নৃত্যরত ইরা: সপ্রতিভ উত্থানে এক বাংলাদেশি ব্যালেরিনা
উচ্ছল মুক্ত বিহঙ্গ, বাংলার উড়ন্ত মানবী অথবা আগুন ডানার পাখি! রাজু ভাস্কর্যের সামনে নৃত্যরত মেয়েটিকে এমনি নামে ডাকছেন বাংলাদেশের নেটিজেনরা। ইউরোপের নাচ ব্যালের নৃত্যকলায় তার ভাসমান ভঙ্গিমার আলোকচিত্র যেন নারীমুক্তি স্লোগান দিয়ে চলেছে। প্ল্যাকার্ড-পোস্টার পটভূমিতে রেখে মুক্তির ঐকতানে বেজে চলেছে তার স্বতঃস্ফূর্ত নাচের মুদ্রাগুলো। একই সাথে জানান দিচ্ছে বাঙালি সংস্কৃতির রক্ষণশীল প্রাঙ্গণে নতুন শিল্পকর্মের পদচিহ্নের। জয়িতার আলোকচিত্রকর্মে ইরা নামের মেয়েটির সপ্রতিভ পরিবেশনা এভাবেই জায়গা করে নিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাম্প্রতিক বহুল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে। চলুন, জেনে নেয়া যাক এই ইরা ও জয়িতার ব্যাপারে।
ব্যালে বালিকা ইরা’র পরিচয়
নওগাঁ জেলার জগত্সিংহপুর মহল্লার বটতলা নিবাসী ব্যালে বালিকা মুবাশশিরা কামাল ইরা। বাবা আবু হায়াৎ মোহাম্মদ কামাল একজন ব্যবসায়ী আর মা ফাহমিদা আক্তার একজন গৃহিণী। চার বোনের মধ্যে ইরা তৃতীয়।
মেধাবী ছাত্রী ইরা ২০২০ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে শেষ করেন মাধ্যমিকের পাঠ। স্কুল ছিলো নওগাঁ সীমান্ত পাবলিক স্কুল। বর্তমানে তিনি নওগাঁ সরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বিতীয় বর্ষে বাণিজ্য শাখায় অধ্যয়নরত আছেন।
আরও পড়ুন: শিক্ষা সনদপত্র হারিয়ে গেলে করণীয়
ইরার ব্যালে নাচের নেপথ্যের কথা
এই খ্যাতির শুরুটা হয় আলোকচিত্রী জয়িতার সাথে ইরার পরিচয়ের মধ্য দিয়ে। গত ২০ থেকে ২২ জানুয়ারিতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত নৃত্য উৎসবে যোগ দিতে ঢাকায় আসেন ইরা। তখনই দুজনের মাঝে দেশের ভেতর নতুন ধারার ফটোগ্রাফি নিয়ে আলোচনা হয়। উদ্দেশ্য দেশীয় ঐতিহ্যকে সামনে রেখে ধরাবাধা সংস্কৃতির বাইরে যেয়ে নতুন কিছু করা।
২৩ জানুয়ারির সকালে টিএসসি চত্বর দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় চোখে পড়ে রাজু ভাস্কর্য সংলগ্ন বিভিন্ন আন্দোলনের প্ল্যাকার্ড ও পোস্টার। সাথে সাথেই সেখানে কিছু ছবি তুলে নেন। ছবিগুলো ফেসবুকে প্রকাশ করেন ২৫ জানুয়ারি বিকাল ৪টায়। আর তারপরেই যাদুর মত ঘটতে শুরু সব ঘটনা। নিমেষেই ফেসবুক জুড়ে ছড়িয়ে যায় ছবিগুলো। রীতিমত তারকা বনে যান মুবাশশিরা কামাল ইরা।
ব্যালে নিয়ে লকডাউনের সময় থেকেই কাজ করছিলেন ইরা। ইতোমধ্যে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ থাকায় ছোট বেলা থেকেই নাচের প্রতি প্রচন্ড ভালো লাগা কাজ করতো তার।
অন্যদিকে জয়িতা একজন নতুন ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার। তাই ২৫ জানুয়ারির তোলা সেই ছবিগুলো ইরা ও জয়িতা দুজনেরই প্রতিভা বিকাশের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার পরিচায়ক।
তাদের এই চেষ্টাকে আরও বহুগুণে ফলপ্রসু করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে সিলেটের শাবিপ্রবি (শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়)-এর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ঘটনাটি।
আরও পড়ুন: পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে করণীয়
ইরা’র ব্যালে নাচের স্বপ্ন
মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই ইরার নাচের হাতে খড়ি হয় শিক্ষক সুলতান মাহমুদের কাছে। সে সময় বেশ পোক্তভাবেই মুদ্রাগুলো শিখে নিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ঢাকায় ভরতনাট্যম শিখে ফেলেন। কিন্তু ব্যালে নৃত্যের দিকে তার দৃষ্টি পড়ে ২০২০ সালে, যখন সারা দেশ লকডাউনে জর্জরিত। বরাবর নতুন কিছু শেখার জন্য মরিয়া হয়ে থাকা ইরা তখনো থেমে থাকেননি। দেশে ব্যালের কোন শিক্ষক না থাকায় মায়ের কথায় ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিজে নিজেই তালিম নিতে শুরু করেন। পরিবারের অন্যদের পক্ষ থেকে সমর্থন না থাকলেও ইরার মা সবসময় মেয়ের ইচ্ছা ও আগ্রহকে গুরুত্ব দিয়ে গেছেন। ব্যালের জন্য বিশেষ ধরনের জুতার প্রয়োজন হয়, যেটা দেশের বাজারে পাওয়া যায় না। তাছাড়া খালি পায়ে পায়ের অগ্রভাগের উপর চাপ দিয়ে ব্যালে অনুশীলন করা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এরপরেও সাধ্যের মধ্যে যতটুকু সম্ভব তাই দিয়েই কঠোরভাবে চেষ্টা করে যান ব্যালেকে আত্থস্ত করতে।
২০২১ সালে ঢাকায় প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী লুবনা মরিয়ম-এর নাচের প্রতিষ্ঠান 'সাধনা' তে যোগ দেয়ায় তার ব্যালের পারদর্শিতা আরো বহুগুনে বেড়ে যায়। তাছাড়া ছোট থেকে অ্যাথলেট হওয়ার কারণে শারীরিক উপযোগিতার ক্ষেত্রেও তিনি বেশ সুবিধা পেয়েছেন ব্যালে দখল নেওয়ার সময়।
প্রথমেই ব্যালে নাচে নিজের একটা জায়গা তৈরি করতে চান ইরা। নাচ নিয়ে পরবর্তীতে পড়াশোনা করারও ইচ্ছা আছে তার। তারপর দেশীয় নাচ ও ব্যালের সংমিশ্রণে বাংলাদেশের নৃত্যশিল্পে নতুন ধারা সংযুক্ত করতে চান ব্যালে বালিকা ইরা।
আরও পড়ুন: জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, খরচ ও সময়
চিত্রগ্রহণে জয়িতা
ইরার এই পরিচিতির পেছনে যে মানুষটির অবদান সবচেয়ে বেশি তিনি হচ্ছেন আলোকচিত্রী জয়িতা। পুরো নাম জয়িতা আফরিন তৃষা। থাকেন ঢাকার ধানমন্ডিতে। ছবি তোলার জন্য রাজু ভাস্কর্যের জায়গাটি নির্বাচনসহ ফটোশ্যুটের বিভিন্ন আইডিয়াগুলো তারই মস্তিষ্ক প্রসূত। ছবিগুলোর মাধ্যমে তিনি ঢাকার ঐতিহ্যবাহী প্রধান জায়গাগুলোর সাথে ব্যালে নৃত্যের সৌন্দর্য্যকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। ছবি তোলা জয়িতার নেশা আর এটি নিয়েই তিনি তার ক্যারিয়ার সাজাতে চান। আকস্মিক জনপ্রিয়তা অপেক্ষা ভালো কাজ করে যাওয়ার প্রতিই তিনি অগ্রাধিকার দেন। ভালো কাজের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে চান তিনি। পাশাপাশি ইরা ও জয়িতা দুজনেরই চাওয়া যে তাদের কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশে নারীরা যেন বিশ্বমানের কাজে অংশ নিতে উৎসাহিত হয়।
পড়ুন: ট্রেড লাইসেন্স করার পদ্ধতি: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, খরচ ও সময়
পরিশেষে
ইউরোপের দেশ ফ্রান্সে উদ্ভুত এই জিমনেশিয়াম ও অভিনয়ের যুগপৎ অঙ্গভঙ্গিমার নাচ ব্যালেকে নিয়ে এখন পর্যন্ত খুব একটা কাজ হয়নি বাংলাদেশে। সামাজিক ভাবে গ্রহণযোগ্যতার দিকটিও এখানে উপলব্ধির ব্যাপার। কিন্তু ইরার মত আরো উদীয়মান তারকাদের বদৌলতে বাংলাদেশের সংস্কৃতি আরও বেশি সমৃদ্ধ হয়ে উঠতে পারে এই বিদেশি নৃত্যকলাটিতে।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আফসান চৌধুরীসহ ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার পেলেন ৬ লেখক
বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এবং গবেষক ও সংবাদ সংস্থা ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশের (ইউএনবি) এডিটর এট লার্জ আফসান চৌধুরীসহ ছয়জনকে ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ২০১৯ ও ২০২০ সালের পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করা হয়।
২০২০ সালে প্রবন্ধ, আত্মজীবনী, ভ্রমণ ও অনুবাদ বিভাগে আফসান চৌধুরী ‘১৯৭১ গণনির্যাতন – গণহত্যা, কাঠামো, বিবরণ ও পরিসর’ শিরোনামের বইটির জন্য পুরস্কার জিতেছেন। কবিতা ও উপন্যাস বিভাগে ‘পথিক পরাণ’ শিরোনামের বইয়ের জন্য কবি মোহাম্মদ রফিক এবং ‘হুমায়ূন আহমেদ তরুণ লেখক’ বিভাগে ‘বাংলাদেশের লোকধর্ম’ শিরোনামের বইটির জন্য রঞ্জনা বিশ্বাস পুরস্কার জিতেছেন।
আরও পড়ুন: ফরিদা হোসেন: বাংলা সাহিত্যের এক স্বপ্ন শিল্পী
২০১৯ সালে প্রবন্ধ, আত্মজীবনী, ভ্রমণ ও অনুবাদ বিভাগে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তার ‘দীক্ষাগুরুর তৎপরতা’ শিরোনামের বইয়ের জন্য পুরস্কার জিতেছেন। কবি হেলাল হাফিজ কবিতা ও উপন্যাস বিভাগে তার ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’ শিরোনামের বইয়ের জন্য, মোজাফফর হোসেন তার ‘পাঠে বিশ্লেষণে বিশ্বগল্প: ছোটোগল্পের শিল্প ও রূপান্তর’ শিরোনামের বইটির জন্য ‘হুমায়ূন আহমেদ তরুণ লেখক’ বিভাগে পুরস্কার বিজয়ী হয়েছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
এই দুই বছরে তিন ক্যাটাগরির পুরস্কারের জন্য এক হাজারের বেশি বই জমা পড়েছে। তার মধ্য থেকে সেলিনা হোসেন, খালিকুজ্জামান ইলিয়াস, বিশ্বজিৎ ঘোষ এবং আবিদ আনোয়ারের সমন্বয়ে গঠিত জুরি প্যানেল প্রতি বছর তিনটি সেরা বই নির্বাচিত করেন।
পুরস্কার বিজয়ী লেখক ও কলামিস্ট আফসান চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে আমাদের দেশে সবার বদলে গুটিকয়েক মানুষের ইতিহাস লিখেছি আমরা। বিদ্রোহী কৃষক সমাজের নেতৃত্বে ২০০ বছরের দীর্ঘ সংগ্রামের পর বাংলাদেশের জন্ম। ১৯৭১ সেই মুহূর্ত যখন এই সংগ্রাম সফল হয়েছিল। এটি কেবল একটি রাষ্ট্র বা সমাজের নয়, সকলের। তাই আমাদের গুটিকয়েক বা গোষ্ঠীর বদলে সবার ইতিহাস লিখতে হবে।
আরও পড়ুন: ‘মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা অস্বীকার করা মানে বাংলাদেশকে অস্বীকার করা’
টাইমস মিডিয়া লিমিটেডের এমডি এ কে আজাদ বলেন, ‘সমকালের জন্য এটা আনন্দের এবং গর্বের বিষয় যে আমরা লেখক ও সাহিত্যিক ব্যক্তিত্বদের অনুপ্রাণিত ও সম্মানিত করতে পেরেছি।’
ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি ও সিইও সেলিম আর এফ হুসেন বলেন,‘এই পুরস্কারটি বাংলা সাহিত্য জগতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে এবং আমরা এটির অংশ হতে পেরে সম্মানিত।’
‘মাসুদ রানা’র লেখক-প্রকাশক কাজী আনোয়ার হোসেন আর নেই
জনপ্রিয় রহস্যধর্মী সিরিজ ‘মাসুদ রানা’র লেখক ও প্রকাশক কাজী আনোয়ার হোসেন মারা গেছেন। বুধবার বিকালে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
কাজী আনোয়ার হোসেনের পুত্রবধূ মাসুমা মাইমুর এক ফেসবুক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি লেখেন, ‘গত অক্টোবরের ৩১ তারিখ প্রোস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়ে আব্বার (কাজী আনোয়ার)। মাঝে পাঁচ বার হসপিটালাইজড ছিলেন। চিকিৎসার সুযোগ খুব একটা পাওয়া যায়নি। একটা ব্রেইন স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক হয়ে সব শেষ হয়ে গেল। ১০ জানুয়ারি থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি।’
কাজী আনোয়ার হোসেনের বোন ও ছায়ানটের সভাপতি সানজিদা খাতুন জানান, গতকাল তাকে বারডেমে ভর্তি করে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেয়া হয়।
আরও পড়ুন: বাঙালি কার্টুনিস্ট নারায়ণ দেবনাথ আর নেই
আগামীকাল সকালে তার নামাযে জানাজা ও দাফন হবে বলেও জানান তিনি।
জাতীয় অধ্যাপক, বিজ্ঞানী, লেখক ও শিক্ষাবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ও সাজেদা খাতুনের ঘরে ১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন কাজী আনোয়ার হোসেন।
তিনি ১৯৫২ সালে সেন্ট গ্রেগরি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। তিনি জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে বিএ এবং ১৯৮১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
পাঠন নন্দিত রহস্যধর্মী সিরিজ ‘মাসুদ রানা’র জন্য ব্যাপক পরিচিত কাজী আনোয়ার হোসেন ১৯৬৩ সালে সেগুনবাগিচায় ‘সেগুনবাগান প্রকাশনী’ হিসেবে তার প্রথম প্রেস ব্যবসা শুরু করেন। তার প্রথম প্রকাশনার নাম ছিল ‘কুয়াশা-১’ এবং এটি প্রকাশিত হয় ১৯৬৪ সালের জুন মাসে।
আরও পড়ুন: ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট ডেভিড সাসোলি আর নেই
পরবর্তীতে প্রকাশনা সংস্থার নাম পরিবর্তন করে ‘শেবা প্রকাশনী’ রাখেন তিনি। কাজী আনোয়ার হোসেন ১৯৬৬ সালে ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের প্রথম সংস্করণ ‘ধ্বংস পাহাড়’ প্রকাশ করেন।
কাজী আনোয়ার হোসেন বিখ্যাত গায়িকা ফরিদা ইয়াসমিনকে বিয়ে করেন। তাদের তিন সন্তান হলেন- ছেলে কাজী মাইমুর হোসেন, কাজী শাহনূর হোসেন ও মেয়ে শাহরিন সোনিয়া।
বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য কাজী আনোয়ার হোসেন ১৯৭৯ সালে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, ১৯৭৪ সালে ‘মাসুদ রানা’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্য ও সংলাপের জন্য বাচসাস পুরস্কার এবং ১৯৬৬ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল হাজারী আর নেই
