কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামে নৌকা বাইচ, হাজারো মানুষের ভিড়
কুড়িগ্রামে ধরলা ব্রিজ পাড়ে শুরু হয়েছে তিনদিনব্যাপী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ধরলা সেতু পাড়ে এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে নৌকা বাইচ খেলা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে এসেছে নানান বয়সী ও বিভিন্ন পেশার মানুষজন।
আরও পড়ুন: সিলেটে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত
খেলার আয়োজক কমিটি জানান, এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় জেলা ও জেলার বাইরে বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ২২টি নৌকা অংশ নেয়। তিনদিনব্যাপী এ খেলায় প্রথম পুরস্কার একটি মহিষ, দ্বিতীয় পুরস্কার গরু এবং তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে রয়েছে একটি ফ্রিজ।
নৌকাবাইচ দেখতে আসা মো. ফেরদৌস মিয়া বলেন, দীর্ঘ সাত বছর পর নৌকা খেলা দেখতে পেলাম। হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে এ খেলা দেখার মজাই আলাদা। আমি চাই প্রতি বছর এই নৌকা খেলা চালু হোক। গ্রাম বাংলার অতীত ঐতিহ্য আবার ফিরে আসুক।
আরও পড়ুন: তিতাস নদীতে নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত
কুড়িগ্রামের তিস্তার চরে গর্ভবতী নারীদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত
কুড়িগ্রামের তিস্তার চরাঞ্চলের গর্ভবতী মায়েদের বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) জেলার উলিপুর উপজেলার তিস্তার চর গোড়াইপিয়ারে দিনব্যাপী স্বাস্থ্য ক্যাম্পের আয়োজন করে বেসরকারি সংগঠন মহিদেব যুবকল্যাণ সমাজ সমিতি (এমজেএসকেএস)।
এ সময় উলিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন ডা. মরিয়ম বিনতে হাসান ৪৪ জন গর্ভবতী মায়ের ফ্রি স্বাস্থ্যসেবা দেন। তিনি সন্তানের অবস্থান ও শারীরিক সমস্যার পরামর্শ দেন।
আয়োজকরা জানান, এমফোরসি’র সহযোগিতায় এই চরে প্রথমবারের মতো কোনো এমবিএস ডাক্তার এসে স্বাস্থ্যসেবা দিলেন। এতে চরবাসী খুব খুশি। এমনিভাবে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন চরের মায়েদের এমন সেবা দেওয়া সম্ভব হলে চরবাসী উপকৃত হবে।
আরও পড়ুন: মাতৃত্বকালীন ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবার উন্নয়নে দেশের ১৭ জেলায় ইউএসএআইডির ‘মামনি প্রকল্প’
স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা গর্ভবতী মা ইসমত আরা (৩২) বলেন, এবারে আমার দ্বিতীয় সন্তান জন্ম নিবে। প্রথমবার বাচ্চা হওয়ার সময় খুব কষ্ট হয়েছিল। পরীক্ষা করার জন্য নদী পাড় হয়ে উলিপুর যাওয়া লাগতো। এখানে ডাক্তার আপা দেখলো পরামর্শ দিলো। খুব ভালো হলো। আশা করি সুস্থ্য সন্তান জন্ম নিবে আমার।
চর গয়ারপিয়ারের কুলসুম বেগম (২১) বলেন, এবার প্রথম বাচ্চা নিছি। এখন সাত মাস চলছে। ডাক্তার দেখাইতে কুড়িগ্রাম না হয় উলিপুর যাওয়া লাগে। আমরা গরীব মানুষ। ওতো দূর যাওয়াটাও খুব কষ্টের। এমন চরে নিয়মিত ডাক্তার আসলে আমাদের জন্য খুব উপকার হয়।
স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের সমন্বয়ক এমজেএসকেএস-এর কর্মকর্তা জয়ন্ত রায় জানান, চরের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার এ উদ্যোগ আমাদের চলমান রয়েছে। সরকারের এমফোরসি প্রকল্পের সহযোগিতায় আমরা তা বাস্তবায়ন করছি। আশা করছি কুড়িগ্রামের তিস্তা নদীর পাশাপাশি ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর চরাঞ্চলেও এমন কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হবে।
স্বাস্থ্যক্যাম্পে সহযোগিতা করেন কমিউনিটি প্যারামেডিক মিজানুর রহমান ও দাইমা স্বপ্না বেগম।
আয়োজনটি পরিচালনা করেন এমজেএসকেএস কর্মকর্তা জয়ন্ত রায়।
আরও পড়ুন: চবি যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ অ্যালামনাইয়ের সঙ্গে এভারকেয়ার হসপিটালের স্বাস্থ্যসেবা চুক্তি সই
কুড়িগ্রামে ডিএনএস স্যালাইন সংকট, বিপাকে রোগীরা
গত এক মাস ধরে সরবরাহে তীব্র ঘাটতির কারণে স্বল্পমেয়াদী তরল প্রতিস্থাপনের জন্য ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় ডেক্সট্রোজ এবং সোডিয়াম ক্লোরাইড (ডিএনএস) স্যালাইন পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতাল।
জেলাটিতে স্যালাইনের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
সরকারি হাসপাতালসহ বাইরের ফার্মেসিগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে না চাহিদা অনুযায়ী স্যালাইন। কিছু ফার্মেসিতে পাওয়া গেলেও ১০০ টাকা মূল্যের ডিএনএস স্যালাইন কিনতে হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। ফলে রোগীসহ স্বজনরাও পড়ছে চরম বিপাকে।
কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন শিশু বাদে হাসপাতালে দুই শতাধিক নতুন রোগী ভর্তি হন।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে চিকিৎসকের অবহেলায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ, ইন্টার্ন ও স্বজনদের সংঘর্ষে আহত ১০
২৫০ শয্যার এই হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন চার শতাধিক রোগী ভর্তি থাকেন। এসব রোগীর জন্য প্রতিদিন বিভিন্ন প্রকারের কমপক্ষে ২০০ স্যালাইন প্রয়োজন হয়। কিন্তু এসব স্যালাইনের সরবরাহ নেই।
সরকারি হাসপাতালে এসব স্যালাইন সরবরাহ করে থাকেএসেনশিয়াল ড্রাগ কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল)। কিন্তু কয়েক মাস ধরে চাহিদা অনুযায়ী তারা স্যালাইন দিচ্ছে না। ফলে হাসপাতালে স্যালাইনের তীব্র সংকটে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজন মো. ইউনুস আলী বলেন, আমি আমার ছেলে গত দু’দিন ধরে পেট ব্যথা ও জ্বরে ভুগছে। সকালে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। হাসপাতালের ডিএনএস স্যালাইন না থাকায় বাইরে থেকে আনতে বলে। আমি শহরের অনেক ফার্মেসি খুঁজে ১০০ টাকা স্যালাইন ২০০টাকা দামে কিনলাম। স্যালাইনের এমন সংকট কোনো দিন শুনি নাই।
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স আঁখি তারা বলেন, হাসপাতালে স্যালাইনের সংকট চলছে। রোগীরা বাইরে গিয়েও স্যালাইন পাচ্ছেন না। অথচ কোনো দুর্ঘটনা, পেটব্যথা, রক্তক্ষরণ কিংবা অপারেশনের রোগীর জন্য স্যালাইন অত্যাবশ্যক।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাহীনুর রহমান সরদার বলেন, স্যালাইনের সংকট চলছে। আমরা হিমশিম খাচ্ছি। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। আমদের চাহিদা অনুযায়ী খুবই কম পরিমাণ সরবরাহ দেওয়া হয়। সরবরাহ স্বাভাবিক হলে সংকট কেটে যাবে।
গাড়িয়াল পাড়া মোড়ের ওষুধ ব্যবসায়ী মো. এমদাদুল হক বলেন, ডিএনএস স্যালাইনের সাপ্লাই নাই। কোম্পানি স্যালাইন না দিলে আমরা কী করবো।
যে দুই থেকে চারটা স্যালাইন দেয় তা একঘণ্টাও দোকানে থাকে না। দিনভর রোগীর স্বজনরা দোকানে এসে ফেরত যান।
সিভিল সার্জন ডা. মো. মঞ্জুর-এ-মুর্শেদ বলেন, স্যালাইন সংকট চলছে। তবে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার জন্য আমরা কিছু স্যালাইন রেখেছি। বিভিন্ন মাধ্যম ও কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলে আমরা জেনেছি যে, প্রায় অনেক জেলাতে এই সংকট চলছে। সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গুরোগীর জন্য সরকারের ব্যয় ৫০ হাজার টাকা: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
কুড়িগ্রামে হাসপাতাল-দোকান কোথাও মিলছে না ডিএনএস স্যালাইন
বেশ কিছুদিন ধরে কুড়িগ্রামে ডিএনএস স্যালাইনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালেও মিলছে না এ স্যালাইন। শুধু সরকারি হাসপাতাল নয় বাইরের ওষুধের দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে না। দু একটি দোকানে পাওয়া গেলেও ১০০ টাকা মূল্যের ডিএনএস স্যালাইন কিনতে হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকা। ফলে রোগীসহ স্বজনরাও পড়ছে চরম বিপাকে।
কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন শিশু বাদে হাসপাতালে দুই শতাধিক নতুন রোগী ভর্তি হন। ২৫০ শয্যার এই হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন চার শতাধিক রোগী ভর্তি থাকেন। এসব রোগীর জন্য প্রতিদিন বিভিন্ন প্রকারের কমপক্ষে ২০০ স্যালাইন প্রয়োজন হয়। কিন্তু এসব স্যালাইনের সরবরাহ নেই। এসেনশিয়াল ড্রাগ কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) সরকারি হাসপাতালে এসব স্যালাইন সরবরাহ করে। কিন্তু কয়েক মাস ধরে চাহিদা অনুযায়ী তারা স্যালাইন দিচ্ছেন না। ফলে হাসপাতালে স্যালাইনের তীব্র সংকটে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গু: স্যালাইন সংকটের আশঙ্কায় রোগী ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ
কুড়িগ্রাম সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজন মো. ইউনুস আলী বলেন, আমি ও আমার ছেলে গত ২ দিন ধরে পেট ব্যাথা ও জ্বরে ভুগছি। ছেলেকে সকালে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। হাসপাতালের ডিএনএস স্যালাইন না থাকায় বাইরে থেকে আনতে বলে। আমি শহরের অনেক ফার্মেসি খুঁজে ১০০ টাকা স্যালাইন ২০০ টাকা দামে কিনলাম। স্যালাইনের এমন সংকট কোনো দিন শুনিনি।
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স আঁখি তারা বলেন, হাসপাতালে স্যালাইনের সংকট চলছে। রোগীরা বাইরে গিয়েও স্যালাইন পাচ্ছেন না। অথচ কোনো দুর্ঘটনা, পেটব্যথা, রক্তক্ষরণ কিংবা অপারেশনের রোগীর জন্য স্যালাইন অত্যাবশ্যক।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাহীনুর রহমান সরদার বলেন, স্যালাইনের সংকট চলছে। আমরা হিমশিম খাচ্ছি। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। আমরা চাহিদা পাঠাই। কিন্তু খুবই নগণ্য পরিমাণ সরবরাহ করা হয়। সরবরাহ স্বাভাবিক হলে সংকট কেটে যাবে।
গাড়িয়াল পাড়া মোড়ের ওষুধ ব্যবসায়ী মো. এমদাদুল হক বলেন, ডিএনএস স্যালাইনের সাপ্লাই নেই। কোম্পানি স্যালাইন না দিলে আমরা কী করব। যে দু-চারটা স্যালাইন দেয় তা এক ঘণ্টাও দোকানে থাকে না। দিনভর রোগীর স্বজনরা দোকানে এসে ফেরত যান।
আরও পড়ুন: স্যালাইন উৎপাদনে হিমশিম খাচ্ছে ওষুধ কোম্পানিগুলো: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত
কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে মানিক মিয়া (৩৫) নামে এক বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার (১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত ১২টার দিকে আর্ন্তজাতিক সীমানা পিলার ১০৬২-২এস এর কাছে শৌলমারী ইউনিয়নের বেহুলারচর সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁও সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত
নিহত মানিক মিয়া জেলার রৌমারী উপজেলার শৌলমারী ইউনিয়নের বেহুলারচর গ্রামের আব্দুল বাতেনের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে মানিক মিয়াসহ ২০-২৫ জন বেহুলারচর সীমান্তের আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার নম্বর ১০৬২-২এস-এর কাছে যায়। এ সময় ভারতের ৪৫ ব্যাটালিয়নের কুচনিমারা ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এতে বুকের ডান পাশে গুলিবিদ্ধ হয়ে মানিক মিয়া ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে সঙ্গীরা তার লাশ অন্যত্র সরিয়ে গোপনে দাফনের চেষ্টা করে।
দুপুরের দিকে খবর পেয়ে পুলিশ বন্দরের ইউনিয়নের বাঞ্ছারচর এলাকা থেকে মানিকের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
জামালপুর বিজিবির ৩৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাশরুকীর জানান, বিষয়টি শুনেছি। তবে এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি।
রৌমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রূপ কুমার সরকার জানান, খবর পেয়ে বন্দরের ইউনিয়নের বাঞ্ছারচর এলাকার মোতালেবের বাড়ি থেকে বেহুলারচর এলাকার মানিক মিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ঘটনায় আইনি প্রক্রিয়া চলমান।
আরও পড়ুন: লালমনিরহাট সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত, আহত ১
ভারতীয় খাসিয়াদের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত
ঘরের চাল ছুঁই ছুঁই পানি তবু পিপাসার্ত কুড়িগ্রামের বন্যাকবলিতরা
ঘরের চাল ছুঁই ছুঁই বন্যার পানি। পানির তোড়ে ভেসে গেছে বাড়ি-ঘর, ক্ষেতের ফসল আর সব। তবু পিপাসার্ত কুড়িগ্রামের বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ। সুপেয় পানির অভাব তীব্র হচ্ছে দুর্গতদের মাঝে।
কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ের খেয়ার আলগা চরের বাসিন্দা সাহেরা বেগম বলেন, 'হামার ঘরত পানি উঠছে, মানুষের বাড়িত আশ্রয় নিছি আজ দুই দিন হলো। নদীর পানি আজ সকালেও এক হাত বাড়ছে। কিন্তু খাওয়ার পানির খুব কষ্ট হইছে।’
সদর উপজেলার চর যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চরের বাসিন্দা মতিয়ার রহমান বলেন, 'আজ পাঁচ দিন থেকে বন্যার পানিত খুব কষ্টে চলাচল করছি। নৌকা ছাড়া বের হতে পারছি না। যে হারে পানি বাড়তেছে জানি না কী হবে।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, কুড়িগ্রামে সবগুলো নদ-নদীর পানি আবার বাড়তে শুরু করছে। জেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে বন্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফসলি জমি, আমন ধানখেত পানিতে তলিয়ে গেছে। কী দিয়ে কাটবে বছর, তারই চিন্তায় দিন কাটছে কৃষকদের।
এ ছাড়া, রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে তিস্তার ভাঙনে ৫০টি বাড়ি বিলীন
চিলমারীতে এক সপ্তাহ ধরে পানিতে ভাসছে হরিজন পল্লী
কুড়িগ্রাম, ৩১ আগস্ট (ইউএনবি)- কুড়িগ্রামে চিলমারীতে হরিজন পল্লী এক সপ্তাহ ধরে পানির নিচে তলিয়ে আছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, থানাহাট ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সবুজপাড়া এলাকায় বিলের মাঝে সদ্য নির্মিত হরিজন পল্লীর চারদিকে থৈ থৈ করছে পানি।
হরিজন পল্লীর আশ্রয় নেওয়া বাসিন্দা শ্রী মনি লাল জানান, সামান্য বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে আমাদের হরিজন পল্লী। গত সাত দিন ধরে এভাবে পানিবন্দি রয়েছি আমরা। আর একটু পানি বাড়লে হরিজন পল্লী ছেড়ে চলে যেতে হবে আমাদের।
আশ্রয় নেওয়া বাসিন্দা শ্রী রুমা রাণী বলেন, বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বাচ্চাদের নিয়ে খুব কষ্টে আছি, সব সময় ভয়ে থাকতে হচ্ছে।
আশ্রয় নেওয়া হরিজন পল্লীর বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, গত কয়েকদিন ধরে পানি বন্দি থাকলেও এখনও সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনো খাদ্য সহায়তা পাননি তারা।
উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা( ইউএনও) মো. রাফিউল আলম জানান, হরিজন সম্প্রদায়সহ পানিবন্দি মানুষদের তালিকা করা হচ্ছে। এ ছাড়া হরিজনপল্লীতে মাটি ভরাটের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে এই সমস্যা থাকবে না।
কুড়িগ্রামে চরাঞ্চলে ভ্রাম্যমাণ সোলার পাম্প, কৃষকের মনে স্বস্তি
কুড়িগ্রামের নদীবিধৌত চরাঞ্চলে ভ্রাম্যমাণ সোলার পাম্পের মাধ্যমে সেচ ব্যবস্থা চালু করে কৃষকের ভাগ্য বদলের চেষ্টা করছে পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ)।
সরকারি অর্থায়ণে ভ্রাম্যমাণ সোলার পাম্পের সেচে কম খরচে ফসল ঘরে তুলতে পেরে কৃষকের মনে স্বস্তি ফিরেছে।
আরও পড়ুন: যশোরে ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে সরকারি সোলার!
