জলাবদ্ধতা
রাজধানীর জলাবদ্ধতা সরকারের অপরিকল্পিত মেগা প্রকল্পের ফল: ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন যে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর কারণে সৃষ্ট ভারি বর্ষণে রাজধানীর বিভিন্ন অংশ এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে জলাবদ্ধতার জন্য সরকারের অপরিকল্পিত মেগা প্রকল্প দায়ী।
তিনি বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) উত্তরা সড়ক বন্ধ থাকায় অনেক অসুবিধার মধ্যে এখানে এসেছি। ডিএমপি কমিশনার এই সড়ক ব্যবহার না করার জন্য সার্কুলার জারি করেছেন।’
মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিলে দৈনিক নয়াদিগন্তের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে সৃষ্ট বৃষ্টিতে বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী। ‘এটি অপরিকল্পিত মেগা প্রকল্প এবং মেগা উন্নয়নের ফল। তাদের (সরকার) মেগা প্রকল্পের কারণে এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।’
সকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ১০ বছর ধরে চলমান বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণের কাজের পয়েন্টগুলোতে জলাবদ্ধতায় দীর্ঘ যানজটের কারণে খিলক্ষেত থেকে উত্তরা হয়ে গাজীপুর পর্যন্ত রুট এড়াতে যাত্রীদের অনুরোধ করেছিল।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তরা ট্রাফিক বিভাগ সতর্কতা জারি করে বলেছে, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর কারণে সৃষ্ট ভারী বর্ষণে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের গাজীপুরের বিভিন্ন পয়েন্টে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
ফখরুল বলেন, সরকার জনগণের ভোট ও অন্যান্য সকল অধিকার হরণ করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দেয়ায় জাতি এক ভয়াবহ সময় পার করছে।
আরও পড়ুন: খুলনায় বিএনপি কর্মীদের বহনকারী ট্রলারে আ.লীগের হামলা
তিনি বলেন, জনগণের সর্বাত্মক অধিকার নিশ্চিত করে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে তারা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
বিএনপি নেতা আক্ষেপ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রথমে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে এবং ১৯৭৫ সালে সংবাদপত্র বন্ধ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করেছে। আমাদের এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে হবে অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে, বড় সাহসের সঙ্গে এবং আমাদের জিততে হবে।’
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আশা, স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে বর্তমান সংবিধান আরও সংশোধন করতে হবে।
বিএনপি নেতা বলেন, ক্ষমতাসীন দল সংবিধান সংশোধন করে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ নিশ্চিত করতে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান চালু করা হয়েছিল তা বাতিল করেছে। তাই সংবিধান সংশোধন করে এই ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে।
আরও পড়ুন: বিএনপির সমাবেশ উপলক্ষে মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়েছে খুলনা
ফখরুল বলেন, ‘জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে নির্বাচনে জিততে পারলে আমরা একটি সাংবিধানিক কমিশন গঠন করব। সংবিধানে যে সব অগণতান্ত্রিক ও গণবিরোধী জিনিস অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, আমরা তা বাতিল করে দেব... আমরা সত্যিকারের সময় নিয়ে আসার চেষ্টা করব। ‘জনগণের যা প্রয়োজন তার ভিত্তিতে উপযুক্ত সংবিধান।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, তিনি মনে করেন দেশের বর্তমান সংবিধান জনগণের আশা-আকাঙ্খা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। ‘দেশের জনগণ যা চায় তার ওপর ভিত্তি করে সংবিধান হওয়া উচিত।
বাংলাদেশকে একটি প্রগতিশীল দেশে পরিণত করতে বাক স্বাধীনতা ও মুক্ত চিন্তার পরিবেশ সৃষ্টি এবং প্রকৃত অর্থে সাম্য ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সাংবাদিকদের ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান ফখরুল। বাংলাদেশকে ন্যায়বিচার ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন একটি কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে অতীতে আপনারা যে ভূমিকা রেখেছেন তা অব্যাহত রাখুন।
