নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক ও সাইনবোর্ড এলাকায় দফায় দফায় হেফাজত-পুলিশ সংঘর্ষে শাকিল (৩০) নামে একজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
রবিবার হেফাজতে ইসলামের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৩০টি স্থানে টায়ার পুড়িয়ে, গাছের গুড়ি ফেলে অবরোধ করে হরতাল সমর্থকরা। চলতে দেয়নি কোন যানবাহন। যানবাহনহীন ফাঁকা সড়কে লাঠি হাতে নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেয় হরতাল সমর্থকরা। এতে মহাসড়কে সকল প্রকার যানচলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। চরম ভোগান্তিতে পড়ে হাজার হাজার যাত্রী সাধরণ।
সকাল থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কয়েক দফায় পুলিশ-হেফাজত সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সকাল সাড়ে ১০টা ও ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় হেফাজত ও পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে ফাঁকা গুলি ছুড়ে বিজিবির সদস্যরা। এ সময় হরতাল সমর্থকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তারা ৪টি গাড়িতে আগুন দেয়।
পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে কাঁদানে গ্যাস ও শটগানের গুলি ছুঁড়ে। এতে পুলিশ, সাংবাদিক ও হরতাল সমর্থকদের অন্তত ২০ জন আহত হয়। সেখানে রয়েছেন র্যাব-পুলিশ-বিজিবিসহ বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরিস্থিতি থমথমে অবস্থায় রয়েছে।
তবে দুপুর একটার দিকে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
আরও পড়ুন: হাটহাজারীর পরিস্থিতি থমথমে, মাদরাসা শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশ-হেফাজত সংঘর্ষে শাকিল (৩০) নামে একজন ফার্নিচার মিস্ত্রি গুলিবিদ্ধ হয়। তাকে দ্রুত স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন।
এর আগে সকালে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন। তারা সড়কের কয়েকটি স্থানে টায়ার, গাছের গুড়ি ফেলে ও বাঁশে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় বন্ধ হয়ে যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যান চলাচল। পরে পুলিশ এসে বিক্ষোভকারীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয় ও আগুন নিভিয়ে দেয়। পরে যানবাহন চলাচল শুরু করে।
জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শটগানের গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। যানবাহন চালু করার চেষ্টা চলছে। সংঘর্ষে একজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথা তিনি শুনেছেন।’
হরতালকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ শহরে হেফাজতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ডিআইটির রেলওয়ে জামে মসজিদে ভোর থেকে অবস্থান নেয় কয়েকশ’ হেফাজত কর্মী-সমর্থকরা। মসজিদের বাইরেই প্রহরায় ছিল র্যাব-পুলিশ-বিজিবি সদস্যরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় তারা মসজিদ থেকে বেরোতে পারেনি।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলা হেফাজতের সভাপতি মাওলানা আব্দুল আউয়ালের নির্দেশে তারা কোনো মিছিল বা স্লোগান না দিয়ে মসজিদ ত্যাগ করেন। তবে রেলওয়ে মসজিদ এলাকাসহ শহরের চাষাঢ়া, সাইনবোর্ড, শিমরাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। মোতায়েন রয়েছে বিজিবি ও র্যাব।
হরতালের সার্বিক পরিস্থির বিষয়ে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সকাল থেকে জেলার কিছু কিছু স্থানে অবরোধ-বিক্ষেভ প্রদর্শন করেছে হরতাল সমর্থকরা। তবে তা নিয়ন্ত্রণে এনেছে পুলিশ। সারা জেলায় ৫৮৫ জন পোশাকে এবং আরও ২০০ সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া র্যাব ও বিজিবির সদস্যরাও হরতালের ডিউটিতে রয়েছেন।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে হরতাল সমর্থনকারীরা অবরোধ করে চলছে। বর্তমানে এই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ, হরতাল সমর্থনকারীরা রাস্তায় টায়ারসহ বিভিন্ন গাছের ডালপালা দিয়ে আগুন জালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে রাখছে। আমরা চেষ্টা করছি যথাসাধ্য যাতে মানুষ ভোগান্তিতে না পরে। এখন পর্যন্ত কেউ নিহত হয়নি। পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
আরও পড়ুন: মোদিবিরোধী বিক্ষোভ: বায়তুল মোকাররম এলাকায় পুলিশের সাথে মুসল্লিদের সংঘর্ষ