ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে ১১ বছর বয়সী অজ্ঞাত শিশু গুরুতর আহত হয়ে ১০৪ দিন ধরে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আহত ওই শিশুর পরিচয় মেলেনি।
কয়েকদিন আগে শিশুটির অবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হলেও শক্রবার আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তবে এতদিন শিশুটি চোখ মেলতে পারতো ও কথা বলার চেষ্টা করতো৷ মুখে খাবার দিলে তা গিলতে পারতো। এখন আগের মতো চোখ মেলতে পারে না ও কথা বলার শক্তি পায় না।
শুক্রবার বিকালে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. একেএম নিজাম উদ্দিন শিশুটির অবস্থা অবনতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
আরও পড়ুন : কুড়িয়ে পাওয়া বোমায় শিশু নিহত, মা বোন আহত
সার্জারি বিভাগের সূত্র জানায়, অজ্ঞাত শিশুটি তিন মাস আগে মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হয়ে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে ভর্তি হয়। ওইদিন থেকে হাসপাতালে সার্জারি চিকিৎসক, নার্স ও পরিচ্ছন্ন কর্মীর সেবায় শিশুটির শারীরিক অবস্থা অনেক উন্নতি হয়েছিল। এখন শিশুটি আগের মতো চোখ মেলতে পারে না। মাঝে মধ্যে কথা বলার চেষ্টা করলে এখন করতে পারে না। ওই শিশুর মুখে খাবার দিলে তা গিলতে খুব কষ্ট হয়। যেহেতু ওই শিশুর কেউ নেই, তাই সার্জারি বিভাগ হয়েছে শিশুটির চিকিৎসার শেষস্থল।
ওই শিশুর যাবতীয় ওষুধপত্র হাসপাতাল বহন করলেও খাওয়া-দাওয়া জোগান দিচ্ছে পরিচ্ছন্নকর্মী উজ্জ্বল ও বিভিন্ন সামাজিক-মানবিক সংগঠনের নেতারা শিশুটির পাশে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু সাংবাদিক অজ্ঞাত শিশুটির খোঁজ খবরও রাখছেন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে৷ দ্রুত শিশুটিকে সুস্থ করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে অনেকেই চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. শওকত হোসেন জানান, শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করার পর থেকেই শিশুটি অচেতন ছিল। কয়েকদিন আগে শিশুটির শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নতি ছিল। কিন্তু হঠাৎ ছেলেটি আগের চেয়ে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কয়েকদিনের ভেতরে শিশুটির একটি ব্রেনের সিটি স্ক্যান করানো হবে৷ তারপর শিশুটির শারীরিক অবস্থার বিস্তারিত জানানো যাবে।
আরও পড়ুন: চুরির অভিযোগে কুষ্টিয়ায় শিশু নির্যাতন
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহিম জানান, যেহেতু ১১বছর বয়সী শিশুটি অজ্ঞাত, তার পরিবারের লোকদের খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ। ইতোমধ্যে জানতে পারছি যে, কসবার গংগাসাগর থেকে ওই শিশুর মা এসে দেখে গেছেন। পরবর্তীতে আর কোনো খোঁজ রাখেননি ওই নারী। আমরা খুব শিগগিরই পরিবারের খোঁজ পাবো।
উল্লেখ্য, গত ৩ জানুয়ারি স্থানীয় এক ব্যক্তি দুপুর পৌনে ২টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথের আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বৈকণ্ঠপুর এলাকার রেললাইনের পাশ থেকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকা একটি শিশুটিকে উদ্ধার করেন। পরে তিনি আশুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছিলেন। তার মাথায়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত থাকায় সেখানে শারীরিক অবস্থা খারাপ দেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছিল। এখনও তার পরিবারকে শনাক্ত করা যায়নি। তবে ওই অজ্ঞাত শিশুর মা পরিচয়ে একজনের খোঁজ পাওয়া গেলেও সর্বশেষ তাকেও আর দেখা যায়নি।