আগামী ১১ এপ্রিল থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ১.৩ বিলিয়ন জনসংখ্যার দেশ ভারতে সাতটি ধাপে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২৩ মে ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণার সময়সূচি রয়েছে।
গত মাসে ভারতের নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছিল, তাদের আচরণবিধি সোশ্যাল মিডিয়া প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক দলগুলোকে অবশ্যই মেনে চলতে হবে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, সাধারণ নির্বাচনের আগে মিথ্যা সংবাদ ছড়িয়েপড়া রোধে সক্ষমতার অভাব রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।
মঙ্গলবার পর্যবেক্ষকরা জানান, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব, টুইটার ও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে মিথ্যা সংবাদ ও প্ররোচণামূলক তথ্য ছড়ানো ছড়িয়েপড়া রোধ করতে প্রকৃতপক্ষে সংগ্রাম করতে হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে।
ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও আইনজীবী অপার গুপ্ত বলেন, ‘প্রতিদিন কয়েক লাখ ভোটাররা মিথ্যা সংবাদ, প্রচারণামূলক ও ঘৃণ্য বক্তব্য দিয়ে প্রতিদিন মুসলমান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতাকে উসকে দিচ্ছে। কিন্তু কমিশন এগুলো সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারছে না।’
‘২০১৬ সালে মার্কিন নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য ফেসবুককে ব্যবহার করেছিল রাশিয়া। ভারতের নির্বাচন কমিশনকে ভালভাবে প্রস্তুত হওয়া উচিত ছিল,’ বলেন তিনি।
মিথ্যা তথ্য বা গুজব ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে সোমবার ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘আমরা কয়েকশ’ পেইজ ও অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলেছি কারণ আমরা চাই না মানুষকে প্ররোচণা বা উসকে দেয়ার কাজে ফেসবুককে ব্যবহার করা হোক।
এদিকে হোয়াটসঅ্যাপ মঙ্গলবার ‘চেকপয়েন্ট টিপলাইন’ নামে একটি হেল্পলাইন চালু করেছে যার মাধ্যমে মানুষ প্রাপ্ত তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারবে।
সোশ্যাল মিডিয়া ভারতীয় রাজনৈতিক প্রচারণার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যাপকভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে এবং তরুণ ভোটারদের সাথে যোগাযোগ করে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতের প্রচুর জাল রাজনৈতিক সংবাদের উদাহরণ রয়েছে। ফেসবুকে একটি ভারতীয় পেইজ দাবি করেছে, কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি ও রাহুল গান্ধীর মা সোনিয়া গান্ধী দেশের চতুর্থ ধনী নারী। আরেকটি বানোয়াট ছবিতে দেখানো হয়, রাহুল গান্ধীর নির্বাচনী সমাবেশে পাকিস্তানি পতাকা উড়ানো হয়েছে। এক ছবিতে দেখানো হয়, রাহুল গান্ধীর বোন প্রিয়াংকা গান্ধী তার গলায় একটি ক্রস চিহ্নের চেইন পরেছেন, যার মাধ্যমে তাকে নন-হিন্দু হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। সামাজিক মিডিয়ার বিভিন্ন মেসেজ ও ছবিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিষ্ঠুর ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
ফেসবুক জানিয়েছে, এটি কংগ্রেসের সঙ্গে অমানবিক আচরণ প্রদর্শন করা ৬৮৭টি পেইজ বা অ্যাকাউন্ট সরিয়ে ফেলেছে।
গুজব প্রতিরোধ করা এখন ভারতের নির্বাচন কমিশনের কাছে একটি হুমকি হয়ে পড়েছে। ২০১৮ সালে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া গুজবের কারণে ভারতের গ্রামাঞ্চলে দাঙ্গায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় হোয়াটসঅ্যাপ একসাথে পাঁচজন প্রাপকের কাছে বার্তা প্রেরণকে সীমিত করে, আগে ২৫৬ জনকে একসাথে বার্তা পাঠানো যেত।
মিথ্যা সংবাদ বা তথ্য প্রতিরোধ করা ভারতের নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতে ১.১৪ বিলিয়ন সেলফোন সংযোগ রয়েছে। বিশ্বে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সংখ্যার দিকে সবার উপরে রয়েছে ভারত। দেশটির ৩০০ মিলিয়নের বেশি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে। প্রায় ২৪০ মিলিয়ন মানুষ হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে।