বন্যা পরিস্থিতি
পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে ফুলগাজীর ৪ গ্রাম প্লাবিত
অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর নিয়ন্ত্রণের দুটি স্থানের বাঁধ ভেঙে ফেনীর ফুলগাজীর সদর ইউনিয়নের চার গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
বন্যায় মাঠের ফসল, পুকুরের মাছ, ঘরবাড়িসহ এলাকার রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতির হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয়রা জানায়, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের উত্তর দৌলতপুর অংশের একটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এতে ওই ইউনিয়নের উত্তর দৌলতপুর, দক্ষিণ দৌলতপুর, ঘনিয়ামোড়া ও বৈরাগপুর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যার্তদের সাহায্যের আহ্বান তারকাদের
ফুলগাজী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সেলিম বলেন, পানির তোড়ে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এতে আমার ইউনিয়নের চারটি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে।
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশ্রাফুর নাহার বলেন, মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের দুটি স্থানে ভাঙনের ফলে সদর ইউনিয়নের চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বিষয়টি সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রয়েছে।
পাউবোর ফেনী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দিন জানান, রাতে পানির প্রবাহ বেশি ছিল। সকালে মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। উজানে বৃষ্টি না হলে পানি দ্রুত নেমে যাবে।
আরও পড়ুন: কমতে শুরু করেছে শাবিপ্রবিতে বন্যার পানি
তিনি জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড ক্ষতিগ্রস্তি বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করে মেরামতের ব্যবস্থা নেয়া হবে। পানি একটু কমলেই মেরামত শুরু হবে।
কমতে শুরু করেছে শাবিপ্রবিতে বন্যার পানি
মধ্য রাত থেকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিলোরোড, বিভিন্ন একাডেমিক ভবন, মেয়েদের দুই হল, প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। আর যেসব জায়গায় কোমড় পানি ছিল তা এখন হাঁটু পানিতে চলে এসেছে।
শিক্ষাভবন ‘বি’, চেতনা-৭১’র সামনে, শিক্ষক কোয়ার্টারের সড়ক, সিরাজুন্নেসা চৌধুরি হলের সামনে হাঁটু পানি রয়েছে। তাছাড়া আবাসিক হলগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ অনেকটা স্বাভাবিক। তবে পানি কমে গেলেও চারপাশের পরিবেশ স্যাঁতস্যাঁতে ও দুর্গন্ধ অবস্থায় রয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যার্তদের সাহায্যের আহ্বান তারকাদের
মেয়ে শিক্ষার্থী যারা হল ছাড়তে পারিনি তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়াকৃত হোস্টেল আমির ও ফজল কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে প্রক্টর ইসরাত ইবনে ইসমাইল বলেন, ইতোমধ্যে বন্যার পানি অনেকটা নেমে গেছে। আজকে পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। এই পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকছে কিনা তার জন্য কমপক্ষে আরও দুই দিন পর্যবেক্ষণ করতে হবে। আমরা চারদিকে খোঁজখবর রাখছি। সবাই চারদিক পরিস্কার পরিচ্ছন্নতায় কাজ করছে। হলের চারপাশের পরিবেশ পরিস্কার পরিচ্ছনতার পরেই শিক্ষার্থীদের হলে উঠার আহ্বান জানাবো।
আরও পড়ুন: বন্যায় আটকে পড়া শাবিপ্রবি ছাত্রীদের উদ্ধারে বিজিবি
গত ১৬ জুন (বৃহস্পতিবার) থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা বন্যার পানির কবলে পড়ে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তাসহ সকলেই চরম দুর্ভোগে পড়েন।
পানিবন্দি ২ লাখ মানুষ, কুড়িগ্রামে বাড়ছে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি
কুড়িগ্রামে গত তিনদিনে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। রবিবার সকালে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৩২ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ২৭ সেন্টিমিটার বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তলিয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। সেই সঙ্গে বানভাসী এলাকায় দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের তীব্র সংকট।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,গত তিনদিনে অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার ৯ উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নের প্রায় ১৫০টি গ্রামের প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পরেছে।
আরও পড়ুন: ভয়াবহ বন্যায় বন্দি সিলেটবাসী
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে রৌমারী, উলিপুর ও সদর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির বেশি অবনতি ঘটেছে। বন্যায় জেলায় প্রায় ৬৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। ফসলাদি নিমজ্জিত হয়েছে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর। নদীভাঙন ও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরায় বানভাসী মানুষ রয়েছে চরম দুর্ভোগের মধ্যে।
বন্যা পরিস্থিতির অবনতিতে ওসমানী বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠা-নামা বন্ধ
সিলেটের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তিনদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, বিমানবন্দরটিতে আজ (শুক্রবার) থেকে তিনদিন কোন ধরণের ফ্লাইট ওঠা-নামা করবে না।
হাফিজ আহমদ বলেন, বিমানবন্দরের রানওয়ের কাছাকাছি বন্যার পানি চলে এসেছে। এছাড়া সিলেটজুড়ে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় তিনদিনের জন্য বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
তিনি বলেন, আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রতিদিনের মতোই আমাদের ফ্লাইটগুলো বিমানবন্দরে অবতরণ ও বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করেছে। কিন্তু রানওয়ের কাছাকাছি বন্যার পানি চলে আসায় এখন থেকে আর কোনো ফ্লাইটের অবতরণ কিংবা উড্ডয়ন সম্ভব হচ্ছে না।
পড়ুন: সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হওয়ার শঙ্কা
এদিকে, সিলেটের কুমারগাওয়ের বিদ্যুতের গ্রিড লাইনের সাব স্টেশনে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে সেনাবাহিনী, সিলেট সিটি করপোরেশন ও বিদ্যুৎ বিভাগ।
শুক্রবার (১৭ জুন) দুপুর থেকে কুমারগাও বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের চারপাশে বালির বস্তা দিয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করে সেনাবাহিনী। এছাড়া সিলেট সিটি করপোরেশনের সাকার মেশিন দিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ঢুকে পড়া পানি শুকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, পানি যেভাবে বাড়ছে তাতে কুমারগাও সাব স্টেশন তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। এটি তলিয়ে গেলে পুরো সিলেট বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়বে। এতে যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। তাই আমরা এই কেন্দ্রটি চালু রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি। যাতে অন্তত নগরের বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন, সেনাবাহিনী ও বিদ্যুৎ বিভাগ একসাথে মিলে এই কেন্দ্র সচল রাখার চেষ্টা করছি।
বিদ্যুৎ বিভাগের সিলেট অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল কাদির শুক্রবার দুপুরে বলেন, গত বুধবার রাতেই কুমারগাও বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে পানি ঢুকে পড়েছে। আর চার ইঞ্চি পানি বাড়লেই এই কেন্দ্র বন্ধ করে দিতে হবে। ইতোধ্যে সুনামগঞ্জ, ছাতক, কোম্পানীগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কুমারগাও উপকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলে পুরো সিলেট বিদ্যুৎহীন হয়ে যাবে।
পড়ুন: বন্যা পরিস্থিতির অবনতিতে এসএসসি পরীক্ষা স্থগিত
বন্যা পরিস্থিতিতে শাবিপ্রবি বন্ধ ঘোষণা
চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(শাবিপ্রবি) সকল ক্লাস-পরীক্ষা আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
শুক্রবার সকালে জরুরী সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।তিনি বলেন, টানা ভারী বর্ষণ, উজানের পাহাড়ি ঢলে সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাও বন্যার পানির কবলে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী কর্মকর্তা-কর্মচারী সকলকেই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সকলের সর্বিক নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে শুক্রবার সকালে জরুরী সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হেয়েছে। আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।
আরও পড়ুন: বন্যার কবলে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাস, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা
সিলেটে ২৯০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি, এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে শঙ্কা
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, ভোগান্তিতে বানভাসিরা
কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেট নগরী এবং জেলার ১৩ উপজেলার গ্রাম থেকে গ্রামান্তর নদীর পানিতে একাকার। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সিলেট নগরীতে আরও দুই ইঞ্চি পানি বেড়েছে।
এছাড়াও উপজেলাগুলোতেও বন্যার পানি বেড়েছে। এ অবস্থায় সিলেট জেলা ও মহানগরের অন্তত ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এসব মানুষ বিশুদ্ধ পানি, খাবার, বিদ্যুৎ ও নানামুখী সংকটে দুর্বিষহ সময় কাটাচ্ছেন। এছাড়া গবাদিপশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন মানুষ।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সিলেটের প্রধান নদী সুরমা কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর সিলেট পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, সারাদেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
এছাড়া কুশিয়ারা নদীর পানি অমলসিদ (সিলেট) পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার বেড়ে এখন বিপদসীমার ১৫৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে শেওলা (সিলেট) পয়েন্টে নদীটির পানি বেড়েছে ৮ সেন্টিমিটার, এখন তা বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট ও সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের কতিপয় স্থানে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে।
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত, বাড়ছে পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ
গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের নদীগুলো এখন পানিতে টুইটম্বুর। সুরমা-কুশিয়ারায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপদসীমার ওপর দিয়ে। সদর উপজেলার পাশাপাশি সীমান্তবর্তী গোয়াইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও জকিগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে আছে। এসব এলাকায় পানিবন্দি রয়েছে কয়েক লক্ষাধিক মানুষ।
মঙ্গলবার (১৭ মে) দিনে ও রাতে সিলেট জেলায় বৃষ্টি হয়নি। তবে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বুধবার (১৮ মে) সকাল পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় বেড়েছে দুর্ভোগ। বিপর্যস্ত হয়ে আছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বিভিন্ন উপজেলায় প্লাবিত এলাকায় বাঁধ ও পাকা রাস্তাসহ বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেয়া লোকজন বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য ও শৌচাগার সংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, ওষুধ ও জ্বালানি তেলের দোকান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মানবিক বিপর্যয়ের শংকা দেখা দিয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় বাঁধ ও পাকা রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় মানুষজনকে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: টানা বর্ষণে সিলেট-সুনামগঞ্জে নদ-নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি
বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও সিলেট নগরীর কয়েকটি এলাকার হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছেন। বেশ কয়েকটি আবাসিক এলাকার রাস্তাঘাট এখনও পানির নিচে। বাসাবাড়ি ও সরকারি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানেও প্রবেশ করেছে পানি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা জানান, সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। নতুন করে বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভাঙনের খবর সংগ্রহ করছেন তারা।
সিলেট নগরীর জলাবদ্ধতার ব্যাপারে তিনি জানান, নগরীর জলাবদ্ধতার মূল কারণ হচ্ছে ড্রেনেজ সমস্যা। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতিতে নগরীর দুর্ভোগ আরও বাড়তে পারে।
এদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। সিলেটে আগামী ২০-২১ জুন পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। যে কারণে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
সিলেট জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এছাড়াও চাল ও শুকনো খাবার বিভিন্ন উপজেলার বন্যার্তদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যার্তদের জন্য ১৯৯ আশ্রয়কেন্দ্র
সুনামগঞ্জে নদনদীর পানি বিপদসীমার ওপরে
বন্যায় কুড়িগ্রামে ২৭ হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি
এ বছর দীর্ঘ মেয়াদি বন্যায় কুড়িগ্রামের ৯টি উপজেলায় প্রায় ২৭ হাজার হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা অববাহিকার কৃষকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ বছর বন্যায় জেলায় ২৬ হাজার ৪০৫ হেক্টর জমির রোপা আমন, ২৮৫ হেক্টর জমির বিভিন্ন সবজি খেত ও ১৫৫ হেক্টর বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত। তবে কৃষি বিভাগ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেনি।
আরও পড়ুন:কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত
বৃহস্পতিবার স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি এখন বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের মিল পাড়া গ্রামের কোরবান আলী বলেন, 'তিন বিঘা জমিতে আমন আবাদ করেছি, দীর্ঘ মেয়াদি বন্যায় সব পচে গেছে। কীভাবে কী করবো বুঝতে পারছি না, এখন তো সময় নাই, বীজতলাও নাই। কীভাবে আবাদ করবো?'
একই ইউনিয়নের কৃষক দেলোয়ার মিয়া বলেন, আমার পাঁচ বিঘা জমির আমন খেত এখনো তলিয়ে আছে। তবে দুদিনের মধ্যে পানি নেমে গেলেও আর আবাদ হবে না।
আরও পড়ুন:বন্যায় কুড়িগ্রামে ভোগান্তি চরমে
এবার যে ক্ষতি হলো তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। পানি নেমে গেলে না হয়, আবার ধান রোপণ করতাম, কিন্তু বীজতলা তো নাই। সবমিলিয়ে খুবই সমস্যায় আছি, আগামীতে কীভাবে চলবো।
পাঁচগাছী ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, নদ-নদীর পানি তো কমতেছে কিন্তু এখনো আমার ইউনিয়নে আমন খেত পানিতে তলিয়ে আছে। সব মিলে প্রায় ১ হাজার ৫০০ হেক্টর বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে আমন আবাদ ১ হাজার হেক্টর ও অন্যান্য ফসল ৫০০ হেক্টর হবে।
আরও পড়ুন:মাগুরায় বন্যার পানিতে রাস্তা ডুবে জনদুর্ভোগ চরমে
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হক জানান, কুড়িগ্রামে এবার বন্যায় রোপা আমন, সবজি ও বীজতলা মিলে প্রায় ২৭ হাজার হেক্টর বিভিন্ন ফসল ১৬-১৭ দিন পানিতে নিমজ্জিত ছিল। জেলায় কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে এ তথ্য পাঠিয়েছি। তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, নিম্নাঞ্চলের মানুষের দুর্দশা বাড়ছে
সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি কমতে থাকায় জেলার বন্যা পরিস্থিতি সামান্য উন্নতি হলেও যমুনার তীরবর্তী পাঁচটি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ এখনও পানিবন্দি রয়েছে। প্রবল বর্ষণে চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের অসহায় মানুষের দুঃখ দুর্দশা আরও বাড়ছে। বর্তমানে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (হেড কোয়ার্টার) নাসির উদ্দিন জানান, যমুনা নদীর পানি কমতে থাকায় সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি সামান্য উন্নতি হয়েছে। তবে যমুনার তীরবর্তী শাহজাদপুর, বেলকুচি, চৌহালী, কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল বন্যাকবলিত এলাকার অনেক কাঁচা ও পাকা সড়ক যোগাযোগ এখনও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বহু অসহায় পরিবার স্থানীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে এবং এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে।
তিনি বলেন, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে বন্যা ও ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। এবার বন্যায় যমুনা নদীর তীরবর্তী ওই পাঁচটি উপজেলাসহ চলনবিল এলাকার তাড়াশ ও উল্লাপাড়া উপজেলার ৭ হাজার ২৯০ হেক্টর ফসলি জমি ডুবে গেছে। এর মধ্যে রোপা আমন, আঁখ ও সবজির বাগান উল্লেখযোগ্য। এছাড়া শাহজাদপুর, কাজিপুর, চৌহালী ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার অনেক স্থানে ভাঙনও দেখা দিয়েছে। তবে শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর ও খুকনী ইউনিয়ন এলাকায় তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই ভাঙনের মুখ থেকে অনেক পরিবার অনত্র আশ্রয় নিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মকর্তা বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিম্নাঞ্চলে বন্যা ও ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষের মাঝে চাল বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। এদিকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও রেড ক্রিসেন্টের পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। গত দুদিনে চৌহালী উপজেলা ও এনায়েতপুর থানার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৪’শ পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
আরও পড়ুন: বরিশালে ৯ নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে
সিরাজগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, নতুন এলাকা প্লাবিত
সিরাজগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ
কুড়িগ্রামে ২ শতাধিক পুকুর ভেসে ৫৫ লাখ টাকার ক্ষতি!
এ বছর বন্যায় কুড়িগ্রামের সদর উপজেলা, উলিপুর, নাগেশ্বরী, রৌমারী ও রাজিবপুরসহ নয় উপজেলায় ছোটবড় মিলে প্রায় ২১৯টি পুকুর ভেসে ২০২ জন মৎস্য চাষী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
কুড়িগ্রাম জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, জেলার নয় উপজেলায় ২১৯ পুকুর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। যার আয়তন প্রায় ৩৩ হেক্টর। এতে করে প্রায় ৫৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন: বাঁধ ভেঙে ফেনীতে ৭ গ্রাম প্লাবিত
কুড়িগ্রাম সদরের পাঁচগাছি ইউনিয়নের গারুহারা গ্রামের খুটু মিয়া বলেন, ‘আমার এলাকায় দু’টি পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করেছি আমি। মাছ বিক্রি করার সময় এসেছে। এমন সময়ে বন্যার পানিতে ওই দুই পুকুরের মাছ ভেসে গিয়ে প্রায় ৪০-৫০ হাজার টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। শীতকাল তো চলেই আসছে, মাছ ছাড়বো কখন, আবার মাছ বড় করব কখন, সময় তো নাই।’