যাই হোক সৃষ্টিকর্তা আমাদের সবার উপর সদয় হয়েছেন বলে হাসপাতাল এবং বাসায় দীর্ঘসময় চিকিৎসা শেষে ১২ মে সবাই সুস্থ হই। করোনাভাইরাসের সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা ব্যবস্থা এখনো আবিষ্কৃত না হলেও দেশ বিদেশে নানা ধরনের ট্রিটমেন্ট ট্রায়াল চলছে করোনার জন্য। প্লাজমা নিয়ে একটু বলে রাখি- প্লাজমা হলো রক্তের জলীয় অংশ বা রক্তরস, রক্তের ভিতরে প্রায় ৫৫ শতাংশ হলুদাভ জলীয় অংশটাই হলো প্লাজমা। করোনা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার পর শরীরে একধরনের এন্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়াদের শরীরে সুস্থ হওয়া মানুষের প্লাজমা দিলে তার শরীরেও প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হওয়ার ফলে অসুস্থ হওয়া রোগী সু্স্থ হন।
বাংলাদেশে যখন প্লাজমা থেরাপির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয় তখন করোনায় আক্রান্তের স্বজনদের অনেকেই আমার এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে প্লাজমা দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে যোগাযোগ করতে থাকেন। তখনই মনে হলো এই মহাসংকটে একজন মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারলেও নিজেকে কৃতার্থ মনে করবো। প্রথমে আমি এবং আমার স্ত্রী প্লাজমা ডোনেট করি। এরপর বড় পরিসরে প্লাজমার ব্যবস্থা করতে উদ্যোগ নেই আমরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করি ‘প্লাজমা ব্যাংক’ । যেখানে প্লাজমা গ্রহীতা এবং ডোনারের সমন্বয় ঘটাতে পারি। দেশ সমাচার নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের সহযোগিতায় আমরা একটি ডাটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নেই যেখানে ডোনার এবং গ্রহীতার যাবতীয় তথ্য সংরক্ষিত হয়।
www.deshshamachar.com/plasmabank এই লিংকে ডোনার এবং গ্রহীতা তাদের তথ্য দেয়ার পর আমরা যোগাযোগ করে সমন্বয় করি। আমার পরিবারের সদস্যরা এবং বেশ কয়েকজন বন্ধু মিলে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে প্লাজমা ব্যাংক ফ্ল্যাটফর্মটির মাধ্যমে মানুষের সংকটময় সময়ে পাশে থাকার চেষ্টা করছি নিরলসভাবে। অল্প কয়েকদিনেই ফেসবুকে প্লাজমা ব্যাংক গ্রুপে ৩০ হাজারের মতো মানুষ সম্পৃক্ত হন। এরই মধ্যে আমারা প্রায় ৪০ জনকে প্লাজমা ডোনেট করতে সক্ষম হয়েছি এছাড়া অনেকে এই ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে ডোনার খুঁজে পেয়েছেন। দীর্ঘদিন গণমাধ্যমে কাজ করার কারণে গণমাধ্যমের বন্ধু সহকর্মী বড়ভাই যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের প্লাজমা ডোনেট করতে উদ্বুদ্ধ করছি এবং অনেকেই ইতিবাচকভাবে সাড়া দিচ্ছেন।
তবে প্লাজমা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বেশ কিছু সংকটে পড়তে হচ্ছে আমাদের। তার মধ্যে অন্যতম হলো কিছু মানুষ এই সংকটকে পুঁজি করে প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছেন। প্লাজমা ডোনেট করার আশ্বাস দিয়ে যাতায়াত ভাড়া হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছেন টাকা। ফলে প্রতারিত হচ্ছেন কেউ কেউ। যেটি আমাদের ভীষণ কষ্ট দেয়। আরেকটি সংকট হলো গ্রুপ কিংবা ডাটাবেজে যেসব অনুরোধ আসে তার শতকারা ৯৮ ভাগই প্লাজমা চেয়ে আবেদন। চাহিদা এবং প্লাজমা যোগানোর পার্থক্যটা এতো বেশি হওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। তবুও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি যতটুকু মানুষের পাশে থাকা যায়।
অনেকে প্লাজমা ডোনেট করতে চাইলেও করতে পারছেন না কারণ যাদের ডায়াবেটিস কিংবা অন্য রোগ আছে অথবা নারীদের অধিকাংশ যারা কোভিড থেকে সুস্থ হয়েছেন নানান জটিলতায় তারাও দিতে পারছেন না প্লাজমা। এছাড়া সুস্থ হওয়াদের কেউ কেউ আবার প্লাজমা প্রিজার্ভ করে রাখছেন স্বজনদের জন্য। আবার কারো আছে ভীতি। সে কারণে প্লাজমার সংকট অনেক বেশি। তাই যারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন তাদের সবার কাছে আন্তরিক অনুরোধ প্লাজমা ডোনেটের জন্য উপযুক্ত হলে প্লিজ একটি প্রাণ বাঁচাতে অন্তত এগিয়ে আসুন ।করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার অর্থাৎ নেগেটিভ ফলাফল আসার ১৪ দিন পর প্লাজমা দিতে পারেন। কেউ একবার দেয়ার পর আবারো ১৪ দিন পর প্লাজমা দিতে পারবেন। আপনার প্লাজমার জন্য হয়তো বেঁচে যেতে পারে কোনো স্বজনের প্রিয়মুখ। আপনার বেঁচে ফেরায় সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অংশ হিসেবেই দিতে পারেন অমূল্য এই প্লাজমা।
লেখক: শাহাদাত হোসেন, সিনিয়র রিপোর্টার ও সংবাদ উপস্থাপক, যমুনা টেলিভিশন ।