গণপরিবহন
স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আবারও কঠোর লকডাউন আসতে পারে: কাদের
আবারও সারাদেশে কঠোর লকডাউন দেয়া হতে পারে বলে জনগণকে সতর্ক করলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গণপরিবহনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি না মানা হলে পরিস্থিতি বিবেচনায় পুনরায় লকডাউন দেয়ার কথা জানান মন্ত্রী।
রবিবার নিজ বাসভবনে নিয়মিত অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আরও পড়ুন: লকডাউনেই খুলেছে বিপণীবিতানের দরজা, সড়কে চাপ
মন্ত্রী বলেন, ‘লকডাউনের পর যখন গণপরিবহন চালু করা হবে, তখন দেশের সকল নাগরিককেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।’
এর আগে শনিবার (২৪ এপ্রিল) লকডাউন শেষে গণপরিবহন চালু করার কথা জানিয়েছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: লকডাউন: ঢাকার রাস্তায় প্রাইভেট কারের চলাচল বৃদ্ধি
সামনে ঈদ ও জনগণের চাহিদা বিবেচনায় সরকার লকডাউন শেষ হওয়ার পর পরিপূর্ণভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে গণপরিবহন পুনরায় চালু করার কথা চিন্তা করছে।
লকডাউন শেষ হওয়ার পরও জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে এবং মাস্ক ব্যবহার করার জন্য সাধারণ জনগণের প্রতি আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের।
আরও পড়ুন: ২৮ এপ্রিলের পর লকডাউন শিথিল করতে পারে সরকার
এদিকে গত ৩১ মার্চ থেকে গণপরিবহন, এমনকি আন্তজেলার বাসের ভাড়াও ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করে সরকার। করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বাসে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন নিশ্চিত করতে ভাড়া বৃদ্ধি করে সরকার।
সরকার গণপরিবহন চালুর চিন্তা ভাবনা করছে: কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শনিবার বলেছেন, চলমান লকডাউনের পরে জনস্বার্থ বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে শর্তসাপেক্ষে সরকার গণপরিবহন চালুর সক্রিয় চিন্তা ভাবনা করছে।
তিনি লকডাউন শিথিল হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘মাস্ক,হ্যান্ড সেনিটাইজার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে।’
সকালে বরিশাল সড়ক জোন, বিআরটিসি ও বিআরটিএ'র কর্মকর্তাদের সাথে ভার্চুয়ালি মতবিনিময় সভায় যুক্ত হয়ে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, গণপরিবহনে অর্ধেক আসন খালি রেখে যে ভাড়া নির্ধারণ ছিল, সেই ভাড়ার অতিরিক্ত নিলে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।
এর আগে শুক্রবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে জানায়, রবিবার থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শপিংমল ও দোকানপাট খোলা রাখা যাবে।
করোনা মহামারিরোধে দেশব্যাপী চলছে সরকার ঘোষিত লকডাউন। এই লকডাউন শেষ হবে আগামী ২৮ এপ্রিল। এরপর লকডাউন শিথিল করা হবে কিনা সে বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে শুক্রবার জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
গণপরিবহন চালুর দাবিতে চট্টগ্রামে মানববন্ধন
চলমান লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চালু করার দাবিতে চট্টগ্রামে মানববন্ধন পালন করেছে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে এই দাবি জানান ফেডারেশনের নেতা-কর্মীরা।
মানববন্ধনে পরিবহন নেতারা বলেন, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। লকডাউনের মধ্যেও পরিবহন শ্রমিকরা কোনও ধরনের সহায়তা পায়নি। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের পরিবারের কথা বিবেচনায় নিয়ে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চালু করা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: কেরানীগঞ্জে সাবরেজিস্ট্রার অফিস সহকারীর বদলির দাবিতে মানববন্ধন
তারা আগামী ২৮ এপ্রিলের (বুধবার) পর গণপরিবহন পুরোপুরি চালু করারও দাবি জানান। গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূর্বের ন্যায় দুই সিটে একজন করে বসিয়ে যাত্রী পরিবহন করা হবে বলেও জানান তারা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক অলি আহমদ বলেন, ‘লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা আর্থিক কষ্টে দিন পার করছে। আমাদের দাবি অবিলম্বে স্বাস্থ্য বিধি মেনে সীমিত পরিসরে গণপরিবহণ চালু করা হোক।’
এ সময় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের সভাপতি মৃণাল চৌধুরী, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি মো. মূছা, কার্যনির্বাহী সদস্য রকিবুল মাওলা, ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ইউনিয়নের প্রচার সম্পাদক আব্দুর সবুর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে জমিদার বাড়ি সংরক্ষণ ও পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণার দাবিতে মানববন্ধন
লকডাউন: সাভারে টিলেঢালাভাবে চলছে প্রথম দিন
রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারে টিলেঢালাভাবে চলছে সরকারের কঠোর লকডাউনের প্রথম দিন। গণপরিবহন ব্যতিত রিকশা অটোরিকশা, কাভার্ড ভ্যান, প্রাইভেটকার হরহামেশা চলছে।
ভোর থেকেই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশের চেক পোস্ট থাকলেও মহাসড়কে প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যা কমতি ছিল না। ঊর্ধ্বগতিতে ছুটে চলছে যানবাহন। বিভিন্ন স্থানে মানুষকে অটোরিকশা বা পায়ে হেটে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে।
আরও পড়ুন: লকডাউন: স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সকল প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার নির্দেশ
লকডাউনের বিধি নিষেধ পালনে মাঠে রয়েছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ।
আরও পড়ুন: লকডাউনে ৮টি বিশেষ পার্সেল ট্রেন চলবে: রেলপথ মন্ত্রী
এদিকে এ উপজেলায় আজ কিছু গার্মেন্টস খোলা থাকলেও অনেক গার্মেন্টস বন্ধ রয়েছে। কিছু দোকানপাট খোলা থাকলেও আবার অনেক দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ জানান, লকডাউন মানতে যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রয়োজনে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন: ১৪ এপ্রিল থেকে দেশে সর্বাত্মক লকডাউন শুরু; প্রজ্ঞাপন জারি
উপজেলার কোথাও পহেলা বৈশাখ পালন করতে দেখা যায়নি।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাইট শেয়ারিং সার্ভিস চালুর দাবি যাত্রী কল্যাণ সমিতি’র
চালকের মতো যাত্রীর মাথায় মানসম্মত হেলমেট নিশ্চিত করে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ সাপেক্ষে রাইট শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেল চালুর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই দাবি জানান।
তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে যানজট, গণপরিবহন সংকট, পরিবহনে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, ভাড়া নৈরাজ্য ও যাত্রী সেবারমান তলানীতে পৌঁছানোর কারণে সময়ের চাহিদার প্রেক্ষিতে মোটরসাইকেলে রাইট শেয়ারিং চালু হলেও বর্তমানে প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষের জীবন-জীবিকার একমাত্র উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে এটি। এছাড়াও প্রায় ১২ লাখ বাইকার রাইট শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে স্বাভাবিক সময়ে সারাদেশে দৈনিক প্রায় ৫০ লক্ষ ট্রিপ যাত্রী পরিবহন করছে।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, যানজট, গণপরিবহন সংকটসহ নানা কারণে জরুরি যাতায়াতের প্রয়োজনে যাত্রীদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠা এই বাহনটি করোনা সংকটে বন্ধ করে দেয়ায় জরুরি যাতায়াতের যাত্রীরা বিপাকে পড়েছে। অন্যান্য গণপরিবহনের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম ঝুকিঁপূর্ণ হলেও সরকারের অদুরদর্শী সিদ্বান্তে এটি বন্ধ থাকায় যাত্রীদের পাশাপাশি এই পেশায় নিয়োজিত চালকেরা নিধারুণ অর্থ সংকটে পড়েছে।
আরও পড়ুন: গণপরিবহনে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের দাবি যাত্রী কল্যাণ সমিতি’র
গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানানো কঠিন হলেও মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে এটি মানানো অনেক সহজতর। তাই জরুরি ভিত্তিতে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ সাপেক্ষে রাইট শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেল চালু করার দাবি জানান মোজাম্মেল হক।
গণপরিবহন চালু হওয়ায় ঢাকার রাস্তায় যানজট, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির অবনতি
দেশব্যাপী সাত দিনের লকডাউনের তৃতীয় দিন বুধবার গণপরিবহন পুনরায় চালু হওয়ায় ঢাকার রাস্তায় যানজট দেখা গেছে।
যাত্রীদের দুর্ভোগের কারণে সরকার প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, রংপুর ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়।
আরও পড়ুন: লকডাউনের তৃতীয় দিন: আন্তনগর বাস চলছে
এই শিথিলতা গণপরিবহনের অভাবে গত দু'দিন ধরে ভোগান্তিতে থাকা যাত্রী, বিক্রেতা, ব্যবসায়ী ও খুচরা বিক্রেতাদের জন্য এক ধরণের স্বস্তি এনেছে।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী শফিকুল ইসলাম বলেন, 'এটিই ভালো! এর ফলে আমরা সহজেই চলাচল করতে পারছি। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এখনও একটি সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে। লোকজন এখনও তা মানছে না।'
তবে, তিনি বলেন, গণপরিবহন আবার চালু হওয়ার সাথে সাথে ঢাকায় যানবাহনের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম হলেও আগের ট্র্যাফিক বিশৃঙ্খলা ও শব্দদূষণ ফিরে এসেছে।
রাস্তায় গণপরিবহন তুলনামূলকভাবে কম হলেও মগবাজার, বনানী ও গুলিস্তান এলাকায় যানজট দেখা যায়।
আরও পড়ুন: লকডাউনে সিটি এলাকায় সকাল সন্ধ্যা গণপরিবহন চলবে
যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক উত্তর) আবু সালেহ শেখ রাসেল বলেন, 'আন্তঃনগর বাস বুধবার সকালে পুনরায় কার্যক্রম শুরু করে তবে বাসের সংখ্যা কম। যাত্রী কম থাকায় মালিকরা খুব সীমিত সংখ্যক বাস বের করেছেন।'
ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (মহাখালী) আসাদুজ্জামান বলেন, 'নগরীতে সীমিত সংখ্যক যাত্রী নিয়ে সকাল থেকেই বাস চলাচল করছে। সরকার রাইড শেয়ারিং সার্ভিস বন্ধ করায় এখনও যারা এই সার্ভিস দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করছি।'
তিনি বলেন, 'লোকজন স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করছে কিনা তাও আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।'
ইউএনবির সাথে আলাপকালে আলিফ পরিবহনের ব্যবস্থাপক আশরাফুজ্জামান বলেন, 'আমরা স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে ৬০ শতাংশ বাস চালাচ্ছি। অন্যসময়, চারটি রুটে ২০০টি বাস চলাচল করে। যাত্রী সংখ্যা কম থাকায় এবং দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় আমরা এখন ৬০ শতাংশ বাস রাস্তায় নামিয়েছি।'
আরও পড়ুন: জনগণের উদাসীনতার মাঝেই দেশে লকডাউনের ২য় দিন শুরু
তবে বাস সার্ভিস পুনরায় চালু করায় রাজধানীর অফিসগামী যাত্রী ও অন্যান্য যাত্রীদের দুর্ভোগ স্পষ্টতই হ্রাস পেয়েছে।
বুধবার কোভিড-১৯ এ আক্রান্তের সংখ্যা নতুন করে বাড়লেও স্বাস্থ্যবিধি ও লকডাউন মেনে চলার ক্ষেত্রে জনগণের অনীহা দেখা গেছে।
ইউএনবি সংবাদদাতা মালিবাগ এলাকায় রেললাইনের পাশে কাঁচাবাজারে সাধারণ মানুষের ভিড় দেখেন যেন ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
এই কাঁচাবাজারে সবজি বিক্রেতা সজল বলেন, 'আজ অনেক ক্রেতা আসায় ব্যবসা আবার আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে।'
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হওয়ায় কঠোরভাবে লকডাউন কার্যকর না করা হলে করোনভাইরাসের সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে।
বেশিরভাগ হাসপাতাল রোগীতে পরিপূর্ণ থাকায় অনেক রোগী ভর্তি হতে বা অক্সিজেনের জন্য এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে যেতে থাকেন।
আরও পড়ুন: দেশব্যাপী চলমান লকডাউনকে 'অবৈজ্ঞানিক ও আংশিক' মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা
প্রাইভেটকার, রিকশা ও অটোরিকশা, মাইক্রোবাস এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং অনেক রাইড শেয়ারিং সার্ভিস আগের দু'দিনের মতো রাস্তায় চলাচল করতে দেখা গেছে।
সরকারি নির্দেশনা অনুসারে শহর জুড়ে শপিংমল বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট দোকান খোলা দেখা গেছে।
দেশের করোনা পরিস্থিতি
বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ৭ হাজার ৬২৬ জনের শরীরে নতুন করে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছয় লাখ ৫৯ হাজার ২৭৮ জনে পৌঁছেছে।
এছাড়া সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় এই ভাইরাসে আরও ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯ হাজার ৪৪৭ জনে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: কোভিড-১৯: দেশে শনাক্তে নতুন রেকর্ড, মৃত্যু আরও ৬৩
২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২২.০২ শতাংশ। মোট পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
এদিকে, ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন আরও ৩ হাজার ২৫৬ জন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৬১ হাজার ৬৩৯ জনে। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৫ দশমিক ১৯ শতাংশ।
লকডাউনের তৃতীয় দিন: আন্তনগর বাস চলছে
দেশব্যাপী চলমান লকডাউনের তৃতীয় দিন বুধবার আন্তনগর বাস চলাচল করছে। তবে যাত্রী সংখ্যা কম হওয়ার কারণে বাসের সংখ্যাও কম ছিল।
বুধবার থেকে সরকার সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দিয়েছে। এর আগে সোমবার থেকে সাত দিন ব্যাপী সারা দেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়।
আরও পড়ুন: দেশব্যাপী চলমান লকডাউনকে 'অবৈজ্ঞানিক ও আংশিক' মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা
যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক উত্তর) আবু সালেহ শেখ রাসেল বলেছেন, ‘আন্তনগর বাস বুধবার সকাল থেকে আবারও কার্যক্রম শুরু করে তবে বাসের সংখ্যা খুবই কম। যাত্রীর সংখ্যা কম ছিল তাই বাস মালিকরা খুব কম বাস বের করতে বাধ্য হয়েছে।’
ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (মহাখালী) আসাদুজ্জামান বলেছেন, ‘সকাল থেকে সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকায় বাস চলাচল করছে তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় বাস ও যাত্রী সংখ্যা খুব কম। সরকার রাইড শেয়ারিং সেবা স্থগিত করায়, যারা রাইড শেয়ারিং সেবা নিয়ে চলাফেরা করছে আমরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করছি।’
আরও পড়ুন: জনগণের উদাসীনতার মাঝেই দেশে লকডাউনের ২য় দিন শুরু
তিনি বলেন, ‘পাশাপাশি জনগণ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করছে কি না বা মাস্ক পরছে কি না, আমরা তাও মনিটরিং করছি।’
আলিফ পরিবহনের (অপারেশন ম্যানেজার) আশরাফুজ্জামান বলেছেন, ‘আমরা স্বাস্থ্য নির্দেশনা অনুসরণ করে ৬০ শতাংশ বাস নামিয়েছি যেখানে সাধারণত চারটি রুটে ২০০টি গাড়ি চলাচল করে। দূরপাল্লার বাসে স্থগিতাদেশ ও যাত্রী সংখ্যা কম হওয়ায় আমরা এখন ৬০ শতাংশ বাস পরিচালনা করছি।’
ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আক্তার (উত্তরা-রাজলক্ষ্মী)জানান, বুধবার সকাল থেকে কেবল আন্তনগর বাস রাস্তায় চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: কুয়াকাটায় লকডাউন প্রচারণায় হামলার শিকার ইউএনও
মঙ্গলবার সপ্তাহব্যাপী ‘ঢিলেঢালা’ লকডাউনের দ্বিতীয় দিনেও বাংলাদেশ প্রতিদিনের মতো করোনায় আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যায় নতুন রেকর্ড দেখেছে। তবুও ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা এবং অটোরিকশা পাশাপাশি মাইক্রোবাস এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং অনেক রাইড শেয়ারিং পরিষেবা স্বাভাবিকভাবে রাজধানীতে চলাচল করতে দেখা গেছে এবং জনগণ কোভিড -১৯ সংক্রমণের ঝুঁকিকে উপেক্ষা করে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী শপিংমল বন্ধ থাকলেও অনেক এলাকায় দোকানপাট খোলা দেখা গেছে।
নগরীর অনেক এলাকা ঘুরে ইউএনবি সংবাদদাতা দেখেছেন, লকডাউন সত্ত্বেও রাস্তা, গলি এবং গলির মোড়ে দোকান খোলা ছিল।
গণপরিবহন পুনরায় চালু করা
যাত্রীদের দুর্ভোগের পরিপ্রেক্ষিতে, মঙ্গলবার লকডাউন চলাকালীন সরকার সিটি কপোরেশনভুক্ত এলাকায় গণপরিবহন পুনরায় চলাচলের অনুমতি দিয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এই ঘোষণা দিয়ে বলেন, ঢাকা, চাটগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, রংপুর এবং ময়মনসিংহ সিটি কপোরেশনভুক্ত এলাকায় সকাল ৬ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গণপরিবহন চলাচল করতে পারবে তবে তাদেরকে অর্ধেক আসন খালি রাখতে হবে।
কোভিড -১৯ পরিস্থিতির অবনতি
করোনাভাইরাস সংক্রমণের চলমান ঊর্ধ্বগতি পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন। এদিন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ২১৩ জন এবং মারা গেছেন ৬৬ জন।
লকডাউনে সিটি এলাকায় সকাল-সন্ধ্যা গণপরিবহন চলবে
করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জারি করা এক সপ্তাহব্যাপী লকডাউনে বুধবার থেকে সিটি করপোরেশনের এলাকাগুলোতে পুনরায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার।
মঙ্গলবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গণপরিবহন চলাচল করতে পারবে।
আরও পড়ুন: জনগণের উদাসীনতার মাঝেই দেশে লকডাউনের ২য় দিন শুরু
মন্ত্রী বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, রংপুর ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকায় গণপরিবহন চলাচল করতে পারবে। তবে পরিবহনে অর্ধেক আসন খালি রাখতে হবে।
সরকারের পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সকল দূরপাল্লার গণপরিবহন পরিষেবা স্থগিত থাকবে।
মন্ত্রী বলেন, প্রতি ট্রিপের শুরু এবং শেষে জীবাণুনাশক দিয়ে গাড়ি জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
কাদের বলেন, পরিবহন সংশ্লিষ্ট ও যাত্রীদের বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
আরও পড়ুন: দেশব্যাপী চলমান লকডাউনকে 'অবৈজ্ঞানিক ও আংশিক' মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা
এদিকে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এই আদেশ ৭ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।
গণপরিবহনে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের দাবি যাত্রী কল্যাণ সমিতি’র
গণপরিবহনে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ, ভাড়া নৈরাজ্য ও যাত্রী দুর্ভোগ বন্ধের দাবি জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ দাবি জানান।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে গণপরিবহনে প্রথম দিনে অনিয়ম, পুলিশের নজরদারি
বিবৃতিতে তিনি বলেন, করোনা সংকটে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চালানোর জন্য বাসের ভাড়া ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হলেও এখন দেশের অধিকাংশ গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। সিটিং সার্ভিস ও শহরতলীর বাস, হিউম্যান হলার, অটো টেম্পুসমূহে বর্ধিত ভাড়া নিয়ে সেই পুরনো কায়দায় গাদাগাদি করে যাত্রী বহন করা হচ্ছে। এতে কর্মজীবী, শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের সাধারণ লোকজন, কর্মহীন ও আয় কমে যাওয়া দেশের সাধারণ মানুষের যাতায়াত দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে গণপরিবহনে কথা না বলার পরামর্শ
এছাড়াও সকল অফিস আদালত খোলা থাকায় অর্ধেক যাত্রী নিয়ে সিটিং সার্ভিসের বাসগুলো চলাচলের ফলে রাস্তায় প্রতিটি বাস স্টপেজে শত-শত যাত্রী ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় অপেক্ষা করে গণপরিবহন পাচ্ছে না। এতে নারী, শিশু, অসুস্থ রোগী ও অফিসগামী যাত্রীরা অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়ছে। হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া বাড়তি ভাড়া আদায়কে কেন্দ্র করে প্রতিটি রুটে চলাচলকারী গণপরিবহনে যাত্রী-শ্রমিক বচসা, হাতাহাতি, মারামারি চলছে।
আরও পড়ুন: গণপরিবহনের শৃঙ্খলায় বৃদ্ধি পাচ্ছে পাইলট রুটের পরিধি
বিবৃতিতে তিনি দেশে লকডাউন বা সাধারণ ছুটি ঘোষণা না করা হলে, যত সিট তত যাত্রী (বিআরটিএ নিবন্ধিত আসন অনুযায়ী) পদ্ধতিতে পূর্বের ভাড়ায় যাতায়াতের কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ পূর্বক যাত্রী পরিবহন, একই সাথে গণপরিবহণের বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার করে দেশের প্রতিটি রুটে বর্ধিত ভাড়া পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।
ফরিদপুরে গণপরিবহনে প্রথম দিনে অনিয়ম, পুলিশের নজরদারি
মহামারি করোনার দ্বিতীয় ধাপে গণপরিবহনের ওপর সরকারের জারি করা আদেশ পালন করছে না অধিকাংশ যাত্রীবাহী বাস। তবে সড়কের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ট্রাফিক পুলিশের নজরদারি রয়েছে।
বুধবার সকাল ১০টার দিকে ফরিদপুর পৌরবাস বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, গণপরিবহন চলাচলের ক্ষেত্রে সরকারি নির্ধারিত ভাড়া বেশি নিলেও যাত্রী উঠানোর ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম পালন করা হচ্ছে না। তবে কয়েকটি যাত্রীবাহী বাসে সরকারি আদেশ পালন করতে দেখা গেলও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার দেখা মেলেনি।
জেলার মধুখালী থেকে ফরিদপুরগামী এক যাত্রী অ্যাডভোকেট আব্দর রহিম বলেন, ‘যাত্রীবাহী বাসের স্টাফরা সরকারি নিদের্শনা মোতাবেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু যাত্রী কম নিচ্ছে না। এটা যদি চলতে থাকে তাহলে আইন করে কি হবে।’
একই কথা জানালেন জেলার আলফাডাঙ্গা থেকে ছেড়ে আসা লোকাল বাসের যাত্রী মহসিন হোসেন।
আরও পড়ুন: কোভিড-১৯: বাস ভাড়া বাড়াল সরকার