���������������-���������������
সীতাকুণ্ডে উৎপাদিত শিম যাচ্ছে ইতালিতে, নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন
শিমের রাজ্য হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই পাশে বিস্তীর্ণ জমিতে চোখে পড়ে শিম আর শিম। শুধু ফসলি জমি নয় পাশাপাশি জমি পৃথকীকরণের সীমানার উঁচু অংশ, মেঠোপথ, রেললাইনের দুই পাশ থেকে শুরু করে পতিত ভূমিতেও চোখে পড়ে শিমের মাচা। বেড়িবাঁধ আর পাহাড়ি ঢাল- বাদ নেই কিছুই। এখানে উৎপাদিত শিম দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ছাড়িয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। তবে এবারই প্রথমবারের মতো এই শিম ইউরোপের দেশ ইতালিতে রপ্তানি হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। আর এর মাধ্যমেই দেশের অর্থনীতিতে উন্মোচন হতে পারে নতুন সম্ভাবনার দ্বার।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলাকে বলা হয় ‘সবজি ভাণ্ডার’। সারা বছর বিপুল পরিমাণ সবজির আবাদ হয়ে থাকে এই উপজেলায়। তবে শীত মৌসুমে এ উপজেলা হয়ে ওঠে শিমের রাজ্য। দিগন্ত জোড়া মাঠের যেদিকেই চোখ যাবে চার দিকে চোখে পড়বে শুধেই শিম।
চাষিরা জানান, মৌসুমে কাঁচা শিম বিক্রি হলেও শিমের শুকনো বিচি বিক্রি হয় সারা বছরই। এবারের অনুকূল আবহাওয়ায় ভালো ফলন ও বাড়তি দাম পেয়ে সন্তুষ্ট কৃষকরা।
এদিকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলছেন, সীতাকুণ্ডের মাটি শিম চাষের উপযোগী এবং শিম চাষ বোরো ধানের চেয়ে লাভজনক। তাই এ উপজেলায় এবার ২ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে এবার শত কোটি টাকা মূল্যের ৪৭ হাজার মেট্রিক টন শিমের ফলন হবে। শিমের কাঁচা ও শুকনো বিচির দাম হিসাব করলে তা আরো বাড়বে বলছেন কৃষিবিদরা।
আরও পড়ুন: সাতক্ষীরায় হলুদ তরমুজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে, বিঘাপ্রতি লাভ লাখ টাকা
পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন পাহাড় ও টেরিয়াইল,বারৈয়াঢালা, বাড়বকুণ্ড ও ভাটিয়ারী, কুমিরা, পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে শিমের আবাদ হয়েছে। একদিকে যেমন শিমের মৌসুমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে, অন্যদিকে আর্থিকভাবেও লাভবান হওয়ার পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতেও বিরাট ভূমিকা রেখে চলেছেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কৃষক পরিবারগুলো।
উপজেলার ইদিলপুর গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা সৌখিন কৃষক মো. হাসান জানান, ঢাকার যাত্রাবাড়ীর ‘লা আমরে ইমপেক্স’ নামক একটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান তার থেকে ৬০ টাকা কেজি হিসেবে ৫০০ কেজি শিম ইতালিতে রপ্তানি করার উদ্দেশ্যে প্রথমবারের মতো কিনে নিয়ে গেছেন। প্রথমে ৫০০ কেজি শিম নিয়ে তা প্যাকেট করে পরীক্ষামূলকভাবে আকাশপথে ইতালিতে পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘এ বছর দুই হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে প্রায় ২৫ হাজার কৃষক শিম চাষ করেছেন। এখান থেকে ৪৭ হাজার মেট্রিক টন শিমের উৎপাদন হবে বলে আশা করছি। যার বাজারমূল্য ১০০ কোটি টাকারও বেশি।’
তিনি বলেন, স্থানীয় শিম আগেও দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। তবে এবার প্রথমবারের মতো ৫০০ কেজি শিম আকাশপথে ইউরোপের দেশ ইতালিতে যাচ্ছে। এটি আমাদের দেশ ও সীতাকুণ্ডবাসীর জন্য অনেক গর্বের বিষয়। এই রপ্তানি অব্যাহত থাকলে দেশ লাখ লাখ ডলার আয় করে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে। সচ্ছল হবে কৃষকরা।
আরও পড়ুন: শেষ মৌসুমে ‘গৌড়মতি’ আম চাষে মামা-ভাগ্নের সাফল্য
৩০০ বছরের পুরোনো দেশের সর্ববৃহৎ সরোজগঞ্জ গুড়ের হাট
জমে উঠেছে চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জের কয়েকশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী খেজুর গুড়ের হাট। শীতের এই সময়ে গুড় কিনতে বিভিন্ন জেলা থেকে আসছেন পাইকাররা।
বেচাকেনার জন্য এই হাটের ঐতিহ্য অনেক পুরোনো। দিনদিন বেড়েছে এই গুড়ের হাটের চাহিদা। কিন্তু সরবরাহ কম হওয়ায় বাইরের জেলা থেকে এসে পর্যাপ্ত গুড় না পেয়ে হাট থেকে ফিরে যাচ্ছেন বেপারীরা।
কৃষি বিভাগসূত্রে জানা যায় , দিনদিন খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় গুড় উৎপাদনের পরিমাণ কমে গেছে। গুড়ের চাহিদা পূরণ করার জন্য খেজুর গাছের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। খেজুর গাছ লাগাতে উৎসাহী করা হচ্ছে।
সরজমিনে হাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটের চারপাশে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাক ডাকে মুখর হয় এই খেজুর গুড়ের হাট। সপ্তাহের দু-দিন শুক্রবার ও সোমবারে খেজুর গুড়ের হাট বসে। এই হাটে এবার খেজুর গুড়ের চাহিদা বেশি কিন্তু সরবরাহ কম। কৃষকরা তাদের খেজুর গাছ কেটে ফেলছে। আবার অনেক খেজুর গাছের বয়স হয়ে যাওয়া তা থেকে রস পাওয়া যাচ্ছে না। তাই গাছের সংখ্যা যেমন কমে যাচ্ছে। ঠিক তেমনি দেশে খেজুর গুড়ের সরবরাহ কমে যাচ্ছে।
এদিকে জেলার কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, গুড়ের চাহিদা পূরণে গাছ বৃদ্ধি করে দেশে গুড়ের ঘাটতি কমানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যাতে তারা খেজুর গাছের সংখ্যা বাড়ায়। একই সঙ্গে গুড়ের চাহিদা ও সরবরাহ ঠিক রাখা যায়।
আরও পড়ুন: খেজুরের রস কাঁচা না খাওয়ার পরামর্শ খুলনার সিভিল সার্জনের
হাট সূত্রে জানা গেছে, এই ঐতিহ্যবাহী সরোজগঞ্জের গুড়ের হাটে প্রতি কেজি গুড় বিক্রি হয় ২০০- ২৫০ টাকা করে। প্রতি সপ্তাহে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকার গুড় বেচাকেনা হয়। প্রতিবছর এই হাট থেকে বেচাকেনার মোট পরিমাণ দাঁড়ায় ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা। এই হাটের গুড় দেশের জেলাগুলোর মধ্যে ঢাকা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, পাবনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, মাগুরা, রাজবাড়ী, পঞ্চগড়, সিলেট, খুলনা, রংপুর, রাজশাহীসহ আরও অন্যান্য জেলায় এই গুড় সরবরাহ এবং বিক্রেতারাও এই হাটে গুড় কিনতে আসেন। এই হাটে গুড় বেচাকেনা করে কৃষক ও হাটমালিকরাও লাভবান হয়। এছাড়া চিনির দাম বাড়াই এবার বলতে গেলে শতভাগ গুড় নির্ভেজাল।
নাম প্রকাশ করে এক গুড় প্রস্তুতকারী চাষি বলেন, গুড়ে চিনি মিশাবো কিভাবে, চিনির যে দাম। চিনি মিশালে উল্টো লস হবে।
জিল্লুর রহমান নামের এক গুড় ব্যবসায়ী বলেন, গুড়ের দাম বেড়েছে। এখন প্রতি ভাড় (গুড় রাখার পাত্র) গুড় চব্বিশ-পচিশ শ’ টাকা। তবে চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় গুড়ে ভেজাল বন্ধ হয়েছে। আমাদের এই হাটের ঝোলা গুড়-নলেন পাটালি সারা দেশেই বিখ্যাত। তবে অন্য বছরের তুলনায় এবার হাটে চাহিদা বেশি। তবে সরবরাহ অনেক কম। বাইরের ব্যাপারীরা অনেকেই ইচ্ছামতো গুড় কিনতে পারছেন না।
আরও পড়ুন: নিপা ভাইরাস এড়িয়ে খেজুর রস খাওয়ার উপায়
পাবনা থেকে আসা শহিদুল ইসলাম নামের এক গুড়ের ব্যাপারী বলেন, এবার গুড়ের দামও বেশি এবং সরবরাহ কম। তবে গুড়ে ভেজাল নেই। এছাড়া এই হাটে আসলে আমরা ব্যাপারীরা বেশ নিরাপত্তাও পাই। কিন্তু ইচ্ছামতো গুড় কিনতে পারছি না। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম।
চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার চুয়াডাঙ্গা সদরে ৯৮ হাজার ৫০০টি গাছ। আলমডাঙ্গায় ৪৫ হাজার ৫১০টি গাছ, দামুড়হুদায় নয় হাজার ২০০টি গাছ, জীবননগরে ৩৭ হাজার ৪৫০টি গাছ। এবার মোট দুই লাখ ৭১ হাজার ৯৬০টি খেজুর গাছ প্রস্তুত করা হচ্ছে। এতে এবার গুড়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। এই লক্ষ্যমাত্রা গুড়ের বিক্রির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রতিবার এই গাছ প্রস্তুতে কর্মসংস্থান হয় প্রায় ৩০ হাজার কৃষকের।
রাজবাড়ী থেকে আসা এক ক্রেতা বলেন, এবার এই গুড়ের হাটে চাহিদা ব্যাপক। কিন্তু তুলনামূলক সরবরাহ কমে গেছে। ফলে বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে পর্যাপ্ত গুড় না পেয়ে আমরা হাট থেকে ফিরে যাচ্ছি। খেজুর গাছের সংখ্যা এবার কমে গেছে। তাই গুড়ের চাহিদার আলোকে সরবরাহ হচ্ছে না।
স্থানীয় গুড় ব্যবসায়ী উজ্জ্বল কুমার অধিকারী বলেন, আমাদের এই গুড়টা সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, পাবনা ও ঢাকাসহ সারা দেশে যায়। বাপ-দাদার মুখে শুনে আসছি এটা তিনশ’ বছরের পুরোনো দেশের সর্ববৃহৎ হাট। আর আমাদের এই হাটের গুড়-পাটালির খুব চাহিদা আছে।
আরও পড়ুন: গ্রামে নগরায়নের ছোঁয়া, খুলনায় মিলছে না খেজুরের রস
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের গুড় ব্যবসায়ী বাবুল বলেন, এই হাট তিনশ’ বছরের আগের হাট। এই হাটে খাটি গুড় পাওয়া যায়। এখানকার গুড়ে কোনো ভেজাল নেই। বহু জায়গা থেকে ব্যাপারী আসে এখানে।
সামসুল মিয়া নামের একজন চাষি বলেন, গত বছর ২৫টি গাছ প্রস্তুত ছিল তার। এবার সে সংখ্যা মাত্র ১২টি গাছ প্রস্তুত হয়েছে। এই গাছ থেকে যেটুকু রস পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়েই গুড় তৈরি করা হচ্ছে। পরে তা হাটে তোলা হয়েছে। দামও এবার ভালো।
কনকনে শীতেও তীব্র গ্যাস সংকটের মধ্যেই চলছে লোডশেডিং
অত্যন্ত ঠান্ডা সত্ত্বেও তীব্র গ্যাস সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় দেশে লোডশেডিং হচ্ছে।
দেশের সঞ্চালন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তথ্যে দেখা যায়, বুধবার (২৪ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ৯১১৩ মেগাওয়াটের নিচে নেমে আসার পর দেশে প্রায় ৩২২ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়।
সাধারণত গ্রীষ্ম মৌসুমের তুলনায় তীব্র শীতকালে চাহিদা তুলনামূলকভাবে কম থাকে। গ্রীষ্মে চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার মেগাওয়াট।
আরও পড়ুন: লোডশেডিং: বিপিডিবি চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে বিএনপি
পিজিসিবির তথ্যে আরও দেখা যায়, এ সময় দেশে চাহিদার পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৪৫০ মেগাওয়াট এবং গ্যাসভিত্তিক উৎপাদন ১১ হাজার ৭০৮ মেগাওয়াটের বিপরীতে ৪ হাজার ৫৩ মেগাওয়াটে নেমে আসে, যা দেশের মোট গ্রিড সংযোগের ২৫ হাজার ৯৫১ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার ৪৫ দশমিক ১২ শতাংশ।
এতে দেখা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে গ্যাস সংকটের কারণে গত ২১ জানুয়ারি বেলা ১১টায় দেশে সবচেয়ে বেশি ৮০৮ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোবাংলার কাছে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, গ্যাসের অভাবে প্রায় ৩০টি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে, যার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউনিক মেঘনাঘাট ৫৮৪ মেগাওয়াট, ডরিন নরসিংদী ২২ মেগাওয়াট এসআইপিপি, ডরিন টাঙ্গাইল ২২ মেগাওয়াট এসআইপিপি, সামিট মেঘন। ৩৩৫ মেগাওয়াট, এইচপিএস (১০০ মেগাওয়াট), সিদ্ধিরগঞ্জ (২x১২০ মেগাওয়াট), টঙ্গী (৮০ মেগাওয়াট), আগ্রেকো (জিএসএল)-১৪৫ মেগাওয়াট রেন্ট, এইচপিএল (৩৬০ মেগাওয়াট), চাঁদপুর ১৫০ মেগাওয়াট সিসিপিপি, এপিএস ৪৫০ মেগাওয়াট সিসিপিপি, আশুগঞ্জ ২০০ মেগাওয়াট মডুলার, এপিএস ৪৫০ মেগাওয়াট সিসিপিপি ই, সিকলবাহা ৪০ মেগাওয়াট, রাউজান (২x২১০ মেগাওয়াট), এস.বাজার ১০০ মেগাওয়াট, এস.বাজার ৩৩০ মেগাওয়াট, কে.গাঁও ৩ বছরের রেন্ট ৫০ মেগাওয়াট, এস.বাজার ৩ বছরের রেন্ট ৫০ মেগাওয়াট, কে গাঁও ১৪২ মেগাওয়াট, হবিগঞ্জ ১১ মেগাওয়াট এসআইপিপি, বিবিয়ানা-৩ ৪০০ মেগাওয়াট, এফ.গঞ্জ ১৫ বছরের ভাড়া ৫১ মেগাওয়াট, এফ.গঞ্জ ৩ বছরের ভাড়া ৫০ মেগাওয়াট, বগুড়া ৩ বছরের ভাড়া (২০ মেগাওয়াট), বগুড়া ১৫ বছরের ভাড়া (২০ মেগাওয়াট), বাঘাবাড়ী (১০০+৭১ মেগাওয়াট, এনডব্লিউপিজিসিএল ইউনিট - ১,২,৩, আগ্রেকো ৯৫ মেগাওয়াট এবং ভেড়ামারা ৩৬০ মেগাওয়াট।
এসব কেন্দ্রের সম্মিলিত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৬০১২ মেগাওয়াট, যা থেকে দেশ বঞ্চিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে অনাবৃষ্টি ও ব্যাপক লোডশেডিংয়ে আমনের খেত ফেটে চৌচির
তথ্য থেকে আরও জানা যায়, পেট্রোবাংলা তার মোট ৪ হাজার এমএমসিএফডি চাহিদার বিপরীতে দৈনিক ২৫৮২.৬ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফডি) গ্যাস উৎপাদন করছে, যার ঘাটতি দেড় হাজার এমএমসিএফডির বেশি।
পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা এই সংকটকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি কমে যাওয়াকে দায়ী করেছেন।
একজন কর্মকর্তা বলেন, 'দুটি এলএনজি টার্মিনালের সম্মিলিত সক্ষমতা মোট ১০০০ এমএমসিএফডি এবং তারা ৫২৯টি এমএমসিএফডি সরবরাহ করছে যা তাদের সক্ষমতার প্রায় অর্ধেক।’
তিনি বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে এলএনজি আমদানি কমে যাওয়ার পেছনে চলমান ডলার সংকট প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
গ্যাস সরবরাহ সংকটের কারণে ঢাকা ও অন্যত্র আবাসিক ক্রেতারা তাদের দৈনন্দিন রান্নায় মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এ ছাড়া শিল্প কারখানাগুলো চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, দিনের বেলায় তারা গ্যাস পান না, তাই রান্না করতে মধ্যরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
পেট্রোবাংলা ও তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তারা বলছেন, ডলার সংকট পুরোপুরি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তারা সরবরাহে উল্লেখযোগ্য উন্নতির কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না।
এদিকে ঢাকা শহরের পরিস্থিতির শিগগিরই উন্নতি হবে বলে আশাবাদী বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
তিনি বলেন, তার মন্ত্রণালয় এলপিজি আমদানি বাড়ানোর ব্যবস্থা নিচ্ছে কারণ ৮০ শতাংশ গৃহস্থালি গ্রাহক এই তরলীকৃত গ্যাস ব্যবহার করেন এবং মাত্র ২০ শতাংশ পাইপযুক্ত গ্যাস ব্যবহার করেন।
আরও পড়ুন: লোডশেডিং: ১৩ ও ১৬ জুন মহানগরীগুলোতে রোডমার্চ করবে বিএনপি
সব মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সেরা কাজ করব: সাবের হোসেন চৌধুরী
বাংলাদেশে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনে কর্মপরিকল্পনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে ইউএনবির সঙ্গে কথা বলেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী।
সচিবালয়ে ইউএনবিকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো-
ইউএনবি : মন্ত্রণালয়ে কোন কোন বিষয়কে চ্যালেঞ্জ মনে করছেন?
