জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়নের আনুষ্ঠানিক আদেশ জারি করেছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। এর মাধ্যমে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলো।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।
গেজেট অনুযায়ী, সংবিধান সংস্কারের অংশ হিসেবে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। এই গণভোটে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’—এই দুই বিকল্পে চারটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে ভোটগ্রহণ হবে, যেগুলো ঐকমত্য কমিশনে আলোচিত হয়েছিল।
গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট প্রাধান্য পেলে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়ে ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ গঠন করা হবে। এ পরিষদ সংস্কার প্রক্রিয়ার পূর্ণ এখতিয়ারভুক্ত থাকবে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা একযোগে সংসদ সদস্য ও সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
সংস্কার পরিষদ তাদের প্রথম অধিবেশনের তারিখ থেকে সর্বোচ্চ ১৮০ দিনের (ছয় মাস) মধ্যে সংবিধান সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। সংস্কার কার্য শেষ হলে পরিষদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিলুপ্ত হবে।
পরিষদ নিজেই অধিবেশন আহ্বান ও মুলতবি করার, সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন ও গ্রহণ করার এবং প্রক্রিয়া নির্ধারণের ক্ষমতা রাখবে। সংসদ সচিবালয় পরিষদের প্রশাসনিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে।
সংবিধান সংস্কার পরিষদের কাঠামো
নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা যেদিন শপথ নেবেন, সেদিনই একই অনুষ্ঠানে তারা পরিষদ সদস্য হিসেবেও শপথ নেবেন। সংসদীয় শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের যিনি পরিচালনা করবেন, তিনি পরিষদের শপথও পরিচালনা করবেন।
প্রথম অধিবেশনে সদস্যরা পরিষদের সভাপ্রধান ও উপ-সভাপ্রধান নির্বাচন করবেন। পদাধিকারী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সদস্যদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্ধারিত একজন প্রবীণ সদস্য অধিবেশন পরিচালনা করবেন। সভাপ্রধান ও উপ-সভাপ্রধানের অনুপস্থিতিতে বিধি অনুযায়ী যেকোনো সদস্য অধিবেশন পরিচালনা করতে পারবেন।
সংসদীয় নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে পরিষদের প্রথম অধিবেশন আহ্বান করতে হবে, যা সংসদের প্রথম অধিবেশনের সময়সীমার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনায় ন্যূনতম ৬০ সদস্যের উপস্থিতি আবশ্যক হবে।
পরিষদের যেকোনো সিদ্ধান্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে নির্ধারিত হবে। ভোট সমান হলে সভাপ্রধানের ভোটই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
গেজেট অনুযায়ী, পরিষদের সদস্যরা সংসদ সদস্যদের মতোই আইনগত মর্যাদা, অধিকার ও দায়মুক্তি ভোগ করবেন। পরিষদ জুলাই জাতীয় সনদকে সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে নিশ্চিত করবে।
উচ্চকক্ষ গঠন
রাষ্ট্রপতির আদেশে বলা হয়েছে, সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন হওয়ার এক মাসের মধ্যে একটি উচ্চকক্ষ গঠন করতে হবে।
নতুন এ কক্ষটি নিম্নকক্ষ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে গঠিত হবে।
উচ্চকক্ষের মেয়াদ তার শপথগ্রহণের দিন থেকে নিম্নকক্ষ ভেঙে দেওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে। জাতীয় নির্বাচনের সময় উচ্চকক্ষের জন্য আলাদা প্রার্থী তালিকা জমা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না।
উচ্চকক্ষ গঠনে কোনো প্রক্রিয়াগত জটিলতা দেখা দিলে সরকার নির্দেশনা দিতে পারবে এবং পরিষদ প্রয়োজনীয় বিধান প্রণয়ন করতে পারবে।
গেজেটে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, পরিষদ কর্তৃক গৃহীত যেকোনো সংস্কার চূড়ান্ত হিসেবে গণ্য হবে। এর জন্য অতিরিক্ত কোনো অনুমোদন বা অনুমোদন প্রক্রিয়া প্রয়োজন হবে না।
রাষ্ট্রপতি সংশোধিত সংবিধানটি দ্রুত সরকারি গেজেটে প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন।