স্বাস্থ্য-ও-সুস্থতা
সার্কেডিয়ান রিদম বা দেহ ঘড়ি নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
ঘুমিয়ে থাকার সময় মস্তিষ্কে নতুন তথ্য জানা ও তা মনে রাখার জন্য কার্যক্ষমতার বিকাশ ঘটতে থাকে। একই সঙ্গে শরীরের অভ্যন্তরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাঝে সঞ্চার হতে থাকে নতুন কর্মোদ্দীপনার। ঘুমের এই পরিব্যাপ্তি বাধাগ্রস্ত হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সমগ্র দেহে। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে দৈনন্দিন কাজ এবং রোগ প্রতিরোধের জন্য শরীর তার প্রয়োজনীয় শক্তি তৈরিতে বাধা পায়। তাই প্রকৃতিগতভাবেই মানবদেহের চাহিদা থাকে ঘুমের জন্য একটি রুটিন মেনে চলার। আর এখানেই আসে সার্কেডিয়ান রিদম বা দেহ ঘড়ি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি। চলুন, এ সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে জেনে নিই কীভাবে সার্কেডিয়ান ছন্দ নিয়ন্ত্রণ করবেন।
সার্কেডিয়ান রিদম কি?
ল্যাটিন শব্দ সির্কা যার অর্থ ‘চক্র’, এবং ডাইস- যার অর্থ ‘দিন’। এই শব্দ দুটির সমন্বয় থেকে উদ্ভব ‘সার্কেডিয়ান’ শব্দের। সার্কেডিয়ান ছন্দ বা দেহ ঘড়ি এমন এক প্রক্রিয়া, যা সন্তান প্রসব করতে পারে এমন জীব প্রজাতির প্রকৃতি ও পরিবেশকে প্রভাবিত করে। একটি সার্কেডিয়ান চক্রের প্রতি ২৪ ঘণ্টায় পুনরাবৃত্তি ঘটে। এর ছন্দগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় সার্কেডিয়ান ঘড়ির মাধ্যমে, যার উদ্দেশ্য জৈবিক প্রক্রিয়াগুলোর মাঝে সুনির্দিষ্ট স্পন্দন ধরে রাখা। এই স্পন্দন প্রাণীর সর্বাধিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য সঠিক সময় নির্ধারণ করে। শুধু মানুষেই নয়, এই প্রক্রিয়া দেখা যায় অন্যান্য প্রাণী, উদ্ভিদ, ছত্রাক, এমনকি সায়ানোব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রেও।
সার্কেডিয়ান চক্র কীভাবে কাজ করে
সারা শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং গ্রন্থির প্রক্রিয়া একটি নির্দিষ্ট স্পন্দনে সম্পাদিত হয়। এগুলোকে প্রতিটি প্রক্রিয়ার আনুষঙ্গিক সময়সূচী বা ঘড়ি বলা যেতে পারে। এই সবগুলো ঘড়ির পরিচালনায় থাকে একটি মাস্টার ক্লক, যেটি থাকে মস্তিষ্কে। চিকিৎসা শাস্ত্রে এর নাম সুপ্রাকিয়াসমেটিক নিউক্লিয়াস (এসসিএন)।
আরও পড়ুন: জিমে অনুশীলনের সময় সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়ানোর উপায়
স্পষ্টভাবে বলতে গেলে এই মাস্টার ঘড়ি পূর্ণ চক্র সম্পন্ন করে ২৪ ঘণ্টার কিছুটা বেশি সময়ে। প্রায় ১২ থেকে ১৮ মিনিট কম ধরে মাস্টার ঘড়িকে পৃথিবীর ২৪ ঘণ্টা ঘূর্ণনের সঙ্গে সামঞ্জস্য করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই চক্র তরুণ এবং কিশোর-কিশোরীদের জন্য প্রযোজ্য। সার্কেডিয়ান ছন্দের সময়গুলো নির্ধারিত হয় তার চারপাশের পরিবেশ থেকে প্রাপ্ত সংকেত অনুসারে। এই সংকেতগুলোকে বলা হয় সাইটগিবার্স , যেটি মূলত একটি জার্মান শব্দ, যার অর্থ ‘সময় রক্ষক’।
সার্কেডিয়ান চক্রের সময় নির্ধারণকারী এই সাইটগিবারগুলো হলোঃ
- প্রাকৃতিক আলো এবং অন্ধকার
- খাদ্যাভ্যাস
- শরীর চর্চা
- পরিবার, আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব, বা সহকর্মীদের সঙ্গে সময় কাটানো
- প্রাত্যহিক জীবন ধারণ
- মানসিক চাপ
আরও পড়ুন: ব্লু জোন রহস্য: রোগহীন দীর্ঘজীবী সম্প্রদায়ের খোঁজে
সাইটগিবারগুলো মস্তিষ্কে হরমোন নিঃসরণের মাধ্যমে শরীরের টিস্যুগুলোতে রাসায়নিক সংকেত প্রেরণকে উদ্দীপিত করে। আর এর মধ্য দিয়েই খাদ্যের শক্তিতে রূপান্তর, শরীরের তাপমাত্রার ওঠানামা, এবং ঘুমাতে যাওয়া বা জেগে ওঠার সময়গুলো পরিচালিত হয়।
বিভিন্ন ধরনের সার্কেডিয়ান রিদম অসঙ্গতি
ডিলেইড স্লিপ-ওয়েক ফেজ ডিসঅর্ডার
এই সমস্যায় ব্যক্তি ঘুমানোর উদ্দেশ্যে যে মুহূর্তে শুয়ে পড়েন সে সময় থেকে অনেক দেরিতে তার ঘুম আসে। একইভাবে সময় মতো ঘুম থেকে ওঠার ক্ষেত্রেও অসুবিধা হয়।
জেট ল্যাগ ব্যাধি
ভ্রমণের সময় ভিন্ন ভিন্ন টাইম জোনে থাকার কারণে এই জটিলতা হয়ে থাকে। যে দেশগুলোতে দিন ও রাতের সময়সূচির মাঝে বিরাট পার্থক্য, সে দেশগুলোতে ভ্রমণের ক্ষেত্রে দেহ ঘড়ির এরকম ছন্দ পতন হয়।
আরও পড়ুন: অ্যান্টিবায়োটিক-এর অপপ্রয়োগ: কেন অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করছে না?
শিফট ওয়ার্ক স্লিপ ডিসঅর্ডার
রাতের শিফটে যারা কাজ করেন বা যাদের কাজের সময় প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়, তাদের এ ধরণের জটিলতা দেখা দেয়। কাজের প্রকৃতির কারণে পারিপার্শ্বিক পরিবেশেরও পরিবর্তন হয়, যা স্বাস্থ্যকর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
ইরেগুলার স্লিপ-ওয়েক রিদম ডিসঅর্ডার
ঘুম সংক্রান্ত এই দুর্লভ জটিলতায় প্রতিদিনের ঘুমের টাইম টেবিলটা থাকে আলাদা। একদিন হয়ত শুধু দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুম হলো, পরের দিন আবার তা বদলে হয়ে গেলো রাত ১২টা থেকে সকাল ১০টা। অপ্রত্যাশিত এই ঘুম চক্রটি নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রতিদিন কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা পায় না।
নন-টুয়েন্টি ফোর-আওয়ার স্লিপ-ওয়েক রিদম ডিসঅর্ডার
এই ডিসঅর্ডারে ধীরে ধীরে ঘুমের সময়সীমার স্থানান্তর ঘটে। প্রতিদিন একটু একটু করে প্রলম্বিত এই সমস্যাটি এক সময় ২৪ ঘণ্টার চক্রের বাইরে চলে যায়। ফলে দেখা যায় ঘুম রাতের পরিবর্তে পরের দিন দুপুরের দিকে আসছে। এমনকি এই ঘুমের বিলম্বটা মাত্রাতিরিক্ত হয়ে পরের দিন সন্ধ্যা বা রাত পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।
আরও পড়ুন: চোখ উঠা রোগের লক্ষণ, কারণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
অ্যাডভান্স্ড স্লিপ-ওয়েক ফেজ ডিসঅর্ডার
এই সমস্যায় অপ্রত্যাশিতভাবে কাঙ্ক্ষিত সময়ের অনেক আগে ঘুম চলে আসতে পারে বা ঘুম ভেঙে যেতে পারে। কতক্ষণ জেগে বা ঘুমিয়ে থাকা হয়েছে এখানে সেটা মুখ্য নয়। সন্ধ্যায় জেগে থাকাটা খুব কঠিন হতে পারে, আবার বেশি রাত করে ঘুমিয়েও খুব ভোরে ঘুম ভেঙে যায়।
দেহ ঘড়ির ছন্দ পতনের কারণ
জিনগত কারণ
মস্তিষ্ক বা হরমোনকে প্রভাবিত করে এমন জিনগত অবস্থা সার্কেডিয়ান ছন্দ পতনকে রীতিমত ব্যাধিতে রূপ দিতে পারে। স্মিথ-ম্যাজেনিস সিন্ড্রোম ঠিক এমনি একটি জেনেটিক অবস্থা, যা শরীরের মেলাটোনিন হরমোন তৈরির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই হরমোনটি একটি মানুষকে ঘুমাতে সাহায্য করে। স্মিথ-ম্যাজেনিস প্রবণতা ঘুমের প্যাটার্নকে সম্পূর্ণরূপে বিপরীত করে দিতে পারে, যার ফলে সারা দিন ঘুম এবং সারা রাত অনিদ্রা হতে পারে।
মস্তিষ্কের কার্যকলাপে বাধাগ্রস্ত হওয়া
বাহ্যিক গুরুতর কোনও আঘাতে মাথা ফেটে যাওয়া, ট্রমা, অবক্ষয়জনিত মস্তিষ্কের রোগ দেহের সামগ্রিক জৈবিক সময়কে নষ্ট করতে পারে। পাশাপাশি ভাইরাস সংক্রমণ বা বিষক্রিয়ার ফলে মস্তিষ্কের টিস্যুগুলোতে সৃষ্ট প্রদাহ স্লিপ ডিসঅর্ডারের দিকে ধাবিত করতে পারে।
আরও পড়ুন: আত্মহত্যার প্রবণতা: কারণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ
দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা
মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে হাইপোথ্যালামাস নামে একটি অঞ্চল রয়েছে। মস্তিষ্কের কোষের (নিউরন) একটি নির্দিষ্ট ক্লাস্টারের এই আবাসস্থলটি হচ্ছে সেই মাস্টার ক্লক বা এসসিএন। চোখের সঙ্গে এর সরাসরি সংযোগ থাকে। তাই এর কার্যকারিতার জন্য দিনের প্রাকৃতিক আলো একটি অপরিহার্য বিষয়। চোখের রেটিনা বা স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হলে জৈবিক ঘড়ি গুরুতর ভাবে ক্ষতির মুখে পড়ে।
ঘন ঘন ভ্রমণ
যে কোনও অচেনা পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার মতো অভিযোজন ক্ষমতা মানুষের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এরপরেও মাত্রাতিরিক্ত ভিন্ন টাইম জোনের স্থানগুলোতে ভ্রমণ করা জেট ল্যাগের উদ্ভব ঘটাতে পারে। একই টাইম জোনের ক্ষেত্রেও এটা হতে পারে, কেননা নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের জন্য একটি স্থায়ী পরিবেশও প্রয়োজন।
কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ
দিনের বদলে রাতে কাজ করা বা কাজের সময়সীমা দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে স্থায়ী না হলে শিফট ওয়ার্ক স্লিপ ডিসঅর্ডার হয়। এছাড়া সদ্য নবজাতকের বাবা-মাদেরও এই জটিলতা হয়। কেননা শিশুর যত্নের জন্য রাতের পর রাত তাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গু সম্পর্কে ১০টি প্রচলিত ধারণা: জেনে নিন সঠিক তথ্য
অস্বাস্থ্যকর ঘুমের অভ্যাস
জৈবিক ঘড়ির সুষ্ঠ স্পন্দনের জন্য দিনের প্রাকৃতিক আলোর সান্নিধ্যে থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে রাতের বেলা কৃত্রিম আলো স্বাস্থ্যকর ঘুমের জন্য ক্ষতিকর। টিভি স্ক্রিন, অ্যালার্ম ঘড়ি, স্মার্টফোন, ও কম্পিউটার মনিটর এই কৃত্রিম আলোর একটি উপযুক্ত উৎস। নিয়মিত রাত জেগে টিভি দেখা বা কম্পিউটার কিংবা স্মার্টফোন চালানো চোখকে সেই কৃত্রিম আলোর সংস্পর্শে রাখে। অন্যদিকে রাতের ঘুমটি দিনে হওয়ার কারণে চোখ দিনের প্রথম সূর্যালোক থেকে বঞ্চিত হয়। এরকম জীবন ধারণে অভ্যস্ত ব্যক্তিরা সার্কেডিয়ান স্পন্দন ব্যাধির ক্ষেত্রে অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
হরমোনের পরিবর্তন
নারীদের তুলনায় পুরুষদের স্লিপ ডিসঅর্ডারগুলো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে হরমোনের পরিবর্তনের সাপেক্ষে নারীদের গর্ভাবস্থায় বা প্রসব পরবর্তী সময়ে জৈবিক ঘড়ির অসঙ্গতিগুলো দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুন: সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ
সার্কেডিয়ান রিদম অসঙ্গতির লক্ষণ
ছন্দ পতনের উপসর্গগুলো মূলত ব্যধি বা অসঙ্গতিগুলোর ধরণের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। গড়পড়তায় যে লক্ষণগুলো দৃশ্যমান হয়, সেগুলো হচ্ছেঃ
- দীর্ঘক্ষণ শুয়ে থাকার পরেও ঘুম না আসা
- এক টানা ঘুম না হয়ে বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়া
- বিশেষ করে মাঝরাতে বা ভোরে ঘুম না আসা
- আকস্মিকভাবে কাঙ্ক্ষিত সময়ের আগেই ঘুম ভাঙার পর আর ঘুম না আসা
- ঘুমের জড়তার কারণে হাঁটতে সমস্যা হওয়া
- দিনের বেলায় তন্দ্রা বা হাইপার-সোমনিয়া
- দিনের বেলা কোনো কিছুতে মনোনিবেশ করতে সমস্যা, নিজের চারপাশ সম্পর্কে অসতর্ক থাকা
- দীর্ঘক্ষণ যাবৎ ক্লান্ত বোধ
- অসহনীয় মাথাব্যথা
- অযাচিত বিরক্তি এবং তা থেকে হতাশার উদ্রেক
আরও পড়ুন: নারীদের চেয়ে পুরুষদের আত্মহত্যার হার বেশি যে কারণে
সার্কেডিয়ান রিদম রিসেট করার উপায়
খুব ভোরে সূর্যালোকের সংস্পর্শে যাওয়া
সদ্য উদয় হওয়া সূর্যের আলো চোখের স্বাস্থ্য উন্নত করে। এর জন্য খুব সকালে উন্মুক্ত জায়গায় হাঁটাহাঁটি করা যেতে পারে। এতে করে আলো ও অন্ধকারের জন্য নির্ধারিত জৈবিক ছন্দগুলো পুনঃস্থাপিত হয়।
সঠিক সময়ে খাবার গ্রহণ
ঘুমের সময়সূচির মতো ক্ষুধা এবং বিপাক প্রক্রিয়াও সার্কেডিয়ান ছন্দের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। সকালে ঘুম থেকে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে নাস্তা খাওয়া জরুরি। একই সঙ্গে রাতের খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমাতে না যেয়ে খাবার হজমের জন্য সময় দেওয়া আবশ্যক। পাশাপাশি খেয়াল রাখা জরুরি যে, রাতের খাবার যেন খুব বেশি দেরি হয়ে না যায়। খাদ্য গ্রহণের এই অভ্যাসটি নিয়মিত বজায় রাখার মাধ্যমে জৈবিক স্পন্দন আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
ক্যাফেইন সীমিত করা
ঘুমের জড়তা বা ক্লান্তি দূর করলেও ক্যাফেইন ঘুমকে ব্যাহত করে। তাই ক্যাফেইন কখন এবং কত পরিমাণে নেওয়া হচ্ছে দুটোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। সকালে নাস্তার পরে, বিকালে নাস্তার সঙ্গে পরিমিত পরিমাণে চা-কফি নেওয়া যেতে পারে। তবে সন্ধ্যার পরে এ ধরণের পানীয় গ্রহণ সীমিত করা উচিত।
আরও পড়ুন: মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ
খুব দেরিতে ব্যায়াম না করা
ঘুমাতে যাওয়ার আগে বা তার কাছাকাছি সময়টা শরীর চর্চার জন্য উপযুক্ত নয়। এটি নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের জন্য ক্ষতিকর, বিশেষ করে যদি খুব সকালে ওঠার তাড়া থাকে। সকাল সকাল ব্যয়ামের ক্ষেত্রেও অনিয়মিত হলে স্বাস্থ্যকর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। সুতরাং খুব সকাল কিংবা ঘুমাতে যাওয়ার অনেক আগে যে সময়েই হোক না কেন, ব্যয়াম হতে হবে প্রতিদিনি একটি নির্দিষ্ট সময়ে।
কৃত্রিম আলো এড়িয়ে চলা
টিভি, স্মার্টফোন, কম্পিউটার এবং ট্যাবলেটের মতো ডিজিটাল ডিভাইসগুলো থেকে নির্গত নীল আলো চোখের জন্য ক্ষতিকর। অনেক সময় ধরে এই ডিভাইসগুলোর ব্যবহার করা দীর্ঘ মেয়াদে স্থায়ীভাবে অনিদ্রা সৃষ্টি করে। তাই ঘুমানোর কয়েক ঘণ্টা আগে থেকে এগুলো বন্ধ করে রাখা উচিত। এছাড়া অন্যান্য উইন্ডোর লাইটগুলোও ঘুমের আগে নিভিয়ে ফেলা উত্তম।
শেষাংশ
সার্কেডিয়ান রিদম বা দেহ ঘড়ি নিয়ন্ত্রণের মাঝে নিহিত রয়েছে মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার চাবিকাঠি। অন্যান্য বয়স অপেক্ষা কর্মোদ্দীপনা বেশি থাকলেও কিশোর ও তরুণ বয়সীদের ক্ষেত্রে ছন্দ পতনের আশঙ্কা বেশি। অনিয়মিত ঘুমের প্রতিরোধকল্পে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ ও মাত্রাতিরিক্ত ভ্রমণ যতটা সম্ভব নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসাটা জরুরি। সেই সঙ্গে খাদ্য গ্রহণ এবং শরীর চর্চার সময়ানুবর্তিতা সামগ্রিকভাবে ছন্দ ফিরিয়ে আনতে পারে জৈবিক ঘড়িতে।
আরও পড়ুন: অটিজম কী? অটিজম সচেতনতা ও সহমর্মিতা কেন জরুরি?
অটিজম কী? অটিজম সচেতনতা ও সহমর্মিতা কেন জরুরি?
বিশ্বজুড়ে অটিজম নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিকল্পে জাতিসংঘে প্রস্তাব গৃহীত হয় ২০০৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর। এ সময় ২ এপ্রিল তারিখকে অটিজমের জন্য একটি স্বতন্ত্র দিবস হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। অতঃপর ২০০৮ সাল থেকে প্রতি বছর এই দিনে আন্তর্জাতিকভাবে শুরু হয় বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উদযাপন।
এই সচেতনতার রূপরেখায় রয়েছে প্রতিটি অটিস্টিক মানুষের সামাজিক অধিকারের নিশ্চয়তা। এর মাঝে প্রত্যক্ত ও পরোক্ষভাবে নিহিত থাকে তাদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা। এই সার্বিক সুস্থতার বিকাশে অটিজম সচেতনতা ও সহমর্মিতা কেন জরুরি চলুন, তা জেনে নেওয়া যাক।
অটিজম কী
বিস্তৃত পরিসরে পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ, অস্পষ্ট উচ্চারণ, মৌখিক ও আচরণগত যোগাযোগের সমস্যাকে সামষ্টিকভাবে অটিজম বলা হয়। চিকিৎসা শাস্ত্রে এই অবস্থার নাম অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার বা এএসডি। অটিজম বা আত্মসংবৃতি অথবা আত্মলীনতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের অটিস্টিক বা আত্মসংবৃত কিংবা আত্মলীন বলা হয়ে থাকে।
এই বিকাশগত মানসিক অবস্থা মস্তিষ্ক জনিত বিচ্যুতি বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে জেনেটিক কারণে ঘটে থাকে। আপাতদৃষ্টে এএসডি আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণ সামাজিক যোগাযোগে অদক্ষ বটে। কিন্তু তাদের শেখার, মনের ভাব আদান-প্রদান, এবং কোনো কিছু বোঝানোর ক্ষেত্রে ভিন্ন উপায় থাকতে পারে।
আরও পড়ুন: মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ
অটিজম সচেতনতা কেন জরুরি
অটিজম সম্পর্কে সঠিক ধারণা
আত্মসংবৃত ব্যক্তিদের নিয়ে সমাজে নানা ধরনের ভুল ধারণা প্রচলিত, যেগুলোর মূলত কোনো ভিত্তি নেই। এএসডির ব্যাপারে সঠিক জ্ঞান বিতরণ সম্ভব হলে এমন তথাকথিত ধারণাগুলোর অবসান ঘটবে। এই চিরাচরিত অনুমান কিংবা মন্তব্যগুলো কোনো কিছুর ব্যাপারে ভালোভাবে না জেনে তার বিচার করার শামিল। অজ্ঞতা থেকে উদ্ভূত এই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আত্মলীন ব্যক্তি ও তার পরিবারের জন্য অসম্মানজনক।
বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে মা-বাবাদের প্রায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। তাই বৃহত্তর পরিসরে সচেতনতা সৃষ্টি হলে সবাই এ ব্যাপারে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবে। কেননা সম্যক ধারণা থাকা যে কোনো ব্যক্তি জানবেন যে, এটি কোনো দুর্বল নিয়মানুবর্তিতা বা শিক্ষাদানের পরিণতি নয়। অর্থাৎ এই অবস্থার জন্য সেই শিশুটি বা তার মা-বাবা কেউই দায়ী নন।
আশু শনাক্তকরণ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ
এএসডি সম্পর্কে যত বেশি জানা যাবে, তত দ্রুতই এর উপসর্গগুলো শনাক্ত করা সম্ভব হবে। এই প্রাথমিক শনাক্তকরণ অটিস্টিক শিশুদের পূর্ণ বিকাশের সহায়ক পরিবেশ তৈরির জন্য অপরিহার্য। বৃহৎ পরিসরে অটিজমের উপসর্গগুলোর ব্যাপারে জানানো হলে বাবা-মা এবং সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলগণ এ ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ নিতে পারবেন।
এখানে শিশু ও মা-বাবার মধ্যকার পারস্পরিক বুঝের বিষয় আছে। সন্তানের কোন আচরণ কী অর্থ বোঝাচ্ছে, মা-বাবার কোনো আচরণটি সন্তান কিভাবে গ্রহণ করছে- এ বিষয়গুলোতে নিশ্চিত হওয়া অতীব জরুরি। এর উপর ভিত্তি করে তাদের পরবর্তী সামাজিক এবং যোগাযোগ দক্ষতাগুলো নির্ধারিত হয়।
আরও পড়ুন: জিমে অনুশীলনের সময় সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়ানোর উপায়
এছাড়া গুরুতর স্বাস্থ্যজনিত অবস্থাগুলোতে দ্রুত শনাক্তকরণের কোনো বিকল্প নেই। যেমন অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার বা গ্লোবাল ডেভেলপমেন্টাল ডেলের মতো মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রে থেরাপি দরকার হয়।
সামগ্রিকভাবে নির্ভরযোগ্য তথ্যের যোগান থাকলে তা অনুসরণ করে অদূর ভবিষ্যতে বড় ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। নিদেনপক্ষে যত তাড়াতাড়ি আত্মলীন শিশুরা সহায়তা পায়, প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠার আগে তাদের সুষ্ঠু বিকাশের সম্ভাবনাটাও ততটাই বাড়ে।
সামাজিক প্রতিবন্ধকতা নির্মূল
অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিরা শিক্ষা, কর্মসংস্থানসহ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন। সমাজের সর্বত্র এটি রীতিমতো একটি অক্ষমতা হয়ে দাড়িয়েছে, যার জন্য তারা সামাজিক অন্তর্ভুক্তিও হারায়। বৃহত্তর সচেতনতা ও বোঝাপড়া বৃদ্ধি এই ধ্বংসাত্মক ব্যুহ ভাঙতে মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে।
অন্যান্যদের প্রতি তাদের ভিন্ন প্রতিক্রিয়া ও অভিব্যক্তি কখনই সমাজে তাদের কার্যকর অবদান রাখতে বড় বাধা নয়। বরং পর্যাপ্ত পরিবেশ ও সুযোগ পেলে তারাও মূল্যবান হয়ে উঠতে পারে। এমনকি অনেক আগে থেকেই এই বিষয়টি প্রমাণিত। অনেক আত্মসংবৃত ব্যক্তি সাধারণ কর্মকর্তাদের থেকেও বেশি উৎপাদনশীল কাজ করেছে।
আরও পড়ুন: সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ
তাই নিছক কুসংস্কারে প্রভাবিত না হয়ে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ক্লাব এবং অফিস সবখানে তাদের অবাধে বিচরণ নিশ্চিত করা উচিৎ। আর এ জন্যে প্রয়োজন জনসমাগম জায়গাগুলোতে অটিজম নিয়ে সৃজনশীল আলোচনা। সবার থেকে আলাদা হওয়া মানেই সক্ষমতা থেকে পিছিয়ে যাওয়া নয়। বরং বৈচিত্র্যপূর্ণ সৃজনশীল মানসিকতা উন্নত কর্মযজ্ঞ গড়ে তুলতে পারে।
এরকম বিশ্লেষণী আলোচনার বদৌলতে যে কোনো মঞ্চে আত্মলীন ব্যক্তিদের সম্পূর্ণ অংশগ্রহণ সম্ভব হতে পারে। সেই সঙ্গে সুযোগ তৈরি হবে তাদের প্রতিভা প্রমাণের।
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ
মানবদেহের স্নায়ুতন্ত্রের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে মস্তিষ্ক। শারীর-বৃত্তীয়ভাবে শরীরের অন্যান্য অঙ্গগুলোর উপর আধিপত্য থাকে এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের। পেশী কার্যকলাপের ধারা বজায় রাখা এবং হরমোন নিঃসরণের মতো কার্যকলাপ নির্ভর করে এর সক্রিয়তার উপর। তাই স্বাভাবিক ভাবেই এর কার্যকারিতার অসামঞ্জস্যতা বিরূপ প্রভাব ফেলে সারা শরীরের ওপর। এমনি একটি স্বাস্থ্য জটিলতা মস্তিষ্কে রক্তপাত, যা চূড়ান্ত পর্যায়ে মৃত্যু ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। এই রোগের নিরসণকল্পেই আজকের স্বাস্থ্য বিষয়ক নিবন্ধ। চলুন, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণ ও লক্ষণসহ এর প্রতিরোধের উপায়গুলো জেনে নেই।
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ কী
ট্রমা বা বাহ্যিক ভয়াবহ কোন আঘাতের কারণে রক্ত প্যারেনকাইমা বা মস্তিষ্কের টিস্যুগুলোকে উদ্দীপিত করে। এতে করে টিস্যুগুলো ফুলে যায়। এই অবস্থার নাম সেরিব্রাল এডিমা। এ সময় রক্ত জমাট বেধে হেমাটোমার সৃষ্টি করে। ফলে কাছাকাছি অন্যান্য টিস্যুতে চাপ ছড়িয়ে পড়ে মস্তিষ্কে প্রয়োজনীয় রক্ত প্রবাহ হ্রাস করে। এতে করে ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের কোষগুলোকে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে।
মাথার খুলির মধ্যে সংঘটিত এই ঘটনাকে সামগ্রিক ভাবে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বলা হয়ে থাকে। চিকিৎসা শাস্ত্রে এটি ইন্ট্রাসেরিব্রাল হেমোরেজ (আইসিএইচ), হেমোরেজিক স্ট্রোক বা ব্রেন হেমোরেজ নামে পরিচিত।
এই রক্তপাত মাথার খুলির ভেতরে বিভিন্ন স্থানে ঘটতে পারে। যেমন- মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে, মস্তিষ্ক ও একে ঘিরে আচ্ছাদিত ঝিল্লির মধ্যে অথবা ঝিল্লির স্তরগুলোর মধ্যে।
আরও পড়ুন: ব্লু জোন রহস্য: রোগহীন দীর্ঘজীবী সম্প্রদায়ের খোঁজে
মস্তিষ্কে রক্তপাত কাদের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ
সেরিব্রাল রক্তপাত বিশেষ করে পুরুষ এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি ঘটে। আক্রান্তদের প্রায় ৪৪ শতাংশই এক মাসের মধ্যে মারা যায়। ৮৫ বা তদূর্ধ্ব বয়স্কদের আইসিএইচ হওয়ার সম্ভাবনা মধ্যবয়স্কদের তুলনায় ৯ দশমিক ৬ গুণ বেশি। এছাড়া নিয়মিত ধূমপায়ীদেরও মস্তিষ্কেও এমন রক্তপাতের জন্য সহায়ক পরিবেশ বিরাজ করে।
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণ
মাথায় ভয়াবহ আঘাত
৫০ বছরের কম বয়সীদের মস্তিষ্কে রক্তপাতের সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল বাহ্যিক আঘাত। সাধারণত সড়ক দুর্ঘটনা, কোথাও পড়ে যাওয়া, খেলাধুলা সংক্রান্ত আঘাত, বা সহিংসতা বা হামলায় মাথায় গুরুতর আঘাতের সম্ভাবনা থাকে।
উচ্চ রক্তচাপ
সেরিব্রাল হেমোরেজের ক্ষেত্রে আরও একটি শ্রেণী অনেক ঝুঁকির মধ্যে থাকে। আর সেটি হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ সম্পন্ন ব্যক্তিদের শ্রেণী। অনেক সময় নিয়ে এই অবস্থার উদ্ভব হলেও এটি রক্তনালীর দেয়ালকে ভয়ঙ্কর ভাবে দুর্বল করে দিতে পারে।
আরও পড়ুন: সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ
রক্ত জমাট বাধা
মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাধলে রক্তনালী ভেঙ্গে ভেতরটা রক্তে ভরে গিয়ে ধমনী ব্লক করে দেয়। ফলে রক্ত মস্তিষ্কের বাইরে বেরতে না পেরে রক্তের কোষগুলো ভেঙে মস্তিষ্কের টিস্যুতে ছড়িয়ে পরে। ফলে পর্যাপ্ত অস্কিজেন না পাওয়ায় মস্তিষ্কের টিস্যুগুলো ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
অ্যানিউরিজম
এটি মূলত রক্তনালীর প্রাচীরের একটি সমস্যা, যেটি হলে প্রাচীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলে যায়। এই ফোলা অংশ ফেটে গিয়ে মস্তিষ্কে রক্তপাত ঘটতে পারে, যেটি সরাসরি স্ট্রোকের দিকে নিয়ে যায়।
আর্টেরিওভেনাস ম্যালফর্মেশন্স
রক্তনালীর এই অবস্থাটি মূলত ধমনী এবং শিরাগুলোর মধ্যকার সংযোগস্থলগুলোতে চিড় ধরাকে বোঝায়। রক্তনালী যতই দুর্বল হতে থাকে মস্তিষ্কের মধ্যে ও তার চারপাশে ততই এই সমস্যাটি বাড়তে থাকে।
অ্যামাইলয়েড অ্যাঞ্জিওপ্যাথি
এটি মস্তিষ্কের রক্তনালীর দেওয়ালগুলোতে অ্যামাইলয়েড-বিটা প্রোটিন জমা হওয়াকে নির্দেশ করে। এই অস্বাভাবিকতা কখনও কখনও বার্ধক্য এবং উচ্চ রক্তচাপের ফলস্বরূপ ঘটে থাকে। এটি চূড়ান্ত অবস্থায় যাওয়ার আগে অনেক ছোট ছোট হেমোরেজের কারণ হতে পারে, যেগুলোর অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির অলক্ষ্যেই থেকে যায়।
আরও পড়ুন: জিমে অনুশীলনের সময় সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়ানোর উপায়
রক্ত-সংক্রান্ত ব্যাধি
হিমোফিলিয়া এবং সিকেল সেল অ্যানিমিয়া রোগের কারণে রক্তের প্লেটলেট এবং জমাট বাঁধার মাত্রা হ্রাস পায়। রক্ত পাতলা হয়ে যাওয়াটাও আইসিএইচ-এর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
যকৃতের রোগ
যখন যকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন বিষক্রিয়া রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে স্নায়ুতন্ত্রে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিষগুলোতে থাকে অ্যামোনিয়া এবং ম্যাঙ্গানিজ, যেগুলো স্নায়ু কোষের ক্ষতি করতে পারে।
ব্রেন টিউমার
এটি একটি ক্যান্সার যা কতগুলো ক্ষতিগ্রস্ত কোষকে নির্দেশ করে। এগুলোর মধ্যে কিছু কিছু থাকে সুপ্ত, যেগুলোকে ম্যালিগন্যান্ট বলা হয়ে থাকে। টিউমার মস্তিষ্কে শুরু হতে পারে, আবার শরীরের অন্য কোথাও শুরু হয়ে মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
আরও পড়ুন: নারীদের চেয়ে পুরুষদের আত্মহত্যার হার বেশি যে কারণে
সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ
সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক, চিকিৎসা শাস্ত্রে যেটি এসএমআই (সাইলেন্ট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন) নামে পরিচিত। আশঙ্কাজনিত কোনো উপসর্গ না থাকায় এই স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জটিলতাটি অগোচরেই থেকে যায়। হৃদরোগ জনিত এই সমস্যা আগে থেকে টের পাওয়ার কোনো উপায় বা মেডিকেল টেস্ট নেই।
কয়েক সপ্তাহ বা মাস পরে বারবার শ্বাসকষ্ট বা বুক জ্বালাপোড়ার কারণে ডাক্তারের সরণাপন্ন হলে পরীক্ষা-নিরিক্ষায় তখন ধরা পড়ে। এই স্বাস্থ্য সমস্যা বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এমনকি হার্ট ফেইলিউরের মাধ্যমে মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
তাই চলুন, পূর্ব সতর্কতার জন্য সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক সম্বন্ধে জরুরি বিষয়গুলো জেনে নেওয়া যাক।
বিশ্বজুড়ে সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু
প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ২ কোটি মানুষ নানা ধরনের হৃদরোগে মারা যায়। এগুলোর মধ্যে ৬০ শতাংশেরই মৃত্যুর কারণ হার্ট অ্যাটাক।
জেএএমএ (জার্নাল অফ অ্যামেরিকান মেডিকেল অসোসিয়েশন) কার্ডিওলজিতে ২০১৮ সালে নীরব হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি নিয়ে একটি সমীক্ষা প্রকাশিত হয়। সেখানে দেখা যায় যে, পূর্ব উপসর্গ দেখা দিয়ে যে হার্ট অ্যাটাকগুলো হয় তার ৫ বছরের মধ্যে মারা যাওয়া লোকের সংখ্যা ৮ শতাংশ। আর উপসর্গ বিহীন হার্ট অ্যাটাকের পর ৫ বছরের মধ্যে মারা যাওয়া লোকের সংখ্যা ১৩ শতাংশ।
আরও পড়ুন: উচ্চ রক্তচাপ (হাই প্রেশার) হলে যা এড়িয়ে চলা উচিত: ক্ষতিকর খাবার, পানীয়, অভ্যাস
কেবল নিউজ নেটওয়ার্কের একটি গবেষণায় দেখা যায়, আকস্মিক কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মারা যাওয়া লোকদের ৪২ দশমিক ৪ শতাংশেরই পূর্বে এসএমআইয়ের রেকর্ড আছে।
সাইলেন্ট ইস্কিমিয়া হিসেবে পরিচিত এই হার্ট অ্যাটাকের পরে বিভিন্ন হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি ৩৪ শতাংশে বেড়ে যায়।
সিডিসি (সেন্টার্স ফর ডিজিস কন্ট্রোল এ্যান্ড প্রিভেন্শন) অনুসারে, প্রতি ৫ টিতে ১টি হার্ট অ্যাটাক সাইলেন্ট হয়ে থাকে, যেখানে ব্যক্তি বুঝতেই পারেন না যে তার হৃৎপিণ্ডটি নষ্ট হয়ে গেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর নতুন হার্ট অ্যাটাক হওয়ার রোগীর সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৫ হাজার এবং একাধিকবার হার্ট অ্যাটাক হওয়া রোগীর সংখ্যা ২ লাখ। এদের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজারই এই নিরব ঘাতকের শিকার।
আরও পড়ুন: জিমে অনুশীলনের সময় সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়ানোর উপায়
ভারতে সমস্ত হার্ট অ্যাটাকের প্রায় ৪৫ শতাংশ সাইলেন্ট ইস্কিমিয়া।
নারীদের চেয়ে পুরুষদের আত্মহত্যার হার বেশি যে কারণে
একটি সুস্থ জীবনের জন্য দৈহিক ও মানসিক উভয় ক্ষেত্রেই যত্নশীল হওয়া জরুরি। নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও আশেপাশের মানুষদের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা নারী ও পুরুষ দুজনের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যই বিপজ্জনক। প্রচন্ড হতাশায় এমনকি আত্মহত্যা পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে পারে এই সমস্যা। ইতিহাস বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই পরিস্থিতির নিত্যতার পাল্লা পুরুষদের দিকেই বেশি ভারী। অর্থাৎ পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার আধিক্য থাকলেও নারীদের চেয়ে পুরুষদের আত্মহত্যার হার বেশি। এই সমস্যার শিকড় কোথায়, চলুন, জেনে নেওয়া যাক।
বিশ্বজুড়ে নারী ও পুরুষের আত্মহত্যা
নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি থাকলেও, সেটি পুরুষদের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত বেশি মৃত্যু পর্যন্ত গড়ায়। জেন্ডার প্যারাডক্স হিসেবে পরিচিত এই অসঙ্গতির জন্য বিশ্বজুড়ে আত্মহত্যার মাধ্যমে মারা যাওয়া পুরুষের সংখ্যা নারীদের তুলনায় বেশি।
২০০৮ সালে আত্মাহুতির মাধ্যমে মারা যাওয়া পুরুষের সংখ্যা ছিল নারীদের তুলনায় প্রায় ১ দশমিক ৮ গুণ বেশি। ৭ বছর পর ২০১৫ সালেও আনুপাতিক হারটা প্রায় অপরিবর্তিতই ছিল, যা ১ দশমিক ৭। পশ্চিমা দেশগুলোতে আত্মহত্যাজনিত মৃত্যুতে নারীদের তুলনায় পুরুষদের সংখ্যা হরহামেশাই তিন থেকে চার গুণ বেশি থাকে। এই বৃহৎ পরিসরটি পরিলক্ষিত হয় ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে।
আরও পড়ুন: কান পেতে রই: দেশের প্রথম মানসিক সহায়তা হেলপলাইন
১৯৫০-এর দশক থেকে এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুরুষদের আত্মহত্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। ২০১৯ সালে পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যায় মৃত্যুর হার নারীদের তুলনায় ৩ দশমিক ৫ গুণ বেশি ছিল। ২০২১ সালে এই আনুপাতিক হার বেড়ে ৩ দশমিক ৯০- এ দাঁড়িয়েছে। মার্কিন জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশই পুরুষ, আর এই হিসাবে আত্মহত্যা জনিত কারণে পুরুষের মৃত্যুর হার দাঁড়ায় প্রায় ৮০ শতাংশ।
কিশোর এবং তরুণদের আত্মাহুতির হার অন্যান্য বয়সের তুলনায় কম। তবে আত্মঘাতী বিষয়টি এখনও মার্কিন তরুণদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ।
অন্যদিকে, আত্মহত্যার প্রচেষ্টার ঘটনা ঘটে নারীদের মধ্যে বেশি, যা পুরুষদের তুলনায় দুই থেকে চার গুণ। পুরুষদের তুলনায় প্রায় ১ দশমিক ৩৩ গুণেরও বেশি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন প্রাপ্তবয়স্ক নারীরা। শিক্ষার্থীদের মাঝেও এমন প্রবণতা পুরুষ শিক্ষার্থীদের তুলনায় ১ দশমিক ৮৬ গুণ বেশি।
আরও পড়ুন: উচ্চ রক্তচাপ (হাই প্রেশার) হলে যা এড়িয়ে চলা উচিত: ক্ষতিকর খাবার, পানীয়, অভ্যাস
আশঙ্কাজনক আত্মহত্যার হারে পশ্চিম ইউরোপের একমাত্র দেশ হলো বেলজিয়াম। সেখানে প্রতি ১ লাখে আত্মহত্যা করে ১৮ দশমিক ৩ জন, যার মধ্যে প্রতি লাখে ২৪ দশমিক ৯ জন পুরুষ এবং ১১ দশমিক ৮ জন নারী।
২০১৯ সালে বিশ্বের সর্বোচ্চ আত্মহত্যার হার ছিল আফ্রিকার দেশ লেসোথোতে। সেখানে প্রতি লাখে আত্মাহুতির রেকর্ড ছিল ৭২ দশমিক ৪ জনের, যাদের মধ্যে প্রতি লাখে পুরুষ সংখ্যা ১১৬ জন এবং নারী ৩০ দশমিক ১ জন।
ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০০০ সালে বাংলাদেশে আত্মহত্যায় পুরুষের মৃত্যুর হার ছিল ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং নারী মৃত্যুহার ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। নারী-পুরুষ উভরে ক্ষেত্রে এই হার ২০১৩ সাল পর্যন্ত ক্রমাগত কমতে থাকে। অতঃপর ২০১৬ সাল পর্যন্ত কিছুটা ওঠা-নামার পর আবার বাড়তে শুরু করে। ২০১৯ সালে পুরুষ মৃত্যুহার ছিল ৫ দশমিক ৭ শতাংশ, যা নারীদের ক্ষেত্রে ছিল ১ দশমিক ৭ শতাংশ।
আরও পড়ুন: অ্যান্টিবায়োটিক-এর অপপ্রয়োগ: কেন অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করছে না?
রোজায় শরীর সুস্থ রাখতে যে ১০টি বিষয় এড়িয়ে চলা উচিৎ
শুধু ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার প্রশিক্ষণ দিতে নয়, রমজানের আগমন ঘটে একটি সুস্থ জীবন পরিচালনার বার্তা নিয়ে। এক মাসের এই কর্মপদ্ধতিতে থাকে সারা বছরের রোগমুক্তির পাথেয়। এরপরেও পুরনো অভ্যাস ও সঠিক জ্ঞানের অভাবে অনেকেই বঞ্চিত হন রোজা রাখার পূর্ণ উপযোগিতা থেকে। দৈনন্দিন জীবনের বেশ কিছু অস্বাস্থ্যকর কার্যকলাপে বছরের সাধারণ দিনগুলোতেই দেহ অরক্ষিত হয়ে থাকে। সেখানে টানা এক মাস দিনের একটা বিরাট সময় অনাহারে থাকা আরও কঠিন। আর এখানেই রোজা পালনে শারীরিক যোগ্যতার প্রশ্ন আসে। তাই চলুন, রোজা রাখার সময় শারীরিক সুস্থতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী ১০টি বিষয় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
রমজান মাসে সুস্থভাবে রোজা রাখতে যে ১০টি বিষয়ে সচেতনতা জরুরি
.
সেহরি বা ইফতারে অতিরিক্ত খাওয়া
সারাদিন অনাহারে থাকার পর সন্ধ্যায় রোজা ভাঙার মুহুর্তে স্বভাবতই পেট পূর্তির প্রতি একটু বেশিই আকুলতা কাজ করে। এই সহজাত প্রবৃত্তির তাড়ণায় সাড়া দিয়ে অনেকেই ইফতারে মাত্রাতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন। এরকম অনিয়ন্ত্রিত আহার বদহজম এবং ওজন বৃদ্ধির দিকে ঠেলে দেয়।
এ সময় অনেকের মধ্যে এক বসাতেই সব খাবার গোগ্রাসে গেলার প্রবণতা দেখা যায়, যা আরও বেশি ক্ষতিকর। এর ফলে খাবার হজমে দেরি হয় এবং বিপাক ক্রিয়ার কার্যক্ষমতা কমে যায়।
আরও পড়ুন: যেসব কারণে রোজা রাখা ডায়েট করা থেকে বেশি উপকারী
এর বদলে পানি দিয়ে রোজা ভেঙে মাগরিব নামাজ পড়ে তারপর আবার খেতে বসা উত্তম। এতে করে পরিপাক তন্ত্রের খাবার হজমকারী এনজাইমগুলো প্রস্তুত হওয়ার সময় পায়।
পেট পূর্তির এই সমস্যাটি সেহরির ক্ষেত্রেও দেখা যায়। অনেকেই ভেবে থাকেন যে রোজা শুরুর ঠিক আগ মুহুর্তে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে পরবর্তীতে দিনের বেলায় আর তৃষ্ণা লাগবে না। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। কারণ এর ফলে পানি থেকে মুক্তি পেতে কিডনি দ্রুত সক্রিয় হয়ে যায়। ফলে প্রস্রাব হয়ে যাওয়াতে এই অতিরিক্ত পানি পান কোনও কাজেই লাগে না। বরং দিনের বেলায় তৃষ্ণা লাগার ব্যাপারটি অব্যাহত থাকে।
ইফতারে তৈলাক্ত, অধিক চিনি ও লবণযুক্ত খাবার খাওয়া
সবচেয়ে আশঙ্কার ব্যাপার হচ্ছে সেই মাত্রাতিরিক্ত খাবারের অধিকাংশই থাকে ভাজা-পোড়া কিংবা অধিক চিনি বা লবণযুক্ত। এছাড়া এগুলোতে ক্যালোরির পরিমাণও থাকে বেশি। সারাদিন উপবাসের পর এই খাবারগুলো অল্প সময়ের মধ্যেই এক ভালো লাগা অনুভূতি দেয়। কিন্তু অন্যদিকে পরের দিনের রোজা পালনটা কঠিন হয়ে ওঠে।
মশলাদার এবং অধিক লবণযুক্ত খাবার শরীরের পানির চাহিদা বৃদ্ধি করে। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে শরীরে অলসতা ও ক্লান্তির উদ্রেক ঘটে। নিয়মিত এ ধরনের খাদ্য গ্রহণে রক্তে শর্করার মাত্রায় ভারসাম্যহীনতা এবং কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দেয়।
আরও পড়ুন: সেহরি ও ইফতারে খেতে পারেন যেসব স্বাস্থ্যকর দেশি ফল
সেহরির বিষয়ে উদাসীনতা
বেশি রাত করে ঘুমাতে যেয়ে অনেকেরই সেহরির সময়টা বাদ পড়ে যায়। কেউ কেউ অগত্যা সেহরি ছাড়াই পরের দিনের রোজা অব্যাহত রাখেন। অনেকে আবার এই ঝামেলা এড়াতে ভোর রাতের বদলে রাত ১ টার মধ্যে সেহরি করে শুয়ে পড়েন। এই কার্যকলাপ শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এর ফলে পরের দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা পালনের জন্য শরীর যথেষ্ট পুষ্টি এবং শক্তি থেকে বঞ্চিত হয়।
দিনের বেলা বিরামহীন পানিশূন্যতার মধ্য দিয়ে ক্লান্তি বোধ হয়। তদুপরি, সেহরি ও ইফতারে সল্পাহারের পরিবর্তে শুধু ইফতারে দুই বেলার খাবার একসঙ্গে খেলে গ্যাস্ট্রিক ও ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি থাকে।
ক্যাফেইন গ্রহণ
কফি এবং চা-এ থাকা উত্তেজক পদার্থ ক্যাফেইনের মধ্যে রয়েছে মূত্রবর্ধক বৈশিষ্ট্য। অর্থাৎ প্রচুর পরিমাণে কফি বা চা পান মানেই প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। আর এভাবে ঘন ঘন প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর পানিশূন্যতার দিকে এগিয়ে যায়। তাই রমজানের আগে থেকে কফি বা চা পানের অভ্যাসটি ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
আরও পড়ুন: রেস্তোরাঁ-শপিং মলে প্রবেশের আগে যে বিষয়গুলোতে সাবধান থাকা জরুরি
যেসব কারণে রোজা রাখা ডায়েট করা থেকে বেশি উপকারী
প্রতিদিনের আহারের একটি বিরাট অংশ ভূমিকা রাখে দেহের স্বাভাবিক বিপাকে। পরিমিত পরিমাণে খাবার গ্রহণে বজায় থাকে দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান। তবে বয়সের ওপর ভিত্তি করে এই খাদ্য শরীরের কাঠামোর ওপর ভিন্ন রকম প্রভাব ফেলে। এ ক্ষেত্রে সব সময় দেহকে সুনির্দিষ্ট গড়নে ধরে রাখতে খাদ্য গ্রহণে কম বেশি করা হয়। আর এখানেই দরকার পড়ে ক্যালোরির হিসাব-নিকাশের; তথা ডায়েটের। কিন্তু দিনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিরতিহীন ভাবে আহার থেকে বিরত থাকা অধিক স্বাস্থ্যসম্মত। চলুন, বিজ্ঞানের আলোকে জেনে নেওয়া যাক, কেন রোজা ডায়েট অপেক্ষা বেশি উপকারী।
কেন রোজা রাখা ডায়েট করা থেকে অধিক স্বাস্থ্যসম্মত
বেশি ক্যালোরি খরচ ও অধিক মেদ কমায়
দেহে খাদ্য প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যায়। ফলে বিপাকসহ দেহের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন কার্যকলাপে চিনির ভূমিকা বাড়ে। এটি শরীরকে হৃষ্ট-পুষ্ট করে বটে, কিন্তু শরীর বঞ্চিত থেকে যায় শক্তি তৈরি থেকে। ঘণ্টা খানেক পর পর আহারেও এটি অব্যাহত থাকে তবে ধীর গতিতে। কিন্তু ১৩ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকা সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার। এ সময় শরীর যথেষ্ট পরিমাণে চর্বি পোড়াতে শুরু করে এবং কিটোন তৈরি করে, যা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
আরও পড়ুন: গরুর দুধের বিকল্প হিসেবে খেতে পারেন যেসব স্বাস্থ্যসম্মত খাবার
বিরতিহীন উপবাস শুরু করার কয়েক দিনের মধ্যে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। এর জন্য প্রতি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩ বেলা আহারকে ৮ ঘণ্টা দূরত্বে দুই বেলা আহার দিয়ে প্রতিস্থাপন করার প্রয়োজন হবে। এতে করে ডায়েটের চেয়েও তুলনামূলক কম সময়ে মেদ কমে আসাটা দৃশ্যমান হবে।
ক্যালোরির হিসাব রাখার প্রয়োজন পড়ে না
বিরতিহীন উপবাস প্রথাগত ক্যালোরি গণনার ক্লান্তি এবং সময় থেকে মুক্তি দেয়। এর থেকে কাঙ্ক্ষিত গড়নের অবয়ব দেখার জন্য দিন গোণাটা একই সঙ্গে সহজতর এবং প্রত্যাশার ব্যাঞ্জক।
শুধু তাই নয়, অক্ষরে অক্ষরে ডায়েট মেনে চলতে যেয়ে ব্যয়বহুল খাবার কেনার ধকল সামলাতে হয়। অন্যদিকে রোজার ক্ষেত্রে খাবারের ধরন নয়; খাবারটা খাওয়া মূখ্য। যারা ইতোমধ্যে সামষ্টিকভাবে একটি সীমাবদ্ধ ক্যালোরি সংখ্যা পূরণের লক্ষ্যে অগ্রসর হচ্ছেন, তাদের জন্য এটি একটি কার্যকর বিকল্প।
আরও পড়ুন: শহরে রান্নার জন্য গ্যাসের চুলার সেরা কয়েকটি বিকল্প
তীব্র শীতে পোষা প্রাণীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়
তীব্র শীত গৃহপালিত পশুপাখির জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এমনকি রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো পশুপাখিরাও পড়তে পারে স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে। যারা পশুপাখি পালনে আগ্রহী তাদের শীতকালে নিজের পাশাপাশি তাদের পোষা প্রাণীটির দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। চলুন, জেনে নেই, কীভাবে শীতকালীন অসুস্থতা থেকে পোষা প্রাণীদের মুক্ত রাখবেন।
পোষা প্রাণীর শীতকালীন সুরক্ষার উপায়
পোষা প্রাণীকে ঘরের ভেতরে রাখা
ঠান্ডা থেকে পোষা প্রাণীদের নিরাপদ রাখার সবচেয়ে সহজ উপায় হল দিনের বেশির ভাগ সময় এবং সারারাত ঘরের ভেতরে রাখা। কুকুর বা বিড়ালের রাতে বাইরে বের হবার প্রবণতা থাকে। তারা প্রায় সময়ই রাস্তার বেওয়ারিশ পশুগুলোর সংস্পর্শে যেয়ে নানা ধরনের জীবাণুবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে খুব বেশি সংবেদনশীল বিড়াল এবং কুকুরের ক্ষেত্রে হাইপোথার্মিয়ার ভয় থাকে।
তাই পোষা পশুপাখিদের রাতের পুরোটা সময় ঘরের ভেতরে রেখে দিনের কিছুটা সময় সঙ্গে নিয়ে বের হওয়া যেতে পারে শারীরিক অনুশীলনের জন্য। কেননা শীতের সময় দৌড়ঝাপ, খেলাধুলা, বা কিছু সময় হেঁটে বেড়ানো এদের শরীর গরম রাখতে পারে।
আরো পড়ুন: শীতে কীভাবে চুলের যত্ন নেবেন
থাকার জায়গাগুলোকে উষ্ণ রাখা
ঘরে উপযুক্ত উষ্ণতা না পেলে পোষা প্রাণীরা স্বাভাবিকভাবেই ঘরের ভেতর থাকতে চাইবে না। এছাড়া অনেক গৃহপালিত পশুপাখি আছে যারা বাড়ির বাইরেই রাখতে হয়। এদের থাকার জায়গাটিকে শুষ্ক রাখতে হবে এবং এমনভাবে মজবুত ঘেরযুক্ত করে দিতে হবে যাতে এরা ভালোভাবে বসতে এবং শুতে পারে।
তাদের শরীরের তাপ ধরে রাখার জন্য ঘরটি যথেষ্ট ছোট হতে হবে। ঘরে মেঝে মাটি থেকে কয়েক ইঞ্চি উঁচু হবে এবং ছাদ খড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। ঘরটি এমন স্থানে হতে হবে যেখানে বাতাসের ঝাপটা কম এবং সহজেই খাবার ও পানীয় পেতে পারে।
বাড়ির ঠান্ডা মেঝে থেকে পোষা প্রাণীদের বাঁচানোর জন্য গরম মাদুর বিছিয়ে দেওয়া ভালো উপায়। আর ঘুমানোর জায়গাটিতে দেওয়া যেতে পারে ছোট গরম বিছানা ও পশুদের জন্য নির্ধারিত কম্বল।
তবে খুব অল্প বয়স্ক অথবা অধিক বয়স্ক পশুগুলোর অতিরিক্ত গরম অনুভূত হতে পারে, তাই সতর্ক থাকতে হবে। এদের জন্য হিটিং প্যাড বেশ কাজে দিতে পারে। এগুলো মূলত প্রাণীদের জয়েন্টের ব্যথা হওয়া থেকে দূরে রাখে।
আরো পড়ুন: মাঙ্কিপক্স: পোষা প্রাণী থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান
পোষা প্রাণীর শীতের পরিধেয়
পশুপাখিদের অধিকাংশেরই প্রকৃতি প্রদত্ত লোমের আবরণ থাকলেও এটি কখনই মনে করা ঠিক নয় যে, তাদের ঠান্ডাতে কোনো সমস্যাই হবে না। পাতলা লোমযুক্ত পূর্ণ বয়স্ক পশু এমনকি অধিক লোমশ পশুগুলোর মধ্যে যারা বেশি সংবেদনশীল, তারা সঠিক সুরক্ষা ছাড়া বেশিক্ষণ বাইরে থাকলে হাইপোথার্মিয়াতে আক্রান্ত হতে পারে। শরীরের বেশিরভাগ অংশকে ঢেকে রাখা সুন্দর একটি সোয়েটার দিতে পারে এই সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে লোমশ ছোট আকৃতির পশুগুলোর বেলায় এই পরিধেয়ের দরকার পড়ে না।
ঠান্ডার মধ্যে শীত থেকে আপনার আদরের পোষ্যটির পা বাঁচাতে এক জোড়া বুটি হতে পারে দারুণ একটি উপায়। বুটিগুলো পশুর থাবাগুলোতে ময়লা জমা হওয়া থেকে রক্ষা করে।
আরো পড়ুন: ব্লু জোন রহস্য: রোগহীন দীর্ঘজীবী সম্প্রদায়ের খোঁজে
শরীরের উন্মুক্ত জায়গাগুলো পরিষ্কার রাখা
বাইরে থেকে ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে নিজে পরিষ্কার হওয়ার পাশাপাশি পোষ্য প্রাণীটিকেও পরিষ্কার করা জরুরি।
ঠান্ডার সময় বাইরে ধূলো-ময়লা পায়ের আঙুলগুলোর মাঝে ঢুকে জ্বালা করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে সেগুলো জিহ্বা দিয়ে চাটতে দেখা যায়। এখানে ক্ষতিকর কোনো রাসায়নিক উপাদান থাকলে তা তাদের মুখে জ্বালা হওয়ার কারণ হতে পারে। তাই ঘরে ঢুকেই প্রথমে একটি আর্দ্র তোয়ালে দিয়ে পোষা প্রাণীটির পা মুছতে হবে। এছাড়া কুয়াশায় পশম ভিজে দীর্ঘক্ষণ স্যাঁতসেঁতে অবস্থায় রেখে দিলে শুষ্ক ত্বকসহ পোষা প্রাণীটির অন্যান্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ সময় হালকা গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে মৃদু শুকিয়ে পোষ্যটির শরীর মুছে দিয়ে শুকিয়ে নেওয়া উচিত।
সবচেয়ে ভালো বিকল্প হচ্ছে বুটি আর সোয়েটার থাকলে ব্যবহার করা। তাহলে পোষা প্রাণীদের কান, নাক, পা ও লেজ কুয়াশায় ভিজে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
আরো পড়ুন: কাঁসা, পিতল ও তামার তৈজসপত্র ব্যবহার কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত, বিজ্ঞান কী বলে?
শীতে পোষা প্রাণীর ত্বকের যত্ন
ঠান্ডার তীব্রতা থেকে পোষা প্রাণীদের ত্বক বাঁচাতে ঘন ঘন গোসল করানো যাবে না। অতিরিক্ত আর্দ্রতা প্রদানের জন্য উপযুক্ত হচ্ছে খাদ্যে নারিকেল তেল ব্যবহার করা। শুধুমাত্র পোষ্য পশু-পাখিদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি কিছু নিরাময় মলম আছে, সেগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলো প্রয়োগ করতে হয় নাক ও পায়ের আঙুলের আশেপাশে লাল দাগযুক্ত জায়গাতে।
ত্বকের যত্নে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শীতের সময় পশুগুলোর পশম বাড়তে দেওয়া। এটি প্রাকৃতিকভাবেই তাদের শরীরে উষ্ণতার একটি অতিরিক্ত স্তরের সংযোজন করে। তবে নষ্ট বা মরা পশম ঝরাতে প্রাণীদের শরীরে নিয়মিত ব্রাশ করতে হবে।
আরো পড়ুন: ডেঙ্গু সম্পর্কে ১০টি প্রচলিত ধারণা: জেনে নিন সঠিক তথ্য
শীতে কীভাবে চুলের যত্ন নেবেন
শীত এসে গেছে। ঠান্ডা আবহাওয়ায় আপনার চুল শুষ্ক ও প্রাণহীন হয়ে পড়ে। আপনার চুল কোমল ও স্বাস্থ্যকর রাখতে ত্বকের মতোই চুলও ঠান্ডা থেকে রক্ষা করতে হবে।
তাই তীব্র ঠান্ডার মধ্যে আপনার চুল স্বাস্থ্যকর রাখতে শীতে চুলের যত্নের কিছু টিপস জেনে নিন।
নিয়মিত চুল পরিষ্কার করা:
শীতে নিয়মিত শ্যাম্পু না করলে চুলের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। শ্যাম্পু করলে স্ক্যাল্প ও চুলের সব ময়লা পরিষ্কার হয়ে যায় এবং স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। তাই চুল গভীর থেকে পরিষ্কার করে এমন শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। যাদের প্রতিদিন রাস্তায় বেরোতে হয়; ধুলোবালি, ঘাম, দূষণের মুখোমুখি হতে হয়, তাদের ১-২ দিন পরপর শ্যাম্পু করা উচিত।
আরও পড়ুন: শীতকালে কেনো বেশি ঘুম পায়?
ডেঙ্গু সম্পর্কে ১০টি প্রচলিত ধারণা: জেনে নিন সঠিক তথ্য
সুনির্দিষ্ট অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে শুরু হওয়া ডেঙ্গু মহামারি এখন একটি বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ। এই মহাসংকটের ভেতরে আবার সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু ও এর চিকিৎসা নিয়ে নানা ধরনের ভুল ধারণা।
সরাসরি চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হয়ে অনেকেই নির্ভর করা শুরু করেছেন এই প্রচলিত ধারণাগুলোর ওপর। এই বিপথগামীতার সাপেক্ষে অপরিহার্য হয়ে পড়েছে অবিলম্বে গণসচেতনা সৃষ্টি। এই সচেতনা সৃষ্টির লক্ষ্যে চলুন জেনে নেওয়া যাক, ডেঙ্গু সম্পর্কে ১০টি প্রচলিত ধারণা।
ডেঙ্গু নিয়ে ১০টি ভুল ধারণা
ডেঙ্গু ছোঁয়াচে রোগ
এই ভুল ধারণার কারণে অধিকাংশ মানুষই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে এড়িয়ে চলেন। কিন্তু ডেঙ্গু সংক্রামিত ব্যক্তির সংস্পর্শে অন্য কোনো ব্যক্তি এলে তিনি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হন না। ডেঙ্গু রোগ মূলত ডেঙ্গু বা ডেঙ্গি ভাইরাস বহনকারি এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়।
তবে সংক্রামিত গর্ভবতী মায়ের থেকে ভ্রূণে চলে যেতে পারে এই ভাইরাস। এছাড়া রক্ত ও অঙ্গদানের মাধ্যমেও এই স্থানান্তরটা হতে পারে। তবে এরকম সংক্রমণের দৃষ্টান্ত বিরল।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, নির্ণয়ের প্রক্রিয়া, চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
ডেঙ্গু শুধু গ্রাম এলাকা বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে হয়
গ্রামাঞ্চলে খেত-খামার, বন-জঙ্গলের আধিক্যের কারণে অনেকেই এরকমটা ভেবে থাকেন। এছাড়া উন্নত দেশগুলোর তুলনায় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বেশি দেখা যায়। তাই বলে উন্নত দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর তুলনায় কম ডেঙ্গু ঝুঁকিপূর্ণ হবে, ব্যাপারটি তা নয়। উন্নত দেশগুলোতে দ্রুত চিকিৎসা নেয়ার সুবিধা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা থাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপটা কম বলা যেতে পারে।
প্রকৃতপক্ষে শহর-গ্রাম উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশ; যে স্থানই হোক না কেন, ডেঙ্গু ভাইরাস বাহিত এডিস মশা রয়েছে এমন যে কোনো স্থানই ঝুঁকিপূর্ণ।
শুধুমাত্র শিশু ও বয়স্কদের ডেঙ্গু হয়
শিশু আর বৃদ্ধরাই শুধু ডেঙ্গুর শিকার হয়- তা যে একদম অমূলক তা সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোতেই প্রমাণ পাওয়া যায়। আসলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার জন্য বয়স কোনো কারণ নয়। এখানে মূল বিষয়টি হচ্ছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। অনেক বয়স্ক লোকদের মধ্যেও বেশ ভালো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দেখা যায়। অন্যদিকে, এই ক্ষমতার দিক দিয়ে দুর্বল হওয়ার কারণে যৌবনে পদার্পণকারি সুঠাম দেহের মানুষও ডেঙ্গুর শিকার হতে পারেন।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গু প্রতিরোধ: বাড়িকে মশামুক্ত রাখার প্রাকৃতিক উপায়
যে কোনো মশা কামড়ালেই ডেঙ্গু হয়
এটি একদমই ভুল ধারণা। ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে এডিস ইজিপ্টি (Aedes aegypti) ও এডিস অ্যালবোপিকটাস (aedes albopictus) নামক প্রজাতির স্ত্রী মশা। এই এডিস ইজিপ্টি প্রজাতিটি অনেক বড়। এদের পা বা উপাঙ্গুলোতে সাদা দাগ থাকে।
ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তিকে এই মশা কামড়ালে এটি সেই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়। এ অবস্থায় প্রায় এক সপ্তাহ বা তার পরে মশাটি কোনো সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ালে তার ডেঙ্গু রোগ হবে।
ডেঙ্গু মশা শুধু দিনেই কামড় দেয়
ডেঙ্গু ছড়ানো মশা দিনের বেলায় সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। বেশিরভাগ সময় সূর্যোদয়ের দুই ঘণ্টা পরে এবং সূর্যাস্তের কয়েক ঘণ্টা আগে। কিন্তু তাই বলে যে এগুলো রাতে কামড়ায় না- এমনটি নয়।
রাতের বেলা সাধারণত অফিস, মল এবং ইনডোর অডিটোরিয়ামের ভেতরে অধিক আলোকিত জায়গায় এই মশার উৎপাত বেশি থাকে।
আরও পড়ুন: মশা কেন আপনাকেই কামড়ায়?
ডেঙ্গু জীবনে কেবল একবারই হয়
অনেকেই ভেবে থাকেন যে, যার একবার ডেঙ্গু হয়েছে তার আর কখনো ডেঙ্গু হবে না। এটি একদমই সঠিক নয়।
ডেঙ্গু ভাইরাস চার ধরনের হয়ে থাকে। এগুলোকে ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ এবং ডেন-৪ নামে চিহ্নিত করা হয়। এখানে ডেন-১ কামড়ানোর পর সংক্রমিত ব্যক্তি সঠিক চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে গেলে তিনি ডেন-১ থেকে অনাক্রম্যতা পাবেন। কিন্তু পরবর্তীতে ডেন-২-এর কামড় খাওয়ার পর তিনি আবার সংক্রমিত হয়ে যাবেন। অর্থাৎ সুস্থ হওয়ার পর এক ধরনের মশা থেকে রক্ষা পেলেও অন্যান্য ধরণগুলোর জন্য ঝুঁকি থেকে যাবে। তাত্ত্বিকভাবে বিবেচনা করলে, এভাবে জীবনে ৪ বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ছাগলের দুধ, গিলয় ও পেঁপে পাতার রস খেলে ডেঙ্গু নিরাময় হয়
ছাগলে দুধ, গিলয় ও পেঁপে পাতার রসের বিপুল স্বাস্থ্যগুন থাকায় অনেকেই এরকমটা দাবি করেন। কিন্তু ডেঙ্গুর নিরাময়ে এদের সরাসরি কোনো ভূমিকা নেই।
পেঁপের রস প্লাটিলেট উৎপাদনে সাহায্য করতে পারে। তবে তা অনেক অল্প পরিমাণে এবং এটি কোনো তাৎক্ষণিক প্রক্রিয়া নয়। বিশেষজ্ঞদের নির্দেশনা অনুসারে ওষুধের পাশাপাশি সম্পূরক হিসেবে ছাগলের দুধ, পেঁপে বা গিলয়ের নির্যাস খাওয়া যেতে পেতে পারে। তবে ডেঙ্গু নিরাময়ের জন্য পুরোপুরি এগুলোর উপর নির্ভর করা যাবে না।
আরও পড়ুন: শিশুকে ডেঙ্গু থেকে রক্ষার উপায়
এমনকি কিছু ক্ষেত্রে এগুলো উল্টো নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পেঁপে এবং গিলয়ের রস খেলে গ্যাস্ট্রিক এবং বমি হতে পারে। ডেঙ্গুর সময় এই বমি বা বমি ভাব এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। জরুরি পরিস্থিতিতে চিকিৎসকগণ প্লাটিলেটের হ্রাস-বৃদ্ধি তদারক করে থাকেন। এ সময় শরীরের অভ্যন্তরে অতিরিক্ত চাপ-সৃষ্টি হয়- এমন বিষয়গুলো এড়িয়ে চলা উচিত।