তুরস্ক
তুরস্কে আরও একজনকে জীবিত উদ্ধার করল বাংলাদেশ দল, ৯ জনের লাশ পুনরুদ্ধার
বাংলাদেশের একটি যৌথ উদ্ধারকারী দল গত সোমবারের ভূমিকম্পের পর তুরস্কে উদ্ধার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ভূমিকম্পটি এই অঞ্চলে আঘাত হানার সবচেয়ে মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে একটি।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের মিডিয়া সেলের উপ-সহকারী পরিচালক শাহজাহান সিকদার রবিবার বলেছেন, বাংলাদেশ দল এখনও পর্যন্ত ধ্বংসস্তূপ থেকে ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরীকে জীবিত উদ্ধার করেছে এবং ৯টি লাশ উদ্ধার করেছে।
সেনাবাহিনীর ৩৪ জন এবং ফায়ার সার্ভিসের ১২ জনের সমন্বয়ে গঠিত দলটি বুধবার রাত ১০টায় ঢাকা ত্যাগ করে এবং বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৪৬ মিনিটে তুরস্কের আদানা সামরিক বিমান ঘাঁটিতে পৌঁছায়।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্প: নিহতের সংখ্যা ৩৩ হাজার ছাড়াল, তুরস্কে ঠিকাদার আটক
একটু উষ্ণতার জন্য লড়ছে তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া মানুষেরা
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্প ও সিরিজ আফটারশকে ১৯ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছে। দুর্ঘটনার তিনদিন পর বৃহস্পতিবার তীব্র ঠান্ডা ও ক্ষুধা-তৃষ্ণায় ধ্বংসস্তূপের মাঝে আটকে পড়া জীবিতদের বেঁচে থাকার আশা ক্ষীণ হয়ে পড়েছে।
এখনও কয়েক হাজার মানুষ ক্যাম্পফায়ারের চারপাশে জড়ো হয়ে খাবার ও পানির জন্য অপেক্ষা করছে।
উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও বেশি লোককে জীবিত বের করার জন্য তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
তুরস্কের আন্তাকিয়া শহরে কয়েক ডজন মানুষ শিশুদের পোশাক ও অন্যান্য সামগ্রী বিতরণকারী একটি ট্রাকের সামনে সাহায্যের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে।
দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া আহমেত তোকগোজ বিধ্বস্ত অঞ্চল থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
যদিও ভূমিকম্পে ঘরবাড়ি হারানো কয়েক হাজার মানুষ তাঁবু, স্টেডিয়াম এবং অন্যান্য অস্থায়ী বাসস্থানে আশ্রয় পেয়েছে। তবে এখনও অনেক মানুষ সোমবারের ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পর থেকে বাইরে রাত কাটাচ্ছেন।
তিনি বলেন, বিশেষ করে এই ঠান্ডায় এখানে বসবাস করা সম্ভব নয়। ‘লোকেরা ক্যাম্পফায়ারের চারপাশে কিছুটা উষ্ণতা পায়, তবে ক্যাম্পফায়ারগুলো পর্যাপ্ত উষ্ণতা দিতে অপ্রতূল ... যদি মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে মারা না যায়, তবে তারা ঠান্ডায় মারা যাবে।’
এদিকে, ভূমিকম্পের পর বৃহস্পতিবার সকালে তুরস্ক থেকে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় জাতিসংঘের সাহায্য পাঠানো প্রথম ট্রাক প্রবেশ করেছে। ছোট কিছু সাহায্য সংস্থা কিছু পণ্য পাঠিয়েছে।
আরও পড়ুন: তুরস্ক ও সিরিয়ার ভূমিকম্প: বাংলাদেশে ৯ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
শীতকালীন আবহাওয়া ও ভূমিকম্পের ফলে রাস্তা এবং বিমানবন্দরে হওয়া ক্ষতি, ইতোমধ্যে সিরিয়ায় এক দশকেরও বেশি গৃহযুদ্ধের ফলে বিপর্যস্ত অঞ্চলকে আরও বেশি বিধ্বস্ত করে ফেলেছে।
গৃহযুদ্ধ সিরিয়ার লক্ষাধিক লোককে বাস্তুচ্যুত করেছে এবং দেশটির অনেক মানুষ বেঁচে থাকার জন্য মানবিক সাহায্যের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। পাশাপাশি আরও কয়েক লাখ মানুষ আশ্রয়ের খোঁজে সীমান্ত দিয়ে তুরস্কে পাড়ি জমায়।
অন্যদিকে, তুরস্কের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন যে দুর্ঘটনার পর উদ্ধার তৎপরতা খুব ধীর ছিল।
প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সরকার এই সংকটে অব্যবস্থাপনা করেছে এমন কোনো অভিযোগ যদি ওঠে, তবে আগামী মে মাসে হতে যাওয়া নির্বাচনে তিনি কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হবেন।
তবে এরদোয়ান বৃহস্পতিবারও ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকা সফর করে সমালোচনা কমানোর চেষ্টা করেছেন।
