প্রধান বিচারপতি
ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় চাই শক্তিশালী বিচার বিভাগ: প্রধান বিচারপতি
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার জন্য বিচার বিভাগকে শক্তিশালী করতে হবে।
তিনি বলেন, আসুন ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার জন্য জুডিশিয়ারিকে (বিচার বিভাগকে) শক্তিশালী করি। জুডিশিয়ারি যাতে মসৃণভাবে চলতে পারে, স্বাধীনভাবে বিচার কাজ পরিচালনা করতে পারে, আপনারা বিচার বিভাগকে সহায়তা করবেন। তাহলে বিচার বিভাগ এগিয়ে যাবে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনে বাগেরহাটের পিসি কলেজের সাবেক ছাত্রদের পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতিকে দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আরও পড়ুন: বর্তমানে বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রিতা বেড়েছে: প্রধান বিচারপতি
প্রধান বিচারপতি বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে গেলে সবার আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। জুডিশিয়ারিকে গতিশীল করতে হবে। আমি বার বার বলি যদি জুডিশিয়ারি ফেল করে গণতন্ত্র ফেল করবে। আর গণতন্ত্র ফেল করলে রাষ্ট্র অকার্যকর হবে। আসুন আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করি এই বিচার বিভাগের চাকাটা কীভাবে একটু সচল করা যায়।
তিনি বলেন, আমাদের পরাজয় মেনে নেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। কারণ পরাজয়ই একজনকে জয়ী করার পথ সুগম করে দেয়।
বিচারপতি বলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের সেই গ্রাম থেকে উঠে আসা। তারা যখন আদালতের বারান্দায় ঘোরে, আমাদের উচিত তাদের যত কম খরচে পারা যায় বিচার দেয়া। সকলের সহযোগিতা ছাড়া একা জুডিশিয়ারিকে এগিয়ে নেয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, দেশের অধিকাংশ মানুষ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে উঠে এসেছেন। তারা যখন আদালতের বারান্দায় ঘোরেন, আমাদের উচিত তাদের যত কম খরচে বিচার দেয়া। তাদেরকে যদি একদিন আগেও আদালতের বারান্দা থেকে বাড়ি ফেরাতে পারি তাহলে তারা একদিন ঘোরা থেকে বাঁচলেন।
প্রধান বিচারপতি বলে, ১৯৭১ সালে যে উদ্দেশ্য নিয়ে ৩০ লাখ মানুষ রক্ত দিয়েছেন, আমরা তার সুবিধাভোগী। যারা বুকের রক্ত দিয়ে দেশকে স্বাধীন করে দিয়েছেন তাদেরকে বুকে ধারণ করতে হবে। এখন যদি আমরা কাজে গাফিলতি করি, কোনো প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিগ্রস্ত করি, তাহলে তাদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা হবে। আসুন সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করি।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংবর্ধনা কমিটির আহ্বায়ক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শেখ আলী আহমেদ খোকন। পি সি কলেজিয়ানস অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহতাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন-প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি শেখ আব্দুল আউয়াল, জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সম্পাদক আব্দুন নূর দুলাল, আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা অধ্যাপক মাজাফফর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
আরও পড়ুন: প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে মো. নূরুজ্জামান
প্রতি বছর ‘প্রধান বিচারপতি পদক’ প্রদানের সিদ্ধান্ত, নীতিমালা প্রণয়ন
প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে মো. নূরুজ্জামান
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর অনুপস্থিতিতে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালন করবেন। রবিবার সুপ্রিম কোর্টের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জেনারেল (সিনিয়র জেলা জজ) মো. গোলাম রব্বানী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে গমন ও অবস্থান করবেন।
এতে আরও বলা হয়েছে, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর অনুপস্থিতিতে প্রধান বিচারপতির যাত্রার তারিখ থেকে পুনরায় কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালন করবেন।
আরও পড়ুন: প্রতি বছর ‘প্রধান বিচারপতি পদক’ প্রদানের সিদ্ধান্ত, নীতিমালা প্রণয়ন
বর্তমানে বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রিতা বেড়েছে: প্রধান বিচারপতি
আদালতে মানুষের দুর্দশার সুযোগ নেয়া বরদাশত করা হবে না: প্রধান বিচারপতি
প্রতি বছর ‘প্রধান বিচারপতি পদক’ প্রদানের সিদ্ধান্ত, নীতিমালা প্রণয়ন
এখন থেকে প্রতি বছর ‘প্রধান বিচারপতি পদক’ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অধস্তন আদালতের পাঁচজন বিচারক এবং সকল জেলার মধ্য থেকে দলগতভাবে একটি জেলা জজশীপ/মহানগর দায়রা জজশীপকে এই পদক দেয়া হবে। আর এ জন্য ‘প্রধান বিচারপতি পদক নীতিমালা, ২০২২’- প্রণয়ন করা হয়েছে।
বুধবার সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল (ভারপ্রাপ্ত) মো. গোলাম রব্বানীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এবং বিচারিক সেবার উৎকর্ষ অর্জন, কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি, শুদ্ধাচার, সক্ষমতা, দক্ষতার উন্নয়ন ও বিকাশে এবং বিদ্যমান মামলার জট নিরসন করতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ জন্য মামলা-মোকদ্দমার নিষ্পত্তি আরও গতিশীল করতে প্রতিবছর এ পদক দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি পদক নীতিমালা, ২০২২ এবং প্রধান বিচারপতি পদকের আবেদন ফরম সংশ্লিষ্ট সবার অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, নীতিমালার বিধান ৯(গ) অনুসারে জেলা ও মহানগর বাছাই কমিটি গঠন সম্পর্কিত বিজ্ঞপ্তি ও কমিটির সদস্যদের নাম ও পদবিসহ তালিকা সরাসরি অথবা ডাকযোগে ‘রেজিস্ট্রার জেনারেল, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট (দৃষ্টি আকর্ষণ: সাচিবিক সহায়তা প্রদানকারী কর্মকর্তা, প্রধান বিচারপতি পদক নীতিমালা প্রণয়ন ও বাছাই সংক্রান্ত জাজেস কমিটি)’ বরাবরে এবং উক্ত বিজ্ঞপ্তির সফট কপি নির্ধারিত মেইলে পাঠাতে হবে। প্রধান বিচারপতি পদকের আবেদন ফরম বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে নিতে হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: অভিন্ন সাজা প্রদান নীতিমালা কেন নয়, জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট
অটোমোবাইল শিল্প উন্নয়নে মন্ত্রিসভায় নীতিমালা অনুমোদন
হাজী সেলিমের জামিন আবেদন নথিভুক্ত, আপিলের শুনানি ২৩ অক্টোবর
দুর্নীতির মামলায় ১০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের জামিন আবেদন নথিভুক্ত রেখেছেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে তার দণ্ডের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি চেয়ে করা আবেদন) শুনানির জন্য ২৩ অক্টোবর দিন রেখেছেন সর্বোচ্চ আদালত। সোমবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা। দুদকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
পরে খুরশীদ আলম খান বলেন, জামিন আবেদন নথিভুক্ত করে রেখেছেন আদালত। আর তার লিভ টু আপিলের শুনানির জন্য ২৩ অক্টোবর দিন রেখেছেন।
সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে জরুরি অবস্থার মধ্যে ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজী সেলিম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক।
২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল রায়ে বিচারিক আদালত দুদক আইনের দুটি ধারায় হাজী সেলিমকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন। এছাড়া এই অবৈধ সম্পদ অর্জনের ক্ষেত্রে তার স্ত্রী গুলশান আরা সহযোগিতা করেছেন-এমন অপরাধে তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।