মন্ত্রী: পানি, বায়ু ও শব্দদূষণসহ পরিবেশ রক্ষায় মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয়ই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করি। কারণ, পরিবেশ অধিদপ্তর শুধু মানদণ্ড নির্ধারণ করে থাকে। শব্দদূষণের ক্ষেত্রে কোন এলাকায় কি পরিমাণ? বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে কখন বিপজ্জনক অবস্থায় চলে যাচ্ছে! আমরা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে থাকি। কিন্তু এনফোর্সমেন্টের দায়িত্ব শুধু আমাদের নয়। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের। এটা একটা সমন্বয়ের বিষয়। এটা আমরা কীভাবে করব? জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে খাদ্য, পানিসম্পদ, বাণিজ্য, স্থানীয় সরকার ও শিল্প মন্ত্রণালয়সহ সরকারের আরও অনেক দপ্তর জড়িত। সুতরাং এই এজেন্ডা শুধু পরিবেশের নয়, এটা পুরো সরকারের। সরকারকেই সেই দায়িত্বটা নিতে হবে। আমরা শুধু সমন্বয়ের দায়িত্বটা নিতে পারি।
আরও পড়ুন: ইটভাটার দূষণ শনাক্তে ‘ব্রিক ক্লিন ট্র্যাকার’ ব্যবহার করবে সরকার: পরিবেশমন্ত্রী
ইউএনবি: আপনার মন্ত্রণালয়ের প্রথম অগ্রাধিকার কী?
মন্ত্রী: প্রথমে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি যে বিষয় নিয়ে কাজ করব তার সক্ষমতা কতটুকু আছে। মন্ত্রণালয় ও এর অধীনে যে সব সংস্থা আছে, তাদের সক্ষমতা আছে কি না? আমাদের মন্ত্রণালয়ের নাম কিন্তু পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। জীববৈচিত্র্য একটা বড় বিষয়। সেটাতে ফোকাস দরকার, কিন্তু এটা মন্ত্রণালয়ে কাঠামোতেই নেই। সুতরাং মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতাও গুরুত্বপূর্ণ।
ইউএনবি : জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম। এ বিষয়ে আপনার কী পরিকল্পনা আছে?
মন্ত্রী: মন্ত্রণালয়ের তিনটি বিষয়ের মধ্যে একটা জলবায়ু পরিবর্তন। বিষয়টি বৈশ্বিক এবং এতে আমাদের কোনো হাত নেই। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত আমরাই। সেখানে আমাদের কৌশল হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কতটুকু কমাতে পারি, মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি। কার্বন নিঃসরণে আমাদের নিয়ন্ত্রণ না থাকলেও যে পরিমাণ অর্থ আমাদের পাওয়ার কথা তা পাচ্ছি না। উন্নত দেশ বা দাতাগোষ্ঠী অর্থ দেওয়ার ক্ষেত্রে যে অঙ্গীকার করেছিল, তা রক্ষা করে না। তাদের দেওয়া সীমিত অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আমাদের যেসব কর্মপরিকল্পনা আছে তা স্বচ্ছতা ও সাশ্রয়ের সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে হবে।
আরও পড়ুন: প্লাস্টিকমুক্ত দেশ গড়ার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের
জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশ দায়ী না হলেও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সবচাইতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী জনমত গড়তে কাজ করব।
সত্যিকারের টেকসই উন্নয়ন পরিবেশের উন্নয়ন ছাড়া সম্ভব নয়। তাই পরিবেশ রক্ষায় বাংলাদেশের নীতি ও আদর্শগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। নানাবিধ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সমস্যা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণকে বাসযোগ্য পরিবেশ ও উন্নত জীবন দিতে কাজ করব।
ইউএনবি: পরিবেশ রক্ষায় আপনার কী পরিকল্পনা আছে?
মন্ত্রী: পরিবেশে নানা ধরণের চ্যালেঞ্জে আছি। বায়ুদূষণে প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ অকালে মারা যাচ্ছে। আমাদের জীবন থেকে বছরগুলো হারাচ্ছে ও উৎপাদনশীলতা নষ্ট হচ্ছে। এটা নতুনভাবে বলার কিছু নেই। সুতরাং আমরা যখন টেকসই উন্নয়নের কথা বলব, তখন পরিবেশের বিষয়টি একেবারে মূলধারায় চলে আসে। নদীদূষণ আরও একটা বড় চ্যালেঞ্জ। পাহাড় কাটা হচ্ছে। সেখানে কীভাবে কার্যকর ব্যবস্থা নেব? সবাই বলছে এটা থামাতে হবে। কিন্তু কীভাবে? বিভিন্ন জায়গায় ইটিপি প্ল্যান্ট বসানো আছে। বাস্তবে আমরা দেখেছি, অনেক ক্ষেত্রে ইটিপি প্ল্যান্টগুলো চালু রাখা হয় না। পরিদর্শক যাবে ঠিক তার আগে চালু করা হয়। আর যদি প্ল্যান্ট বন্ধ অবস্থাও পাই তাতে যে জরিমানা আছে তা মোটেও যথেষ্ট নয়। এটা হালনাগাদ করতে হবে।
আরও পড়ুন: দ্রুত লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড পেতে পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত
পরিবেশ ও বন এ দুটো বিষয় সম্পূর্ণভাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণে। এটা নিয়ে আমরা অন্য কাউকে দোষারোপ করতে পারব না। এই দু’টি ক্ষেত্রে যদি কোনো দূষণ হয়ে থাকে এটার জন্য আমরাই সম্পূর্ণভাবে দায়ী। বন যে উজাড় হচ্ছে তা সারা বিশ্বের পরিসংখ্যানে বাংলাদেশেই বেশি। সুতরাং একটা হচ্ছে বনের সংরক্ষণ, আরেকটা হচ্ছে বেদখল বন পুনরুদ্ধার। আরেকটা হচ্ছে যদি সম্প্রসারণ করা যায়, সেটাও বড় বিষয়। বন শুধু গাছ না, এটার সঙ্গে জীববৈচিত্র্য রয়েছে। পুরো ইকো সিস্টেম সম্পৃক্ত (রিলেটেড)। উন্নয়নমূলক কাজ করার সময় অনেকে বলে ৫ হাজার গাছ কাটলে ৫০ হাজার গাছ লাগাবো। সেটা কিন্তু কখনোই এটার ক্ষতিপূরণ হতে পারে না। কারণ এটা শুধু গাছ না, এটার সঙ্গে জীববৈচিত্র্যও আছে।
ইউএনবি: জলবায়ু ফান্ড সঠিক ব্যবহার ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আপনার পরিকল্পনা কী?
মন্ত্রী: প্রাপ্ত বরাদ্দ যাতে প্রকৃতপক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের হাতে পৌঁছায়- তা নিশ্চিত করা হবে। আন্তর্জাতিক লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড থেকে দ্রুততম সময়ে বরাদ্দ আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে এবং জলবায়ু ফান্ডের অর্থ ব্যবহারে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করে এর সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।
ইউএনবি: বায়ুদূষণের জন্য অন্যতম দায়ী ইটভাটাগুলোর ব্যাপারে কী কী ব্যবস্থা নেবেন?
মন্ত্রী: জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় বায়ুদূষণের বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ লক্ষ্যে বায়ুদূষণকারী ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হবে। বায়ুদূষণের জন্য দায়ী অন্যান্য বিষয়গুলো বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
পরিবেশ দূষণকারী ও অবৈধ ইটভাটা শনাক্তকরণ ও তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়তার জন্য ‘ব্রিক ক্লিন ট্র্যাকার’ ব্যবহার করা হবে। এর ফলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অত্যন্ত ক্ষতিকর ইটভাটা শনাক্ত করে অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করা সহজ হবে। ফলে ইটভাটার সৃষ্ট বায়ুদূষণ হ্রাস করা সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন: কপ২৯ অনুষ্ঠিত হবে আজারবাইজানে
পরিবেশ অধিদপ্তর ও সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটর যৌথ উদ্যোগে আইটি ও রিমোর্ট সেন্সিং প্রযুক্তি নির্ভর ‘ব্রিক ক্লিন ট্র্যাকার’ তৈরি করা হয়েছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সহ সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এই ট্রাকারের সহায়তায় পরিবেশ অধিদপ্তরের মনিটরিং এবং এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম জোরদার ও সফল হবে।
ইউএনবি : পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রদানে জনগণের ভোগান্তি কমাতে উদ্যোগ নেবেন কী?
মন্ত্রী: জনগণ যাতে সঠিকভাবে যথাসময়ে এ সংক্রান্ত সেবা পেতে পারে তার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। জনগণের ভোগান্তি কমাতে পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রদান পদ্ধতির সহজীকরণ করা হবে। ছাড়পত্র প্রদানে কোনও অনিয়ম সহ্য করা হবে না।
ইউএনবি: কী আছে ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনায়?
মন্ত্রী: ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনা আগামী সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে। মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অগ্রাধিকারমূলক কর্মকাণ্ড অন্তর্ভুক্ত করে ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। বিশেষ করে , বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, পানিদূষণ, প্লাস্টিক-পলিথিন দূষণ এবং পাহাড় কর্তন রোধে অংশীজনদের পরামর্শ গ্রহণ করে সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার এবং মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হবে।
টেকসই উন্নয়ন, বন দখল রোধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করা হবে। আন্তর্জাতিক অর্থছাড়ের চেষ্টা করা হবে। পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়কে পারফরমেনন্সের দিক দিয়ে ১ নম্বরে নেওয়ার চেষ্টা করা হবে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।
এছাড়াও, পরিবেশ দূষণ রোধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন তাই অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করব।
আরও পড়ুন: সাফারি পার্ক নির্মাণের ফলে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে: পরিবেশমন্ত্রী
ফরিদপুরে সূর্যমুখী ফুলে আকৃষ্ট হচ্ছেন মানুষ
ফরিদপুরের ফসলি মাঠগুলো এখন দেখতে অনেকটাই হলুদের গালিচা বিছানো এক প্রান্তরে পরিণত হয়েছে। কাছে যাওয়ার পরই কেবল এমন সৌন্দর্যের দেখা মেলে। সূর্যমুখী ফুলে সজ্জিত হয়ে যেন রূপ নিয়েছে স্বর্গীয় এক বাগানের। প্রকৃতির এমন স্নিগ্ধতা টানছে প্রকৃতি প্রেমিকদের। শীতের হিমবাতাসে দোল খেয়ে ফুলগুলো নিজের সৌন্দর্য বিলিয়ে বিমোহিত করছে দর্শনার্থীদের। তবে আর্থিক দিক বিবেচনায়ও এই ফুলচাষে আকৃষ্ট হচ্ছেন মানুষ।
এমন অপরুপ সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিন ভীড় করছে দূর-দূরান্ত থেকে আসা হাজারো প্রকৃতি প্রেমিক। কেউ বন্ধুদের সঙ্গে আসছেন, কেউ বা আসছেন পরিবার পরিজন নিয়ে। ভালো লাগা স্মৃতি ধরে রাখতে নানা ভঙ্গিতে নিজেদের করছেন ক্যামেরাবন্দী।
আরও পড়ুন: বিশ্বনাথে বাড়ছে সূর্যমুখী ফুলের চাষ
এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্যটি ফরিদপুর শহরতলীর বদরপুর এলাকার বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ কেন্দ্রে। এখানে ৩ একর জায়গাজুড়ে বপন করা হয়েছে বারি সূর্যমুখী-২ জাতের ফুলের বীজ। ডিসেম্বরের শেষ ভাগ থেকে প্রতিটি গাছে ফুল ফুটতে শুরু হয়।
স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এই ফুলের চাষ। ফরিদপুর বিএডিসির উৎপাদিত বীজ স্থানীয় চাহিদা পুরণ করে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।
বৈচিত্র্যময় কৃষির জেলা ফরিদপুর। এ জেলায় প্রায় সবধরণের ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। সে কারণেই ফরিদপুরে শুরু হয়েছে অধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সূর্যমুখী ফুলের চাষ।
ফরিদপুরের সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, সূর্যমুখীর তেল কোলেস্টেরলমুক্ত। প্রচুর পরিমাণে প্রাণশক্তি থাকায় আমাদের শরীরের দুর্বলতা, কার্যক্ষমতা বাড়াতে সূর্যমুখীর ভূমিকা অনন্য। যে কোনো তেলের চাইতে সূর্যমুখী তেল দশগুণ বেশি পুষ্টিসমৃদ্ধ। আর সে কারণেই ফরিদপুরে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এই ফুলের চাষ।
ফরিদপুর জেলার ৯টি উপজেলায় প্রায় দুইশতাধিক কৃষক চলতি মৌসুমে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। মাঠ জুড়ে হলুদ ফুলের সমারোহ। ফুলের সৌন্দর্য দেখতে আসছে দর্শনার্থীরাও। আর কৃষকরাও ভাল ফলন আশা করছেন।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে জনপ্রিয় হচ্ছে সূর্যমুখী ফুল চাষ
গঙ্গাবন্দি এলাকার চাষী গিয়াজ উদ্দিন জানান, অন্য ফসলের চেয়ে খরচ কম, অধিক লাভ হওয়ার কারনে এই ফুলের চাষ করেছি। আর ফুল দেখতে আসা দর্শনার্থীরা আগামীতে সূর্যমুখী ফুল চাষের আগ্রহ প্রকাশ করছেন অনেকেই।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে সারিবদ্ধভাবে বীজ বপন করা হয়। বীজ বপনের ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও দু’বার সেচ দিতে হয় এ ফসলে। প্রতি একর জমিতে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর এক একর জমির উৎপাদিত বীজ থেকে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা লভ করা সম্ভব। সূর্যমুখী গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, দিন দিন চাষীরা সূর্যমুখী ফুলের চাষাবাদের দিকে ঝুঁকছেন। এই তেলে কোনো ক্লোস্টোরেল নেই। যে কারণে চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এটা অন্য ফসলের চেয়ে স্বল্প জীবনকাল ও লাভজনক। সে কারণেই সূর্যমুখী ফুল চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে বলে জানান জেলার ।
তিনি বলেন, সূর্যমুখী তেলে মানবদেহের জন্য উপকারী অনেক গুণ থাকায় ভোক্তাদের চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে।
আরও পড়ুন: ফুলের ভালো দাম পেয়ে খুশি গদখালীর চাষিরা
ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে ঝালকাঠিতে বেড়েছে সরিষা চাষ
ঝালকাঠি জেলার গ্রামীণ জনপদগুলোর বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে। সরকার তৈল জাতীয় ফসলের আমদানি নির্ভরতা হ্রাসের উদ্যোগের অংশ হিসেবে কৃষি বিভাগের মাধ্যমে কৃষকদের নিয়ে সরিষা সূর্যমুখী ও তীল জাতীয় তেলের চাষাবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রণোদনা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
এই প্রণোদনার আওতায় প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকদের চাষাবাদের জন্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। দুই বছর আগেও ঝালকাঠি জেলায় সর্বাধিক ৪০০ হেক্টরে সরিষার আবাদ হতো এবং এ বছর তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১০১৭ হেক্টর। জেলার ৪টি উপজেলার মধ্যে ঝালকাঠি সদর উপজেলায় ৩২০ হেক্টর ও নলছিটি উপজেলা ৩১৬ হেক্টরে সর্বাধিক সরিষার চাষ হচ্ছে। এছাড়া জেলার অন্য দুই উপজেলা রাজাপুরে ১৮৫ হেক্টর ও কাঠালিয়ায় ১৯৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এ বছর ভাল উৎপাদন হয়েছে বলে দাবি করছে জেলার কৃষক ও কৃষি বিভাগ।
আরও পড়ুন: এক বছরে সরিষার উৎপাদন বেড়েছে ৩০০০ কোটি টাকার: কৃষি মন্ত্রণালয়
ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ বছর সরিষা চাষিদের মধ্যে ৬ হাজার কৃষককে ৬ হাজার বিঘা চাষের জন্য সার, বীজসহ প্রণোদনা সহায়তা দেয়া হয়েছে এবং জেলায় কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান আরও ২৫০ বিঘা চাষের জন্য সম সংখ্যক কৃষকের মধ্যে ৬ মণ বিভিন্ন জাতের বীজ বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। কৃষি বিভাগ সব সময় কৃষকের পাশে রয়েছে।
এই জেলায় প্রধানত বারি-৯, বারি-১৪, বারি-১৫, বারি-১৭ ও বারি-১৮ জাত, টরি-৭, বীনা-৪, ও বীনা-৫ এবং বিএডিসি-১ জাতের সরিষার চাষ হচ্ছে।
জানা যায়, বারি জাতের চেয়ে বীনা জাতের উৎপাদন একটু বেশি। তবে এই সকল জাতের হেক্টর প্রতি উৎপাদন গড় প্রায় ১ দশমিক ২৪ মেট্রিক টন। কৃষকরা এখন আর স্থানীয় জাতের সরিষার চাষ করেন না। কারণ, এর উৎপাদন হার হেক্টর প্রতি ১ টনেরও কম।
আরও পড়ুন: খুলনায় সরিষার বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা
জেলার গ্রামাঞ্চলে ছোট ও বড় আকারে অপেক্ষাকৃত উচুঁ জমিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সরিষার খেত। সরিষা চাষের কারণে কোন কোন এলাকা হলুদ ফুলের বাগানে পরিণত হয়েছে। তবে অনেক এলাকায় সরিষার খেতে ফুল ঝড়ে ফলন ধরেছে। কোনো কোনো সরিষার খেতে ইঁদুরের উপদ্রপ বেড় যাওয়ায় হতাশায় ফেলে দিচ্ছে কৃষকদের। ইঁদুর গাছের গোরা কেটে ফলসহ গাছ নিয়ে যায়। এদের ট্রাপ করে ধরা কঠিন কাজ।
প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকদের মধ্যে আক্ষেপ রয়েছে দলীয় পর্যায়ের এক শ্রেণির লোক- যারা চাষাবাদ না করেই ভূয়া কৃষকের পরিচয় দিয়ে প্রণোদনার সার বীজ হাতিয়ে নিয়ে বাজারে বিক্রি করে। অথচ যারা প্রকৃত চাষাবাদ করে তারা প্রণোদনার সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়।
ঝালকাঠি সদর উপজেলার বিনয়কাঠি ইউনিয়নের গরমগল এলাকার কৃষক সৈয়দ আবুল বাসার ১ একর জমিতে সরিষার চাষ করেছে। এবং তার ভাই সৈয়দ দেলোয়ারও ২ একর জমিতে চাষ করেছে সরিষা। তারা জানিয়েছে এ বছর ভাল ফলন হয়েছে আরও পরিচর্যা করা হলে বেশি ফলন পাওয়া যেত। একই গ্রামের পৃথক পৃথক প্লটে সরোয়ার হোসেন, সৈয়দ রিপন ও রিফাত হোসেনসহ শতশত কৃষক চাষ করেছে দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদার একটি অংশ পূরণকারী সরিষা।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে ১৫১.৩৮ কোটি টাকার সরিষার ফলনের প্রত্যাশা চাষিদের
কুষ্টিয়ার বাজারে দফায় দফায় বাড়ছে সব ধরনের চালের দাম
দেশের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ মোকাম কুষ্টিয়ার বাজারে দফায় দফায় বাড়ছে সব ধরনের চালের দাম। গত এক সপ্তাহে খুচরা বাজারে প্রায় সব ধরনের চালে কেজিপ্রতি ৪ টাকা বেড়েছে।
এ নিয়ে চলতি আমন মৌসুমে ৩ দফায় কুষ্টিয়ায় চালের দাম বাড়ল।
খুচরা বিক্রেতারা বলেন, মোকাম থেকে বেশি দামে চাল ক্রয়ের কারণে তাদেরকে বেশি দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে।
ব্যবসায়ী ও চালকল মালিকরা বলছেন, প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে ধানের দাম। সে কারণে বাড়াতে হচ্ছে চালের দাম। তাই খাজানগর চালের মোকামেই দুই থেকে আড়াই টাকা বেড়েছে চালের দাম। তারা ধানের দাম বৃদ্ধির উপরেও নজরদারির দাবি তুলেছেন।
বাজারের খুচরা চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে ইউএনবির এই প্রতিবেদক জানতে পারেন, নানা অজুহাতে গত বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে চিকন চালসহ অন্যান্য চালের দাম কেজিতে বেড়েছিল ৩ টাকা পর্যন্ত। মাত্র ২ মাসের ব্যবধানে কয়েক দিন ধরে খুচরা বাজারে আবারও সব ধরনের চাল কেজিতে ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
চলতি আমন মৌসুম শেষে এ নিয়ে ৩ দফায় কুষ্টিয়ার বাজারে চালের দাম বাড়ল। কুষ্টিয়া পৌর বাজার ঘুরে দেখা গেছে ৬২ টাকার মিনিকেট চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৬ টাকায়। কয়েকদিন আগেও ৫৬ টাকায় বিক্রি হওয়া কাজললতা চাল এখন ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও মোটাচাল ২৮ কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৩ টাকা কেজি।
আরও পড়ুন: পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় যানবাহন নিয়ে ফেরিডুবি, চালক নিখোঁজ
ফরিদপুরে ১৫১.৩৮ কোটি টাকার সরিষার ফলনের প্রত্যাশা চাষিদের
বতর্মানে সরিষার তেলে চাহিদা বেড়ে যাওয়া আর স্বল্প খরচে ও অল্প সময়ে ভালো ফলন হওয়ায় কৃষিকের আগ্রহ বেড়েছে সরিষা চাষে। এছাড়া সয়াবিন তেলের বিকল্প হিসেবে দেশে উৎপাদিত সরিষার তেলের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়া বেড়েছে আবাদ। এ কারণে গত বছরের তুলনায় কয়েক হাজার হেক্টর বেশি জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষা চাষ করেছে ফরিদপুরের কৃষকেরা।
ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, দেশীয় বাজারের ভোজ্য তেলের দর বৃদ্ধিতে এবার ফরিদপুরে বেড়েছে ফরিদপুরে সরিষার চাষ। রবি মৌসুমের ফসল হিসেবে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে সরিষা চাষে। জেলার ৯টি উপজেলার প্রায় প্রতিটি মাঠেই এবার আবাদ বেড়েছে সরিষার।
সার, ওষুধ, পানি ও অল্প পরিচর্যায় এবং সরকারি প্রণোদনা পাওয়ায় দিন দিন সরিষা আবাদে ঝুকছে চাষিরা। জেলার নর্থচ্যানেল, ডিক্রিরচর, গোলডাঙ্গীরচরসহ বিভিন্ন মাঠে অপরূপ শোভা ছড়াচ্ছে সরিষা ফুল।
সরেজমিনে ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ও চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, গাছ দুই থেকে চার ফুট পর্যন্ত বড় হয়ে উঠেছে। হলুদ ফুলে ফুলে ভড়ে উঠেছে মাঠ। বাতাসে দোল খাচ্ছে ফুলে ভরা সরিষার গাছ।
আরও পড়ুন: খুলনায় সরিষার বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে চুনাপাথর আমদানি বন্ধ, হতাশায় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা
৫ মাসের মাথায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আবারও শুল্ক বৃদ্ধি করায় চুনাপাথর আমদানি বন্ধ থাকায় হতাশায় ভুগছেন ছাতক-দোয়ারাবাজারের ব্যবসায়ীরা। বেকার হয়ে পড়েছেন এর সঙ্গে নিয়োজিত অনেক পাথর ও বারকি শ্রমিক।
২ ডলার যোগ করে প্রতিটন পাথরে মোট ১৩ দশমিক ৭৫ ডলার শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই বাড়তি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিতে গত ১২ দিন ধরে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার চেলা এলসি স্টেশন (লাইমস্টোন) দিয়ে ভারত থেকে চুনাপাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা।