ফরিদা হোসেন: বাংলা সাহিত্যের এক স্বপ্ন শিল্পী
মুহাম্মদ নিযামুদ্দীন
গুণমুগ্ধ ও ভক্তদের কাছে তিনি ফরিদা আপা হলেও তাঁর পুরো নাম ফরিদা হোসেন। প্রতিভা তাঁর বহুমুখী - সৃষ্টির আনন্দে তিনি সুখী। কি গল্প লেখায়, কি উপন্যাস লেখায়, কি নাটক লেখায়, কি গান রচনায়, কি সুরারোপে, কি আবৃত্তিতে, কি সংগঠক হিসেবে, কি সাহিত্যপত্র সম্পাদনায়, কি সমাজসেবায় - সকল ক্ষেত্রে তাঁর সমান ও স্বচ্ছন্দ বিচরণ। তাঁর কাছে জীবনে থেমে যাওয়া বলে কিছু নেই। ঝর্ণার মতো চলাই তাঁর ছন্দ, চলাতেই আনন্দ। বয়সে তিনি প্রবীণ হলেও সৃজনে-মননে তিনি অরুণ রাঙা তরুণদের সমান বয়সী।
তাঁর জন্ম ১৯ জানুয়ারি কলকাতায়। তাঁর বাবার নাম ফয়েজ আহমেদ এবং মায়ের নাম বেগম ফয়েজুন্নেসা। তাঁর বাবা ছিলেন আইনবিদ এবং উপমহাদেশের শ্রম আন্দোলনের পথিকৃত। তাঁর পৈত্রিক নিবাস চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার শায়েরখালি গ্রামে। পাঠ্যাবস্থা থেকে প্রতিভাবান ছিলেন তিনি। ষাটের দশকে ছাত্রী থাকা অবস্থায় পাইওনিয়ার পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর গল্পগ্রন্থ 'অজান্তা', যার প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন প্রখ্যাত শিল্পী ও টিভি ব্যক্তিত্ব মোস্তফা মনোয়ার। গল্প, উপন্যাস ও নাটক মিলে এ পর্যন্ত তার ৪০টির মতো বই প্রকাশিত হয়েছে। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৪ সালে তিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার একুশে পদক লাভ করেন। দীর্ঘকাল পর্যন্ত তিনি আন্তর্জাতিক সাহিত্য সংগঠন পেন বাংলাদেশ শাখার সভাপতি ছিলেন। পেন-এর আমন্ত্রণে পৃথিবীর বহু দেশ সফর করেন তিনি। পেন ছাড়াও বাংলা একাডেমি (জীবন সদস্য), বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ (সহ-সভানেত্রী ও জীবন সদস্য), আঞ্জুম শিশু কল্যাণ সংস্থা (প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রী), গুলশান লেডিস কমিউনিটি ক্লাব (সদস্য), গুলশান ক্লাবসহ বিভিন্ন ক্লাব , সংগঠন ও সেবামূলক সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত তিনি। 'অবিনশ্বর' নামে যে একটি সাহিত্যপত্র দীর্ঘকাল থেকে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে, তিনি তার সূযোগ্য সম্পাদক। যখন তিনি কথা বলেন, মিরসরাইয়ের মেয়ে হলেও উচ্চারণে আঞ্চলিকতার কোনো আছর তার মধ্যে মোটেও পরিলক্ষিত হয় না। মনে হয়, উচ্চাঙ্গের উচ্চারণে কেউ বাংলাভাষার আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিত্ব করছেন। তাঁর মুখের ভাষা বেশ মোলায়েম ও মধুর এবং সর্বোপরি তিনি একজন মানবিক গুণসম্পন্ন মননশীল মানুষ।
আরও পড়ুন: বিটিভির মাধ্যমে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও বিকাশের উদ্যোগ
