শিল্প-সংস্কৃতি
সুলতানের শিল্পকর্ম গবেষণায় অর্থায়ন করবে যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের অর্থায়নে প্রথমবারের মতো এসএম সুলতানের শিল্পকর্ম নিয়ে তিন বছরব্যাপী যুগান্তকারী গবেষণা ও পুনরুদ্ধার কাজ শুরু হচ্ছে। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্টদূত আর্ল মিলার এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ নুরুল হুদা ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে এসএম সুলতানের শিল্পকর্ম বিষয়ক এই সংস্কৃতি সংরক্ষণ প্রকল্প উদ্বোধন করেন।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের 'অ্যাম্বাসেডরস ফান্ড ফর কালচারাল প্রিজারভেশন' এর ২০ বছর পূর্তি এবং বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তীর সম্মানে যুক্তরাষ্ট্র এসএম সুলতানের চিত্রকর্ম নিয়ে গবেষণা এবং পুনরুদ্ধারে কাজ করার জন্য বেঙ্গল ফাউন্ডেশনকে অর্থায়ন করছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা মুক্ত দেশের তালিকা ২০২১
তিন-বছরের এই উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মর্যাদাপূর্ণ অ্যাম্বাসেডরস ফান্ড ফর কালচারাল প্রিজারভেশন (এএফসিপি) থেকে অর্থায়ন করা হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের অন্যতম বিখ্যাত শিল্পী সুলতানের শিল্পকর্ম নিয়ে গবেষণা, বিশ্লেষণের পাশাপাশি তার চিত্রকর্মগুলো পুনরুদ্ধার করা হবে। মূল্যবান এই শিল্পকর্মগুলো পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে এই প্রকল্পটি বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কে সামষ্টিক বোঝাপড়া বাড়াতে সহায়তা করবে এবং ভবিষ্যত্ প্রজন্মের জন্য এই শিল্প ও ইতিহাস সংরক্ষণ করবে।
রাষ্ট্রদূত মিলার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পের ঘোষণা দেয়ার জন্য বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরীর হাতে ঘোষণাফলক তুলে দেন এবং তিনি বেঙ্গল গ্যালারিতে চলমান সুলতানের কয়েকটি বিখ্যাত শিল্পকর্মের প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন।
দূতাবাস জানায়, এএফসিপি বিদেশে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক উদ্যোগগুলোর অন্যতম। গত ২০ বছরে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারমূলক ১২টি এএফসিপি প্রকল্পে ৮ লাখ ৭০ হাজার আমেরিকান ডলার এরও বেশি আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।
পড়ুন: পানছড়িতে দিনব্যাপী কঠিন চীবর দান
ভ্যালি সিটি: পূণ্যভূমি সিলেটে বাংলাদেশের লন্ডনি পাড়া
পানছড়িতে দিনব্যাপী কঠিন চীবর দান
খাগড়াছড়ির পানছড়ি তারাবন ভাবনা কেন্দ্রে ৮ম দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুই প্রু চৌধুরী অপু।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠান মালার মধ্যে সকালে বৌদ্ধ নর-নারীদের পঞ্চশীল গ্রহণ, বৌদ্ধ মুর্তি দান, সংঘদান, অষ্ট পরিস্কার দান, চীবরদান, কল্পতরু দান ও বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পিন্ডদানসহ নানা বিধ দান করা হয়।
আরও পড়ুন: খাগড়াছড়িতে বৌদ্ধ বিহারে দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত
অনুষ্ঠানে প্রধান ধর্মীয় আলোচক হিসেবে ছিলেন, সংঘ প্রধান শ্রীমৎ বৌধিপাল মহাস্থবির ভান্তে, রাঙ্গামাটি বনবিহারের আবাসিক প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির, শ্রীমৎ জ্ঞান জ্যোতি ভান্তে ও তারাবন ভাবনা কেন্দ্রের বিহারাধ্যক্ষ আদি কল্যান স্থবির।
আরও পড়ুন: প্রবারণা পূর্ণিমা: পাহাড়ে সম্প্রীতির কল্প জাহাজ ভাসলো
দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানে ধর্মীয় দেশনায় দেশ জাতি সকলের মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করা হয়।
খাগড়াছড়িতে বৌদ্ধ বিহারে দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ও নানা আনুষ্ঠানিকতায় খাগড়াছড়িতে ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ বিহারে দানোত্তম কঠিন চীবর দান হচ্ছে।
শুক্রবার য়ংড বৌদ্ধ বিহারের দায়ক দায়িকাদের আয়োজনে সকাল থেকে শুরু হয়েছে দিনব্যাপী কঠিন চীবর দান উৎসব। এই উপলক্ষে দূর দূরান্ত থেকে পূণ্য সঞ্চয় করার জন্য শতশত পূণ্যার্থীরা বিহারে সমাগম হয়েছে।
কঠিন চীবর দান উপলক্ষে বিহারে বুদ্ধ পূজা, পঞ্চশীল গ্রহণ, সংঘদান, অষ্ট পরিস্কার দান, পানীয়, কল্পতরু দানসহ সকল দানীয় বস্তু দান করা হয়। এসময় ধর্মীয় গুরুরা পুণ্যার্থীদের উদ্দেশে য়ংড বৌদ্ধ বিহারের বিহারাধ্যক্ষ ভদন্ত কেমাসারা থের ধর্ম দেশনা দেন। এসময় জগতের সকল প্রাণীর সুখ শান্তি ও মঙ্গল কামনা করা হয়।
আরও পড়ুন: প্রবারণা পূর্ণিমা: পাহাড়ে সম্প্রীতির কল্প জাহাজ ভাসলো
অনুষ্ঠানে মং সার্কেলের রাজা সাচিংপ্রু চৌধুরী, মারমা সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান চাইথোই অং মারমা, মারমা ঐক্য পরিষদ নেতা ম্রাসাথোয়াই মারমা, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কল্যাণ মিত্র বড়ুয়াসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় দায়ক দায়িকারা প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, ফুল-ফল, ছোয়াইং (খাবার) বৌদ্ধসহ ভান্তিদেরকে দান করেন। সন্ধ্যায় ভগবান বৌদ্ধের উদ্দেশে আকাশে প্রদীপ (ফানুস) উড়িয়ে দেয়া হবে।
আরও পড়ুন: ফ্রাঙ্কফুর্ট ৭৩তম আন্তর্জাতিক বইমেলা: বাংলাদেশ স্টলের উদ্বোধন
একইভাবে জেলা সদরের ধর্মপুর আর্য্য বন বিহারে দু’দিন ব্যাপী দানোত্তাম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান শেষদিন শুক্রবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। খাগড়াছড়ি সদরের কল্যাণপুর মৈত্রী বৌদ্ধ বিহারে দায়ক দায়িকা ও উপাসক উপাসিকাদের আয়োজনে ২৯তম দানরাজা দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব হয়েছে।
আরও পড়ুন: ২০০ কেজি সোনায় কারুকার্যমণ্ডিত হতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পবিত্র কোরআন
প্রসঙ্গত, আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় তার প্রধান সেবিকা মহা পূণ্যবর্তী বিশাখা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা তৈরি করে সুতাগুলো রং করে বয়ন করে সেলাই শেষে চীবর বিশেষ পরিধেয় বস্ত্র দান কার্য সম্পাদন করেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মহা যঙ্গ সম্পাদন করার কারণে বৌদ্ধরা এই ধর্মীয় উৎসবকে কঠিন চীবর দান বলে থাকে।
প্রবারণা পূর্ণিমা: পাহাড়ে সম্প্রীতির কল্প জাহাজ ভাসলো
প্রবারণা পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। এই উৎসবেরই একটা অংশ হচ্ছে ফানুস উড়ানো। ফানুসের আলোয় আলোকিত হওয়ার পর কল্প জাহাজ ভাসার আনন্দে মেতেছিল কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ।
বাঁশ, কাঠ, বেত ও রঙ-বেরঙের কাগজের কারু কাজে তৈরি দৃষ্টিনন্দন পাঁচটি কল্প জাহাজ ভাসালো রামুর চেরাংঘাট বাঁকখালী নদীতে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উৎসব হলেও এই দিন সনাতন, মুসলিম, খৃষ্টানসহ পর্যটকদের সম্প্রীতির মহা মিলনমেলায় পরিণত হয়।
সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পের এই সময়ে উৎসবটি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সম্প্রীতির মহা মিলনমেলায় পরিণত হয়। রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা ও জাহাজ ভাসা উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে শত বছরের অধিক সময় ধরে চলা এ উৎসব যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মহা মিলনমেলা।
আরও পড়ুন: ফ্রাঙ্কফুর্ট ৭৩তম আন্তর্জাতিক বইমেলা: বাংলাদেশ স্টলের উদ্বোধন
দেখা গেছে, কক্সবাজারের রামুর বাঁকখালী নদীতে দৃষ্টিনন্দন কল্প জাহাজে হাতি, সিংহ, ঘোড়া, ময়ুর ভাসলো। ২৮ বুদ্ধের আসন ও বৌদ্ধ প্যাগোডার আকৃতিতে দৃষ্টিনন্দন কল্প জাহাজে ভাসলো এসব প্রাণী। পাঁচটি কল্প জাহাজে ঢোল, কাঁসর, মন্দিরাসহ নানা বাদ্যের তালে তালে শিশু-কিশোর ও যুবকরা মেতে ওঠে বাঁধভাঙা আনন্দে। রঙ-বেরঙের কাগজে আকর্ষণীয় নির্মাণ শৈলীতে নদীর এপার থেকে ওপারে পাঁচটি কল্প জাহাজে ‘বুদ্ধ কীর্তন’ ও নানা বাদ্যের তালে তালে নাচ চলে। আর নদীর দু’পাড় ছিল বৌদ্ধ, সনাতন, খৃষ্টান, মুসলিম ধর্মাবলম্বী নানা বয়সী মানুষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিলন মেলা। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণে বারেবারেই ধর্মের সীমারেখা অতিক্রম করে এ উৎসব মূলত সার্বজনীনে পরিণত হয়।
আরও পড়ুন: রবীন্দ্র-নজরুল প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে নড়াইলে বিশেষ আয়োজন
সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাষ্পের এ যুগে অসাম্প্রদায়িক চেতনার সম্প্রীতির মহা মিলনমেলায় পরিণত হয় এ জাহাজ ভাসা উৎসব। আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূণির্মা পর্যন্ত তিনমাস বর্ষাব্রত পালনের শেষদিন প্রবারণা পূর্ণিমা অত্যন্ত জমকালোভাবে পালনের ধারাবাহিকতায় চলে জাহাজ ভাসা উৎসব। প্রবারণা পূর্ণিমা পালনের পরদিন বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা থেকে ঐতিহ্যবাহী কল্প জাহাজ ভাসা উৎসব চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। শত বছরের অধিক সময়ের ঐতিহ্যবাহী এ জাহাজ ভাসা উৎসব যেন নির্মল আনন্দ এবং সৌহার্দ্য সম্প্রীতির সুদৃঢ় বন্ধন। এটাই হোক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণের সহযোগী। এ উৎসবের মধ্যদিয়ে ছড়িয়ে পড়ুক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আসল বাংলাদেশের চিত্র।
আরও পড়ুন: ২০০ কেজি সোনায় কারুকার্যমণ্ডিত হতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পবিত্র কোরআন
রামুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রণয় চাকমা বলেন, ‘শুধু বৌদ্ধ সম্প্রদায় নয়, সকল সম্প্রদায়ের মানুষ জাহাজ ভাসা উৎসবে যোগ দিয়েছেন। ধর্ম যার যার, উৎসব হোক সবার। যে যার ধর্ম পালন করবে, কেউ কারো ধর্মে আঘাত করবে না, এটাই হোক আমাদের শিক্ষা।’
কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনে সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, প্রবারণা দিবসে সজ্জিত জাহাজে করে বৈশালী নগরবাসীর অন্তহীন দুর্দশা দূর করে বিম্বিসার রাজগৃহে ফেরার পথে মানুষ, দেবতা, বক্ষ্রা, নাগ সবাই মহামতি বুদ্ধকে পূজা করেছিলেন। সেই হৃদয়স্পর্শী স্মৃতিকে অম্লান রাখতে শত বছর ধরে রামুতে জাহাজ ভাসা উৎসব লালন করে আসছে।
কালিদাস কর্মকারের স্মরণে গ্যালারি কসমসের দিনব্যাপী আয়োজন
একুশে পদক বিজয়ী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী কালিদাস কর্মকারের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার দিনব্যাপী কর্মসূচির মাধ্যমে তাকে স্মরণ করেছে গ্যালারি কসমস।
রাজধানীর মালিবাগের কসমস সেন্টারে গ্যালারি কসমস এবং কসমস আতেলিয়ার৭১ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
কালিদাস কর্মকার তার মনোমুগ্ধকর শিল্পকর্মের মাধ্যমে বাংলাদেশি শিল্প ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য প্রশংসিত। ২০১৯ সালের ১৮ অক্টোবর ৭৩ বছর বয়সে কালিদাস কর্মকার মারা যান।
গ্যালারি কসমসের একজন উপদেষ্টা ছিলেন কালিদাস কর্মকার। স্মরণ সভায় কালিদাস কর্মকারের শুভাকাঙ্ক্ষীরা দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
আরও পড়ুন: শিল্পী কালিদাস কর্মকারের ৭৫তম জন্মবার্ষিকী রবিবার
আইয়ুব বাচ্চুর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ
কিংবদন্তি গায়ক, গিটারিস্ট, সুরকার, গীতিকার ও সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ সোমবার। ২০১৮ সালের এই দিনে ৫৬ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান জনপ্রিয় সংগীত ব্যান্ড এলআরবি’র (লাভ রানস ব্লাইন্ড) প্রতিষ্ঠাতা ও ফ্রন্টম্যান আইয়ুব বাচ্চু।
১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের এই কিংবদন্তি, যিনি এবি নামেই বেশি পরিচিত।
মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় তার অনেক ভক্ত এবং সংগীত তারকা রক কিংবদন্তির প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
বাচ্চুর স্ত্রী ফেরদৌস চন্দনা আইয়ুব জানান, আইয়ুব বাচ্চুর স্মরণে একটি জাদুঘর তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে যেখানে তার ব্যবহৃত ৪০টি গিটার প্রদর্শন করা হবে।
পড়ুন: দেশের প্রথম ভাসমান মসজিদ ও সাতক্ষীরার একজন ইমামের গল্প
১৯৭৮ সালে চট্টগ্রামের স্থানীয় ব্যান্ড ‘ফিলিংস’-এ যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে ব্যান্ড জগতে প্রবেশ করেন আইয়ুব বাচ্চু। এরপর ১৯৮০ সালে তিনি যোগ দেন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ‘সোলস’ ব্যান্ডে। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তিনি এই ব্যান্ডের সাথেই যুক্ত ছিলেন। পরে ১৯৯১ সালে গড়ে তোলেন ব্যান্ডদল এলআরবি।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এলআরবি’র মূল কন্ঠশিল্পী ভোকাল ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু।
‘আম্মাজান’, ‘আমি তো প্রেমে পড়িনি’, ‘আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘সেই তুমি’, ‘ফেরারি এই মনটা আমার’, ‘চলো বদলে যাই’, ‘এখন অনেক রাত’, ‘হাসতে দেখো গাইতে দেখো’ সহ আরও অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা তিনি।
পড়ুন: তোগুড়: তরমুজের রস দিয়ে বানানো নতুন গুড়
নাজমুন নাহার: পৃথিবীর ১৫০তম দেশ ভ্রমণ করে ইতিহাস সৃষ্টিকারী বাংলাদেশি পরিব্রাজক
রবীন্দ্র-নজরুল প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে নড়াইলে বিশেষ আয়োজন
নড়াইলে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮০তম এবং প্রেম ও বিদ্রোহের অমর কবি জাতীয় কবি কাজী নজরুলের ৪৬তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং দু’কবির জীবন ও সৃষ্টির ওপর আলোচনা সভা অুনষ্ঠিত হয়েছে।
নড়াইল জেলা শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে শনিবার (৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান।
আরও পড়ুন: গুগল ডুডলে কাজী নজরুলের ১২১তম জন্মবার্ষিকী
অনুষ্ঠানে জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের জীবন ও সৃষ্টির ওপর নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. রবিউল ইসলাম এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন ও সৃষ্টির ওপর নড়াইল আব্দুল হাই ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান আলোচনা করেন।
আরও পড়ুন: টিআইসিতে তির্যকের নাটক রবীন্দ্রনাথের ‘রাজা’
অনুষ্ঠানে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মলয় কুন্ডু, সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সাইফুর রহমান হিলু, রওশন আরা কবির লিলি, নড়াইল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও মূর্ছনা সংগীত নিকেতনের সভাপতি শামীমূল ইসলাম টুলু, জেলা শিল্পকলা একাডেমির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসলাম খান লুলু, মুন্সি আসাদুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরে শিল্পকলা একাডেমি ও বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা সংগীত-কবিতা ও নৃত্য পরিবেশন করেন।
আরও পড়ুন: শিশুদের শিল্প, সংস্কৃতি চর্চায় উৎসাহিত করতে ইরানি রাষ্ট্রদূতের আহ্বান
কুমিল্লায় পূজা হবে ৭৬৪ মণ্ডপে
কুমিল্লায় এবার ৭৬৪ পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। মন্দির, মণ্ডপগুলোতে দুর্গাৎসব উদযাপনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। চলছে পূজা মন্ডপকে আকর্ষনীয় করে তুলতে আলোকসজ্জা ও গেট নির্মাণের প্রতিযোগিতা। প্রতিমার গায়ে শেষ রংয়ের আঁচড় দিচ্ছেন শিল্পীরা। তবে গত বছরের তুলনায় এবার প্রতিমা তৈরির খরচ বেড়েছে।
আরও পড়ুন: দুর্গাপূজা: বাগরেহাটে ৬৩৩ মণ্ডপে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে
সংশ্লিষ্টরা জানান, জেলার ১৮ উপজেলায় এ বছর মণ্ডপে পূজা উদযাপন হবে। উপজেলা মণ্ডপের সংখ্যা হচ্ছে-আদর্শ সদরে ৭২, সদর দক্ষিণে ৪৩, চৌদ্দগ্রামে ২২, চান্দিনায় ৭১, বুড়িচংয়ে ৪৩, ব্রাহ্মণপাড়ায় ১২, বরুড়ায় ৮৫, লাকসামে ৩৬, মনোহরগঞ্জে ১২, লাঙ্গল কোটে ৯, দাউদকান্দিতে ৪৬, তিতাসে ছয়, হোমনায় আট, মেঘনায় চার, দেবিদ্বারে ১৮, বাঙ্গরায় ৪৫, মুরাতনগরে ২১ ও লালমাইয়ে ১৬টি।
আরও পড়ুন: মাগুরায় ৭১২ মণ্ডপে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি
পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল পাল বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা উদযাপন করবো। বরবরের মতোই এবারও পূজা উদযাপন হবে। আশা করছি পূজা চলাকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন। তারা আমাদেরকে এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন।’
আরও পড়ুন: দুর্গাপূজা উপলক্ষে বেনাপোল দিয়ে ভারতে গেলো ২০৯ মেট্রিক টন ইলিশ
জেলা পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ জানান, জেলার প্রত্যেকটি পূজামণ্ডপে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হবে। পূজা চলাকালীন সময়ে সাদা পোশাক ও পোশাক ধারী পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে। এই ব্যাপারে আমরা জনসাধারণ ও পূজারীদের সহায়তা চাইবো।
রাজধানীতে রোকেয়া সুলতানার শিল্পকর্ম প্রদর্শনী উদ্বোধন
ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্বের ৫০ বছর স্মরণে গুলশানে অবস্থিত ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে শিল্পী রোকেয়া সুলতানার শিল্পকর্ম প্রদর্শনী উদ্বোধন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) এই প্রদর্শনী উদ্বোধন করা হয়।
বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ, লেখক এবং ১৯৭১ সালের গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসির মামুন এবং ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এসময় বেঙ্গল ফাউন্ডেশন কর্তৃক সম্প্রতি প্রকাশিত শিল্পী রোকেয়া সুলতানার শিল্পকর্ম বিষয়ক একটি মনোগ্রাফও উদ্বোধন করা হয়।
অনুষ্ঠানটির মধ্য দিয়ে ভারতে রোকেয়া সুলতানার শিল্পকর্মের প্রথম স্বতন্ত্র প্রদর্শনের সূচনা হয়েছে, যা আগামী ২৩ অক্টোবর নয়াদিল্লির ললিত কলা একাডেমিতে শুরু হবে। সম্পূর্ণরূপে আইসিসিআর কর্তৃক আয়োজিত শিল্পকর্ম প্রদর্শনীটি ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কলকাতায়ও অনুষ্ঠিত হবে।
ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, এই প্রদর্শনীটি শান্তিনিকেতনে অধ্যয়নকালীন শিল্পীর মনোমুগ্ধকর যাত্রাকে চিত্রিত করেছে। তিনি শান্তিনিকেতনে সোমনাথ হোর, সনৎ কর এবং লালু প্রসাদ শ’র তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষিত হয়ে বাংলাদেশে তার শিল্পীজীবনের প্রসার ঘটিয়েছেন।
রোকেয়া সুলতানা একজন পুরস্কারপ্রাপ্ত বাংলাদেশি প্রিন্টমেকার এবং চিত্রশিল্পী।
তিনি ১৯৮৩ সালে আইসিসিআর বৃত্তি নিয়ে বিশ্বভারতী, শান্তিনিকেতন থেকে চারুকলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
পড়ুন: গান্ধীজীর জীবন এবং বাণী আজও প্রাসঙ্গিক: দোরাইস্বামী
মাগুরায় ৭১২ মণ্ডপে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি
দুর্গাপূজার মহোৎসবে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী ১০ পদের মিষ্টি
শারদীয়া দুর্গাপূজা মানেই আশ্বিন মাসের সংক্রান্তি জুড়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মহান ধর্মীয় উৎসব। বাঙালিদের এই মহোৎসবে দেবী দুর্গার স্তুতির সাথে সাথে পেট পূজাও চলে সমানতালে। এসময় আরাধনার জন্য তৈরি প্রসাদের স্বাদে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকার সীমানা ছাড়িয়ে দিগ্বিদিক একাকার হয়ে যায়। পূজা উপলক্ষে একদিকে যখন চলে পোশাক-আসাক ও সাঁজ-গোজের কড়চা, অন্যদিকে ভোজন রসিক বাঙালি স্বপ্ন বুনতে থাকে মিষ্টি দিয়ে উদরপূর্তির। এ শুধু ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত জিবের খোরাক মিটানো নয়, দুর্গাপূজার মিষ্টি বাঙালির ঐতিহ্যও বটে। বাঙালির ঘরে ঘরে অন্যান্য জমকালো অনুষ্ঠানগুলোতেও ভোজন পর্বের এক বিরাট অংশ জুড়ে জায়গা করে নেয় এই মিষ্টিগুলো।
দুর্গাপূজার এই মিষ্টিগুলোতেই ভরপুর থাকবে এবারের ফিচারটি।
দুর্গাপূজায় বাঙালির ঐতিহ্যবাহী ১০ পদের মিষ্টি
নলেন গুড়ের সন্দেশ
শীতকালে খেজুরগাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় খাঁটি নলেন রস আর এই রসেই বানানো হয় নলেন গুড়। এই গুড়ের ডিশের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। বংশ পরম্পরায় বিশেষত হিন্দু কারিগরেরা নলেন গুড়ের সন্দেশ বানিয়ে থাকেন। নলেন গুড়ের সাথে এই সন্দেশ বানানোর প্রধান উপাদান দুধের ছানা।
বছরের শেষ নাগাদ শীত ও বসন্ত জুড়ে প্রায় ছয় মাস এই সন্দেশ পাওয়া যায়। আর তাই এই সময়ের বাঙালির প্রতিটি উৎসবে ভোজের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে আকর্ষণীয় এই মিষ্টান্নটি। চিনির বদলে এই গুড় ব্যবহার করে তৈরি করা নলেন গুড়ের পায়েসও বেশ জনপ্রিয়।
পড়ুন: লাল চাল: কেন খাবেন এবং কারা এড়িয়ে চলবেন?
ছানার পায়েস
বাঙালির প্রতিটি উৎসবে ছানার পায়েসের জুড়ি মেলা ভার। চেখে দেখার আগে ছানার ক্যানভাসের উপর পেস্তা, কিশমিশ, অ্যামন্ড ও কাজু বাদামের সজ্জা দেখেই মন ভরে যায়। তাই পরিবেশনের সাথে সাথেই বাচ্চা থেকে শুরু করে বুড়ো কারোরই গলধকরণে বেগ পেতে হয় না।
অনেকের কাছে এটি ক্ষীর বা ফিরনি নামেও পরিচিত। মূলত পায়েস হলো মোঘল আমলের মিষ্টান্ন। এতে কাশ্মিরী ও পারস্য রন্ধনশৈলী সংযোজিত হয়ে তৈরি হয় ফিরনি। আর ফিরনিতে উত্তর ভারতীয় রীতিতে দুধের মিষ্টি থাকায় এর নাম কোথাও কোথাও বদলে ক্ষীর হয়ে যায়।
পড়ুন: থটস অফ শামস: মজার সব চরিত্রে এককভাবে অভিনয়কারী প্রতিভাবান কন্টেন্ট নির্মাতা
মিষ্টি দই
মিষ্টি দইকে মিষ্টির রাজা বলা যেতে পারে। শুধুমাত্র ঘনীভূত দুধ ও চিনিতে তৈরি আশ্চর্য এই খাবারটির স্বর্গীয় স্বাদ একবার নিলে বারবার মনে করিয়ে দেয়। মুখের ভেতরে নিয়ে হালকা চাপ দিতেই অমৃত স্বাদের অনুভূতি জানান দিতে শুরু করে।
বাংলাদেশসহ ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের প্রিয় মিষ্টান্নের নাম মিষ্টি দই। বগুড়ার দইয়ের জগৎ জোড়া খ্যাতির কথা সবার-ই জানা। স্থানীয়দের মতে দইয়ের ইতিহাস প্রায় আড়াইশো বছরের পুরনো। সে সময় বগুড়ার কাছেই অবস্থিত শেরপুরে বসবাসরত ঘোষ সম্প্রদায় বংশ পরম্পরায় দই বানানোর কাজ করতো।
পড়ুন: হার্ট অ্যাটাক: করণীয় এবং প্রতিরোধে যে সকল পদক্ষেপ নিতে হবে
রসগোল্লা
ভোজনরসিক বাঙালির পরিচয় বহন করে রসগোল্লা, যার জন্য এর মিষ্টান্নের নাম বলা হয় বাঙালির রসগোল্লা। কড়া রান্না করায় পোড়ামাটির মতো বাদামি রঙের হয় এই মিষ্টি। এই মিষ্টিকে ভিত্তি ধরে বানানো হয় বিভিন্ন নামকরা মিষ্টি। এগুলোর মধ্যে রাজভোগ ও ক্ষীর কদম অন্যতম।
রসগোল্লার উৎপত্তি নিয়ে বেশ মতবিরোধ আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে পর্তুগীজদের আমলে বর্তমান বরিশালের পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায় হিন্দু ময়রাগণ রসগোল্লা বানাতেন। পরবর্তীতে এদের বংশধরেরা কলকাতা, ওড়িশায় স্থানান্তরের মাধ্যমে সেখানেও রসগোল্লার জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে দেন।
পড়ুন: কোলেস্টেরল কমানোর কার্যকরী ঘরোয়া উপায়
রাজভোগ
ছানা, জাফরান ও শুকনো ফলের মিশ্রণে চিনিতে ভরপুর জিহ্বে জল আনা মিষ্টি রাজভোগ। আকারে বড় মুখ রোচক এই স্পঞ্জি মিষ্টিগুলো অনেকটা রসগোল্লার মত। খোয়া দিয়ে ভরা এই রসাল মিষ্টি একের পর এক শেষ করার জন্য রীতিমত দুঃসাহসের প্রয়োজন। কারণ মিষ্টি স্বাদের এই আধিক্য একমাত্র শুধু মিষ্টিপ্রেমীদের পক্ষেই বশে আনা সম্ভব। এরপরেও দেশ-বিদেশের মিষ্টিপ্রিয়রা একবার হলেও এই মিষ্টির স্বাদ আস্বাদন করে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে রাখেন।
পান্তুয়া
পশ্চিমবঙ্গের কালনা, রানাঘাট ও কাটোয়ায় বিখ্যাত এই মিষ্টান্ন বেশ সুস্বাদু এবং হৃদয়গ্রাহী। পান্তুয়া অনেকটা গুলাব জামুনের মতো দেখতে এই রসাল মিষ্টি ছানা, ময়দা, ও খোসার পেস্ট থেকে তৈরি করা হয়। মাঝারি আকারের মিষ্টিবলগুলো ডুবো চিনির সেরায় ভেজে তাতে এলাচ দেয়া হয়।
পড়ুন: কঠোর ডায়েটের স্বাস্থ্য ঝুঁকিসমূহ জেনে নিন
এই মিষ্টিটির জনপ্রিয়তা শুরু হয় দেশভাগের সময় সুরেন্দ্রলাল কুন্ডুর হাত ধরে। সে সময় তিনি বাংলাদেশ থেকে কাটোয়ায় চলে যান এবং ছেলে প্রাণকৃষ্ণকে সাথে নিয়ে একটি খাবারের দোকান দেন। সেখানেই প্রাণকৃষ্ণ বানাতে শুরু করেন ক্ষীরের পান্তুয়া। প্রাণকৃষ্ণের ডাকনাম পরান-এর নামানুসারে স্থানীয়রা মিষ্টান্নটিকে পরানের পান্তুয়া বলে ডাকতে শুরু করে।
ল্যাংচা
বর্ধমানের রাজা তাঁর পূত্রবধূর মিষ্টি খাওয়ার শখ মেটাতে নদিয়া নিবাসী ময়রা নামক এক ল্যাংড়া মিষ্টির কারিগরকে রাজপ্রাসাদে ডেকে আনিয়েছিলেন। ময়রা’র বানানো মিষ্টির স্বাদে মুগ্ধ হয়ে তাকে বর্ধমানের বড়শূল গ্রামে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। ময়রা’র মিষ্টির দোকান করে দেয়া হয় বাদশাহী সড়কের উপর শক্তিগড় গ্রামে, যেখান থেকে প্রতিদিন এক মণ করে মিষ্টি যেতো বর্ধমান প্রাসাদে। পরবর্তীতে এই ময়রা’র মিষ্টান্ন ল্যাংচা নামে বহুল পরিচিতি পায়।
পান্তুয়ার একই গোত্রভুক্ত এই রসাল মিষ্টিটি প্রথমে নলাকার ছিলো। পরে এটি পান্তুয়ার মতই গোলাকার করা হয়। অনেকের কাছে এটা বাংলাদেশের কালোজামের মত দেখতে।
পড়ুন: ২০০ কেজি সোনায় কারুকার্যমণ্ডিত হতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পবিত্র কোরআন
চমচম
বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম বাঙালির একটি ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি। ভারতের উত্তর প্রদেশের বালিয়া জেলার রাজা রামগড় ও তাঁর নাতি মতিলাল গড়-এর অবদানে এই মিষ্টি স্বাদ ও উপাদানের গুণগত মানে সিদ্ধি লাভ করে।
প্রায় দুইশত বছর পূর্বে যশোরত হাল নামের এক কারিগরের হাতে প্রথম চমচম তৈরি হয়। টাঙ্গাইলের
যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীর পানির সহজাত বৈশিষ্ট্যের কারণে চিনির গায়ে দ্রবণ থাকায় অন্যান্য মিষ্টি থেকে চমচম অপেক্ষাকৃত কম পচনশীল হয়ে থাকে। মাখন, চিনি ও ময়দার মিশ্রণে সুস্বাদু এই মিষ্টিকে বাংলাদেশের মিষ্টির রাজা হিসেবে অভিহিত করা হয়।
পড়ুন: মাগুরায় ৭১২ মণ্ডপে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি
ক্ষীর কদম
বাইরে গুড়ো চিনির খোয়া ভাজা ক্ষীর এবং ভেতরে লুকানো রসগোল্লা- এই দুই স্তরের ক্ষীর কদম খেতে যেমন মজা দেখতেও তেমনি সুন্দর। পরিবেশনে আলাদা সৌন্দর্য্য আনার জন্য এর অতিরিক্ত কিছুই প্রয়োজন পড়ে না। কদম ফুলের মত দেখতে হওয়ায় মিষ্টান্নটির এরকম নামকরণ। ক্ষীর ও কদমের এমন দারুণ সংযোজনে বাঙালির পূজাগুলো মুখরিত হয়ে ওঠে। এছাড়া শৈল্পিক রন্ধনপ্রণালীর এক আশ্চর্য প্রয়োগ এই ক্ষীর কদম যেখানে মেহমান ও মেজবান উভয়ের মাঝেই মুগ্ধতা সৃষ্টি করে।
কাঁচাগোল্লা
গরুর দুধের কাঁচা ছানা ও এলাচে মিশ্রিত নিমেষেই মুখ মিষ্টি করে দেয়ার মত একটি খাবার এই কাঁচাগোল্লা। কাঁচাগোল্লার নামের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের উত্তর বঙ্গের জেলা নাটরের নামটি।
একদা নাটরের প্রসিদ্ধ লালবাজারের মধূসুদন পাল-এর মিষ্টির দোকানে কারিগর না আসায় দুশ্চিন্তায় পড়ে যান দোকানের মালিক। এরপরেও তিনি কর্মচারীদেরকে কাঁচা ছানাতে চিনির রস ঢেলে জ্বাল দিয়ে নামিয়ে রাখতে বলেন। অবশেষে সেই ছানা চেখে দেখে বিস্মিত হয়ে যান। এই কাঁচা ছানার মিষ্টির কথাই সে সময় কাঁচাগোল্লা নামে ঢোল পিটিয়ে চারপাশ জানানো হোতো।
পড়ুন: দুর্গাপূজা উপলক্ষে বেনাপোল দিয়ে ভারতে গেলো ২০৯ মেট্রিক টন ইলিশ
মিহিদানা
১৯০৪ সালে বর্ধমানের মিষ্টি প্রস্তুতকারক ভৈরবচন্দ্র নাগ সর্বপ্রথম মিহিদানা তৈরি করেছিলেন। বর্ধমানের ভূস্বামী বিজয়চাঁদ মহতাব বড়লাট জর্জ ন্যাথানিয়েল কার্জন-এর বর্ধমান ভ্রমণ স্মরণীয় করতে এই মিষ্টি বানানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।
ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি বুন্দিয়ার আদলে তৈরি রঙ-বেরঙের এই চমৎকার মিষ্টিটি অবলীলায় ভোজনরসিকদের মন জয় করে নেয়। এর মুল উপাদান বেসন, ঘি, চিনি, জাফরান ও চাল হলেও এখন অনেক কারিগর এতে চিনির বদলে খেজুরের গুড়ও ব্যবহার করছেন।
পরিশিষ্ট
যুগ যুগ ধরে দুর্গাপূজার মিষ্টিগুলো বাঙালিয়ানাকে সমৃদ্ধ করেছে। আবহমান বাংলার ধর্মপ্রাণ মানুষগুলোর উপসনাকেন্দ্রিক অনুষ্ঠানগুলোতে করেছে প্রাণের সঞ্চার। এরকম আরো বহু মিষ্টান্নের আকর্ষণের জন্য এদের কারিগরেরা বেশ মর্যাদার আসনে আসীন হন। বর্তমানে যোগাযোগ মাধ্যমের উৎকর্ষের কারণে ঘরে ঘরে এ ধরণের মিষ্টি বানানোর রেসিপিও ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্যব্যাপী। ফলে পৃথিবীর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা প্রতিটি বাঙালির মিষ্টিমুখ অনুষ্ঠানে অবলীলায় জায়গা করে নিচ্ছে দুর্গাপূজার মিষ্টি।
পড়ুন: বর্ষা মৌসুমে যেসব পুষ্টিকর সবজি খেতে পারেন