করোনায় প্রণোদনা দেয়া হবে এমন ফাঁদে ফেলে অর্থ লোপাটের অভিযোগের মামলায় গ্রেপ্তার কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটার পাঁচ দিনমজুরকে এক বছরের জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
পাঁচ দিনমজুর হলেন- বিধবা ফুলমনি রানি, রণজিৎ কুমার, প্রভাস চন্দ্র, কমল চন্দ্র রায় ও নিখিল চন্দ্র বর্মন।
বুধবার (৬ অক্টোবর) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর অবকাশকালীন ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আরও পড়ুন: হাইকোর্টে আগাম জামিন মেলেনি বসুন্ধরার এমডির
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন যুক্ত করে এই জামিন আবেদন করা হয়। আইনজীবী শিশির এই দিনমজুরদের পক্ষে বিনা ফিতে মামলাটি পরিচালনা করেছেন।
পরে শিশির মনির জানান, আদালত বলেছেন, যারা লুটপাট করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হলো না। দিনমজুর সাধারণ মানুষকে কেন ফাঁসানো হলো? এ প্রশ্ন রেখে আদালত তাদের এক বছরের জামিন দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ৫ মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন বাড়লো এক বছর
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের নওদাবস গ্রামের বাসিন্দা রণজিৎ কুমার, প্রভাস চন্দ্র, কমল চন্দ্র রায়, সুবল চন্দ্র মোহন্ত। সহজ-সরল দিনমজুর ও খেটে খাওয়া এসব কৃষকের জীবন চলে দারিদ্র্যের চরম কশাঘাতে। তাদের কাছে হঠাৎ একদিন এসে হাজির হন স্বপন নামে এক ব্যক্তি। অভাব ঘোচাতে তাদের সরকারি সহায়তা পাইয়ে দেয়ার কথা বলেন স্বপন। তিনি বলেন, সহায়তা আসবে ব্যাংকে, তাই সোনালী ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।
স্বপনের কথায় রাজি হয়ে যান রনজিৎ কুমার আর প্রভাস চন্দ্ররা। নিজের নামটুকুও লিখতে না পারা এসব কৃষকের নামে সোনালী ব্যাংক নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) শাখায় খোলা হয় সঞ্চয়ী হিসাব। এরপর কাগজপত্র স্বাক্ষর করতে হবে বলে তাদের পাঁচজনকে ঢাকায় নিয়ে যান স্বপন। সেখানে অনেক কাগজে সই নিয়ে বাড়িতে ফেরত পাঠান।
আরও পড়ুন: হাইকোর্টে জামিন পেলেন ঝুমন দাস
কিছুদিনের মধ্যে রণজিৎ কুমারের সঞ্চয়ী হিসাবে ৪৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭২০ টাকা, প্রবাস চন্দ্র রায়ের হিসাব নম্বরে ৬৫ লাখ ৭২ হাজার ১২০ টাকা, সুবল চন্দ্রের হিসাব নম্বরে ৪০ লাখ ৭১ হাজার ৭২০ টাকা, কমল চন্দ্রের হিসাব নম্বরে ৪২ লাখ ৪৯ হাজার ৮৮০ টাকা এবং ফুলমণি রানির হিসাব নম্বরে ৪৮ লাখ ৭০ হাজার ৫২০ টাকা জমা হয়।
তবে এত টাকা জমা হওয়ার খবর ওই কৃষকরা পাননি। গাড়ি ভাড়ার টাকা ছাড়া তেমন কোনো অর্থ সহায়তাও স্বপন মিয়া তাদের দেননি। সরকারি সহায়তা পাওয়ার আশায় তারা দিন গুনছেন।
গত ১ জুলাই গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের একটি ভুয়া অ্যাডভাইস দাখিলের মাধ্যমে জালিয়াতি করে সোনালী ব্যাংক থেকে ২ কোটি ৪৬ লাখ ৯ হাজার ৯৬০ টাকা তুলে নেয়ার চেষ্টার অভিযোগে নয় জনের নামে মামলা হয়েছে। গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানায় মামলাটি করেন সোনালী ব্যাংক শ্রীপুর থানা হেডকোয়ার্টার শাখার ব্যবস্থাপক রেজাউল হক। সেই মামলায় নয় জনের মধ্যে পাঁচজন হলেন- রণজিৎ কুমার, প্রবাস চন্দ্র, কমল চন্দ্র, ফুলমণি রানী ও সুবল চন্দ্র।
মামলায় অভিযুক্ত অন্য ব্যক্তিরা হলেন- গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বজলুর রশিদ, অফিসের অডিটর আরিফুর রহমান, মাস্টাররোলে কর্মরত তানভীর ও ঢাকার উত্তরখান জামতলা এলাকার শাহেনা আক্তার।
গত ২ জুলাই দুপুরের দিকে সবার বাড়িতে হাজির পুলিশ! কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই রণজিৎ কুমার, প্রভাস চন্দ্র রায়, কমল চন্দ্র রায়, ফুলমণি রানিকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ।
আইনজীবী শিশির মনির জানান, পরে সুবল চন্দ্রও গ্রেপ্তার হন। নিম্ন আদালতে তাদের জামিন নামঞ্জুরের পর উচ্চ আদালতে আবেদন করা হয়।