��������������� ���������������
প্লাস্টিক দূষণ সংকট: বুড়িগঙ্গার নিকটবর্তী স্থানীয়দের পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্রকল্প গ্রহণ
বাংলাদেশের প্লাস্টিক দূষণ সংকটের ভয়াবহ চিত্র দেখা যায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে। এখানে, প্লাস্টিকের আধিক্যের কারণে নদীর পানির অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় না। এসব প্লাস্টিকের কারণে পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে দেশ। একই সঙ্গে গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দ্রুত নগরায়ণের ফলে বাংলাদেশে প্লাস্টিকের ব্যবহার ও দূষণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০৩১ সালের মধ্যে দেশের উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এই ইস্যুটি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের উপর গুরুত্বারোপ করেছে বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংক প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলা এবং সবুজ প্রবৃদ্ধির প্রচারের জন্য বাস্তবসম্মত কর্মপরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দিয়েছে।
বিষয়টি কোনো বিচ্ছিন্ন এলাকা নয়। কামরাঙ্গীরচরসহ আশপাশের এলাকাগুলো বর্জ্য ফেলার হটস্পটে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঢাকা ও রংপুরের কিছু অংশ থেকে ১৫৮ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ
সম্প্রতি শ্যামপুর, কামরাঙ্গীরচর ও লালবাগ এলাকা সরেজমিনে দেখা গেছে, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আগ্রহী একটি গোষ্ঠী। কিন্তু এই সংকটে কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব রয়েছে।
এই পরিবেশগত উদ্বেগের মধ্যে, প্লাস্টিক বর্জ্য পুনব্যবহারের জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। টয়লেট প্যান, পিভিসি পাইপসহ পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক থেকে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন শুরু করেছেন কামরাঙ্গীরচরের স্থানীয় উদ্যোক্তা ইউসুফ আলী। সেসব সারাদেশে বিক্রিও করছেন।
তিনি গর্ব করে বলেন, নিয়মিত প্রশিক্ষণের জন্য তার কারখানাটি উন্নত পণ্যের গুণমান এবং শ্রমিক সুরক্ষাসহ একটি পরিবেশবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুন: প্লাস্টিকের একক ব্যবহার নিষিদ্ধে আইন প্রয়োগের আহ্বান বিশেষজ্ঞদের
বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে ক্ষয়ক্ষতি তহবিল নিয়ে আশার সঞ্চার
বাংলাদেশের মতো উপকূলীয় অঞ্চলের দেশগুলোকে নবগঠিত ক্ষয়ক্ষতি তহবিল আশার আলো দেখাচ্ছে। সম্মেলনের প্রথম দিনেই কার্যকর করা এই তহবিলে অর্থায়নে আশানুরূপ অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে।
গত এক সপ্তাহে এই তহবিলে ৭০০ মিলিয়ন বা ৭০ কোটি ডলার জমা পড়েছে। যদিও চাহিদার তুলনায় এটি অত্যন্ত নগন্য। তারপরও গঠনের পর থেকে উন্নত দেশগুলো একে একে এগিয়ে আসছে এই তহবিলে অর্থায়নের ক্ষেত্রে। যা বিশ্বের উপকূলীয় অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে।
আরও পড়ুন: কপ-২৮: ৫ গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে অন্য দেশের সঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ
নতুন আশা তৈরি করলেও এই তহবিল থেকে অর্থ পেতে বাংলাদেশের আরও অন্তত আট মাস সময় লাগবে। কারণ বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত এই তহবিল ব্যবহারের মতো প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও দক্ষতা অর্জন করতে পারেনি। এজন্য জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা শুরু থেকে এই তহবিলের অর্থ ব্যবহারের জন্য দ্রুত প্রস্তুতি গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের বিষয়ে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করছে। এই সমীক্ষা শেষ হলে জানা যাবে, বাংলাদেশে কোনে খাতে কী পরিমাণ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছে। সেটি নিরুপনের পর বাংলাদেশ নবগঠিত ক্ষয়ক্ষতি তহবিল থেকে অর্থ পাওয়ার আবেদন করতে পারবে।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য ও এলডিসি গ্রুপের লস অ্যান্ড ড্যামেজ সমন্বয়কারী এম হাফিজুল ইসলাম খান ইউএনবিকে বলেন, ক্ষয়ক্ষতি তহবিলের কার্যক্রম শুরু হতে আরও ৮ মাস সময় দরকার হবে। আগামী বছরের জানুয়ারিতে প্রথম সভায় বসবে এই তহবিল পরিচালনায় গঠিত পরিচালনা পরিষদ। আর এই পরিষদই ক্ষয়ক্ষতি তহবিলের অর্থ দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
আরও পড়ুন: জলবায়ু সহনশীল প্রকল্পে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার তাগিদ
তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রস্তুতির অভাবে বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিলের অর্থ ব্যবহার করতে পারছে না। তাই শুরু থেকে ক্ষয়ক্ষতি তহবিলের অর্থ পাওয়ার জন্য দক্ষ জনবল ও কাঠামো তৈরির কাজ শুরু করতে হবে। দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম শেষে গত বছর মিশরের রাজধানী শার্ম আল শেখে ২৭তম জলবায়ু সম্মেলনে ঐতিহসিক ক্ষয়ক্ষতি তহবিল গঠন করা হয়। ফলে অর্থবিহীন এই তহবিলকে কার্যকর করা ছিল একটি চ্যালেঞ্জের বিষয়। কিন্তু এবারের ২৮তম জলবায়ু সম্মেলনের প্রথম দিনেই এই কঠিন কাজটি সহজ করে দেয় আয়োজক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত কপ২৮ সভাপতির তহবিল দেওয়ার ঘোষণা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মির্জা শওকত আলী ইউএনবিকে বলেন, কপ২৮ সম্মেলনের সভাপতি আয়োজক দেশের পরিবেশমন্ত্রী সুলতান আল জাবের সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ১০ কোটি ডলার বরাদ্দ দিয়ে এই তহবিলকে কার্যকর করার প্রস্তাব করেন। প্রায় ২০০ দেশের প্রতিনিধিরা সর্বসম্মতিক্রমে ঐতিহাসিক এই তহবিলকে কার্যকর করার প্রাস্তব অনুমোদন করেন। ফলে অন্য দেশগুলোও এই তহবিলে অর্থায়নে এগিয়ে আসে।
এ পর্যন্ত এই তহবিলে ৭০ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ জমা পড়েছে। আরব আমিরাতের ১০ কোটি ডলার ছাড়াও জার্মানি ১০ কোটি ডলার, ইতালি ১০ কোটি ৮০ লাখ ডলার, ফ্রান্স ১০ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যুক্তরাজ্য ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার, অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ ১৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার এবং যুক্তরাষ্ট্র ১ কোটি ৭৫ লাখ ডলার দিয়েছে।
আরও পড়ুন: কপ-২৮ সম্মেলন : শুক্রবার শুরু হচ্ছে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক
এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া এই তহবিলে কোনো অর্থ না দিলেও তারা আবার জলবায়ু অর্থায়নে ফিরে এসেছে। দেশটির সাবেক সরকার জলবায়ু অর্থায়নে অস্ট্রেলিয়াকে প্রত্যাহার করে নিলেও বর্তমান সরকার শুক্রবার প্যাসিফিক দেশগুলোর জন্য ১৫ কোটি ডলার বরাদ্দ দিয়েছে। তবে এই অর্থ এখনও প্রত্যাশার চাইতে অনেক কম। ক্ষয়ক্ষতির জন্য প্রতি বছর ক্ষতিগ্রস্ত দশেগুলোর প্রয়োজন ১০০ বিলিয়ন থেকে ৫৮০ বিলিয়ন ডলার। সেই তুলনায় অর্থ প্রাপ্তি চাহিদার মাত্র দশমিক ২ শতাংশ।
মির্জা শওকত আরও বলেন, ক্ষয়ক্ষতি তহবিলগুলো যেসব দেশ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সে ফান্ড পরিচালনায় বিশ্বব্যাংককে একসেস দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা খুব একটা সন্তুষ্ট না হলেও সবাই রাজি হয়েছে। বিশ্বব্যাংক আগামী ৪ বছর ট্রাস্টি হিসেবে কাজ করবে।
২৫ সদস্যের একটি গভর্নিং বডি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির কাজ হবে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে তহবিল নিয়ে আলোচনা করবে।
তিনি বলেন, অ্যাডাপটেশন ফান্ড দিগুন করার বিষয়ে এই কপে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ গুরুত্বারোপ করেছে। তবে ন্যাশানাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যানের (ন্যাপ) ড্রাফট টেক্সট অ্যাডাপট করতে পারিনি। একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমরা এই টেক্সটটা দিয়ে কাজ করব আগামী ২০২৪ সালের জুন মাসে জার্মানির বন সেশনে।
আরও পড়ুন: উদ্বোধনের এক মাস পরও খুলনা-মোংলা রুটে শুরু হয়নি ট্রেন চলাচল
এছাড়াও আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ জনসংখ্যা জলবায়ু সহনশীল করার লক্ষ্যমাত্রা। আরলি ওয়ার্নিংয়ের মাধ্যমে কত শতাংশ জনসংখ্যা আনা হবে, সেটি চূড়ান্ত হয়নি। তবে কপ৩০ এ গিয়ে এটি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান মির্জা শওকত আলী।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কোস্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক আমিনুল হক ইউএনবিকে বলেন, তহবিলে যে পরিমাণ অর্থ পাওয়া গেছে তা অতি নগন্য। আবার এই অর্থ উন্নত দেশগুলো কবে দেবে তার সময়সীমা সংক্রান্ত কোনো রূপরেখা নির্ধারণ করেনি।
তিনি বলেন, ক্ষয়ক্ষতি তহবিলে অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতির কারণে ধনী দেশগুলো বিপদাপন্ন দেশগুলোর জন্য বিশেষায়িত অভিযোজন তহবিলের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অর্থ দিচ্ছে না। চলতি কপে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৪০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ২১ বিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ১৫-২০ শতাংশ কম। অভিযোজন তহবিলে অর্থ বরাদ্দ না বাড়লে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর বিপদ আরও বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।
আরও পড়ুন: চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের অর্থনীতি জিম্মি: ব্যবসায়ী নেতারা
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত বিশ্বের উপকূলীয় অঞ্চলের দেশগুলো তাদের আর্থিক ও অ-আর্থিক ক্ষতির জন্য এই তহবিল থেকে অর্থ ব্যবহার করতে পারবে।
জলবায়ু সহনশীল প্রকল্পে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার তাগিদ
শুল্ক সুবিধা বা ইনসেনটিভ দিয়ে বেসরকারি খাতকে জলবায়ু সহনশীল প্রকল্পে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার তাগিদ দিয়েছেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা।
কপ২৮ জলবায়ু সম্মলেনে অংশ নেওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনে উন্নত দেশগুলো নিজেরা বিনিয়োগ না করে বেসরকারি খাতের উপর দায় চাপাচ্ছে। কিন্তু বেসরকারি খাত জলবায়ু সহনশীল খাতে বিনিয়োগে আগহ দেখাচ্ছে না। তাই জলবায়ু খাতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের আগ্রহ বাড়াতে শুল্ক সুবিধা বা ইনসেনটিভ দেওয়া উচিত।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নেগোসিয়েশন টিমের সদস্য ড. রেজাউল করিম ইউএনবিকে বলেন, কার্বন দূষণকারী কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে জরিমানা করা হচ্ছে না। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এটা হচ্ছে না। সরকারি রাজস্ব বাড়াতে হলে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে জরিমানা করতে হবে।
আরও পড়ুন: জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় সর্বজনীন আন্তর্জাতিক অর্থায়ন ব্যবস্থার আহ্বান তথ্যমন্ত্রীর
তিনি আরও বলেন, দূষণের উপর কর ধার্য করতে হবে। অন্যদিকে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য তাদের শুল্ক সুবিধা দিতে হবে। তাহলে একদিকে যেমন রাজস্ব আয় বাড়াবে অন্যদিকে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ টিমের অপর সদস্য ড. আইনুন নিশাত ইউএনবিকে বলেন, জলবায়ু অর্থায়নে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়াতে হলে বৈশ্বিক নেতাদের বড় ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, তাদের জলবায়ু প্রশমন ও অভিযোজনে বিনিয়োগে বাধ্য করতে হবে। ব্যাংকিং খাত এক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
তিনি বলেন, কপ প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট করেই বলেছেন, ফসিল ফুয়েল কোম্পানিগুলো চাইলে প্রযুক্তি ব্যবহার করে কার্বন দূষণ কমাতে পারে। এই বিষয় এবার জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর দেশগুলো জোরেশোরে তুলে এনেছে।
তিনি বলেন, অন্যদিকে ক্ষয়ক্ষতি তহবিল যাত্রা শুরু করেছে। কিন্তু জলবায়ু খাতে অর্থায়ন পাওয়ার চ্যালেঞ্জ আরও বড় হচ্ছে।
ক্ষয়ক্ষতি তহবিল কার্যকর হওয়ার পর সম্মেলনের সবচেয়ে কঠিন কাজ সহজ হয়ে যায়। ফলে আশা করা হয়েছিল, সম্মেলনের অন্যান্য কাজগুলোও সহজ হয়ে যাবে।
কিন্তু কার্বন নির্গমন কমানো এবং উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদানের আলোচনায় এসে এই আলোচনা বাধার সম্মুখীন হয়। বরং কার্বন নির্গমন কমানোর ক্ষেত্রে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বন্ধের বিষয়ে সম্মেলন সভাপতির একটি বক্তব্য ঘিরে আলোচনা আরও জটিল আকার ধারণ করে।
এ বিষয়ে ক্ষয়ক্ষতি তহবিলের কার্যক্রম নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য ও এলডিসি গ্রুপের ক্ষয়ক্ষতি সমন্বয়কারী এম হাফিজুল ইসলাম খান ইউএনবিকে বলেন, ক্ষয়ক্ষতি তহবিলের কার্যক্রম শুরু হতে কমপক্ষে আরও আট মাস সময় দরকার হবে।
তিনি আরও বলেন, আগামী বছরের জানুয়ারিতে প্রথম সভায় বসবে এই তহবিল পরিচালনায় গঠিত পরিচালনা পরিষদ।
তিনি বলেন, আর এই পরিষদই ক্ষয়ক্ষতি তহবিলের অর্থ দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
আরও পড়ুন: জলবায়ু সংকট: অন্তর্ভুক্তিমূলক আন্তর্জাতিক অর্থায়ন ব্যবস্থা প্রণয়নের আহ্বান
তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রস্তুতির অভাবে বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিলের অর্থ ব্যবহার করতে পারছে না। তাই শুরু থেকে ক্ষয়ক্ষতি তহবিলের অর্থ পাওয়ার জন্য দক্ষ জনবল ও কাঠামো তৈরির কাজ শুরু করতে হবে।
এদিকে নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. মনজুরুল হান্নান খান ইউএনবিকে বলেছেন, কপ-২৮ এখন পর্যন্ত জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনার পক্ষে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
তিনি বলেন, বরং প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কার্বন দূষণ কমিয়ে আরও বেশি সময় ধরে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের পক্ষে কপ প্রেসিডেন্টসহ জ্বালানিসমৃদ্ধ দেশগুলোর অবস্থান আরও জোরালো হয়েছে।
তিনি আরও বরেন, এর মাঝে হয়তো ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার তিনগুন ও জ্বালানির দক্ষ ব্যবহার দ্বিগুন করার লক্ষ্য নেওয়া হলেও তা অর্জিত হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি একুশ শতকে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে ধরে রাখা যাবে এমনটি আর বিশ্বাস হচ্ছে না।
দুবাইয়ে গত ৩০ নভেম্বর থেকে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন ২০২৩ (কপ-২৮) শুরু হয়েছে। তা চলবে ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত। ১৩ দিন ব্যাপী এই সম্মেলনে ১৯৮টি দেশের সরকার প্রধানসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন।
কপ সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান, পরিবেশ বিশেষজ্ঞসহ সব শ্রেণির প্রতিনিধি বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নিয়েছেন এবং নিজ দেশসহ জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
আরও পড়ুন: ‘ভেক্টর বাহিত রোগ বৃদ্ধির জন্য জলবায়ু পরিবর্তন দায়ী’
কপ-২৮ সম্মেলন : শুক্রবার শুরু হচ্ছে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক
কপ-২৮ সম্মেলনে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শুরু হচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর)। এই বৈঠক আগামী ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা সরকারের প্রতিনিধি/কর্মকর্তা পর্যায়ের বিভিন্ন ধাপে গত ৬ দিনের আলোচনা শেষে এই আলোচনা শুরু হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জিয়াউল হক ইউএনবিকে এ তথ্য জানান।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে গত ৩০ নভেম্বর শুরু হওয়া কপ-২৮ সম্মেলনের মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠকেই মূলত সব বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।
সম্মেলনে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল জানায়, সব দেশকেই কার্বন নির্গমন কমাতে হবে এবং এক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোকে নেতৃত্ব দিতে হবে। তবে প্রথম রাউন্ডের ছয় দিনের আলোচনায় এই ইস্যুটির ব্যাপারে কোন সিদ্বান্ত গ্রহণ করা যায়নি। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার এখন মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকেই এখন এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
অর্থায়ন ও কার্বন নিগর্মন কমানোর বাধা অতিক্রম করতে পারছে না জলবায়ু আলোচনা। এই দুই ইস্যুতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে উন্নত ও দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলো। ফলে অর্থায়ন ও কার্বন নির্গমন কমানোর জটিল সমীকরণে প্রবেশ করতে যাচ্ছে জলবায়ু আলোচনা।
এক্ষেত্রে প্রথম সপ্তাহের আলোচনায় উপকূলীয় অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তার লস অ্যান্ড ড্যামেজ বা ক্ষয় ও ক্ষতি তহবিলের অগ্রগতি আশার আলো দেখাচ্ছে জাতিসংঘকে। এই আশা নিয়েই শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে সম্মেলনের দ্বিতীয় ধাপের মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনা।
গত ৩০ নভেম্বর দুবাইয়ের এক্সিবিশন হলে উদ্বেধন হয়েছে জাতিসংঘের ২৮তম জলবায়ু সম্মেলন। পরদিন ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় সপ্তাহব্যাপী প্রথম রাউন্ডের কর্মকর্তা পর্যায়ের আলোচনা।
আরও পড়ুন: পাঁচটি বিপর্যয়কর জলবায়ু টিপিং পয়েন্ট অতিক্রম করার দ্বারপ্রান্তে পৃথিবী: বিজ্ঞানীদের সতর্কতা
এবারের সম্মেলনের শুরুতে সবচেয়ে কঠিন ইস্যু মনে করা হয়েছিল বিগত মিশর জলবায়ু সম্মেলনে অনুমোদন হওয়া লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডে অর্থায়ন এবং এই তহবিলকে কার্যকর করা। কিন্তু সম্মেলনের প্রথম দিনেই আয়োজক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত এই তহবিলে ১০০ মিলিয়ন তথা ১০ কোটি ডলার অর্থ সহায়তা দিয়ে এই ফান্ডকে কার্যকর করে দেয়। আয়োজক দেশের পাশাপাশি আরও কয়েকটি দেশও এই তহবিলে অর্থ প্রদান করে। এ পর্যন্ত এই তহবিলে প্রায় ৫৮০ মিলয়ন বা ৫৮ কোটি ডলার জমা পড়েছে। ফলে এটি এখন কার্যকর হয়েছে। এই তহবিলের ট্রানজিশনাল কমিটি এই তহবিলের টাকা ব্যবহারের গাইডলাইন তৈরি করছে।
লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড কার্যকর হওয়ার পর সম্মেলনের সবচেয়ে কঠিন কাজ সহজ হয়ে যায়। ফলে আশা করা হয়েছিল, সম্মেলনের অন্যান্য কাজগুলোও সহজ হয়ে যাবে। কিন্তু কার্বন নির্গমন কমানো এবং উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদানের আলোচনায় এসে এই আলোচনা বাধার সম্মুখীন হয়। বরং কার্বন নির্গমন কমানোর ক্ষেত্রে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বন্ধের বিষয়ে সম্মেলনের সভাপতির একটি বক্তব্যকে ঘিরে আলোচনা আরও জটিল আকার ধারণ করে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কার্বন নিগর্মন কমানোর মিটিগেশন বিষয়ক আলোচনায় মূলত উন্নত দেশ এবং দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিরোধ এই আলোচনাকে জটিল করে দেয়। ঐতিহাসিক দায় হিসাবে কার্বন দূষণকারী উন্নত দেশগুলোকেই কার্বন নির্গমন কমানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই আলোকে চীন, ভারত, রাশিয়া ও সৌদি আরবের মতো দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলো বর্তমান কার্বন নির্গমন ব্যবস্থাকে সাইডলাইনে রাখতে চাইছে।
তারা বলছে, কার্বন নির্গমন কমানোর জন্য উন্নত দেশগুলোর ঐতিহাসিক দায় রয়েছে। তাই এই কাজটি উন্নত দেশগুলোকেই করতে হবে।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত দেশগুলো বলছে, কার্বন নির্গমনের এই কাজটি একযোগে ৯০ দশক থেকে যারা কার্বন দূষণ করছে তাদেরও করতে হবে। অন্যথায় বায়ুমন্ডল থেকে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে কার্বন কমানো যাবে না। এক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশ, ক্ষুদ্র দ্বীপ দেশ এবং ল্যাটিন আমেরিকান দেশগুলোর মধ্যস্থায় এগিয়ে এসেছে।
আরও পড়ুন: জলবায়ু সংকট: অন্তর্ভুক্তিমূলক আন্তর্জাতিক অর্থায়ন ব্যবস্থা প্রণয়নের আহ্বান
তারা বলছে, এই ইস্যু নিয়ে উন্নত দেশ ও দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলো যুদ্ধ করলে কার্বন নির্গমন কমানো যাবে না। সব দেশকেই কার্বন নির্গমন কমাতে হবে এবং এক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোকে নেতৃত্ব দিতে হবে। তবে প্রথম রাউন্ডের ছয় দিনের আলোচনায় এই ইস্যুটির ব্যাপারে কোন সিদ্বান্ত গ্রহণ করা যায়টি। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার এখন মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকেই এখন এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
অর্থায়নের ক্ষেত্রেও একইভাবে জটিলতা তৈরি হয়েছে। উন্নত দেশগুলো ২০০৯ সালে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ২০২০ সাল থেকে প্রতি বছর জলবায়ু অভিযোজন ও মিটিগেশনে ১০০ বিলিয়ন করে ডলার দেবে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি তারা গত চার বছর ধরে পূরণ করছে না।
উপরন্তু, ২০২৩ সালে এসে একটি গোঁজামিলের হিসাব দিয়ে বলছে, তারা এবছর ৮৩ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে।
এখানেও সেই একই দাবি উঠেছে যে, যারা কার্বন নির্গমনের জন্য ঐতিহাসিকভাবে দায়ী তারাই অর্থায়ন করবে। কিন্তু উন্নত দেশ না হয়েও এবারের জলবায়ু সম্মেলন নতুন নজীর সৃষ্টি করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। তারা সম্মেলনের প্রথম দিনেই লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডে ১০ কোটি ডলার দিয়ে নজির সৃষ্টি করেছে যে, উন্নত দেশ না হয়েও উন্নয়নশীল দেশ অর্থায়ন করতে পারে। এই নজির টেনে উন্নত দেশগুলো বলছে, আমিরাতের মতো যে সকল দেশগুলোর সামর্থ আছে তাদেরও উচিত জলবায়ু তহবিলে অর্থায়ন করা।
তবে জলবায়ু অর্থায়নের চাহিদা এখন ট্রিলিয়ন ডলারেও পৌঁছে গেছে। তাই অর্থায়নের পরিমাণও বাড়াতে হবে। সেই আলেচনা গত বছর (২০২২) থেকে শুরু হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলো দাবি জানিয়েছে, ২০২৫ সাল থেকে এই অর্থায়ন প্রতি বছর ৫০০ বিলিয়ন ডলার করতে হবে। কিন্তু উন্নত দেশগুলো সুস্পষ্ট করে এ বিষয়ে কিছু বলছে না। এই আলোচনা আগামী বছর শেষ হবে। সেখানেই ঠিক হবে, ২০২৫ সাল থেকে কত বিলিয়ন ডলার দিয়ে অর্থায়ন শুরু হবে এবং অর্থ প্রদানের প্রক্রিয়া কেমন হবে।
প্রথম সপ্তাহের আলোচনার মুল্যায়ন প্রসঙ্গে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংস্থার নির্বাহী সচিব সাইমন স্টিয়েল বলেন, ‘এই পৃথিবীর মানবজাতিকে বাঁচাতে এখন আমাদের উচিত এই সম্মেলনে সর্বোচ্চ কার্বন নির্গমন কমানোর অঙ্গীকার করা। এখানে রাজনীতির কোন সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে সরকারগুলোর উচিত তাদের কর্মকর্তাদের সক্রিয় হওয়ার নির্দেশনা দেয়া।’আরও পড়ুন: কপ-২৮: ৫ গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে অন্য দেশের সঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ
তিনি বলেন, ‘আমাদের শুধু ভাল সদিচ্ছা থাকলেই কার্বন নির্গমন কমাতে পারব না। কেবলমাত্র অর্থায়নের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতিই এক্ষেত্রে ইতিবাচক ফল এনে দিতে পারে। অর্থায়নই হচ্ছে এখন জলবায়ু প্রতিরোধের বড় চালিকাশক্তি। আলোচকদের এখন শেষ সপ্তাহে এসে এই দিকে পূর্ণ মনোযোগ দেয়া উচিত।’
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জিয়াউল হক ইউএনবিকে বলেন, ‘কার্বন নির্গমন হ্রাস এবং অর্থায়ন বিষয়ে আলোচনা থমকে আছে। এই দুই বিষয় এখন সিদ্ধান্তের জন্য মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে লস অ্যান্ড ড্যামেজ, কার্বন দূষণ পরিস্থিতির বৈশ্বিক মূল্যায়ন, গ্লোবাল গোল অন অ্যাডাপটেশন, প্রযুক্তি প্রভৃতি বিষয়ে একমত হওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ডের অর্থ ব্যবহারে নতুন করে গাইডলাইন দেয়া হচ্ছে। যাতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো সহজে এবং বেশি পরিমাণে অর্থ পায়। অর্থের প্রবাহ বাড়াতে না পারলে জলবায়ু পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি করা যাবে না। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে যেতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক মূল্যায়ন নিয়ে ২৪ পৃষ্টার একটি দলিল (টেক্সট) প্রণয়ন করা হয়েছে। এখন এই ২৪ পৃষ্ঠার দলিলকে চার দিনের মধ্যে একটি জায়গায় এনে অনুমোদন করা কঠিন কাজ।’
আরও পড়ুন: কপ-২৮ সম্মেলনে স্থানীয় জলবায়ু নেতৃত্বে গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে বাংলাদেশ
উদ্বোধনের এক মাস পরও খুলনা-মোংলা রুটে শুরু হয়নি ট্রেন চলাচল
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যৌথ উদ্বোধনের এক মাস পরেও খুলনা-মোংলা রেললাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি।
চলাচল শুরু হলে খুলনা থেকে বাগেরহাটের মোংলা বন্দর পর্যন্ত ৬৫ কিলোমিটার এই পথ দিয়ে পণ্য পরিবহন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রেলপথটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মোংলা বন্দর থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য পরিবহন সহজতর করবে এবং প্রতিবেশি দেশ ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে সহজ করবে। এতে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
উচ্চ প্রত্যাশা সত্ত্বেও, এই নবনির্মিত ট্র্যাকে ট্রেন পরিষেবা এখনও শুরু হয়নি। ট্রেন চলাচল শুরুর সঠিক তারিখ এখনও অনিশ্চিত, কারণ কর্তৃপক্ষ এখনও বিস্তারিত বিষয়গুলো চূড়ান্ত করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এই লাইনে আটটি নবনির্মিত স্টেশন রয়েছে, যেখানে বর্তমানে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের অভাব রয়েছে। উপরন্তু, এই স্টেশন এবং রেলক্রসিংগুলোর জন্য কর্মীদের কাজ শেষ হয়নি।
আরও পড়ুন: খুলনা-মোংলা রেললাইন উদ্বোধন ১ নভেম্বর
টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপনের কাজও পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। এ ছাড়া মোট কতটি ট্রেন চলবে, ট্রেনের সময়সূচি ও ভাড়া এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।
খুলনা-মোংলা রেললাইন প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী আহমেদ হোসেন মাসুম জানান, ‘খুলনা-মোংলা রেললাইনে ট্রেন চলাচলের উপযোগী হয়েছে। কিছু ফিনিশিং কাজ বাকি ছিল, এখন সেগুলো করা হচ্ছে। এই রুটে পণ্য পরিবহনকে প্রাধান্য দেওয়া হবে, সেই সঙ্গে যাত্রীবাহী ট্রেনও চলবে। তবে ট্রেন চলাচল শুরুর তারিখ এখনও ঠিক হয়নি।’
প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা যায়, খুলনা-মোংলা রেললাইন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর। এই রেলপথের দৈর্ঘ্য প্রায় ৯০ কিলোমিটার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে ভারতের দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লার্সেন অ্যান্ড টুবরো এবং ইরকন ইন্টারন্যাশনাল। ভারতের ঋণ সহায়তায় এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকা।
এই রেলপথে রূপসা নদীর উপর ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলসেতু নির্মাণকাজ অনেক আগেই সম্পন্ন হয়েছে। ৯টি স্থানে আন্ডারপাস (রেললাইনের নিচ দিয়ে যাওয়ার রাস্তা) নির্মাণ করা হয়েছে। আন্ডারপাসের কারণে ট্রেনগুলোকে ক্রসিংয়ে থামতে হবে না। দুর্ঘটনারও ঝুঁকি থাকবে না।
এই রেলপথের আটটি স্টেশন হলো– ফুলতলা, আড়ংঘাটা, মোহাম্মদনগর, দিগরাজ, কাটাখালী, চুলকাঠি, বাঘা ও মোংলা।
খুলনা চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মফিদুল ইসলাম টুটুল বলেন, ‘সবার দাবি দ্রুত ট্রেন চলাচল শুরু হোক। ট্রেন চালু হলে মোংলার সঙ্গে রেলপথে যাতায়াত সুবিধার পাশাপাশি আরও গতিশীল হবে মোংলা বন্দর। পর্যটকরাও খুলনা থেকে ট্রেনে সুন্দরবন যেতে পারবেন।’
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী বলেন, পদ্মা সেতুর পর রেল সংযোগ মোংলা বন্দরের জন্য একটা আশীর্বাদ। এই রেলপথে মোংলার সঙ্গে ঢাকা ও উত্তরাঞ্চলের কনটেইনার পরিবহন সহজ হবে।
তিনি আরও বলেন, কমলাপুর আইসিডি ও ঢাকা থেকে আমদানি-রপ্তানি পণ্য বন্দরে আনা-নেওয়ায় গতি আসবে। বন্দরে আগের চেয়ে বেশি সংখ্যক জাহাজ ভিড়বে।
আরও পড়ুন: খুলনা-মোংলা রেলপথের উদ্বোধন ৯ নভেম্বর: রেলপথমন্ত্রী
চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের অর্থনীতি জিম্মি: ব্যবসায়ী নেতারা
আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশের অর্থনীতি চাপের মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা।
রাজধানীর নয়াপল্টনে তাদের মহাসমাবেশ বানচাল হওয়ার একদিন পর গত ২৯ অক্টোবর থেকে বিরোধী দল বিএনপি এবং সমমনা দলগুলো দফায় দফায় অবরোধ ও হরতাল দেওয়া শুরু করেছে।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম। প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক খাতে ২০ দিনের হরতাল ও অবরোধের (২৯ অক্টোবর থেকে ২০ নভেম্বর) আর্থিক ক্ষতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা (প্রতিদিন ৬৫০০ কোটি টাকা)।
তিনি বলেন, ‘হরতাল-অবরোধের কারণে দিনে ৬৫০০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তাই আমরা বারবার বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে আর্থিক ক্ষতির কারণ এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কর্মকাণ্ড এড়িয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেছি।’
হরতাল-অবরোধের প্রচার-প্রচারণা স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে পুরোপুরি ব্যাহত করতে ব্যর্থ হলেও, এই অস্থিরতা পরিবহন খাতকে মারাত্মকভাবে আঘাত করেছে এবং পণ্য পরিবহনকে ব্যাহত করেছে; যার ফলে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে।
একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি সরকার প্রত্যাখ্যান করায় বিরোধীরা রাস্তায় অবস্থানের আশ্রয় নিয়েছে।
আরও পড়ুন: নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে বৃহত্তর সংলাপের প্রস্তাব ডিসিসিআই সভাপতির
পরিবহন মালিকেরা জানায়, এ খাতের আনুমানিক আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে প্রতিদিন প্রায় ১৬১ কোটি টাকা। এ হিসেবে ২০ দিনের হরতাল-অবরোধে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ২২০ কোটি টাকা।
ক্ষয়-ক্ষতির বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ইউএনবিকে বলেন, ‘হরতাল ও অবরোধের ফলে আর্থিক ক্ষতি বহুমাত্রিক এবং আপনি এটি শুধু আর্থিক পরিসংখ্যানে হিসাব করতে পারবেন না।’
তিনি বলেন, রাজনৈতিক বা অন্য কোনো কারণে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হলে বাংলাদেশ বা অন্য কোনো দেশের আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী দল ও বৈশ্বিক ক্রেতারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। তারপরে তারা তাদের ক্রয় আদেশ এবং বিনিয়োগ পরিকল্পনাগুলো আরও সুরক্ষিত ও স্থিতিশীল এলাকায় সরিয়ে নেয়।
থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘যখন একটি বড় বৈশ্বিক ক্রেতা একটি দেশ থেকে অর্ডার স্থানান্তর করে, তখন ছোট ক্রেতারাও তাদের অনুসরণ করে।’
ড. দেবপ্রিয়র কথার প্রতিধ্বনি করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর।
তিনি বলেন, একটি ক্রমবর্ধনশীল অর্থনীতির জন্য বৈশ্বিক বিনিয়োগ ও বৈশ্বিক ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে প্রতিটি সেক্টরে স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রয়োজন।
তিনি বলেন, কারণ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পূর্ণরূপে আর্থিক লাভ বা ক্ষতির সঙ্গে সম্পর্কিত। ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীরা সব সময়ই আর্থিক লাভের জন্য বিনিয়োগের জায়গা সন্ধান করে। তারা নিরাপদ স্থানে বিনিয়োগ করতে জন্য পছন্দ করে।
বিক্ষোভে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে পরিবহন খাতে। দূরপাল্লার আন্তঃজেলা বাসগুলো স্টেশনে অলস বসে আছে। অগ্নিসংযোগের ভয়ে সিটি বাসগুলোকে কম যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে হয়েছে। এতে অনেক পরিবহন শ্রমিক কর্ম ও বেতনহীন হয়ে পড়েছেন।
আরও পড়ুন: নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ গভীর খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে: ড. দেবপ্রিয়
মহাখালী আন্তঃনগর বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম ইউএনবিকে বলেন, স্বাভাবিক সময়ে মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন প্রায় ৭০০ গাড়ি ছেড়ে যায়। হরতাল-অবরোধের কারণে তা এখন দিনে ১০০-তে নেমে এসেছে।
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন, সপ্তাহে মাত্র দুই দিন বাস চালানোর ফলে শ্রমিকদের মজুরি ও জ্বালানি খরচ মেটানোটা আর্থিকভাবে চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। ফলে ব্যবসার মালিকরা বাস পরিচালনার খরচ ও ব্যাংক ঋণের কিস্তিসহ অন্যান্য ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, রাজধানীতে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন হাজার বাস চলাচল করে। মালিক ও শ্রমিকেরা মিলে প্রতিদিন ১ দশমিক ৫৮ কোটি টাকা আয় করেন, গড়ে প্রায় ৪৫০০ টাকা।
তবে, এই আয় ৩২ দশমিক ৫০ লাখ টাকায় নেমে এসেছে। যার ফলে হরতাল-অবরোধের কারণে রাজধানীতে বাস চলাচলের জন্য দৈনিক ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে।
মাহবুবুর বলেন, সাধারণ পরিস্থিতিতে সারাদেশে প্রায় ২ লাখ দূরপাল্লার বাস ট্রিপে প্রত্যেকে প্রায় ১০ হাজার টাকা আয় করে, যার ফলে দেশব্যাপী দৈনিক ২০০ কোটি টাকা আয় হতো।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তরের গণমাধ্যম শাখার তথ্য অনুযায়ী, ২৮ অক্টোবর থেকে ২৯ নভেম্বর সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মোট ২২৮টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের গণমাধ্যম শাখা শুধু অগ্নিসংযোগের ঘটনা রেকর্ড করে।
ফায়ার সার্ভিসের গণমাধ্যম শাখার উপসহকারী পরিচালক শাহজাহান সিকদার বলেন, একটি গাড়িতে আগুন দেওয়ার পর ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ঘটনাস্থল থেকে বা ঘটনাস্থলের কাছাকাছি থেকে তথ্য পায়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই সময়ে অগ্নিসংযোগের আরও কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে, তবে ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুমকে সেগুলো জানানো হয়নি।
যেসব ঘটনার তথ্য জানানো হয় না, সেক্ষেত্রে স্থানীয়রা আগুন নিভিয়ে ফেলেছে। অর্থাৎ, পরিবহন কর্মচারীরা নিজেরাই বা যাত্রী ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আগুন নেভানো হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের গণমাধ্যম শাখার উপ-সহকারী পরিচালক বলেন, এক্ষেত্রে অগ্নিসংযোগের ঘটনাগুলো ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
শাহজাহান বলেন, গত এক মাসে ২৮ অক্টোবর থেকে ২৯ নভেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত মোট ২১৭টি গাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
আরও পড়ুন: রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সবসময়ই অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা তৈরি করে: আহসান মনসুর
কপ-২৮: ৫ গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে অন্য দেশের সঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ
বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অত্যন্ত বিপন্ন ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর পক্ষে কার্যকর ভূমিকা পালনে এবারের কপ-২৮ সম্মেলনে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিষ্পত্তিতে সমন্বিতভাবে কাজ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন ইউএনবিকে বলেন, বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল কপ সম্মেলনে বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক আলোচনায় বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অত্যন্ত বিপন্ন ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর পক্ষে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ কপ-২৮ সম্মেলনে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিষ্পত্তিতে সমন্বিতভাবে কাজ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
সেগুলো হলো:
# প্রথম গ্লোবাল স্টকটেক অবশ্যই ১.৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কার্যক্রমের অগ্রগতি মূল্যায়ন, ভবিষ্যৎ উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও কংক্রিট মাইলফলকসহ সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে।
# অধিক বিপদাপন্ন উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ অ্যাড্রেস করার লক্ষ্যে কপ-২৮ সম্মেলনে ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড অপারেশনালাইজ’ করা এবং এর ‘ডিটেইল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ ঠিক করা।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত থাকা সত্ত্বেও মেয়াদ বাড়ছে ব্যয়বহুল ভাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের
# অভিযোজনসংক্রান্ত বৈশ্বিক লক্ষ্য ‘গ্লোবাল গোল অন অ্যাডাপ্টেশন’-এর কাঠামো তৈরি বা প্রণয়ন; সদস্য দেশগুলোকে অবশ্যই ১.৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করার জন্য তাদের এনডিসিতে বর্ণিত ২০৩০ প্রশমন লক্ষ্যমাত্রাকে শক্তিশালীকরণ এবং এনডিসি বাস্তবায়নের জন্য এলডিসি দেশগুলোর অর্থায়ন বাড়ানো।
# উন্নত দেশগুলোকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়া নিশ্চিত করা; জলবায়ু অর্থায়নের সংজ্ঞা চূড়ান্ত করা।
# অভিযোজন অর্থায়ন দ্বিগুণ করা; জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং ২০২৫ পরবর্তী সময়ে জলবায়ু অর্থায়নের জন্য ‘নিউ কালেক্টিভ কোয়ান্টিফাইড গোল অন ক্লাইমেট ফাইন্যান্স’ আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করা।
পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, কপ সম্মেলনে বাংলাদেশের অবস্থান যথাযথভাবে তুলে ধরার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দেশের বিশিষ্ট জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মতামত নিয়ে একটি অবস্থানপত্র প্রণীত হয়েছে।
বিগত কপসমূহের মতো এবারও কপ-২৮ সম্মেলনে বাংলাদেশ ১৫২ বর্গমিটার আয়তনের একটি প্যাভিলিয়ন তৈরি করেছে এবং এখানে বিভিন্ন সাইড ইভেন্ট আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, বরাবরের মতো এবারের কপ-২৮ সম্মেলনেও বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল এসব বিষয়ে কার্যকর ও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রাণলয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ ইউএনবিকে বলেন, কপ-২৮ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে ১৩টি সেমিনারসহ ২৪টি সাইড লাইন প্রোগ্রাম আয়োজন করবে। সেখানে শুধু বাংলাদেশ নয়, উন্নয়নশীল দেশের লিডার হিসেবে অন্যান্য দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব তুলে ধরবে বাংলাদেশ। এছাড়াও প্রতি বছরের মতো কপ-২৮ সম্মেলনের রিজিউমড হাই-লেভেল সেগমেন্টের আগে সম্মেলনের ভেন্যুতে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।
আরও পড়ুন: নির্বাচনের আগে অফশোর হাইড্রোকার্বন অনুসন্ধানের আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের পরিকল্পনা স্থগিত
৩০ নভেম্বর শুরু হয়ে ১২ ডিসেম্ব পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে ২৮তম বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন কপ-২৮ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এর অংশ হিসেবে ১ থেকে ২ ডিসেম্বর সম্মেলনের হাই-লেভেল সেগমেন্ট ‘ওয়ার্ড ক্লাইমেট সামিট’, ৮ থেকে ৯ ডিসেম্বর রিজিউমড হাই-লেভেল সেগমেন্ট, ৩০ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত টেকনিক্যাল নেগোসিয়েশন এবং ১২ ডিসেম্বর তারিখে সমাপনী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রাণালয় জানায়, সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী। তার সঙ্গে থাকবেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাসান মাহমুদ; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার; প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ দেশের বিশিষ্ট জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার নির্বাচিত পরিচালক সায়মা ওয়াজেদেরও সম্মেলনে অংশে নেওয়ার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন: বেসরকারি খাতের উৎপাদকদের ক্রমবর্ধমান অর্থ বকেয়া বিদ্যুৎখাতের অন্যতম বাধা
নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে বৃহত্তর সংলাপের প্রস্তাব ডিসিসিআই সভাপতির
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ী দল ও সুশীল সমাজের সংগঠনগুলোর মধ্যে বৃহত্তর সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি মো. সমীর সাত্তার।
সম্প্রতি ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডিসিসিআই সভাপতি বলেছেন, ‘আমাদের ব্যবসা ও অর্থনীতিকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ড এড়াতে ঐক্যমতে পৌঁছানো উচিত। অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে অবিলম্বে এটি করা উচিত।’
সাক্ষাৎকারটি একটি সিরিজের একটি অংশ, নির্বাচন-সম্পর্কিত অবরোধ কীভাবে অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে তা বোঝার জন্য সংবাদ সংস্থা ইউএনবি এই সিরিজ প্রকাশ করছে।
সমীর বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা অনেক উপায়ে অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে। যেমন- সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাত, রপ্তানি আয় হ্রাস এবং উৎপাদনের ব্যয় বৃদ্ধি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে হরতাল ও অবরোধের পর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুদ্ধারের জন্য একটি বহুমুখী পদ্ধতির প্রয়োজন। যা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটাতে পারে।
একজন কর্পোরেট আইনজীবী হিসেব সমীর বিশ্বাস ও আত্মবিশ্বাস ফেরানো এবং দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা ধরে রাখার উপর জোর দেন।
তিনি বলেন, ‘যদি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য দেখি, আমরা দেখছি কোভিড-১৯ মহামারি এবং বৈশ্বিক বিভিন্ন অস্থিরতা; বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশ বিভিন্ন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে।’
তিনি বলেন, এই ঘটনাগুলো বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে, যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ব্যবস্থাপনাকে কঠিন করে তোলে।
ডিসিসিআই প্রধান বলেছেন, এতে জ্বালানির দাম এবং ব্যবসা করার ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এর ফলে মূল্যস্ফীতির চাপ সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন: ব্যবসায়ীদের আস্থা বাড়াতে কোম্পানি আইন দ্রুত সংস্কারের আহ্বান ডিসিসিআইয়ের
তিনি বলেন, বিরোধীদের ডাকা চলমান অবরোধ ও হরতালের কারণে পরিবহন চলাচল কমে যাওয়ায় স্থানীয় সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হয়, ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রপ্তানি আয় ৬০ বিলিয়ন ডলারের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ কম।
তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, কিভাবে ২০১৩ ও ২০১৪ সালে হরতাল ও অবরোধ অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছিল।
ঢাকা চেম্বার জানিয়েছে, ২০১৩ সালে এই ধরনের অস্থিরতার কারণে দৈনিক ১৬০০ কোটি টাকার অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।
২০১৪ সালে থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, দৈনিক আনুমানিক ২ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছিল।
এসব গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে ডিসিসিআই প্রধান সমীর বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা শুধু ব্যবসার পরিবেশকেই বিপন্ন করছে না, জীবনযাত্রার মানকেও প্রভাবিত করছে।
জাতীয় অর্থনীতি অনিশ্চয়তার মধ্যে ডুবে যেতে পারে এমন আশঙ্কার মধ্যে এটি বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে প্রভাবিত করছে।
সমীর বলেন, বাংলাদেশের হরতাল-অবরোধ সংস্কৃতি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথে মারাত্মক বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি মনে করেন, এই ব্যাঘাত সমগ্র অর্থনীতিতে বিশাল প্রভাব ফেলতে পারে; যা উৎপাদন, কৃষি ও বাণিজ্যসহ বিভিন্ন শিল্পকে প্রভাবিত করতে পারে।
তিনি বলেন, উৎপাদন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যাঘাতের ফলে উৎপাদনশীলতা হ্রাস, চাকরি হারানো এবং আন্তর্জাতিক বাজারের অবস্থান দুর্বল হতে পারে। চলমান হরতাল-অবরোধ রপ্তানি-আমদানি প্রক্রিয়া ব্যাহত করছে।
তিনি আরও বলেন, হরতাল ও অবরোধের কারণে ব্যবসায়িক কার্যকলাপ হ্রাস পাওয়ার একটি প্রধান হুমকি; বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের উদ্যোগের (এসএমই) জন্য।
তিনি সতর্ক করেন, ‘আমাদের অর্থনীতিতে কর্মসংস্থানসহ অনানুষ্ঠানিক খাতের ৮০ শতাংশ কর্মকাণ্ডে হরতাল ও অবরোধের বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। যার ফলে দারিদ্র্য বৃদ্ধি পেতে পারে।’
আরও পড়ুন: শিল্প উন্নয়নে সহযোগিতা করতে ডিসিসিআই ও বিএসসিআইসি’র সমঝোতা স্মারক সই
রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এনবিআর-বেসরকারি খাতের অংশীদারিত্ব জরুরি: ডিসিসিআই সভাপতি
রাজনৈতিক অস্থিরতায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পর্যটন খাত
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেশের পর্যটন খাতের জন্য বড় ধাক্কা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, কুয়াকাটাসহ দেশের বেশিরভাগ জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যে দর্শনার্থীর সংখ্যা ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে।
দেশব্যাপী বিএনপি ও সমমনা বিরোধী দলগুলোর চলমান অবরোধ ও হরতালের কারণে ৯০ শতাংশ অগ্রিম বুকিং বাতিল হয়ে যায়। একসময়ের ব্যস্ত হোটেল-মোটেলগুলো নজিরবিহীন শূ্ন্য হয়ে পড়েছে।
পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টের অগ্রিম বুকিং বাতিল হওয়ায় গত কয়েক সপ্তাহে দেড় হাজার কোটি টাকার লোকসান গুনতে হয়েছে।
হোটেল-মোটেল মালিকরা জানান, অক্টোবরের আগে কক্সবাজারের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলের ৫০-৬০ শতাংশ কক্ষ প্রতিদিন বুকিং হতো।
এছাড়া, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে পর্যটকদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এই সংখ্যা ৫০ হাজার থেকে নেমে মাত্র ৫-১০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। দর্শনার্থীদের বেশিরভাগই মূলত স্থানীয়। কুয়াকাটা ও সেন্টমার্টিনেও একই অবস্থা বিরাজ করছে।
আরও পড়ুন: পর্যটন শিল্পের বিকাশে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো জরুরি: সেমিনারে বক্তারা
হোটেল ও মোটেল মালিকরা তাদের কর্মচারীদের উপর এর প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কারণ, ব্যবসায়িক মন্দার কারণে কর্মী ছাঁটাই বাধ্য করে এবং বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রে সংকট তৈরি করে।
কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, রাঙ্গামাটি ও কুয়াকাটার মতো পর্যটন স্পটগুলোতে এর প্রভাব নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশি।
তিনি বলেন, 'পর্যটন খাতের জন্য সংকটময় সময় এখন। নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের বুকিং বাতিল করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, কক্সবাজার, কুয়াকাটা, সুন্দরবন, সিলেট, রাতারগুল, জাফলং-তামাবিল, রাঙ্গামাটি ও পতেঙ্গা সৈকতে এই সময় পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু সেগুলো এখন ফাঁকা।
তিনি আরও বলেন, সেন্টমার্টিনে তার একটি হোটেল থাকলেও এর ৯০ শতাংশ কক্ষ এখন খালি পড়ে আছে।
তিনি বলেন, 'পর্যটন মৌসুম সাধারণত অক্টোবরে শুরু হয় এবং নভেম্বরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলে এই মাসে প্রায় খালি রয়েছে হোটেল ও মোটেল। অবরোধের কারণে বুকিং বাতিল করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিদেশি পর্যটকদের জন্য আমাদের দেশের ভিসা পদ্ধতি সহজ করা উচিত: পর্যটন প্রতিমন্ত্রী
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ জানান, লাগাতার অবরোধের কারণে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল এখন খালি পড়ে আছে।
কলাতলী মেরিন ড্রাইভ রোড হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুখিম খান বলেন, দীর্ঘ অবরোধের কারণে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হবে।
পর্যটন খাতকে বাঁচাতে পর্যটকবাহী যানবাহন হরতাল ও অবরোধের আওতার বাইরে রাখতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
একই সুরে কথা বলেন কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ। তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণে যেতে চায় না। নিরাপত্তাজনিত কারণে বিপুলসংখ্যক বুকিং বাতিল করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: পর্যটন পরিকল্পনার বড় অংশ হচ্ছে চাঁদপুর আধুনিক নৌবন্দর: দীপু মনি
নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ গভীর খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে: ড. দেবপ্রিয়
৭ জানুয়ারির আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও রাজনীতি এই তিনটি প্রধান ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ গভীর খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে।’ আসন্ন নির্বাচন একতরফা হলে দেশের সংকট আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ চলতি সপ্তাহে ঢাকায় ইউএনবির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে তার মতামত জানিয়েছেন।
এসময় ড. দেবপ্রিয় বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং একদলীয় নির্বাচন অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা আরও বাড়াবে। কারণ বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ একটি সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়, যা টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্যও খুব প্রয়োজন।
বড় রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) রাজনৈতিক দল তৈরি করে তাদের ইচ্ছামতো নিবন্ধন দিচ্ছে।
তিনি বলেন, এখানে বিভিন্ন স্বার্থ রয়েছে বলে বাংলাদেশ এখন বৈশ্বিক শক্তির দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। আগামী নির্বাচন আগের গত নির্বাচনের মতো হবে, না কি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক হবে তারা তা পর্যবেক্ষণ করছেন।
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের বিষয়ে তিনি বলেন, মানুষ দীর্ঘদিন ধরে মুদ্রাস্ফীতির ধাক্কা সহ্য করে আসছে, অথচ মহামারির পরে এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময়ও অনেক দেশ এক্ষেত্রে উন্নতি করেছে।
তিনি বলেন, এখানে খাদ্য মূল্যস্ফীতি প্রায় ১২ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলে মূল্যস্ফীতি শহরাঞ্চলের তুলনায় বেশি, যা আগে দেখা যায়নি।
তার মতে, টাকার ক্রমাগত দরপতনের কারণে আমদানি মূল্যস্ফীতির মুখে পড়তে হচ্ছে জনগণকে।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই ধরনের মুদ্রাস্ফীতি কমানোর কোনো দৃশ্যমান লক্ষণ নেই।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমদানি এক-চতুর্থাংশ কমে যাওয়ায় রাজস্ব উৎপাদন মারাত্মকভাবে কমে গেছে।
তিনি আরও বলেন, রাজস্ব বোর্ডের অদক্ষতার কারণে রাজস্ব আদায় কম হয়েছে।
আরও পড়ুন: রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সবসময়ই অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা তৈরি করে: আহসান মনসুর
ড. দেবপ্রিয় বলেন, নির্বাচনের বছরের মধ্যেও সরকার স্থানীয় সরকার পর্যায়ে প্রতিশ্রুত উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করতে পারে না।
তিনি বলেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু সংসদ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত এই স্থবিরতা যাবে না। সব খাতে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার জন্য এটি প্রয়োজনীয়।
তিনি আরও বলেন, আমদানির ব্যাপক পতন অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যবৃদ্ধি সৃষ্টি করেছে এবং কয়েকটি সিন্ডিকেট এটিকে দাম বাড়ানোর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছে।
ব্যক্তিগত ও সামগ্রিক আয় বাড়ানো সত্ত্বেও রাজস্ব ঘাটতি বাড়ছে, দুর্নীতি ও অর্থপাচার কমছে না; জবাবদিহিতার অভাবে এগুলো ঘটছে।
তিনি বলেন, সরকার টপ টু বটম কোথাও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারছে না, কারণ রাজনৈতিক ও নৈতিক বৈধতা না থাকায় তারা আমলা ও রাষ্ট্রীয় সংস্থার উপর নির্ভরশীল।
তিনি আরও বলেন, শুধু তাই নয় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়েও কিছু প্রভাবশালী দেশ হস্তক্ষেপ করছে, যা আগে কখনো হয়নি। এগুলো সবই এখানে ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের ফলাফল এবং তারা (বিদেশিরা) রাজনৈতিক মতবিরোধ ও সরকারের নৈতিক বৈধতার অভাবের সুযোগ নিচ্ছে।
গত নির্বাচনের বৈধতা প্রসঙ্গে ড. দেবপ্রিয় বলেন, সংবিধানের বিবেচনায় ওই নির্বাচনগুলো বৈধ হলেও, রাজনৈতিক ও নৈতিক বৈধতার অভাব ছিল।
তিনি বলেন, একটি দেশ শক্তিশালী হয় যখন তার স্বাধীন রাষ্ট্রীয় অঙ্গগুলো শক্তিশালী হয়। বাংলাদেশে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সংস্থা উভয় পক্ষ পক্ষপাতমূলক ভূমিকা পালন করছে।
শ্রম অধিকারের বিষয়ে ড. দেবপ্রিয় বলেন, পশ্চিমা বিশ্ব কাজের পরিবেশ, অযথা হয়রানি এবং শ্রম অধিকার কর্মীদের জোরপূর্বক গুম করা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। পশ্চিমা জনগণ; যারা বাংলাদেশের পোশাক এবং অন্যান্য পণ্যের ক্রেতা, তারা এই বিষয়গুলো নিয়ে খুবই সচেতন ও উদ্বিগ্ন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনেক খাতেই সংস্কার করতে হবে। যেমন- বিপুল খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার করা, অর্থপাচার কমানো, কাজের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং নির্ভয়ে তাদের মতামত প্রকাশ করা।
কূটনৈতিক ক্ষেত্রে, বাংলাদেশি পণ্য, জনশক্তি ও রেমিটেন্সের রপ্তানি গন্তব্যের কথা মাথায় রেখে দেশকে বৈশ্বিক শক্তির সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: নির্বাচনের আগে অবরোধ ও হরতালের কারণে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে: ড. আতিউর
নির্বাচনের আগে অফশোর হাইড্রোকার্বন অনুসন্ধানের আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের পরিকল্পনা স্থগিত