একই ইস্যুতে গত ১৬ আগস্ট থেকে এক সপ্তাহ চেলা স্টেশন দিয়ে চুনাপাথর আমদানি বন্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা। তা সত্বেও প্রতিটন চুনাপাথর ও বোল্ডারে ১ ডলার বাড়িয়ে ১১ দশমিক ৭৫ ডলার শুল্ক নির্ধারণ করে এনবিআর। এ নিয়ে আমদানিকারকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিলে ৫দিন পর আলোচনার ভিত্তিতে পুনরায় পাথর আমদানি শুরু হয়।
আরও পড়ুন: তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে শুল্ক কর বৃদ্ধির কারণে পাথর আমদানি বন্ধ
পরে ৪ জানুয়ারি এক চিঠির মাধ্যমে আবারও টনপ্রতি ২ ডলার বাড়িয়ে ১৩ দশমিক ৫০ ডলার বা তদূর্ধ্ব শুল্কারোপ করা হয়। যা ৮ জানুয়ারি থেকে কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই বর্ধিত নতুন শুল্ক কার্যকর নিয়ে গত ১ জানুয়ারি( সোমবার) স্থানীয় আমদানিকারকদের সঙ্গে কাস্টমস কর্মকর্তাদের সভা হয়। সভায় ব্যবসায়ীরা বাড়তি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে ভারত থেকে চুনাপাথর আমদানি বন্ধের ঘোষণা দেন।
চেলা এলসি স্টেশনে নৌকা দিয়ে চুনাপাথর পরিবহনকারী আব্দুল মোতালিব গংরা বলেন, ‘বুধবার থেকে এলসি স্টেশন বন্ধ থাকায় আমাদের কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে।’
এ বিষয়ে ছাতক (চেলা-ইছামতী) লাইমস্টোন ইমপোর্টার্স অ্যান্ড সাপ্লায়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সেলিম আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘এনবিআর ভারত থেকে পাথর ও চুনাপাথর আমদানির ওপর অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু প্রতিটনে অতিরিক্ত শুল্ক বৃদ্ধি করে। ওই বাড়তি শুল্ক দিয়ে পাথর আমদানি করতে হলে আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। তাই শুল্ক কমানোর দাবিতে সম্প্রতি চুনাপাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তা বহাল থাকবে।’
কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট সিলেটের কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, ‘২০০০ সালের শুল্ক বিধিমালা অনুসারে পাথরের শুল্কমূল্য ধরা হয়। সব স্টেশনেই পাথরের মূল্য ১৩, ১৪, ১৫ ডলার নির্ধারিত আছে।’
শুল্ক কমানোর প্রতিবাদে ব্যবসায়ীদের আমদানি বন্ধের ব্যাপারে কাস্টমস কমিশনার বলেন, ‘তারা বন্ধ করলে আমাদের কিছু করার নেই। আইনগতভাবে ১৩ ডলারের নিচে নামার কোনো উপায় নেই। এটা আমি আমদানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সবাইকে বুঝিয়েছি।’
আরও পড়ুন: আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির প্রতিবাদে সিলেট সীমান্ত দিয়ে পাথর ও চুনাপাথর আমদানি বন্ধ
অবৈধ ড্রেজার দিয়ে রাতের আঁধারে লুট হচ্ছে সুরমার বালু
রাতের আঁধারে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে সুরমা নদীর বালু তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে সুনামগঞ্জ শহরের একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।
এভাবে বালু নিয়ে যাওয়ায় দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে শহরের সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সংযোগ সেতু আব্দুজ জহুর। এছাড়া এভাবে ড্রেজার চালানোয় এবং শব্দ দূষণের কারণে হুমকিতে পড়েছে নদীর দুই তীরের জনপদ।
সুনামগঞ্জ শহরের আব্দুজ জহুর সেতু এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সেতুসংলগ্ন সুরমা নদীর কয়েকশ মিটার এলাকাজুড়ে একাধিক ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন চলছে।
এদিকে প্রতি রাতে নদীর কয়েকটি স্থানে ড্রেজারের তাণ্ডব চললেও এসব বন্ধে প্রশাসনের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন, আটক ২: নৌপুলিশ
স্থানীয়দের অভিযোগ, কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে সুবিধা দিয়ে সুরমা নদীর বালু এভাবে লুটে নিচ্ছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট।
ড্রেজারের তাণ্ডব বন্ধ না হলে আব্দুজ জহুর সেতুসহ দুই তীরের কয়েকটি গ্রামের ঘরবাড়ি হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।
নিরাপত্তাজনিত কারণে নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, কিছুদিন ধরে জলিলপুর, আব্দুজ জহুর সেতু এলাকা, অচিন্তপুর, বড়পাড়া এলাকাসহ একাধিক স্থানে বালু উত্তোলন করছে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র। রাত ১টার পর থেকে শুরু হয়ে ভোর পর্যন্ত বিরামহীনভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হয়। পরে এসব বালু বাল্কহেড বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হয় অন্যত্র। প্রতি রাতে কয়েক লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন হয় বলে তাদের ধারণা।
সম্প্রতি এ বিষয়ে কথা হয় বালু উত্তোলনে কাজ করা এক শ্রমিকের সঙ্গে হয়।
আরও পড়ুন: কৃষি জমির স্বার্থে বালু উত্তোলন বন্ধে পদক্ষেপ নিতে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