২০১৮ সালের দিকে আমার মেয়ে আনিকা আঞ্জুমের পড়ালেখার প্রয়োজনে আমাকে নয় মাস থাকতে হয়েছিল ঢাকায়। মেয়ে তখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউআইটিএস-এ বিবিএ অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্রী। যমুনা ফিউচার পার্কের সামান্য সামনে বাঁশতলায় বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাস। এর চট্টগ্রাম ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেয়ার কারণেই মেয়েকে ঢাকার ক্যাম্পাসে ভর্তি করাতে বাধ্য হই। তখন আমরা মিরপুর ২-এ সনি সিনেমা হলের পিছে থাকতাম আত্মার আত্মীয় শিহাবের পাঁচতলা ভাড়া বাসায়। মিরপুর থেকে বাঁশতলায় বাসে যাওয়া-আসা করাটা ছিল তখন আমাদের প্রতিদিনের বাস্তবতা। বাঁশতলার কাছাকাছি গুলশানে ফরিদা আপার বাসা। তিনি প্রায়ই তাঁর ব্যক্তিগত পিএস সেলিমকে পাঠাতেন আমাকে তাঁর বাসায় নিয়ে যেতে। তেমনি একটি দিন ছিল ২০১৬ সালের ৭ আগস্ট। মেয়েকে ক্যাম্পাসে পৌঁছে দিয়ে সেলিমের সঙ্গে যাই ফরিদা আপার বাসায়। তখন সকাল সাড়ে দশটা কি এগারটা। বাসায় প্রবেশের পাঁচ মিনিট পরেই অতিথি কক্ষে আসেন ফরিদা আপা। সালাম বিনিময়ের পর প্রথমেই তাঁকে তাঁর প্রয়াত বাবার ওপর প্রকাশিতব্য পুস্তকের প্রুফ দেখা কপিগুলো দেই, যেগুলো তিনি আমাকে দিয়েছিলেন প্রুফ দেখে দিতে। এরপর উঠে আসে সৈয়দ আলী আহসানের ওপর 'অবিনশ্বর'-এর প্রকাশিতব্য সংখ্যাটির কথা, যেটির অতিথি সম্পাদক হওয়ার জন্য তিনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন আমাকে। লক্ষ্য করেছি, সৈয়দ আলী আহসান সম্পর্কে কিছু বলার সময় তাঁর অবয়বে আবেগ ও শ্রদ্ধার শুদ্ধ ও শুভ্র প্রকাশ। সৈয়দ আলী আহসান সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘স্যার আমাকে বলতেন, যেখানেই বাস করো না কেন, সেই স্থানকে যদি আনন্দের স্থান হিসেবে গড়ে তুলতে পার, তবে কাজ করতেও আনন্দ পাবে, সাফল্য পাবে।’
আরেক স্মৃতিচারণে তিনি বলেন, “একবার আমি ওমরা করতে যাবো, গিয়েছি আলী আহসান স্যারের বাসায়- তাঁর কাছ থেকে ওমরা সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিতে। স্যার হেসে আমাকে বলেন, 'সবাই আসে আমার কাছে তদবির নিয়ে - কেউ চাকুরির তদবির নিয়ে, কেউ লেখা প্রকাশের তদবির নিয়ে। এই প্রথম কেউ এলো ওমরা সম্পর্কিত পরামর্শ নিতে।’ এরপর স্যার হাত তুলে আমার জন্য দোয়া করে দেন।"
এরই মধ্যে চলে আসে চা-নাস্তা। নিজের প্রথম গল্পগ্রন্থ 'অজান্তা'র একটি আদি কপি দেখিয়ে তিনি বলেন, "তখন আমি ছিলাম প্রচারবিমুখ। নিজেকে আড়ালে রাখতাম সবসময়। আমার বিয়ের যিনি উকিল ছিলেন, তিনি ছিলেন আব্বার পূর্ব পরিচিত। তিনি একদিন আসেন আমাদের বাসায়। এসে কাছে ডাকেন আমাকে এবং বলেন, নিজেকে আড়ালে রাখলে প্রতিভা প্রকাশ পাবে কি করে?"
নিজের স্বামী মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন সম্পর্কে বলেন, "বিয়ের আগে তিনি আমার গল্পগ্রন্থ 'অজান্তা' পড়েছেন এবং সেটি সবসময় তাঁর বালিশের নিচে থাকতো। একদিন তিনি টিভি ভবনে যান তাঁর বন্ধু জাকিউদ্দীন আহমদকে নিয়ে। তখন টিভি ভবন ছিল ডিআইটি'তে। আমি তখন টিভি'র জন্য নাটক লিখতাম, পরিচালনা করতাম। আমার বড় ভাই ছিলেন তখন টিভি'র চীফ ক্যামেরাম্যান। আমি সেদিন নাটক নির্দেশনার কাজে ব্যস্ত ছিলাম। আমাকে দেখে এসে পরে তারা মন্তব্য করেছিলেন - মেয়ে তো নয়, যেন আগুন!”
আরও পড়ুন: ‘মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা অস্বীকার করা মানে বাংলাদেশকে অস্বীকার করা’
তিনি আরও বলেন, "সেসময় আমি কাজের অবসরে এক জায়গায় বসে থাকতাম, হৈ-হুল্লোড় করা থেকে দূরে থাকতাম। কেউ এসে আমার পাশে বসলে, উঠে যেতাম ; ভাবতাম- পুরুষ কখনও ভালো হতে পারে না। পাশে বসার সুযোগ নিয়ে একসময় হাতের ওপর হাত রাখবে, তারপর বলে বসবে- আমি তোমাকে ভালোবাসি! পুরুষ সম্পর্কে তখন আমার ধারণা ইতিবাচক ছিল না।”
বিয়ের পরের দিনগুলো সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, "বিয়ের পর বহু স্ট্রাগল করতে হয়েছে আমাকে। দশ বছর পর্যন্ত তো কোনো লেখালেখিই করতে পারিনি! সংসার সামলাতে হয়েছে। শ্বাশুড়ি, দেবর, ননদ এবং নিকট আত্মীয়স্বজন সকলকে দেখতে হয়েছে আমাকে। কত কষ্ট যে করেছি, স্ট্রাগল করেছি, বলে শেষ করা যাবে না। শ্বশুর পক্ষের কোনো কোনো মহিলার উপহাসও শুনতে হয়েছে। কিন্তু আমি কিছু বলতাম না। চুপ থাকতাম। বিয়ের পর কেউ কেউ তো এমনও বলেছে - কি বউ আনলো ঘরে, কেঁচকি মাছও রাঁধতে জানে না। আমার বড় ভাই আমার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে চুপ থাকতে পারতেন না, প্রতিবাদ করতেন। তিনি তাদেরকে বলতেন, সে কেঁচকি মাছ রাঁধতে জানে না - সেটাই শুধু তোমরা দেখলে, কিন্তু সে যে গল্প লিখে, গান লিখে, কবিতা লিখে, সেটা তোমাদের চোখে পড়ে না! দেখি, সে জাতীয় কিছু তোমরা নিজেরা লিখে দেখাও তো!"
নিজের স্বামীর সুনাম করতে গিয়ে ফরিদা হোসেন বলেন, "আমার স্বামী সবসময় আমাকে সমর্থন করতেন, সব সংকটে সঙ্গে থাকতেন। তাঁর সহযোগিতা-সমর্থন ছাড়া আজ আমি এ পর্যায়ে পৌঁছতে পারতাম না। তিনি লেখালেখি করতেন না ঠিকই, কিন্তু ভালো সাহিত্য বুঝতেন। বিয়ের পর ব্যবসায়িক কারণে যখন করাচি থাকতেন, আমাকে না লিখলেও আমার বোনদেরকে চিঠি লিখতেন। পরে সেসব দেখিয়ে বোনেরা আমাকে বলতো, দেখ আপা, পড়ে দেখ, দুলাভাই কি সুন্দর ভাষায় চিঠি লিখেছেন!"
