বৈদেশিক-সম্পর্ক
বাংলাদেশ কোনো বিশেষ দেশের দিকে ঝুঁকছে না: মোমেন
বাংলাদেশ চীনের দিকে ঝুঁকছে এমন ধারণা নাকচ করে দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি বজায় রাখে।
মোমেন বলেন, ‘কেউ কেউ বলে আমরা চীনের দিকে ঝুঁকে পড়েছি। আপাতদৃষ্টিতে জোর করে বলা হচ্ছে। আমরা একটি ভারসাম্যপূর্ণ এবং স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি বজায় রাখি। আমরা কারো প্রতি ঝুঁকে পড়িনি।’
তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক উক্তি স্মরণ করে বলেন: ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বিদ্বেষ নয়’।
শনিবার ‘ডিক্যাব টক’-এ বক্তৃতাকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশের লক্ষ্য হচ্ছে উন্নয়ন ও জনকল্যাণ এবং সরকার সেই লক্ষ্যেই মনোযোগ দিচ্ছে।
তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন যে বাংলাদেশ কখনই তথাকথিত ‘চীনা ঋণের ফাঁদে’ পড়বে না।
মোমেন বলেন, ‘এটি একটি ভুল ধারণা। কোনো কোনো পণ্ডিত এ কথা বলেন। অনেকে এটা গ্রহণ করেছে, বিশেষ করে কিছু বিদেশি প্রতিষ্ঠান। কোনো অবস্থাতেই আমরা 'চীনা ঋণের ফাঁদে' পড়ব না’।
তিনি বলেন, কিছু লোক এই ভুল ধারণা পোষণ করেছে যে শ্রীলঙ্কার পর বাংলাদেশও ‘চীনা ঋণের ফাঁদে’ পড়বে।
মোমেন বলেন, ‘আমরা খুব বিচক্ষণ। বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা খুবই সতর্ক থাকি। আমরা অপ্রয়োজনীয় ঋণ নিই না।’
তিনি বলেন যে আইএমএফের তথ্য অনুযায়ী, কোনো দেশ যদি তার ঋণের ৫৫ শতাংশের বেশি একটি দেশ থেকে নেয়, তাহলে ‘ঋণের ফাঁদে’ পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সামগ্রিক ঋণ জিডিপির মাত্র ১৩. ৭৮ শতাংশ। এর মধ্যে ৬১ শতাংশ নেওয়া হয়েছে এডিবি, আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে। একক দেশ হিসেবে জাপান ১৭ শতাংশ, অর্থাৎ সর্বোচ্চ ঋণ প্রদানকারী।’
মোমেন দাবি করেছেন, চীন থেকে বাংলাদেশ ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নিয়েছে, যা মোট জিডিপির শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ।
মোমেন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককে ‘ইস্পাত-কঠিন’ বলে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের একটি সোনালী অধ্যায়ে আছি। এটি একটি ইস্পাত-কঠিন সম্পর্ক।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে উদ্ধৃত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমেরিকা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চায়।
তিনি বলেন, ‘তারা একের পর এক প্রতিনিধি পাঠাচ্ছে। এটা ভালো। সব দেশের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। তাই জাতিসংঘের যেকোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে আমরা জয়ী হই। সব দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে।’
বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক সম্পর্কে মোমেন বলেন, বাংলাদেশ ভূ-কৌশলগতভাবে ভালো অবস্থানে রয়েছে।
তিনি বলেন, চীন একটি উদীয়মান তারকা এবং বাংলাদেশ চায় ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সবার জন্য উন্মুক্ত, মুক্ত, নিরাপদ, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং নিয়ম-ভিত্তিক নৌচলাচল।
তিনি আরও বলেন, ‘ভারত ও জাপানের মতো দেশগুলো এটাই দেখতে চায়। আমরা আমাদের নীতিতে 'অন্তর্ভুক্তি' যুক্ত করেছি, কারণ আমরা সব দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বসবাস করতে চাই।’
মোমেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেকসই শান্তি নীতির কথা তুলে ধরে বলেন, শান্তি ও স্থিতিশীলতা ছাড়া উন্নয়ন অসম্ভব।
ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ডিসিএবি সভাপতি রেজাউল করিম লোটাস ও সাধারণ সম্পাদক ইমরুল কায়েস।
বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যার ‘সমাধান খোঁজার’ বিষয়ে অসন্তোষ মোমেনের
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বিদেশিদের কাছ থেকে, বিশেষ করে ঢাকায় অবস্থানরত কূটনীতিকদের কাছ থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যার ‘সমাধান চাওয়ার’ বিষয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ডিক্যাব টক-এর বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি আপনি (মিডিয়া) সেই লক্ষ্যে সহায়ক ভূমিকা পালন করবেন না।’
মোমেন বলেন, কূটনীতিকরা তাদের দেশ ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য এখানে আসেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়েছে।
‘বাংলাদেশ সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দেশ নয়। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বড় অর্জন,’বলে মন্তব্য করেন মোমেন।
আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকার সহিংসতামুক্ত সুষ্ঠু নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর।
তিনি বলেন, এটি করতে সব পক্ষের আন্তরিক প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া ও ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফরে আসছেন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরকারের বিভিন্ন অর্জন এবং রপ্তানি বাড়ানোর প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের ইচ্ছার হার অনেক বেশি কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন ধীর হয়ে যায়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী দেশ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা উল্লেখ করে মোমেন বলেন, উন্নয়নের জন্য শান্তি অপরিহার্য।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার—এগুলো বাংলাদেশের ডিএনএ-তে রয়েছে।
মোমেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ত্যাগের কথা স্মরণ করে উল্লেখ করেন যে তার ত্যাগ বিশ্বের অন্যান্য নেতাদের চেয়ে অনেক বেশি।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, শান্তি ও স্থিতিশীলতা ব্যাহত হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ‘আমাদের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে টেকসই করতে হবে। আপনাদেরও (মিডিয়ার) একটা ভূমিকা আছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার বৈদেশিক ঋণ গ্রহণে বিচক্ষণ রয়েছে।
আরও পড়ুন: ইইউ সব দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে এবং সহিংসতা এড়াতে উৎসাহিত করে: শীর্ষ কূটনীতিক
তিনি আরও বলেন, দেশ সজাগ আছে, সবচেয়ে বেশি ঋণ এসেছে জাপান থেকে এবং বড় ঋণ এসেছে এডিবি, আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক থেকে।
বাংলাদেশ কোনো নির্দিষ্ট দেশের দিকে ঝুঁকতে চায় না বরং সবার সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখে।
ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ডিক্যাব সভাপতি রেজাউল করিম লোটাস ও সাধারণ সম্পাদক ইমরুল কায়েস। এ সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের নির্বাচন মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও ইইউ’র সঙ্গে সংযুক্ত নয়: রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
বাংলাদেশের নির্বাচন মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও ইইউ’র সঙ্গে সংযুক্ত নয়: রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমালোচনা করে রাশিয়া বলেছে, বাংলাদেশে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন পরিচালনা ও সংগঠিত হয় তা জাতীয় আইনে সুস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা ৬ জুলাই মস্কোতে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে, আমরা ঢাকার একটি স্বাধীন অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতি অনুসরণের আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করি যা বাংলাদেশের স্বার্থ পূরণ করে।’
তিনি বলেছিলেন যে তারা জুনের মাঝামাঝি ছয়জন এমইপি’র ইইউ উচ্চ প্রতিনিধি ফর ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড সিকিউরিটি পলিসি জোসেপ বোরেল এবং সেইসঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে বেশ কয়েকজন মার্কিন কংগ্রেসম্যানের কাছে প্রকাশিত চিঠিগুলো নোট করেছেন এবং বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমি আগে কখনো শুনিনি যে বাংলাদেশ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য। আমি এটা শুনিনি কারণ এটা নয়। আমি জানতাম না যে বাংলাদেশে নির্বাচন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সাথে যুক্ত।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচারের প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার ওপর জোর আইসিসি’র চিফ প্রসিকিউটরের
পশ্চিমাদের যুক্তি অনুসারে, তিনি বলেন, ইইউর পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতির জন্য উচ্চ প্রতিনিধি এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উচিত বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন একটি ‘নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার’গঠনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে কোনো ধরনের সুপারিশ জারি করা।
জাখারোভা বলেন, ‘এটা নয়া ঔপনিবেশিকতা কি? এটা নগরের প্রকৃতি এবং তাদের উপনিবেশের প্রতি তাদের মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কি?" - ।
তিনি বলেছিলেন যে এটি একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে স্পষ্ট হস্তক্ষেপের একটি প্রচেষ্টা। , কীভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে হবে, কর্তৃপক্ষ এটি বোঝে। সে সম্পর্কে তারা পরামর্শ চায়নি।
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে‘যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন দ্বারা সমালোচিত হয়, একটি নিয়মের হিসাবে বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ তাদের কাছে যায় না। অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে তাদের নিজস্ব সমস্যাগুলো মোকাবিলা করার পরার্মশ দেন।’
যেকোন মূল্যে সহিংসতা এড়াতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ফর ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড সিকিউরিটি পলিসির হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ জোসেপ বোরেল ফন্টেলেস বলেছেন, ‘ইইউ বাংলাদেশের সকল দল এবং সকল নাগরিককে তাদের রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগ করতে এবং সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করে।’
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রদূত ইমরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার 'ফলপ্রসূ' বৈঠক
ইউরোপীয় পার্লামেন্টে স্লোভাকিয়ার প্রতিনিধি ইভান স্টেফানেককে সম্বোধন করা একটি চিঠিতে, জোসেপ বোরেল বলেছেন, অন্যদিকে, এই প্রক্রিয়াগুলোতে সহিংসতার কোনও স্থান নেই এবং ‘যেকোন মূল্যে এড়ানো উচিত।’
তিনি বলেন, ইইউ এবং এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের বিষয়ে বাংলাদেশের সরকার ও সকল স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত থাকবে।
এই নীতির অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশির জন্য ভিসা প্রদান সীমিত করতে সক্ষম হবে।
আরও পড়ুন: ইইউ সব দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে এবং সহিংসতা এড়াতে উৎসাহিত করে: শীর্ষ কূটনীতিক
থাইল্যান্ডে অলিম্পিক কাউন্সিল অব এশিয়ার বৈঠকে যোগ দেবেন সেনাপ্রধান
থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অনুষ্ঠিতব্য অলিম্পিক কাউন্সিল অব এশিয়ার (ওসিএ) ৪২তম সাধারণ সভায় যোগ দিতে সরকারি সফরে থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে সভায় যোগ দেবেন এবং ২০২৩-২০২৭ সেশনের জন্য ওসিএ'র কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনে ভোট দেবেন।
বিভিন্ন দেশের ৪৫টি জাতীয় অলিম্পিক কমিটির প্রতিনিধিরা বৈঠকে অংশ নেবেন।
তিনি অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে খেলাধুলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
সফর শেষে আগামী ১১ জুলাই দেশে ফেরার কথা রয়েছে সেনাপ্রধানের।
আরও পড়ুন: স্ত্রীকে নিয়ে হজে রওনা হয়েছেন সেনাপ্রধান শফিউদ্দিন
শান্তি মিশনে যৌথ কন্টিনজেন্ট মোতায়েনের লক্ষ্যে গাম্বিয়া সফরে সেনাপ্রধান
বাংলাদেশ এফএও কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত
বাংলাদেশ সর্বসম্মতিক্রমে এশিয়া অঞ্চলের প্রতিনিধি হিসেবে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) চলমান ৪৩তম এফএও কনফারেন্সে ১৯৪টি সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধির অংশগ্রহণে সংস্থাটির কাউন্সিলের সদস্য পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে বাংলাদেশ ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মেয়াদে সদস্য নির্বাচিত হয়।
বাংলাদেশ কাউন্সিলের নীতি ও নির্বাহী পর্যায়ে এফএও-এর কার্যক্রম, বাজেট বাস্তবায়ন, ফলাফলভিত্তিক কাঠামোর আওতায় কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ এবং পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণসহ প্রশাসনিক দিকগুলো তদারকিতে অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে নেতৃত্ব দেবে।
এফএও কাউন্সিলের সদস্য পদে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে ইতালির রোমে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে।
আরও পড়ুন: এফএও সম্মেলন: খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহযোগিতা জোরদারের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
রোমে অবস্থিত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সদর দপ্তরে চলমান ৪৩তম কনফারেন্স হাইব্রিড (অনলাইন ও অফলাইন) মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক আট সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। উক্ত প্রতিনিধি দলে অন্যান্যদের মধ্যে আরও রয়েছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার, ইতালিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও এফএও-তে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মো. শামীম আহসান।
উল্লেখ্য, খাদ্য ও কৃষি সংস্থা জাতিসংঘের একটি বিশেষায়িত সংস্থা, যা ক্ষুধা দূরীকরণে আন্তর্জাতিক উদ্যোগে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। বাংলাদেশ এর ৪২তম কনফারেন্সে এশিয়া অঞ্চলের প্রতিনিধি হিসেবে ২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মেয়াদে কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিল।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে টেকসই খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করতে ছাদ কৃষি প্রয়োজন: এফএও
এফএওকে একটি আন্তর্জাতিক বীজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব শেখ হাসিনার
ইইউ সব দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে এবং সহিংসতা এড়াতে উৎসাহিত করে: শীর্ষ কূটনীতিক
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার এবং যেকোনো মূল্যে সহিংসতা এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ফর ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড সিকিউরিটি পলিসির হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ জোসেপ বোরেল ফন্টেলেস বলেছেন, ‘ইইউ বাংলাদেশের সকল দল এবং সকল নাগরিককে তাদের রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগ করতে এবং সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করে।’
ইউরোপীয় পার্লামেন্টে স্লোভাকিয়ার প্রতিনিধি ইভান স্টেফানেককে সম্বোধন করা একটি চিঠিতে জোসেপ বোরেল বলেছেন, এই প্রক্রিয়াগুলোতে সহিংসতার কোনও স্থান নেই এবং ‘যেকোন মূল্যে তা (সহিংসতা) এড়ানো উচিত।’
তিনি বলেন, ইইউ এবং এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের বিষয়ে বাংলাদেশের সরকার ও সকল স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত থাকবে।
বোরেল বলেন, তিনি প্রধান দলগুলোর মধ্যে সংলাপের কথাও বলেছেন এবং সুশীল সমাজের জন্য যথেষ্ট জায়গা থাকা উচিত।
ইভান স্টেফানেকসহ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্য জোসেপ বোরেলকে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানিয়ে ১২ জুন একটি চিঠি লেখেন।
বোরেল বলেন, বাংলাদেশ সরকার ইইউ সদস্যদের আসন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
তিনি এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেন এবং জানান যে প্রাথমিক ব্যবস্থা হিসেবে বর্তমান পরিস্থিতি মূল্যায়ন, সুবিধাগুলো পরীক্ষা এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিচালনার সম্ভাব্যতা মূল্যায়নের জন্য একটি ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন বাংলাদেশে পাঠানো হবে।
ইইউ-এর পররাষ্ট্র নীতির প্রধান বলেছেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সমাবেশের স্বাধীনতাসহ মূল স্বাধীনতা রক্ষা করা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য অপরিহার্য।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ছয় সদস্যের একটি নির্বাচনী অনুসন্ধানী মিশন (এক্সএম) আগামী ৮ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত দেশটির আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে বাংলাদেশ সফর করবে।
বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি উইংয়ের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ রফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, এই মিশনের কাজ হবে মূল নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনের পরিধি, পরিকল্পনা, বাজেট, সরবরাহ ও নিরাপত্তা মূল্যায়ন করা।
ঢাকায় ইইউ প্রতিনিধিদল জানিয়েছে, তদন্ত মিশনের বাংলাদেশে অবস্থানকালে তারা সরকারি প্রতিনিধি, নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করতে ইচ্ছুক।
নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে এই সফর হবে এবং এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তেমন কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা।
ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে একটি পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন (ইওএম) পাঠানোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
ঢাকায় ইইউ মিশন অনুসারে, আসন্ন সংসদ নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য ইইউ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনের (ইওএম) ‘পরামর্শযোগ্যতা, উপযোগিতা এবং সম্ভাব্যতা’- মূল্যায়ন করাই এর মূল উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি গত কয়েক মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন।
মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে তারা আগামী নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে ইইউ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন মোতায়েনের প্রস্তাবিত আলোচনা করেন।
মোমেন নির্বাচনের সময় ইইউ এবং অন্যান্য দেশের পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে সরকার ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য’ সাধারণ নির্বাচন চায়।
তিনি ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতায়নের জন্য গৃহীত পদক্ষেপের কথা রাষ্ট্রদূতকে জানান।
এদিকে, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোর বাংলাদেশ সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
অবস্থানকালে তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন।
সাম্প্রতিক ব্রাসেলস সফরের সময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম মে মাসের প্রথম সপ্তাহে গিলমোরের সঙ্গে বৈঠকসহ একাধিক বৈঠক করেন।
শাহরিয়ার গিলমোরকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচারের প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার ওপর জোর আইসিসি’র চিফ প্রসিকিউটরের
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) চিফ প্রসিকিউটর করিম খান রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচারের প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার ওপর জোর দিয়েছেন।
শুক্রবার বিকালে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, প্রতিশ্রুতি ও ন্যায়বিচার প্রদানের মধ্যে ব্যবধান রয়েছে।
চিফ প্রসিকিউটর করিম খান রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কথিত গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে সাক্ষ্য নিতে কক্সবাজার পরিদর্শন করেছেন।
কারা দায়ী তা খুঁজে বের করতে তিনি পরের বছর আবার আসবেন উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি রোহিঙ্গাদের প্রতি অঙ্গীকার দিয়েছি।’
আইসিসির প্রসিকিউটর বলেছেন যে তিনি মামলার জন্য সম্পদ বাড়াতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন।
কুতুপালং ক্যাম্প পরিদর্শনকালে করিম খান রোহিঙ্গা যুব গোষ্ঠীর সঙ্গে আইসিসির কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেন এবং তরুণরা কীভাবে ন্যায়বিচার প্রচেষ্টায় অবদান রাখতে পারে তা বিবেচনা করেন।
তিনি বলেন, জবাবদিহিতার প্রক্রিয়ায় মূল্যবান অংশীদার হিসেবে শিশু ও তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষমতায়ন অপরিহার্য।
কুতুপালং ক্যাম্পে প্রথম বৈঠকে তিনি রোহিঙ্গা নারী গোষ্ঠীর সঙ্গে কথা বলেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকট, ইন্দো-প্যাসিফিক, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বাংলাদেশ ও সুইডেনের মতবিনিময়
তিনি রিপোর্টিং পদ্ধতিতে প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি, আইসিসির কাজ সম্পর্কে বোঝাপড়া গভীর করা এবং স্বাধীন তদন্তের মাধ্যমে ফলাফল প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গির কথা তুলে ধরেন।
মিয়ানমারে সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার আবাসস্থল কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প।
প্রসিকিউটর খান তার সফরের উদ্দেশ্য এবং বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি ও নিহতদের পরিবারের সঙ্গে তাদের চলমান কাজ ব্যাখ্যা করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ন্যায়ের পতাকা ধরে রেখেছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার উদারতায় ধন্যবাদ জানান তিনি।
এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন রোহিঙ্গাদের বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব মামলা নিষ্পত্তির জন্য আইসিসির প্রচেষ্টা কামনা করেন।
মঙ্গলবার আইসিসির প্রসিকিউটরকে তিনি বলেন, ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মামলাটি শেষ করার জন্য আপনার প্রচেষ্টা করা উচিত। বিলম্বে বিচার মানে বিচারের নামে প্রহসন।’
আরও পড়ুন: মালয়েশিয়ার উচিত তদন্ত করা, রোহিঙ্গা পাচারে সিন্ডিকেট ভূমিকার জন্য কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করা: ফোর্টফাই রাইটস
২০১৯ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারকরা আদালতের এখতিয়ারের মধ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করার অনুরোধ মঞ্জুর করেন।
তদন্ত শুরু করার এই অনুমোদনকে ন্যায়বিচারের অনুসন্ধান ও সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য একটি ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ হিসেবে দেখা হয়, বিশেষত এই পরিস্থিতিতে কথিত অপরাধের শিকারদের জন্য।
প্রসিকিউটরের কার্যালয়ের তদন্তকারীরা এখন মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যা ঘটেছে তার সত্যতা উন্মোচনের জন্য সতর্কতা ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে চেষ্টা করছেন।
মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। আমরা বলছি গণহত্যা আর কখনো হবে না।
আরও পড়ুন: যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের মামলা নিষ্পত্তি করুন: আইসিসির প্রসিকিউটরকে মোমেন
রাষ্ট্রদূত ইমরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়ার 'ফলপ্রসূ' বৈঠক
যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়া বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব আরও গভীর করতে আগ্রহী।
বৃহস্পতিবার তিনি ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তারা একটি ‘ফলপ্রসূ’ বৈঠক করেন।
এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ন্যায্য শ্রম চর্চা এবং মানবিক সহযোগিতা বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরানকে ধন্যবাদ। আমি আমাদের শক্তিশালী অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করতে আগ্রহী।’
যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেয়া ১১ থেকে ১৪ জুলাইয়ের সফরে মার্কিন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন।
দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এবং ইউএসএইড-এর এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অঞ্জলি কৌর প্রতিনিধি দলে থাকবেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র অটল: হোয়াইট হাউস
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বৃহস্পতিবার বলেছেন, জেয়া তুলনামূলকভাবে একজন জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা এবং তার আওতাধীন কাজের ক্ষেত্র বেশ বিস্তৃত।
তিনি বলেন যে আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের সফরকালে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় ছাড়াও বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। নির্বাচনী ইস্যুগুলো অন্যতম ইস্যু হিসেবে আলোচনায় আসতে পারে। আমরা এটা উড়িয়ে দিচ্ছি না।’
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মানবাধিকার, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, বাণিজ্য, শ্রমসহ পারস্পরিক স্বার্থের অন্যান্য বিষয় আলোচনায় আসবে।
মোমেন বলেন যে মার্কিন প্রতিনিধি দল শুধু নির্বাচনী ইস্যু নিয়ে আলোচনা করতে আসছে এমন কোনো তথ্য তার কাছে নেই, তবে এটি দুই দেশের বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা।
২০২২ সালের ১৯ থেকে ২৩ মার্চ আন্ডার সেক্রেটারি ফর পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডের ওয়াশিংটন সফরসহ সাম্প্রতিক অতীতে ওয়াশিংটন থেকে বেশ কয়েকটি সফর হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সঙ্গে নিরাপত্তা ও বাণিজ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র
চলতি বছরের শুরুতে লু বাংলাদেশ সফর করেন। সাম্প্রতিক সময়ে ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ নীতি নির্ধারণে তিনি ব্যাপকভাবে জড়িত রয়েছেন।
গত ২৫ মে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পর লু এই পদক্ষেপের প্রকাশ্য মুখ হিসেবে আবির্ভূত হন।
এদিকে মন্ত্রণালয়ে সাপ্তাহিক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জনকূটনীতি অনুবিভাগের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, উজরা জেয়ার নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধি দলের এই সফর মূলত দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে এবং যোগাযোগ আরও জোরদার করার একটি প্রচেষ্টা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের ব্যস্ততা ছাড়াও রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করবেন।
জেয়া গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে, সার্বজনীন মানবাধিকারকে এগিয়ে নিতে, শরণার্থী ও মানবিক ত্রাণকে সমর্থন করতে, আইনের শাসন ও মাদকবিরোধী সহযোগিতা, দুর্নীতি ও অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে, সশস্ত্র সংঘাত রোধ করতে এবং মানব পাচার নির্মূলে বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ থেকে আরও ওষুধ আমদানির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান
কোর্ট মার্শালের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দেওয়া প্রথম ভারতীয় কমান্ডার মারা গেছেন
কোর্ট মার্শালের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দেওয়া প্রথম ভারতীয় কমান্ডার কিংবদন্তি ও খ্যাতিমান ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কর্মকর্তা মেজর পরিমল কুমার ঘোষ মারা গেছেন।
বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) ৮৪ বছর বয়সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ভারতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
তার মেয়ে আগমনি ঘোষ বলেন, ‘আমার বাবা পরিমল কুমার ঘোষ একজন আনসাং হিরো। সেনাবাহিনী, বিএসএফ এবং ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা আরঅ্যান্ডএডাব্লিউ-এ তার কর্মজীবন নিখুঁত পেশাদারিত্বের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংবেদনশীল প্রকৃতির কারণে তার চাকরি জীবনে এটা অজানা থেকে যায়। তিনি বাংলাদেশের জন্য একজন নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় যিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের হয়ে লড়াই করেছিলেন।’
আরও পড়ুন: ফুটবল কিংবদন্তি পেলে ৮২ বছর বয়সে মারা গেছেন
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্র্যাকডাউন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তারের সময় মেজর পি কে ঘোষ ত্রিপুরার সাব্রুম অঞ্চলে ৯২তম বিএসএফ ব্যাটালিয়নের এফ কোম্পানির কমান্ডিং করছিলেন। তখন তিনি সমরেন্দ্রগঞ্জের আমলিঘাটের চারটি সীমান্ত ফাঁড়ির দায়িত্বে ছিলেন।
‘ফার্স্ট ক্রসিং ওভার অ্যান্ড ফরমেশন অব ফার্স্ট মুক্তিবাহিনী বাই বিএসএফ’- শিরোনামের অধীনে ‘বর্ডারম্যান ২০২১’- নিবন্ধে তার গল্পটি ইকোনমিক টাইমস বিশদভাবে প্রকাশ করেছেন।
সেখানে বলা হয়েছে, একদল বাঙালি তার কাছে এসে পাক সেনাদের বর্বরতার কথা বর্ণনা করে সাহায্য চাইলে তিনি সিনিয়রদের না জানিয়ে এমনকি কোর্ট মার্শালের ঝুঁকি নিয়ে সীমানা অতিক্রম করেছিলেন।
নিবন্ধে আরও তুলে ধরা হয়, ‘বাঙালিরা তার কাছে এসে বলেন যে পাক সেনারা গ্রামবাসীদের ওপর অমানবিক অত্যাচার করছে। বিশেষ করে নারীদের টার্গেট করে নির্যাতন করা হচ্ছে। এ বর্বরতা থেকে পরিত্রাণের জন্য তার কাছে সাহায্য চাইলে তিনি সহানুভূতি দেখিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের এ অভিযোগ জানানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন।’
তাদের কথায় তিনি অত্যন্ত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর 'প্রফেসর আলী' ছদ্মনাম ধারণ করে তাদের সঙ্গে গিয়েছিলেন। এ সময় গ্রামবাসীরা তাদের নেতা অধ্যাপক মজুমদারের সঙ্গে দেখা করতে বেরিয়ে এসে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিতে থাকে।
তখন নুরুদ্দিনের অধীনে ৬ ইপিআর সেনাদের নিয়ে মুক্তিবাহিনীর ১ম গ্রুপ গঠন করা হয়। ঘটনাস্থলেই তাদের অনুপ্রেরণামূলক কথা বলে শপথ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। সুভাপুর ব্রিজের উত্তর প্রান্তে তিনজনের দলে মোতায়েন করে পাক সৈন্যদের প্রবেশ ঠেকানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: প্রখ্যাত ভাস্কর শামীম শিকদার মারা গেছেন
পরিমল কুমার ঘোষ এ ঘটনা প্রসঙ্গে এক বর্ণনায় বলেন, ‘২৭ মার্চ ১৯৭১ সকালে সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ কে ঘোষ শ্রীনগরে আমার কাছে আসেন এবং আমার বিশেষ এসআইটিআরইপি এর জন্য আমাকে ধন্যবাদ জানান। আমি খুব দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম। কিন্তু একজন অনুগত সৈনিক হিসেবে ২৬ মার্চ সুভাপুরে আমার ক্রসিংয়ের খবর প্রকাশ হয়ে যায়। হঠাৎ করে সিওর দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেল।’
তিনি আরও বলেন, ‘তিনি কাউকে না বলে বর্ডার ক্রস করায় আমার ওপর রেগে গেলেন। চিৎকার করে বললেন, আপনি আন্তর্জাতিক সীমান্ত পার হওয়ার সাহস কিভাবে করলেন? এ জন্য আপনি হয়তো কোর্ট মার্শালের মুখোমুখি হতে পারেন। তিনি অনেক রাগারাগি করে চলে গেলেন। আমি ক্ষণিকের জন্য মন খারাপ করলেও মনের অজান্তে এক মোলায়েম সুখ অনুভব করতে শুরু করলাম। কারণ সীমান্তের ওপারে নিরস্ত্র, নিরপরাধ নাগরিকদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি।’
পরিমল কুমার ঘোষের মৃত্যুকে একজন ‘কিংবদন্তি প্রয়াণ’ হিসেবে অভিহিত করে সুরেশ দত্ত (প্রাক্তন আইজি বিএসএফ) বলেন, ‘ঘোষ দাদা আগরতলায় বিএসএফ জি শাখায় আমার পূর্বসূরি ছিলেন। তিনি পেশাদারিত্বের মান অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন যা অনুকরণ করা সহজ নয়।’
আরও পড়ুন: একুশে পদকপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী গোলাম মোস্তফা মারা গেছেন
শামীম আহসান মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের পরবর্তী হাইকমিশনার নিযুক্ত
ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. শামীম আহসানকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের পরবর্তী হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে তিনি এই পদে রাষ্ট্রদূত মো. গোলাম সারওয়ারের স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন।
রাষ্ট্রদূত শামীম আহসান বিসিএস (পররাষ্ট্র) ক্যাডারের ১১তম ব্যাচে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন।
তিনি ১৯৯৩ সালে ফরেন সার্ভিসে যোগদান করেন এবং তখন থেকেই দেশে ও বিদেশে ব্যাপকভাবে কাজ করেন।
আরও পড়ুন: মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া ও ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফরে আসছেন
তার বর্ণাঢ্য কূটনৈতিক কর্মজীবনে, তার বর্তমান দায়িত্ব ছাড়াও, তিনি নাইজেরিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার এবং নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি কুয়েত, দোহা, নাইরোবি, রোম এবং ওয়াশিংটন ডিসির মতো বাংলাদেশ মিশনে বিভিন্ন দায়িত্বও পালন করেছেন।
পিরোজপুরে জন্ম নেওয়া রাষ্ট্রদূত আহসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিএসএস এবং এমএসএস করেছেন।
এছাড়াও তিনি দেশে ও বিদেশে বেশ কিছু পেশাগত প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করেছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে রাষ্ট্রদূত আহসান বিবাহিত এবং একটি কন্যা সন্তানের জনক।
আরও পড়ুন: লুৎফর রহমান ভিয়েতনামে বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত