বন্যা পরিস্থিতি
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অপরিবর্তিত রযেছে। এর পাশাপাশি প্রায় সাড়ে তিনশ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন।
এদিকে, ধরলার পানি বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ধরলা অববাহিকার দুটি উপজেলার ৩৫ গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যায় কুড়িগ্রামে ভোগান্তি চরমে
অপরদিকে, ব্রহ্মপুত্রের পানি কিছুটা কমলেও এখনও বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বন্যাদুর্গত এলাকায় খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও গবাদী পশুর খাদ্য সংকট প্রকট হয়ে উঠছে। পানিবন্দির কারণে বিভিন্ন এলাকায় ২০ হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে বাঁধে ও নৌকায় আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। একই সাথে গবাদী পশুও দুর্ভোগ বেড়েছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের পুরাতন অনন্তপুরে নদের পানি বিকল্প বাঁধের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় নতুন করে ১৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ত্রাণের অপেক্ষা করছে হাজারো বন্যার্ত মানুষ।
উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন জানান, প্রথম দফায় ৬০০ মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হলেও আরও প্রায় ২ হাজার পরিবারকে জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ সহায়তা দেয়া দরকার।
আরও পড়ুন: মাগুরায় বন্যার পানিতে রাস্তা ডুবে জনদুর্ভোগ চরমে
কুড়িগ্রামের ত্রাণ অফিস সূত্র জানায়, বন্যার্তদের জন্য ২৮০ মেট্রিক টন চাল ও সাড়ে ১২ লাখ টাকাবরাদ্দ করা হয়েছে। যা বিতরণ করা হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, নতুন এলাকা প্লাবিত
প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সিরাজগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। বর্তমানে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনার তীরবর্তী জেলার পাঁচটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল বন্যাকবলিত হয়েছে এবং নতুন নতুন অঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। এতে চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ায় দুঃখ দুর্দশা বাড়ছে।
এদিকে বাড়িঘরে পানি উঠায় চরাঞ্চলের পানিবন্দি মানুষেরা কলা গাছের ভেলা নৌকা ও ঘরের ভিতর মাচল করে বসবাস করছে। বিশুদ্ধ পানির ও জ্বালানির অভাবে তারা খাবার রান্না করতে না পেরে নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছে। সেইসাথে শিশু খাদ্যের সংকটে তাদের জীবন-যাপন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। গো-খাদ্যের অভাবে গবাদি পশু নিয়ে দুশ্চিন্তায় বন্যার্ত মানুষেরা। সাপ-পোকামাকড়ের ভয়ে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে বানবাসি মানুষের জীবন।
সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, জেলার সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলায় ১’শ মেট্রিক টন চাল ও ১ লাখ করে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৭৬ মেট্রিক টন চাল ও আড়াই লাখ টাকা মজুদ রাখা হয়েছে। বরাদ্দকৃত চাল ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হচ্ছে এবং কোন এলাকায় ত্রাণের প্রয়োজন রয়েছে কি না তার খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা বিতরণ শুরু করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: করোনায় সিরাজগঞ্জের এমপি স্বপনের মৃত্যু
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী (হেড কোয়ার্টার) জাকির হোসেন জানান, উজানের ঢল ও দফায় দফায় বর্ষণে যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যেই যমুনার তীরবর্তী শাহজাদপুর, বেলকুচি, চৌহালী, কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে এবং প্লাবিত হচ্ছে আরও নতুন নতুন অঞ্চল। এসব অঞ্চলের অনেক কাঁচা ও পাকা সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে আঁখ, আউশ রোপা, তিল ও সবজি বাগানসহ বিভিন্ন ফসল।
ফরিদপুরে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ওপরে
ফরিদপুরে পদ্মার পানি বেড়েই চলেছে। বর্তমানে বিদৎসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানিবন্দী মানুষদের জন্য সরকারি খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসন।
ফরিদপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা জানান, পদ্মায় গোয়ালন্দ পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পানি বেড়েছে ৮ সেন্টিমিটার। বর্তমানে এই নদী পানির উচ্চতা ৯ দশমিক ৩৪ মিটার যা বিপৎসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বন্যায় কুড়িগ্রামে ভোগান্তি চরমে
পানি বৃদ্ধির ফলে চারটি উপজেলা জেলা সদর, চরভদ্রাসন, সদরপুর ও ভাঙ্গা উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ এখন পানিবন্দি। এই সকল এলাকার প্রায় দেড়শতাধিক গ্রামে ফসলি খেত, রাস্তা, নিচু এলাকার বসতবাড়ি তলিয়ে গেছে। এছাড়াও নদী ভাঙনের শিকার হচ্ছে মধুখালী, আলফাডাঙ্গা ও সদরপুরের বিভিন্ন অংশে।
ইতোমধ্যে সরকারিভাবে এই সকল এলাকায় ৫০ মেট্রিক টন চাল ও সাড়ে নয় লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এদিকে, জেলার মধুমতি ও আড়িয়াল খাঁর বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দেয়ায় প্রতিদিনই ফসলের জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা বিলীন হচ্ছে। এছাড়াও ফরিদপুর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ও ডিক্রীরচর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: মাগুরায় বন্যার পানিতে রাস্তা ডুবে জনদুর্ভোগ চরমে
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানান, পানিবন্দি মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে, পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে। এছাড়া বন্যার্তদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বন্যায় কুড়িগ্রামে ভোগান্তি চরমে
কুড়িগ্রামে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা কবলিতরা চরম ভোগান্তিতে রয়েছে। ঘরে পানি প্রবেশ করায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে বাঁধে ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছেন।
জেলার বিভিন্ন এলাকা পানিবন্দী হয়ে পড়ায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। একই সাথে গবাদিপশুর খাদ্যেরও তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। নিম্নবিত্তরা এক বেলা খাচ্ছেন তো আরেক বেলা অনাহারে থাকছেন।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, শুক্রবার সকালে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৫০ সেন্টিমিটার ও ধরলা নদীর পানি ব্রিজ পয়েন্টে ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হক জানান, বন্যার ফলে জেলায় প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর রোপা আমন, শাকসবজি ও বীজতলা তলিয়ে গেছে।
অপরদিকে, তিস্তা নদীসহ বেশ কয়েকটি নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দেয়ায় গাছপালা, পুকুর, আবাদি জমিসহ বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। চলতি বন্যায় তিস্তার ভাঙনে সহস্রাধিক বাড়িঘর ও দেড় শ’ বিঘা আবাদি জমি বিলীন হয়েছে।
আরও পড়ুন: মাগুরায় বন্যার পানিতে রাস্তা ডুবে জনদুর্ভোগ চরমে
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বন্যা দুর্গতদের আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরসহ তাদের জন্য বিশুদ্ধ পানি ও ভ্রাম্যমাণ লেট্রিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও বৃহস্পতিবার থেকে উপ-বরাদ্ধকৃত ২৮০ মেট্রিক টন চাল ও ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দুর্গত এলাকায় বিতরণ শুরু হয়েছে।
সিরাজগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ
প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সিরাজগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে।
যমুনার তীরবর্তী জেলার পাঁচটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল বন্যা কবলিত হয়েছে এবং নতুন নতুন অঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ এখন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের অসহায় মানুষের দুঃখ দূর্দশা বাড়ছে। ইতোমধ্যেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা বিতরণ শুরু করা হয়েছে। বর্তমানে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৬১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (হেড কোয়ার্টার) জাকির হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, উজানের ঢল ও দফায় দফায় বর্ষণে যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যেই যমুনার তীরবর্তী শাহজাদপুর, বেলকুচি, চৌহালী, কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে এবং প্লাবিত হচ্ছে আরও নতুন নতুন অঞ্চল। এসব অঞ্চলের অনেক কাঁচা ও পাকা সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে আঁখ, আউশ রোপা, তিল ও সবজি বাগানসহ বিভিন্ন ফসল। নিম্নাঞ্চলের শত শত পরিবার স্থানীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে ও নিচ্ছে এবং তারা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি
ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।
এতে করে চর, দ্বীপচরসহ নদ-নদী অববাহিকার নিচু এলাকার প্রায় ৭০ হাজার মানুষ এখনও পানিবন্দী রয়েছে। এসব এলাকার কাঁচা সড়ক তলিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হক জানান, চলমান বন্যায় জেলায় প্রায় ১৬ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমির রোপা আমান ও ২৭০ হেক্টর জমির সবজি খেত, ১০০ হেক্টর জমির বীজতলা দীর্ঘদিন পানিতে তলিয়ে রয়েছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, অনেক দিন ধরে পানিতে তলিয়ে থাকায় বেশিরভাগ ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: মাগুরায় বন্যার পানিতে রাস্তা ডুবে জনদুর্ভোগ চরমে
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশরী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলার পানি কিছুটা হ্রাস পেলেও ব্রহ্মপুত্রের পানি আরও কিছুটা বাড়তে পারে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বন্যা কবলিতদের জন্য ২৮০ মেট্রিক টন চাল ও সাড়ে ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
মাগুরায় বন্যার পানিতে রাস্তা ডুবে জনদুর্ভোগ চরমে
প্রতিদিন নানা কাজে প্রতিনিয়ত এলাকাবাসীকে দুই’শ গজ সড়কে হাটু পানি ও দুই কিলোমিটার রাস্তায় ভয়াবহ কাদা মাড়িয়ে উপজেলা শহরের যেতে হচ্ছে। মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার চরপাচুড়িয়া গ্রামের মধুমতি নদীর পাশ দিয়ে চলে গেছে এই সড়কটি।
এই সড়ক দিয়ে চড়পাচুড়িয়া গ্রাম ও চর পাচুড়িয়াসহ ফরিদপুরের বোয়ালমারি উপজেলার চরনারানদিয়া, রায়পাশা ও আলফাডাঙ্গা উপজেলার কয়েকটি গ্রামের মানুষ যাতায়াত করেন।
বিকল্প কোনও সড়ক ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় ১০ হাজার মানুষকে নিরুপায় হয়ে এই পথ দিয়ে চলতে হয়। সড়কটি সংস্কার বা পাকাকরণ না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
এলাবাসীর অভিযোগ, মহম্মদপুর উপজেলা সদর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত। এ গ্রামটির সীমানা নিয়ে প্রতিবেশী ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারি উপজেলার সাথে বিরোধ ছিল। প্রায় দুই বছর আগে বিরোধ নিষ্পত্তি হয়।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
সীমানা বিরোধের কারণে এখানে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা যায়নি। প্রায় সাড়ে তিন হাজার জনসংখ্যা অধ্যুষিত মধুমতি নদী পাড়ের চর পাচুড়িয়া গ্রামটিতে নূন্যতম কোনো নাগরিক সুবিধা নেই।
উপজেলা সদরে বাস করে চরম অবহেলিত এই গ্রাম। এ যেন বাতির নিচে অন্ধকার। উপজেলা শহরের যোগাযোগের একমাত্র রাস্তাটি চলাচলের সম্পূর্ণ অযোগ্য। এলাকাবাসীরা জানান, নানা কাজে উপজেলা শহরে যেতে হয় পানি ও কাদা মাড়িয়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা নুরল ইসলাম বলেন, গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না, কিছু অংশে বিদ্যুৎ আসলেও রাস্তাঘাটের কোনও উন্নয়ন হয়নি।
এ দিকে, এই অবস্থার সাথে যোগ হয়েছে মধুমতির ভাঙন। ভাঙনে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ও বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে।
মহম্মদপুর উপজেলা সদরের একটি স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী অরিন ও সুমি জানান, স্কুল, কলেজ, অফিস সব মহম্মদপুর উপজেলা সদরে। কোমর পানিতে কাপড় ভিজিয়ে যাতায়াত করতে হয়। গায়ের কাপড় গায়েই শুকাতে হয়।
আরশাদ মোল্যা নামে অপর এক ব্যক্তি জানান, রাস্তাঘাট নেই বলে এই গ্রামে কেউ আত্মীয়তা করতে চায় না। আত্মীয় স্বজন বিপদে না পড়লে বেড়াতে আসেন না। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিতে চরম সমস্যায় পড়তে হয়। ঘাড়ে করে হাসপাতালে নিতে হয় রোগীকে। রাস্তা না থাকায় কোনও যানবাহন চলে না।
আরও পড়ুন: যমুনার পানি আরিচা পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপরে, বন্যার আশঙ্কা
মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামানন্দ পাল জানান, সদর ইউনিয়নের এক নম্বর মৌজায় চর পাচুড়িয়া গ্রাম অবস্থিত। দীর্ঘ দিন ধরে সীমানা বিরোধ থাকায় এখানে উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া যায়নি। এবার সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির পর এসএ রেকর্ড সম্পন্ন হয়েছে। এখন উন্নয়নে প্রকল্প নিতে আর বাঁধা নেই। সম্প্রতি বালীভর্তি বস্তা ফেলে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
চর পাচুড়িয়াবাসীর সমস্যা সমাধানে দ্রুত সম্ভব অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
কুড়িগ্রামে সাড়ে ১৫ হাজার হেক্টর ফসল পানির নিচে
কুড়িগ্রামে নদ-নদীতে আবারও পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। এতে জেলার ১৫ হাজার ৫২০ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে।
এদিকে, একদিনেই ধরলা নদীতে ১০ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্র নদে ৫ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে।
আরও পড়ুন:কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, সোমবার সকালে ধরলা নদীর পানি ব্রিজ পয়েন্টে ৩৪ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্র নদে চিলমারী পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে ভাঙন কমেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হক জানান, বন্যার পানি নিম্নাঞ্চলে অবস্থান করায় কৃষকের আরাধ্য ফসল রোপা আমন ও শাকসবজি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সোমবার পর্যন্ত জেলায় ১৫ হাজার ৫২০ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে রোপা আমন ১৫ হাজার ১১৫ হেক্টর, শাকসবজি ২৭০ হেক্টর ও বীজতলা ৯৫ হেক্টর।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জের যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত, নিম্নাঞ্চল বন্যাকবলিত
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন জানান, পানি বৃদ্ধির ফলে নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। এতে আমার ইউনিয়নের প্রায় ৪ শতাধিক বাড়িতে পানি উঠেছে। নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ায় গো-খাদ্যের সংকট তৈরি হয়েছে। লোকজন পানিতে ডুবে বিভিন্ন জায়গা থেকে গো-খাদ্য সংগ্রহ করছে। এছাড়াও বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় স্বাভাবিক চলাচলে অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছে।
হুমকির মুখে আশ্রয়ণ প্রকল্প, গাইবান্ধায় ২১ গ্রাম প্লাবিত
প্রবল বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি বেড়ে তিন কোটি টাকার ফুলছড়ি নীলকুঠি আশ্রয়ণ প্রকল্প হুমকির মুখে পড়েছে। কখন যে ধসে যাবে এই আতঙ্কে ঘরও ছাড়ছেন অনেকেই।
এদিকে, বর্তমানে এই অঞ্চলের নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সাবেক ফুলছড়ি হেড কোয়ার্টার থেকে সামনে যমুনা নদীর দিকে তাকালেই চোখে পড়বে এই আশ্রয়ণ প্রকল্প। চারপাশে থৈ-থৈ পানি। দুটি ব্রিজসহ আশ্রায়ণ প্রকল্পের রাস্তা এখন পানির নিচে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামসুল আলম সরকার জানান, প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পটি করা হয়েছে। ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার জন্য চারপাশে জিও টেক্স দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, পানি বৃদ্ধির কারণে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে আশ্রায়ণ প্রকল্পের প্রায় দুই শতাধিক বাসিন্দা।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মহসিন আলী বলেন, ‘আমরা আতঙ্কে আছি। চারদিকে পানি আর পানি। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট-ব্রিজ। এখন নৌকায় যাতায়াত করতে হচ্ছে। একবার যাতায়াত করলে নৌকা ভাড়া লাগে ১০ টাকা। এর ফলে আশ্রায়ণ এলাকার মানুষের যোগাযোগ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। কেউ কেউ আশ্রয়ণ প্রকল্প ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।
সাঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সুইট বলেন, ‘চরাঞ্চলে পানিতে ডুবে গেছে অনেক ফসলের খেতসহ ঘরবাড়ি। পানি বৃদ্ধির কারণে সাঘাটা উপজেলার গোবিন্দি, বাশহাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া, রতনপুরসহ অন্তত ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের বেগুন, ঝিঙ্গা, চিচিংগা, লাউ, কুমড়া, করলা, ঢ্যারস, রোপা আমনসহ বিভিন্ন ফসল পানিতে ডুবে গেছে।’
আরও পড়ুন:যমুনার পানি আরিচা পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপরে, বন্যার আশঙ্কা
এদিকে সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা সদর, সাঘাটা ও ফুলছড়ির চরাঞ্চলের বেশ কিছু বাড়ি পানিতে ডুবে গেছে।
এব্যাপারে ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রায়হান দোলন বলেন, বর্ষা এলেই ওই এলাকার চারপাশে পানি জমে। তবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের চারপাশ ও যোগাযোগের রাস্তাসহ ডুবে গেলেও মজবুত ও শক্ত করে নির্মাণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে কুড়িগ্রাম জেলায় নদ-নদীর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
শনিবার সকাল ৯টায় ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ৩২ ও ব্রহ্মপুত্র নদ চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: যমুনার পানি আরিচা পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপরে, বন্যার আশঙ্কা
সংশ্লিষ্টরা জানান, তিস্তা নদীর পানি ব্রিজ পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার নিচে অবস্থান করছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানিবন্দী হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় লোকজন অনেকটা বিপাকে পরেছে।
জানা গেছে, বন্যায় প্রায় সাড়ে ৯ হাজার একরে রোপা আমন ও শাক-সবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। গ্রামীণ সড়কগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় মানুষের যাতায়াতেও বাঁধা সৃষ্টি হয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যার আশঙ্কা: কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ব্রহ্মপুত্র নদের উজানে ভারতের কয়েক রাজ্যে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।