���������������
পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ
অফিসিয়াল ব্যবস্থাপনায় একবার চীন দেশ ভ্রমনের সুযোগ হয়েছিল। চীনারা বিদেশি ছাত্র অফিসার বলে আমাদের অনেক যত্ন আত্তি করেছে। বিদেশি ৯ জন ছাত্রের জন্য প্রচুর প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রশংসনীয়। একজন স্যার দোভাষী, সিনিয়র প্রশিক্ষক, একটি এয়ারকন্ডিসন মাইক্রোবাস, উইন্ডশিল্ড এ 'ফরেনার সাটানো' ভিআইপি গাড়িটি সর্বদা পুলিশ প্রহরায় চলাচল করতো। খাবার দাবারের কমতি নেই।
আমাদের নিরাপত্তার প্রতি ওরা খুবই সতর্ক। কোথাও একা যেতে দিত না। নারীদের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখা ছিল বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এসব কড়াকড়ির মাঝেও ফাঁক বুঝে বাইরে যাওয়া যেতো। কিন্তু সমস্যা হলো ভাষার। চীনা ভাষা না জানলে এক চুলও নড়ার সাধ্য নেই। আমাদের অবসর কাটে টিভি দেখে (যত্তসব গাজাখুরি আজগুবি কল্প কাহিনী)।
কলেজ ক্যাম্পাসে বিশাল এক লাইব্রেরি আছে। সময় কাটানোর একটা ভালো জায়গা। কিছু ইংরেজি ও ফরাসি ভাষার বই ছাড়া বাকি চীনা বই।
একদিন একটা বই পেলাম আধুনিক চীনের সংস্কারবাদী নেতা দেং শিয়াও পিংয়ের জীবনীর উপর। চীনের রাজনীতি ও লং মার্চে তার বিশেষ ভূমিকা ছিল। তিনি চীনকে বহির্বিশ্বে পরিচিত করেছিলেন এই সংস্কারের মাধ্যমে। এক সন্তান নীতি, শিল্পায়ন, ব্যবসা বাণিজ্যে ব্যক্তি মালিকানার স্বীকৃতি, উৎপাদন ও পুঁজি সৃষ্টিতে সংস্কার সমূহ বিশেষ ভূমিকা রাখে।
আগ্রহ ভরে বইটা নিলাম। ধরে নিয়েছিলাম রাজনীতিবিদ ও কাস্তে হাতে বিপ্লব করা লোকটা এমন আর কিইবা জানে। আফসান চৌধুরীর ভাষার হাইলা হবে হয়তো। দেখলাম এই নেতা ধনী কৃষকের ছেলে যিনি ফ্রান্সে লেখা পড়া করেছেন। চীনা রাজনীতিতে সকল স্তরে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বার বার গ্রেপ্তোর ও নির্যাতন তাকে নীতি থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। স্বয়ং মাওয়ের সাথে নীতিগত বিরোধিতা করে পদ হারিয়েছিলেন। জেলে বন্দী ছিলেন। সামরিক শক্তি বাড়িয়ে যুদ্ধ জয়ের পরিবর্তে তিনি অর্থনৈতিক বিনিয়োগে যুদ্ধ জয়ে বিশ্বাসী ছিলেন। তার ভাষায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এলে সামরিক উৎকর্ষতা নিশ্চিত বাড়বে ও যুদ্ধ জয় সহজ হবে।
দেংয়ের এই থিওরি ঠিক কিংবা বেঠিক সে বিতর্কে এ স্বল্প পরিসরে যেতে চাইনা। তাছাড়া তার মৃত্যুর পর তার অনুসারী চীনা কর্ণধারগণ সঠিক নির্দেশনায় আছেন কি না তাও দেখার বিষয়। চীন যে একটা অর্থনৈতিক শক্তি সন্দেহ নেই। তবে সামরিক বা রাজনৈতিক সক্ষমতায় চীন কি বিশ্ব শক্তি না রিজিওনাল শক্তি। চীনের একলা চলো নীতি আর নেই কিন্তু বন্ধুদের সংখ্যা লেনদেনের উপর নির্ভরশীল। তাই সাপের মাথার মনির লোভে কেউ কাছে এগোতে দ্বিধান্বিত। বর্তমান সময়ের চীনা রাজনৈতিক বিশ্লেষণ অনেক জটিল ও দীর্ঘ। কড়া নজদারি চলছে চীনা সম্ভাব্য বন্ধুদের প্রতি।
ইভ্যালি কাণ্ড: ভদ্রজনের কি কোন দায় নেই
ইভ্যালির দুরাবস্থা ও এই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটির মালিক দম্পতির গ্রেপ্তার-পরবর্তী লেখালেখি ও তর্ক-বিতর্কে দেশে এখন এক প্লাবন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। লিখব কি লিখব না ভাবতেই বেশ কয়টা দিন খরচ হয়ে গেল। এখন ‘দুর্বৃত্ত’ এই পতন প্রায় কোম্পানিটি নিয়ে লিখতে গিয়ে আমার মাথায় ভিড় করেছে বাংলার অনেক প্রবাদবাক্য ও ছোটবেলায় আদর্শলিপিতে পড়া বেশ কিছু উপদেশ বাণী। এগুলো হলো, ‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু; ভাবিয়া করিও কাজ , করিয়া ভাবিও না; চোর পালালে, বুদ্ধি বাড়ে ও বগা ফান্দে পড়িয়া কান্দে।’
ডেঙ্গু বান্ধব অসহায় ঢাকা!
দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্মার্ট আর ব্যস্ত নগরী ঢাকা। হওয়াটাই স্বাভাবিক। মোঘল, ব্রিটিশ সব আমলেই ‘ঢাকা’ নগর হিসেবে শাসকদের কাছ থেকে গুরুত্ব আদায় করেছে।
মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর ঢাকাকে সুবা বাংলার রাজধানী করেন। মোঘল পরবর্তী যুগে প্রায় ১৯০ বছর ঢাকা গুরুত্ব নিয়েই ব্রিটিশ শাসনাধীন থাকে। এরপর ১৯৪৭ সালে ঢাকা পূর্ববঙ্গের রাজধানীতে উন্নীত হয়। ১৯৫৬ সালে ঢাকা পূর্ব পকিস্তানের রাজধানীর মর্যাদায় আসীন হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের রাজধানী।
এতক্ষণ ঢাক ঢোল বাজিয়ে ঢাকার গুরুত্বের গুণকীর্তন করা হলো। অথচ সেই ঢাকাকেই আবার অসহায় নগরী বলা কেমন বিসদৃশ। তাই নয় কি? তাহলে এ কোন অসহায়ত্ব! আসুন, তাহলে আজকের আধুনিক ঢাকার দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক।
গ্রীষ্মকালের ঢাকা এখন পর্যাপ্ত গাছগাছালির অভাবে রুক্ষ। বর্ষাকালের ঢাকা এখন ঘণ্টাখানেক সময়ের বৃষ্টিতে নিষ্কাশনের অব্যবস্থায় পানির নিচে হাবুডুবু খায়। অপ্রতুল, অপরিকল্পিত, দুর্বল ট্রাফিক ব্যাবস্থার কারণে ব্যস্ত সময়গুলোতে যানজটে অসহায় ঢাকা অচল শহরে পরিণত হয়। নাগরিক ভোগান্তির শেষ থাকে না। এতসব সমস্যার আবর্তে বেষ্টিত একটা শহরের অসহায়ত্ব কি আর বিশ্লেষণের অপেক্ষা রাখে?
করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গুও এখন মূর্তিমতি আতংক হয়ে জনজীবনে আবির্ভূত। দু’পক্ষ যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছে। করোনার বহু আগে থেকেই ডেঙ্গু নিয়ম করে প্রতিবছর একই সময়ে দেশজুড়ে হামলে পড়ে। এরই মাঝে ঢাকা যেন ডেঙ্গুর অন্যতম পছন্দের শহরে পরিণত হয়েছে। দেশের ডেঙ্গু আক্রান্ত দুই তৃতীয়াংশেরও বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে ঢাকায়!
ঢাকা আমাদের দেশের রাজধানী, যার আভিধানিক অর্থ রাজার বাড়ি। রাজধানী মানেই দেশের হেড অফিস। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের হেড অফিস থাকে জাকজমকপূর্ণ ঝকঝকে চকচকে নয়নাভিরাম। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে রাজধানী ঢাকা বাংলাদেশের হেড অফিস। অথচ আমাদের সেই রাজধানী বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় নোংরা শহরের অন্যতম। বসবাসের অযোগ্যতার বিচারে বিশ্বের চতুর্থতম স্থানের অধিকারী!
আরও পড়ুন: ঢাকার নদী দখল রোধে ২০ বছর মেয়াদী মহাপরিকল্পনা
আফগানিস্তান: বিপদে শিশুরা, বিবাদে তালেবান আর অথর্ব জাতিসংঘ
আফগানিস্তানের অবস্থা সকল দিক থেকে খারাপ। পশ্চিমা দুনিয়া আর তাদের সমর্থকরা মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলনা বিতাড়নের জন্য, তাই অর্থনৈতিক চাপ দিচ্ছে শেষ শক্তি হিসেবে। সবকিছু ফেলে রেখে মার্কিনিরা পালিয়েছে কিন্তু তাদের কর্মের বোঝাটা পড়েছে আফগান শিশুদের ওপর। জাতিসংঘ বলছে ১০ লাখ শিশু মৃত্যু ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, বাকিরা সবাই মহাবিপদে, অতএব পরিস্থিতি নাজুক। তবে শিশুদের বাঁচানো বিশ্ব শক্তির প্রধান ভাবনা নয় এই মুহূর্তে তাও হতে পারে। নারীর অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে এই যুক্তিতে আফগানদের মার্কিন ব্যাংকে আটকা ৯ বিলিয়ন টাকার মতো, বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ সেটাই বলছে। কিন্তু এসবই এখন রাজনৈতিক অস্ত্র।
২. জাতিসংঘ সবার কাছে টাকার জন্য ডাক দিয়েছে, কিন্তু তাদের সাহস নেই মার্কিনিদের আফগান টাকা ছাড়তে বলার। এই মুহূর্তে মার্কিনিরা খুব আহত ও আঘাত প্রাপ্ত, ব্যাংকে টাকাটা ছাড়ার চাপ দেয়ার কোনো হাতিয়ার নেই। আর জাতিসংঘ নির্ভর করে পশ্চিমাদের ওপর, কারণ দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর সৃষ্ট এই জাতিসংঘ অনেকটাই পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত। তাদের চাঁদায় জাতিসংঘ আমলাবাহিনী চলে, তাই পশ্চিমাদের ওপর চাপ দেয়ার সুযোগ কম। খুচরা টাকা পয়সা আসছে আহ্বানে কিন্তু বড় মাপের টাকাটা নয় যেটা আছে মার্কিন ব্যাংকে। বিশ্ব ব্যাংকের কথা মার্কিনিদের মতো। নারী অধিকার রক্ষা করতে তারা টাকা আটকিয়েছে। টাকাটা আফগানিস্তানের।
৩. মূল উদ্দেশ হচ্ছে তালেবানদের বিপদে ফেলা কিন্তু সেটা করতে বাইরের শক্তির দরকার হবে না মনে হয়। তাদের ভেতরে দ্বন্দ্ব প্রবল। তালেবান একক সত্তা নয়, অনেকগুলা গোষ্ঠীর মোর্চা। আফগান সমাজ গোত্র ভিত্তিক, তাদের নিজস্ব সংগঠন আছে। এদের এক হতে সাহায্য করে আমেরিকা রাশিয়ার বিরুদ্ধে। কিন্তু তাতে তালেবান এক হয়ে যায়না, নিজেদের মধ্যে ঝগড়া লেগেই আছে। আফগানরাই এক নয়, যার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ পাঞ্জশির। মুসলমানরাও এক নয় তার উদাহরণ আইএস ও তালেবান দ্বন্দ্ব।
৪. এটা তো মার্কিনিদের না জানা থাকার কথা নয়। তালেবান যে মধ্যযুগীয় ভেড়া পালা অর্থনীতির গোষ্ঠী, কোনোভাবে বর্তমান অর্থনীতির সাথে পেরে উঠবে না সেটা জানার পরও ২০ বছর ছিল ক্ষমতায়। সমাজের উন্নতি করতে পারেনি যদিও তাদের নিজ দেশের ব্যাবসায়ীরা অনেক মুনাফা কামিয়েছে। তারা জেনে বুঝে চলে গেছে যে আফগান টাকা ব্যাংকে আটকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে একে ব্যবহার করা যায়। তালেবানদের সামলাবার ক্ষমতা খুবই সীমিত। যে যুদ্ধ তারা না করেই জিতেছে সেটার ক্রেডিট ভাগ করা নিয়ে তাদের নিজেদের ঝগড়া এখন তুঙ্গে। মার্কিনিদের আশা এতে তারা কাবু হবে। কিন্তু প্রতিশোধ ছাড়া এতে কি পাবে বোঝা যাচ্ছে না কারণ তারা তো ফিরতে পারবে না। এর দামটা দেবে আফগান শিশুরা।
৫. শেষ বিপদ জাতিসংঘকে নিয়ে। এই পরিবর্তিত জগতে তাদের দাম এমনিতেই কমছে। এখন আফগানিস্তান বড় পরীক্ষা। পাশ না করলে কি হবে তাদের? এবারে কোভিডকালেই তাদের গুরুত্ব অনেক কমেছে। এখন আরও কমার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
লেখক: এডিটর এট লার্জ, ইউএনবি
(প্রকাশিত মতামতের দায় লেখকের, ইউএনবির নয়)
আরও পড়ুন: নয়া তালেবান, পুরান তালেবান: তফাৎ কী?
তালেবান মাস্ক না পরলে কি কিছু এসে যায়
‘আফগানিস্তান’ কোনো একক রাষ্ট্র নয়
নয়া তালেবান, পুরান তালেবান: তফাৎ কী?
তালেবান ক্ষমতা হারায় বিশ বছর আগে, তারপর কখনও এখানে, কখনও ওখানে। পরিকল্পনা করেছে, অ্যাকশনে গিয়েছে, কিন্তু ক্ষমতা পায়নি। শেষে মার্কিনিরা যখন দেখলো যে ক্ষমতা তারা ধরে রাখতে পারবে না, তালেবানের সাথে আলাপে নামলো। হঠাৎ করে তালেবানেরা সবল হলো, নাকি মার্কিনিরা দূর্বল হচ্ছিল দীর্ঘ দিন ধরে?
তালেবানের পিছনে দুই বড় শক্তি কাজ করেছে গত ৭ বছর ধরে আমেরিকাকে হটাতে এবং নিজেদের দেশে জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করতে। সে কারণেই তালেবান টিকে থাকতে পেরেছিল।
আর মার্কিনিদের মাথায় তালেবান নয়, চীনাদের ভূত চেপেছে। সকল শক্তি নিয়োজিত করছে চীনকে ঠেকাতে। তাই প্রস্থান। সংঘাত সাউথ সি ও তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে।
তালেবান পাঞ্জশির প্রদেশ নিজেরা দখল করতে না পারায় এটাই প্রমাণ হয় যে তাদের শক্তি বৃদ্ধি পায়নি।
২
পাঞ্জশির পুরোটাই CIA-এর পালক সন্তান। সেটা মাসুদ বা Northern Alliance ই হোক। কিন্তু তারা প্রতিরোধ গড়তে পারেনি, কারণ পাশের ইরান বা তাজিকিস্তানের সাথে সামরিক যোগাযোগ আগেই বন্ধ করা ছিল।
অতএব রসদহীন ভাবে যুদ্ধ চালাতে তারা অক্ষম। তাছাড়া যুদ্ধটা করেছে পাকিস্তান, অতএব তালেবানের কৃতিত্ব এটা নয়। আর পাকিস্তান কার কথা শোনে? চীন। তালেবান এমন কোনও বড় শক্তি আগেও ছিল না, এখনও নেই।
৩
দেশের ভেতর তালেবানরা বলেছে, তারা নারী অধিকার, গণমাধ্যমের অধিকার, এইসব দেবে। তারা জানে, এইগুলো না বললে অন্য দেশ তাদের স্বীকৃতি দেবে না।
তালেবানরা পুশতুন নিয়মে চলে। তার বাইরে যেটা, সেটা তারা করবে না। ২০ বছর আগে যেটা লোকে বলতো ইসলামী মৌলবাদ, সেটা ছিল ‘পুশতুনিয়া’ মৌলবাদ। এটা থেকে সরে আসলে তালেবানদের ভেতরে দ্বন্দ্ব দেখা দেবে। অতএব, মুখে যতই বলুক, একটা সীমানার পর তারা পুরান তালেবানই থাকবে।
নারীদের পরিসর শতভাগ বন্ধ হবে না, তবে বেশির ভাগ বন্ধ থাকার আলামত চারদিকে। কিন্তু ২০ বছরে পৃথিবী পাল্টেছে। আমেরিকা যা বলে, তা সবাই আর শোনে না। এটাই তালেবানদের জন্য বড় সংবাদ। কিন্তু তাদের নিজেদের কী হবে?
আরও পড়ুন: ‘আফগানিস্তান’ কোনো একক রাষ্ট্র নয়
৪
তালেবানরা দেশের ভেতরে যাই করুক, বাইরে তা করতে পারবে না। জঙ্গিবাদ পোষণ করতে বড় বাঁধা তাদের দুই হুজুর- চীন ও রাশিয়া, বিশেষ করে চীন। তাদের খেপিয়ে টিকে থাকার ক্ষমতা তালেবানের নেই।
জঙ্গিবাদ পোষণ করবো না বলেই তারা চীন ও রাশিয়ার কাছ থেকে সমর্থন আদায় করেছে। জঙ্গিবাদ লালন বন্ধ করতে হবে, আর না করলে তাতে নতুন বিপদ।
দেশ চালানোর সমস্যা অনেক। যেমন সাহায্য না পেলে, দারিদ্র্য ভয়ানকভাবে বাড়বে, ফলে নতুন শত্রু তৈরি হবে। তালেবানের দূর্বলতা মানে পাকিস্তানের শক্তি বৃদ্ধি, যেটা তালেবান চায় না। আর চীন চায় ব্যবসা, যেটা তালেবানও চায়।
এই প্রয়োজনের কারণেই তালেবান কথা শুনবে। জটিল রাষ্ট্র সামলাবার ক্ষমতা তাদের নেই। ক্ষমতায় টিকতে হলে কথা শুনে চলতে হবে।
আরও পড়ুন: তালেবান মাস্ক না পরলে কি কিছু এসে যায়
৫
সেই তালেবান ছিল পুশতুন মৌলবাদী, এই তালেবান তাই। যেটা তারা শিখেছে সেটা হলো, যে করেই হোক ক্ষমতায় টিকতে হবে। কিছু নিলে, কিছু দিতে হবে।
আজকের আফগনিস্তান, ২০ বছর আগের মতো নয়। মানুষগুলো অনেক পাল্টে গেছে, দেশের অনেক শত্রু। কয়েক বিলিয়ন ডলার মার্কিন ব্যাংকে আটকা, তা না পেলে অনেক কিছুই হবে না।
চীনের সাথে তালেবানের রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিল না আগে। তাই চীন কত কঠোর হতে পারে তালেবান তা জানে না। তাই বেসামাল কিছু করলে, এই অনেকটা দূর্বল গোষ্ঠী বিপদে পড়বে। তবে কতটা গেলে সেটা হতে পারে, এখনও কেউ তা বলতে পারে না।
হুম হ্যাম যতই করুক, তালেবান শান্তিতে নেই।
লেখক: এডিটর এট লার্জ, ইউএনবি
(প্রকাশিত মতামতের দায় লেখকের, ইউএনবির নয়)
আরও পড়ুন: মুক্তি পেয়ে কী বার্তা দিলেন পরীমণি
বিষয়টা পরীমণি, না অন্য কিছু ?
আফগানিস্তান দেখা হলো না
প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের ফলে এর অন্তর্গত রিপাবলিকগুলো স্বাধীন হয়ে যায়। ইউক্রেন ও অন্যান্য ধনী রিপাবলিকগুলো নিজেদের সম্পদের জোরে টিকে থাকলেও তাজিকিস্তানের মতো গরিব রাষ্ট্রগুলো কষ্টে পড়ে যায়। মোড়লিপনা বজায় রাখতে রাশিয়ান ফেডারেশন সিআইএস (কমনওয়েলথ অব ইন্ডিপেনডেন্ট স্টেটস)নামে সংগঠন তৈরি করে। দরিদ্র দেশগুলোর মাঝে যাদের তরল/ কঠিন সোনা কিংবা খনিজ সম্পদ আছে, তাদের প্রতি বিশ্ব লুটেরাদের লোলুপ দৃষ্টির সাটেলাইট সব সময়ই নজরদারিতে আছে, সুযোগের অপেক্ষায়।
এমনি একটি দেশ তাজিকিস্তান। দেশটি প্রতিষ্ঠার সময় থেকে মস্কোপন্থী কমিউনিস্ট নেতা রাখমানভ ক্ষমতায় আছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হলো ইসলামী সংস্কারপন্থী দল (আইআরএম)। তাদের নেতৃত্বে আছেন নির্বাসিত নেতা সৈয়দ আব্দুল্লাহ নূরী। সরকার ও ইসলামপন্থীদের সংঘর্ষের পরিণতিতে হাজার হাজার লোক আহত, নিহত ও গুম হয়। মানব ঢল একপ্রান্ত থেকে দেশের ওপর প্রান্তে নিরাপত্তার খোঁজে ছুটতে থাকে। মানবিক বিপর্যয়ের এক পর্যায়ে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ও ইউএনএমওটি (ইউনাইটেড নেশনস মিশনস অব অবজার্ভারস ইন তাজিকিস্তান) কার্যক্রম শুরু করে।
শান্তিচুক্তির পর যে যেখানে আছে সেখানেই থাকবে এ নিয়মে সরকারি দল শহরকেন্দ্রিক অবস্থানে আটকে পড়লো। আর মুসলিম সংস্কারপন্থীদের অবস্থান হলো গ্রাম ও পাশের দেশ আফগানিস্তানের দুর্ভেদ্য এলাকায়। দু’দেশের সীমানা পিয়াঞ্জ নদীর মধ্যরেখা বরাবর। উভয় দেশের এ এলাকাগুলো দুর্গম বিধায় নির্দিষ্ট রাস্তায় চলাচল সীমিত। তাই এসব ক্রিটিক্যাল পয়েন্টের দখল নিয়ে প্রায়ই সরকারি ও বিরোধীদের সংঘর্ষ লেগে থাকে। এসব স্থানে মাঝে মাঝেই পদাতিক পরিবহনকারী সাঁজোয়া গাড়ির আলো দেখা যায়। পিয়াঞ্জ নদীর অপর পাড়ের উঁচু পাহাড় চূড়া থেকে অ্যামবুশ (চোরাগোপ্তা হামলা) পরিচালনা করে বিরোধীরা পালিয়ে যায়।
শান্তিরক্ষীরা মীমাংসা বা তদন্তের সুযোগ পায় না। কারণ বিরোধী পক্ষ অনুপস্থিত। পাহাড়ি খরস্রোতা এঁকেবেঁকে যাওয়া নদীর পাড় দিয়ে যাওয়া রাস্তার নিরাপত্তা দুরুহ। তাজিক সেনারা সংখ্যায় কম এবং দক্ষতা ও নেই। পুনঃ পুনঃ হামলায় সীমান্ত রক্ষীরাও ভীত। সামাল দিতে লাখ লাখ ডলার খরচ করে রাশিয়ান বর্ডার ফোর্স ভাড়া করা হলো। অর্থের যোগান এলো সোনার খনি থেকে। সোনার খনির প্রাপ্য অর্থ অর্ধেক নিয়ে যায় উত্তোলনকারী ব্রিটিশ কোম্পানি। বাকি অর্ধেক নেয় রাশিয়ান বর্ডার ফোর্স। অনেকের ধারণা এখানে কোথাও উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে ইউরেনিয়াম। তাই জাতিসংঘ শান্তি মিশন।
শতভাগ সামরিক অফিসারদের দ্বারা পর্যবেক্ষকদের এই মিশনে বাংলাদেশি সামরিক অফিসারদের বিশেষ ভূমিকা ছিলো। পেশাদারিত্ব ও সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি হিসেবে বিবদমান গোষ্ঠীগুলোর মাঝে বাংলাদেশিদের গ্রহণযোগ্যতা ছিলো আশান্বিত। মুসলমান হিসেবেও আলাদা একটা স্থান ছিলো। ইসলামী কট্টরপন্থীদের সৃষ্ট চরম মুহূর্তগুলোকে মুসলিম পর্যবেক্ষকরা কৌশলে আয়ত্তে আনতে পেরেছিল। এ কৃতিত্ব শুধু বাঙালি মুসলিমদের, অন্য মুসলমান পর্যবেক্ষকদের নয়।
আমার মিশনে যোগদানের কিছুদিন পরেই ল্যাটিন আমেরিকান মিশন প্রধানের পরিবর্তে এলেন প্রাক্তন জার্মান কূটনীতিক মি. গার্ড মেরেম। প্রাক্তন মিশন প্রধানকে সদর দপ্তরের আসে পাশেও দেখা যেত না। তাই তার সাথে তেমন পরিচয় ছিল না। মি. মেরেম এসেই সবার সাথে কথাবার্তা বলেছেন, মিশন সম্পর্কে জানছেন। ব্যক্তিগত একটা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছেন। বাইরের কফি শপে বসে একসাথে লাঞ্চ সারলাম। পটেটো ম্যাশ, রাশিয়ান কাবাব ও ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খেয়ে নিজের বিল নিজে দিয়ে দিলেন। আমরা ভাবছিলাম ওয়েলকাম লাঞ্চ দিয়ে মিশন প্রধান অল্পতে দায় সারবেন।
মি. মেরেম বাংলাদেশিদের প্রতি অনেক সহানুভূতিশীল ছিলেন। আমাদের নামের সঠিক উচ্চারণ করতেন, যা ব্রিটিশরা ইচ্ছা করেই বিকৃত করে থাকে। পরে কথা প্রসঙ্গে উনি জানালেন যে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি টেকনাফে কয়েক বছর কাজ করেছেন। তাই বাঙালিদের সম্পর্কে তার ব্যাপক ধারণা আছে।
মিশনের পর্যবেক্ষকগণ কয়েকটি টিমে বিভক্ত হয়ে কাজ করেন। কখনো চুক্তি লঙ্ঘন, কখনো গুম, হত্যা ইত্যাদি লেগেই আছে। বিভিন্ন ভ্যালিগুলো মুসলিম বিদ্রোহী ওয়ার লর্ডদের দখলে। উভয় দলের মাঝে সমঝোতার প্রচেষ্টা অব্যহত রয়েছে। UNMOT অপারেশন কক্ষের পাশেই একটা বেতার যন্ত্র বসিয়ে দেয়া হয়েছে যাতে আফগানিস্তানের টালোকান থেকে বিদ্রোহী মুসলিম নেতারা কথা বলতে পারেন । তবে স্থানীয় পর্যায়ে কিছু যোগাযোগ থাকলেও শীর্ষ পর্যায়ে কোনো বৈঠক হয়নি।
মিশন সদরের প্রচেষ্টায় একবার শীর্ষ বৈঠকে বসতে নেতারা সন্মত হলেন। দুশানবে থেকে প্রেসিডেন্ট রাখমানোভ ও তুরকেমিনিস্তান থেকে বিরোধী নেতা সৈয়দ আব্দুল্লাহ নুরী আফগানিস্তানের কুন্দুজ এ মিলিত হবেন। মধ্যস্থতা করবেন আমাদের মিশন প্রধান মিস্টার মেরেম।
জাতিসংঘ দলে অন্তর্ভুক্ত হতে পেরে নিজেকে একটু কেউকেটা মনে হলো। অতি উৎসাহে সমন্বয়ের কাজে লেগে গেলাম। চার গাড়িতে চারটি দলে বিভক্ত হয়ে আমরা দুশানবে থেকে যাত্রা করলাম। ঘন্টা ছয়েক লাগবে সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছাতে । যোগাযোগ মাধ্যম বেতার যন্ত্র ও স্যাটেলাইট ফোন। আমাদের কাজ হলো সীমান্তে পৌঁছানো। নদী পার ও পরবর্তী সূচি তালেবানদের হাতে। তখন তালেবানরা আফগনিস্তানের শাসক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তালেবানদের স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্বে চমক লাগিয়ে দিয়েছে।
আমরা সীমান্তের ৪/৫ কিলোমিটার আগে একটা বিরতি নিলাম। জাতিসংঘের MRE ( meal ready to eat) প্যাকেট খুলে লাঞ্চ সারলাম। পরবর্তী থাকা, খাওয়া সব কিছু অনিশ্চিত। কিন্তু মিলিটারি অবজারভারের কোনো সমস্যা নেই। তার প্যাকে সবই আছে। শুধু অস্ত্র নেই। তার হাতে আছে জাতিসংঘের পতাকা।
গাড়িতে উঠতে যাবো। বেতার যন্ত্র গুটিয়ে এখনই রওনা দেবো। এমনসময় ডেল্টা বেইজ অর্থাৎ আমাদের সদর দফতর থেকে কল আসলো। নির্দেশ এলো আমরা যেখানে আছি সেখান থেকে যেনো আর এক কদমও আগে না যাই। কারণ বলা যাবে না। নিউইয়র্কের নির্দেশ। ডিউটি অফিসার আর বেশি তথ্য দিতে অপারগ। মিশন প্রধানকেও জানানো হলোনা যাত্রা থামিয়ে দেয়ার কারণ। সবাই জল্পনা-কল্পনায় ব্যস্ত।প্রায় আধা ঘন্টা কেটে গেলো।
মি. মেরেম এ সময় আমাকে কাছে ডাকলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এখন সদর দফতরে ডিউটি অফিসার কে?’ আমি বললাম, ‘মেজর জিয়া।’ তিনি বললেন, ‘ও তাহলে ভালোই হলো। তুমি তোমার বাংলাদেশি অফিসারের সাথে কথা বলো। তোমার নিজ আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলবে। জানতে চাও কী ঘটেছে ও ঘটতে যাচ্ছে। তারপর আমাকে বলো।’ প্রাক্তন কূটনীতিকের এমন বুদ্ধি দেখে চমৎকৃত হলাম।
এটা ভালো কাজ দিলো। জানা গেলো যে বিরোধী নেতা সৈয়দ আব্দুল্লা নুরীর বিমান ছিনতাই হয়ে গেছে। তালেবানরা তাকে কান্দাহার বা অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গেছে। শীর্ষ বৈঠক অনিশ্চিত। জাতিসংঘ সদর দফতরের নির্দেশের অপেক্ষায় থাকতে হবে। প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টার উড়তে গিয়েও নেমে গেলো। আমরা পথিমধ্যে খোশ-গল্পে মশগুল হলাম। বিভিন্ন মিশনের অভিজ্ঞতা, রঙ্গ রস কিছুই বাদ গেল না।
সন্ধ্যার কিছু আগে দুশানবে থেকে নির্দেশ এলো রাজধানীতে ফেরত যাবার। সবাই এক হয়ে আবার ফিরতি যাত্রা শুরু করলাম। আমাদের সুইজারল্যান্ডের অবজারভার বললো, ‘ইস একটা দেশ দেখা থেকে বঞ্চিত হলাম।’ পাসপোর্টের আফগান ভিসার দিকে সে একমনে তাকিয়ে আছে।
লেখক: কলামিস্ট ও অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা
(প্রকাশিত মতামতের দায় লেখকের, ইউএনবির নয়)
আরও পড়ুন: ‘আফগানিস্তান’ কোনো একক রাষ্ট্র নয়
তালেবান মাস্ক না পরলে কি কিছু এসে যায়
আমার আফগান স্টুডেন্টরা ও ১৯৭১ : ব্যক্তিগত অনুভূতি
কোনটা এগুচ্ছে, নারীর ক্ষমতায়ন, নাকি পুরুষতান্ত্রিকতা?
আমাদের উচ্চ আদালতকে আবারও সাধুবাদ দিচ্ছি। এক সপ্তাহের মধ্যে আদালত দুটি অতি গুরত্বপূর্ণ বিষয়ে বেশ সাড়াজাগানো নির্দেশনা দিয়েছেন। দুটি বিষয়ই বাংলাদেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার, ব্যক্তির ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার বিশেষত নারীর সম্মান ও মর্যাদা সম্পর্কিত। নির্দেশনার সঙ্গে আদালত বেশ কিছু কড়া মন্তব্য করেছেন আমাদের দেশের নিম্ন বিচারিক আদালতের বিচারক, পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-এর ভূমিকা নিয়ে।
প্রথম নির্দেশনাটি এসেছে ১ সেপ্টেম্বর। বিষয়,চিত্রনায়িকা পরীমণির রিমান্ড হয়রানি ও প্রলম্বিত জামিন শুনানি। পরীমণি জামিন পেয়েছে এবং জেল থেকে মুক্তিও পেয়েছে। তবে উচ্চ আদালত হস্তক্ষেপ না করলে সে এখনও কারাগারে বন্দি থাকত। কারণ ঢাকা মেট্রোপলিটন সেশন আদালত তার সর্বশেষ জামিন আবেদনটির শুনানির দিন নির্ধারণ করেছিল ১৩ সেপ্টেম্বর। এর আগে পরীমণির জামিন শুনানি কেন দ্রুত শুনানির নির্দেশনা দেয়া হবে না এই বলে এক রুল জারি করেছিলেন। সেই রুলের শুনানির দিন ছিল ১ সেপ্টেম্বর।
এর সাথে আদালত বলেছেন, পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা রিমান্ড চাইলেই আসামিকে রিমান্ডে পাঠাতে হবে এমনটা কোন সভ্য দেশে চলতে পারে না। পরিস্কার বুঝতে পেরেছি পরীমণিকে একটি মাদক মামলা প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিম্ন আদালতে পরপর তিনবার পুলিশের রিমান্ড আবেদনে আদালত বেশ ক্ষুদ্ধ হয়েছেন। আমার কথা হলো, উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপে নিম্ন আদালত শেষ পর্যন্ত জামিন শুনানি ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৩১ আগস্ট এগিয়ে আনেন। জামিনও মঞ্জুর করেন। গল্প এখনও শেষ হয়নি। পরীমণিকে বারবার রিমান্ডে নেয়া, আবেদন ও তা গ্রহণ করার কি যৌক্তিক কারণ ছিল বা রিমান্ডে নেয়ার জন্য আদৌ কোন উপাদান ছিল কিনা তা ব্যাখা করার জন্য নিম্ন আদালতের দুই বিচারক ও এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে উচ্চ আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে।
উচ্চ আদালতের দ্বিতীয় প্রশ্নটি এল ৫ সেপ্টেম্বর রবিবার। এর সঙ্গে ক্ষুদ্ধ মনোভাবের প্রকাশ। সম্প্রতি পরীমণিসহ বেশ কয়েকজন নারীর (জেকেজি হেলথ কেয়ারের সাবরিনা আরিফ চৌধুরী ও কলেজ ছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়া) ব্যক্তি অধিকার ক্ষুন্ন হয় এমন সব ছবি, ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এগুলো নিয়ে বেশ রসালো প্রতিবেদনও ছাপা হয়েছে।
ব্যক্তির মানহানিকর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনকারী এমন ছবি, ভিডিও ও প্রতিবেদন বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে সরিয়ে ফেলার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্ট রিট করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি তাসমিয়াহ নুহিয়া আহমেদ। রিটের শুনানিতে আদালত বলেছেন, বিটিআরসি কী করে? তাদের কি প্রতিনিয়ত নির্দেশনা দিয়ে এসব বন্ধ করতে হবে, মনে হয় এতে বিটিআরসি আনন্দ অনুভব করে? দেখতে ভালো লাগে? আমরা সন্তান-সন্ততি নিয়ে থাকি না? আমাদের পরিবার আছে না? সব সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায় কেন (প্রথম আলোর সৌজন্যে) অন্যত্র আদালত বলেছেন, বিটিআরসি এসব ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ক্ষুন্নকারী আপত্তিকর বিষয়গুলো অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে সরিয়ে দেয়ার ক্ষমতা আছে। আদালত এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট একটি নীতিমালাও করে দিয়েছেন।
লক্ষ্যণীয় যে, সম্প্রতি যাদের ব্যক্তিগত গোপন বিষয়গুলো ভাইরাল হয়েছে তাদের বেশিরভাগই নারী। রিটে যাদের নাম দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে কলেজ ছাত্রী মুনিয়া বাদে বাকিরা বিভিন্ন মামলার আসামি। মজার বিষয় হলো, এদের সকলেরই ব্যক্তিগত বিষয়গুলো ছিল মূলত তাদের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে। মুনিয়ার মৃত্যুর পর তার মোবাইল ফোন জব্দ করে পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা।
পরীমণিসহ অন্য আসামিদের মোবাইল ফোনও তাদের গ্রেপ্তারের পর পুলিশের হাতে। পুলিশের কাছে জব্দ থাকা সময় যদি তাদের মোবাইল ফোনে ধারণকৃত কোন ছবি, ভিডিও বা কথাবার্তা প্রকাশ্যে চলে আসে তবে তার দায় কার? নিশ্চয় এ ব্যাপারে যে প্রশ্ন তার জবাব দিতে হবে তাদেরই যারা আসামিদের মোবাইল ফোন জব্দ করেছেন। ভাইরাল হওয়ার পর এগুলো দ্রুত সরিয়ে নেয়ার কাজ যে বিটিআরসির সেটা উচ্চ আদালত সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নির্দেশনা দিয়েছেন।
এখানে মনে পড়ছে, আমাদের দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামে একটি অতি বিতর্কিত ও সমালোচিত আইন আছে। আইনটি বিতর্কিত হয়েছে এ কারণে যে এটির ব্যবহার বা অপব্যবহার হচ্ছে মূলত সরকারের সমালোচকদের বিরুদ্ধে। এর অধীনে যারা মামলা করেছেন তাদের বেশিরভাগই সরকারি দলের লোক। সামাজিক মাধ্যমে ঠুনকো কোন পোস্ট যা কোন সরাকারি দলের লোক,পুলিশ বা আমলার বিরুদ্ধে কটাক্ষ বা সমালোচনামূলক মনে হচ্ছে, তাৎক্ষণিক মামলা ঠুকে দেয়া হচ্ছে। পুলিশ তা আমলে নিচ্ছে, গ্রেপ্তার করছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক থাকা অবস্থায় জামিন বঞ্চিত হয়ে কারাগারে মারা যান লেখক ও উদ্যোক্তা মোসতাক আহমেদ। এখনও বেশ কয়েকজন এই আইনের আওতায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করছেন। অথচ এই আইনের একটি মূল উদ্দেশ্য হল সামাজিক মাধ্যমে নারী যে প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন, স্কুল কলেজের অনেক মেয়েরা এই হয়রানির কারণে পড়ালেখা বন্ধ করে দিয়েছে। কেউবা আত্মহত্যা করতেও বাধ্য হচ্ছে। এই জঘন্য অপরাধের জন্য যারা দায়ী তারা দিব্যি আমাদের সমাজে মুক্ত মানুষ হিসেবে ঘুরছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এদের ক’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা আমরা জানি না। এই আইনের ফলে নারীর যৌন হয়রানি ও তার বিরুদ্ধে পুরুষতান্ত্রিক যৌনতার আক্রমণ কিছুটা কমেছে বলে আমরা জানি না। একদিকে আমরা আমাদের দেশে নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে গর্ব করছি, আর সেই একই সমাজ নারীকে পুরুষতান্ত্রিক মনোভঙ্গিজাত নানা হেনস্থা, অপমান ও যৌনতার জাঁতাকলে পিষ্ট করছি। ক্ষমতায়ন নাকি পুরুষতন্ত্র এগিয়ে যাচ্ছে তা আমাদের উপলব্ধি করতে হবে।
ফরিদ হোসেন: উপদেষ্টা সম্পাদক, ইউএনবি
(প্রকাশিত মতামতের দায় লেখকের, ইউএনবি’র নয়)
আরও পড়ুন:পরীমণির জামিন শুনানি দ্রুত করার বিষয়ে হাইকোর্টের রুল
পরীমণির জামিন শুনানির তারিখ এগিয়েছে
মুক্তি পেয়ে কী বার্তা দিলেন পরীমণি
ইলিশ নিয়ে কথকতা
ইলিশ নিয়ে অতি পুরাতন রূপকথাসম এক কল্পকাহিনী দিয়ে শুরু করা যাক। একদিন নদীর পাড়ে বসবাসকারী এক হরিণের সাধ হলো ইলিশের সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায় নামার। ইলিশকে বলতেই সে রাজি হয়ে গেল। শর্ত ছিল যে হারবে তার শরীরের এক টুকরো বিজয়ীকে দিতে হবে। তীব্র সেই প্রতিযোগিতায় জয় হলো ইলিশের। হার মেনে নিল হরিণ। নিজের শরীর থেকে কিছুটা মাংস পুরস্কার হিসেবে ইলিশের গায়ে তুলে দিল। সেই থেকেই ইলিশ মাছ তার শরীরের গাদার অংশে গর্বভরে বয়ে বেড়াচ্ছে হরিণের মাংস। সেই ছোটবেলা থেকেই দাদী-নানীর কাছ থেকে এই কাহিনী শুনেই বড় হয়েছি। আজও ইলিশের গায়ে সেই হরিণের মাংসের দেখা মেলে!
এই গল্প থেকে একটা কথা পরিস্কার হলো যে ইলিশ গভীর জলের অতি দ্রুত গতির মাছ। ইলিশ তার জীবনকালে অধিকাংশ সময় সাগরে থাকলেও ডিম ছাড়ার সময় হলে সাগর থেকে (আমাদের দেশের বেলায় বঙ্গোপসাগর) চলে আসে মিঠা পানির নদীতে। বঙ্গোপসাগর থেকে প্রথমে মেঘনা, সেখান থেকে পদ্মা। কখনো ধীরে, কখনো বা দৌড়ে চলে একেবারে আরিচাঘাট পর্যন্ত। এই চলার পথে মিঠা পানির সংস্পর্শে ইলিশের গা থেকে নোনা বিলীন হতে থাকে।
কাজেই ইলিশ ডিম ছাড়ার সময় ও পরে যত বেশিদূর উজানে দৌড়াবে তত বেশি তার স্বাদ হবে। তার আকার পরিবর্তন হবে, দেখতে হবে নাদুস-নুদুস, অতি আকর্ষণীয়। বলা হয় নদীর পলিমাটি, বিশেষ করে পদ্মার মাটি না খেলে ইলিশের শরীরে তেল জমে না, স্বাদও হয় না। এ কারণেই পদ্মার ইলিশের যে অনুপম স্বাদ তা অন্য কোন নদীর ইলিশে পাওয়া যায় না।
দুঃখের বিষয় পদ্মা নদীতে এখন আর ইলিশ তেমন পাওয়া যায় না। সাগর মুখেই এখন জেলেরা ইলিশ ধরে নেয়। সাগরস্থল পেরিয়ে মেঘনায় যখন আসে সেখানেই তার যাত্রা শেষ হয়ে যায়। পদ্মা নদীতে আসার তেমন সুযোগ হয় না। কাজেই মাওয়া ঘাটে বা ঢাকার বাজারে পদ্মার ইলিশ বলে যে মাছ গ্রাহকের থলিতে গছিয়ে দেয়া হয় তার প্রায় পুরোটাই ফাঁকি।
আমরা যারা পদ্মা পাড়ের মানুষ, তারা জানি কোনটা কোন নদীর মাছ। ছোটবেলায় প্রথম যেদিন একা একা মাছ কেনার জন্য গ্রামের বাজারে গিয়েছিলাম, তার আগে পদ্মার ইলিশ সঠিকভাবে চেনার তালিম দেয়া হয়েছিল।
ছোট মুখ, চওড়া পিঠ এটাই হলো পদ্মার ইলিশের প্রধান চেহারা। মেঘনাসহ অন্য নদীর মাছ লম্বাটে মুখ, লম্বা দেহ নধরকান্তি হবে না। মাছ কিনে দুরু দুরু বুকে মায়ের মাছ কাটার বটির সামনে দাঁড়াতাম পরীক্ষার ফল প্রকাশের জন্য। বটিতে এক কোপ দিতেই মা বুঝে ফেলতেন এটা পদ্মার মাছ কিনা। পদ্মার মাছের ঘ্রাণও ভিন্নতর। সেটা রান্নার আগেও। আর ইলিশ যদি সত্যি পদ্মার হয় তবে সে রান্না করার সময়ই পাড়া-প্রতিবেশীদের জানান দেয়। এক ঘরে ইলিশ রান্না হলে তার ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের বারো ঘরে। আজ কি আমরা সেই ঘ্রাণ পাই? আমরা যারা পদ্মা পাড়ের বা পদ্মার কাছকাছি এলাকার মানুষ তাদের মুখে পদ্মার ইলিশ না হলে রসনার তৃপ্তি হয় না। ইলিশ খাব তো পদ্মার ইলিশই খাব। সেই পদ্মাও নেই, নেই তার ইলিশও। কাজেই ইলিশ এখন আর মুখে রোচে না।
ইলিশ নিয়ে আমাদের দেশে অনেক ধাপ্পাবাজি আছে। পদ্মার ইলিশ খাওয়ানোর কথা বলে হোটেল-রেস্তোরাঁয় চলছে ক্রেতাদের পকেট কাটার উৎসব।
পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ বাংলার সংস্কৃতি বলে বিজ্ঞাপনের ঝলক তুলে চলছে ঠগবাজির বাণিজ্য। অনলাইনে, সুপারশপে, বাজারে, ফুটপাতে, ভ্যানে এই ভরা মৌসুমে ইলিশের ছড়াছড়ি। কেজি প্রতি মূল্য ১২০০ থেকে ১২৫০ টাকা। মজার ও বেদনার ব্যাপার হলো, এরা সবাই বলে: ‘নিয়ে যান, এটা পদ্মার ইলিশ।’ এমন কী নয়া দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্কে বাঙালি প্রধান এলাকার মাছের বাজারে ঘটা করে সাইন বোর্ড টাঙ্গানো আছে, এখানে পদ্মার ইলিশ পাওয়া যায়। দেড় কেজি কিংবা তারও চেয়ে বেশি ওজনের লোভনীয় আকারের ইলিশ মেলে সেখানে। চার বছর দিল্লি বাসে বহুবার সেই মাছের বাজারে গিয়েছি। তবে পদ্মার ইলিশের সেই ফাঁদে পা দেইনি।
জানি, পদ্মা নদীতে আর তেমন ইলিশ আসবে না। জানি ইলিশের মৌ মৌ সেই ঘ্রাণ পাড়াজুড়ে আর কখনো ছড়িয়ে পড়বে না। তবু ইলিশের নামের সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে পদ্মা। সেটাই আমাদের বড় প্রাপ্তি।
ফরিদ হোসেন: উপদেষ্টা সম্পাদক, ইউএনবি
আরও পড়ুন: কমছে পদ্মার ইলিশ, বাড়ছে দাম
বাণিজ্যিকভাবে ইলিশ রপ্তানির পরিকল্পনা নেই: প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী
নিষেধাজ্ঞা শেষে পদ্মায় ইলিশ শিকারে গিয়ে হতাশ জেলেরা
মুক্তি পেয়ে কী বার্তা দিলেন পরীমণি
পরীমণি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন এটি খুব ভালো কথা, সবার পাওয়া উচিত। যারা তার সাথে জড়িয়ে গ্রেপ্তার হয়েছে তাদেরও পাওয়া উচিত। তিনি বের হলেন বিজয়ীর বেশে, মাথায় পাগড়ি, হাস্যমুখে। খুব সুন্দর লাগছিল তাকে। মুক্তি পাওয়ার পর উৎসুক জনতার উদ্দেশ্যে উৎফুল্ল পরীমণি হাত উঁচিয়ে অভিনন্দন গ্রহণ করছিলেন। এই সময় অনেকেরই চোখ ছিল তার হাতের দিকে। তার হাতে লেখা ছিল, ‘ডোন্ট লাভ মি বিচ’।
এ লেখা দেখে পরিমণি আর তার উপদেষ্টাদের বুদ্ধি নিয়ে আমার সন্দেহ জাগছে। একটু বোঝা উচিত ছিল এতে অনেকেই ক্ষুণ্ন হতে পারেন। বিশেষ করে যাদের কারণে তিনি জেলে ছিলেন। তারা ক্ষমতার দ্বন্দ্বে হেরে গিয়ে তাকে ছেড়ে দিয়েছেন, এটা যদি কেউ ভেবে থাকেন তবে তার জন্য বিপদ আছে।
‘ডোন্ট লাভ মি বিচ’ কথাটি একটি গান থেকে নেয়া এবং এটি হয়তো তার প্রিয় গান হতে পারে। গানটিতে মূলত রাগ ও ঘৃণা প্রকাশ করার জন্য গালিগালাজ করা হয়েছে। তবে যথেষ্ট উত্তেজক ভাষায় লেখা এই গান আজকের দিনে তাকে প্রিয় করে তুলবে না অনেকের কাছে! বিষয়টা বোঝা কঠিন নয়, যদিও বোঝা যায় যে এই বিজয়কে সে নিজের ব্যক্তিগত বিজয় মনে করছে। এটি যে মধ্যবিত্ত শ্রেণির এক ধরণের লড়াই ছিল ‘ক্লাব’ শ্রেণির বিরুদ্ধে সেটা তার মাথায় ঢুকেনি। কিন্তু কেউ ভুলবে না যে ‘ক্লাব’ শ্রেণি কত ক্ষমতাবান এবং চাইলে তারা পরীমণিকে আরও বহুদিন আটকে রাখতে পারতো। এরকম বহু কেস আছে। করেনি, কারণ একে নিয়ে তারা আর সময় নষ্ট করতে চায় না।
আরও যুদ্ধ আছে। যারা তার বিপক্ষে তারা এখনও সমান ক্ষমতাবান। পরীমণি বোট ক্লাবের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভেবেছিল ‘জিতেছি’। কিন্তু তার সূত্র ধরে বাড়িতে রেইড, জেল, রিমান্ড ইত্যাদি। তারা ক্ষমতা রাখে, সে রাখে না। পুলিশের বাড়াবাড়ি তার বড় উপকারে এসেছে, কিন্তু খেলা শেষ হয়নি। মামলা ডিসমিস হয়নি। হাতে ওই কথা লিখে বিজয় নিশান না উড়িয়ে তিনি চলে গেলেই পারতেন। তার বোঝা উচিত, এক মাঘে ক্ষমতাহীনদের শীত যায় না। এই মেয়ে বোকা, কার সাথে লড়তে হয় এবং কীভাবে লড়তে হয় জানে না।
আফসান চৌধুরী: এডিটর এট লার্জ, ইউএনবি
আরও পড়ুন: পরীমণি আর পাবলিকের জামিন হলো, অন্যদের কী হবে
পরীমণি: পাবলিক মনে মনে জামিন দিয়ে দিয়েছে
বিষয়টা পরীমণি, না অন্য কিছু ?
পরীমণিকে কি মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড দেয়া হবে?
পরীমণি আর পাবলিকের জামিন হলো, অন্যদের কী হবে
শেষ পর্যন্ত সবুরে ফল পাওয়া গেলো। পরীমণির জামিন হলো কোর্ট থেকে। এরকম গড়িমসি কম দেখা যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে পাবলিকের চাপ বাড়ছিল। সাথে সাথে সুশীল সমাজ ও মিডিয়া বুঝে গিয়েছিল যে এটি একটি ইস্যু। তাই জামিন না দেয়ায় খামোখা কথা হচ্ছিল। পরীমণি বিনা কারণে ‘হিরো’ হয়ে যাচ্ছিল। আর তাতে অসুবিধা না হলেও একটি অস্বস্তি তৈরি হচ্ছিল। এখন অন্য বিষয় নিয়ে সবার আলাপ করার সুযোগ হবে।
এটি ভাবার কোনো কারণ নেই যে পরীমণির ব্যাপারে সরকারে ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু আম জনতা একটু একটু ক্ষুব্ধ হচ্ছিল। কারণ এত লোকের এত বড় বড় অপরাধে জামিন হয় কিন্তু এই কেসে কেন নয়? এখন এত কথা হবে না।
তবে পরীমণির বোঝা উচিত যে যাদের সাথে তার ওঠাবসা, তাদের সাথে লাগতে যাওয়া বোকামি। আর পাবলিকের স্মৃতি খুব দুর্বল, আপনাকে ভুলতে বেশি টাইম লাগবে না। সবাই খুশি তার ছাড়া পাওয়াতে কারণ আফটার অল নারী, মানুষের এমনিতেই মনটা একটু নরম থাকে যদি সে নিজে অত্যাচারী না হয়।
অন্যদের জামিন নেই
ঠিক যেই মুহূর্তে পরীমণি জামিন পাচ্ছেন ঠিক সেই মুহূর্তে তাদের কথাও মনে রাখবেন যারা তার সাথে বিভিন্ন কাজে জড়িত ছিলেন। তারা কিন্তু ভেতরেই আছেন। পাবলিক তাদের কথা ভুলে গেছে, তাদের জামিনের কোন দাবি ওঠেনি। জামিন পেতেও একটু কপাল লাগে, অনুসারী লাগে, আরও কত কিছু। এই সব মামলায় যারা ভেতরে তারা সবাই যেন জামিন পায়, তারপর যেন বিচার হয়।
লেখক: এডিটর এট লার্জ, ইউএনবি
আরও পড়ুন: পরীমণি: পাবলিক মনে মনে জামিন দিয়ে দিয়েছে
বিষয়টা পরীমণি, না অন্য কিছু ?
পরীমণিকে কি মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড দেয়া হবে?