ভ্রমণ
সুপারশী: যে দ্বীপে পুরুষদের প্রবেশ নিষিদ্ধ
বিশ্ব পরিব্রাজকদের শীর্ষ সারিতে নারীদের অবস্থান এখন আর নতুন কোনও ব্যাপার নয়। গহীন অরণ্য, আকাশচুম্বী পর্বতশৃঙ্গ, এমনকি সাগরের মাঝে জেগে থাকা প্রবাল দ্বীপেও নারীরা এখন সাবলীলভাবে বিচরণ করছে। নারীদের ভ্রমণে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটি হচ্ছে নিরাপত্তা। ভ্রমণকালে পুরুষদের অযাচিত আচরণের ফলে অনেক ক্ষেত্রেই নারীদের ভ্রমণ হয়ে পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এমন রূঢ় বাস্তবতার মাঝে অনেক নারী হয়তো এমন কোনো স্থানে ভ্রমণ করতে চান যেটা হবে পুরুষের ছায়া মুক্ত। ‘সুপারশী’ দ্বীপের গল্পটা ভ্রমণপিপাসু নারীদের কাছে কিছুটা স্বপ্নের মতো মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে আসলেই এমন একটি দ্বীপ আছে, যেটি শুধু নারীদের এবং যেখানে কোনও পুরুষের প্রবেশাধিকার নেই। চলুন, বিস্ময়কর এই দ্বীপটির ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
সুপারশী দ্বীপের ভৌগলিক অবস্থান
মধ্যরাতের সূর্যের দেশ ফিনল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলবর্তী শহর রেইসবর্গ মিশে গেছে বাল্টিক সাগরে। এই রেইসবর্গ সৈকতের কাছাকাছি বাল্টিক সাগরের বুকে রেইসবর্গ দ্বীপপুঞ্জের একটি ছোট্ট দ্বীপ ফিওর্ড্স্কার। ৮ দশমিক ৪ একরের এই ভূ-খন্ডটি রাজধানী হেলসিন্কির অন্তর্গত রেইসবর্গ শহরের অংশ। এই ফিওর্ড্স্কারই ২০১৮ সাল থেকে সুপারশী নাম নিয়ে বিশ্বের প্রথম ও একমাত্র নারীদের দ্বীপের মর্যাদা অর্জন করেছে।
আরও পড়ুন: সাধ্যের মধ্যে মালদ্বীপের বিকল্প হতে পারে এশিয়ার যেসব ট্যুরিস্ট স্পট
সুপারশী উদ্যোগের পটভূমি
জার্মান বংশোদ্ভূত আমেরিকান নারী উদ্যোক্তা ক্রিস্টিনা রথ ২০১৭ সালে ক্রয় করেন ফিওর্ড্স্কার দ্বীপটি। এই রথ ফোর্বসের দ্রুত সফলতা অর্জনকারী শীর্ষ ১০ নারী উদ্যোক্তাদের একজন। ২০১৬ সালে তিনি তার প্রযুক্তি পরামর্শদানকারী সংস্থা ‘ম্যাটিসিয়া কন্সাল্ট্যান্ট্স’ ৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে বিক্রি করেন। বাংলাদেশি টাকায় এর মূল্য ৭১৩ কোটি ২৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা (১ মার্কিন ডলার = ১০৯ দশমিক ৭৩ বাংলাদেশি টাকা)।
ফিওর্ড্স্কারের মালিক হওয়ার পর রথ দ্বীপের নামকরণ করেন ‘সুপারশী’। তার উদ্দেশ্য ছিল মূলত নেটওয়ার্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে বিশ্বের নানান পেশাজীবী নারীদের সান্নিধ্য পাওয়ার। আর এরই অঙ্কুরে জন্ম নেয় সুপারশী।
শুরু থেকেই রথ দ্বীপে শুধুমাত্র নারীদের প্রবেশের রীতি চালু রেখেছিলেন। দ্বীপের বিদ্যুৎ ও পানির লাইন স্থাপনের জন্য পুরুষ নির্মাণ শ্রমিকদের প্রবেশাধিকার ছিল। এছাড়া বিশেষ অনুমতি ছিল রথের ঘনিষ্ঠজনদের মধ্যে অল্প কিছু সংখ্যক পুরুষদের।
আরও পড়ুন: আপনি কি মার্কিন ডলার না কিনে বিদেশে ভ্রমণ করতে পারবেন?
বেশ কয়েকটি মিডিয়াতে নিজের এই উদ্যোগের কথা শেয়ার করেন রথ। মুহুর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যাওয়ায়, দ্বীপের সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার আগেই বুকিং-এর অনুরোধ আসতে শুরু করে। গোটা বিশ্ব থেকে ৮ হাজারেরও বেশি নারী পর্যটকের আবেদন এসেছিল। এর মধ্য থেকে রথ ১৫০ জনের ভিডিও সাক্ষাৎকার নেন।
অবশেষে ২০১৮ সালের ২৩ জুন পুরো একটি দ্বীপ রিসোর্ট হিসেবে যাত্রা শুরু করে ‘সুপারশী’।
২০২৩ সালের শেষের দিকে শিপিং নির্বাহী কর্মকর্তা ডেয়ান মিহভ দ্বীপটি কিনে নেন এক মিলিয়ন ইউরোতে। মূল্যটি প্রায় ১১ কোটি ৯০ লাখ ৭১ হাজার ৯৯০ টাকার (১ ইউরো = ১১৯ দশমিক ১৫ বাংলাদেশি টাকা) সমান। মালিকানা পরিবর্তনের পরেও চিত্তবিনোদনের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
ভূস্বর্গ কাশ্মীরে ভ্রমণ: জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান, ঘুরতে যাওয়ার উপায় ও যাবতীয় খরচ
পাহাড় চূড়া, দীঘল উপত্যকা ও এক পশলা হৃদের প্রাণবন্ত ঐকতানের অন্য নাম কাশ্মীর। তুষারাবৃত চূড়া এবং ব্যস্ত-সমস্ত তৃণভূমির অবারিত মোহনীয়তায় নিমেষেই খুঁজে পাওয়া যায় ভূস্বর্গ নামটির মানে। সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও উষ্ণ আতিথেয়তা যে কোনো পরিব্রাজককে আপন করে নিতে যথেষ্ট। ভারতীয় উপমহাদেশের সর্ব উত্তরে অবস্থিত বিশ্ব জোড়া পর্যটকদের এই প্রিয় গন্তব্য নিয়েই এবারের ভ্রমণ কড়চা। চলুন, জেনে নেয়া যাক কাশ্মীর ভ্রমণের আদ্যোপান্ত।
বাংলাদেশ থেকে কাশ্মীরে যাওয়ার উপায়
ভিসা প্রক্রিয়া
কাশ্মীর ঘুরতে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশিদের ভারতের ট্যুরিস্ট ভিসা লাগবে। এর জন্য ভিসা আবেদনকারীর পাসপোর্টটি আনুমানিক প্রস্থানের দিন থেকে ন্যূনতম ছয় মাসের মেয়াদ থাকতে হবে। সেই সঙ্গে পাসপোর্ট বইয়ে কমপক্ষে দুটি পৃষ্ঠা খালি থাকতে হবে।
এই পাসপোর্টের পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সও সঙ্গে রাখা যেতে পারে।
ভিসা আবেদনের জন্য একটি পাসপোর্ট আকারের ছবি জেপিজি বা পিএনজি ফাইলের মাধ্যমে আপলোড করতে হবে।
কাশ্মীরে যেয়ে কোথায় থাকা হবে তার একটা প্রমাণপত্র দেখাতে হবে। হোটেলে থাকার ক্ষেত্রে বুকিংয়ের কাগজপত্র প্রিন্ট করে নিতে হবে।
ভারতে প্রবেশ ও ত্যাগ করার সময়টা নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে বিমান বা ট্রেন যেভাবেই যাওয়া হোক না কেন, আসা-যাওয়ার টিকেট দেখাতে হবে।
সর্বোপরি, কাশ্মীরে যাবতীয় খরচ চালানোর জন্য যথেষ্ট ভ্রমণ তহবিল আছে কিনা তার একটা প্রমাণ দেখাতে হবে।
আরও পড়ুন: ২০২৪ সালে ভিসা ছাড়াই যেসব দেশে যেতে পারবেন বাংলাদেশিরা
ঢাকা থেকে কাশ্মীর যাতায়াত
জম্মু-কাশ্মীরের সঙ্গে সংযোগ আছে ভারতের দিল্লী অথবা চণ্ডিগড়ের। ঢাকা থেকে আকাশপথে সরাসরি এই রাজ্যগুলোতে পৌঁছা যায়। স্থলপথে যেতে হলে রেলপথে বা বাসে কলকাতা দিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে হবে।
কাশ্মীরের জনপ্রিয় জায়গাগুলো ঘুরতে হলে প্রথমে যে পর্যন্ত যেতে হবে সে জায়গাটি হচ্ছে শ্রীনগর। দিল্লী থেকে শ্রীনগর বিমানে যেতে সময় লাগে সর্বোচ্চ ৯ ঘণ্টা। এখানে খরচ হতে পারে প্রায় ২৫ হাজার থেকে সাড়ে ৫৫ হাজার টাকা।
রেলপথে যাওয়ার জন্য ঢাকা থেকে কলকাতার হাওড়ার ট্রেন আছে যেখানে শ্রেণীভেদে জনপ্রতি ভাড়া ২ হাজার ৫৯৯ থেকে ৩ হাজার ৮৯৯ টাকা। তারপর হাওড়া থেকে ট্রেন বদলে যাওয়া যাবে জম্মু। এখানে ননএসি স্লিপারগুলোর ভাড়া ৭৫০ থেকে ৭৯০ রুপি বা ৯৯০ থেকে ১ হাজার ৪২ দশমিক ৮ টাকা (১ ভারতীয় রুপি = ১ দশমিক ৩২ বাংলাদেশি টাকা)।
ঢাকা থেকে বাসে গেলে কলকাতা পর্যন্ত বাস ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ১ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ৬০ টাকা। অতঃপর রেলপথে জম্মু পৌঁছানোর পর শ্রীনগরের বাকিটা পথ গাড়িতে শেয়ার করে কিংবা বাসে করে যেতে হবে। সব মিলিয়ে এভাবে শ্রীনগর পর্যন্ত যেতে সময় লাগতে পারে সর্বোচ্চ ২ দিন ১৯ ঘণ্টা।
আরও পড়ুন: মালয়েশিয়া ভ্রমণ: জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান, ঘুরতে যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
কাশ্মীরের জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলো
শ্রীনগর
কাশ্মীরের প্রবেশদ্বার শ্রীনগরেই মিলবে অপার্থিব অনুভূতির সঞ্চার করা ডাল লেকের স্নিগ্ধতা। এছাড়া এই লেকে রয়েছে এশিয়ার প্রথম ভাসমান সিনেমা হল। শঙ্করাচার্য মন্দিরের চূড়া থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের এই রাজধানী শহরটির প্রায় পুরোটা চোখে পড়ে।
মালয়েশিয়া ভ্রমণ: জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান, ঘুরতে যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
নৈসর্গিক প্রকৃতি, স্বতন্ত্র সভ্যতা-সংস্কৃতি এবং জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ মালয়েশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সেরা গন্তব্য। দক্ষিণ চীন সাগর বিধৌত দেশটির সীমানা বহু যত্নে আগলে রেখেছে ঘন সবুজ অরণ্যে ঢাকা সুউচ্চ পর্বতমালা। উপকূলবর্তী দেশটির স্নিগ্ধ সৈকত, রেইনফরেস্ট, উদ্যান এবং ঐতিহাসিক শহরগুলো বিশ্ব জুড়ে দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে। ১৮ শতকের মালয় রাজ্য থেকে উদ্ভূত এই দেশটি ভ্রমণের প্রয়োজনীয় রসদ সংগ্রহই আজকের নিবন্ধের আলোচ্য বিষয়।
চলুন, মালয়েশিয়ার জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান থেকে শুরু করে সেখানে ভ্রমণ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
মালয়েশিয়ার জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলো
কুয়ালালামপুর শহর
মালয়েশিয়ার অভিজাত সভ্যতার সম্মুখীন হতে হলে প্রথমেই দেখতে হবে রাজধানী কুয়ালালামপুর। এখানেই অবস্থিত দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ল্যান্ডমার্ক পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার। ১ হাজার ৪৮৩ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ৮৮ তলার এই স্থাপনা বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু জোড়া অট্টালিকা। এর ভেতরে উপভোগের জন্য রয়েছে স্কাই ব্রিজ, অবজারভেশন ডেক ও গিফট শপ।
কুয়ালালামপুরের অন্যান্য আকর্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে হচ্ছে কেএল বা কুয়ালালামপুর টাওয়ার, সুলতান আব্দুল সামাদ ভবন ও বাতু গুহা।
আরও পড়ুন: সাধ্যের মধ্যে মালদ্বীপের বিকল্প হতে পারে এশিয়ার যেসব ট্যুরিস্ট স্পট
সেকেন্ডহ্যান্ড মোটরসাইকেল কেনার আগে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা জরুরি
অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় আকারে বেশ ছোট হওয়ায় যানজটের শহরে মোটরসাইকেলের জুড়ি মেলা ভার। ইঞ্জিনচালিত এই দ্বিচক্রযানে নেই প্যাডেল ঘুরানোর ক্লান্তি, সেইসঙ্গে দীর্ঘ যাত্রায় থাকে রোমাঞ্চের আনন্দ। এছাড়া নিত্যনৈমিত্তিক প্রয়োজনে বেরনোর সময় মুক্তি দেয় গাড়ি খোঁজার ঝামেলা থেকে।
এতসব সুবিধা একটু কম খরচে পেতে অনেকেই ঝুঁকে পড়েন পুরাতন মোটরবাইক কেনার দিকে। ব্র্যান্ডের নতুন মোটরবাইকে হাত দেওয়ার আগে এই যানগুলো ড্রাইভিংয়ে পরিপক্ক হওয়ার উপযুক্ত উপায়। তাই চলুন, সেকেন্ড হ্যান্ড মোটরসাইকেল কেনার সময় কোন বিষয়গুলোর প্রতি নজর রাখতে হবে তা জেনে নেওয়া যাক।
পুরাতন মোটরসাইকেল কেনার সময় যে ১০টি বিষয় যাচাই করা উচিৎ
বর্তমান বাজার মূল্য
বাজেট অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত বাইকটি পেতে প্রথমেই বাজারে তার বর্তমান অবস্থার ব্যাপারে খোঁজ-খবর করে নেওয়া জরুরি। এর ফলে কত দিন ব্যবহার করা হয়েছে এবং কোনো কিছু মেরামতো বা পরিবর্তন করা হয়েছে কি না- তা বিবেচনা করে দামদর করতে সুবিধা হবে। এজন্যে সহায়ক তথ্যের জন্য বাইক সংক্রান্ত নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইটগুলো সহায়ক হতে পারে।
সরেজমিনে দেখার জন্য সরাসরি দোকানে চলে যাওয়াটা উত্তম। মূল্যের পরিধির ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা নিয়ে তবেই বিক্রেতার সঙ্গে দেখা করা উচিৎ।
আরও পড়ুন: রয়্যাল এনফিল্ড-৩৫০: বাংলাদেশের প্রথম ৩৫০ সিসি মোটরবাইক
এক নজরে বাহ্যিক দর্শন
বিক্রেতার সঙ্গে দেখা করার সময় প্রথম দর্শনে বাইকের যতটুকু দৃষ্টিগোচর হচ্ছে তার সবটুকুই সুক্ষ্মভাবে খুঁটিয়ে দেখতে হবে। খেয়াল করতে হবে ফ্রেমে কোনো দাগ বা মরিচা পড়েছে কি না, সামনের ও পেছনের লাইটগুলো সঠিকভাবে জ্বলছে কি না এবং বসার সিট কভারে কোনো ছেঁড়া আছে কি না। বাইক স্টার্ট দেওয়ার চাবি কী হোলের ভেতর নির্বিঘ্নে ঢুকছে কি না এবং তা কোনো জ্যাম ছাড়াই ঘুরছে কি না- তা খতিয়ে দেখা জরুরি। চাকার কভার, হর্নের শব্দ এমনকি আয়নার মতো ছোট ছোট ব্যাপারও এ সময় এড়ানো যাবে না।
ইঞ্জিন, ট্রান্সমিশন ও ব্যাটারি
আসল যাচাইকরণ শুরু হবে ইঞ্জিন থেকে, যা বাইক স্টার্ট দেওয়ার সময়ই টের পাওয়া যাবে। ঠকঠক বা অস্বাভাবিক শব্দ হলে বোঝা যাবে বিয়ারিং বা ভালভে সমস্যা আছে। এর মাধ্যমে গিয়ারগুলো ঠিকমতো কাজ করছে কি না তথা ট্রান্সমিশনটাও যাচাই হয়ে যাবে।
ইঞ্জিন চালু করার সঙ্গে সঙ্গেই ইগ্নিশন লাইট জ্বলে উঠে কয়েক সেকেন্ড পর বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু লাইট জ্বলে থাকলে বুঝতে হবে ইঞ্জিনের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থায় সমস্যা আছে। কোথাও কোনো রকম সংযোগ বিচ্ছিন্নতা কোনোভাবেই উপেক্ষা করা যাবে না। হেডলাইটের ক্ষীণ বা নিভু নিভু আলো মানেই দুর্বল ব্যাটারি। ব্যাটারির টার্মিনালগুলো পরীক্ষার জন্য সঙ্গে মাল্টিমিটার রাখার প্রয়োজন হবে। একটি সম্পূর্ণ চার্জযুক্ত ব্যাটারির হাইড্রোমিটার রিডিং ১২ দশমিক ৬ ভোল্ট হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: বাজাজ পালসার এন-২৫০: বাংলাদেশের প্রথম ২৫০ সিসি বাইক
ক্লাচ, ব্রেক ও সাস্পেনশন
স্টার্ট থেকে শুরু করে গিয়ার ধরতে পারছে কি না তা যাচাইয়ের জন্য ধীরে ধীরে ক্লাচে চাপ বাড়িয়ে আবার একই ভাবে আস্তে করে ছেড়ে দিতে হবে। এই পুরো প্রক্রিয়ায় কোথাও জ্যাম অনুভূত হলে বা বাইকের বডি কেঁপে উঠলে ক্লাচে সমস্যা আছে। ভালো ক্লাচের ক্ষেত্রে বাইক চালু করার পর প্রথম গিয়ারে থাকাকালীন হাল্কা কম্পন দিয়ে ধীর গতিতে সামনে এগোনোর কথা।
এ অবস্থায় আলতো করে ব্রেক চেপে দেখে নেওয়া যেতে পারে তা কতটা মসৃণভাবে কাজ করছে এবং কোনো শব্দ না করে বাইক থেমে যাচ্ছে কি না। ভালো ব্রেকিং সিস্টেমে ব্রেক ছেড়ে দিলে বাইক মসৃণভাবে আগের গতিতে ফিরে যায়।
ব্রেক টানার সময় সাস্পেনশনটারও পরীক্ষা হয়ে যাবে। শক অ্যাবজরভার ভালো থাকলে খুব বেশি ঝাকুনি অনুভূত হবে না। এছাড়া থেমে থাকা অবস্থাতেও সিটে বসে হাল্কা বাউন্স করে দেখা যেতে পারে। এ সময় সিট সমেত বাহকের শরীর স্প্রিং না করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।
আরও পড়ুন: বিআরটিএ স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স যেভাবে করবেন
চাকা ও টায়ার
যত্ন নেওয়া মোটরবাইকগুলোর চাকা ও টায়ারগুলো বেশ নতুনের মতো থাকে। টায়ার রাবারের পুরুত্ব কমপক্ষে ১/১৬ ইঞ্চি হয়ে থাকে। এগুলো অনেক বছর হয়ে গেলে বা অযত্নে ব্যবহার হলে ছিড়ে যায়। অধিকাংশ মোটরসাইকেলের টায়ার প্রায় ৬ বছর পরে বদলে নিতে হয়। তাই টায়ার বদলের সময় কাছাকাছি হলে বিষয়টিকে বাইকের দরদামের সময় উত্থাপন করা যেতে পারে।
ছোট ছোট গর্ত বা কার্ব থাকা চাকা নেওয়া যাবে না। সামনের ও পেছনের চাকাগুলোর অ্যালাইনমেন্ট ঠিক আছে কি না তা যাচাই করতে হবে। ঘোরার সময় কোনো বাধা ছাড়াই চাকাগুলো ঘুরতে পারছে কি না সেদিকটাও দেখা দরকার।
রাস্তাঘাটে মোড় নেওয়ার জন্য বাইকের স্টিয়ারিং ডানে-বামে নিরবচ্ছিন্নভাবে ঘোরাতে পাড়াটা জরুরি। এটি পরীক্ষা করতে বাইককে কেন্দ্রীয় স্ট্যান্ডের উপর রাখলে সামনের অংশ মাটি থেকে কিছুটা উপরে উঠে যাবে। এতে বোঝা যাবে সামনের চাকা এবং হ্যান্ডেলবারগুলো মুক্তভাবে এদিক-ওদিক ঘোরানো যাচ্ছে কনা।
আরও পড়ুন: ২০২৩ সালে বিশ্বের শীর্ষ ১০ বিলাসবহুল গাড়ি
জ্বালানি ট্যাংক
অনেক পুরনো হয়ে গেলে জ্বালানি ট্যাংকের ভেতরটা অন্ধকার হয়ে যায়। ব্যবহারযোগ্য ট্যাংকে জ্বালানি থাকলে তা উজ্জ্বল দেখায়। এই রঙ বোঝার জন্য ট্যাংকের ক্যাপ খুলে টর্চ লাইটের সাহায্যে ভেতরে একদম নীচ পর্যন্ত ভালোভাবে দেখে নিতে হবে।
ফ্রেম
প্রথম দর্শনে এক নজরে দেখার সময়ই চোখে পড়বে বডির দাগ বা মরিচাগুলো। পরবর্তীতে বাইকের সামনে হ্যান্ডেলবার এবং ফর্কগুলোর অ্যালাইনমেন্ট যথাযথভাবে যাচাই করে নিতে হবে। এছাড়া বাইকের হেড টিউব বাইকের সিট বা আসন টিউবের প্রেক্ষিতে কিভাবে বেঁকে আছে- তা দেখতে হবে। কেননা এখানেও অ্যালাইনমেন্ট থাকা আবশ্যক। এছাড়া বিচ্ছিন্নতা বা ফাটল খুঁজে বের করার জন্য স্টিয়ারিং হেড বিয়ারিংও পরীক্ষা করে নেওয়া প্রয়োজন।
সার্ভিস রেকর্ড
মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ নিরীক্ষণ শেষে এবার কাগজপত্র দেখার পালা। বাইকের পূর্বের অবস্থা যেমন- দুর্ঘটনা, নেমপ্লেট পরিবর্তন, ও কোনো অংশ মেরামতো হয়েছে কি না- সে ব্যাপারে সম্যক ধারণ দিতে পারে সার্ভিস রেকর্ড। পাশাপাশি বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলার সময় কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করা যেতে পারে যেমন, বাইকটি বিক্রি করা হচ্ছে কেন, শেষ কবে বাইকটি চালানো হয়েছিল এবং কোন পার্টস মডিফাই বা পরিবর্তন করা হয়েছে কি না ইত্যাদি। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে- বাইকের মালিকানা এ পর্যন্ত কতবার পরিবর্তন হয়েছে।
আরও পড়ুন: আপনি কি মার্কিন ডলার না কিনে বিদেশে ভ্রমণ করতে পারবেন?
অনেক বার হাতবদল হয়ে থাকলে সাধারণত বাইকের পূর্বাবস্থার সম্পূর্ণ বিবরণ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। এর সঙ্গে মোটরসাইকেলের মেরামতের রেকর্ডও সম্পর্কিত। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ রেকর্ড মানে পূর্ববর্তী মালিকরা সময়মতো বাইকের সঠিক যত্ন নিয়েছিলেন।
কাগজপত্রের বৈধতা
একটি ঝামেলাহীন মোটরসাইকেল বেছে নেওয়ার জন্য এর কাগজপত্রের বৈধতা যাচাইকরণ অত্যাবশ্যক। এক্ষেত্রে প্রথমেই দেখতে হবে নিবন্ধন কার্ড এবং হালনাগাদকৃত ট্যাক্স টোকেন। বাইকের ইঞ্জিন এবং চেসিস নাম্বার নিবন্ধনপত্র বা কার্ড ও ট্যাক্স টোকেনের সঙ্গে মিলিয়ে নেয়া যেতে পারে। মেয়াদ উত্তীর্ণ নিবন্ধন বা ট্যাক্স টোকেন কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
সেই সঙ্গে যাচাই করতে হবে এই কাগজগুলোর সঙ্গে কোনো আইন সংক্রান্ত জটিলতা আছে কি না। মোটরবাইকটি কোনো মামলার সঙ্গে জড়িত আছে কি না, থাকলে তা নিষ্পন্ন হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে। এক্ষেত্রে একটু অসাবধানতায় সমূহ বিড়ম্বনার শিকার হতে পারেন বাইকের নতুন মালিক।
আরও পড়ুন: নারীর একাকী ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ১০ শহর
টেস্ট ড্রাইভ
যাবতীয় যন্ত্রাংশ খুটিয়ে দেখার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌছার আগে নিজে একবার মোটরসাইকেলটি চালিয়ে নেয়া উত্তম। এই টেস্ট ড্রাইভের জন্য অবশ্য বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা আবশ্যক।
এই ব্যবহারিক নিরিক্ষণে ইঞ্জিন থেকে শুরু করে ব্রেক, ট্রান্সমিশন, সাস্পেনশন সবকিছুর কার্যকলাপ পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে। কিছুটা সময় নিয়ে চালানোর সুযোগ থাকলে মাইলেজের ব্যাপারেও একটা প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যাবে। সর্বতভাবে এই অভিজ্ঞতার আলোকেই ক্রেতা ঠিক করতে পারবেন যে, আসলেই বাইকটি তার কেনা উচিৎ কি না।
পরিশিষ্ট
পুরাতন মোটরসাইকেল কেনার সময় এই ১০টি বিষয় সামগ্রিকভাবে সঠিক যানবাহনটি বেছে নিতে সাহায্য করবে। এখানে ক্লাচ, ব্রেক, সাস্পেন্শন, চাকা ও বৈধ কাগজপত্র নিশ্চিত করবে সার্বিক নিরাপত্তার দিকটা। ব্যবহৃত যানটি আর কতদিন চালানো যাবে তা ঠিক হবে ইঞ্জিন, ব্যাটারি ও জ্বালানি ট্যাংকের মানের নিরিখে।
অবশ্য একটি মোটরযানের ন্যূনতম যোগ্যতার প্রত্যেকটি পূরণ করলেও পূর্ব ব্যবহারের ভিত্তিতে যান্ত্রিক ত্রুটির কমবেশি হয়ে থাকে। উপরন্তু, শতভাগ ত্রুটিহীনতার সম্ভাবনা থাকে না মেনে নিয়েই সকলে কিনে থাকেন সেকেন্ড হ্যান্ড মোটরসাইকেল।
আরও পড়ুন: ঢাকায় গাড়ি চালানো শেখার জন্য কয়েকটি নির্ভরযোগ্য ড্রাইভিং ট্রেনিং সেন্টার
ভ্যালেন্টাইন’স ডে উদযাপনের সেরা গন্তব্য: ঢাকার কাছেই ১০ রিসোর্ট
হোক সে আপন নিবাস কিংবা ভিনদেশী অচেনা জায়গা, সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত মানুষটি পাশে থাকাটা আশেপাশের সবকিছুকেই যেন ঝাপসা করে দেয়। এরপরেও প্রত্যেকেই তার ভ্যালেন্টাইনের সঙ্গে কাটানো সময়টাকে ভালো লাগা দিয়ে ভরিয়ে তোলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। পরিণয়টা নিরঙ্কুশ সিদ্ধি লাভ করে যখন তাতে যোগ হয় প্রকৃতিপ্রেম, রোমাঞ্চ ও মুক্তির উচ্ছ্বাস। কিন্তু ব্যস্ত জীবনে ফিরে আসার শাসনটা এই স্বাধীনতাকে বাধ ভেঙে যেতে দেয় না। তখনি আসে কাছে কোথাও নিরিবিলিতে ঘুরতে যাওয়ার পায়তারা। আর ঠিক এই চাহিদাটিকে পূরণ করতেই ঢাকার অদূরে গড়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন রিসোর্টগুলো। শহুরে যুগলবন্দিদের প্রতি এক অভূতপূর্ব ভালবাসা দিবসের অভিজ্ঞতার নিবেদন করে এই নৈসর্গিক স্থানগুলো। চলুন, সেগুলোর মধ্যে থেকে ঢাকার নিকটবর্তী মনোরম ১০টি রিসোর্টের ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ভ্যালেন্টাইন’স ডে উদযাপনের জন্য ঢাকার কাছেই ১০টি রিসোর্ট
জলেশ্বরী রিসোর্ট, গাজীপুর
সবুজ গাছ-গাছালি ঘেরা প্রায় ১০০ বিঘা জায়গার জলেশ্বরী রিসোর্টের অবস্থান গাজীপুর জেলার রাজেন্দ্রপুরের ফাউগান গ্রামে। অতিথিদের জন্য এখানে রয়েছে তিনটি সুসজ্জিত ভবন, সুইমিংপুল, রেস্টুরেন্ট এবং বিশাল খেলার মাঠ।
সাপ্তাহিক ছুটিসহ অন্যান্য সরকারি ছুটি দিন বাদে সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে কাপল ডে লং প্যাকেজের মূল্য ৬ হাজার টাকা। ছুটির দিনগুলোতে এর দাম রাখা হয় ৬ হাজার ৫০০ টাকা। এর বাইরে মান ভেদে রাত্রিযাপনের জন্য রুম ভাড়া নেওয়া হয় ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা।
রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা দিয়ে রাজেন্দ্রপুর বাজারে তারপর ফাউগান বাজার পার হয়ে একটু সামনে গেলেই জলেশ্বরী রিসোর্ট।
আরও পড়ুন: স্বল্প বাজেটে ভ্যালেন্টাইন’স ডে উপহার: অনুপম নিবেদনে প্রিয়জনের মুগ্ধতা
ছুটি রিসোর্ট, গাজীপুর
গাজীপুরের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান ঘেঁষা জনপ্রিয় ছুটি রিসোর্টের জায়গা প্রায় ৫০ বিঘা। যেখানে রয়েছে স্পোর্টস জোন, সুইমিংপুল, রেস্তোরাঁ এবং ক্যাম্পিংয়ের জায়গা। ২১টি কটেজের পাশাপাশি এখানকার ছনের ঘর, মাছ ধরার সুযোগ, নৌকা ভ্রমণ, পিঠাপুলী এবং সবজি ও ফুল-ফলের বাগান আকৃষ্ট করে দর্শনার্থীদের। তবে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে পাখির কলকাকলী, বাঁদুড় ও শিয়ালের হাঁক, ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক এবং জোনাকি আলো।
বান্দরবানের বাকলাই জলপ্রপাত ভ্রমণ: বাংলাদেশের অন্যতম সুউচ্চ ঝর্ণায় যাবার উপায় ও খরচ
বিপজ্জনক ঝিরিপথ দিয়ে কারুকার্যমন্ডিত দুর্গম পাহাড়ের অন্দরমহলে গুপ্ত এক অমূল্য ঐশ্বর্য হলো পাহাড়ি ঝর্ণা। হাজার বছরের প্রাকৃতিক ঘাত-অপঘাতের চিহ্নগুলো আড়াল করে অভিকর্ষের কাছে নিজেকে সপে দেয় প্রস্রবণগুলো। মুক্ত বিসর্জনের এই শব্দে সেই অপঘাতে সৃষ্ট খাদগুলোতে শোনা যায় মহাকালের ফিসফিসানি। যেন প্রকাণ্ড সফেদ পর্দার অন্তরালে লুকানো পাহাড়ের কান্না। কখনও বা স্বচ্ছ স্নিগ্ধ ধারায় অনাবৃত হয়ে পড়ে অমসৃণ কলেবর। ঠিক এমনি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার সন্ধান দিতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম সুউচ্চ প্রাকৃতিক ঝর্ণা বাকলাই ভ্রমণে। অসাধারণ উচ্চতার এই জলপ্রপাতটি নিয়েই আজকের ভ্রমণ কড়চা। চলুন, কখন ও কীভাবে খুব কাছ থেকে এই বুনো ঝর্ণার দর্শন পাবেন- তা জেনে নেওয়া যাক।
বাকলাই ঝর্ণার ভৌগলিক অবস্থান ও বিশেষত্ব
বান্দরবানের থানচি উপজেলাটি বাংলাদেশের পাহাড়প্রেমীদের কাছে সর্বাধিক পরিচিত। এই অঞ্চলেরই নাইটিং মৌজার বাকলাই গ্রামের মধ্যমণি প্রায় ৩৮০ ফুট উঁচু বাকলাই জলপ্রপাত। দেশের গুরুত্বপূর্ণ দুটি পাহাড় কেওক্রাডং ও তাজিংডং-এর মাঝেই এই গ্রামটির অবস্থান। রুমা থেকে ১১০ কিলোমিটার এবং থানচি থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূর থেকে স্পষ্ট চোখে পড়ে এই ঝর্ণা।
স্থানীয়দের অনেকে একে বাক্তালাই ঝর্ণা নামেও অভিহিত করেন। মাত্রাতিরিক্ত ভয়াবহ পাহাড়ি রাস্তা থাকায় এবং যথেষ্ট উদ্যোগের অভাবে খুব কম পর্যটকই এই জলপ্রপাতের একদম পাদদেশ পর্যন্ত যেতে পারেন।
আরও পড়ুন: তাজিংডং ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও খরচ
এই বাকলাই আর লিলুক বা লাংলোক নামে থানচিরই আরেকটি ঝর্ণার সঠিক উচ্চতা নিয়ে বেশ মতোপার্থক্য রয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ ঝর্ণার খেতাব নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ থাকলেও সৌন্দর্য্যের দিক থেকে বাকলাই ঝর্ণা অনেকটা এগিয়ে।
রয়্যাল এনফিল্ড-৩৫০: বাংলাদেশের প্রথম ৩৫০ সিসি মোটরবাইক
প্রাচীনতম ব্রিটিশ টু-হুইলার ব্র্যান্ড রয়্যাল এনফিল্ড-৩৫০ -এর মাধ্যমে মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন ক্ষমতার নতুন মাত্রায় পৌঁছতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ৩৭৫ সিসির (কিউবিক সেন্টিমিটার) মাইলফলকের দিকে এই যুগান্তকারী পদক্ষেপটি সম্পন্ন হতে যাচ্ছে চলতি বছরের জুলাইতে। স্থানীয়ভাবে ইফাদ মোটরস নামক একটি মোটরসাইকেল কারখানাজাত প্রতিষ্ঠান দেশের বাজারে চালু করবে রয়্যাল এনফিল্ড। ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে যে, বিশ্ব বাজারে এর নামকরা ক্লাসিক, বুলেট, হান্টার ও মিটিওর সিরিজগুলো দেশের ভেতরেই প্রস্তুত করা হবে। কী কী ফিচার পাওয়া যাবে রয়্যাল এনফিল্ড-৩৫০ মোটরসাইকেলের মডেলগুলোতে? আর কতটুকু নাগালের মধ্যে থাকতে যাচ্ছে এগুলোর দাম। চলুন জেনে নেয়া যাক।
রয়্যাল এনফিল্ড ক্লাসিক ৩৫০
নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির এক সঙ্গত সংমিশ্রণ রয়্যাল এনফিল্ড ক্লাসিক ৩৫০। বাতাস চলাচলের মাধ্যমে শীতলীকরণ প্রক্রিয়া সমৃদ্ধ একক সিলিন্ডার ও ৩৪৯ সিসির ইঞ্জিন একটি আদর্শ মোটরসাইকেল হিসেবে মডেলটিকে ন্যায্যতা দেয়।
৬ হাজার ১০০ আরপিএম (রিভোলিউশ্যন পার মিনিট)-এর সঙ্গে রয়েছে ২০ দশমিক ২ বিএইচপির (ব্রেক হর্সপাওয়ার) হর্সপাওয়ার এবং ৪ হাজার আরপিএমের সঙ্গে প্রতি ফুট দূরত্বে ১৯ পাউন্ডের টর্ক। তাই শহুরে যানজট বা খোলা-রাস্তা উভয় ক্ষেত্রেই চালনায় ভারসাম্য নিয়ে কোনও চিন্তা নেই।
আরও পড়ুন: ঢাকার পূর্বাচল ৩০০ ফিট সড়ক: কীভাবে যাবেন, কী দেখবেন
এনফিল্ড ঐতিহ্যের সমগ্র নান্দনিকতার ছোঁয়া পড়েছে নকশায়। স্টিলের ফ্রেমটি চালক ও যাত্রী উভয়ের জন্যই স্বাভাবিক হ্যান্ড গ্রিপ্স, হ্যান্ডেলবার ও সামঞ্জস্যপূর্ণ ফুট পেগ নিশ্চিত করে। বাইক চড়ার মুহূর্তগুলোকে আরামদায়ক করার জন্য সামনের সাসপেনশনে রয়েছে ৪১ মিলিমিটার টেলিস্কোপিক ফর্ক আর পেছনেরটাতে একটি টুইন সাইড সুইং আর্ম। যথাযথ নিরাপত্তার স্বার্থে এবিএস (অ্যান্টি-লক ব্রেকিং সিস্টেম) হিসেবে কাজ করবে সামনে এবং পিছনে উভয় দিকের হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেক। সতর্ক সংকেত দেওয়ার জন্য যন্ত্রাংশ প্যানেলে রয়েছে চিরাচরিত স্পিডোমিটার ও একটি ফুয়েল লেভেল লাইট।
এছাড়াও সঙ্গে বহন করার জন্য আছে হার্ড সাইড কেস, পিছনের র্যাক ও ব্যাগ লাইনারসহ আনুষঙ্গিক নানাবিধ সংযোজনের ব্যবস্থা।
রয়্যাল এনফিল্ড বুলেট ৩৫০
বুলেট মডেলকে রয়্যাল এনফিল্ড ঐতিহ্যের প্রতীক বলা যেতে পারে। ক্লাসিকের মতো এটাতেও রয়েছে ৩৪৯ সিসির জে-সিরিজ ইঞ্জিন ও ৬ হাজার ১০০ আরপিএম-এ ২০ দশমিক ২ বিএইচপি হর্সপাওয়ার। পাশাপাশি এটি ৪ হাজার আরপিএম-এ প্রতি ফিট দূরত্বে ১৯.৯ পাউন্ড টর্ক দিতে সক্ষম। অর্থাৎ উচ্চ-গতির জন্য নয়; এটি বরং প্রতি ঘন্টায় ৫০ থেকে ৬০ মাইল যাত্রার জন্য উত্তম।
সিরিজটি ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী মোটরসাইকেল ডিজাইন। ১৯৫৫ সালে মূল প্রতিষ্ঠান এনফিল্ড সাইকেল কোম্পানি ভারতের মাদ্রাজ মোটরসের সঙ্গে অংশীদারিত্বে গঠন করেছিল এনফিল্ড অব ইন্ডিয়া। মাদ্রাজ (বর্তমানে চেন্নাই) কেন্দ্রিক এনফিল্ড সাইকেলের উত্তরসূরি তাদের কার্যক্রম শুরু করেছিল এই রয়্যাল এনফিল্ড বুলেট অ্যাসেম্বলির মাধ্যমেই। বুলেটের চিত্তাকর্ষক নকশায় এখনও সেই ঐতিহাসিক ছাপ বিদ্যমান, যা অনায়াসেই যে কোনও বাইক চালকের মন জয় করে নেয়। বুলেটের ভিন দেশী নকশা এবং ইউএসবি চার্জিং পোর্ট বিশেষভাবে নজর কাঁড়ে।
আরও পড়ুন: বারিধারার ১০০ ফিট মাদানী এভিনিউ: যেভাবে যাবেন, যা দেখবেন
স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ হ্যান্ডলিং, সাস্পেনশন, এবং ডুয়্যাল সিট সেটআপ একা একা বা কাউকে সঙ্গে নিয়ে চালানো উভয় ক্ষেত্রে নেভিগেশনটা চালকের জন্য সহজাত করে তোলে। সিটটি মোটা-প্যাডের হওয়ায় তা ৮০৫ মিলিমিটার উচ্চতায় চালক ও যাত্রী দুজনের জন্যই বেশ সহজসাধ্য এবং আরামপ্রদ।
১৩ লিটার ধারণক্ষমতার জ্বালানি ট্যাঙ্ক একবার ভরে নিলে ৩০০ মাইলেরও বেশি নিশ্চিন্তে ভ্রমণ করা যাবে।
রয়্যাল এনফিল্ড হান্টার ৩৫০
উন্নত প্রযুক্তিতে সুসজ্জিত হওয়ায় রয়্যাল এনফিল্ড পরিবারের সবচেয়ে আধুনিক সদস্য হচ্ছে হান্টার।
অবশ্য ক্লাসিক মডেলের ধারা অব্যাহত রেখে এর একক সিলিন্ডার ও ৩৪৯ সিসির ইঞ্জিনের ক্ষমতা একই রাখা হয়েছে। অর্থাৎ ৬ হাজার ১০০ আরপিএমে ১৪ দশমিক ৮৭ কিলোওয়াট এবং ৪ হাজার আরপিএমে ২৭ এনএম টর্ক।
আরও পড়ুন: মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানোর ১০টি উপায়
সামগ্রিক নকশা অনুসারে এই সিরিজ শহুরে পরিবেশের জন্য উপযুক্ত। স্টিলের ফ্রেমটি নেভিগেশন এবং চালক ও যাত্রী দুজনের ফুটপেগের সহায়ক। এখানেও আছে সামনের সাসপেনশনে টেলিস্কোপিক ফর্ক এবং পেছনের সাস্পেনশনে টুইন সাইড সুইং আর্ম।
এর আকার ও সর্বোচ্চ ১৮১ কেজি ওজন শামাল দিতে কোনও প্রাপ্ত বয়স্ক বাইকারকেই হিমশিম খেতে হয় না। ৩১ দশমিক ১ ইঞ্চি বা ৭৯০ মিলিমিটারের উচ্চতায় বসার জায়গাটি যে কোনও চালক ও যাত্রীর জন্য স্বাভাবিক। তাছাড়া চলন্ত অবস্থায় সুরক্ষার জন্য সামনে এবং পিছনে এবিস সহ হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেক তো থাকছেই।
হান্টার-৩৫০-এর যন্ত্রাদি ডিজিটাল হওয়ায় পাওয়ার আউটলেট, হার্ড সাইড কেস এবং স্টোরেজ কভারের সুবিধা আছে। অ্যালুমিনিয়ামের চাকাগুলোতেও লাগানো আছে টিউবলেস টায়ার।
আরও পড়ুন: বিআরটিএ স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স যেভাবে করবেন
রয়্যাল এনফিল্ড মিটিওর ৩৫০
অন্যান্য সিরিজগুলোর সঙ্গে খুব একটা তারতম্য নেই রয়্যাল এনফিল্ড মিটিওর ৩৫০-এর। ৩৪৯ সিসির একক সিলিন্ডার ইঞ্জিনে অপরিবর্তিত আছে ৪ হাজার আরপিএমে ২৭ এনএম (নিউটন-মিটার) টর্ক এবং ৬ হাজার ১০০ আরপিএমে ২০ দশমিক ২ বিএইচপির ক্ষমতা।
টেকসই ও পালিশ করা সর্বাঙ্গে জেনুইন মোটরসাইকেল এক্সেসরিজের (জিএমএ) বিশাল বহর। ইঞ্জিন এবং গিয়ারের মাঝে সুষ্ঠু যোগসাজশ এক মসৃণ রাইডিং অভিজ্ঞতা দেয়। প্রতি ঘণ্টায় গতি ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেলেও কম্পন অনুভূত হবে না।
মিটিওর-৩৫০ও সমস্বরে জানান দেয় স্টিল ফ্রেম এবং সামনের ও পেছনের সাস্পেনশনে যথাক্রমে টেলিস্কোপিক ফর্ক ও টুইন সাইড সুইং আর্মের উপস্থিতি।
আরও পড়ুন: উবার ড্রাইভার অ্যাকাউন্ট সক্রিয় করবেন যেভাবে
গ্রাউন্ড থেকে ৩০ দশমিক ১ ইঞ্চি বা ৭৬৪ দশমিক ৫ মিলিমিটারের উচ্চতায় ডুয়্যাল সিট এবং সামনের-পেছনের দুই চাকাতে এবিএসের হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেক পূর্ণ নিরাপত্তার পরিপূরক।
স্পিডোমিটার, ট্যাকোমিটার, ট্রিপ ওডোমিটার, কম্পাস এবং নেভিগেশন সিস্টেমের ডিজিটাল যন্ত্রাংশ বিশ্বমানের সুবিধা হিসেবে আলাদা আকর্ষণ রাখে।
রয়্যাল এনফিল্ড-৩৫০-এর সম্ভাব্য মূল্য
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বিচিত্র রঙ ও এবিএস চ্যানেল ভেদে ক্লাসিক সিরিজের দাম চলছে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৮০ রুপি থেকে ২ লাখ ২৪ হাজার ৭৫৫ রুপি পর্যন্ত। যেটি বাংলাদেশি টাকায় আড়াই লাখ থেকে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৩৬ টাকা (১ ভারতীয় রুপি = ১.৩২ বাংলাদেশি টাকা)। বেশ কিছু নতুন রঙের ভার্সন সংযোজন হয়ে বুলেট মডেলগুলোর মূল্য দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৫৬২ থেকে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৪৩৬ রুপি, যা প্রায় ২ লাখ ২৯ হাজার ৩৭৯ টাকা থেকে ২ লাখ ৬০ হাজার ৯৩১ টাকার সমপরিমাণ।
১ লাখ ৪৯ হাজার ৯০০ থেকে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৬৫৫ রুপি (প্রায় ১ লাখ ৯৮ হাজার ১০৭ থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার ৮২৩ টাকা) দামে ভারতীয় গ্রাহকদের নিকট পরিবেশিত হচ্ছে বর্ণীল হান্টারগুলো। আর ২ লাখ ৫ হাজার ৯০০ থেকে ২ লাখ ২৯ হাজার ৯০০ রুপি (প্রায় ২ লাখ ৭২ হাজার ১১৭ টাকা থেকে ৩ লাখ ৩ হাজার ৮৩৫ টাকা) দামের পরিধি নিয়ে মোটর বাইকারদের নজর কাঁড়ছে অবকাশ রাইডিংয়ের মিটিওর-৩৫০ ক্রুজগুলো।
আরও পড়ুন: মোটর বাইক রাইডারদের নিরাপত্তার জন্য সেফটি গিয়ার
বাংলাদেশে মোটর বাইকগুলোর দাম নির্ভর করছে উদ্বোধনকালীন বাজার পরিস্থিতি এবং ডলার মূল্যের উপর। ইফাদ মোটরসের তথ্যমতে, ডলার রেট প্রায় ১২৫ (বাংলাদেশি) টাকা হলে রয়্যাল এনফিল্ড-৩৫০ সিরিজগুলোর দাম হতে পারে প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা।
পরিশিষ্ট
রয়্যাল এনফিল্ড-৩৫০ -এর চারটি সিরিজই প্রতিনিধিত্ব করছে বিশ্বমানের মোটরবাইক শিল্পকে। তবে বাংলাদেশে এর প্রতিক্রিয়ায় বৈচিত্র্য আসতে পারে মোটরসাইকেলপ্রেমিদের ভিন্ন চাহিদার ভিত্তিতে। বয়সের সীমারেখা নির্বিশেষে ঐতিহ্যবাহী বাইকাররা তাদের নস্টালজিয়া অনুশীলনে সাদরে গ্রহণ করে নিতে পারেন ক্লাসিক মডেলটিকে। সাবলীলতা ও নির্ভরযোগ্যতায় ব্যবহারের প্রতি গুরুত্ব দেয়া শ্রেণির প্রথম পছন্দ হতে পারে বুলেট সিরিজ।
শহুরে চালকদের বিশেষ করে স্বল্পবয়সীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষস্থানটি দখল করতে পারে হান্টার ও মিটিওর। তবে এবিএস থাকলেও এগুলোর উচ্চ গতি বাংলাদেশের মহাসড়কগুলোতে সতর্কতার দাবি রাখে। আর খারাপ সড়ক বা গ্রাম্য পথে দূর পাল্লায় হান্টারকে পরখ করে দেখা মোটেই উচিত হবে না।
আরও পড়ুন: বাজাজ পালসার এন-২৫০: বাংলাদেশের প্রথম ২৫০ সিসি বাইক
বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড় ভ্রমণ: বাংলার দার্জিলিং যাওয়ার উপায় ও খরচের বৃত্তান্ত
পাহাড় বেয়ে চূড়ায় ওঠার সময় মাঝপথে থেকে নিচের দিকে তাকালে স্বভাবতই ফেলে আসা জনপদগুলোকে পিপিলিকার মতো মনে হয়। কেমন হবে যদি নিচে তাকিয়ে দেখা যায় সব হারিয়ে গেছে মেঘের নিচে! শ্বেত শুভ্র পেঁজা তুলাগুলোকে আলগোছে পা ছুঁয়ে যাওয়াটাকে মোটেই পার্থিব মনে হবে না। বিশেষ করে বাংলাদেশি ট্রেকাররা হরহামেশা এরকম দৃশ্যের সম্মুখীন হন না। কিন্তু বান্দরবানের এমন কিছু পাহাড় আছে, যেগুলো সত্যিকার অর্থেই এরকম অভিজ্ঞতার অবতারণা করতে পারে। ট্রেকাররা সুউচ্চ পাহাড়ের উপর আবিষ্কার করেন এক জাদুর নগরী। এগুলোর মধ্যে চিম্বুক পাহাড়ে উঠলে মনে হবে যেন সাক্ষাত দার্জিলিং।
পাহাড়ি সৌন্দর্য্যের রানী বান্দরবানের এই প্রাচীন ঐশ্বর্য নিয়েই এবারের ভ্রমণবিষয়ক নিবন্ধ। চলুন, বাংলার দার্জিলিং চিম্বুক পাহাড় ট্রেকিংসহ ভ্রমণের বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
চিম্বুক পাহাড়ের বিশেষত্ব ও ভৌগলিক অবস্থান
চট্টগ্রাম বিভাগের পার্বত্য জেলা বান্দরবানের থানচিতে অবস্থিত এই পাহাড়টি স্থানীয় অনেকের কাছে কালা পাহাড় নামেও পরিচিত। বান্দরবান জেলা সদর থেকে জায়গাটির দূরত্ব প্রায় ২৬ কিলোমিটার। গড় সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ২ হাজার ৫০০ ফুট উঁচু এই প্রাকৃতিক বিস্ময় বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম পাহাড়।
এই উচ্চতায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা ছাড়াও ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে অনায়াসেই দেখে নেওয়া যায় মেঘাচ্ছন্ন পাহাড়গুলোকে। এ কারণে ঐতিহাসিক স্থানটি অনেক আগে থেকেই পর্যটকদের কাছে বাংলার দার্জিলিং হিসেবে পরিচিত হয়ে আসছে।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ার লালন শাহের মাজার ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
ঈশা খাঁ'র জঙ্গলবাড়ি দুর্গ ভ্রমণ গাইড, আনুষঙ্গিক খরচ
বহু যুগের ঐতিহাসিক স্থাপনায় সমৃদ্ধ বাংলার জনপদ সাক্ষী হয়ে আছে নানান সময়ের স্থাপত্য শিল্পকর্মের। এমনকি নদীমাতৃক বাংলাদেশ সেই জীবাশ্মগুলোকে বুকে ধারণ করে এখনও শুনিয়ে যায় উত্থান-পতনের কাহিনী। তেমনি একটি পুরাকীর্তি ঈশা খাঁ’র জঙ্গলবাড়ি দুর্গ, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঈশা খাঁ’র বীরত্বগাঁথা।
ষোল শতকের এই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার এখন আর আগের মত জৌলুশ না থাকলেও ইতিহাস উৎসাহীদের কাছে এটি একটি প্রিয় পর্যটন স্থান। এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটি নিয়েই আজকের ভ্রমণ বিষয়ক নিবন্ধ। চলুন, জেনে নেয়া যাক- কিভাবে বারো ভূঁইয়াদের সময়কার এই স্থাপত্য নকশাকে খুব কাছ থেকে দেখবেন।
ঈশা খাঁ'র জঙ্গলবাড়ি দুর্গের অবস্থান ও বিশেষত্ব
ঢাকা বিভাগের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা কিশোরগঞ্জের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা করিমগঞ্জ। এই করিমগঞ্জের অন্তর্গত কাদিরজঙ্গল ইউনিয়নের নরসুন্দা নদী বিধৌত একটি গ্রাম জঙ্গলবাড়ি। এই গ্রামেরই মধ্যমণি বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম নেতা ঈশা খাঁ’র স্মৃতিবাহী জঙ্গলবাড়ি দুর্গ। মসনদে-আলা-বীর ঈশা খাঁ এখানেই বানিয়েছিলেন তার দ্বিতীয় রাজধানী।
জঙ্গলবাড়ি দুর্গের ইতিহাস
ইংরেজদের ও মুঘলদের স্বৈরাচার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বাংলার জমিদাররা গোপনে সাহায্য চেয়েছিলেন ঈশা খাঁ’র কাছে। তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১ হাজার ৪০০ অশ্বারোহী, ২১টি নৌবিহার এবং গোলাবারুদ নিয়ে ত্রিপুরা রাজ্যে হাজির হন ঈশা খাঁ।
অতঃপর ১৫৮৫ সালে তৎকালীন কোচ রাজা লক্ষ্মণ হাজরা ও রাম হাজরাকে পরাজিত করে তিনি দখল করে নেন জঙ্গলবাড়ি দুর্গ। এই দুর্গ মূলত সেই কোচ রাজার আমলে তৈরি করা হয়নি। ধারণা করা হয়, এর গোড়াপত্তন হয়েছিলো প্রাক-মুসলিম যুগে।
আরও পড়ুন: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিলাইদহ কুঠিবাড়ি যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
তবে দুর্গ দখলের পর ঈশা খাঁ দুর্গটির সংস্কার করার সময় এর ভেতরে আরও কিছু স্থাপনা নির্মাণ করেন। এই দুর্গ থেকেই পরবর্তীতে তিনি ক্রমান্বয়ে সোনারগাঁও সহ ২২টি পরগণা দখল করেছিলেন।
১৫৯৯ সালে তার মৃত্যুর পর পুত্র মুসা খান সোনারগাঁওয়ের মসনদের আসীন হন। মুসা খাঁ বারো-ভূঁইয়াদের পক্ষে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে মুঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। অবশেষে ১৬১০-এর ১৬ জুলাই মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের সেনাপতি ইসলাম খানের কাছে তার পরাজয় হয়।
এ সময় ঈশা খাঁ’র বংশধররা সোনারগাঁও ত্যাগ করে আশ্রয় নিয়েছিলেন এই জঙ্গলবাড়ি দুর্গে।
বর্তমানে এই ঐতিহাসিক দুর্গ বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। ২০০৫-এর ১২ জুন স্থানীয় প্রশাসন দুর্গের ভেতরের দরবার কক্ষটি সংস্কার করে স্থাপন করে জাদুঘর ও পাঠাগার। নতুন সংস্কারকৃত কক্ষটিকে 'ঈশা খাঁ স্মৃতি জাদুঘর ও পাঠাগার' নাম দিয়ে উন্মুক্ত করা হয় দর্শনার্থীদের জন্য।
আরও পড়ুন: ২০২৪ সালে ভিসা ছাড়াই যেসব দেশে যেতে পারবেন বাংলাদেশিরা
মহেশখালী ভ্রমণ গাইড: বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপে যাওয়ার উপায়, আনুষঙ্গিক খরচ
দীপাঞ্চল ভ্রমণ মানেই বিচ্ছিন্ন কোনো ভূখণ্ডে সাগর ও আকাশের দিগন্তরেখায় অর্ধচন্দ্র ডিঙি নৌকার মিলিয়ে যেতে দেখা। যেখানে ঢেউয়ের পিঠে চেপে যাযাবর পলিমাটি ঠিকানা খুঁজে পায় প্রাণবন্ত গ্রামগুলোর কাঁচা সৈকতে। বঙ্গোপসাগরের সংস্পর্শে থাকায় সবুজ বাংলাদেশের ভ্রমণকারীরাও পরিচিত এমন দৃশ্যের সঙ্গে। তবে দেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ হওয়ার বিশেষত্বটা মহেশখালীকে আলাদা করেছে আর সব উপকূলবর্তী অঞ্চল থেকে। শুধুই কি পাহাড়ের চূড়া থেকে পাখির চোখে দ্বীপ দর্শন! এখানে আছে দেশের অকৃত্রিম সব সৌন্দর্য্যের উপাদান।
চলুন, বাংলাদেশের এই ল্যান্ডমার্ক দর্শনীয় স্থান মহেশখালী দ্বীপে ভ্রমণের ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
মহেশখালীর ভৌগলিক অবস্থান ও বিশেষত্ব
চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত প্রশাসনিকভাবে স্বীকৃত এক উপজেলা মহেশখালী। ৩৬২ দশমিক ১৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলাটি মহেশখালী, সোনাদিয়া, মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা- এই চারটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত।
আরও পড়ুন: বান্দরবানের তিনাপ সাইতার জলপ্রপাত ভ্রমণের উপায় ও খরচ
এর পূর্বে রয়েছে কক্সবাজার সদর ও চকরিয়া উপজেলা এবং পশ্চিমে কুতুবদিয়া উপজেলা ও বঙ্গোপসাগর। উত্তরে চকরিয়া উপজেলা এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ও কক্সবাজার সদর উপজেলা।
মহেশখালীর নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মিষ্টি পানের সুখ্যাতি। সেই সঙ্গে চিংড়ি, লবণ ও মুক্তা চাষের জন্যও স্থানটি দেশব্যাপী ব্যাপকভাবে পরিচিত।
১৫৫৯ সালের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে মূল ভূ-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সৃষ্টি হয় মহেশখালী দ্বীপ। এর পাদদেশে প্রবাহিত চ্যানেল এবং পূর্ব প্রান্ত দিয়ে উত্তর দক্ষিণমুখী পাহাড় এখনও সেই সংযুক্তির চিহ্ন বয়ে চলেছে।
জনতা বাজার নামক জায়গাটিতে নতুন নির্মিত হওয়া মহেশখালী সেতু বর্তমানে মূল ভূ-খণ্ডের সঙ্গে দ্বীপের সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা করছে।
আরও পড়ুন: মনপুরা দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় এবং আনুষঙ্গিক খরচ