বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) পক্ষ থেকে অনশনরত তারেক রহমানের প্রতি পূর্ণ সংহতি জ্ঞাপন করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, তারেক রহমান যে রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন, সেই রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন অবশ্যই তার প্রাপ্য।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সামনে অনশনরত তারেক রহমানের প্রতি সংহতি জানাতে এসে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘তারেকের রাজনৈতিক দল “আমজনতার দল”, তাদের নিবন্ধনের জন্য কমিশনে ইতোমধ্যে আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদনটা গ্রাহ্য করা হয়নি। আমি দেখেছি, আরও গুরুত্বহীন কিছু সংগঠন আমার কাছে মনে হয়েছে, তারাও নিবন্ধিত হয়েছে। কিন্তু তারেকেরটা দেওয়া হলো না কেন—আমি এটা বুঝতে পারলাম না। তারেক এই দেশের স্বার্থে কথা বলেছে। আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কথা বলেছে।’
তিনি বলেন, ‘সে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছে এবং তার বৈধতার জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছে। সে কোনো গোপন রাজনৈতিক দল করতে চায়নি। সে আইনসম্মত রাজনৈতিক দল করতে চেয়েছে। যদি তার উদ্দেশ্য খারাপ থাকতো তাহলে গোপন রাজনৈতিক দল করে রাষ্ট্রবিরোধী অনেক কার্যকলাপ করতো। কিন্তু রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপতো করেইনি বরং রাষ্ট্রের স্বার্থে দেশের স্বার্থে স্বাধীনতার স্বার্থে গণতন্ত্রের স্বার্থে সে কথা বলেছে। কিন্তু তার নিবন্ধন দেওয়া হচ্ছে না...তাহলে আপনারা (ইসি) কাদের নিবন্ধন… আমি জানি না।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘কাউকে আমি ছোট করতে চাই না। কিন্তু তার যে চিন্তা এবং রাজনৈতিক যে সংগ্রাম এবং কর্মসূচি সেই অনুযায়ী সে রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। সেই দলের নিবন্ধন অবশ্যই তার প্রাপ্য। ন্যায়সঙ্গত কারণে যে অনশন করছে... তার ৫০ ঘণ্টার অনশন, এই অনশন কর্মসূচির প্রতি আমি বিএনপির পক্ষ থেকে পূর্ণ সংহতি জ্ঞাপন করছি।’
২০১৮ সালে নুরুল হক নূর নেতৃত্বাধীন কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে তারেকের উত্থান ঘটে। পরে তিনি নূর গণঅধিকার পরিষদে যোগ দেন। দলটি ভেঙে দুই ভাগ হলে তারেক যান ড. রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বাধীন অংশে।
পরবর্তীতে দুই অংশ আবারও একীভূত হয়, তবে সেই সময় তারেক নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠনের সিদ্ধান্ত নেন।
এদিকে, গত ৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কবাসী) ও ডেসটিনির রফিকুল আমীনের আম জনগণ পার্টিকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। অধিকতর তদন্তে বাদ পড়ে ১১টি দল। এরপর থেকেই ইসির ভবনের সামনে অনশন করছেন তারেক।
নিবন্ধন না দেওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন বলছে, ইসির শর্ত অনুযায়ী দু’টি জেলা ও ৬৭টি উপজেলায় কার্যক্রম ও সক্রিয়তা না পাওয়ায় আমজনতা দলকে নিবন্ধন দেওয়া যায়নি। তবে সব জায়গার কার্যক্রম সক্রিয় আছে জানিয়ে তারেক অভিযোগ করেছেন, ইসির তদন্ত কর্মকর্তারা সঠিক প্রতিবেদন দেননি।
সংস্থাটির নির্বাচন সহায়তা শাখার উপসচিব মো. রফিকুল ইসলাম এই কারণ উল্লেখ করে এরই মধ্যে দলটির সভাপতি কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামানকে চিঠি দিয়েছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০ এপ্রিল আম জনতার দল আবেদন করলে দলের ব্যাংক হিসাব, তহবিলের উৎস, ৩৩ শতাংশ নারী অংশগ্রহণসহ প্রভৃতি তথ্য না থাকায় ১৫ জুলাই ঘাটতি পূরণের জন্য বলা হয়। দলটি সে অনুযায়ী সাড়া দেয়। তদন্তের পর অধিকতর যাচাই হয়। সে সময় নিবন্ধনের শর্ত মোতাবেক ২২টি জেলার মধ্যে দুটি জেলা কার্যালয় এবং ১০০টি উপজেলা কার্যালয়ের মধ্যে ৬৭টি কার্যালয় ও ২০০ ভোটার সমর্থক পাওয়া যায়নি।
এই অবস্থায় ‘রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা, ২০০৮’-এর বিধি ৭-এর উপবিধি (৬) অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন আম জনতার দল (এজেডি) নামীয় দলের আবেদন নামঞ্জুরপূর্বক নিষ্পত্তি করেছে।