বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসন থেকে একটি কমিয়ে তিনটি আসন এবং গাজীপুরের ৫টি সংসদীয় আসন থেকে একটি আসন বাড়িয়ে ৬টি করে নির্বাচন কমিশনের জারি করা গেজেট অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসন এবং গাজীপুরের ৫টি সংসদীয় আসন বহাল রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১০ নভেম্বর) এ বিষয়ে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকার ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন এবং রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মো. মেহেদী হাসান।
ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান জানান, বাগেরহাটের সংসদীয় আসন চারটি থেকে কমিয়ে তিনটি করা এবং গাজীপুরের সংসদীয় আসন ৫টি থেকে বাড়িয়ে ৬টি করতে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়। হাইকোর্ট ইতোপূর্বে এ বিষয়ে রুল জারি করেন। রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি করে সোমবার আদালত রায় দিয়েছেন।
তিনি জানান, রায়ে বাগেরহাটের আসন কমিয়ে গাজীপুরের আসন বাড়াতে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেছেন। একইসঙ্গে বাগেরহাটের চারটি আসন পুনর্বহাল করতেও নির্দশ দেওয়া হয়েছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ৩০ জুলাই নির্বাচন কমিশন প্রাথমিকভাবে বাগেরহাটের চারটি আসন থেকে একটি কমিয়ে তিনটি করার প্রস্তাব দেয়। ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনে নামে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তারা সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি গড়ে তোলে, হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। চারটি আসন বহাল রাখার দাবিতে কমিশনের শুনানিতেও অংশ নেন কমিটির সদস্যরা।
এরই মধ্যে গত ৪ সেপ্টেম্বর সারা দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ করে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। এতে চারটি আসন থেকে একটি কমিয়ে বাগেরহাটকে তিন আসনে ভাগ করা হয়। আগের প্রস্তাবের তুলনায় শুধু সীমানা পরিবর্তন করা হয়। এরপর থেকেই সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি আসন কমানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে হরতাল, অবরোধ, অবস্থান, বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের অভিযোগ, ইসির আসন পুনর্বিন্যাস গণমানুষের দাবিকে উপেক্ষা করেছে।
চূড়ান্ত গেজেট অনুযায়ী, বাগেরহাট সদর, চিতলমারী ও মোল্লাহাট নিয়ে বাগেরহাট-১; ফকিরহাট, রামপাল ও মোংলা নিয়ে বাগেরহাট-২ এবং কচুয়া, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা নিয়ে বাগেরহাট-৩ গঠিত হয়েছে। ১৯৬৯ সাল থেকে বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসনে নির্বাচন হয়ে আসছিল। সে অনুযায়ী বাগেরহাট-১ ছিল চিতলমারী-মোল্লাহাট-ফকিরহাট; বাগেরহাট-২ ছিল বাগেরহাট সদর-কচুয়া; বাগেরহাট-৩ ছিল রামপাল-মোংলা এবং বাগেরহাট-৪ ছিল মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা।
অন্যদিকে, গাজীপুরের সংসদীয় আসন ৫টি থেকে বাড়িয়ে ৬টি করে গেজেট জারি করা হয়। গেজেটে গাজীপুর-১ (কালিয়াকৈর উপজেলা এবং গাজীপুর সিটির ৭ থেকে ১২ নম্বর ওয়ার্ড), গাজীপুর-২ (গাজীপুর সিটির ১ থেকে ৬ ও ১৩ থেকে ৩১ নম্বর ওয়ার্ড এবং গাজীপুর সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়ন), গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর উপজেলা এবং গাজীপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর, ভাওয়াল গড় ও পিরুজালী ইউনিয়ন এবং গাজীপুর সেনানিবাস), গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ উপজেলা এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪০ থেকে ৪২ নম্বর ওয়ার্ড), গাজীপুর-৬ ( গাজীপুর সিটির ৩২ থেকে ৩৯ এবং ৪৩ থেকে ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড) নির্ধারণ করা হয়।
পরে বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন বহালের দাবিতে এবং গাজীপুরের সংসদীয় আসন একটি কমাতে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। বাগেরহাট প্রেসক্লাব, জেলা আইনজীবী সমিতি, জেলা বিএনপি, জেলা জামায়াতে ইসলামী, জেলা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জেলা ট্রাক মালিক সমিতি এ রিট দায়ের করে। রিটে বাংলাদেশ সরকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে বিবাদী করা হয়।
এই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসন বহাল করতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে বাগেরহাটের চারটি আসন থেকে একটি কমিয়ে তিনটি আসন এবং গাজীপুরের ৫টি আসন থেকে বাড়িয়ে ৬টি আসন করতে নির্বাচন কমিশনের গেজেট কেন অবৈধ হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের ১০ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।