এতদিন এ অঞ্চলের বন্যা, খরা ও প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রাম করে বাঁচা কৃষকেরা শ্যালো মেশিনের সেচ পাম্পের উপর নির্ভরশীল ছিল।
এখন আর শ্যালো মেশিনের জ্বালানি ডিজেলের দামবৃদ্ধি এবং যান্ত্রিক ভোগান্তি না থাকায় কম খরচে ফসল ঘরে তুলতে পেরে খুশি চরাঞ্চলের কৃষকরা।
জানা গেছে, জেলার চিলমারীর সদর ইউনিয়নের বজরাদিয়ার খাতা গ্রামে কৃষকের খেতে পানি দিতে ছুটে বেড়াচ্ছে ভ্রাম্যমাণ সোলার সেচ পাম্প।
ওই এলাকার প্রায় ১ হাজার ৫০০ কৃষকের ধান ও ফসলের খেতে সেচের জন্য নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠেছে ভ্রাম্যমাণ সোলার পাম্পটি।
লোহার এঙ্গেলের উপর বিশেষ কায়দায় স্থাপন করা হয়েছে আটটি সোলার প্যানেল। ব্যাটারিবিহীন একটি কনভার্টার সাহায্যে বৈদ্যুতিক মটর সেট করে প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে নদী-নালা, খাল-বিল থেকে সহজে পানি পাচ্ছেন কৃষকেরা।
পরিবহনের ঝামেলা এড়াতে চাকা লাগিয়ে বানানো এই ভ্রাম্যমাণ সোলার প্যানেলের সেচ পাম্প যাচ্ছে কৃষকের খেতের কাছে। খুব সহজে হাতের কাছে এমন সেচ ব্যবস্থা পেয়ে আশার আলো বুনছেন কৃষকেরা।
কথা হয় বজরাদিয়ার খাতা গ্রামের মো. হারুন রশীদ নামের এক কৃষকের সঙ্গে।
আরও পড়ুন: সোলার প্যানেল ব্যবহার করে ২০ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎ বিল বাঁচানো সম্ভব: নসরুল হামিদ
তিনি বলেন, সোলার সেচ পাম্পের সাহায্যে কম খরচে ফসল ঘরে তুলতে পেরে আমরা অনেক খুশি। কেননা শ্যালো ইঞ্জিন সেচ পাম্পে এক বিঘা ধানের জমিতে প্রায় ৮-৯ হাজার টাকা খরচ হতো। সেখানে ৫ হাজার ৫০০ টাকায় আমরা ফসলে পানির কাজ শেষ করতে পারছি। আবাদে পানি নিয়ে আমাদের আর কোনো চিন্তা নাই।
আরেক কৃষক মো. আবু বক্কর বলেন, খেতে পানি নিয়ে আমাদের এলাকার মানুষের আর দৌড়াদৌড়ি নাই। ঘুম থেকে উঠে কে আগে জমিতে পানি নেবে সেই দিন শেষ। আমরা সোলার পাম্পের সঙ্গে চুক্তি করি, ওরা এসে আমাদের ধান বা অন্যান্য ফসলের খেতে পানির ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। এমন নিরাপদ নির্ভেজাল সেচ ব্যবস্থা পেয়ে আমরা খুবই খুশি।
কুড়িগ্রামে তিস্তার ভাঙনে ৫০টি বাড়ি বিলীন
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে।
তিস্তা নদীর পানি শুক্রবার (২৫ আগস্ট) সকাল থেকে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
রবিবার (২৭ আগস্ট) সকালে তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া রেল ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে পদ্মা-মধুমতির ভাঙন, বিলীন হচ্ছে বসতভিটা ও ফসলি জমি
বৃষ্টি ও বন্যার ফলে কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার বুড়িরহাট এলাকায় দেড় কিলোমিটার এলাকাব্যাপী নদী ভেঙেছে। এই ভাঙনে সর্বশেষ বুড়িরহাট বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩০ মিটার নদী গর্ভে চলে গেছে।
এ ছাড়াও উপজেলার বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নে প্রায় ৫০টি বাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। পানি বাড়ার ফলে এই উপজেলার দুটি ইউনিয়নের প্রায় ৫ শতাধিক বাড়িঘরে পানি উঠেছে। অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে স্থানীয় রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গেছে।
এ ছাড়াও রান্নাবান্না, খাওয়া-দাওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির কারণে গরু, ছাগল ও হাসঁ, মুরগির খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।
এদিকে বন্যায় ৭০৫ হেক্টর আমন ধান, ৮ হেক্টর বীজতলা ও ১১০ হেক্টর সবজিখেত বন্যায় নিমজ্জিত হয়েছে বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
রাজারহাটের ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের মেম্বার মিনহাজুল বলেন, আমার ইউনিয়নের সরিষাবাড়ী এলাকার বাড়িগুলোতে পানি উঠেছে। এখানে ২ শতাধিক বাড়িঘর তলিয়ে গেছে।
জোলাপাড়ার আবুল জানান, এই গ্রামের ৭৫টি বাড়ির মধ্যে ৪৫টি বাড়িতে পানি উঠেছে।
এই গ্রামের মাহমুদা বলেন, আমার ছোট পুকুরে ৪/৫ হাজার টাকায় প্রায় ১৮ কেজি মাছের পোনা ছেড়েছিলাম, সব মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মায় ভাঙন, বিলীন হচ্ছে বসতঘরসহ আবাদি জমি
তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার উপরে, কুড়িগ্রামে বন্যার আশঙ্কা
কুড়িগ্রামে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, ধরলাসহ অনান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, কুড়িগ্রাম জেলার ব্রহ্মপুত্রে নদের নুনখাওয়া পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার নিচে,চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ৫৮ সে.মি নিচে কুড়িগ্রাম সদর পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় জেলার উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ, নয়ারহাট, সাহেবের আলগাসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে স্বল্প মেয়াদি বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।
তিস্তার গড়াইপিয়া এলাকার বাসিন্দা মো. নুর আলম বলেন, দুই থেকে তিন দিন থেকে আবারও তিস্তা নদীর পানি হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে, ধান খেত নিয়ে খুব দুঃশ্চিন্তায় আছে। তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও নদী ভাঙে, পানি কমলেও নদী ভাঙে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে এক মাস ধরে বিদ্যুৎবিহীন ৮ হাজার গ্রাহক
খিতাব খাঁ গ্রামে সুরমান আলী বলেন, দিনরাতে সমানে বৃষ্টি হচ্ছে আর তিস্তার পানি বাড়ছে। গরু ছাগল নিয়ে ফের হামারগুলার ভোগান্তি শুরু হলো।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভারতের আসাম ও অরুণাচলে ভারী বৃষ্টির কারণে উজানের ঢল ও স্থানীয় বৃষ্টিপাতে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। কয়েকদিনের মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমারয় পৌঁছাতে পারে। ফলে জেলার সদরের কিছু অংশ, উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে স্বল্পমেয়াদী বন্যার পূর্বাভাস রয়েছে। পানি বিপৎসীমায় পৌঁছালেও খুব বড় বন্যার আশঙ্কা নেই।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের সকল ধরনের প্রস্তুতি রেখেছি। খাদ্য সহায়তা, উদ্ধার নৌকা ও আশ্রয়কেন্দ্রসহ প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে তিস্তার ভাঙনে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে