মুক্তিযোদ্ধা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মইনুদ্দীন আর নেই
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মইনুদ্দীন আর নেই
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মইনুদ্দীন মন্ডল মারা গেছেন।
আরএ পড়ুনঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
শুক্রবার সকাল ৭টায় ঢাকায় রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭৫ বছর। তিনি স্ত্রী, এক পুত্র ও এক কন্যাসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।
মরহুমের জানাজার নামাজ আজ সন্ধ্যায় বাদ মাগরিব জেলা শহরের জেলা আদর্শ স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ।
প্রবীণ এই রাজনীতিকের মৃত্যুতে জেলা আওয়ামী লীগ ৩ দিনের শোক পালনের ঘোষণা করেছে। তাছাড়া দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন ও নেতাকর্মীদের কালো ব্যাজ ধারণের অনুরোধ জানানো হয়েছে ।
সুনামগঞ্জে গ্যাস সিলিন্ডার লিক
সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জে গ্যাস সিলিন্ডার লিক হয়ে আগুনে প্রায় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় উপজেলার পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের টাইলা গ্রামে এই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। গ্রামের পূর্বহাটি এলাকার মুক্তিযোদ্ধা মৃত মরম আলীর ছেলে বকুল মিয়ার ঘরের গ্যাস সিলিন্ডার লিক হয়ে এই আগুনের সূত্রপাত হয়। এতে প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে আগুনে পুড়ে গেছে কয়েকটি ঘর, গোডাউন
খবর পেয়ে জেলার দিরাই উপজেলা ফায়ার সাভির্সের একটি ইউনিট এবং গ্রামবাসী কয়েক ঘন্টা চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে।
টাইলা গ্রামের সুজন তালুকদার জানান, আগুন ছড়িয়ে পড়লে গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামবাসী ও দিরাই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে প্রায় দুই ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু আগুন ১০ টি ঘর, ধানচাল, সোন গহনা সহ প্রায় দেড়কোটি কাটার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
আরও পড়ুন: গাজীপুরের টঙ্গীতে ঝুট মালামালের গোডাউনে আগুন
টাইলা গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত মো. বকুল মিয়া জানান, গ্যাস সিলিন্ডার লিক হওয়ার কারণে তার ঘরে প্রথমে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। কিছু সময়ের মধ্যেই পাশের ঘরসহ আরও কমপক্ষে দশটি ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। নিমিষেই সবকিছু ধবংস হয়ে গেছে। এ সময় তিনি সরকার ও প্রশাসনের কাছে ক্ষতিগ্রস্তদের পূর্ণবাসনের দাবি জানান ।
আরও পড়ুন: চাঁদপুরে দুর্বৃত্তদের আগুনে দগ্ধ ব্যবসায়ীর মৃত্যু
দিরাই ফায়ার সার্ভিসের লিডার মো. সাইফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নদী পারাপারের কারণে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে কিছুটা বিলম্ব হলেও গ্রামবাসীর সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রনে আনতে পেরেছি। তবে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দেড়কোটি টাকার কাছাকাছি হবে।
তৃতীয় ধাপে ১২ হাজার ১১৬ বীর মুক্তিযোদ্ধার সমন্বিত তালিকা প্রকাশ
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামের সমন্বিত তালিকার তৃতীয় পর্ব প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এতে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) অনুমোদনবিহীন বেসামরিক গেজেট নিয়মিতকরণে আট বিভাগের ৩৮৮ উপজেলার ১২ হাজার ১১৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম প্রকাশ করা হয়েছে।
সোমবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট (www.molwa.gov.bd) এ তালিকাটি পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন: বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রকাশ
প্রকাশিত তালিকায় ঢাকা বিভাগের ৩ হাজার ৪৫৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ২ হাজার ৩৭৪ জন, বরিশাল বিভাগের ১ হাজার ১৮০ জন, খুলনা বিভাগের ২ হাজার ২৯০ জন, ময়মনসিংহ বিভাগের ৩৩৩ জন, রাজশাহী বিভাগের ১ হাজার ৪৩৭ জন, রংপুর বিভাগের ৭৬৮ জন ও সিলেট বিভাগের ২৭৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন।
আরও পড়ুন: বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা ২০ হাজার টাকা
এর আগে গত ২৫ মার্চ প্রথম ধাপে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৩৭ জন এবং দ্বিতীয় ধাপে গত ৯ মে ৬ হাজার ৯৮৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার নামের সমন্বিত তালিকায় প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
বৃক্ষপ্রেমিক শিক্ষক নুরুল ইসলাম
পরিবেশ রক্ষা ও নানা শুভ কাজ করে ইতোমধ্যে সবার নজর কেড়েছেন ফরিদপুর শহরের দক্ষিণ টেপাখোলার স্কুল শিক্ষক নুরুল ইসলাম।
প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে একটি শুভ কাজ দিয়ে তার যাত্রা শুরু হয়। আর এভাবে চলছে তার দীর্ঘ সময়। করোনার এই মহামারির সময়েও তিনি এবারের পরিবেশ দিবসকে ভুলে যাননি। তাইতো শনিবার (৫ জুন) তিনি শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন জায়গায় রোপন করছেন সুপারির চারা।
শিক্ষক নুরুল ইসলাম রসায়ন বিভাগে পড়াশুনা শেষ করে সরকারি স্কুলে যোগ দেন। তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান ফকির।
পরিবেশ ও প্রকৃতি এবং নদীরক্ষায় রাধাচুড়া ও কৃষ্ণচূড়ার গাছ রোপন, খেঁজুর, সুপারি ও তালবীজ রোপন এবং জনসচেতনতা বাড়াতে নদীতে প্লাস্টিক বর্জ্য না ফেলার আহ্বান সম্বলিত বিলবোর্ড স্থাপনের কাজ করে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: পরিবেশ দিবসে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করল এমএসএস
বৃক্ষপ্রেমি নুরুল ইসলাম বলেন, 'দেশকে ভালোবাসার থেকেই গাছ রোপনের উৎসাহ পাই। আমি সুযোগ পেলেই এই কাজে মনোনিবেশ করি। ২০১৯ সালের প্রথম দিক থেকে বৃক্ষরোপণের কাজ শুরু করি।’
ওই বছরেই ফরিদপুর শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন রাস্তার পাশে কয়েক হাজার তাল গাছ, রাধাচুড়া, কৃষ্ণচূড়া রোপন করেছেন তিনি।
এছাড়া ২০২০ সালে খেঁজুরের বীজ, ৭০০ তাল বীজ, কয়েকশ সুপারির গাছ ও কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপন করেছেন।
রাজাকার আর মুক্তিযোদ্ধার রাজনৈতিক চিন্তা কখনো এক হয় না: নিক্সন চৌধুরী
রাজাকার আর মুক্তিযোদ্ধার রাজনৈতিক চিন্তা চেতনা কখনো এক হয় না বলে মন্তব্য করেছেন ফরিদপুর ৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী।
তিনি বলেন, 'শুধুমাত্র রাজাকার ও মুক্তিযোদ্ধাই না, রাজাকার পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানের রাজনৈতিক চিন্তা চেতনাও কখনো এক হয় না। তাই যুবলীগের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রার্থীর পারিবারিক রাজনৈতিক অতীত রেকর্ডও দেখতে হবে। যাতে করে জামায়াত-বিএনপি-স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি কেউ যেন পদ পদবীতে আসতে না পারে।'
মঙ্গলবার ফরিদপুর জেলা যুবলীগের বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
নিক্সন চৌধুরী বলেন, 'বিগত সময়ের যুবলীগের কথা ভুলে যান। বিগত দিনে ১৭ বছর ২০ বছর অনেক জেলা উপজেলায় কমিটি না করে একই লোক পদে থেকেছেন। তা আর হবে না। নির্দিষ্ট সময়ে সব জায়গায় সম্মেলন অনুষ্টিত হবে। কোথাও জামায়াত-শিবির-বিএনপির কোন লোক যাতে যুবলীগে ঢুকতে না পারে সে ব্যপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।'
তিনি বলেন, যুবলীগ চলে তার নিজস্ব গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, যুবলীগের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে। যুবলীগের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কোন এমপি মন্ত্রীর সুপারিশ শোনা হবে না।
জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জিয়াউল হাসান মিঠুর সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত পাল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক আবু মনির মো. শহিদুল হক রাসেল, অর্থ সম্পাদক মো. শাহাদাত হোসেন ও বিপ্লব মোস্তাফিজ।
আরও পড়ুন: রাজাকারদেরকে আমরা মোকাবিলা করতে জানি: হেফাজতের সমালোচনায় জয়
সভায় জেলার কোতোয়ালি, ভাঙ্গা, সদরপুর, চরভদ্রাসন ও ফরিদপুর পৌর যুবলীগের কমিটি ভেঙে দিয়ে আগামী ৭ দিনের মধ্যে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে মধুখালী, বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা, নগরকান্দা ও সালথা উপজেলায় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হবে বলে সভায় জানানো হয়।
