একদিকে জনসংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে ফসলি জমি কমে যাচ্ছে। ফসলি জমি কমে যাওয়া ঠেকাতে না পারলে চরম খেসারত দিতে হবে সকলকে এমনই মনে করছেন সচতন মহল।
সূত্র জানায়, ভারত সীমান্তের গা ঘেষে গড়ে উঠা যশোরের চৌগাছা উপজেলা। এর পূর্বে যশোর সদর ও ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ উপজেলা, উত্তরে কোটাচাঁদপুর, পশ্চিমে মহেশপুর ও ভারতের চব্বিশ পরগনা এবং দক্ষিণে ঝিকরগাছা উপজেলা অবস্থিত। ১১টি ইউনিয়ন একটি পৌরসভা ও ১৬০টি গ্রাম নিয়ে গঠিত এ উপজেলাতে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষের বসবাস।
জনশ্রুতি আছে চৌগাছা থানা পরবর্তীতে উপজেলা হওয়ার পর ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। উপজেলা সদরকে নিয়ে ২০০৪ সালে গঠিত হয় পৌরসভা। পৌরসভা গঠনের পর মানুষ এর সুফল ভোগ করতে থাকে। অনেকে চৌগাছাকে ব্যবসা বান্ধব উপজেলা হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকেন। যে কারণে অল্প সময়ের মধ্যে এখানে সব ধরনের ব্যবসার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে বলে অভিমত বিশ্লেষকদের।
ব্যবসা, বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যাতায়াত সব কিছুতেই অভাবনীয় উন্নতি যখন হচ্ছে ঠিক সে সময়ে উপজেলাতে আশঙ্কাজনকভাবে কমতে শুরু করেছে ফসলি জমি। প্রতি বছরই কোনো না কোনো কারণে নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি।
উপজেলা কৃষি ও পরিসংখ্যান অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলাতে মোট জমির পরিমাণ ২৬ হাজার ৯১৯ হেক্টর। এর মধ্যে নীট ফসলি জমির পরিমাণ ২২ হাজার ৫৬৫ হেক্টর। ২০১০ সালে এই উপজেলাতে ফসলির জমির পরিমাণ ছিল ২৩ হাজার ১৫০ হেক্টর। বর্তমানে কমতে কমতে এসে দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৫৬৫ হেক্টরে। গত ১০ বছরে জমি কমেছে ৫৮৫ হেক্টর, যা বিঘায় হিসেব করলে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৩৮৭ বিঘা।
২০১১ সালের সর্বশেষ আদম শুমারি হিসেবে উপজেলায় মোট জনসংখ্যা ২ লাখ ৩১ হাজার ৩৭০ জন। গত দশ বছরে জনসংখ্যা বেড়ে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ হতে পারে বলে অনেকের ধারণা। প্রতি বছর মানুষ বাড়ছে কিন্তু বাড়ছে না এক ইঞ্চি জমি। অথচ নানা কারণে বিগত ১০ বছরে ফসলি জমি কমেছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বিঘা।
জমি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে যত্রতত্র বসত বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্প কারখানা নির্মাণ, ইটভাটা ও সড়ক তৈরি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার প্রধান ৫টি সড়ক, চৌগাছা-যশোর, ঝিকরগাছা, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর ও পুড়াপাড়া সড়কের দুই পাশে প্রতিদিনই বাড়ছে বসত বাড়ি, ব্যবসা কিংবা শিল্প কারখানা। একই অবস্থা শহর ও শহরতলীর প্রতিটি পাকা কিংবা কাঁচা সড়কের পাশে। এমনকি ফাঁকা মাঠের মধ্যেও হচ্ছে বাড়ি-ঘর।
সরকার থেকে যখন ঘোষণা আসছে কোনোক্রমেই ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না, জমি রক্ষা করে বসত বাড়ি, শিল্প কারখানা স্থাপন করুন, ঠিক সেই সময়ে চৌগাছাতে এর বিপরীত চিত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শতশত ফসলি জমি দখলে রেখে নির্মাণ করা হয়েছে অন্তত ২০টি ইটভাটা। সাড়ে তিন লাখ মানুষের বসবাসের উপজেলাতে ২০টি ইট ভাটার কতটুকু যৌক্তিকতা আছে এ নিয়েও অনেকের রয়েছে প্রশ্ন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো কিছুই খোঁজ না নিয়ে ভাটা নির্মাণের অনুমতি দিচ্ছেন আর ভাটা নির্মাণের ফলে এর কুফল ভোগ করছেন সাধারণ মানুষ, এমন অভিযোগও রয়েছে।
যেভাবে ফসলি জমি কমতে শুরু করেছে তার জন্য ভবিষ্যত প্রজন্মকে চরম মূল্য দিতে হতে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা। তাই বাড়ি-ঘর, শিল্প কারখানা নির্মাণ করলেও ফসলি জমিকে রক্ষা করার কথা বলছেন অনেকে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রইস উদ্দিন বলেন, ‘ব্যবসা বান্ধব পাশাপাশি বসবাসের জন্যও অত্যন্ত ভালো পরিবেশ হওয়ায় চৌগাছাতে দিন দিন নানা ধরনের স্থাপনা তৈরি হচ্ছে, সেই সাথে বসত বাড়িও তৈরি হচ্ছে। তবে কোনোক্রমেই ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না।’