এছাড়া তাদেরকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা এবং প্রায় ২৬ কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করেন আদালত।
আরও পড়ুন: ভাইয়ের মৃত্যু, সাড়ে ৫ ঘণ্টার প্যারোলে মুক্ত হাজী সেলিম
পরে ২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর হাজী সেলিম ও তার স্ত্রী এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট তাদের সাজার রায় বাতিল ঘোষণা করেন। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে দুদক। ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল করে আপিল বিভাগ হাইকোর্টকে তাদের আপিলের ওপর পুনঃশুনানির নির্দেশ দেন। এরই মধ্যে ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর মারা যান হাজী সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা। এছাড়া এ মামলায় হাজী সেলিম জামিনে ছিলেন। আপিল বিভাগের নির্দেশের দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর পর দুদক হাজী সেলিমের আপিল দ্রুত শুনানির জন্য হাইকোর্টে আবেদন করে। এরপর পুনঃশুনানি করে গত বছরের ৯ মার্চ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ১০ বছরের দণ্ড বহাল থাকলেও তিন বছরের সাজা থেকে খালাস পান তিনি। একইসঙ্গে রায় পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তাকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়।
গত ৯ মার্চ অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় হাজী সেলিমকে বিচারিক আদালতের দেয়া ১৩ বছর সাজা কমিয়ে ১০ বছর কারাদণ্ড বহাল রেখে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। দুই বিচারপতির সইয়ের পর ৬৮ পৃষ্ঠার রায়ের কপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। এ সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ না করলে তার জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
ওই রায় অনুসারে গত ২২ মে আত্মসমর্পণ করেন আওয়ামী লীগের এ সংসদ সদস্য। সেদিন জামিন আবেদন করা হলে আদালত তা নামঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসসহ শারীরিক নানা জটিলতা থাকায় ২৩ মে হাজী সেলিমকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরে গত ২৪ মে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় লিভ টু আপিল দায়েরের পাশাপাশি জামিন আবেদন করেছিলেন হাজী সেলিম। ৬ জুন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত আবেদনটি শুনানির জন্য নিয়মিত বেঞ্চে ১ আগস্ট দিন ধার্য করেন।
আরও পড়ুন: চেম্বার আদালতে জামিন পাননি হাজী সেলিম, ১ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি
বর্তমানে বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রিতা বেড়েছে: প্রধান বিচারপতি
বর্তমানে বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রিতা বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান- ২০২২ উপলক্ষ্যে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকাস্থ খুলনা বিভাগীয় আইনজীবী সমিতি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, নানা কারণে বর্তমানে বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রিতা বেড়েছে। আমাদের সচেতনতা ও কর্মনিষ্ঠায় মামলা জট কমে, হাজার হাজার বিচারপ্রার্থী ন্যায় বিচার পেয়ে দ্রুত বাড়ি ফিরতে পারে।
হাইকোর্ট বিভাগের বেঞ্চ পুনর্গঠনের বিষয়ে প্রদান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, বেঞ্চ গঠন করতে গেলে আমাকে অনেক কিছু মনে রাখতে হয়। এখনও কজ লিস্টে আশির দশকের ৯০ দশকের মামলা তালিকায় আসে। এরপর ২০০০ সালের পর থেকে পর্যায়ক্রমে মামলা তালিকায় আসে।
অনেক মামলা আছে যেটা ৪০ বছর পর্যন্ত পেন্ডিং আছে। মানুষ বিচারের আশায় আদালতে কত দিন ঘুরবে? এভাবে ঘুরতে ঘুরতে যদি একসময় মানুষের বিচারের উপর অনাস্থা প্রকাশ করে বলে এই দেশে বিচার নাই, তাহলে এটাকে কি অন্যায় বলা হবে?
তিনি বলেন, ‘বেঞ্চ গঠন করতে গিয়ে আমার মনে রাখতে হয়, যেই লোক বিচার পেতে বছর বছর আদালতের বারান্দায় ঘুরছে; তাদের কিভাবে বাড়ি ফেরানো যায়। বেঞ্চ গঠনের সময়, এটা আমার মনে রাখতে হয়।’
করোনার সময় অনেক বিচারপতি অসুস্থ হয়ে পড়ায় বেঞ্চ গঠনের বেগ পেতে হয়েছে বলেও তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, ‘আশা করি আমরা কিছু দিনের ভিতরেই নতুন বিচারক পাবো। তখন হাইকোর্ট বিভাগে বেঞ্চের সংখ্যা আরও বাড়বে। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য যেভাবে বেঞ্চ গঠন করলে ভালো হয়, সেটাই আমি করার চেষ্টা করি।’
আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টের ১২ বিচারপতি করোনায় আক্রান্ত: প্রধান বিচারপতি
তিনি বলেন, আইনজীবীদের জায়গা সংকটের পাশাপাশি আমি মনে করি যারা গ্রামগঞ্জ থেকে সাধারণ মানুষ বিচারের আশায় উচ্চ আদালতে আসে, তাদেরও বসার জায়গা করার দরকার। এজন্য আমি যখন শপথ নেয়, তখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার প্রার্থীদের জন্য সব আদালত এলাকায় বসার জায়গা করার জন্য শেড নির্মানের অনুরোধ করি। তিনি তাৎক্ষণিক রাজি হয়ে যান। এখন কথা হলো টাকা তো আমার হাতে থাকে না। আলাদিনের চেরাগ পেলে আমি সাথে সাথে আপনাদের দাবি পূরণ করে দিতাম। তারপরও কথা হলো আমাদের প্রধান সমস্যা হলো জায়গার। আমাদের এখন যতটুকু জায়গা আছে তার মধ্যে আগামী ১০০ বছরের প্ল্যান করতে হবে। প্রতিটি ইঞ্চি জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য আমাদের মহাপ্লান করে এগোতে হবে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আইন পেশার সুমহান মর্যাদা রক্ষা করতে সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে বার (আইনজীবী) ও বেঞ্চ (বিচারক)কে সোচ্চার থাকতে হবে। আইনজীবীদের প্রতি একান্ত প্রত্যাশা থাকবে যে, আদালতের পবিত্র অঙ্গন থেকে অসাধু ও প্রতারক চক্রকে উচ্ছেদের মাধ্যমে এই অঙ্গনকে কলুষ মুক্ত করবেন।
আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘খেটে খাওয়া সর্বস্ব হারানো মানুষকে আইনের সেবা প্রদানের সুযোগ আপনাদেরই করে দিতে হবে। জীবন যুদ্ধে ক্লিষ্ট মানুষগুলোর জায়গায় একবার নিজেকে ভাবুন, মুহূর্তে তাদের কষ্টে ভারাক্রান্ত হয়ে যাবেন। বিচার প্রত্যাশি জনগণের হয়রানি নিরসনে আপনাদের হৃদয় নিংড়ানো আন্তরিকতা খোদার কাছে ইবাদতের মর্যাদা পাবে।’
এসময় প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা ফেল করলে আইনের শাসন ফেল করবে। আইনের শাসন ফেল করলে ডেমোক্রেসি ফেল করবে। ডেমোক্রেসি ফেল করলে রাষ্ট্র অকার্যকর হয়ে যাবে। সেজন্য আমরা আমাদের স্ব-স্ব দায়িত্ব পালন করবো।’
সমিতির সভাপতি মো. এহিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এম. আমির উল ইসলাম। এসময় আরও বক্তব্য রাখেন, সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকার, বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলম, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, কুষ্টিয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য সারোয়ার জাহান বাদশা, সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, সাবেক কোষাধ্যক্ষ ব্যারিস্টার রাগিব রউফ চৌধুরী ও ইমাম হোসেন।
আরও পড়ুন: আদালতে মানুষের দুর্দশার সুযোগ নেয়া বরদাশত করা হবে না: প্রধান বিচারপতি
আবারও ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনায় যেতে হবে: প্রধান বিচারপতি
হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে সহিংসতা: প্রধান বিচারপতি বিবৃতি না দেয়ায় ফখরুলের ক্ষোভ
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার পর প্রধান বিচারপতি কোনো বিবৃতি না দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ফখরুল এ ক্ষোভ জানান।
তিনি বলেন, ‘এটা দুর্ভাগ্যজনক যে প্রধান বিচারপতি এ ঘটনায় কোনো বিবৃতি দেননি। এমনকি যারা জোর করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দায়িত্ব নিয়েছেন তারাও কোনো বিবৃতি দেননি।’
তিনি আরও বলেন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের (জেসিডি) নেতাকর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা সন্ত্রাসী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের আসল রূপকে উন্মোচিত করেছে।
ফখরুল বলেন,‘আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী ও ঘাতক বাহিনী আমাদের ছাত্রদের হত্যার উদ্দেশ্যে বিপজ্জনক অস্ত্র দিয়ে রাস্তায় পিটিয়ে নির্যাতন করেছে। আমরা দেখেছি সন্ত্রাসীরা হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে ঢুকে গণতন্ত্রকামী শিক্ষার্থীদের ওপর দমন-পীড়ন চালায়।’
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতুর ৩০ হাজার কোটি টাকা কোথায়, প্রশ্ন আমীর খসরুর
ফখরুল অভিযোগ করেন, সরকার রাজনীতিকরণের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানকে ক্ষমতাসীনদের অধীনস্ত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে।
আহত ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের দেখতে বিভিন্ন হাসপাতালে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, একজন মানুষকে কীভাবে এভাবে পিটিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া যায়, তা চিন্তাও যায় না। ‘আমাদের এক মেয়েকে এত জঘন্যভাবে আক্রমণ করা হয়েছিল এবং নিপীড়ন করা হয়েছিল যে তিনি এখন আইসিইউতে রয়েছেন। এটাই আওয়ামী লীগের আসল বৈশিষ্ট্য।’
ফখরুল বলেন, তাদের দলের নেতাকর্মীরা ১৩ বছর ধরে ক্ষমতাসীনদের নানাভাবে নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন।
তিনি বলেন, বৃহত্তর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করে বর্তমান সরকারের পতন নিশ্চিত করতে তাদের দল ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘একটি বিষয়ে আমি রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুরোধ করতে চাই, রাজনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য নিজ নিজ অবস্থান থেকে সংগ্রাম চালাতে।’
তিনি বলেন, রাজনৈতিক নেতারা একসঙ্গে কাজ করে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে রাজি হয়েছেন।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে আমরা এটিকে একটি শক্ত আকার দিতে পারি এবং এই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য একটি বৃহত্তর গণআন্দোলন শুরু করতে পারি।’
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে আগামী নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে।
আরও পড়ুন: ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের ওপর হামলার পরিণতি শুভ হবে না: বিএনপি
ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্রদলের শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন: ফখরুল
এবার জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বিচারকদের বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ
এবার দেশের অধস্তন আদালতের বিচারকদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বিদেশ ভ্রমণের আবেদন না করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. বজলুর রহমান এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, অধস্তন আদালতের বিচারকদের বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে বিদেশ ভ্রমণের প্রবণতা বেড়েছে। বিচারপ্রার্থী জনগণের দ্রুত বিচারিকসেবা দেয়ার উদ্দেশ্যে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব এড়াতে অধস্তন আদালতের বিচারকদের প্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ পরিহার করতে অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন প্রধান বিচারপতি। এ অবস্থায়, খুব প্রয়োজন ছাড়া অধস্তন আদালতের বিচারকদের বিদেশ ভ্রমণের আবেদন না করার জন্য নির্দেশ দেয়া হলো।’
এর আগে গত ১২ মে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বন্ধের বিষয়ে পরিপত্র জারি করেছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা ওই পরিপত্রে বলা হয়, করোনা–পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও বর্তমান বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে পুনরায় আদেশ না দেয়া পর্যন্ত এক্সপোজার ভিজিট, শিক্ষাসফর, এপিএ এবং ইনোভেশনের আওতামুক্ত ভ্রমণ ও ওয়ার্কশপ বা সেমিনারে অংশগ্রহণসহ সব ধরনের বৈদেশিক ভ্রমণ বন্ধ থাকবে।
আরও পড়ুন: আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণেও নিষেধাজ্ঞা
পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা
মহাসড়কে ইজিবাইক নয়: আপিল বিভাগ
মহাসড়কে থেকে ইজিবাইক অপসারণের আদেশ দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। এ বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ সংশোধন করে সোমবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর ও মনিরুজ্জামান আসাদ।
এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর বাঘ ইকো মটর্সের সভাপতি কাজী জসিমুল ইসলামের করা এক রিট আবেদনের শুনানিতে অবৈধ ইজিবাইক চিহ্নিত ও সড়ক থেকে তা অপসারণের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে বাংলাদেশ ইলেকট্রিক থ্রি-হুইলার ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ আটজন। গতকাল তাদের আবেদনের শুনানি শেষে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশের সড়ক শব্দটি সংশোধন করে মহাসড়ক যুক্ত করেন। পাশাপাশি দ্রুততার সঙ্গে এ বিষয়ে হাইকোর্টের জারি করা রুল নিষ্পত্তি করতে বলা হয়।
আবেদনকারীর আইনজীবী জানান, অসৎ উদ্দেশ্যে একটি রিট করা হয়েছিল বাংলাদেশের সকল রাস্তা থেকে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক সরিয়ে নেয়ার জন্য। আজ সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ সংশোধন করেছে। আপিল বিভাগ বলেছেন, এটা শুধু মহাসড়কে চলবে না। অন্য রাস্তায় চলতে পারবে। আমরা মনে করি এটা একটা ভালো রায় হয়েছে।
ইজিবাইক নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে ১৩ ডিসেম্বর রিট দায়ের করা হয়। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১৫ ডিসেম্বর হাইকোর্ট অবৈধ ইজিবাইক চিহ্নিত করে তা সড়ক থেকে অপসারণের নির্দেশ দেয়। হাইকোর্টের রুলে অবৈধ থ্রি হুইলার ইজিবাইক আমদানি থেকে বিরত থাকার এবং এর নির্মাণ (কনস্ট্রাকশন) বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিস্ত্রীয়তাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চান। শিল্প সচিব, সড়ক পরিবহন ও সেতু সচিব, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সচিব, বিআরটিএ, এনবিআর ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে বাংলাদেশ ইলেকট্রিক থ্রি-হুইলার ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন।
আরও পড়ুন: এসিড সমৃদ্ধ ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক বন্ধের নির্দেশ হাইকোর্টের
ইজিবাইকের ধাক্কায় চুয়াডাঙ্গায় বৃদ্ধা নিহত
আদালতে মানুষের দুর্দশার সুযোগ নেয়া বরদাশত করা হবে না: প্রধান বিচারপতি
‘আদালত প্রাঙ্গণে মানুষের দুর্দশার সুযোগ নেয়া কখনোই বরদাস্ত করা হবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ‘আমি প্রত্যেক বিচারক এবং অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশ দিয়েছি, সবার সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে। আদালত প্রাঙ্গণে মানুষের দুর্দশার সুযোগ নেয়া কখনোই বরদাস্ত করা হবে না।’
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের নবনির্মিত ১২তলা ভবন ‘বিজয় ৭১’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধান বিচারপতি তার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি জানেন, বার (আইনজীবী সমিতি) এবং বেঞ্চ (আদালত) জুডিসিয়ারি নামক একটি পাখির দুটি ডানা। একটি শক্তিশালী বার, শক্তিশালী জুডিসিয়ারির জন্য অপরিহার্য। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের বর্তমান সংখ্যা ৯ হাজার ৩০২ জন। তাদের বসবার জায়গার সংকুলান বর্তমান বার বিল্ডিংগুলোতে একদমই অসম্ভব। তাদের বসবার এবং সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে দেয়ার সুযোগ করে দেয়ার দায়িত্ব আমাদের সবার। এজন্যও বারের নতুন ভবন তৈরি করা একান্ত প্রয়োজন। গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের সার্বিক মঙ্গলের জন্য আপনার গৃহীত পদক্ষেপ ও সুদৃঢ় অঙ্গীকার নিঃসন্দেহে আগামী প্রজন্মের পথচলায় পাথেয় হয়ে থাকবে। ’
আরও পড়ুন: দুর্নীতির বিষয়ে ‘নো কম্প্রোমাইজ’: প্রধান বিচারপতি
দেশের মুক্তি সংগ্রামের কথা উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘অত্যাচারী শাসকশ্রেণির নিপীড়নে জর্জরিত জনতার সাম্য, গণতন্ত্র তথা ন্যায়বিচারের স্পৃহায় জেগে ওঠা উত্তাল আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জন্ম হয়েছিল আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের। মহান সংবিধানের চেতনা সমুন্নত রাখার সুদৃঢ় প্রত্যয়ে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার মানসে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ। আজ বলতে গর্ব হয়, যে সকল বিচারপতি, আইনজীবী ও গুণীজনের নিষ্ঠা, প্রয়াস ও পদস্পর্শে ঋদ্ধ হয়েছে এই আদালত প্রাঙ্গণ। তাদের অনেকে আইন অঙ্গনেই শুধু নয়, পুরো বাংলাদেশের ইতিহাসজুড়ে তাৎপর্যময় অবদানের মাধ্যমে সমুজ্জ্বল হয়ে আছেন। তাদের গড়ে যাওয়া দৃষ্টান্তের ওপর ভর করে আজ প্রাণ পেয়েছে সুবিচারের এই সৌধ। ’
প্রধান বিচারপতি বলেন,‘সম্মানিত বিচারকগণ নিয়েছেন সততা, সাহসিকতা ও সমবেদনার দীক্ষা। সেই সঙ্গে সমর্থ হয়েছেন অগণন আলোচিত জনগুরুত্বপূর্ণ রায় প্রদানে। বিচারকগণ সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন তাদের সততা, মেধা ও শ্রম দিয়ে মামলার জট ছাড়িয়ে দুর্দশাগ্রস্ত বিচারপ্রার্থীদের আদালত প্রাঙ্গণ হতে যতদ্রুত সম্ভব বাড়ি ফেরাতে।’
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার।
চার বছর আগে ২০১৮ সালের ৪ মার্চ একনেকে এই ভবনটি নির্মাণের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়। ১৫৮ দশমিক ৫১৯ কোটি টাকা মূল্যের ভবনে থাকছে ৩২টি এজলাস তথা বিচার কক্ষ। বিচারপতিদের জন্য রয়েছে ৫৬টি চেম্বার। বেঞ্চ অফিসার, সহকারী বেঞ্চ অফিসার ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের জন্য রয়েছে ৫৬টি অফিস। থাকছে একটি করে ডে-কেয়ার সেন্টার, নামাজের স্থান ও গভীর নলকূপ। রয়েছে চারটি লিফট। ১২তলা এ ভবনে রয়েছে ১৬০০ কেভিএ সাবস্টেশন ও ৫০০ কেভিএ জেনারেটের। ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোরে ৪টি বিআরটিসি দোতলা বাস পার্কিংয়ের ব্যবস্থা ও দুটি স্টোররুম রয়েছে।
আরও পড়ুন: আবারও ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনায় যেতে হবে: প্রধান বিচারপতি
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধান বিচারপতির সৌজন্য সাক্ষাৎ
এস কে সিনহার বিরুদ্ধে দুদকের আরেক মামলা
সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ও তার ভাই অনন্ত কুমার সিনহার বিরুদ্ধে দুই কোটি ৪০ লাখ টাকা পাচারের অভিযোগে আরেকটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন সচিব মাহবুব হোসেন।
দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন।
আরও পড়ুন: যশোর শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যানসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
মামলা অনুসারে সাবেক এই প্রধান বিচারপতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী তার ভাইয়ের মাধ্যমে দুই লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন।
অনন্ত কুমারের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি ব্যাংকে অর্থ পাচার করা হয়েছে বলে মামলায় বলা হয়েছে।
দুদক এখন মামলাটি তদন্ত করবে বলে জানান দুদকের এই কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন: দুদকের মামলায় মুফতি ইজহারের ২ বছরের কারাদণ্ড
চমেক হাসপাতালে দুদকের অভিযান