আরও পড়ুন: শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ১০৭তম জন্মবার্ষিকী আজ
ফরিদা আপার সঙ্গে এরকম আরও একদিন আলাপ হয়েছিল তাঁর বাসায়। সেদিন ছিল ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর। সেদিন কথায় কথায় চলে আসে সৈয়দ রশিদ আহমদ জৈনপুরী (র.)-এর প্রসঙ্গ। জৈনপুরী (র.)-কে তিনি বাবা হুজুর বলে ডাকতেন। তাঁকে তিনি ও তাঁর স্বামী খুব শ্রদ্ধা করতেন। একবার জৈনপুরী হুজুরের সঙ্গে তিনি হজ্বেও গিয়েছিলেন। সে কাফেলায় বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক ড. হারুন-উর-রশীদসহ আরও অনেকেই গিয়েছিলেন। সেই হজ্ব চলাকালীন সময় একদিন বাথরুমে পিছলে পড়ে প্রচুর ব্যথা পেয়েছিলেন ফরিদা আপা। পরদিন কাবা শরীফ তাওয়াফে যেতে পারবেন কিনা সংশয়ে ছিলেন। বাবা হুজুর তথা জৈনপুরী হুজুরকে ব্যথার কথা বললে তিনি রুম থেকে এনে কি একটা ওষুধ দেন ফরিদা আপাকে এবং খেতে বলেন। খেতে দিয়ে হুজুর বলেন, ইনশাআল্লাহ ভালো হয়ে যাবেন। পরদিন সকালে ফরিদা আপা দেখেন তিনি পুরোপুরি ব্যথামুক্ত এবং দিব্যি হাঁটতে পারছেন। এবং তাওয়াফসহ হজ্বের যাবতীয় নিয়মকানুন পালন করতে পারছেন। নিজের অবস্থা দেখে আপা অবাক হয়ে যান! আরেকদিন আপা নাকি তাঁর এক আত্মীয়ের বাসায় যাওয়ার সময় জৈনপুরী হুজুরকে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে দেখেন। বাসায় গিয়ে দেখেন হুজুর ছাদের ওপর হাঁটাহাঁটি করছেন। একই ব্যক্তিকে কয়েক মিনিটের ব্যবধানে দু'জায়গায় দেখতে পেয়ে তিনি অবাক হয়ে যান! আপা জৈনপুরী হুজুরের বহু কেরামতির কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে শোনান আমাকে।
উল্লেখ্য, এর দেড় দশক আগে দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকায় হুজুরের ধারাবাহিক 'সংলাপ' পড়ে আমিও মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম, নিজের অজান্তে তাঁর ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। তখন ব্যক্তিগত এক ব্যাপারে আমি এতই বিক্ষুব্ধ ও বিপর্যস্ত ছিলাম যে, কোনোমতেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলাম না। হুজুরের একটি 'সংলাপ' পড়ে আমি শান্ত হয়ে যাই, শান্তি লাভ করি। সেই লেখাটি পড়ে আমার অন্তরের আগুন পানিতে পরিণত হয়। আমার কাছে তখন কেন জানি মনে হয়েছিল, দূর থেকে হলেও আমি তাঁর রুহানি ফয়েজ উপলব্ধি করতে পারছিলাম। যতটুকু মনে পড়ে, লেখাটির উপশিরোনাম 'ক্রোধের আগুন ও বিনয়ের পানি'-এ জাতীয় কিছু ছিল। সেটি প্রকাশিত হয়েছিল দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকায়। আজ সেসব স্মৃতিরা পোহায় রোদ্দুর।
আরও পড়ুন: কসমস আতেলিয়ার৭১ এর আয়োজনে 'আর্টিস্ট রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম'
বিটিভির মাধ্যমে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও বিকাশের উদ্যোগ
বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে দেশের ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও বিকাশের উদ্যোগ ‘বনফুল থেকে লোক লোকালয়’ অনুষ্ঠানের ৩৮ বছর পূর্তি উপলক্ষে খাগড়াছড়ি জেলার সাংস্কৃতিক সংগঠক ও শিল্পীদের পক্ষ থেকে এক আনন্দ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
শুক্রবার খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বর্ষপূর্তির কেক কাটা এবং শিল্পীদের পক্ষে স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
আয়োজনে বক্তব্য দেন লোকলোকালয় অনুষ্ঠানের সংগঠক ও উপস্থাপক চৌধুরী আতাউর রহমান। অন্যান্যদের মধ্যে শিক্ষাবিদ ধর্মরাজ বড়ুয়া, বিশিষ্ট শিল্পী সংগঠক প্রকৌশলী জীবন রোয়াজা, খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি দীলিপ চৌধুরী, সিনিয়র সাংবাদিক মুহাম্মদ আবু দাউদ ও খাগড়াছড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম-সম্পাদক সাংবাদিক আজহার হীরা।
শিল্পীদের পক্ষে স্মৃতিচারণ করেন অংচাইরী মারমা, ক্রাঞোরী মারমা। শিল্পী,সংগঠকরা অনুষ্ঠানের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: শতকণ্ঠে কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা