আপিল বিভাগ
দুই শিশুকে আগামী ২ দিন জাপানি মায়ের জিম্মায় দিতে নির্দেশ
জাপান থেকে আসা দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে আগামী ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর তাদের জাপানি মায়ের জিম্মায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে ১৫ ডিসেম্বর দুই শিশুকে আদালতে নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। ওই দিন পরবর্তী আদেশ দিবেন আদালত।
রবিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন।
আদালতে জাপানি নারী এরিকো নাকানোর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম, এবং তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির ও ব্যারিস্টার আব্দুল কাইয়ুম। অন্যদিকে বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম, তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলম।
এর আগে গত ২১ নভেম্বর জাপানি দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা বাংলাদেশে তাদের বাবা ইমরান শরীফের কাছে থাকবে বলে রায় দেন হাইকোর্ট। তবে জাপান থেকে এসে শিশুদের মা বছরে তিনবার ১০ দিন করে দুই সন্তানের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে পারবেন। জাপানি মায়ের আসা-যাওয়া ও থাকা-খাওয়ার সব খরচ বাবা ইমরান শরীফকে বহন করতে হবে। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন: তিতাস নদী দখলদারদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
রায়ে আদালত বলেন, রিটটি চলমান থাকবে। দুই মেয়ে বাবা ইমরান শরীফের হেফাজতে থাকবে। মা দেখা-সাক্ষাৎ এবং একান্তে সময় কাটানোর সুযোগ পাবেন। যেহেতু মা জাপানি নাগরিক, সেখানে থাকেন এবং কাজ করেন, তাই তিনি নিজের সুবিধামতো সময়ে বাংলাদেশে এসে সন্তানদের সঙ্গে প্রতিবার কমপক্ষে ১০ দিন করে সময় কাটাতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে বছরে তিনবার বাংলাদেশে যাওয়া-আসাসহ ১০ দিন অবস্থানের যাবতীয় খরচ বাবা ইমরান শরীফকে বহন করতে হবে। এর বাইরে আসা-যাওয়ার খরচ মা বহন করবেন। ছুটির দিনে অন্তত দুইবার বাবা সন্তানদের মায়ের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেবেন।
এছাড়া আদালত নির্দেশনা দেন, গত কয়েকমাস বাংলাদেশে অবস্থান ও যাতায়াত খরচ বাবদ শিশুদের মা নাকানো এরিকোকে ১০ লাখ টাকা দেবেন বাবা ইমরান শরীফ। আগামী সাত দিনের মধ্যে তাকে এ অর্থ দিতে হবে। রিটটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আদেশ প্রতিপালিত না হলে বা অন্য কোনো আদেশের জন্য আদালতে উভয়পক্ষ আসতে পারবে। সংশ্লিষ্ট সমাজসেবা কর্মকর্তা শিশুদের দেখভাল অব্যাহত রাখবেন। প্রতি তিন মাস অন্তর শিশুদের বিষয়ে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে প্রতিবেদন দিতে হবে।
এদিকে, জাপানে থাকা ছোট মেয়ে হেনাকে হাইকোর্টে হাজির করানোর নির্দেশনা চেয়ে বাবা ইমরান শরীফের করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।
আরও পড়ুন: মুরাদের আপত্তিকর অডিও সরাতে হাইকোর্টের নির্দেশ
পরে গত ৫ ডিসেম্বর দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিজের জিম্মায় নিতে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন জাপানি মা নাকানো এরিকো। রবিবার ওই আবেদনের ওপর শুনানি হয়।
উল্লেখ্য, চিকিৎসক এরিকো ও প্রকৌশলী ইমরান শরীফ (৫৮) ২০০৮ সালের ১১ জুলাই টোকিওতে বিয়ে করেন। এক যুগের দাম্পত্য জীবনে তারা তিন কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। এ দম্পতির ১১, ১০ ও ৭ বছর বয়সী তিন মেয়ে টোকিওর একটি স্কুলে পড়ত। তবে বিভিন্ন কারণে দাম্পত্য বিবাদের জেরে চলতি বছরের গত ১৮ জানুয়ারি বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করেন শিশুদের মা এরিকো। সন্তানদের জিম্মায় চেয়ে টোকিওর পারিবারিক আদালতে গত ২৮ জানুয়ারি মামলা করেন এরিকো। এর মধ্যেই গত ২১ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়েকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন ইমরান শরীফ। এরপর জাপানের আদালত এরিকোর জিম্মায় সন্তানদের ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেন। এরপর গত ১৮ জুলাই শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন নাকানো এরিকো।
পরে দুই মেয়েকে নিজের জিম্মায় পেতে ঢাকায় এসে গত ১৯ আগস্ট জাপানি নারী রিট করেন।
আরও পড়ুন: কেরোসিন-ডিজেলের মূল্য নির্ধারণের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না: হাইকোর্ট
বিশেষ পরিস্থিতিতে ব্যক্তির চলাফেরায় বাধা দেয়া যাবে: আপিল বিভাগ
সংবিধানের ৩৬ অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকার হিসেবে কোনো ব্যক্তির চলাফেরার যে স্বাধীনতা দেয়া আছে তা একচ্ছত্র নয় (নন-অ্যাবসলুট) বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
আপিল বিভাগ বলেছেন, একজনের দেশত্যাগের অধিকারকে কখনোই একচ্ছত্র অধিকার হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। বিশেষ পরিস্থিতিতে এই অধিকার স্থগিত করা যেতে পারে। ৩৬ অনুচ্ছেদ ব্যক্তির চলাফেরায় বাধা দেয়াকে অনুমতি দেয় তবে তা অবশ্যই আইন অনুযায়ী এবং জনস্বার্থে হতে হবে। তবে, আইনের সমর্থনে আরোপিত বিধি নিষেধ ছাড়া কোন নির্বাহী আদেশে কারও চলাফেরার স্বাধীনতা খর্ব করা অসাংবিধানিক। বুধবার দুর্নীতি মামলার আসামি বা সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তির বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে দুদকের আবেদন নিষ্পত্তির পূর্ণাঙ্গ রায়ে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এক রায়ে এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। ১৮ পৃষ্ঠার রায়টি বুধবার প্রকাশ করা হয়েছে।
আপিল বিভাগ রায়ে বলেন, ৩৬ অনুচ্ছেদে যে স্বাধীনতা দেয়া আছে তার মূল উদ্দেশ্য সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা করা। তাই ফৌজদারি অপরাধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে, পাসপোর্ট জব্দ ও বিদেশ যাত্রা আটকানো যাবে। তারপরও যদি কেউ আইনকে পাশ কাটিয়ে বিদেশ যাত্রার চেষ্টা করে, তাহলে আটকানোর পর, তিন কার্যদিবসের মধ্যে আদালতকে জানাতে হবে। কিন্তু, ফৌজদারি অপরাধে কারও নাম এলেই তার বিদেশযাত্রা রোধ করা যাবে না।
আরও পড়ুন: সপ্তাহে ৩ দিন চলবে ভার্চুয়াল আপিল বিভাগ
এর আগে ২৬ সেপ্টেম্বর সুনির্দিষ্ট বিধি বা আইন প্রণয়ন না করা পর্যন্ত দুর্নীতি মামলার আসামি বা সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তির বিদেশ যাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হলে আদালতের অনুমতি নিতে হবে মর্মে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে দুদকের আবেদন পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করেন আপিল বিভাগ। দেশ ত্যাগে দুদকের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে পৃথক পাঁচটি রিটে হাইকোর্ট তিনটি রায় ও দুটি আদেশ দেন। ওইসব আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন।
এ পাঁচ রিটের মধ্যে একটি হলো, নরসিংদীর আতাউর রহমানের মামলা। বিদেশ যেতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে নরসিংদীর আতাউর রহমান ওরফে সুইডেন আতাউর রহমানের করা এক রিট আবেদনে জারি করা রুলের ওপর ১৬ মার্চ রায় দেন হাইকোর্ট।
দুদকের দেয়া নিষেধাজ্ঞার চিঠি অবৈধ ঘোষণা করে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ অভিমতে বলেন, সুনির্দিষ্ট বিধি বা আইন প্রণয়ন না করা পর্যন্ত দুর্নীতি মামলার আসামি বা সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তির বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার বিষয়ে দুদক নয়, সিদ্ধান্ত নেবেন বিশেষ জজ আদালত। হাইকোর্ট রায়ে বলেছিলেন, বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার বিষয়ে দুদকের সুনির্দিষ্ট আইন বা বিধি নেই। এ কারণে বিষয়টি নিয়ে দ্রুত সুনির্দিষ্ট আইন বা বিধিমালা করা প্রয়োজন। তাই আশা করছি, এ বিষয়ে দুদক বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আইন বা বিধি করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
আরও পড়ুন: যাবজ্জীবন মানে ৩০ বছর সাজা: আপিল বিভাগ
আপিল বিভাগের নতুন দুই বিচারপতির শপথ গ্রহণ
বগুড়ার মেয়র জাহাঙ্গীরের বরখাস্তের আদেশ অবৈধ: আপিল বিভাগ
বগুড়ার দুপচাঁচিয়া পৌরসভার মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বরখাস্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।
বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন রুহুল কুদ্দস কাজল। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাসান চৌধুরী।
এ আদেশের ফলে জাহাঙ্গীর আলমের বগুড়ার দুপচাঁচিয়া পৌরসভার দায়িত্ব পালনে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী কাজল।
আরও পড়ুন: মানসম্মত মোবাইল সেবা নিশ্চিতে পদক্ষেপ জানানোর নির্দেশ হাইকোর্টের
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২৭ অক্টোবর স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পৌর-১ শাখার উপ-সচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বরখাস্তের কথা জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, বগুড়ার দুপচাঁচিয়া পৌরসভার মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে দুপচাঁচিয়া থানার মামলা নম্বর-১৭০৭,তারিখ ২৩১০২০০৭,জিআর-৬০৭ (দুদক), স্পেশাল মামলা নম্বর ৪০৮ এর অভিযোগপত্র এবং দুপচাঁচিয়া থানার মামলা নম্বর ১০, তারিখ ০৮০৯২০১৭ ধারা ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধ আইনের ৬(২) এর (ঈ)১২, জিআর ১৫৯১৭ (দুপ) এর অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হয়েছে। এ কারণে জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
বরখাস্তের এ আদেশের বিরুদ্ধে গত বছর নভেম্বরে তিনি হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট তার আবেদনের শুনানি নিয়ে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেন। এরপর হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করলে আপিল বিভাগ বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন।
আরও পড়ুন: হাওলাদারকে দেয়া দুদকের নোটিশ কেন বেআইনি নয়: হাইকোর্ট
দেশের সব নদীর তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
শীর্ষ জঙ্গি সালেহীনের ফাঁসি বহাল
২০০৪ সালে জামালপুরে গণি গোমেজ হত্যা মামলার শীর্ষ জঙ্গি সদস্য সালাউদ্দিন সালেহীনের ফাঁসি বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। এই মামলার অপর আসামি জঙ্গি রাকিব মারা যাওয়ায় তার আপিল অকার্যকর ঘোষণা করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতির বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।
মামলার শুনাতিতে আপিল বিভাগ বলেন, কোনো পলাতক আসামি আইনের আশ্রয় পেতে পারে না।
আরও পড়ুন: রিজেন্সির কবির-ফাহিমের জামিন বিষয়ে আদালতের ব্যাখ্যা তলব
এর আগে কারাগারে থাকা অবস্থায় প্রচলিত বিচার ব্যবস্থা অস্বীকার করে ২০০৬ সালে সুপ্রিম কোর্টে চিঠি পাঠিয়েছিলেন জঙ্গি সালেহীন। পরে ২০১৫ সালে টাঙ্গাইলে অন্য মামলায় হাজিরা দিতে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে ত্রিশালে প্রিজনভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়। তখন থেকে তিনি পলাতক।
২০০৪ সালে জামালপুরের গণি গোমেজকে হত্যা করেন জেএমবির জঙ্গিরা। ওই মামলায় ২০০৬ সালে সালেহীন ও রাকিবকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই বছরই ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল- ১ তাদের মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে ফাঁসি বহাল রাখেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন জঙ্গিরা।
আরও পড়ুন: পরিবেশের ডিজিসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল
পরীমণির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আমলে নিয়েছেন আদালত
বিচারিক ক্ষমতা হারালেন কামরুন্নাহার
রাজধানীর রেইনট্রি হোটেলের আলোচিত ধর্ষণ মামলায় বিতর্কিত পর্যবেক্ষণ দেয়ার অভিযোগে বিচারক (জেলা জজ) মোছা. কামরুন্নাহারের ফৌজদারী বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর আগে তাকে বিচারিক দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল।
ধর্ষণের একটি মামলার এক আসামির জামিন আপিল বিভাগের আদেশে স্থগিত থাকার পরও জামিন দেন কামরুন্নাহার। এ ব্যাপারেই ব্যাখ্যা দিতে সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাচঁ সদস্যের আপিল বিভাগে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সাবেক এই বিচারক হাজির হন। এ সময় আপিল বিভাগ এই সিদ্ধান্ত দেন।
এর আগে গত ১১ নভেম্বর বনানী রেইনট্রি হোটেল ধর্ষণ মামলায় ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর তৎকালীন বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার ৫ আসামিকে খালাস দেন। রায়ে বিচারক ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টা পর মামলা গ্রহণ না করার জন্য পুলিশকে সুপারিশ করেন। এ সুপারিশের তীব্র সমালোচনা করেন আইন বিশেষজ্ঞ ও অধিকারকর্মীরা। তারা বলেছেন, এ রায় আইন ও বিচারের পরিপন্থী এবং ধর্ষকদের অপরাধ করতে উৎসাহিত করবে।
এ ঘটনার পর গত ১৪ নভেম্বর তাকে বিচারিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেন প্রধান বিচারপতি।
আরও পড়ুন: বিচারক কামরুন্নাহারের বক্তব্য বিব্রতকর: আইনমন্ত্রী
রেইনট্রি ধর্ষণ মামলায় বিচারকের পর্যবেক্ষণ নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়াবে
ক্যাসিনোকাণ্ড: চার মামলায় জয় গোপাল সরকারের জামিন বাতিল
ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে করা চার মামলায় ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জয় গোপাল সরকারকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে মামলাগুলো এক বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেন।
আপিল বিভাগ তার জামিন বাতিল আবেদনের শুনানিকালে বলেন, ‘অর্থ পাচারকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই’। একইসঙ্গে ‘এ ধরনের অপরাধ বেড়েই চলেছে’ বলেও মন্তব্য করেন আদালত।
আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। অন্যদিকে জয় গোপালের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকির। পরে খুরশিদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, অর্থপাচার মামলা নিয়ে আপিল বিভাগ একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। আদালত বলেছেন, বর্তমান অবস্থায় অর্থপাচার একটি বিশেষ ধরনের অপরাধ। এ অপরাধে দায়ের করা মামলা হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। সর্বোচ্চ আদালতের এ পর্যবেক্ষণ অর্থপাচার মামলার অন্যান্য আসামিদের জামিন শুনানির সময় আমরা হাইকোর্টে উপস্থাপন করব। ডিএজি আমিন উদ্দিন মানিক জানান, জয়গোপাল সরকারের চার মামলায় চেম্বার জজের স্টে অর্ডার আপিল বিভাগ বহাল রেখেছেন। ফলে তাকে জেলেই থাকতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ক্যাসিনো ব্যবসায়ী সেলিমের বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট অনুমোদন
এর আগে গত ১৮ আগস্ট জয় গোপাল সরকারকে পৃথক চার মামলায় জামিন দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। পরে জামিনাদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ যার ওপর শুনানি শেষে গতকাল আদেশ দেয়া হয়।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর গেন্ডারিয়ায় এনু-রুপনের বাড়িতে অভিযান চালায় র্যাব। তাদের বাসায় টয়লেটে স্বর্ণের কমোড পাওয়া যায়। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার জব্দ করা হয়। এরপর ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের কর্মচারী আবুল কালাম ও এনুর বন্ধু হারুন অর রশিদের বাসায় অভিযান চালানো হয়। ওই অভিযানে পাঁচ কোটি পাঁচ লাখ টাকা, ৮ কেজি স্বর্ণালঙ্কার ও ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করে র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি এনু ও রুপনকে গ্রেপ্তারের পর তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাদের জবানবন্দিতে জয় গোপাল সরকারের নাম উঠে আসায় তাকে গতবছরের ১৪ জুলাই গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাকে ২০১৯ সালে গেন্ডারিয়া, সূত্রাপুর ও ওয়ারী থানায় করা পৃথক চার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গেন্ডারিয়া থানায় ২০১৯ সালের ২৫ মে একটি, সূত্রাপুর থানায় ২৬ সেপ্টেম্বর দুটি এবং ওয়ারী থানায় ২৫ সেপ্টেম্বর একটি মামলা করা হয়। গত বছরের ২২ জুলাই এসব মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করে সিআইডি। গেন্ডারিয়া থানার মামলায় ১৬ জন, সূত্রাপুরের দুটি মামলায় ১৫ ও ১০ জন করে এবং ওয়ারী থানার মামলায় ১১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মামলার অভিযোগে বলা হয়, জয় গোপাল ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের একজন ফুটবলার ছিলেন। অবসরে গিয়ে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, পরে ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালে ক্লাবটির সাধারণ সম্পাদক হয়ে এনু-রুপনের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন এবং ক্লাবে ক্যাসিনো পরিচালনায় প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেন।
আরও পড়ুন:ক্যাসিনো ‘মাফিয়া’ এনু-রুপনের জামিন আবেদন খারিজ
আজীজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বাসায় বিপুল পরিমাণ মদ ও ক্যাসিনোর সরঞ্জাম
পার্থ গোপাল বণিকের জামিন বাতিলের আদেশ আপিল বিভাগে বহাল
রাজধানীর নর্থ রোডের ফ্ল্যাট থেকে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধারের মামলায় বরখাস্ত কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি-প্রিজনস) পার্থ গোপাল বণিকের জামিন বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা পার্থ গোপালের আবেদন রবিবার (৩১ অক্টোবর) খারিজ করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ।
আদালতে পার্থ গোপালের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
পরে খুরশীদ আলম খান জানান, আপিল বিভাগ পার্থ গোপাল বণিকের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। অর্থাৎ হাইকোর্ট জামিন বাতিল করে যে রায় দিয়েছিলেন সে রায় বহাল রয়েছে।
আরও পড়ুন: বগুড়ার সেই তুফান সরকারের জামিন আপিল বিভাগেও খারিজ
গত ১৭ জুন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ইকবাল হোসেনের ভার্চুয়াল আদালত পার্থ গোপাল বণিকের জামিন মঞ্জুর করেছিলেন। এরপর তিনি কারামুক্ত হন।
পরে এ বিষয়ে সংবাদ প্রচার করে চ্যানেল ২৪। ওই জামিনের বিরুদ্ধে পরে উচ্চ আদালতে আপিল করে দুদক। গত ২৮ জুন পার্থ গোপাল বণিকের জামিন বাতিল চেয়ে দুদকের করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট।
পরে ২ সেপ্টেম্বর শুনানি শেষে রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে দুদকের আপিল মঞ্জুর করে পার্থ গোপাল বণিকের জামিন বাতিল করে দেন আদালত। একই সাথে ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ থেকে মামলাটি বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এ পাঠিয়েছেন। আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করতে বলেছেন। এছাড়া মামলার প্রত্যেক রায় ও আদেশ উন্মুক্ত আদালতে দিতে বলেছেন। আর ভবিষ্যতের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ইকবাল হোসেনকে সতর্ক করেন।
পরে ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলমের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন পার্থ গোপাল বণিক। আদালতে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এরপর পার্থ গোপাল বণিক হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন। যেটি রোববার খারিজ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: সপ্তাহে ৩ দিন চলবে ভার্চুয়াল আপিল বিভাগ
২০২০ সালের ২৪ আগস্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন ডিআইজি প্রিজনস পার্থের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
গত বছরের ৪ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। এরপর ১৫ ডিসেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, পার্থ গোপালের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ৮০ লাখ টাকার কোনো বৈধ উৎস তিনি দেখাতে পারেননি। অর্থাৎ তিনি সরকারি দায়িত্ব পালনকালে ৮০ লাখ টাকা বিভিন্ন অনিয়ম, ঘুষ, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে উপার্জন করে অর্থপাচারের উদ্দেশে নিজ বাসায় লুকিয়ে রেখেছেন মর্মে প্রমাণিত হয়।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, ২০১৪ সালে তিনি ৩১ হাজার ২৫০ টাকা বেতন স্কেলে কারা উপ-মহাপরিদর্শক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। তার এ বেতন স্কেলের সঙ্গে এত টাকা উপার্জন অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি তার কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে তা উত্তোলন করেননি বা তিনি কখনও এ অর্থ আয়কর বিবরণীতেও প্রদর্শন করেননি। যা দণ্ডবিধির ১৬১ ধারা, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
আরও পড়ুন: অভিযুক্ত জঙ্গির স্ত্রী প্রিয়তির জামিন আপিল বিভাগে বাতিল
২০১৯ সালের ২৮ জুলাই বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পার্থ গোপাল বণিকের বাসায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ৮০ লাখ টাকা জব্দ করা হয় এবং তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসা হয়।
পরে দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ দুদকের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধান দলের নেতা মো. সালাউদ্দিন বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
পরে ২০১৯ সালের ৩০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে পার্থ গোপাল বণিককে গ্রেপ্তারের দিন থেকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেন।
যাবজ্জীবন মানে ৩০ বছরের কারাদণ্ড: পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ
স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কারাবাস-একথা উল্লেখ না থাকলে যাবজ্জীবন সাজা অর্থ ৩০ বছরের কারাদণ্ড, এই ব্যাখ্যা দিয়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) ১২০ পৃষ্ঠার এই রায় সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে এ রায় দেয়া হয়েছে। রায়ে প্রধান বিচারপতিসহ ছয়জন বিচারপতি যাবজ্জীবন করাদণ্ড অর্থ ৩০ বছরের কারাদণ্ডের পক্ষে একমত হয়েছেন। তাদের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী।
বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেছেন, যাবজ্জীবন সাজা অর্থ আমৃত্যু কারাদণ্ড। রায়ে বলা হয়েছে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বলতে প্রাথমিকভাবে বাকি জীবন অর্থাৎ স্বাভাবিকভাবে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কারাবাস। তবে দণ্ডবিধির ৪৫, ৫৩, ৫৫ ও ৫৭ ধারা এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫ক ধারা একসঙ্গে মিলিয়ে পড়লে এটা স্পষ্ট যে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অর্থ ৩০ বছর কারাদণ্ড।
রায়ে বলা হয়েছে, যদি কোনো আদালত বা ট্রাইব্যুনাল বা ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তার রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অর্থ স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কারাবাস উল্লেখ করে তবে সেক্ষেত্রে সাজাপ্রাপ্ত আসামি ৩৫ক ধারার রেয়াদের সুবিধা পাবেন না।
আরও পড়ুন: শিশু থাকবে মায়ের কাছে, দেখা করতে পারবেন বাবা: হাইকোর্ট
রায়ের পর আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির জানান, এই রায়ের ফলে যারা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হবেন অর্থাৎ যাদের সাজা ৩০ বছর হবে তারা ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫(এ) ধারা এবং কারাবিধি অনুযায়ী রেয়াদ সুবিধাও ভোগ করবেন। যে আসামির মামলা কেন্দ্র করে এ রায় দেয়া হয়েছে, সেই আতাউর রহমানের রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি করে তার আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন আদালত।
এ মামলায় আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম (পরে এ এম আমিন উদ্দিন) ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।
শুনানিকালে আপিল বিভাগ উভয়পক্ষের আইনজীবী ছাড়াও অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের জেষ্ঠ্য চার আইনজীবী সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এএফ হাসান আরিফ, ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট আবদুর রেজাক খান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও সমিতির সভাপতি হিসেবে (বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল) অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিনের যুক্তি শোনেন।
পড়ুন: হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্প এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ: হাইকোর্ট
তালাকনামায় আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট
২০০১ সালে সাভারে জামানকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ২০০৩ সালে তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। হাইকোর্ট এই সাজা বহাল রাখেন। তবে আপিল বিভাগ ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আসামিদের মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। পূর্ণাঙ্গ রায় ২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল প্রকাশিত হয়।
রায়ে বলা হয়, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অর্থ আমৃত্যু কারাদণ্ড। এ অবস্থায় আতাউর রহমানসহ আসামিরা রিভিউ আবেদন করেন। এ রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গতবছর ১ ডিসেম্বর সংক্ষিপ্ত রায় দেন আপিল বিভাগ। এরপর আজ (১৫ জুলাই) বৃহস্পতিবার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হলো।
লকডাউন: সারাদেশে আদালতে স্বাভাবিক বিচার কাজ বন্ধ থাকবে
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ৭ জুলাই পর্যন্ত সরকার সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করায় সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সকল আদালতে স্বাভাবিক বিচার কাজ বন্ধ থাকবে। তবে জরুরি মামলা নিষ্পত্তির জন্য পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি, হাইকোর্ট বিভাগের তিনটি একক বেঞ্চ এবং সারা দেশে সকল জেলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট, মহানগর এলাকায় চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।
এই সময়ে আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থল ত্যাগ না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বুধবার এসব বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবরের স্বাক্ষরে পৃথক পৃথক বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বৃহস্পতিবার থেকে আবারও প্রথম ডোজের টিকা দেয়া শুরু
আপিল বিভাগ বসবেন ৬ ও ৭ জুলাই
লকডাউনের মধ্যেই আপিল বিভাগের বিচারপতিরা আগামী ৬ ও ৭ জুলাই নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করে ভার্চুয়ালি আদালত চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওই দুদিন ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের জেল আপিল মামলা শুনানি করা হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের মামলার নথি নিজ নিজ বাসায় নিয়ে রাখতে বলা হয়েছে। আইনজীবীদেরও বাসায় অবস্থান করে মামলায় শুনানি করতে বলা হয়েছে। আর এ জন্য আপিল বিভাগের দুজন কর্মকর্তাকেও বাসায় বসে আদালতে যুক্ত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তবে চেম্বার আদালতে শুনানি সংক্রান্ত বিষয়ে আইনজীবীদের সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্টার এবং সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
হাইকোর্টের তিনটি বেঞ্চ বসবে
লকডাউনের কারণে স্বাভাবিক বিচার কাজ বন্ধ হলেও জরুরি বিষয় শুনানির জন্য ১ জুলাই থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চ বসবেন। এই তিনটি বেঞ্চের এখতিয়ারও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের বেঞ্চে অতি জরুরি সকল রিট মোশন, দেওয়ানী মোশন ও তৎসংক্রান্ত আবেদনপত্র; বিচারপতি জে বি এম হাসানের বেঞ্চে অতি জরুরী সকল ফৌজদারি মোশন ও তৎসংক্রান্ত আবেদনপত্র এবং বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চে অ্যাডমিরালটি, বিবাহবিচ্ছেদ, সাকসেশন, আদিম অধিক্ষেত্র, ব্যাংকিং আইন, কম্পানি আইনসহ অর্থসংক্রান্ত যাবতীয় আবেদনপত্র শুনানি হবে। তবে সব শুনানিই ভার্চুয়ালি হবে।
আরও পড়ুন: মার্চের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষ টিকা পাবে: সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রী
ম্যাজিস্ট্রেট আদালত খোলা
সব আদালতে স্বাভাবিক বিচার কাজ বন্ধ থাকলেও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় সকল জেলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট, মহানগর এলাকায় চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। তবে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগে এক বা একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।
চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত মামলার ক্ষেত্রে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘দি নেগোশিয়েবল ইন্সট্রমেন্টস অ্যাক্টস,১৮৮১ সহ যে সকল আইনে মামলা/আপিল দায়েরের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারিত আছে, সে সকল আইনের অধীনে মামলা/আপীল শারীরিক উপস্থিতিতে আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার ৭ দিনের মধ্যে তামাদির মেয়াদ অক্ষুন্ন গণ্যে দায়ের করা যাবে।’
আরও পড়ুন: করোনায় রেকর্ড শনাক্তের দিনে ১১৫ জনের মৃত্যু
বিজ্ঞপ্তিতে এই সময়ে বিচারক ও আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের কর্মস্থল ত্যাগ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের এ সময়ে আদালত অঙ্গনে না আসার জন্য বলা হয়েছে।
শিশুকে সরাসরি আদালতে হাজির
সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশুকে শারীরিক উপস্থিতিতে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে উপস্থাপন করা যাবে।
২৫০০ রিটকারী নিবন্ধনধারীকে নিয়োগের সুপারিশের আদেশ বাতিল
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কর্তৃক ১ থেকে ১২তম নিবন্ধনধারীদের মধ্যে রিটকারী প্রায় ২ হাজার ৫০০ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করতে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ।
সোমবার এনটিআরসিএর বিরুদ্ধে জারি করা আদালত অবমাননার রুল খারিজ করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৬ বিচারপতির বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে এনটিআরসিএ’র পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার ফিদা এম কামাল। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. কামরুজ্জামান। রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান, মমতাজ উদ্দিন ফকির, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া ও ব্যারিস্টার মহিউদ্দিন হানিফ।
আরও পড়ুন: তালাকনামায় আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট
গত ৩১ মে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ১ থেকে ১২তম নিবন্ধনধারীদের মধ্যে রিটকারী ২৫০০ জনকে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চার সপ্তাহের মধ্যে নিয়োগের সুপারিশ করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ২০১৭ সালের একটি রায় অবমাননার অভিযোগ তুলে করা আদালত অবমাননার আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
পরে গত ১৩ জুন হাইকোর্টের এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ। গত ২২ জুন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদনটি শুনানির জন্য উত্থাপন করা হলে তা আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। সে অনুযায়ী সোমবার এনটিআরসিএ’র আবেদনের শুনানি নিয়ে আদেশ দেন আপিল বিভাগ।
আরও পড়ুন: ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তির বৈধতা প্রশ্নে হাইকোর্টের রুল
জানা যায়, এনটিআরসিএ’র এক থেকে ১২তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে করা পৃথক ১৬৬টি রিট আবেদনের শুনানি করে২০১৭ সালে হাইকোর্ট সাত দফা নির্দেশনা দিয়ে একটি রায় দেন। ওই রায়ে এক থেকে ১২তম নিবন্ধনধারীদের একটি জাতীয় মেধাতালিকা তৈরি করে সেই মেধা তালিকা অনুযায়ী নিয়োগের সুপারিশ করতে আদেশ দেয়া হয়। কিন্তু ওই রায় বাস্তবায়ন না হওয়ায় পরবর্তীতে ২০১৯ সালে হাইকোর্টে আদালত অবমাননার মামলা করেন রিটকারীরা। সে প্রেক্ষিতে এনটিআরসিএ’র বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করে হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন: ডিএজি ও এএজি নিয়োগের বৈধতা প্রশ্নের রুল শুনানিতে বিব্রত হাইকোর্ট
সর্বশেষ গত ৩০ মার্চ এনটিআরসিএ বেসরকারি স্কুল কলেজ ও মাদরাসায় প্রায় ৫৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগের জন্য তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। এ অবস্থায় হাইকোর্টে আদালত অবমাননার আবেদন শুনানির জন্য উঠলে গত ৬ মে ১ থেকে ১২তম নিবন্ধনধারীদের মধ্যে রিটকারীদের এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৭ দিনের মধ্যে নিয়োগের সুপারিশ করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ৫৪ হাজার নিবন্ধনধারীকে নিয়োগের জন্য জারি করা গণবিজ্ঞপ্তি এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন। পরে ৩১ মে হাইকোর্ট রিটকারী প্রায় আড়াই হাজার জনকে চার সপ্তাহের মধ্যে নিয়োগের সুপারিশ করতে আদেশ দিয়ে গণবিজ্ঞপ্তির ওপর স্থগিতাদেশ তুলে নেন। হাইকোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে এনটিআরসিএ গত ১৩ জুন আপিল বিভাগে আবেদন করেন, যার ওপর সোমবার আদেশ দেন আপিল বিভাগ।