%EF%BF%BD%EF%BF%BD%EF%BF%BD%EF%BF%BD%EF%BF%BD%EF%BF%BD%EF%BF%BD%EF%BF%BD%EF%BF%BD%EF%BF%BD%EF%BF%BD%EF%BF%BD%EF%BF%BD%EF%BF%BD%EF%BF%BD
পরীমণি: পাবলিক মনে মনে জামিন দিয়ে দিয়েছে
আগামীকালের অপেক্ষায় অনেকে। আর পছন্দ হোক আর নাই হোক বেশিরভাগ মানুষ চায় পরীমণি জামিন পাক। এখন আর তার অপরাধ বিষয় নয়। তার রিমান্ড, হাজতবাস ইত্যাদি মিলিয়ে এমন এক আবহ সৃষ্টি হয়েছে যে পাবলিকের চোখে সে এক ধরণের ভুক্তভোগী। তারা মনে করে যে তার ওপর 'অন্যায়’ করা হচ্ছে। মানুষের মন এমনই। পাবলিক কারও কষ্ট দেখলে বিশেষ করে পুলিশের হাতে সিম্প্যাথেটিক হয়ে যায়।
২. এর সাথে আছে আরও বিভিন্ন অপরাধ ও গ্রেপ্তার নিয়ে পাবলিকের ভাবনা। বড় বড় আসামি জেলের ভেতর থাকে আরামে, বিরাট বাটপার সহজেই দেশ ছাড়ে আর প্রতিদিনিই কেউ না কেউ মাফ বা অব্যাহতি পেয়ে যায় ওই অপরাধের অভিযোগ থেকে।
সময়টাও খারাপ, কারণ ইদানিং ‘বিশাল’ কয়েকজনকে ছাড় দেয়া হয়েছে। পাবলিক তাই বলছে, তাদের অপরাধের তুলনায় পরীমণি কি করেছে? এতো কেন? কিন্তু যেহেতু পাবলিকের কোনো ক্ষমতা বা প্রভাব নেই, তাই সে মনে মনে ‘জামিন’ দিয়ে দিয়েছে। আর কি করার আছে তাদের?
৩. বোট ক্লাবের ঘটনা থেকেই সব সূত্রপাত। যাদের সে ‘ক্ষতি’ করেছে , যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে তারা ব্যক্তিগতভাবে নয় গোষ্ঠীগতভাবে আঘাত পেয়েছে, অপমান বোধ করেছে। তাই রাগটা অনেক বড়, পাল্টা আঘাত আরও বড়। পুলিশ এরই মধ্যে ইঙ্গিত করেছে যে ‘ধর্ষণের’ অভিযোগের ভিত্তি নেই, অতএব ঝালটা আরও বেশি তো হবেই। তার দাম চুকাতে হচ্ছে পরীমণিকে।
৪. পরিমণির জীবন-যাপন বাংলাদেশের বড়লোকদের ওপরতলার মানুষের মতোই, যেখানে নেশা, ‘অনৈতিক আচরণ’, ক্লাব আর রিসোর্ট কেন্দ্রিক জীবন বহমান। কিন্তু পরীমণি মিডল ক্লাস বড়োজোর, তার রুজি বা জীবন চলে বড়লোকের সাথে মেলা মেশায়, হিসাবের ভুল এখানে। সে উপরতলার নয়। একসাথে মদ খেলে সব মদ খোর এক হয় না, সবার সাথে লাগা যায় না। যার যে শ্রেণি সেটাই ঠিকানা। হেলেনা জাহাঙ্গীর তার ভালো উদাহরণ। পরীমিণির বিরুদ্ধে লেগেও, বোট ক্লাবের সদস্য হয়েও সে একই ধরণের মামলায় জেলেই। কারণ সে উপরতলার নয়।
৫. পাবলিক এতো কিছু বোঝে না, পরীমণির জন্য তাদের মধ্যে ‘আহা বেচারি’ বোধ কাজ করছে সবচেয়ে বেশি। সে কি হয়েছিল ভুলে গেছে, এখন রিমান্ড আর জেল দেখে দুঃখিত। তাই কি আর করবে, মনের জামিনটা দিয়েছে আদালতের জন্য অপেক্ষা না করে। তারা এইটুকুই পারে।
লেখক: এডিটর এট লার্জ, ইউএনবি
আরও পড়ুন: পরীমণির জামিন শুনানির তারিখ এগিয়েছে
পরীমণির জামিন শুনানি দ্রুত করার বিষয়ে হাইকোর্টের রুল
বিষয়টা পরীমণি, না অন্য কিছু ?
‘আফগানিস্তান’ কোনো একক রাষ্ট্র নয়
আফগনিস্তান, ইরাক, ইরান, সিরিয়া অঞ্চলের অস্থিরতা কমবে না যতক্ষণ না পশ্চিমাদের সাথে চীনের দ্বন্দ্বের শেষ না হয়। এই অঞ্চলের প্রতিটি দেশেই মার্কিনিরা আগ্রাসন চালায় এবং তারা বিপদে আছে। আর আফগানিস্তানে রাশিয়া আগ্রাসন চালিয়ে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হারায়। প্রতিটি দেশে এর প্রক্রিয়ায় উগ্রবাদ জন্মায়।
অর্থনৈতিকভাবে মার্কিনিরা আগের মতো সবল নেই। কিন্তু যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবে। তবে তারা তা করতে চায় না। যে খরচ তা আজকের দুনিয়ায় সামলানো কঠিন। ‘ঠান্ডা যুদ্ধের’ কালে অর্থাৎ সোভিয়েত ইউনিয়ন / রাশিয়ার সাথে এই যুদ্ধ ছিল আদর্শের বা ইডিওলজিক্যাল। সমাজতন্ত্র বনাম পুঁজিবাদ। বিশ্বব্যাপী সমাজতন্ত্রের পতন হয়েছে। কিন্তু তার মধ্য থেকে রাশিয়া উঠে এসেছে এবং আজকের বিশ্ব দ্বন্দ্বের নায়ক হয়ে উঠেছে। ধারাবাহিকতায় মার্কিন বিরোধী। এটাই উগ্রবাদের উত্থানের পটভূমি। এই দুই শক্তির দ্বন্দ্ব।
চীন ?