এদিকে, সীমান্তের উভয় পাশে জরুরি কর্মীরা জীবিতদের খুঁজে বের করতে রাতভর কাজ করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া বা মৌলিক প্রয়োজনীয়তা পেতে অক্ষমদের বেঁচে থাকার আশা দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে।
তুরস্কের এলবিস্তান শহরে উদ্ধারকারীরা মানববন্ধন করেন।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্প: তুরস্ক, সিরিয়ায় নিহত ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে
আরও জীবন বাঁচাতে আগামী দুই-এক দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ: তুর্কি রাষ্ট্রদূত
বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান বলেছেন যে তার দেশ দুটি ভূমিকম্প এবং বহু আফটারশকের আঘাতের পর বিশাল চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে আরও জীবন বাঁচাতে আগামী এক দুই দিন হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বৃহস্পতিবার ঢাকাস্থ দূতাবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত ভূমিকম্পের পর তাৎক্ষণিকভাবে এগিয়ে আসার জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
রাষ্ট্রদূত তুরান বলেন, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো নাগরিক আক্রান্ত হননি।
আরও পড়ুন: তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্প: বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় শোক পালন করছে আজ
তিনি বলেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত একজন প্রাক্তন তুরস্কের রাষ্ট্রদূত (সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রদূত) যিনি ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত প্রদেশগুলোর একটিতে নিযুক্ত ছিলেন এবং তিনি নিখোঁজ রয়েছেন।
তার দ্রুত উদ্ধারের জন্য দোয়া চেয়ে রাষ্ট্রদূত তুরান বলেছেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, তার সম্পর্কে আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই।,
তুর্কি রাষ্ট্রদূত বলেন, তারা নগদ সহায়তা পেতে আগ্রহী নন তবে শীতবস্ত্র, ওষুধ ও অন্যান্য উপকরণ বাংলাদেশ থেকে পেতে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকার গত সন্ধ্যায় একটি সামরিক বিমানের মাধ্যমে একটি অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে এবং বৃহস্পতিবার সমস্ত সরকারি দপ্তরসমূহে পতাকা অর্ধনমিত রেখে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করেছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এটি একটি ঘটনা যা আমরা ভুলব না। সোশ্যাল মিডিয়াতেও বাংলাদেশের জনগণের সমর্থন ও সংহতি রয়েছে।’
আরও পড়ুন: ভূমিকম্প: তুরস্ক, সিরিয়ায় নিহত ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে
ভূমিকম্প: তুরস্ক, সিরিয়ায় নিহত ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে
তুরস্ক ও সিরিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্পে ভেঙে পড়া হাজার হাজার ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিতদের খুঁজে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছে উদ্ধারকারী দল। তবে উদ্ধার কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছে তারা।
এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক ভূমিকম্পে বুধবার মৃতের সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে।
দুর্যোগ কবলিত অঞ্চলে আরও সাহায্য পাঠানোর জন্য তুর্কি সরকারের প্রতি আহ্বানের মধ্যে, প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান কাহরামানমারাসে একটি ‘তাঁবুর শহর’ পরিদর্শন করেছেন। মানুষ বাধ্য হয়ে সেখানে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে তাবুতে বসবাস করছে।
তিনি প্রতিক্রিয়ার প্রথম দিকে ঘাটতি স্বীকার করেছিলেন। কিন্তু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে কাউকে ‘রাস্তায় পড়ে থাকতে দেয়া হবে না।’
দুই ডজনেরও বেশি দেশের উদ্ধারকারী দল হাজার হাজার স্থানীয় জরুরী কর্মীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি এসেছে। কিন্তু সাত দশমিক আট মাত্রার ভূমিকম্প এবং এর শক্তিশালী আফটারশকগুলো থেকে ধ্বংসের মাত্রা এতটাই বেশি ছিল যে সিরিয়ার চলমান গৃহযুদ্ধে বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলো পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। যেখানে অনেকেই এখনও সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করছেন৷
আরও পড়ুন: তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্প: ৯০০০ জনের বেশি নিহত
প্রাক্তন সাংবাদিক ওজেল পিকাল জানায়, তুরস্কের শহর মালতয়াতে উদ্ধার করা লাশগুলোকে মাটিতে পাশাপাশি রাখা হয়েছিল। কম্বলে আবৃত ছিল, যখন উদ্ধারকারীরা ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দাফন কিংবা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য যানবাহনের আসার অপেক্ষা করছিলেন। এসময় তিনি ভবনের ধ্বংসাবশেষ থেকে আটটি লাশ উদ্ধার করার দৃশ্যও দেখেছিলেন।
পিকাল নিজেও উদ্ধার প্রচেষ্টায় অংশ নিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, তাপমাত্রা মাইনাস ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস (২১ ফারেনহাইট) এ নেমে যাওয়ায় ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু মানুষ ঠান্ডায়ও মারা যেতে পারে।
পিকাল টেলিফোনে এপিকে বলেন, ‘আজকের দিনটি সুখকর নয়, কারণ আজ পর্যন্ত মালত্যায় কোনো আশা নেই।’ ধ্বংসস্তূপ থেকে কেউ জীবিত বের হচ্ছে না।
পিকাল বলেন, শহরে একটি হোটেল ভবন ধসে পড়েছে, যেখানে শতাধিক লোক আটকে থাকতে পারে।
তিনি জানান, যে এলাকায় তিনি ছিলেন সেখানে উদ্ধারকারীদের ঘাটতি ছিল এবং ঠান্ডা স্বেচ্ছাসেবক ও সরকারি দলের উদ্ধার প্রচেষ্টা কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করেছে। এই অঞ্চলে
রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চলাফেরা ও প্রবেশাধিকারও ব্যাহত হয়েছে।
পিকাল বলেন, ‘ঠান্ডার কারণে আমাদের হাত কিছুই তুলতে পারে না। কাজের জন্য যন্ত্রপাতি প্রয়োজন।’
সিরিয়ায় এক দশকেরও বেশি গৃহযুদ্ধের কারণে একটি অঞ্চলে দুর্ভোগের মাত্রা খুবই বেশি ছিল। যুদ্ধের কারণে দেশের অভ্যন্তরে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অনেক মানুষ তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছে। হাজার হাজার ভবন ধসে পড়ায় ধ্বংসস্তূপের নিচে কত মানুষ আটকা পড়ে থাকতে পারে তা স্পষ্ট নয়।
তুরস্কের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, দেশটিতে মৃতের সংখ্যা সাড়ে আট হাজার পেরিয়েছে।
হোয়াইট হেলমেট নামে পরিচিত একটি স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন জানায়, সিরিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে যে সরকার-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় মৃতের সংখ্যা এক হাজার ২০০ ছাড়িয়েছে এবং বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে কমপক্ষে এক হাজার ৪০০ জন মারা গেছে।
সোমবারের ভূমিকম্প এবং একাধিক শক্তিশালী আফটারশকের পর নিহতের মোট সংখ্যা ১১ হাজারে পৌঁছেছে। আহত হওয়ার সংখ্যা আরও কয়েক হাজার।
জাপানের কাছে ২০১১ সালে উৎপত্তি হওয়া একটি ভূমিকম্পে সৃষ্ট সুনামিতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল। তুরস্ক বা সিরিয়া এখনও নিখোঁজদের সংখ্যার পরিসংখ্যান প্রকাশ না করলেও ‘বিধ্বংসী’ ভূমিকম্পের পরে পোপ ফ্রান্সিস তার সাপ্তাহিক সাধারণ শ্রোতাদের প্রার্থনা এবং সংহতি প্রদর্শনের জন্য বলেছেন।
আরও পড়ুন: তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃত্যু বেড়ে ৬৪০
সিরিয়ার কর্মকর্তারা বলেছেন, তুরস্কে ভূমিকম্পের সময় মারা যাওয়া ১০০ জনেরও বেশি সিরীয়দের লাশ বাব আল-হাওয়া সীমান্ত দিয়ে দাফনের জন্য দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
সীমান্তের সিরীয় অঞ্চলের একজন কর্মকর্তা মাজেন আলুশ বলেছেন, আরও ২০টি লাশ সীমান্তে তাদের পথে রয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, তারা সবাই সিরিয়ান শরণার্থী যারা যুদ্ধকালীন দেশ থেকে পালিয়ে গেছে।
এখনও আটকে পড়াদের জন্য উদ্বেগ বাড়ছে, তুরস্কে উদ্ধারকারী টিম পোলিশ জানায়, তারা ধ্বংসস্তূপ থেকে এখন পর্যন্ত ৯ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে, যার মধ্যে দুই সন্তানের বাবা-মা এবং ১৩ বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে।
ভূমিকম্পের প্রায় দুই দিন পর উদ্ধারকারীরা ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের কেন্দ্র কাহরামানমারাসের একটি ধসে পড়া অ্যাপার্টমেন্টের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে তিন বছর বয়সী ছেলে আরিফ কানকে উদ্ধার করে।
ছেলেটির শরীরের নীচের অংশ কংক্রিটের স্ল্যাব এবং পেঁচানো রডে আটকে থাকার কারণে ঠান্ডা থেকে রক্ষায় জরুরি কর্মীরা তার ওপর একটি কম্বল দিয়ে দেয়। কারণ আরেকটি ধসের আশঙ্কা মাথায় রেখে তারা সাবধানে তার কাছ থেকে ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে ফেলে।
ছেলেটির বাবা এরতুগ্রুল কিসিকে আগেই উদ্ধার করা হয়েছিল। যখন তার ছেলেকে উদ্ধার করে একটি অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হচ্ছিল তখন তিনি কাঁদছিলেন।
তুর্কি টেলিভিশনে দেশে নাটকীয় উদ্ধারের ঘটনাটি সম্প্রচারের সময় একজন সাংবাদিক ঘোষণা করেছিলেন যে ‘আপাতত কাহরামানমারাসে আশার নাম আরিফ কান।’
কয়েক ঘন্টা পরে আদিয়ামান শহরে তার বাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারকারীরা ১০ বছর বয়সী বেতুল এদিসকে উদ্ধার করে। এসময় উপস্থিতরা করতালির দেয় এবং তার দাদা তাকে চুম্বন করেছিলেন। তাকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে নেয়ার সময় তার সঙ্গে আদর করে কথা বলেছিলেন।
সোমবার বিকালে উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার একটি শহরে, বাসিন্দারা একটি কান্নারত নবজাতককে তার মৃত মায়ের সঙ্গে নাভির কর্ড দ্বারা সংযুক্ত দেখতে পান।
শিশুটির স্বজনরা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)কে জানিয়েছেন, ছোট্ট শহর জিন্ডারিসে একটি ভবন ধসে বেঁচে যাওয়া শিশুটির পরিবারের বাকি সবাই মারা গেছে।
কিন্তু এই ধরনের গল্পগুলো ভূমিকম্পের দুই পরও ছিল। সোমবার ভোরের এই ভয়াবহ ভূমিকম্প একটি বিশাল এলাকাকে ধ্বংস করে দেয়। হাজার হাজার বিল্ডিং ধসে পড়ে। হিমশীতল তাপমাত্রা এবং চলমান আফটারশকগুলো উদ্ধার প্রচেষ্টাকে জটিল করে তোলে।
তুরস্কে বেঁচে যাওয়া অনেককে গাড়িতে, বাইরে বা সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে ঘুমাতে হয়েছে।
২৭ বছর বয়সী আয়সান কার্ট এপিকে বলেছেন, ‘আমাদের তাঁবু নেই, গরম করার চুলা নেই, আমাদের কিছু নেই। আমাদের বাচ্চাদের অবস্থা খারাপ। আমরা সবাই বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছি এবং আমাদের বাচ্চারা ঠান্ডায় বাইরে আছে। আমরা ক্ষুধা বা ভূমিকম্পে মারা যাইনি, তবে আমরা ঠান্ডায় জমে মরব।’
আরও পড়ুন: তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃত্যু বেড়ে ৬৪০
সিরিয়ায় চলমান যুদ্ধ এবং রাশিয়া-সমর্থিত সরকারি বাহিনী বেষ্টিত সীমান্তে বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করার কারণে সহায়তা প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সিরিয়া নিজেই যুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার অধীনে আন্তর্জাতিকভাবে একটি পরিত্যক্ত এলাকা।
অঞ্চলটি প্রধান ফল্ট লাইনের ওপরে থাকায় প্রায়শই ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে। ১৯৯৯ সালে উত্তর-পশ্চিম তুরস্কে অনুরূপ শক্তিশালী ভূমিকম্পে প্রায় ১৮ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল।
তুরস্কে ২টি মেডিকেল ও উদ্ধারকারী দল পাঠানোর পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ৫ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং অনেক অস্যংখ্য মানুষ আহত হওয়ার ঘটনায় সেখানে উদ্ধার অভিযানে যোগ দিতে তুরস্কে দুটি দল পাঠানোর পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলি সাবররিন ইউএনবিকে বলেছেন, ‘আমরা দুটি দল পাঠানোর পরিকল্পনা করছি- একটি জরুরি মেডিকেল টিম ও একটি উদ্ধারকারী দল।’
তুরস্ক এবং যুদ্ধ-বিধ্বস্ত সিরিয়ায় ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ৫ হাজার জনেরও বেশি লোক মারা যাওয়ার পরে এবং বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে হাজার হাজার ভবন ধসে পড়ার পরে ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও বেঁচে থাকা লোকদের উদ্ধারের জন্য তীব্র ঠান্ডার মধ্যেও সোমবার সারা রাত অনুসন্ধান কার্যক্রম চালায় উদ্ধারকারীরা।
আরও পড়ুন: তুরস্কে ভূমিকম্পের পর নিখোঁজ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে অসংখ্য মানুষ হতাহতের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর শোক
তুরস্কে ভূমিকম্পের পর নিখোঁজ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী
তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তে সোমবারের শক্তিশালী ভূমিকম্পে মো. গোলাম সৈয়দ রিংকু নামে এক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ভূমিকম্পের এই ঘটনায় শত শত ভবন ধসে পড়েছে এবং তিন হাজার ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছে।
ইস্তাম্বুলে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনস্যুল জেনারেল মোহাম্মদ নুরে আলম ইউএনবিকে বলেন, রিংকু বগুড়ার বাসিন্দা। নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে নুরকে খুঁজে পাওয়া গেছে। তবে রিংকু এখনও নিখোঁজ।
রিংকুর বন্ধুরা তাকে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী হিসেবে উল্লেখ করলেও আর কোনো বিবরণ দিতে পারেনি।
ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আঙ্কারায় বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরিন ইউএনবিকে জানান, আমরা আমাদের মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।
আরও পড়ুন: তুরস্কে ফের শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্প: ৩৪০০ জনের বেশি নিহত
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে অসংখ্য মানুষ হতাহতের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর শোক
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে অসংখ্য মানুষ হতাহতের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
সোমবার এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, তুরস্ক ও সিরিয়ার এই বিপদের সময় বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ তাদের পাশে আছে।
তার সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।
আরও পড়ুন: তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্প: ১৯০০ জনের বেশি নিহত
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সোমবার ভোরে একটি শক্তিশালী ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা কেঁপে ওঠে। এসময় শত শত ভবন ধসে পড়ে এবং এতে ১৯০০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছেন।
এখনও শতাধিক লোক ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং উদ্ধারকর্মীরা ওই অঞ্চলগুলোর বিভিন্ন শহর ও নগরে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। মৃতের সংখ্যা বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এপি আরও জানিয়েছে, সীমান্তের উভয় পাড়ের বাসিন্দারা ভূমিকম্পের পর খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেয়, কারণ ভূমিকম্পের পর ভবনগুলো ধসে পড়তে থাকে এবং শক্তিশালী আফটারশক চলতে থাকে।
আরও পড়ুন: তুরস্কে ফের শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃত্যু বেড়ে ৬৪০
তুরস্কে ফের শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত
তুরস্কের এলবিস্তানে ফের ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। স্থানীয় সময় আনুমানিক দুপুর দেড়টায় (১০:৩০ জিএমটি) নতুন এই ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।
সোমবার ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির কর্মকর্তারা দ্বিতীয়বার ভূমিকম্প হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ‘এটি আফটারশক নয়।’
তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্প, নিহত ১০০
তুরস্কের দক্ষিণ-পূবাঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা। দেশটির সিরিয়া সীমান্তবর্তী এলাকা গাজিয়ানটেপে এই এই ভূমিকম্প আঘাত হানে।
সোমবার এক বিবৃতিতে প্রাণঘাতী এই ভূমিকম্পে তুরস্ক এবং সিরিয়ার কর্মকর্তারা নিহতের সংখ্যা ১০০ জনের বেশি উল্লেখ করেছেন। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।
নিহতদের মধ্যে তুরস্কের মালত্যায় কমপক্ষে ২৩ জন, সানলিউরফায় ১৭ জন, দিয়ারবাকিরে ছয়জন এবং ওসমানিয়েতে আরও পাঁচজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। সিরিয়ার সীমান্ত জুড়ে অন্তত ৪২ জন নিহত হয়েছে, সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৬৮
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান এক টুইটে বলেছেন, ভূমিকম্পে আক্রান্ত এলাকায় আমাদের উদ্ধার অভিযান চলছে। আমরা আশা করছি খুব শিগগিরই সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপন করতে পারবো।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলাইমান সুয়েলু জনগণকে বিধ্বস্থ ভবনে প্রবেশ না করতে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের প্রধান কাজ হলো ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবন থেকে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া।
মার্কিন জিওলজিক্যাল সার্ভে জানিয়েছে যে সাত দশমিক আট মাত্রার কম্পনটি স্থানীয় সময় ০৪টা ১৭ মিনিটে (০১:১৭ জিএমটি) গাজিয়ানটেপ শহরের কাছে ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার (১১ মাইল) গভীরতায় আঘাত হানে।
আরও পড়ুন: পূর্ব ইন্দোনেশিয়া ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল
রাজধানী আঙ্কারা এবং তুরস্কের অন্যান্য শহর এবং পুরো অঞ্চল জুড়ে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল।
বেশ কয়েকটি ভবন ধসে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।এতে অনেক মানুষ সেখানে আটকে থাকতে পারে।
শহরের একটি শপিং মল ধসে পড়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন দিয়ারবাকিরের বিবিসির তুর্কি সংবাদদাতা।
গাজা উপত্যকায় বিবিসির প্রযোজক রুশদি আবুলউফ বলেছেন যে তিনি যে বাড়িতে ছিলেন সেখানে প্রায় ৪৫ সেকেন্ড কাঁপুনি ছিল।
তুর্কি ভূমিকম্পবিদরা সাত দশমিক চার মাত্রার ভূমিকম্পের শক্তি পরিমাপ করেছেন।
তারা বলেছে যে এই অঞ্চলে মাত্র কয়েক মিনিট পর দ্বিতীয় কম্পন আঘাত হেনেছে।
আরও পড়ুন: ইরানে ৫ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প
তুরস্কে বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত আমানুল হক
এম আমানুল হককে তুরস্ক প্রজাতন্ত্রে বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার
সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আমানুল এই পদে রাষ্ট্রদূত মসউদ মান্নানের স্থলাভিষিক্ত হবেন।
সদ্য নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আমানুল হক আমানুল হক বিসিএস (পররাষ্ট্র ক্যাডার) ১৮তম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন: পেট্রোবাংলার নতুন চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার
তিনি ২০২০ সাল থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রাষ্ট্রাচারপ্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৯৯ সালে চাকরিতে যোগদান করে হক দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন পদে সরকারের দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের কনসাল এবং ডেপুটি হেড অব মিশন হিসেবে কূটনৈতিক জীবন শুরু করেন।
পরবর্তীতে, তিনি জেদ্দায় অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) সদর দপ্তরে মহাসচিবের উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন।
ফিরে এসে তিনি মন্ত্রণালয়ে মহাপরিচালকের পদ গ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন: পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে জাপানের নতুন রাষ্ট্রদূতের মতবিনিময়
নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দাহাল