আরও পড়ুন: দেশের রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করেছে আ.লীগ: ফখরুল
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং: জলাবদ্ধতা, যানজটে চরম ভোগান্তিতে রাজধানীবাসী
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে প্রবল বর্ষণের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে যাত্রীরা যানজটের কবলে পড়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক ইউএনবিকে জানান, মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সোমবার রাতে সিত্রাং দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানলে রাজধানীসহ বাংলাদেশের প্রায় সমস্ত অঞ্চলে ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ের সম্মুখীন হয়। এছাড়া গাছ উপড়ে পড়ে, মানুষ নিহত এবং বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন বিচ্ছিন্ন হয়।
সকালে সিটি করপোরেশনের কর্মীদের ঢাকার মহাসড়কগুলো থেকে উপড়ে পড়া গাছগুলোকে সরাতে দেখা গেছে।
জলাবদ্ধতার কারণে যানবাহন চলাচল শ্লথ হওয়ায় সকালে অফিসগামীসহ অন্যান্যরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে আটকা পড়েন।
সরেজমিনে দেখা যায় উত্তরখান, দক্ষিণখান, ভাটারা, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, আজিমপুর, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, জুরাইনসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তা-ঘাট বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।
খিলক্ষেত থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা রয়েছে এবং বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের চলমান কাজ কেবল যাতায়াতে দুর্ভোগ বাড়িয়েছে।
সকালে বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলায় টঙ্গীর নিকটবর্তী আবদুল্লাহপুর এলাকায় চলাচল অত্যন্ত ধীর হওয়ায় হোটেল লে মেরিডিয়ান থেকে ঢাকা বিমানবন্দর সড়ক পর্যন্ত দীর্ঘ সারিতে বাস ও ব্যক্তিগত যানবাহনগুলো আটকে থাকে।
এদিকে, বাংলাদেশ নৌবাহিনী সদর দপ্তরের সামনের রাস্তা সকালে জলাবদ্ধ ছিল- যা ফ্লাইওভার দিয়ে খিলক্ষেত এলাকা থেকে বনানী অভিমুখী যাত্রীদের জন্য আরেকটি দীর্ঘ সারি তৈরি করেছিল।
র্যাডিসন ব্লু হোটেলের দিকে কুড়িল ফ্লাইওভার নামার অংশও পানির নিচে ছিল এবং বনানীর দিকে যানবাহনের দীর্ঘ সারি তৈরি করে।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার ট্রাফিক (ঢাকা উত্তর) আবু রায়হান মো. সালেহ ইউএনবিকে বলেন, গতকালের টানা বৃষ্টিতে নৌবাহিনী সদর দপ্তরের সামনের সড়কসহ বেশ কয়েকটি স্থানে জলাবদ্ধতা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল থেকে উত্তরা-মহাখালী পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটে লোকজন আটকে ছিল। তবে মিরপুর এলাকায় যান চলাচল নির্বিঘ্ন ছিল।’
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং: রাজধানীতে বৃষ্টিতে জীবনযাত্রা ব্যাহত
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, কর্তৃপক্ষ রাস্তা থেকে ৪৭টি পড়ে যাওয়া গাছ সরিয়ে নিয়েছে।
এছাড়া মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ১৭টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তরের গুদাম পরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলাম।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের সময় সারাদেশে ৩২৯টি গাছ উপড়ে গেছে এবং ৩৪টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে জানান তিনি।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং সোমবার মধ্যরাতে ভোলার কাছে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করে এবং বৃষ্টিপাত শুরু করে দ্রুত দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সিত্রাং এখন ঢাকা-কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় স্থল নিম্নচাপ হিসেবে অবস্থান করছে।
আরও পড়ুন: রাজধানীতে গণতন্ত্র মঞ্চের সমাবেশ বিরোধীদের পক্ষে
রাজধানীতে গায়ে আগুন দিয়ে রিকশাচালকের আত্মহত্যা!
সিলেটে সড়কে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে এলাকাবাসীর অবরোধ
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোডে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীরা সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ কর্মসুচি পালন করেছেন। রবিবার বেলা ২টায় বঙ্গবীর রোডের খোজারখলা এলাকায় এই কর্মসুচি পালন করা হয়। এতে ২৫ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকার লোকজন ছাড়াও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অংশ নেন।সিলেট মহানগরের দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোডে জলাবদ্ধতা যেনো এখন নিত্যসঙ্গী। সামান্য বৃষ্টি হলেই এই সড়কটিতে হাটুজল হয়ে যায়। জলাবদ্ধতার কারণে এই সড়ক ও তার আশপাশের মানুষরা ব্যবসা বাণিজ্যসহ নানা ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এছাড়াও জলাবদ্ধতার কারণে সড়কটিতে যান চলাচল হচ্ছে বাঁধাগ্রস্থ।এদিকে, বঙ্গবীর রোডের জলাবদ্ধতা থেকে খুব তাড়াতাড়ি রেহাই পাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তাকবীর ইসলাম পিন্টু।তিনি জানান, বঙ্গবীর রোডের পানিগুলো রত্নারখাল ও জৈন্তারখাল হয়ে চান্দাইয়ের হাওরে গিয়ে নামে। এখন পানিগুলো নামতে পারছে না। তিনি বলেন, এবারে প্রথম যখন বন্যা হয়, তখন ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের ড্রেনের সবগুলো ব্লক পরিস্কার করানো হয়। বন্যার পানি জমে থাকার কারণে ড্রেনে পলি জমে থাকতে পারে, সেগুলো সোমবার থেকে পরিস্কারের কাজ শুরু হবে।তবে ড্রেনের কাজ চলমান থাকায় জলাবদ্ধতা থেকে পুরোপুরি মুক্তি মিলবে না বলেও জানান কাউন্সিলর পিন্টু।ড্রেনের কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে। কাজ শেষ হয়ে গেলে আর জলাবদ্ধতার ভোগান্তি থাকবে না বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: টানা বৃষ্টিপাতে হবিগঞ্জ শহরে জলাবদ্ধতা
কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা
পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজনের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে: কৃষিমন্ত্রী
কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো.আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার পরিবেশ রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ খুবই দুর্যোগপ্রবণ দেশ। নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রায়ই ফসলের ক্ষতি হয়। এ অবস্থায়, কৃষি উৎপাদন ধরে রাখতে হলে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার বা অভিযোজনের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জলাবদ্ধতা, লবণাক্ততা, খরা প্রভৃতি বাড়বে। এসব বিরূপ পরিবেশে চাষযোগ্য ফসলের জাত উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।বুধবার ‘সাউথ এশিয়া নাইট্রোজেন ফ্রেমওয়ার্ক পলিসি বিষয়ক' সাব রিজিওনাল ওয়ার্কশপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: বন্যায় বড় ক্ষতি হবেনা, মোকাবিলার ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদশে নাইট্রোজেনের ইফিসিয়েন্সি খুবই কম, মাত্র ৩০-৩৫ ভাগ। নাইট্রোজেনের বাকী ৬০-৭০ ভাগ অপচয় হয়ে যায়। এ অবস্থায়, ইফিসিয়েন্সি বৃদ্ধির জন্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন।আঞ্চলিক পলিসি রিপোর্ট প্রকাশ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে কৃষি হলো প্রধান জীবিকা যেখানে ফসল উৎপাদন এবং পরিবেশ দূষণ রোধে নাইট্রোজেন ব্যবস্থাপনা খুবই চ্যালেঞ্জিং। এই অঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তা এবং পরিবেশগত স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার জন্য টেকসই নাইট্রোজেন ব্যবস্থাপনার বিকাশে এখনই পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি ও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
আরও পড়ুন: ফল উৎপাদনে বিশ্বে সফলতার উদাহরণ বাংলাদেশ: কৃষিমন্ত্রী
এবারের বর্ষায়ও ঢাকায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কা, নেই কোনো স্থায়ী সমাধান
বর্ষা আসার সাথে সাথে ঢাকাবাসী প্রতিবছরই জলাবদ্ধতার সমস্যায় পড়ে। মেগা সিটির দীর্ঘদিনের এই সমস্যা সমাধানের জন্য এখনও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহরের রাস্তা থেকে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে সম্পৃক্ত করে একটি সমন্বিত মহাপরিকল্পনা নেয়া উচিত ছিল।
দুই সিটি করপোরেশনের দাবি, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন, বক্স কালভার্ট নির্মাণ ও খাল ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান থাকায় এ বছর জলাবদ্ধতা কম হবে।
ইউএনবির সাথে আলাপকালে কয়েকজন নগরবাসী আসন্ন বর্ষায় জলাবদ্ধতার সমস্যা নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।
মগবাজার এলাকার বাসিন্দা মো. রহিমুল্লাহ বলেন, ‘নগরীর বিভিন্ন সেবা সংস্থার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। এই রাস্তায় চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়বে কারণ বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টি হলেই এগুলো জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে।’
মালিবাগ এলাকার গৃহবধূ মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়া-আসা করতে তেজগাঁও যেতে হবে। সেখানে একটি মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে এবং নির্মাণ কাজের কারণে পুরো এলাকাটি দুর্গম হয়ে পড়েছে।’
জলাবদ্ধতার কারণে আসন্ন বর্ষায় সেখানে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনর পদক্ষেপ
এবারের বর্ষায় রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৪৬টি হটস্পট চিহ্নিত করেছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১০৪ ও উত্তরের ৪২টি। এসব স্থানে বিগত বছরগুলোয় বৃষ্টির পানি জমেছিল। তার আলোকেই চিহ্নিত করা হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) জানায়, জলাবদ্ধপ্রবণ ১০৪টি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯৯টির বেশি স্থানের সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর মধ্যে কিছু অংশের কাজ চলছে। এছাড়া জলজট নিরসনে ড্রেন, বক্স কালভার্ট ও খাল পরিষ্কারের কার্যক্রম চলছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির অতিরিক্ত জলাবদ্ধতাপ্রবণ ৩২টির বেশি এলাকা মতো। পল্টন, শান্তিনগর, বেইলি রোড, কাকরাইল,গোপীবাগ, কমলাপুর, টিকাতলী, আগাসাদেক রোড, আগামাসি লেন, আব্দুল হাদি লেন, ইস্কাটন রোড, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয় এলাকা, বাংলাদেশ সচিবালয়, ইস্কাটন রোড, নিউমার্কেট, বাটা মোড়, ধানমন্ডি ঈদগাহ রোড, ঝিগাতলা, নাজিম উদ্দিন রোড, নবাবগঞ্জ পার্ক, আজিমপুর, কে এম দাস লেন সংলগ্ন রাস্তা, আরকে মিশন রোড ও অভয়দাস লেন গোপীবাগ বাজার রোড ও পুরান ঢাকার কিছু এলাকা।
অপরদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) সূত্রে জানা যায়, গত বছর জলাবদ্ধপ্রবণ ১০৩টি স্থান ছিল। এবার এসব স্থানের মধ্যে ৬১টির সংস্কার করা হয়েছে। বাকি ৪২টি স্থান সংস্কারের কার্যক্রম চলছে। এছাড়া ড্রেন ও খালের পরিষ্কারের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা উত্তরের অতিরিক্ত জলাবদ্ধ এলাকা প্রায় ৩০টির মতো- মিরপুর-১০, মিরপুর-১৩, মিরপুর সাংবাদিক কলোনি এলাকা, মিরপুর কালশী, বিমানবন্দর সড়কের আর্মি স্টেডিয়াম থেকে বনানী পর্যন্ত, শহীদ আব্দুর ওয়াব রোড, মিরপুর শেওরা পাড়া, কাজী পাড়া, মনিপুর, মধুবাগ, বাংলামোটর, মালিবাগ, মোহাম্মদপুর লালমাটিয়, কারওয়ান বাজার টিসিবি ভবন সংলগ্ন এফডিসি এলাকা পর্যন্ত, নাখালপাড়া, নিকুঞ্জ-১, ২, গ্রীন রোড, তে বসুন্ধরা সিটির পিছনে তেজতুরি বাজার, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, কুড়িল, বাড্ডা ও কুড়িল নতুন বাজার এলাকা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ (অতিরিক্ত সচিব) ইউএনবিকে বলেন, গত বছর দক্ষিণ সিটিতে ১০৪টি স্পটে পানি জমাট থাকতো। এই জায়গা গুলো চিহ্নিত করে এবার সংস্কার কাজ করেছি। ১০৪টির মধ্য ৫টি স্পট বাকি আছে। এই স্পট ১৯ মের মধ্যে শেষ হবে। এছাড়া ১৫ কিলোমিটার খাল পরিষ্কার করেছি। আমরা আশা করছি এবার বর্ষায় গতবারের তুলনায় সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।
পড়ুন: কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা
কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা
টানা কয়েকঘণ্টার বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম মহানগরীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিতে মহানগরীর কিছু কিছু এলাকা হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে যায়।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার জন্য সড়কে যান চলাচল সীমিত হয়ে যাওয়ায় নগরবাসীকে পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে।
এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের ওপর ক্ষুব্ধ নগরবাসী।
আরও পড়ুন: ঢাকায় রেকর্ড ৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টিতে নগরীর বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেইট, চকবাজার, খাতুনগঞ্জ, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকাসহ অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। ফ্লাইওভারের নিচেও হাঁটু পানি জমেছে। বৃষ্টি শেষ হয়ে যাওয়ার পরও অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা রয়েছে।
ফরিদপুরে দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগে তিন শতাধিক পরিবার
পানি নিষ্কাশনের জায়গা দখলের অভিযোগে দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতায় ভুগছে ফরিদপুর শহরতলী সিএন্ডবি ঘাট সংলগ্ন আইজউদ্দিন মাতুব্বরের ডাগি গ্রামের তিন শতাধিক পরিবার। জলাবদ্ধতার ফলে জমে থাকায় পানিতে পরিবেশ নোংরা এবং নানা রোগের উপদ্রব বাড়ছে।
সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পার্শ্ববর্তী পদ্মা নদী থেকে বেশ কয়েকজন বালু ব্যবসায়ী ট্রলার বা জাহাজ থেকে তুলে সিএন্ডবি ঘাট পদ্মা পাড়ের (আইজমুদ্দিন মাতুব্বরের) এলাকায় জড়ো করে। আর এই বালু থেকে বের হওয়া পানি এলাকাতে ছড়িয়ে পড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। এছাড়াও বর্ষা ও বৃষ্টির পানিতেও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়। এই অবস্থা গত চার বছরের বেশি সময় ধরে চলছে। সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে অনেকেই বাঁশের সাঁকো তৈরি করে চলাচলের কাজ চারিয়ে নিচ্ছেন।
আরও পড়ুন: সংযোগ সড়ক না থাকায় কাজে আসছে না ৩১ লাখ টাকার সেতু
এলাকাবাসীর অভিযোগ, পানি নিষ্কাশনের যে পথ ছিল সেগুলো নানাভাবে দখল হয়েছে, এছাড়াও ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী ও অর্থবৃত্তের মালিক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়টি অনেকবার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ও চেয়ারম্যানদের বলা হয়েছে। তবে স্থানীয় প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে দ্রুত এই জলবন্ধতা নিরসন করা হবে।
পানিবন্দি এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম, আসমা বেগমসহ অনেকে জানান, এই গ্রামে পাশে যে মাঠ সেখানে ধানসহ বিভিন্ন ফসল হতো, কিন্তু গত চার বছর হলো সারাবছর পানি জমে থাকে। সেখানে কোনে খেতখামার করা যায় না, এছাড়াও প্রত্যেকটি বাড়ি চার পাশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়া পরিবেশটি বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে গেছে। এখানকার ছেলে-মেয়েরা সব সময় বিভিন্ন রোগে ভুগছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য পাঞ্জু শেখ বলেন, বালুর ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের পথ বহু আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশনের পথগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হয় না। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে চলা জলাবদ্ধতা সমস্যারও সমাধান হয় না।
আরও পড়ুন: বাঁশের সাঁকোই ৩০ হাজার মানুষের ভরসা
তিনি জানান, বর্ষার সময়ে পানি গোটা এলাকায় নিমজ্জিত হলে সেই পানি বের হওয়ার তেমন কোনো পথ থাকে না ফলে জলাবদ্ধতার সমস্যাও প্রকট হয়।
স্থানীয় মাদরাসার শিক্ষক মাওলনা নাজমুল হাসান বলেন, ‘এই জলাবদ্ধতায় আমরা বাস করতে পারছি না, শিশুসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিপদে রয়েছি। গৃহপালিত পশু পালন করা যাচ্ছে না।’
ডিক্রীরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিন্টু ফকির বলেন, বিষয়টি নিয়ে উপজেলা উন্নয়ন সভায় তুলা হয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরশন করা হবে।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে এবার মিলল সাড়ে ছয়শ’ বছর আগের তৈজসপত্র!
ফরিদপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকতা মাসুদুল আলম বলেন, ‘জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। নানাবিধ সমস্যার কারণে বর্ষা বা বৃষ্টির পানি দ্রুত নেমে যেতে পারছে না। তাছাড়া আমাদের পানি নিষ্কাশনের পথগুলো অত্যন্ত নাজুক। আমরা দ্রুতই এই জলাবদ্ধাতার সমাধানের চেষ্টা করবো।’
১৫ মার্চের মধ্যেই সকল ড্রেন পরিস্কারের নির্দেশ ডিএনসিসি মেয়রের
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, নগরীর জলজট ও জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে আগামী ১৫ মার্চের মধ্যেই সকল ড্রেন পরিস্কার করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে।সোমবার সকালে জলজট ও জলাবদ্ধতা সংক্রান্ত এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে ডিএনসিসি মেয়র একথা বলেন।তিনি বলেন, ডিএনসিসির ১০টি অঞ্চলের জন্য ১০টি র্যাপিড অ্যাকশন টিম গঠন করা হবে, যারা অঞ্চলভিত্তিক সমস্যা সমাধানে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আরও পড়ুন: ৩০ জুনের মধ্যে ঝুলন্ত তার সরানোর নির্দেশ ডিএনসিসি মেয়রেরমো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসির আওতাধীন খাল উদ্ধারে ৪২টি ডেড স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে আগে খাল থাকলেও এখন আর নেই। তাই জনগণের সহায়তায় খালগুলো উদ্ধার ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।ডিএনসিসি মেয়র বলেন, নগরীর জলাবদ্ধতা ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।আতিকুল ইসলাম আরও বলেন, সবাই মিলে সবার ঢাকাকে দখল ও দূষণমুক্ত করে সবার বাসযোগ্য সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকায় পরিণত করতে হবে।এসময় অন্যদের মধ্যে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: যথাযথ নিয়মে গাড়ি না চালালে কঠোর ব্যবস্থা: মেয়র আতিক
দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা: শীতেও ভবদহ অঞ্চলে ভোগান্তি
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা-যশোর বিস্তৃত অঞ্চলের ভবদহের ৫২টি গ্রাম ২০ বছর ধরে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতায় ডুবে আছে। বর্ষাকাল বিদায় নিয়ে শীতের আগমন ঘটলেও ভবদহ এলাকা এখনও জলাবদ্ধ। ফলে এসব এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে চরম ভোগান্তিতে রয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিএডিসি) এই বিশাল এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে সেচ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। তবে এর সফলতা নিয়ে সন্দিহান বাসিন্দারা।
ভবদহের দুঃখ
১৯৬১-৬২ সালে খুলনার ডুমুরিয়া, ফুলতলা ও যশোর জেলার অভয়নগর, মণিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হরি নদীর উপর ২১ ভেন্টের স্লুইস গেট নির্মিত হয়েছিল। এর কিছু দুরে ৯ ভেন্টের আরেকটি স্লুইস গেট স্থাপন করা হয়।
আরও পড়ুন: চাঁদপুর-সিলেট আন্তনগর ট্রেন এখনও স্বপ্ন!
সে সময় এ অঞ্চলে স্লুইস গেট নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল ভবদহ এলাকার অর্ধশত বিলের ফসলকে বন্যার পানি ও সাগরের নোনা পানি থেকে রক্ষা করা। কিন্তু মাত্র ২০ বছর পরে সেটি এখানকার মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। হরি নদী ভরাট হতে থাকে এবং স্লুইস গেটগুলো ধীরে ধীরে অকার্যকর হয়ে পড়ে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি ‘ভবদহের দুঃখ’ বলে পরিচিতি পেয়েছে।
হাটগাছা গ্রামের অনামিকা বিশ্বাস জানান, ঘরের চারপাশে পানি কিন্তু খাওয়ার উপযোগী নেই একটুও। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ঘরেই থাকে। ঘরের নিচ দিয়ে মাছ চলে বেড়ায় কিন্তু তা ধরে খাওয়ার কোন উপায় নেই। প্রভাবশালীরা সেখানে মাছ চাষ করছে।
সেচ পাম্প ‘লোকসান প্রকল্প’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভবদহের স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিএডিসি) যৌথ উদ্যোগে সেচ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। কিন্তু প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেও ভবদহ স্লুইস গেট দিয়ে বাসিন্দাদেন জন্য কোনো সুফল বয়ে আনতে পারেনি।
ভবদহ সংলগ্ন বিলে ফসল ফলাতে ও পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ কমাতে এ বছরের শুরুতে সেচ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে স্থানীয়রা এই পদ্ধতিকে সাগরে ঢিল ফেলার সঙ্গে তুলনা করেছেন।
এর আগে ভবদহর জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০১২ সালে সরকার ৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। কিন্তু সেই প্রকল্পও কোন কাজে আসেনি। বছর দুয়েক আগে, পানি উন্নয়ন বোর্ড ৮০০ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষে একটি প্রকল্প জমা দেয় যা বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে। এছাড়া, বর্তমানে সেচ পাম্পের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের জন্য ৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
বিএডিসির যশোরাঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সেচ বিভাগ) আব্দুল্লাহ আল রশিদ জানান, এ অঞ্চলের বিলে ফসল ফলাতে ও মানুষের দুর্ভোগ কমাতে পাউবোকে বিএডিসি ৩০ এইচপি (হর্সপাওয়ার) পাওয়ারের ২০টি পাম্প সরবরাহ করে। যা রক্ষণাবেক্ষণে বিএডিসির ৮ জন শ্রমিকসহ একজন উপ-প্রকৌশলী সেখানে সার্বক্ষণিক দেখভাল করে থাকেন। কিন্তু লিকেজ দৃষ্টিগোচর হওয়ায় তা পাউবোকে অবহিত করা হলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
আরও পড়ুন: দেশি প্রকৌশলীদের চেষ্টায় সচল গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের পাম্প
পাউবো যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, বিএডিসির কাছ থেকে ২০টি পাম্প পাওয়া গেলেও চাহিদার তুলনায় কম। তাই আরও বড় পাম্প নিতে ৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে ডিপিপি জমা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ২ বছর আগে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে একটি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পড়ে আছে। সেটিরও অনুমোদন মেলেনি।
ভবদহ অঞ্চলের বিল কেদারিয়ার বাসিন্দা সত্য বিশ্বাস জানান, আশির দশকে ভবদহতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। আজ ৪০ বছর পরও এই জলাবদ্ধতা দিন দিন প্রসারিত হচ্ছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে শুধু প্রভাবশালীরা লাভবান হচ্ছে কারণ তারা সরকারি বরাদ্দ আনছে আর লুটপাট করছে।
ড্রেজিংয়ের বিকল্প নেই
নদীর তলদেশ পলিতে ভরে যাওয়ায় বিলের পানি কোথাও যেতে পারছে না। ফলে এসব বিলের পানি নামতে না পারায় মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ধোঁয়া-ওঠা গরম গরম পিঠা খাওয়ার ধুম পড়েছে খুলনায়
স্থানীয় খুলনা-৫ আসনের (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিএডিসির সেচ প্রকল্প কতটা সফল এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনে হরি নদী খননসহ এর শাখা প্রশাখা খননের কোন বিকল্প নেই। ভবদহের জল হরি নদী দিয়ে ভদ্রা, ঘ্যাংরাইল হয়ে শিপসা নদীতে পড়ে সাগরে মিশে। তাই ভবদহের মধ্যে খালের মুখের বাঁধ অপসারণ করতে হবে।
বিয়ানীবাজারে বিদ্যালয়ের শৌচাগার ট্যাংকে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বিয়ানীবাজারে চারখাই ইউনিয়নে একটি বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবন সংযুক্ত শৌচাগারের ট্যাংকে পড়ে এক বাকপ্রতিবন্ধী শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে লাংলাকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত শিশু সামির হোসেন (৯) ওই ইউনিয়নের দত্তগ্রামের অটোরিকশা চালক গৌছ উদ্দিনের ছেলে।
আরও পড়ুন: ভোলায় পানিতে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যুস্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সামির জন্মগতভাবেই বাকপ্রতিবন্ধী। সে প্রায়ই বাড়ির আশপাশে ঘুরে বেড়াতো। প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার দুপুরবেলা সে লাংলাকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দিকে ঘুরতে বের হয়। সেই বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনের কাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় গ্রামীণ রাস্তা সংলগ্ন শৌচাগারের নির্মাণাধীন ট্যাংক অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। তাছাড়া বৃষ্টির পানি জমে সেই ট্যাংকের উপরিভাগে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে বিপদজনক হয়ে উঠেছে। গ্রামের রাস্তা সংলগ্ন শৌচাগারের সেই ট্যাংকে ঘুরতে গিয়ে অসাবধানতাবশত খেলার ছলে ট্যাংকের মধ্যে পড়ে ডুবে যায় শিশু সামির। পরে তার লাশ পানির ওপর ভেসে উঠলে পথচারীরা প্রথমে দেখতে পান এবং পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদেরকে বিষয়টি জানান। পরে খবর পেয়ে চারখাই ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ আলী, চারখাই পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই ফয়সল আহমদ ও এসআই নূর নবী ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশটি উদ্ধার করেন।
জানা গেছে, শিশুটির পরিবারের অনুরোধের প্রেক্ষিতে তার লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় জানাজার নামাজ শেষে স্থানীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়।
আরও পড়ুন: বরিশালে পানিতে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যুবিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিল্লোল রায় শিশুটির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বলেন, নিহত শিশুটির পরিবার কোন অভিযোগ দায়ের করেনি। পরে তার বাবার অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।