২০ বছর আগের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের দলিল দেখলে পরাশক্তি হিসেবে চীনের কোনো রেফারেন্স পাওয়া যাবে না। কিন্তু গত ২০ বছরে বিরাট পরিবর্তন হয়েছে। দুনিয়ায় যার ভিত্তি চীনের মৌলিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। যার নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রের হাতে। যদিও চীন সেই অর্থে ‘সমাজতন্ত্রিক’, প্রশাসনিকভাবে কমিউনিস্ট পার্টির অধীনে। কিন্তু তার অর্থনীতি বাজার ভিত্তিক পুঁজিবাদী। এটি সনাতনী মার্ক্সবাদী ধারণাকে এতটাই বিরোধিতা করে যে এটিকে একটি নব্য ব্যবস্থা বলাই ভালো। তারা উঠে এসেছে প্রবলভাবে। তাই মার্কিনিদের প্রধান লড়াই তাদের সাথেই এবং সেটি বিশ্ব বাজার দখলের। আমেরিকা সেটা আগে অস্ত্র দিয়ে করতো। কিন্তু এখন দেখছে সেটা পারে না বা হয় না। তাই তারা বিশ্বের যত ঝামেলা তৈরি করেছিল বিশেষ করে ‘ইসলামী উগ্রবাদ’ ঠেকাতে সেটা থেকে সরে আসতে চাইছে। তারা চায় নিজেদের বাজার সামলাতে। অতএব এই উগ্রবাদ কালকেই চলে যাবে না।
উগ্রবাদ
এই উগ্রবাদী শক্তি তৈরি হয়েছে ক্রিয়া নয় প্রতিক্রিয়া হিসেবে। যেখানেই মার্কিনিরা অথবা রাশিয়া দখল করেছে সেখানেই এদের উত্থান। তারা ইসলামী জঙ্গিবাদ বলে ব্র্যান্ডিং করে -মার্কিনিরা ও তাদের মতপন্থীরাই এটা বেশি বলে - কিন্তু এর শুরু আত্নরক্ষায়। মানুষের মনের ভাবনায় যেটা ‘দেশ’। তার ওপর আঘাত হানলে মানুষের তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। মাটি থেকে শত্রু উচ্ছেদের মূল উদ্দেশ্য, কোনো বিশেষ কায়দায় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা নয়। ওই অঞ্চলের মানুষের ‘ইসলামী’ সংস্কৃতিও রাজনীতির অংশ। আফগানিস্তানে যেমন তালেবানদের মূল চর্চা পুশতুনবাদ বা গোত্রবাদ। এটির চর্চা চলে ইসলামের নামে। কাবুল বিমানবন্দরে আত্মঘাতী বোমা হামলা অনেককে হতবাক করেছে। কারণ সবার ধারণা ছিল সব ‘উগ্রবাদী ভাই ভাই’। কিন্তু সেটা যে নয় তার প্রমাণ আগেও ছিল। মার্কিনিরা কখনো বলেনি, আর সুশীল -লিবারেলরাও চায় এই ধারণা চলুক। কিন্তু এই আক্রমণ প্রমাণ করে প্রতি রাষ্ট্রের ভেতরে দ্বন্দ্ব আছে এবং এর শক্তির প্রকাশ ঘটে সহিংসতায়। আফগানিস্তান বা ইরাকের যে রাজনীতি তা অনেকটাই এরকম। অর্থাৎ আফগানিস্তানে তালেবান নিজ শক্তিতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারবে বলে মনে হয় না। একদিকে মার্কিনিদের পলায়ন, অন্য দিকে রাশিয়া -চীনের প্রবেশ এই পরিসরে।
আফগানিস্তানসহ গোটা অঞ্চলে রক্তপাত বন্ধ হওয়ার সহসা সম্ভাবনা কম। মার্কিনিরা চাইবে আফগনিস্তানে ঝামেলা হোক যাতে তালেবান/রাশিয়া -চীন বিপদে থাকে। ঠিক একই কারণে তারা ক্রমেই সরব হবে অস্ত্রের ভাষায় উগ্রবাদের বিরুদ্ধে। এই যুদ্ধে উগ্রবাদীরা জিতবে না হারবে সেটা কথা নয়, আফগনিস্তানে শান্তির সম্ভাবনা কম। পুরাতন রাষ্ট্র গঠন ভাবনা বাদ দেয়া দরকার। এইসব রাষ্ট্রগুলো একক নয়, এতগুলো বিবাদমান গোষ্ঠীর একসাথে থাকা মানে ঝামেলা বাড়ানো। হয়তো আফগান বলে কেউ নেই, পুশতুন, খোরাসানি, ইত্যাদি আছে। তাই এক রাষ্ট্র বানাতে গেলে বিপদ হবেই। তারা প্রথমে গোষ্ঠী, শেষেও তাই। এটি কোনো একক জনগোষ্ঠী নয়, অনেকগুলো জনগোষ্ঠীর একসাথে বসবাস মাত্র। তবে সেই নয়া রাষ্ট্র অবধারিত হলেও কবে হবে এখনো বলা যাচ্ছে না। যুদ্ধ চলবেই, উগ্রবাদ চলবেই, যুক্তরাষ্ট্র দুর্বল হবেই, চীন ও তার মিত্ররা সবল হবেই। পশ্চিম থেকে পূর্বের দিকে অর্থনীতি সরে আসছে। ওটাই মূল কথা, বাকি সব এই মহা পরিবর্তনের সূচক বলা যায়। কি হবে এখনো পরিষ্কার নয়।
লেখক: এডিটর এট লার্জ, ইউএনবি
আরও পড়ুন: তালেবান মাস্ক না পরলে কি কিছু এসে যায়
আমার আফগান স্টুডেন্টরা ও ১৯৭১ : ব্যক্তিগত অনুভূতি
নেশা করা মধ্যবিত্তের ইতিহাস কোন দিকে?
আমাদের সমাজের যে মধ্য পরিসর সেটা ক্রমে ছোট হয়ে আসছে। স্বাধীনতার প্রথম ১০ বছর ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতার কাল। কী ধরণের রাষ্ট্র হবে সেটা নিয়ে চলে যুদ্ধ। তবে রাজনীতি ক্রমেই দুর্বল হতে থাকে যা কিনা একটি বিশ্বব্যাপী ঘটনা। ক্রমেই অর্থনীতি ভিত্তিক রাষ্ট্র- সমাজ গড়ে ওঠে। এই ধারা এখনও চলছে বা প্রতিষ্ঠিত।
আমাদের দেশ বা সমাজ কম বেশি বিত্তবানদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তারাই রাজনীতি, সমাজনীতি করে এবং সংস্কৃতি চর্চার তারাই পৃষ্টপোষক। তারাই ঠিক করে কি হবে, কি চলবে, কি ঘটবে। আর তাদের আজ্ঞাবহ হিসেবে যারা কাজ করে, তারাই এই মধ্যবিত্ত শ্রেণি। তারা ক্রমেই পরিণত হয়েছে একটি পরনির্ভর শ্রেণিতে। তাদের মধ্যে আত্মপ্রতিষ্ঠার আগ্রহ কম।
আমাদের ইতিহাসে সমাজ চলে আঁতাতের মাধ্যমে। বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে চলে এই আঁতাত। তাই বড়লোকের সাথে মধ্যবিত্তের এই সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইংরেজ আমলে যেমন ছিল, আজও তেমন আছে। যদিও ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত মিডল ক্লাসের দাপট লক্ষ্য করা যায়। সেটা ছিল মধ্যবিত্তের বড়লোক হবার আকাঙ্ক্ষার দাপট। মুক্তিযুদ্ধে তাদের চেয়ে গ্রামের মানুষ, যারা মধ্যবিত্ত নয় তারা গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। কিন্তু যুদ্ধের পর কিছু মধ্যবিত্ত ওপরে উঠে গেলো। আর ভালো থাকার জন্য বাকি মধ্যবিত্তরা তাদের ওপর নির্ভরশীল হলো। যে মধ্যের অর্থনৈতিক ভিত্তি নাই, তারা বাড়ে কিন্তু সবল হয় না। সেই কারণেই জিজ্ঞাসা করা দরকার এই শ্রেণি কি ইতিহাস ভিত্তিক না পুরাটাই সংস্কৃতির ওপর নির্ভরশীল?
গ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক ভিত্তি আছে - রেমিট্যান্স ও কৃষি- তাকে কেউ উপেক্ষা করতে পারে না। কিন্তু মধ্যবিত্ত নাগরিকদের কেউ পাত্তা দেয় না। বড়লোকরা গ্রামের মানুষ নিয়ে চিন্তা করে, তাদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। কিন্তু মধ্যবিত্ত নাগরিককে পাত্তা দেয় না। এমনকি তাদের আন্দোলনকেও না। কিছু দিন যায়, তারপর শেষ হয়, এটাই বাস্তবতা। তালিকার সন্ধানে মশগুল এই মিডল ক্লাস ক্ষমতাহীন।
মধ্যবিত্ত নাগরিক তার জীবনের মূল্য বিচার করে জীবন যাপনের মাধ্যমে। তার এটা চাই, ওটা চাই, পশ্চিমা বা ভারতীয় রোল মডেলের মতো জীবন চাই। তাদের জীবন নেশা, দেহ আর অস্তিরতা দিয়ে গড়া। সাথে আছে সোশ্যাল মিডিয়া, বেঁচে থাকার আইডি কার্ড। কিছু করার চেয়ে কমেন্ট করতে, লাইক দিতে বেশি দেখা যায়।
যারা মিডিয়ায় আছে তাদের আমরা চিনি বলে ঘটনাগুলো সামনে আসে। কিন্তু এই মিডল অংশের বেশিরভাগই ভোগের বাইরে আর কোনো কিছুর সন্ধান করে না। তাই তাদের কেউ পাত্তা দেয় না। আর তাদের ভেতর যারা উন্নত কিসিমের, তারা চেষ্টা করে বিদেশ যেতে, সেখানে গিয়ে প্রায় বিলীন হয় অভিবাসী শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হয়ে। তারা নিজের ইতিহাস থেকে হারিয়ে যায়।
অতএব মদ খাওয়া আর ‘অনৈতিক’ জীবন নিয়ে এতো যে দুঃখ আর কথা সেটা তারাই করে যাদের ওর ভেতরেই বসবাস। এতো মামুলি কিছু নিয়ে ভাবার মানেই হয় না। এই দেশে যেখানে কম করে হলেও এক কোটি মানুষ মাদকে নেশাগ্রস্ত। আর সাথে মদ্যপায়ীদের যোগ করলে এই সংখ্যা কয় কোটি হবে?
তাহলে ইতিহাস এখন কার কাছে? কারণ ইতিহাস তো চলমান, থেমে নেই। কারা গড়ছে ইতিহাস?
আফসান চৌধুরী: এডিটর এট লার্জ, ইউএনবি
আরও পড়ুন: হেলেনা জাহাঙ্গীর, সেফুদা ও কালো মিডিয়া
বিষয়টা পরীমণি, না অন্য কিছু ?
বিষয়টা পরীমণি, না অন্য কিছু ?
পরীমণির পক্ষে প্রতিদিন কেউ না কেউ নিজেকে ঘোষণা করছে। অথচ তার বিরুদ্ধে যে সব চার্জ আনা হয়েছে তা আমাদের সমাজে সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। মানে মদ খাওয়া, ড্রাগস নেয়া , ব্ল্যাকমেইল করা, অনৈতিক সম্পর্ক ইত্যাদি। কিন্তু তাতে তার প্রতি সমর্থকদের আগ্রহে একটুও ভাটা পড়েনি। সে অনেকটা ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। দেশে একজন ফিল্মস্টারকে নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনা আগে দেখা যায়নি।
সে রাজনীতির বাইরের লোক, পাচ্ছে সামাজিক সমর্থন। যারা তার পক্ষে তারা কম বেশি যাদের বলে সুশীল সমাজ, কলিগ এবং তার ফ্যান। পরীমণিকে কেউ ধোয়া তুলসীপাতা ভাবে? তার সুপার -ফ্যান ছাড়া কেউ ভাবে না। অন্যরা জানে তার জীবন যাপন - যা তার নামে বলা হচ্ছে - তার সবই স্বাভাবিক, সবাই করে। তাতে তারা দোষের কিছু মনে করে না। বিষয় হলো, এই দেশের অনেক ক্ষমতাবান, সম্পদশালী মানুষও তাই করে। নেশা করে, নারী ভোগী, এবং আরও বহু কিছু ভোগ করে। তারা দুর্নীতি করে, ব্যাংকের টাকা নিয়ে ফেরত দেয় না, মানুষের টাকা নিয়ে ভেগে যায় ইত্যাদি। অর্থাৎ বড়লোকদের ওপর রাগের ফিরিস্তি বড়। কিন্তু তারা ক্ষমতায় থাকার জন্য কাউকে পরোয়া করে না। এদের এক অংশের সাথে বিবাদ হয় পরীমণির এবং সেটা থেকেই সংঘাতের শুরু। বোট ক্লাবের ঘটনার পর পরীমণিকে অনেকে সমর্থন করে, সেই কারণে এবং সে ভেবেছিল, ‘ধর্ষণের’ অভিযোগ তুলে জিতেছে। কিন্তু না, আসলে সে জিতেনি। যদিও অনেকেই বিশ্বাস করে না যে পরীমণিকে ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছে। তবুও তার পক্ষে ছিল।