এছাড়া নব গঠিত ফরিদপুর জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি আগামী ৯০ দিনের মধ্যে জেলার সম্মেলন আয়োজন করবে।
চট্টগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাকে পিটিয়ে হত্যা
চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে পিটিয়ে এক মুক্তিযোদ্ধাকে প্রতিপক্ষের লোকজন হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত মুক্তিযোদ্ধার নাম মোহাম্মদ শাহজাহান (৬৫)।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জোরারগঞ্জের ওসমানপুর এলাকায় জায়গা জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে তার ওপর হামলার ঘটনাটি ঘটে। পরে মুমূর্ষ অবস্থায় তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পথে দুপুর আড়াইটায় তার মৃত্যু ঘটে।
জোরারগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) হেলাল উদ্দিন জানান, এ‘কজন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল উসমান পুরে যাচ্ছি। তবে এখনো ঘটনার বিস্তারিত জানি না।’
নিহত শাহজাহানের ভাতিজা সোহেল মোস্তফা দোলন বলেন, ‘বাড়ির পাশের একটি জায়গা নিয়ে বিরোধ চলছিল। আজ সকালে চাচাসহ কয়েকজন বিরোধপূর্ণ সে জায়গায় গেলে প্রতিপক্ষের লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। এতে দুই নারীসহ চাচা আহত হন। তাদের মধ্যে আমরা চাচাকে নিয়ে প্রথমে জোরারঞ্জ হাসপাতালে গেলে সেখানকার চিকিৎসকরা উনাকে চমেক হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। আসার পথে আড়াইটাই তিনি গাড়িতে মারা যান।’
আহত অন্য দুই নারী হলেন দিনারা বেগম ও তাহরিমা বেগম। তবে তাদের আঘাত তেমন গুরুত্বর নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
মুক্তিযোদ্ধাদের ঈদের শুভেচ্ছা জানালেন প্রধানমন্ত্রী
পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
শুক্রবার ঈদের দিন দেশের সূর্যসন্তান- মুক্তিযোদ্ধাদের শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী।
দেশের অন্যান্য অনুষ্ঠানের মতো, ঈদের দিনেও প্রধানমন্ত্রী ঢাকার মোহাম্মদপুরের মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন কেন্দ্রের মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য ফুল, ফল ও মিষ্টান্ন সামগ্রী পাঠিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন।
আরও পড়ুন: করোনা মহামারির চাদরে মোড়া আরও একটি ঈদ!
শুক্রবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সহকারী ব্যক্তিগত সচিব-২ গাজী হাফিজুর রহমান লিকু, উপ প্রেস সচিব জাহিদ তুষার এবং সহকারী প্রেস সচিব এ.বি.এম. সারওয়ার-এ-আলম সরকার প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে এসকল শুভেচ্ছা সামগ্রী মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের হাতে তুলে দেন।
আরও পড়ুন: খুলনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজ আদায়
জাতীয় দিবসগুলোর মতো দেশের অন্যান্য উৎসবগুলোতেও মুক্তিযোদ্ধাদের এভাবে স্মরণ করা এবং তাদের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বের প্রশংসা এবং তার দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ কালু মারা গেছেন
ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ কালু সোমবার মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।
বার্ধক্যজনিত কারণে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বলে তার ছেলে মো. সোহাগ নিশ্চিত করেছেন।
ইউসুফ সম্মুখ সারিতে থেকে বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশ জন্মের সংগ্রামে লড়েছিলেন। সেই সাথে এই প্রজন্মের জন্য ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভাষা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে সক্রিয় ছিলেন তিনি। তার জন্ম ১৯৩১ সালের ১৭ জানুয়ারি ঝালকাঠী জেলার রাজাপুরের কানুদাসকাঠী মিয়াবাড়িতে। বাবা ওবায়দুল করিম (রাজা মিয়া) ও মা ফাতেমা খাতুন। তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট।
আরও পড়ুন: সাংবাদিক আনাস মারা গেছেন
ইউসুফ কালুর হাতেখড়ি পাঠশালায়। সংগঠন শুরু শিশু কিশোরদের মুকুলফৌজ দিয়ে। তিনি বরিশাল ব্রজমোহন বিদ্যালয়ের (বিএম স্কুল) ছাত্র ছিলেন। ১৯৪৮ সালে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালীন সময়ে ভাষা আন্দোলনের কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। মেট্রিকুলেশন পাস করে ১৯৫১ সালে আইএ ভর্তি হন বিএম কলেজে কমার্স বিভাগে। এই সময়ে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের সাথে জড়িত ছিলেন। তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি ও বিএম কলেজ ছাত্র সংসদের ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) সৈয়দ গোলাম কিবরিয়াকে আহ্বায়ক করে বিএম কলেজে ২৫ সদস্যের ‘ভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন হয়। সেই কমিটির সদস্য ইউসুফ কালু। আন্দোলনের গতি বাড়লে সেই কমিটির কলেবর বৃদ্ধি করে ৮১ সদস্য বিশিষ্ট বৃহত্তর বরিশাল ভাষা সংগ্রাম পরিষদ করা হয়।
আরও পড়ুন: ভাষা সৈনিক দেবপ্রিয় বড়ুয়া আর নেই
১৯৫৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে বরিশালে প্রচারণায় আসেন তৎকালীন পাকিস্তান মুসলিম লীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী খান আব্দুল কাইউম। কাইউমকে ঠেকাতে কালো পতাকা মিছিলসহ আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নেন কালু। ওই মিছিলে পুলিশের সাথে সংর্ঘষে কাউনিয়ার বাসী মালেক নামে একজন নিহত ও ইউসুফ কালুসহ ৩৫ জন গ্রেপ্তার হন। ২২ দিন পর জামিন পেয়ে নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের হয়ে কাজ শুরু করেন।
৬৯’র গণঅভ্যুত্থানসহ প্রতিটি আন্দোলনেই দেশ ও মানুষের জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধেও অংশ গ্রহণ করেন তিনি। ৭১ সালের ১৪ মে কলকাতা লালবাজারে বাংলাদেশ সহায়ক সমিতির সহযোগিতায় হাসনাবাদ, হিংগলগড়, টাকি হেড কোয়ার্রের প্রশিক্ষণ নেন। দেশে ফিরে ৯নং সেক্টরের অধীনে কালীগঞ্জ, সাতক্ষীরার সীমান্ত এলাকায় পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধ করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন নুরুল আলম ফরিদ সম্পাদিত রণাঙ্গনের মুখপত্র ‘বিপ্লবী বাংলাদেশ’ পত্রিকার পরিচালকদের একজন ছিলেন। শিক্ষা জীবনের প্রথমে ছাত্র ইউনিয়ন করেছেন তিনি। ৫২ সালে যোগ দেন ছাত্রলীগে। তিনি স্বৈরাচার বিরোধী ও প্রতিটি প্রগতিশীল আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালে সাংবাদিকতা শুরু করেন। প্রথমে আজাদ ও পরে দৈনিক পয়গামের বরিশাল সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন । ওই একই সময়ে ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল খেলায় পারদর্শী তিনি বরিশাল ক্রীড়া সংস্থারও সদস্য ছিলেন।
আরও পড়ুন: ভাষা সৈনিক প্রফেসর লায়লা নূর আর নেই
ইউসুফ কালুর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দারসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা: স্পিকার
কোন চাওয়া-পাওয়া থেকে নয়, বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। কোন চাওয়া-পাওয়া থেকে নয়, দেশমাতৃকাকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে মুক্তিযোদ্ধারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে হানাদার বাহিনীর বিরূদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।’
শনিবার পীরগঞ্জ উপজেলা অডিটোরিয়ামে 'বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান ও আলোচনা সভা' অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে স্পিকার এসব কথা বলেন।
এ সময় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মকবুল, রাজশাহীর কাটাখালীতে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭ জন পীরগঞ্জবাসী নিহত হওয়ার ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন তিনি।
আরও পড়ুন:সংসদ প্রাঙ্গণে 'পিতা' প্রদর্শনীর আয়োজন একটি অনন্য উদ্যোগ: স্পিকার
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সকল মুক্তিযোদ্ধাদের সশ্রদ্ধ সালাম ও বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে স্পিকার বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সুদীর্ঘ ২৬ বছর আন্দোলন-সংগ্রাম, জেল-জুলুম-অত্যাচার সব কিছু সহ্য করেও বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অবিচল ছিলেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন বলে আজ বাঙালি জাতি বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছে। বাংলাদেশ আজ মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
আরও পড়ুন:ডব্লিউআইসিসিআই অ্যাওয়ার্ড পেলেন স্পিকার
শিরীন শারমিন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন ও অগ্রগতি তা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। আজকের বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। রূপকল্প ২০২১ এর যে অঙ্গীকার নিয়ে সরকার যাত্রা শুরু করেছিল তা বাস্তবায়নের পথে। মুজিববর্ষে ৯ লাখ গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে মাথা গোঁজার ঠাঁই দিয়ে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সমগ্র বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সম্মানিত করার যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে শেখ হাসিনার সরকার। ’
আরও পড়ুন: গৃহহীনদের গৃহ দেয়া মানবাধিকারের অনন্য মাইলফলক: স্পিকার
পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুর রহমান রাঙ্গার সভাপতিত্বে ও পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পীরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র এ এস এম তাজিমুল ইসলাম শামীমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মো. নুরুল হক, আব্দুল হাদী, আব্দুর রব, মো. ফজলার রহমানসহ ৬৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন স্পিকার।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রকাশ
প্রথম পর্যায়ে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৩৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ১৯১ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা প্রকাশ করেছে সরকার।
বৃহস্পতিবার বিকালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সংবাদ সম্মেলন এ তালিকা প্রকাশ করেন।
এই প্রকাশিত তালিকা আজকেই মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ হাজার আবাসন নির্মাণ করবে সরকার
মন্ত্রী বলেন, আরও যাচাই বাছাই এবং আপিল শুনানি শেষে ৩০ জুন ২০২১ এর মধ্যে যাচাই বাছাইধীন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা পরের ধাপ ৩০ জুন প্রকাশ করা হবে।
মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে গ্যাজেটধারী মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। নতুন করে আর কেউ মুক্তিযোদ্ধা আবেদন করতে পারবে না। যারা আগে আবেদন করে রেখেছেন তারা শুধু রিভিউ ও আপিল করতে পারবেন।’
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় গণশহীদদের কীভাবে সম্মানিত করা যায় সেটা আমরা ভাবছি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সেনাবাহিনীসহ সকল বাহিনী কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধা গ্যাজেট তালিকা ইতোমধ্যেই বাতিল কার হয়েছে।
আরও পড়ুন: মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বেড়ে হবে ২০ হাজার টাকা: প্রধানমন্ত্রী
‘সেনাবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের গ্যাজেট প্রকাশটা বিতর্কিত ছিল। তবে তাদের ভাতা এখনও চালু আছে। বাহিনীর মধ্যে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কারা যাচাই বাছাই চলছে। আমাদের ধারণা ৮-১০ হাজার সঠিক মুক্তিযাদ্ধা হবে এবং ৫-৭ হাজার কোন যুদ্ধই করেনি,’ বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘প্রকাশিত তালিকায় যদি কারও কোন তথ্যে মিল না থাকে তাহলে ভাতা পেতে বিভ্রান্ত হতে পারে। সেজন্য আমরা একবছর যাচাই বাছাই করেছি। শতবাগ নির্ভুল করার জন্য সময় নিয়েছি। তারপরও ভুল থাকতে পারে। তবে সেই ভুল তেমন বড় কোন কিছু হবে না।’
তিনি বলেন, ‘আজকে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৩৫ জনের নাম প্রকাশ করা হল। বাকিদের যাচাই বাছাই করে মোট ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি হবে না।’
তালিকায় জিয়াউর রহমান ও খন্দকার মোস্তাকের নাম প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান, খন্দকার মোস্তাকের নামসহ এই মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় আছে। তারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে। কিন্তু অপকর্মসহ যেমন বঙ্গবন্ধুর খুনের সহযোগিতা ও খুনি হিসেবে তাদের নামের পাশে তাদের কর্ম উল্লেখ থাকবে।
‘মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এটি যার যার অর্জন। সেটা কেউ বাতিল করতে পারবে না। তবে তাদের খেতাব বাতিলের বিষয়ে একটি কমিটি হয়েছে। খেতাবটা একটি সম্মান। সেটি যেকোন সরকার সম্মান দিতে পারেন, আবার চাইলে যেকোন অপারাধের জন্য ফিরিয়ে আনতে পারেন,’ বলেন মন্ত্রী।
আরও পড়ুন: মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে নাম বাদ, শোকেই মৃত্যু