চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে নিজের বাবার বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তার ‘মৃত সন্তান’! এমনকি মৃত সন্তানের দায়ের করা মামলায় বর্তমানে জেল হাজতে আছেন ওই বাবা।
ফরিদগঞ্জের চর দুঃখিয়া পূর্ব ইউনিয়নের আলোনিয়া গ্রামে এই ঘটনাটি ঘটেছে। বাবার বিরুদ্ধে কেন মামলা করতে বাধ্য হলেন,সেই বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতেই শনিবার ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ছেলে এমরান হোসেন জহির প্রকাশ ঝুটন(৩৫)।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ঝুটন জানান, তিনি তার বাবা আহাম্মদ উল্যা বেপারীর(৬৭) প্রথম স্ত্রী খুরশিদা বেগমের ছেলে। এই ঘরে খাদিজা বেগম লাকি নামে তার আরেক বোন ছিলেন, বর্তমানে যিনি মৃত। আমার মায়ের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের পর আমার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেই ঘরে সৎ মা এবং তিন বোন রয়েছেন।
আরও পড়ুন: এফআর টাওয়ারের নকশা জালিয়াতি: রূপায়নের চেয়ারম্যানসহ ১৬ জনের বিচার শুরু
তিনি বলেন, জন্মের পর থেকে আমি বাবার আদর -ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হলেও,প্রবাসে যাওয়ার পর থেকে বাবার সার্বক্ষণিক দেখভাল করেছি। তাকে খোরপোষ বাবদ টাকা এবং সৎ বোনের বিয়ে এবং বাবার চোখের অপারেশনের জন্য টাকা দিয়েছি। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আমার বাবা আমাকে মৃত দেখিয়ে গত ২০১০ সালে ৮ আগস্ট আমাদের স্থানীয় ১১নং চরদুঃখিয়া পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে তৎকালীন চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ পাটওয়ারী ও সচিবের স্বাক্ষরে নিজের নামে ওয়ারিশ সনদ গ্রহণ করেন। একই তারিখে তিনি আমার বোন খাদিজা বেগম লাকির মৃত্যুর সনদ দেখান।এরপর নিজেকে একক ওয়ারিশ দেখিয়ে সনদ গ্রহণ করেন।
ঝুটন আরও বলেন, আমি আজ আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে সংবাদ সম্মেলন করলেও, আমার বাবার কাছে আমি মৃত। জন্মদাতা বাবা হয়ে তিনি কিভাবে শুধুমাত্র সম্পত্তির লোভে নিজের ঔরসজাত সন্তানকে মৃত দেখালেন!
তিনি অভিযোগ করে বলেন,এর আগে আমার বাবা নিজেকে তার বাবার একমাত্র সন্তান দাবি করে আমার পাঁচ ফুফুর অস্তিত্ব অস্বীকার করে, ২০১০ সালের ২৭ অক্টোবর একই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একই চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ওয়ারিশ সনদ গ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন: তথ্য জালিয়াতি: ইউপি চেয়ারম্যানের মনোনয়নের প্রতিবাদে নাটোরে বিক্ষোভ
তিনি বলেন, আমি প্রবাস থেকে গত দেড় মাস আগে বাড়ি ফিরে আসার পর এক ফুফু কর্তৃক আমাকে দান করা ও আরেক ফুফুর থেকে কেনা জমিতে বাড়ি করতে গেলে বাধার সম্মুখিন হই। এক পর্যায়ে এর কারণ জানতে গিয়ে বাবার এসব কুকর্মের কথা জানতে পারি। এলাকায় এ বিষয়ে কয়েকবার আমাদের স্থানীয়ভাবে সালিশি হলেও কোনো সুরাহা না হওয়ায়,আমি বাধ্য হয়ে গত ১৮ নভেম্বর চাঁদপুর আদালতে অভিযোগ করি।
পরে আদালতের নির্দেশে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করে। ওইদিন রাতেই আমার বাবাকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন শুক্রবার পুলিশ তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠায়।
প্রেসক্লাব সভাপতি মো. কামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে এসময় এমরান হোসেন জহির প্রকাশ ঝুটনের মা খুরশিদা বেগম, স্ত্রী মুক্তা আক্তার, ফুফাতো বোন সরলা বেগম, ফুফাতো ভাই জাহাঙ্গীর আলম, সেলিম পাটওয়ারী, দেলোয়ার হোসেন এবং এলাকাবাসীর পক্ষে সোহেল ঢালী ও সামছুল আরেফিন মুকুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: বরিশালে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা