সরেজমিনে দেখা যায়, দেশের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি বিশেষায়িত এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন মাত্র দুজন চিকিৎসক। হাসপাতালের ২৪টি পদের বিপরীতে ১৩টি পদই শূন্য রয়েছে। প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে চিকিৎসা সেবা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
বিশেষায়িত এই হাসপাতাল যে উন্নয়ন বঞ্চিত তার প্রমাণ মিলেছে ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে নির্মিত মূল ভবনটিতে। ভবনটি আজ ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে আবাসিকের কোয়ার্টারগুলো।
আরও পড়ুন: হাসপাতালে অক্সিজেনের সংকট নেই: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
খুলনা মহানগরীর মীরেরডাঙ্গায় ভৈরব নদীর পাশে ৪ একর জমির ওপর ১৯৬৭ সালে এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হয়। মাত্র ২০টি বেড নিয়ে যে হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়, আজ ৫৩ বছর পরে এসেও বাড়েনি বেড সংখ্যা, অবকাঠামোগত কোন পরিবর্তন হয়নি। হাসপাতালের মূল ভবনে কোন রকম জোড়াতালি দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম।
আরও পড়ুন: খুলনা করোনা হাসপাতালের অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন ‘পত্র চালাচালির’ মধ্যেই সীমাবদ্ধ
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের সরকারি একমাত্র বিশেষায়িত এই হাসপাতালে ডায়রিয়া, টিটিনাস, হাম, জলাতঙ্ক ৫টি গুরুত্বপূর্ণ রোগসহ যে কোন ধরনের সংক্রমক ব্যাধির রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। হাসপাতালের পুরাতন অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী মোট ২৪টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে মেডিকেল অফিসারের পদ রয়েছে ৩টি যেখানে বাস্তবে কাজ করছেন ২ জন। সিনিয়র স্টাফ নার্সের ৬টি পদের মধ্যে ১টি পদ ও সহকারী নার্সের ৪টি পদই শূন্য রয়েছে। দীর্ঘদিন শূন্য রয়েছে অফিস সহায়কের পদটি, এই পদে কাজ করানো হচ্ছে ফার্মাসিস্টকে দিয়ে। বাবুচির ২টি পদই শূন্য, পরিচ্ছন্ন কর্মীর ৩টি পদই ২০১৭ সালের আগের থেকে শূন্য রয়েছে, ওয়ার্ডবয়ের পদ দু’টির মধ্যে একজন কাজ করছেন, অপরজন কর্মস্থলে দীর্ঘদিন আসছেন না। আয়ার দু’টি পদই শূন্য রয়েছে। তবে আউটসোর্সিং-এর দু’জনকে দিয়ে এই কাজ চালানো হচ্ছে। হাসপাতালের শুরু থেকেই নেই কোন নিরাপত্তা প্রহরী। ৪ একরে প্রতিষ্ঠিত এ হাসপাতালের নিরাপত্তায় শুধুমাত্র সামনের বাউন্ডারী আছে। অরক্ষিত ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ করছেন আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ পাওয়া একজন।
হাসপাতালটির নতুন কোন অবকাঠামো নির্মাণ না হওয়ায় ৫০ বছর আগের পুরাতন অবকাঠামোর অবস্থা খুবই নাজুক। ১৯৬৭ সালে আগে নির্মিত হাসপাতালের একতলা বিশিষ্ট ভবনটি কোন রকম জোড়াতালি দিয়ে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চললেও, বর্তমানে সে ভবনের ওয়াল ও সিলিং দিয়ে প্রতিনিয়ত প্লাস্টার এবং ঢালাই খুলে পড়ছে। পুরাতন এই ভবনটির বিভিন্ন স্থানে ছাদের প্লাস্টার ছেড়ে দেয়ায় যে কোন মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
বর্তমানে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা।
এছাড়া হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও মেডিকেল অফিসারের আবাসিকের ভবন, নার্সদের আবাসিক কোয়াটার, কর্মচারীদের দু’টি ডরমিটরী ভবনসহ আবাসিকের সকল স্থাপনা পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
ডরমিটরী ভবনে কোন রকম জোড়াতালি দিয়ে কয়েকজন কর্মচারীকে তাদের পরিবার নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করতে দেখা গেছে। আবাসিকের ভবনগুলি পরিত্যাক্ত অবস্থায় দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় এখানে ঝোপ-জঙ্গলে পরিণত হয়েছে।
বর্তমানে এখানে প্রায়ই মাদকের আসর বসছে বলে হাসপাতালের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, উন্নয়নশীল দেশে সরকারি প্রায় সকল সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে উন্নয়নের ছোয়া লাগলেও অজ্ঞাত কারণে এই প্রতিষ্ঠানটি জন্মলগ্ন থেকে উন্নয়ন বঞ্চিত ও অবহেলিত।
তাদের দাবি অবিলম্বে বিশেষায়িত এই হাসপাতালটি আধুনিকায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি চিকিৎসা সেবার মান আরও উন্নত করা।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও মেডিকেল অফিসার ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসকসহ জনবল সংকট রয়েছে। একটি কক্ষের মধ্যে নারী-পুরুষ-শিশু সকলকেই চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে, এদের জন্য আলাদা আলাদা ওয়ার্ড প্রয়োজন রয়েছে। হাসপাতালের অবকাঠামোগত অবস্থা নাজুক, হাসপাতালের মূল ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ এবং আবাসিকের প্রতিটি কোয়ার্টার পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এই মুহূর্তে সব থেকে বেশি প্রয়োজন ৫০ বছর আগের পুরাতন অর্গানোগ্রাম পরিবর্তন করে যুগোপযোগী অর্গানোগ্রামের।
তিনি বলেন, ‘হাসপাতালটি আধুনিকায়ন করা না হলে এখান থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া মুশকিল। তবে রোগীদের মানসম্মত চিকিৎসা প্রদানে শূন্য পদগুলো পূর্ণ করা এবং বিশেষায়িত ডাক্তার নিয়োগসহ অর্গানোগ্রাম পরিবর্তন করা খুবই জরুরি।’
হাবিবুর রহমান বলেন, গত ৩-৪ মাসে গড়ে প্রায় তিন শতাধিকের উপর রোগী এখানে চিকিৎসা নিয়েছে। দিন দিন রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও সেই অনুযায়ী জনবল এবং অবকাঠামো এখানে নেই।