বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে ছোটভাই হত্যায় অভিযুক্ত বড় ভাইকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ৮ বছরের শিশু হত্যার দায় তারই বড় ভাই ১২ বছর বয়সী আরেক শিশু সৌরভের ঘাড়ে চাপানোয় সারিয়াকান্দি থানার সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) নয়ন কুমার কোনো মামলার তদন্তের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না বলে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই আদেশ বহাল থাকবে।
আরও পড়ুন: ধর্ষণ ও শিশু হত্যা: একজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল, সাজা কমিয়ে ৩ জনের যাবজ্জীবন
এই হত্যা মামলার যথার্থতা ও আইনি দিক পর্যালোচনার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে করা আবেদন বিচারাধীন থাকা পর্যন্ত এই আদেশ বহাল থাকবে উল্লেখ করে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এই আদেশ দিয়েছেন। সেই সাথে মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা (উপপরিদর্শক, পিবিআই বগুড়া) মো. মনসুর আলীকে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর এই মামলার মেডিকেল রিপোর্ট, নতুন নেয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দি ও আদালতের আদেশের ফটোকপি দাখিল করতে বলা হয়েছে।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
আরও পড়ুন: ছোটমণি নিবাসে শিশু হত্যা: তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি
গত ১১ জুন ‘বিয়ারিং দ্য আনবিয়ারেবল’ শিরোনামে একটি জাতীয় ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে এই মামলায় শিশু আদালতের কার্যক্রম চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ আইনজীবী হাইকোর্টে আবেদন করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১১ আগস্ট হাইকোর্ট এক আদেশে সংশ্লিষ্ট মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা সারিয়াকান্দি থানার সাবেক উপ-পরিদর্শক বর্তমানে নাটোরে সিআইডির পরিদর্শক নয়ন কুমার এবং বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা বগুড়ার পিবিআইয়ের উপ-পরিদর্শক মো. মনসুর আলীকে মামলার নথি (সিডি) নিয়ে হাজির হতে বলেন। ওই আদেশে তারা গত ২২ আগস্ট হাইকোর্টে হাজির হন।
এরমধ্যে নয়ন কুমার লিখিত আবেদন দিয়ে তদন্তে ভুলের জন্য আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চান। এরপর আদালত এবিষয়ে শুনানির জন্য ৬ সেপ্টেম্বর পরবর্তী দিন ধার্য করেন। এইদিন নয়ন কুমারকে আদালতে উপস্থিত হতে বলা হয়। তবে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা মো. মনসুর আলীকে আদালতে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকতে বলা হয়।
আরও পড়ুন: মুক্তিপণ না পেয়ে শিশু হত্যার অভিযোগে ২ কিশোর আটক
ওইদিন শুনানিতে হাইকোর্ট বলেন, ভাইকে হত্যার অভিযোগে ১২ বছর বয়সী ভাইয়ের কাছ থেকে ‘স্বীকারোক্তি’ নিয়ে সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা ‘অবেহলা নয়, অপরাধ করেছেন।’ আজ শুনানির একপর্যায়ে সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা নয়ন কুমার প্রসঙ্গে আদালত বলেছেন, ‘ডিপার্টমেন্টাল প্রসেডিংস এখানে বিষয় না। হি হ্যাস কমিটেড ক্রাইম’। তার অপরাধ অবহেলাজনিত নয়।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২৫ আগস্ট ৮ বছরের শিশুর লাশ উদ্ধারের একদিন পর বগুড়ার সারিয়াকান্দি থানায় মামলা করেন নিহতের বাবা মহিদুল ইসলাম। স্থানীয় থানা পুলিশ ওই বছরের ২৯ নভেম্বর বাদীর ১২ বছরের ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে থানায় নিয়ে যায়। পরদিন ৩০ নভেম্বর বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয় তাকে। সেখানেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় সে। বাবা-মা ছোট ভাইকে তার চেয়ে বেশি ভালোবাসায় তাকে খুন করেছে বলে ম্যাজিস্ট্রেটকে জানায় বড় ছেলে। পরে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার কারণে। কিন্তু সন্দেহভাজন হিসেবে প্রতিটি শুনানিতেই আদালতে উপস্থিত থাকতে হয়েছে ওই শিশুকে।
মহিতুলের অভিযোগ, ‘খুনীরা প্রভাবশালী। পুলিশ তাদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে স্বীকারোক্তি দিতে বড় ছেলেকে বাধ্য করেছে।’ পরে প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা নয়ন কুমার বড় ভাইকে একমাত্র আসামি দেখিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। কিন্তু মহিদুল ইসলাম এতে নারাজি দিলে ২০১৭ সালে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয় আদালত। পিবিআই চারবছর ধরে তদন্ত শেষে বড় ছেলেকে নির্দোষ হিসেবে চিহ্নিত করে। এছাড়া হত্যার ঘটনায় অন্য দুইজনকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। এ অবস্থায় এসআই মনসুর আলী ১২ বছর বয়সী বড়ভাইকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।