বৈদেশিক-সম্পর্ক
এয়ারবাসের কাছ থেকে ১০টি এ৩৫০ কেনার বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিতে খুশি ফ্রান্স
এয়ারবাসের কাছ থেকে ১০টি এ৩৫০ কেনার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছে ফ্রান্স। দুই দেশ বাংলাদেশের সব বিমানবন্দরে উন্নত এয়ার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় অব্যাহত সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।
শান্তি, সমৃদ্ধি ও জনগণের জন্য বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের অংশীদারিত্বের যৌথ ঘোষণায় উভয় দেশ কৌশলগত খাতে বর্ধিত সহযোগিতাকে স্বাগত জানিয়েছে।
বাংলাদেশ এবং ফ্রান্স সার্বভৌমত্ব এবং কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনকে একটি স্থিতিশীল, বহু-মেরুকেন্দ্রিক বিশ্বের মূল নীতি হিসাবে বিবেচনা করে।
একইভাবে স্মার্ট বাংলাদেশের ২০৪১ সালের রূপকল্পে অবদান রাখার জন্য দুই দেশ এয়ারবাস ডিএস এবং বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিএল) মধ্যে একটি মহাকাশ অংশীদারিত্বের সমাপ্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। যা নিজস্ব সার্বভৌম পৃথিবী পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইটের মালিক হওয়ার পরে মহাকাশ জাতি হিসাবে বাংলাদেশের অস্থানকে শক্তিশালী করবে।
আরও পড়ুন: তুরাগে নৌকা ভ্রমণ করলেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ
বাংলাদেশ ও ফ্রান্স কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ আইসিটি ও ডিজিটাল প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ফ্রান্স বাংলাদেশকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের মতো উদ্যোগে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায়।
তারা আন্তর্জাতিক আইনে নিয়ন্ত্রিত একটি বৈশ্বিক, উন্মুক্ত এবং নিরাপদ সাইবারস্পেসের জন্য সাইবার নিরাপত্তা সমস্যাগুলোর একটি বর্ধিত ব্যবস্থাপনার দিকে তাদের প্রচেষ্টায় যোগদানের গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছে।
ফ্রান্স সাইবার নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে প্রযুক্তিগত সহায়তা শনাক্ত করতে কাজ করবে এবং জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্টে একসঙ্গে কাজ করবে।
অভিন্ন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকারের অগ্রগতি, টেকসই শান্তি ও টেকসই উন্নয়নের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব বিদ্যমান।
এই বন্ধুত্বের মূলে রয়েছে বহু-স্তর বিশিষ্ট ঐতিহাসিক বন্ধন যা উল্লেখযোগ্যভাবে দেখেছে ফ্রান্সের সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী আন্দ্রে মালরাক্স, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে সমর্থন করার জন্য তাঁর স্মরণীয় আহ্বান এবং ঢাকায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তার পরবর্তী বৈঠক এপ্রিল 1973 সালে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সার্বভৌম নীতির স্বাধীনতাকে সম্মান করে ফ্রান্স: প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর সঙ্গে আলোচনার পর প্রধানমন্ত্রী
এই বন্ধুত্বের মূলে রয়েছে বহুস্তরবিশিষ্ট ঐতিহাসিক সম্পর্ক। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ফ্রান্সের সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আন্দ্রে মালরাক্স ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে সমর্থন করার জন্য তার স্মরণীয় আহ্বান এবং ১৯৭৩ সালের এপ্রিলে ঢাকায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ।
২০২১ সালের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফ্রান্স সফরের সময় বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ম্যাক্রোঁকে। তার আমন্ত্রণের আলোকে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ২০২৩ সালের ১০ থেকে ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সফর করেন।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে সোমবার ঢাকায় বৈঠক করেন। বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি এবং জনকেন্দ্রিক সংযোগের সমর্থনে কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনকে উৎসাহিত করে একটি বিশ্বস্ত ও অর্থবহ অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে তাদের অভিন্ন প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
আরও পড়ুন: নগর পরিচালনা ও অবকাঠামো উন্নয়নে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে ১৮৪ ইউরোর ঋণ সহায়তা চুক্তি সই
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে সম্পর্ককে 'কৌশলগত' পর্যায়ে নিতে চায় ঢাকা-প্যারিস
শান্তি, সমৃদ্ধি ও জনগণের জন্য অংশীদারিত্বকে ‘কৌশলগত’ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।
সরকারের অসাংবিধানিক পরিবর্তন এবং যেকোনো দেশে বেআইনি সামরিক দখলের নিন্দা জানায় উভয় দেশ। একই সঙ্গে সংঘাত, সহিংসতা ও নৃশংস অপরাধের কারণে বাস্তুচ্যুতদের জন্য জরুরি এবং নিরবচ্ছিন্ন মানবিক সহায়তার আহ্বান জানান দুই দেশের নেতা।
কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য অংশীদারিত্বের কথা তুলে ধরে, আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের প্রতি তাদের অটল প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স। বিশেষ করে সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের নীতি ও বহুপাক্ষিকতাবাদে অবিচল বিশ্বাসের উপর তারা জোর দিয়েছেন।
সেক্ষেত্রে ফ্রান্স ও বাংলাদেশ সব জাতির আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে।
২০২১ সালের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফ্রান্স সফরের সময় দুই দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও সহযোগিতার বিষয়ে স্বাক্ষরিত লেটার অব ইনটেন্টের কথা স্মরণ করে দুই দেশ।
আরও পড়ুন: ঢাকা-প্যারিস দুটি সমঝোতা স্মারক সই
জলবায়ু জরুরি অবস্থা
বাংলাদেশ ও ফ্রান্স জলবায়ু জরুরি পরিস্থিতিতে দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার শক্তিতে বিশ্বাসী।
উভয় দেশই চারটি মূল নীতি অনুসরণ করে বৈশ্বিক অর্থায়ন কাঠামোর আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনপদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে: কোনো দেশকে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই এবং গ্রহ রক্ষণবেক্ষণের মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে না- তা নিশ্চিত করা; স্থানান্তর কৌশলগুলোর দেশের মালিকানা নিশ্চিত করা; দুর্বল অর্থনীতিগুলোকে সমর্থন করার জন্য বর্ধিত এবং অনুমানযোগ্য সংস্থানগুলোর সঙ্গে একটি আর্থিক উদ্দীপনা সরবরাহ করা এবং গ্রিনহাউজ গ্যাস শূন্যের কাছে নামিয়ে আনার পাশাপাশি প্রকৃতিবান্ধব বিশ্ব অর্জনের জন্য অতিরিক্ত বেসরকারি মূলধন সংগ্রহ করা।
বাংলাদেশ ও ফ্রান্স মনে করে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য জলবায়ু অর্থায়নে প্রবেশাধিকার সহজতর করতে বৈশ্বিক প্রচেষ্টা আরও ত্বরান্বিত করা উচিত।
যেসব দেশ চরম বিপর্যয় মোকাবিলা করে এবং ক্ষয়ক্ষতি তহবিলে সাড়া দেয় সেসব দেশকে জলবায়ু-সহনশীল ঋণ ধারাগুলোর আরও বাস্তবায়নের মাধ্যমে সহায়তা অব্যাহত রাখবে ফ্রান্স। এর মধ্যে রয়েছে জলবায়ু ঝুঁকির বিরুদ্ধে ভি২০-জি-৭ গ্লোবাল শিল্ড, যার মধ্যে বাংলাদেশ একটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত দেশ।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের ঝুঁকিতে থাকা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সহায়তা করতে একটি তহবিলসহ নতুন অর্থায়ন ব্যবস্থা বাস্তবায়নে সহায়তা করে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স।
ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করতে তাদের ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করেছে ফ্রান্স।
এ বছর দুবাইয়ে একটি ফলাফলভিত্তিক কপ-২৮ আয়োজনে যোগ দিতেও সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স।
নবায়নযোগ্য ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি খাতে বিনিয়োগসহ জলবায়ু সহনশীল বিশ্বে জরুরি রূপান্তরের লক্ষ্যে কপ-২৮-এ একটি পথ প্রণয়নের প্রত্যাশা করে দুই দেশ।
তারা জীবাশ্ম জ্বালানি ছাড়াই বৈশ্বিক শক্তি রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করার প্রয়োজনীয়তা পুনর্ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে বিশ্বজুড়ে নাবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদন এবং জ্বালানি দক্ষতার জন্য উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণ ও পূরণের প্রয়োজনীয়তার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জন এবং জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা থেকে সরে আসার লক্ষ্য পুনর্ব্যক্ত করেছে ফ্রান্স। অন্যদিকে বাংলাদেশ সাশ্রয়ী মূল্যের অর্থ ও প্রযুক্তির মাধ্যমে তার জ্বালানি রূপান্তর প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য একটি টেকসই সহযোগিতামূলক পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও সরবরাহ শৃঙ্খল বিঘ্ন বিশ্বব্যাপী খাদ্য সার্বভৌমত্ব, খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির উপর বিপর্যয়কর প্রভাব ফেলছে বলে একমত প্রকাশ করেছে দুই দেশ।
এ ছাড়া নিয়মিত সংলাপের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তার সমর্থনে টেকসই ও স্থিতিশীল খাদ্য ও কৃষি ব্যবস্থায় সহযোগিতা জোরদারে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স।
এ প্রসঙ্গে ফ্রান্সের নেতৃত্বে ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার রেজিলিয়েন্স মিশনে (ফার্ম) বাংলাদেশের যোগদানের প্রশংসা করেছে ফ্রান্স।
পানি শোধন থেকে শুরু করে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি, নগর উন্নয়ন থেকে শুরু করে অন্তর্ভুক্তিমূলক স্বাস্থ্যসেবাসহ জলবায়ুভিত্তিক প্রকল্প এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফ্রান্সের উন্নয়ন সহযোগিতা সহায়তার ভূয়সী প্রশংসা করেছে বাংলাদেশ।
এ ছাড়া বন ও জলাভূমি দ্বারা প্রদত্ত গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুসংস্থান সেবার গুরুত্বের উপর জোর দেয় দুই দেশ। সেই সঙ্গে জীববৈচিত্র্য ও কার্বন উভয়ের গুরুত্বপূর্ণ মজুদ বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণে তাদের সহযোগিতা গভীর করার অঙ্গীকার করে দুই দেশের সরকার। এ ছাড়া ফ্রান্স দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ম্যানগ্রোভ বন ও এর জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে বাংলাদেশের অব্যাহত প্রচেষ্টার প্রশংসা করে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ আইসিটি ও ডিজিটাল প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে ফ্রান্স। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক গ্লোবাল পার্টনারশিপের মতো উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করার আমন্ত্রণও জানায় ফ্রান্স।
তারা আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা পরিচালিত একটি বৈশ্বিক, উন্মুক্ত ও সুরক্ষিত সাইবার স্পেসের জন্য সাইবার নিরাপত্তা ইস্যুগুলোর বর্ধিত পরিচালনার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
সাইবার নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে কারিগরি সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে ফ্রান্স। একইসঙ্গে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে গ্লোবাল ডিজিটাল কম্প্যাক্টেও একসঙ্গে কাজ করবে দুই দেশ।
সুশীল সমাজসহ জনকেন্দ্রিক যোগাযোগের জন্য অংশীদারিত্বের কথা তুলে ধরে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স সংস্কৃতিকে একটি শক্তিশালী, জনকেন্দ্রিক সংযোগের জন্য একটি প্রধান সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে।
এ ছাড়া প্রত্নতাত্ত্বিক ক্ষেত্রে, বিশেষত অনন্য মহাস্থানগড় প্রত্নতাত্ত্বিক মিশনের মাধ্যমে তাদের দীর্ঘদিনের সহযোগিতার প্রশংসা করেন এবং অন্যান্য সম্ভাব্য খনন ও পুনরুদ্ধার মিশন নিয়ে আলোচনা করতে সম্মত হন তারা।
উভয় দেশ তাদের সাংস্কৃতিক সহযোগিতা আরও উন্নয়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং এ ক্ষেত্রে ঢাকা ও চট্টগ্রামে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের প্রধান ভূমিকার কথা উল্লেখ করে।
উভয় দেশ বহুভাষিকতার গুরুত্ব স্বীকার করে বাংলাদেশে ফরাসি ভাষা এবং ফ্রান্সে বাংলা ভাষা শেখার প্রসারে প্রতিশ্রুতি দেয়।
পাশাপাশি বাংলাদেশের তরুণ কূটনীতিকদের জন্য ফ্রান্সে কূটনৈতিক ও ফরাসি ভাষার প্রশিক্ষণ দিতে সম্মত হয়েছে ফ্রান্স।
শান্তির সংস্কৃতির উন্নয়নসহ ইউনেস্কোর মধ্যে তাদের পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স।
পারস্পরিক বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও গবেষণা সহযোগিতা জোরদার করতে চায় দুই দেশ। এই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে গবেষণা সহযোগিতা জোরদার করার উপায় হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ওশান গভর্নেন্সে একজন ফরাসি সমুদ্রবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ নিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছে দেশটি।
স্থাপত্য, প্রকৌশল, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সমুদ্রবিজ্ঞান, সিসমোলজি, ক্লাইমেট অ্যাকশন, টেকসই পর্যটন ও উন্নয়ন অধ্যয়নের মতো অগ্রাধিকারমূলক বিষয়গুলোতে মনোনিবেশ করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে মানবসম্পদ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উভয় দেশ আরও বেশি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও শিক্ষাবিদ নিয়োগদানকে উৎসাহিত করার ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
বাংলাদেশ ও ফ্রান্স তাদের অংশীদারিত্বের কৌশলগত মাত্রাকে আরও গভীর করতে নিয়মিত উচ্চ পর্যায়ের সংলাপ শুরু করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ১০-১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে দ্বিপাক্ষিক সফর করেন।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সোমবার ঢাকায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করার জন্য সাক্ষাৎ করেছেন। বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা, স্থিতিস্থাপকতার সমর্থনে কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের জন্য একটি বিশ্বস্ত এবং অর্থপূর্ণ অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার জন্য তাদের অভিন্ন প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
আরও পড়ুন: প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে ঢাকা-প্যারিস সম্মতিপত্র স্বাক্ষর
জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ: নেথান ফ্লুক
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের চার্জ ডি'অ্যাফেয়ার্স নেথান ফ্লুক বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ।
তিনি বলেন, জলবায়ুর জন্য কৃষি উদ্ভাবন মিশন এবং গ্লোবাল মিথেন প্রতিশ্রুতির সদস্য হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে কৃষকদের খাপ খাইয়ে নিতে সমর্থন যোগাতে যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের একটি যৌথ মিশন রয়েছে।
সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) র্যাডিসন ব্লু হোটেলে স্মার্ট কৃষি এবং উদ্ভাবনী জৈবপ্রযুক্তির যোগসূত্র বিষয়ক সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ জলবায়ু অভিযোজন কার্যক্রমে অনুদানভিত্তিক অর্থায়ন চায়: পরিবেশমন্ত্রী
বাংলাদেশের কৃষি মন্ত্রণালয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার জলবায়ু ‘স্মার্ট কৃষি এবং উদ্ভাবনী জৈবপ্রযুক্তির যোগসূত্র’ বিষয়ক এই সংলাপের আয়োজন করে।
তিনি বলেন, লবণাক্ততা, খরা এবং নতুন কীটপতঙ্গের আক্রমণ কৃষকদের জন্য লাভজনক খাদ্য উৎপাদন কঠিন করে তুলেছে।
‘বাইডেন প্রশাসন জৈবপ্রযুক্তিগত উদ্ভাবনকে সুরক্ষা এবং সমর্থনের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়েছে’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সংলাপে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া ও তা প্রশমিত করার জন্য উদ্ভাবনী জৈবপ্রযুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
আরও পড়ুন: 'জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য রোবটিক্স' প্রতিযোগিতার আয়োজন করল আইইইই বাংলাদেশ সেকশন
তুরাগে নৌকা ভ্রমণ করলেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সোমবার বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক সফর সূচি শেষ করার আগে তুরাগ নদে নৌকা ভ্রমণ করেছেন।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ম্যাক্রোঁর নৌকাভ্রমণ নির্ধারিত ছিল না তবে তিনি এ ভ্রমণ উপভোগ করেছেন।
ফরাসি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী।
ড. হাছান তার ফেসবুক প্রোফাইলে দুটি ছবি আপলোড করে লিখেছেন, ‘ঢাকার তুরাগ নদে নৌকা ভ্রমণের পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে সেলফি। তিনি নৌকা ভ্রমণ অনেক উপভোগ করেছেন।’
আরও পড়ুন: নগর পরিচালনা ও অবকাঠামো উন্নয়নে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে ১৮৪ ইউরোর ঋণ সহায়তা চুক্তি সই
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে সংক্ষিপ্ত সফরে রবিবার সন্ধ্যায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ঢাকায় আসেন। গত তিন দশক পর এটিই কোনো ফরাসি প্রেসিডেন্টের প্রথম বাংলাদেশ সফর।
প্রাক্তন ফরাসি প্রেসিডেন্ট মিটাররান্ড সর্বশেষ ১৯৯০ সালের ২২ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সফর করেছিলেন।
সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ।
এর আগে রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানে আয়োজিত ভোজসভায় যোগ দেন তিনি। দুই নেতা সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই করেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সার্বভৌম নীতির স্বাধীনতাকে সম্মান করে ফ্রান্স: প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর সঙ্গে আলোচনার পর প্রধানমন্ত্রী
নগর পরিচালনা ও অবকাঠামো উন্নয়নে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে ১৮৪ ইউরোর ঋণ সহায়তা চুক্তি সই
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে ১৮৪ ইউরো ঋণ সহায়তা চুক্তি সই হয়েছে।
বাংলাদেশের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শরিফা খান এবং ও ফ্রান্সের পক্ষে ঢাকায় ফরাসি উন্নয়ন সংস্থার (এএফডি) কান্ট্রি ডিরেক্টর বেনোইট চ্যাসেট চুক্তিতে সই করেন।
বাংলাদেশে নগর পরিচালনা ও অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তার জন্য ঋণ সহায়তা চুক্তিটি সই হয়।
আরও পড়ুন: স্মরণীয় একটি সফর: রাহুল আনন্দের বাড়িতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ
এএফডি জানিয়েছে, এই রেয়াতি ঋণ নগর পরিচালনা ও অবকাঠামো উন্নয়ন বা ইউজিআইআইপি প্রকল্পে সহায়তা করবে, যা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে।
এই ঋণদান কর্মসূচি নগর পরিচালনা ও প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা জোরদার করার জন্য সরকারের বৃহত্তর পৌর উন্নয়ন পরিকল্পনার আওতায় পড়ে। এটি ৮৮টি পৌরসভায় উন্নত পৌর অবকাঠামো ও পরিষেবা বিধানের জন্য মূলধন হিসেবে বিনিয়োগ করা হবে।
প্রকল্পের সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যগুলো হলো পৌর প্রশাসনকে শক্তিশালী করা, রাজস্ব সংগ্রহের উন্নতি, পৌর প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি, ঝুঁকি সংবেদনশীল পরিকল্পনা, নারীর ক্ষমতায়ন, কংক্রিট অবকাঠামোর উন্নতি ও বস্তি এলাকায় সহায়তা।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে, এলজিইডি ও এএফডি শহরে দারিদ্র্য হ্রাস, শহুরে জীবনযাত্রার অবস্থার উন্নতি, আরও বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন এবং পৌরসভার আরও স্থিতিস্থাপকতাকে সহযোগিতা বরবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ
বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।
তিনি ফরাসি ভাষায় ভিজিটরস বইয়ে লিখেছেন, ‘আমি শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা জানাতে চেয়েছিলাম, যিনি তার জাতির স্বাধীনতার জন্য, এর ভাষা ও সংস্কৃতি এবং বাংলাদেশের জনগণের জন্য লড়াইয়ে তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।’
আরও পড়ুন: ফ্রান্স আবারও আপনার পাশে থাকবে: ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ
ফরাসি প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, ‘তার পরিবারের যেসব সদস্য তার সঙ্গে প্রাণ হারিয়েছিলেন, আমি ফরাসি জনগণের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও বন্ধুত্ব প্রকাশ করতে চাই।’
গত ১০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে ঢাকা আসেন ম্যাক্রোঁ।
গত তিন দশকের মধ্যে ফ্রান্সের কোনো প্রেসিডেন্টের এটাই প্রথম সফর।
প্রাক্তন ফরাসি প্রেসিডেন্ট মিটাররান্ড ১৯৯০ সালের ২২-২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সফর করেন।
সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ।
শেখ হাসিনা রবিবার ফরাসি প্রেসিডেন্টের সম্মানে ভোজসভা আয়োজন করেন।
দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় দুটি চুক্তি সই করেন।
বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের সরকার আন্তরিকভাবে আশা করে, ফরাসি প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সার্বভৌম নীতির স্বাধীনতাকে সম্মান করে ফ্রান্স: প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর সঙ্গে আলোচনার পর প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর মধ্যে আলোচনা চলছে
ঢাকা-প্যারিস দুটি সমঝোতা স্মারক সই
ঢাকা ও প্যারিস অবকাঠামো ও স্যাটেলাইটসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে দুটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের করবী হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর উপস্থিতিতে নথিপত্রে সই করা হয়।
এগুলো হলো:
১. বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং ফ্রান্সের ফ্রান্স ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (এফডিএ)-এর মধ্যে ‘ইমপ্রুভিং আরবান গভর্নেন্স অ্যান্ড ইনফ্রাস্টাকচার প্রোগ্রাম’- বিষয়ে একটি ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি অ্যাগ্রিমেন্ট এবং
২. বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) এবং ফ্রান্সের এয়ারবাস ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস এসএএস- এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু-২ আর্থ অবজারভেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম সম্পর্কিত সহযোগিতার বিষয়ে লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই)।
এর আগে, হাসিনা ও ম্যাক্রোঁ দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র অন্বেষণে আলোচনা করেন।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর মধ্যে আলোচনা চলছে
৩৩ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ সফরকারী প্রথম ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে যোগদানের পর ভারত থেকে রোববার সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছেছেন। আজ (সোমবার) দুপুর ২টায় ঢাকা ত্যাগের কথা রয়েছে ফরাসি নেতার।
ফ্রাঁসোয়া মিটাররান্ড শেষ ফরাসি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ১৯৯০ সালের ২২-২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সফর করেছিলেন।
বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে মোট বাণিজ্য ২১০ মিলিয়ন ইউরো থেকে বর্তমানে ৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ইউরোতে উন্নীত হয়েছে এবং ফ্রান্স রপ্তানির ক্ষেত্রে পঞ্চম দেশ।
ফরাসি কোম্পানিগুলো এখন ইঞ্জিনিয়ারিং, এনার্জি, এরোস্পেস ও ওয়াটার সেক্টরসহ বিভিন্ন খাতে সম্পৃক্ত।
আরও পড়ুন: ফ্রান্স আবারও আপনার পাশে থাকবে: ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ
বাংলাদেশ ও ফ্রান্স সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র উন্মুক্ত হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য ৫ম কৌশলগত সংলাপ মঙ্গলবার
আধুনিক অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব বিকাশে দুই দেশের যৌথ অঙ্গীকার প্রতিফলিত করে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় পঞ্চম কৌশলগত সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি স্যার ফিলিপ বার্টন এই সংলাপে সহ-সভাপতিত্ব করবেন। সোমবার ঢাকায় আসেন ফিলিপ বার্টন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (উত্তর আমেরিকা) অনুবিভাগের মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলম।
পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি হলো এফসিডিও-এর সবচেয়ে সিনিয়র বেসামরিক কর্মকর্তা ও কূটনীতিক। পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি হিসেবে এটাই তার প্রথম বাংলাদেশ সফর।
তিনি ২০০৮ সালে এফসিও’র ডিরেক্টর, সাউথ এশিয়া পদে থাকাকালীন বাংলাদেশ সফর করেছিলেন।
যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে দুই দেশের মধ্যে একটি আধুনিক অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার যে অঙ্গীকার, এই কৌশলগত সংলাপ তাকেই প্রতিফলিত করে।
যুক্তরাজ্য সরকারের মতে, এই সংলাপে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক; অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও উন্নয়নমূলক অংশীদারিত্ব; এবং রোহিঙ্গা সংকটসহ অন্যান্য আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয় আলোচনা করা হবে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাজ্যের পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি পঞ্চম কৌশলগত সংলাপে যোগ দিতে সোমবার ঢাকা আসছেন
সেই সাথে এই সংলাপ দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং কপ২৮ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সহায়তা বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করবে। এবং যুক্তরাজ্যের শক্তিশালী অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিনিয়োগ প্রস্তাব তুলে ধরবে।
ঢাকায় থাকাকালীন পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজের সংগঠন, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও যুব প্রতিনিধিদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন।
চতুর্থ বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য কৌশলগত সংলাপ ২০২১ সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয়।
সর্বশেষ কৌশলগত সংলাপের সময় যুক্তরাজ্য ২০২৯ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের বাজারে শুল্ক-মুক্ত, কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার প্রদানের মাধ্যমে একটি মসৃণ ও সফল স্নাতক অর্জন এবং রপ্তানি- বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে।
যুক্তরাজ্য ডব্লিউটিওর কার্যকারিতা উন্নত করে এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য বিধি আধুনিকীকরণের মাধ্যমে অবাধ ও সুষ্ঠু বাণিজ্য সরবরাহের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
যুক্তরাজ্যের ল্যান্ডমার্ক ডেভেলপিং কান্ট্রিস ট্রেডিং স্কিম (ডিসিটিএস) এই বছরের জুন থেকে কার্যকর হয়েছে। যা বাংলাদেশসহ ৬৫টি উন্নয়নশীল দেশ থেকে যুক্তরাজ্যে প্রবেশকারী পণ্যের উপর শুল্ক হ্রাস করে এবং ট্রেডিং নিয়মগুলোকে সহজ করে।
ডিসিটিএস বাণিজ্য বৃদ্ধি, চাকরি বৃদ্ধি এবং টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
যুক্তরাজ্য সরকার বলেছে, এই নতুন স্কিমটি বাংলাদেশের সঙ্গে একটি আধুনিক এবং পারস্পরিকভাবে উপকারী অংশীদারিত্বের প্রতি যুক্তরাজ্যের প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।
আরও পড়ুন: সম্ভাব্য সব ক্ষেত্রে ঢাকার সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াবে রিয়াদ: সৌদি ক্রাউন প্রিন্স
বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চান বাইডেন: মোমেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর মধ্যে আলোচনা চলছে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সফররত ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে কৌশলগত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে আলোচনার সূচনা করেছেন।
দুই দেশ সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র উন্মুক্ত করতে চাইছে, বিশেষ করে কৌশলগত সম্পদ ও উন্নত প্রযুক্তিতে।
এদিন সকাল ১০টা ২০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের টাইগার গেটে পৌঁছালে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি ম্যাক্রোঁকে অভ্যর্থনা জানান।
দুই নেতা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চামেলী হলে প্রতিনিধি পর্যায়ের আলোচনায় যোগ দেন। এরপর সেখানকার শিমুল হলে দুই নেতার মধ্যে পর্যায়ের সংলাপ হবে।
করবী হলে দুই নেতার উপস্থিতিতে কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি (চুক্তি/এমওইউ) সই হবে। এরপর সেখানে যৌথ প্রেস ব্রিফিং করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ।
টাইগার গেটে হাসিনাকে দেখার আগে ম্যাক্রোঁ ভিজিটরস বইয়ে সই করবেন।
৩৩ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ সফরকারী প্রথম ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ নয়াদিল্লিতে জি২০ সম্মেলনে যোগদানের পর ভারত থেকে রবিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছেছেন। আজ (সোমবার) দুপুর ২টায় ঢাকা ত্যাগের কথা রয়েছে ফরাসি নেতার।
ফ্রাঁসোয়া মিটাররান্ড ছিলেন শেষ ফরাসি প্রেসিডেন্ট যিনি ১৯৯০ সালের ২২-২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সফর করেছিলেন।
বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে মোট বাণিজ্য ২১০ মিলিয়ন ইউরো থেকে বর্তমানে ৪ দমমিক ৯ বিলিয়ন ইউরোতে উন্নীত হয়েছে এবং ফ্রান্স রপ্তানির ক্ষেত্রে পঞ্চম দেশ।
ফরাসি কোম্পানিগুলো এখন ইঞ্জিনিয়ারিং, এনার্জি, এরোস্পেস ও ওয়াটার সেক্টরসহ বিভিন্ন খাতে সম্পৃক্ত।
বাংলাদেশ ও ফ্রান্স সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র উন্মুক্ত হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ও ফ্রান্স কৌশলগত সম্পদ ও উন্নত প্রযুক্তিতে সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র উন্মুক্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘ফ্রান্স স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের বিশ্বস্ত উন্নয়ন সহযোগী। আমরা দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক আচরণের উপর মনোযোগ দিয়ে একটি শক্তিশালী বাণিজ্য অংশীদারিত্ব গড়ে তুলেছি। আমরা কৌশলগত সম্পদ এবং উন্নত প্রযুক্তিতে সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র উন্মুক্ত করছি।’
রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ঢাকায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোনের সম্মানে আয়োজিত এক ভোজসভায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
আরও পড়ুন: নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলন: বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
হাসিনা বলেন, তিনি আত্মবিশ্বাসী যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ইন্দো-প্যাসিফিক এবং এর বাইরেও সকলের জন্য ভাগাভাগি সমৃদ্ধির জন্য কৌশলগত ব্যস্ততায় যেতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অংশীদারিত্ব যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের একাধিক সংকট মোকাবিলায় একটি অর্থবহ শক্তি হতে পারে, যা আমাদের বিশ্ব মুখোমুখি হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের নভেম্বরে তার ফ্রান্স সফরের সময় এলিসি প্রাসাদে (ফরাসি প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন) যে উষ্ণ আতিথেয়তা পেয়েছিলেন তার কথা স্মরণ করেন।
ফরাসি প্রেসিডেন্টকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ এখানে আপনাকে এবং আপনার প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানাতে আমার সঙ্গে যোগ দিয়েছে।’
হাসিনা বলেন, তার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফরাসি বিপ্লবের চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘ফ্রান্স আমাদের হৃদয়ে ও অন্তরে একটি বিশেষ স্থান দখল।’
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু তার আত্মনিয়ন্ত্রণের লড়াইয়ে স্বাধীনতা, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের মূল্যবোধের প্রচারে তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণেও এর প্রতিফলন ঘটেছে।
তিনি বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধৃত করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বাধীনতার আহ্বান আন্দ্রে ম্যালরাক্সের মতো বিশ্ব বুদ্ধিজীবীদের মাঝেও প্রতিধ্বনিত হয়েছিল। যা বাংলাদেশে লড়াই করার জন্য অনেক তরুণকে সংগঠিত করেছিল।
তিনি ফ্রান্সে যে অনেক সাহসী সংস্কার করেছেন তার জন্য তিনি ম্যাক্রোঁর প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, আমরা আপনাকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বিশুদ্ধ বাতাসের নিঃশ্বাস হিসাবে দেখি। কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের জন্য আপনার অবস্থান মূলত আমাদের নিজস্ব বৈদেশিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের দিয়েছিলেন- 'সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বিদ্বেষ নয়'।
আরও পড়ুন: নয়াদিল্লিতে জি২০ সম্মেলন শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আপনাকে আমাদের অনন্য কাচ্চি বিরিয়ানির স্বাদ নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। আমাদের উভয় জাতিই আমাদের রন্ধনপ্রণালী, সংস্কৃতি ও ভাষাগত ঐতিহ্যের জন্য অত্যন্ত গর্বিত। আমাদের দুই জনগোষ্ঠীকে একে অপরের কাছাকাছি নিয়ে আসার জন্য আমাদের দুটি সংস্কৃতির মধ্যে আরও ইন্টারফেস এবং ফিউশন প্রচার করার সময় এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি কি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য আমাদের আরেকটি উপাদেয় জনপ্রিয় স্থানীয় ফল আমড়ার জুস প্রস্তাব করতে পারি’।