বোট ক্লাব ঘটনা আসলে অতীত হয়ে গেছে। কিন্তু ঢাকার বড়লোকদের প্রতি যে ক্ষোভ, সেটা চলছে। আর ‘এস্টাবলিশমেন্ট’ তার বোট ক্লাবের ঘটনায় অপমানিত, তার এফেক্ট চলছে, যা দেখছি আমরা। তাহলে কী হচ্ছে এসব ? গোটা এপিসোড সুশীল ও মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে একটা সুযোগ দিয়েছে ‘বোট ক্লাব’ গোষ্ঠী ও ‘রাতের রাজাদের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার। কিন্তু সাধারণ মানুষ তার সিনেমার ভক্ত হতে পারে, তার জীবন-যাপনের নয়। তাই তারা এতে নেই। মানববন্ধন যারা করছে তারাই শুধু মাঠে, অর্থাৎ মধ্যবিত্ত যাদের ক্ষোভ সবচেয়ে বেশি। তারা পরিমণির বিষয় নিয়ে যতটা ভাবিত, ততটাই বর্তমান ব্যবস্থা নিয়েও। কিন্তু যারা সরব তারা সব সময় সরব হয়। কিন্তু এর বেশি কিছু করতে পারে না। তারা সংখ্যায় বেশি নয়। পরীমণিকে নিয়ে রিমান্ড চর্চা চলছে। যে শক্তির বিরুদ্ধে পরীমণি গেছে তাতে তার পরিণতি এমনটিই হওয়ার কথা। কিন্তু পুলিশের আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। তারা ‘রাতের রানিদের’ পিছনে গেলো ঠিকই। কিন্তু ‘রাতের রাজাদের কিছু না বলে নিজেদের প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
বাড়িতে মদ, ট্যাবলেট পাওয়া, পার্টিতে যা খুশি করা , এটা তো ঢাকায় কমন। ইদানীং কেউ কিছু মনে করে না। রাজা ও রানিদের জীবন একই কিসিমের। আদালত পাড়ায় বার বার রিমান্ড নিয়ে, মানুষের মনে পরীর জন্য ‘আহা বেচারি’ ভাব সব চেয়ে বেশি সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে পুলিশ বিভিন্ন মামলা খারিজ ও নিষ্পত্তি করছে, সেখানে তাকে ভিলেন বানিয়ে কী পাওয়া গেলো ? শেষ কথা পরীমণি ও তার মতো যারা প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিপদে আছে, তাদের সবাইকে সংবাদটা দেয়া হয়ে গেছে যে ‘হুঁশিয়ার-কার গায়ে হাত দাও?’ এবার মিটমাট করে ছেড়ে দিন। কয়েকটায় তো হলো দেখলাম, এটি কেন হবে না ?
লেখক: এডিটর এট লার্জ, ইউএনবি
আরও পড়ুন: মদ, ঘুষ হারাম না হালাল? লাইসেন্স থাকলে চলবে?
পরীমণিকে কি মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড দেয়া হবে?
তালেবান মাস্ক না পরলে কি কিছু এসে যায়
এই দেশের মানুষের কাজ অনেক কম। অনেকের এত সময় আছে যে তালেবান মাস্ক পরে কি পরে না এবং কেন পরে না তা নিয়েও তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিবাদে জড়িয়ে পড়ছে । সোশ্যাল মিডিয়ার প্রসার দিন দিন বাড়ছে, নাকি দেশে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে? সম্ভবত বেকারের সংখ্যাই বাড়ছে। তাই তালেবান ও মাস্ক নিয়ে চলছে বাহাস।
এই তালেবান কি সেই জঙ্গি তালেবান
পুরোনো তালেবান নিয়ে কিছু হালকা স্মৃতি আছে সবার। তারা পাহাড় থেকে নামা বর্বর, নারী বিদ্বেষী। তারা পৃথিবীর নানা দেশে তালেবানি রপ্তানি করতে চাইতো। তাদের আমেরিকানরা পিটিয়ে বের করে দিয়েছে। বিষয় হলো, এবার কোনো মারামারি হয়নি। আমেরিকানরা ও তাদের বসানো সরকার নিজেরাই চলে গেছে। কোনো যুদ্ধই হলো না!
তফাৎ কেন হলো
আসল কথা মার্কিনিরা থাকতে চায় না, আর আফগান সেনারা লড়তে চায় না। অতএব তালেবানরা লড়বে কাদের সাথে। শত্রুর অভাবে এত আরামে তারা দেশ দখল করলো! দুই একটা খুচরো ঝামেলা বাদ দিলে ভয় ও দুর্ভাবনা বেশি ছিল। তবে খুনোখুনি অনেক কম হয়েছে গতবারের তুলনায়। এটা কেন? প্রতিরোধের অভাব,নাকি প্রতিপক্ষ ছিল না?
তালেবান কী বলে এখন
তালেবানরা সহজ সরলভাবে বলতে গেলে সেই সব কথাই বলছে, যাতে আগের তালেবান আর এখনকার তালেবানদের মধ্যে তফাৎটা ধরা যায়। তারা বলছে: কারো ওপর প্রতিশোধ নেবে না, নারীদের অধিকার দেবে, নারীরা কাজ করতে ও পড়তে পারবে, তবে তাদের হিজাব পরতে হবে ইরানিদের মতো, সংখ্যালঘুদের অধিকার দেবে, বিদেশিদের সম্মান করবে ইত্যাদি। তবে ততটাই করবে যতটা ‘ইসলাম’ অনুমতি দেয়। সেটা কতটা আমরা জানি না। আগামী দিনগুলিই কেবল বলতে পারবে কী হবে? তবে এটা ঠিক, ২০ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকার পর তারা আরেক দফা ক্ষমতা হারাতে চাইবে না। বাড়াবাড়ি করলে যে বিপদ হতে পারে এটা তারা জানে, তাই সতর্ক।
কে তাদের সহায়
এটাই আসল কথা। এককালের শত্রু এবং এখনকার মিত্র চীন ও রাশিয়ার খেলা এটা। তারা সাত বছর ধরে পরিকল্পনা করেছে কীভাবে এদেরকে দিয়ে মার্কিনীদের হটানো যায় এবং সেই দিক থেকে তারা সফল। রাশিয়াও চায় না, উভয় দেশেই মুসলমান জঙ্গি আছে, অতএব জঙ্গিবাদ দমানোতে তাদের স্বার্থ আছে। এই অঞ্চলের রাজনীতিকে সুস্থির করতে চায় তারা, যাদের আগের তালেবান উস্কে দিয়েছিল। এবার সই করা চুক্তি আছে। কিছু করবে না। তার চেয়ে বেশি ভয় যে ফাজলামো করলে রাশিয়া ও চীনের সাথে এক সাথে যুদ্ধ করতে হবে। আর সেটা করার ক্ষমতা তালেবান কেন, এই অঞ্চলের কেন, পৃথিবীর কোন দেশই রাখে না। এটাই মূল কথা।
তাহলে ?
রাশিয়া আর চীন চাইবে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতি। দেশের ভেতরে কী হচ্ছে সেটার দিকে নজর থাকবে, কিন্তু বেশি না। যদি তালেবান কিছু করে তাহলে বিপদ তাদের। আর অর্থনৈতিক উন্নতি হলে তালেবানেরই বেশি লাভ।
তাই ‘অধিকারের’ বিষয়টা বড় হবে না। হবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়- এই সব। মার্কিনিদের অধীনে গত দুই দশকে নারী সমাজ অনেক বেশি দৃশ্যমান। কিন্তু কোনো খাতেই লক্ষ্য-কোটি ডলার খরচের পরও তেমন কিছু উন্নতি হয়নি। এটা মার্কিন সরকারেরই হিসাব। উন্নয়ন প্রকল্পে অপচয়, চুরি, অদক্ষতা সবই হয়েছে, যে কারণে এই হাল।
রাশিয়া-চীন আসলে কী চায়
রাশিয়া-চীন জানে যে মার্কিনিরা কিছুটা দুর্বল। তাই তাদের টপকে নিজেদের ‘বিশ্বের হুজুর’ বানাতে চায়। তাই খেলাটা ক্ষমতার, বিষয়টা অর্থনীতির, উদ্দেশ্য ওপরে উঠার। পৃথিবী জুড়ে ‘অধিকার ভিত্তিক’ যে প্রশাসন ব্যবস্থা, যেটা নিয়ে মার্কিনিরা আর এনজিওরা কথা বলে, সেটা ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে। এখন যে করেই হোক অর্থিনীতিতে ওপরে ওঠার প্রতিযোগিতা, রাজনীতির দুনিয়া অনেকটা ক্ষীয়মান। অতএব কে মাস্ক পরলো, আর না পরলো তাতে কিছু আসবে যাবে না, যদি না তাতে অর্থনীতির ক্ষতি হয়।
আফসান চৌধুরী: এডিটর এট লার্জ, ইউএনবি
মুর্তজা বশীর ভাই, কেমন আছেন আজকাল?
অমন ছোটখাটো বিরাট মানুষ এদেশে কম এসেছে। যারা তাকে জানতেন, চিনতেন তারা বলতে পারবেন, মানুষের মনের দরিয়া কত বড় হতে পারে। কিছু মানুষ থাকে যাদের মনে যেমন আকাশ, ভাবনায় যেমন আকাশ, তেমনি ঠিকানাটাও সেথায়I বছর খানেক হলো নেই, বৃদ্ধ বয়সে কষ্ট পেয়ে গেলেন কিন্তু উনারা বোধহয় বিদায় নেন না। সারাক্ষণ মনের দরজায় করা নাড়ে।
২. আমি কাগজের মানুষ তাই হেথায় সেথায় দেখা হতো তার সাথে। কিন্তু তার মন ও ভাবনার সাথে প্রথম দেখা তার গল্প গ্রন্থ, ‘কাঁচের পাখির গান’ এর মাধ্যমেI যারা বইটা পড়েছেন তারা জানবেন কি অসাধারণ সেই ছোট গল্পগুলি।
শিরোনামের গল্পটাই যেমন, কথক এক রাতের জন্য কোনো নারীর সঙ্গ কিনেছে। কিন্তু ঘরের প্রস্তুতি নিচ্ছে যেন নববধূ আসছে। মেয়েটি এক সময় হাতের চুড়িগুলা বিছানায় খুলে রেখে ঘুমিয়ে পড়ে। কথক সেগুলাকেই স্বপ্নে দেখতে পায়। চুড়িগুলা কাঁচের পাখি হয়ে আকাশে গান গাইছে।
এই সম্পর্ককে এতো প্রেম ও পবিত্র ভাবে দেখানোর মুন্সিয়ানা তার ছিল। ষাট এর দশকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গল্পকার তিনি, তবে সেইভাবে তাকে চিনি না , চিত্রশিল্পী বলেই জানি। কত বহুমাত্রিক তিনি সেটা তার গল্প আর ছবি না মিলিয়ে দেখলে পুরোটা বোঝা যাবে না।
৩. ৮০’র দশকের মাঝামাঝি একবার দেখা সাপ্তাহিক হলিডে অফিসে। সম্পাদক এনায়েতুল্লাহ খান (মিন্টু ভাই) সবার প্রিয় মানুষ তাই অনেকে আসেন। তবে বিচিত্র অফিসে যেমন সবাই যায়, সংসারী আর সংসার বিবাগী যেই হোক-হলিডে অফিসে একটু প্রতিষ্ঠিতদের বেশি ভিড়।
বশির ভাই বললেন, ‘আফসান, অন্য রকম ছবি আঁকছিI রেহালের আর কোরানের ছবি। খুব ভাল লাগছে।’ আড্ডা, আলাপ..., এমন সহজ সরল মানুষকে ভয় লাগে। যদি না বুঝে সারল্যের সুযোগ নেয়া হয়ে যায়।
ওই ছবিগুলার ওপর একটা লেখা লিখেছিলাম। শিরোনাম ‘New Directions Home’ । অনেকে পছন্দ করেI বার বার তিনি স্মরণ করিয়ে দিতেন আমাকে সবাইকে, ওই লেখাটার কথা। চাটগাঁ গেলে দেখা হতো, কিন্তু আমি বড় ব্যস্ত মানুষ, যোগাযোগ প্রায় রাখা হয়নি। খবর পেতাম ভালো আছেন।
৪. ২০১০ সালে আমি কানাডা থেকে ফিরে bdnews24.com এ যোগদান করি। সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী খুব দাওয়াতী মানুষ। অফিসে নিয়মিত আয়োজন হতো, বশির ভাই আসতেন, আড্ডা হতো। ওইসব গল্প যা ঘনিষ্ঠজনদের মাঝে হয়। তিনি আমার সিনিয়ার, আমরা এক সাথে কোনো শিল্প সাহিত্যের আন্দোলন করিনি, তাকে চিনেছি, তার সাহিত্য আর শিল্পের অনুরাগী হিসেবে। বড় কথা একজন সজ্জনতম মানুষ হিসেবে। সেই কারণেই বোধহয় তিনি ছিলেন সবার ঘনিষ্ঠ।
তিনি যে তার সকল পরিচয়ের ওপরে গিয়ে একজন প্রিয় মানুষ, এটাই বোধহয় মুর্তজা বশির ভাইয়ের শ্রেষ্ঠ পরিচয়।
ভালো থাকবেন, বশির ভাই, একদিন ওপরে তাকিয়ে আকাশে খুঁজে নেব এক আশ্চর্য কাঁচের ঈগল ডাকছে, বাংলাদেশের আকাশে উড়ছে।
লেখক: এডিটর এট লার্জ, ইউএনবি
আমার আফগান স্টুডেন্টরা ও ১৯৭১ : ব্যক্তিগত অনুভূতি
আমি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির একটি শাখায় ‘গবেষণা পদ্ধতি’র ওপর ক্লাস নিই। এতে বিভিন্ন দেশের স্টুডেন্ট আছে। তার মধ্যে আছে আফগানীরা। এক মাস ধরে মার্কিনিদের চলে যাওয়া নিয়ে চারদিকে অনিশ্চিয়তা বিরাজ করছিল। আমার স্টুডেন্টরা মিড্ টার্ম পরীক্ষা দিয়েছে সবাই, রেজাল্ট ভালো। কিন্তু আমার মনে ছিল বড় রকম দুশ্চিন্তা। ওদের কি হবে ? যুদ্ধ ঘরে আসলে ওরা কি করবে?
যা ঘটলো তালিবানদের হাতে
তালিবানরা দ্রুতভাবে এগুতে লাগলো দেখে সবাই অবাক। মার্কিনিরা নাকি ভেবেছিল ছয় মাস লাগবে ওদের কাবুল পৌঁছাতে। কিন্তু ওরা লাগালো মাত্র ১৫ দিন। মার্কিনিরা যে কত বাস্তব জ্ঞানহীন এটা তারই পরিচয়। যেখানেই যায় এটা ঘটে। ভিয়েতনাম ছেড়েছে এই ভাবে, আফগানিস্তানও ছাড়লো একই ভাবে নিজেদের মানুষদের পুরা বিপদের মধ্যে ফেলে।
একটি অন্তর্বতীকালীন সরকার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই খেলা শেষ। প্রেসিডেন্ট গনি প্লেনে চড়ে পালিয়ে গেলো আর তালেবান কাবুল দখল করে ফেললো।
তোমাদের খবর কি ?
যে আমার ক্লাস সহায়ক এবং স্টুডেন্টদের সাথে যোগাযোগ রাখে তাকে বলেছি। সে আফগান স্টুডেন্টদের কয়েকটা মেসেজ পাঠানোর পর উত্তর আসলো। ‘আমরা ভালো আছি। কি হচ্ছে, কি হবে জানি না। চারদিকে অনিশ্চয়তা। তালিবানরা একের পর এক শহর দখল করছে। কাবুলের অনেক কাছে তারা। সবাইকে শুভেচ্ছা।’
এই কথায় নিশ্চিত হওয়ার মতো কিছু ছিল না। মেয়েটা আমাকেই আস্বস্ত করতে চাইছে মনে হলো। আমার ক্লাস সহায়ক একটা পোস্ট দিলো ফেসবুকে। লিখেছে, ‘কত দূরের যুদ্ধ, কত সহজে কাছে এসে যায়। আমার সহপাঠীদের জন্য খুব উদ্বিগ্ন। এখন সারাদিন সোশ্যাল মিডিয়া দেখি, কোনো খবর আছে কিনা।’
যেদিন তালিবানরা কাবুল দখল করলো সেদিন আর একজনের মেসেজে এলো। লিখছে , ‘কি হবে জানি না। অনেকে পালাতে শুরু করেছে। পাশের দেশে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করছে অনেকে। আমার পরিবার নিয়ে আমি বেশি চিন্তিত। কারণ আমরা সংখ্যালঘু। আমাদের কি হবে কে জানে! চারদিকে কি ঘটছে জানি না, বুঝি না।’
যুদ্ধের না বলা খবরগুলো হারিয়ে যায়
সেই দোমড়ানো মনটা নিয়ে আছি। কারণ আমি জানিনা ওদের কি অবস্থা। ওরা কষ্ট করে এই দেশে পড়তে এসেছিল, তারপর করোনার কারণে ফেরত যেতে হয়। আর এখন জীবনটাই বন্ধ। আমার মতো মানুষের জন্য আরও বেশি কষ্টের কারণ ওরা আমার শিক্ষার্থী, শিক্ষকের কাছে আপন সন্তানের মতো। আমি বুকের ভেতরে কষ্টটা টের পাই সারাক্ষণ। অথচ এতো অসহায় লাগে নিজেকে। কিছুই করতে পারবো না, পারছি না।
১৯৭১ সালের একটা ঘটনা। ১৪ ডিসেম্বর আল- বদর এসে স্বামীকে তুলে নিয়ে যায়। যাওয়ার আগে ছেলেটাকে কোলে নিয়ে আদর করে তাদের ছেড়ে তিনি চলে যান। কেন নিচ্ছে কেউ বোঝেনি, এখনো জানে না। ১৬ তারিখে সবাই আনন্দ করে। তখন পরিবারের লোকজন জানে না তার কি হাল। ভেবেছে যুদ্ধে জিতেছে, নিশ্চয় ফিরে আসবে। লাশ আর কোনোদিন পাওয়া যায়নি।
যুদ্ধের বিজয় আছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের কষ্টের কথা কেউ বলে না।
লেখক: এডিটর এট লার্জ, ইউএনবি
সম্রাট কেন জেলে? পাঁচ তারা জেল চাই!
মিডিয়া বলছে সম্রাট পিজিতে ছিল ২৪৪ দিন। পিজি কর্তৃপক্ষ বলছে ১৫ দিন। মিডিয়ার সূত্র জেল কর্তৃপক্ষ। পাবলিক মনে করছে এটা অংকের সমস্যা, সিস্টেমের নয়। ক্যাসিনো ঝামেলায় ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর গ্রেপ্তার হন ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট।
ব্যাপার কি?
এই প্রসঙ্গে ‘আমাদের পত্রিকা’ বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে মতামত নেয়।
সকল বিষয় সজ্ঞ বিশ্ষেজ্ঞকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘এতো চিন্তিত হবার কিছু নেই। তিনি খুবই নিরীহ প্রকৃতির ভালো মানুষ এবং দেশে অনেক বড় বড় রাজনৈতিক কাজ করেছেন। তিনি আসলে একটু রেস্টে ছিলেন, সম্ভবত বাসাতেই ছিলেন। আমার সাথে ফোনে কথা হয় তবে ঠিকানা দেননি কারণ আমি ধরে নিয়েছি তিনি জেলেই আছেন বা পিজিতে বা বাসা। তবে মিডিয়ার সব দোষ। ধন্যবাদ।’
বিদেশে থাকা এক পন্ডিত যিনি দেশের বিষয় গবেষণা করেছেন তিনি বলেন, ‘এই বিষয়টার উত্তর জানা যাবে এডওয়ার্ড সাঈদের লেখায়, দেরিদার ভাবনায়। আমাদের বুঝতে হবে যে পশ্চিমা উদার পুঁজিবাদী সমাজের আদলে জেল ব্যবস্থা চলবে না। নতুন করে ফাঁনো ও ফুকোর আদলে জেল ব্যবস্থা দরকার।’
জনৈক রাজনীতিবিদকে জিজ্ঞাসা করা হলে জানান, তিনি কোনোদিনই তাকে ‘সম্রাট’ ডাকবেন না। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি সবার জন্য। আমরা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই। সম্রাট এই দেশের রাজতন্ত্রপন্থী নাম। এই ধরণের নাম যেমন, সম্রাট, রাজা, বাদশা ইত্যাদি সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।’
নারীবাদী কর্মী সুলতানাকে জিজ্ঞাসা করা হয়। তিনি এটাকে পুরুষতন্ত্রের একটি প্রকাশ বলে জানান। তার কথা হচ্ছে, ‘আমরা দেখলাম সকল আসামি পুরুষ এবং তাদের সবার বিভিন্ন হেলথ প্রব্লেম হচ্ছে। তারা পিজিতে যাচ্ছে এবং থাকছে অথচ আমরা কেউ শুনছি না নারী জেলবাসীদের কি হচ্ছে। তাদের অনেকেরই হৃৎপিণ্ড পুরুষতন্ত্রের নির্যাতনে ক্ষতিগ্রস্ত কিন্তু কই তারা তো পিজিতে নেই? আমরা সরকারের কাছে দাবি করছি এর সমাধানের জন্য এবং যদি না হয় আমরা দেশের বিভিন্ন জেলের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি নেব।
কয়েদির কথা
করম আলী মিয়া একজন পেশাদার বাটপার। তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে ঢাকা জেলে ছিলেন কয়েদি হিসেবে। তার বক্তব্য হচ্ছে, জেল বলে কিছু নাই, সবই মায়া। এটি একটি জানালার মতো। কখনো খোলা কখনো বন্ধ। প্রয়োজনে জেলের দরজা খুলবে, কিন্তু খরচ করতে হবে। ‘কোথাও কি লেখা আছে যে সব সময় জেলে থাকতে হবে? আমি জেলে যেতাম মাসে একবার, কয়েকদিন থেকে আমার বাড়িতে আসতাম। ব্যবসা বাণিজ্য ভালোই চলতো, একাধিক বিয়ে করেছি, বহু সন্তান আমার, এটা কি করে সম্ভব হলো। আসলে জেল একটি মনের ব্যাপার, ভাবলে আছে, ভাবলে নেই।’
সবার সাথে আলাপ করে বোঝা গেলো এই জেল ব্যবস্থা ব্রিটিশদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত কিন্তু সেই কাল আর নেই। তাই জেল ব্যবস্থার সংস্কার চাই। আমাদের সাপ্তাহিক ও মাসিক জেলের সিস্টেম বানাতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ লোকদের দীর্ঘ দিন ভেতরে রাখা ঠিক হবে না। এতে দেশের ক্ষতি। তাছাড়া জেলে এসি, ফ্রিজ কিছুই নেই, এইভাবে জেল চলতে পারে না। পিজি আর কত লোড নেবে। আমরা আশা করবো যাতে সরকার পাঁচ তারা জেলের ব্যবস্থা করেন যাতে সবাই জেলে যেতে আগ্রহী হয়!
(লেখাটা কাল্পনিক)
লেখক: এডিটর এট লার্জ, ইউএনবি
মদ, ঘুষ হারাম না হালাল? লাইসেন্স থাকলে চলবে?
মদ, জুয়া, ইয়াবা, আইস, গাঞ্জা সবই হারাম। কিন্তু বিষয় হইলো আমাদের দেশে এগুলা খোরের সংখ্যা এতো বেশি যে গুইনা কূল করা যাইবো না। নেশাখোর কত এই দেশে? সরকার আম কাঁঠালের ফলনের হিসেব ভালো রাখে, কিন্তু নেশার খবর কম রাখে।
তবে এই দেশে বুড়া, পোলাপান অনেকেই এগুলা খায়। আমরা যারা ১৯৭১ এ তরুণ হিসেবে পার করছি তারা দেখছি, যুদ্ধের পর অনেক মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধের স্মৃতি ভুলতে নেশা করতো। তাদের মনোরোগ ছিল। চিকিৎসা ছিল না তাই আশ্রয় চাইছে নেশার ঘরে। এখন আমাদের বয়সীরা সব ভুইলা যায়, এমনকি যুদ্ধ হইছিল সেইটাও।
যোদ্ধার নেশা?
আমাদের এক বন্ধু ছিল, অসাধারণ যোদ্ধা। জানুয়ারি মাসে ঢাকা, তারপর ইউনিভার্সিটি, চা, আড্ডা, নেশা এবং প্রেম। সবগুলাই সামলানো যেত, কিন্তু শেষটা বড় দাহ করে। যেই মেয়ে তার সাথে কদিন ঘোরাঘুরি করতো, কয়দিন পর তাকে ছেড়ে যেতো। সে ছিল নেশাখোর, আড্ডাবাজ, বেকার।এমনকি তার গায়ে তখন যোদ্ধার গ্লামারটাও লাগে নাই। আমার বোন এমন করলেও আমি খুশি হতাম।
তারপর আমার বন্ধুর নেশার মাত্রা বাড়তেই লাগলো, জীবনের লাগাম ঢিলে হতে থাকলো। ১০ বছর পর কেবল নেশাখোর পরিচয় ছাড়া তার আর কিছুই রইলো না। বাবার অবস্থা ভালো ছিল তাই ভাড়া তুলে জীবন কাটালো। বিয়ে, বাচ্চা কাচ্চা সবই হলো। কিন্তু নেশা ছাড়লো না। পরে ট্যাবলেটের বদলে মদ খেত।
এই লোক কি হারামখোর ছিল ? সে তো যুদ্ধেও গেছে, জান দিতে গেছে, কারো কোনো ক্ষতি করেনি। সে খারাপ না ভালো লোক? সে কি হারাম খায় ? তার এক বিন্দু রুজিও হারাম নয়। অতএব .. সে কি খারাপ না ভালো ?
যে মানুষটা সারা দিন রিকশা টানে আর রাতে এক পুড়িয়া গাঞ্জা টানে আর যে লোক কোটি টাকার বিজনেস করে লাখ টাকার মদ খায় তারা কি সমান পাপের বাক্স হাতে দাঁড়ানো ?
মদ আর চুরি?
প্রতিদিন মদ উদ্ধারের খবর পাই মিডিয়া থেকে। যাদের বাসা থেকে এইসব পাওয়া যায় তাদের অবশ্যই খারাপ ভাবা হচ্ছে। কিন্তু এই শহরে কত স্থানে খুব হালাল পরিবেশে মদ পাওয়া যায়, তার হিসেব কি আছে? কতগুলো বার আছে ঢাকায়? গত ১০ বছরে খুব কম বড়োলোক পেয়েছি যে মদ খায় না। তবে কিনা তাদের লাইসেন্স আছে -মানে হালাল? মদ কই খেলো সেটা তাহলে আসল কথা, কাগজ থাকলে হালাল ?
কিন্তু যে পরিমাণ দুর্নীতি, ঘুষ কেলেঙ্কারি, চুরি হয় এবং এসব নিয়ে মিডিয়াতে ফলাও করে প্রতিবেদনও ছাপা হয়, তার পিছনে আমরা তো পড়ে নেই? দুর্নীতি নিয়ে কথা বলবো না। কিন্তু কতবার মানুষ ভাবে ঢাকার এতো বিলাসী জীবন হারামের না হালাল টাকায় চলে? এখন কি ঘুষ খাওয়ার লাইসেন্স দেয়া হবে?
আসলে আমরা দুর্নীতিকে হারাম মনে করি না। আমরা বেশির ভাগ হাইল্লা মানুষ, গ্রামের কালচার মানি। মক্তবে মৌলভী সাহেব বলেছেন, মদ খাওয়া হারাম, তা নিয়েই চলছি। ঘুষ খাওয়ার কথা নিয়ে তো উনি তেমন কিছু বলেননি। গ্রামের মানুষকে গ্রামে শান্তিতে থাকতে দিন।
লেখক: এডিটর এট লার্জ, ইউএনবি
মুরুব্বি, এইটারে কিরকিট খেলা কয়?
বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ানগো যা দিলো হেইটারে হার/পরাজয়, বিজয়, এই সব সুট বুট মার্কা কথায় বোজান যাইবো না। এইটা হইলো গিয়া প্যাদানি। মানে আচ্ছা কইরা, কইসা পিসনে হাত বাইন্দা এক হাত, দুই হাত, পাঁচ হাত দিয়া মহল্লা স্টাইলে মাইর।
এই রকম মাইর অসি বাবুরা আগে কোনোদিন নাকি খায় নাই। টি-২০ খেলায় হেগো এদ্দিনের সব চাইতে কম স্কোর। মানে আমাগো স্কুলের সব চাইতে বড় মাস্তানের পয়সা খাইয়া বেরাইম্মা পোলা সাইজা স্কুলে অংকে চুরি কইরা যা পাইসিল, তার চাইতে কম। এর নিচে অসি ক্রিকেট নামে নাই বলা যায়। ওদের লাইগা একটু কানতাম, কিন্তু মনটা আইসা আচ্ছা লাগতাসে যে পারলাম না।
ভাইয়া আবার আইসেন, এইবার তো রাস্তা চিনসেন, বুড়িগঙ্গার পানি এবার ড্রামে কইরা আপনাগো লাইগা রাইখা দিমু। দেখলেন তো, কত জলে কত পানি। আসল কথা টাইমটা আর পিচটা আমাগো আসিল। আপ্নেরা রঙ টাইমে আইসিলেন ফল পাড়তে। মানে যারে কয়, ধরা খাইসেন আর কি। মজা না?
বাংলাদেশ কি দেখাইলো?
ব্যাটিং তেমন কিসু করে নাই, খালি পরথমে এট্টুক পিটায় রাখসে যাতে রাতে খাবার শর্ট না পড়ে। ঠিকই একটু কমতি কমতি হইসে কিন্তু আগার-মাগার কইরা ১২১ হইসে। এই মাঠে এইটাই কেউ পারে না, কিন্তু বুঝেনি তো সব, মহল্লার মানুষ, সাকিবরে আবার যদি কতল কইরা দেয়। কিন্তু প্রথম উইকেট পরসে জলদি, তবে হেগো কাপ্তান নিজেই চালু আসিল এবং ছক্কাও মারসে। তবে সাকিব মিয়ার ছক্কা পার্টিরে ডাইকা আনা হইসিল উপরে, কিন্তু হে ভাবসে আবার মাঘ মাস আইসে। অমনি ধরা, গেসে গা প্রথম ওভারেই।
হেদের কি বাথরুম প্রব্লেম হইসিল
ধরেন গিয়া ৪ উইকেট ত্বক কইতে পারেন কিরিকেট খেলসে, কিন্তু তারপর যা হইসে সেইটা মনে হয় বুড়া মানুষ বহুতখন বাইরে থাকার পর যহন হিসু ধরে, আর হে বাসায় দৌঁড়াইতে দৌঁড়াইতে ফিরা ওয়াশরুম খোঁজে, অনেকটা সেই রকম আর কি!
অথবা মানে যদি আমগো ওয়াসার কলের পানি খাইলেন না ফুটাইয়া, কয়েকবার আর কি। তহন টয়লেট রে 'যান আমার প্রাণ আমার’ কইয়া খালি দেহা করতে যান, সেই রকম আর কি। আশা যাওয়ার মধ্যে থাকা কওয়া যায়। জন্মের আগেই হগলটি আউট।
আবার আইসেন, কিমুন?
এইটা কোনও কথা হইলো। আমগো বাড়ির জামাই বাবাজি ঘুম থিকা উইঠা টিভি খুইলা দেহে সব ফক ফকা। খোমা হেভি বেজার। কয় এইডা কিমুন বাড়ি, কিরিকেট দেহন যায় না।
কি আর করুম কন, কি আর বলুম। সবই আল্লা'র ইস্সা।
তয় কিনা দাওয়াত রইলো আব্বাজানেরা। আবার আইসেন। পকেটে ফুইসা কম থাকলে খবর দিয়েন, চাঁদা তুইলা টিকেটের দাম পাঠামু, আঃ-বাহ্ ফ্রি, খালি এইবারের মতো ঠুশ মাইরা খেইলেন। হাগু মুতু নো চিন্তা, ডু ফুর্তি।