বন্যা পরিস্থিতি
সিলেটে পানি কমছে ধীরগতিতে, বাড়ছে দুর্ভোগ
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। জেলার নদ-নদীর পানি সকল পয়েন্টে ধীরগতিতে কমছে। তবে পানি কমলেও দুর্ভোগ বাড়ছে। বন্যায় সব হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া পরিবারগুলোতে চলছে হাহাকার। রাস্তাঘাটের বিপুল ক্ষয়ক্ষতিতে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। বিভিন্ন সড়কে এখন বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এদিকে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার পাশাপাশি নগরীতেও পানি কমা অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে নগরীর বন্যাকবলিত প্রধান সড়কগুলো থেকে বন্যার পানি সরেছে। তবে এখনো কিছু পাড়া মহল্লায় পানি রয়ে গেছে। পানিতে বিকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
রবিবার বিকালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সিলেট এই সব তথ্য জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা: এবার ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু
সিলেট বিভাগীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এস এম শহিদুল ইসলাম বলেন, সিলেটের সবকটি পয়েন্টে নদ-নদীর পানি ধীরগতিতে কমছে। এর মধ্যে কিছু নদীর পানি কয়েকটি পয়েন্টে এখনো বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আশা করছি, অন্য নদীগুলোতেও বিপদসীমার নিচে নেমে আসবে।
জানা গেছে, নগরীর উপশহর, তেররতন, সোবহানীঘাট, যতরপুর, মিরাবাজার, জামতলা, তালতলা, শেখঘাট, বেতের বাজার, ঘাসিটুলা, কুয়ারপাড়, লালাদিঘীর পাড়, মির্জাজাঙ্গাল এলাকার পানি মূল সড়ক থেকে নেমে গেছে। তবে কিছু পাড়া-মহল্লার অভ্যন্তরের সড়ক ও বাসাবাড়ির সামনে পানি এখনো জমে রয়েছে। এসব পানিতে ময়লা–আবর্জনা ভাসতে দেখা গেছে। পানিগুলোও পচে কালো রং ধারণ করে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
নগরীর বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) রুহুল আলম বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে লোকজন বাসাবাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে। সোমবার সকাল পর্যন্ত মহানগর এলাকায় সহস্রাধিক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান করেছিল। রবিবারও কিছু মানুষ আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে গেছে।
আরও পড়ুন: আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস, তবে রবিবার ১১টি জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
এদিকে ভারী বৃষ্টিপাতের আভাসে ঘরে ফেরা মানুষের মধ্যে শঙ্কা সৃষ্টি করেছে। রবিবার বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেটরি টিম (বিডব্লিউআইটি) জানিয়েছে, জুনের শেষে বা জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে উত্তরাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস, তবে রবিবার ১১টি জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি) অনুসারে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
বন্যাপ্রবণ নিম্নাঞ্চল কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও জামালপুরেও পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
আবহাওয়া সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস অনুসারে, তিস্তা অববাহিকা ব্যতীত আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এবং ভারতের বিভিন্ন উজানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই।
একই সময়ে উত্তর হিমালয় পশ্চিমবঙ্গে (জলপাইগুড়ি এবং সিকিম) মাঝারি থেকে ভারী ধরনের বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেট বিভাগে বন্যায় ৭ দিনে ২২ জনের মৃত্যু: বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক
তাই তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
এদিকে, শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় হাতিয়ায় ২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বন্যার পানিতে ডুবে সিলেটে কিশোরের মৃত্যু
সিলেটে বন্যার পানিতে ডুবে ১৫ বছরের এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় এয়ারপোর্ট থানার বাইশটিলা এলাকা থেকে ওই কিশোরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
মৃত মোবারক একই থানার বাদামবাগিচা এলাকার ১নং গলির বাসিন্দা।
আরও পড়ুন: বিয়ানীবাজারে বন্যার পানিতে ডুবে ব্যক্তির মৃত্যু
সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের ও এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মুহাম্মদ মাইনুল জাকির জানান, বাইশটিলায় প্রতিদিন বিকালে অনেকেই আড্ডা দিতে ভিড় করে। শুক্রবার বিকালে মোবারক ওই জায়গায় বেড়াতে গেলে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে পানিতে পড়ে তলিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: শিশু কন্যাকে বাঁচাতে গিয়ে পানিতে ডুবে মায়ের মৃত্যু
খবর পেয়ে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাইশটিলা এলাকার আলিফ সিটির পাশের ব্রিজের নিচ থেকে মোবারকের লাশ উদ্ধার করে।
আ’ লীগ সরকার জনগণের শত্রু হয়ে উঠেছে: ফখরুল
আওয়ামী লীগ সরকার দমন-পীড়ন ও দুঃশাসন চালিয়ে জনগণের শত্রু হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করে ক্ষমতা দখল করেছে। গুমসহ অপশাসন ও অপকর্মের কারণে দেশে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
বিএনপি নেতা আরও বলেন, বর্তমান সরকার সব ক্ষেত্রেই দেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
শুক্রবার ২০১০ সালের ২৪ জুন রাজধানীর ফার্মগেট এলাকা থেকে নিখোঁজ হওয়া বিএনপি নেতা চৌধুরী আলমের বাসায় গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন ফখরুল।
তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে তাদের অবস্থার খোঁজ-খবর নেন।
আরও পড়ুন: বন্যার্ত মানুষকে অভুক্ত রেখে উৎসব করছে সরকার: অভিযোগ ফখরুলের
ফখরুল বলেন, যাদের গুম করা হয়েছে তাদের জীবনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গুমের শিকার পরিবারগুলো উত্তরাধিকার সনদ ও সম্পত্তির মালিকানা পাচ্ছে না এবং তারা তাদের নিখোঁজ প্রিয়জনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রাখা অর্থ লেনদেন করতে পারছেন না। এই পরিবারগুলো গুরুতর সংকটে আছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ ধরনের বহু ঘটনা ঘটেছে।তাদের শাসনামলে সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলীসহ বিএনপির ছয় শতাধিক নেতাকর্মী গুমের শিকার হয়েছেন।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগদানের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান বিএনপির
ফখরুল বলেন, জাতিসংঘের সনদে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে গুম মানবতাবিরোধী অপরাধ। কিন্তু ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী সরকার এই ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে।
তিনি বলেন, শুধু গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমন করতেই বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও হেফাজতে হত্যা করা হচ্ছে, এটা সভ্য সমাজে হতে পারে না।
বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে বৃহস্পতিবার সিলেট সফর করা ফখরুল বলেন, বন্যা কবলিত মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে এবং তাদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
আরও পড়ুন: সরকারের নিষ্ক্রিয়তায় বন্যার্তরা ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে: বিএনপি
শাহজাদপুরে ৪৫০ বাড়িঘর যমুনায় বিলীন
সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও যমুনা তীরবর্তী বিভিন্ন স্থানে প্রচণ্ড ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ বহু ঘরবাড়ি ও জায়গা জমি যমুনা গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এক সপ্তাহে শাহজাদপুর উপজেলার ভেকা, ঘাটাবাড়ি, জালালপুর ও পাকুরতলা গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩০টি ঘরসহ চার গ্রামের অন্তত সাড়ে চারশ বাড়িঘর যমুনাগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙণ ঝুঁকিতে রয়েছে নদী তীর এলাকার পাকুরতলা (আশ্রয়ণ) প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (হেডকোয়ার্টার) নাসির উদ্দিন জানান, জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বিশেষ করে যমুনা তীরবর্তী শাহজাদপুর, চৌহালী, বেলকুচি, কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। অনেক এলাকার কাঁচা ও পাকা সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং অনেক স্থানে বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।
তিনি জানান, তবে যমুনায় পানি কমতে থাকায় যমুনা তীরবর্তী পাঁচটি উপজেলার অনেক স্থানে প্রচণ্ড ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে শাহজাদপুর, এনায়েতপুর, কাজিপুর ও সদর উপজেলার চরাঞ্চলে ইতোমধ্যেই অনেক ঘরবাড়ি, জায়গা জমি, গাছপালা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে, বন্যায় নিম্নাঞ্চলের ৯ হাজার ১০৬ হেক্টর জমির রোপা আমন, পাট, তিল, সবজিসহ বিভিন্ন ফসল ডুবে বিনষ্ট হয়ে গেছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলাম ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং তিনি ভাঙনের বিষয়টি স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করেছেন।
আরও পড়ুন: বন্যার্তদের সহায়তায় শাবি শিক্ষক সমিতির কার্যক্রম অব্যাহত
উপজেলার বন্যার্তদের জন্য ২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ইউএনও।
তিনি বলেন, দুই-একদিনের মধ্যেই কয়েকটি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের মধ্যে বরাদ্দকৃত চাল বিতরণ করা হবে এবং ভাঙনকবলিত পরিবারগুলোকে পরে নিরাপদ স্থানে পুনর্বাসন করা হবে।
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ
কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। নদ-নদীর পানি কিছুটা কমলেও এখনও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া তিস্তা, ধরলাসহ অন্যান্য নদীগুলোর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জানা গেছে, গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় পানিবন্দি থাকার কারণে চরাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানি ও শৌচাগারের অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছে অনেক এলাকার বন্যার্তরা। একই সঙ্গে গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যার্তদের সহায়তায় শাবি শিক্ষক সমিতির কার্যক্রম অব্যাহত
রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের নামা জয়কুমর গ্রামের এনছাফুল হক জানান, গো খাদ্যের অনেক দাম। তাই বৃষ্টির কারণে নষ্ট হওয়া খড় বাধ্য হয়ে গরুকে খাওয়ানো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো গোখাদ্য বিতরণ করা হয়নি।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ৩২৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। ১৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত থাকায় নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
এদিকে দুর্গম এলাকার অনেকেই ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ করেছে। চাহিদার তুলনায় এখনও প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ায় সবার কাছে ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না বলে জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ।
সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন জানান, তার ইউনিয়নে অন্তত পাঁচ হাজার দরিদ্র পরিবার পানিবন্দী হলেও এই পর্যন্ত ৯ মেট্রিক টন চাল পাওয়া গেছে। যা দিয়ে ৯০০ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল সহায়তা দেয়া যাবে।
আরও পড়ুন: বন্যার্তদের সহায়তায় শাবি শিক্ষক সমিতির কার্যক্রম অব্যাহত
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বন্যার্তদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে, ত্রাণের কোনো সমস্যা নেই। পর্যায়ক্রমে সবাই ত্রাণ পাবেন। জেলার বন্যার্তদের জন্য আরও ২০০ মেট্রিক টন চাল ও ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
তিনি জানান, এই নিয়ে জেলায় ৫৩৮ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য বাবদ ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ও পশু খাদ্য বাবদ ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা উপজেলা পর্যায়ে বরাদ্দ করা হয়েছে। যা বিতরণ করা হচ্ছে।
বন্যার্তদের সহায়তায় শাবি শিক্ষক সমিতির কার্যক্রম অব্যাহত
সিলেট ও সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ, সংগঠন ও ব্যক্তিরা। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষকদের সংগঠন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিও এই কার্যক্রমে পিছিয়ে নেই।
সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, সিলেট অঞ্চলের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১২০০টি পরিবারের মাঝে বিভিন্ন শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, দি য়াশলাই, মোমবাতি ইত্যাদি সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়াও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শাবিপ্রবির শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বাসায় বিশুদ্ধ পানিসহ অন্যান্য দ্রব্যাদি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঈদের ছুটির পর শাবিপ্রবিতে সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত
শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. জায়েদা শারমিন বলেন, সিলেট অঞ্চলের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যায় আক্রান্ত সাধারণ মানুষের পাশে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে শাবি শিক্ষক সমিতি। এছাড়া শিক্ষকদের একদিনের বেতন এই বন্যার্তের মাঝে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বেতন ছাড়াও যে কেউ যেকোনো পরিমাণ অর্থ সাহায্য দিতে পারবে। সামনের যেকোনো সংকটময় মুহূর্তে দেশবাসীর সহায়তায় এই ধরনের কার্যক্রম শাবি শিক্ষক সমিতি কর্তৃক অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়ুন: আকস্মিক বিপর্যয় সামলে উঠেছে শাবিপ্রবি
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের ব্যাংক একাউন্টসহ বিকাশ ও নগদ নম্বর সাহায্যের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। শাবি শিক্ষক সমিতির মাধ্যমে দেশ ও দেশের বাইরে থেকেও আর্থিক সাহায্যের মাধ্যমে বন্যার্তদের পাশে থাকার সুযোগ থাকছে।
কুশিয়ারার আগ্রাসী রূপ: পানি বৃদ্ধি অব্যাহত, নিহত ১
সিলেটের বিয়ানীবাজারে বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সঙ্গে কুশিয়ারা নদীর ডাইক উপচে এবং কয়েকটি স্থানে ভাঙা ডাইক দিয়ে হুহু করে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে।
নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় দুবাগ, শেওলা, কুড়ারবাজার, মাথিউরা, তিলপাড়া ও মোল্লাপুর, ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে এসব ইউনিয়নের নতুন করে ৯০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার কুড়ারবাজার ইউনিয়নের বৈরাগী খশির এলাকার বসতঘর থেকে পানিতে ভাসমান অবস্থায় একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বাহার উদ্দিন (৪০) নামের ওই আব্দুল্লাহপুর নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। নিহত ব্যক্তি ওই পরিবারের গৃহকর্তা বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন: বন্যা: ৬ দিন পর সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে ফ্লাইট উঠা-নামা শুরু
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ থেকে বাহার উদ্দিনের ঘরে পানি উঠে। পরে তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে স্থানীয় বৈরাগীবাজার সিনিয়র মাদরাসা আশ্রয় কেন্দ্রে ওঠেন। বুধবার বিকালে তিনি তার ডুবে যাওয়া ঘর দেখতে যান। এরপর পরিবারের সদস্যদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানান- তিনি বাড়িতে রাত্রিযাপন করবেন। বৃহস্পতিবার সকালে তার খোঁজ না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে এসে দেখেন, ঘরে পানির মধ্যে তার লাশ ভাসছে। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় বাহারের লাশ উদ্ধার করে বৈরাগীবাজার সিনিয়র মাদরাসা আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।
অপরদিকে উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার নব্বইভাগের বেশি মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানববেতর জীবন যাপন করছেন। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত উপজেলার ৯৮৭টি পরিবারের প্রায় ছয় হাজার আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিক নূর জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় কুশিয়ারা নদীর পানি বিয়ানীবাজারের শেওলা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের প্রস্তুত করা ৫৩টি অস্থায়ী আশ্রয় ১০টি ইউনিয়ন ও একটি আশ্রয় কেন্দ্রে ৯৮৭ পরিবারের পাঁচ হাজার ৯২২ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এসব পরিবারের ৬২০টি গবাদিপশুও আশ্রয় কেন্দ্রের বাইরে রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস, তবে বৃহস্পতিবার সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে
বিয়ানীবাজার পৌরশহর ছাড়া উপজেলার অন্যান্য হাটবাজারে বন্যার পানি ওঠেছে। রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষকে জরুরি প্রয়োজনে নৌকা ব্যবহার করতে দেখা গেছে। বৈরাগীবাজার ও কাকরদিয়া এলাকায় প্রধান সড়ক দিয়ে নৌকা চলাচল করতে দেখা গেছে।
সোনাই নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বিয়ানীবাজার উপজেলার লাউতা, মুড়িয়া ও তিলপাড়া ইউনিয়নের বহুগ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সোনাই নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জলঢুপ-লাতু সড়কের সিংহভাগ তলিয়ে গেছে। একই সঙ্গে টিলাবেষ্টিত নাওয়ালা, দক্ষিণ পাহাড়িবহরসহ আশপাশ এলাকা ডুবে গেছে।
আরও পড়ুন: কুশিয়ারায় পানি বাড়ায় সিলেটের ৬ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
বন্যা: ৬ দিন পর সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে ফ্লাইট উঠা-নামা শুরু
বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় ছয়দিন পর সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট উঠা-নামা শুরু করেছে বলে জানিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। রানওয়ে থেকে পানি নেমে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ফ্লাইট ওঠানামা শুরু হয়।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার ওসমানী বিমানবন্দর থেকে সিলেট-লন্ডন রুটে দুটি ফ্লাইট আসা যাওয়া করেছে। ম্যানচেস্টারের উদ্দেশে একটি ফ্লাইট ছেড়ে গেছে। এছাড়া সিলেট-ঢাকা রুটে একাধিক ফ্লাইট আসা ও যাওয়া করেছে।
আরও পড়ুন: বন্যায় নিহতের সংখ্যা ৪২ জনে পৌঁছেছে: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
বিমানবন্দরের পরিচালক মো. হাফিজ আহমদ জানান, বৃহস্পতিবার থেকে বিমানবন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে। কোনো সমস্যা নেই।
আরও পড়ুন:কুশিয়ারায় পানি বাড়ায় সিলেটের ৬ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
গত ১৭ জুন বন্যায় রানওয়েতে পানি উঠে যাওয়ায় বন্দরের ফ্লাইট কার্যক্রম তিনদিনের জন্য বন্ধের ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। তিনদিন পর গত ২০ জুন ওসমানী বিমানবন্দর পরির্দশনে আসেন বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। পরিদর্শন শেষে তিনি জানান, রানওয়ে থেকে পানি নেমে গেলেও এপ্রোচ লাইট তলিয়ে থাকায় এই বিমানবন্দরের কার্যক্রম আরও কয়েকদিন বন্ধ থাকবে।
ঈদের ছুটির পর শাবিপ্রবিতে সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত
বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক দিক বিবেচনা করে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সকল ক্লাস ও পরীক্ষা পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটির পর সশরীরে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বুধবার সন্ধ্যায় এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
আরও পড়ুন: আকস্মিক বিপর্যয় সামলে উঠেছে শাবিপ্রবি
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সিলেট বিভাগে বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক দিক বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান ক্লাস-পরীক্ষা পবিত্র ঈদুল-আজহার ছুটির পর সশরীরে নেয়া হবে। তবে বিভাগগুলোর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আলোচনা সাপেক্ষে সুবিধামতো অনলাইন ক্লাস নেয়া যাবে।
আরও পড়ুন: কমতে শুরু করেছে শাবিপ্রবিতে বন্যার পানি
প্রসঙ্গত, বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনায় গত ১৭ জুন এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় শাবিপ্রবির সকল ক্লাস-পরীক্ষা আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।