বন্যা
চট্টগ্রামে বন্যার পানিতে নৌকাডুবি, ব্যবসায়ী নিখোঁজ
চট্টগ্রামের রাউজানে নিজের খামার থেকে বাড়ি ফেরার পথে বন্যার পানিতে নৌকা ডুবে নিখোঁজ হয়েছেন এক ব্যবসায়ী।
সোমবার (৭ আগস্ট) রাতে উপজেলার উরকিরচর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের হালদা নদীর একটি শাখা খালে এ ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন: বান্দরবানে বন্যায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি
নিখোঁজ চট্টগ্রামের তরুণ ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা সাহেদ(৩৫) রাউজানের এস এম ইউসুফের ছেলে।
নৌকাডুবির সময় সঙ্গে থাকা ৪জন সাঁতার কেটে পাড়ে উঠতে পারলেও বাবু উঠতে পারেনি। তীব্র স্রোত তাকে টেনে নিয়ে যায়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. কাউসার-উল-আলম বলেন, নিজ বসতঘর থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নিজস্ব প্রজেক্ট খামার বাড়িতে (মাছের খামার, গরুর খামার) যান সাহেদ।
রাত ৮টার দিকে সেখান থেকে ফেরার পথে রাউজান হাটহাজারী মধ্যবর্তী বাড়িঘোনা ব্রিজ এলাকায় নৌকা উল্টে যায়। নৌকায় থাকা আরও ৪জনসহ সাঁতার কেটে উঠতে পারলেও সাহেদ পানির স্রোতে ভেসে যান।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস, নৌ পুলিশ, রাউজান থানা ও হাটহাজারী থানা পুলিশসহ স্থানীয় লোকজন বাবুর খোঁজ পেতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল, জোয়ারের পানিতে উরকিরচরসহ আশপাশের গ্রামে বন্যা দেখা দিয়েছে।
সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একরাম উল্লাহ জানান, উরকিরচরে সাহেদের গরু ও মুরগীর খামার আছে। যেখানে হালদা নদীর একটি শাখা খাল পেড়িয়ে যেতে হয়।
তিনি আরও বলেন, অতি বৃষ্টির কারণে সোমবার খামারে পানি উঠে যায়। তাই সাহেদ সহ আরও ৩ জন খামার দেখে ফেরার পথে নৌকা উল্টে পানিতে পড়ে যায়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ আবদুল জব্বার সোহেল জানান, রাত ১২টা পর্যন্ত সাহেদের সন্ধান পাওয়া যায়নি। বন্যায় পানি বেশি থাকায় হালদা নদীতে ভেসে যেতে পারে। তার সন্ধানে হালদা নদী ও শাখা খালে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে বন্যা-ভূমিধস মোকাবিলায় সেনা মোতায়েন
চট্টগ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে কলেজছাত্রীর মৃত্যু
চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে বন্যা-ভূমিধস মোকাবিলায় সেনা মোতায়েন
বন্যা পরিস্থিতি ও ভূমিধস মোকাবিলায় চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) ইন্টার-সার্ভিস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) অনুসারে, বেসামরিক প্রশাসনের অনুরোধের ভিত্তিতে সেনা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে, গত কয়েকদিনের অবিরাম বর্ষণে দুই জেলার প্রায় ৫ লাখ মানুষ ভয়াবহ পরিস্থিতি রয়েছেন।
বান্দরবান জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বালাঘাটা, ফজর আলী পাড়া, চেয়ারম্যান পাড়া, পুলিশ লাইনস এলাকা, ছাইগ্যা মহাজন পাড়া, উদ্যানপালন এলাকা, লালমিয়ার চর এলাকা, হাফেজঘোনা, আর্মিপাড়া, কাশেম পাড়া, স্টেডিয়াম ও কেচিং পাড়া এলাকার বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: বান্দরবানে বন্যায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি
প্রবল বন্যার কারণে রবিবার মধ্যরাত থেকে শহরের নিচু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হয়।
এছাড়া বান্দরবান থেকে রাঙ্গামাটি, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন পয়েন্টে সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
ফলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাসমূহের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা সেবা মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য ইতোমধ্যে ২৬৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বান্দরবানে ভারি বর্ষণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, সতর্ক করতে মাইকিং
৫ ঘণ্টা পর বান্দরবান-থানচির যোগাযোগ স্বাভাবিক
চট্টগ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে কলেজছাত্রীর মৃত্যু
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে বন্যার পানিতে ডুবে নিপা পালিত (১৮) নামে এক কলেজছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার (৭ আগষ্ট) সকাল ৯টার দিকে উপজেলা চট্টগ্রাম সিটি করপেরেশন (চসিক) এক নম্বর ওয়ার্ড ইসলামিয়াহাট বাদামতল এলাকায় বন্যার পানিতে ডুবে তার মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢামেকে কলেজছাত্রীর মৃত্যু
নিপা পালিত একই এলাকার উত্তম পালিতের মেয়ে এবং হাটহাজারী সরকারি কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিপা পালিত পূর্ব থেকে মৃগী রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
জানা গেছে, সোমবার সকালে কলেজে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় বাসার কাছে একটি ড্রেনে পড়ে যান নিপা।
নিপা পালিতের বড় ভাই বাদল পালিতের বরাত দিয়ে হাটহাজারী সরকারি কলেজের প্রভাষক আবু তালেব জানান, নিহত শিক্ষার্থী নিপা পালিত সকালে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় বাসার কাছে একটি ড্রেনে পড়ে যান।
তিনি আরও জানান, তিনি মৃগী রোগী ছিলেন। ড্রেনে পড়ে আর উঠতে পারেনি। সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন।
আরও পড়ুন: আবাসিক হোটেল কক্ষে কলেজছাত্রীর মৃত্যু
রাজশাহীতে প্রকাশ্যে গায়ে আগুন দেয়া কলেজছাত্রীর মৃত্যু
বান্দরবানে বন্যায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি
টানা চার দিনের বৃষ্টিতে বান্দরবানে বন্যার পানি বেড়ে শহরের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
চট্টগ্রাম-বান্দরবান সড়কের বাইতুল ইজ্জত এলাকায় সড়কের উপর পানি উঠায় বান্দরবানের সঙ্গে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
আরও পড়ুন: বান্দরবানে ভারি বর্ষণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, সতর্ক করতে মাইকিং
এদিকে শহরের জ্ঞানরত্ন বৌদ্ধ বিহার এলাকায় সড়ক ডুবে যাওয়ায় রাঙ্গামাটির সঙ্গে বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
এ ছাড়াও রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানছি সড়কে রবিবার থেকেই যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জিপ-কার-মাইক্রেবাস শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন জানান।
প্রচণ্ড বৃষ্টিতে শহরের বালাঘাটা, ফজর আলী পাড়া, চেয়ারম্যান পাড়া, পুলিশ লাইন এলাকা, ছাইগ্যা মহাজন পাড়া, হট্টিকালচার এলাকা, লালমিয়া চর এলাকা, বাস স্টেশন, হাফেজঘোনা, আর্মিপাড়া, কাশেম পাড়া, স্টেডিয়াম ও কেচিং পাড়া এলাকার জনগণ দুই দিন ধরে পানিবন্দি রয়েছে।
এদিকে, টানা বৃষ্টির কারণে বান্দরবান শহর ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরতদের সরে যেতে প্রশাসন ও পৌরসভার পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বান্দরবানের ৭টি উপজেলায় দুর্গতদের সহায়তায় ১৯৩টি আশ্রয় কেন্দ্রে খোলা হয়েছে। ২০ টন খাদ্যশস্য এবং নগদ ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৪৩টি মেডিকেল টিম স্বাস্থ্য সেবায় কাজ করছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমেন শর্মা জানান, এ পর্যন্ত পাহাড় ধসে ৬ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে বান্দরবান শহরের বীর বাহাদুর নগর ও স্টেডিয়াম এলাকায় পাহাড় ধসে আহত দুইজনকে রবিবার রাতে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, এদিকে নাইক্ষংছড়ি উপজেলার দোছড়ি ইউনিয়নে খাল পার হতে গিয়ে রবিবার বিকালে মেমপই ম্রো (৩০) নামে এক ব্যক্তি স্রোতে ভেসে গেছে। নিখোঁজ এ ব্যক্তির এখনো সন্ধান মিলেনি।
বন্যার সংবাদ সংগ্রহের জন্য একটি ওয়েব পেইজ খুলেছে জেলা প্রশাসন। সেখানে বলা হয়েছে, বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড় ধসে ৭১৮টি বসতবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
প্রবল বর্ষণের ফলে সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে পানি বন্দি মানুষকে উদ্ধারে বিভিন্ন এলাকায় প্রশাসন এবং স্থানীয় উদ্যোগে পর্যাপ্ত পরিমাণ নৌযান নামানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: বান্দরবানের ২ উপজেলায় পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার
বান্দরবানে কেএনএফ’র আইইডি বিস্ফোরণে সেনাসদস্য নিহত, আহত ১
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক পুনরুদ্ধারের গতি বাড়িয়েছে বেইজিং
উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা এগিয়ে নিতে বেইজিং বৃহস্পতিবার থেকে ফাংশান ও মেনটুগু জেলায় বন্যা কবলিত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্থ প্রধান সড়কগুলো পুনরুদ্ধারের গতি বাড়িয়েছে।
টাইফুন জনিত প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে প্রতিকূল পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসতে চীনা কর্তৃপক্ষ ব্যাপক উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা শুরু করেছে।
গত কয়েকদিনে বেইজিংয়ে ১৪০ বছর পূর্বে রেকর্ড শুরু হওয়ার পর থেকে সবচেয়ে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ সময় শহরে ১১ জনের মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন: বন্যাকবলিত এলাকায় অতিরিক্ত ১০০ মিলিয়ন ইউয়ান বরাদ্দ দিল চীন
বেইজিংয়ের কাউন্টিতে মোট ৯৩টি মহাসড়ক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, যার সবকটিই শহরতলিতে অবস্থিত।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বেইজিংয়ের ক্ষতিগ্রস্থ সড়কগুলোর পুনরুদ্ধারের কাজ এখনও ব্যাপক চাপের মুখে রয়েছে। বন্যার পানিতে প্রায় ৮৪০ গ্রামীণ সড়ক ও ৩টি শহুরে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
যেসব কারণে সড়ক পুনরুদ্ধারের কাজের অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে- জনবল ও বৃহৎ যন্ত্রপাতি যুক্ত করা, নিয়মিত কাজ চালিয়ে যাওয়া এবং বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে থাকা।
আরও পড়ুন: চীনে ভয়াবহ বন্যায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২১
চীনে বন্যায় নিহত ২০, নিখোঁজ ২৭
চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের আশেপাশের অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিতে অন্তত ২০ জন নিহত ও ২৭ জন নিখোঁজ হয়েছেন বলে মঙ্গলবার জানিয়েছে দেশটির সরকার। প্রবল বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় রাস্তাঘাট ধ্বংস হয়ে গেছে, গাছ উপড়ে পড়েছে এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
বেইজিং শহরতলির স্কুল ও অন্যান্য সরকারি ভবন এবং নিকটবর্তী তিয়ানজিন ও ঝুওঝৌ শহরে হাজার হাজার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বন্যার তীব্রতা চীনের রাজধানীকে অবাক করে দিয়েছে। বেইজিংয়ে সাধারণত শুষ্ক গ্রীষ্মকালই দেখা যায়। তাছাড়া এ বছর ছিল রেকর্ড পরিমাণ তাপ।
অন্যান্য অঞ্চল, বিশেষ করে চীনের দক্ষিণাঞ্চলে অস্বাভাবিকভাবে মারাত্মক গ্রীষ্মকালীন বন্যা দেখা দিয়েছে, যার ফলে বহু মানুষ মারা গেছে। এদিকে, দেশের অন্যান্য অংশ খরার সঙ্গে লড়াই করছে।
আরও পড়ুন: চীনে বন্যায় ১১ জন নিহত, ২৭ জন নিখোঁজ
বেইজিংয়ের পশ্চিম প্রান্তের মেনটুগু জেলার রাস্তায় জমে থাকা কাদা পানিতে দুর্ঘটনায় পড়ছে গাড়ি।
বেইজিংয়ে ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এবং কর্তৃপক্ষ নিখোঁজ ২৭ জনকে খুঁজছে বলে সরকারি বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে। রাজধানীকে ঘিরে থাকা হেবেই প্রদেশে ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
ফিনিক্স টিভি তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, রাজধানীর ফাংশান জেলার প্রায় ৬০ হাজার বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
সিনহুয়া জানিয়েছে, বেইজিংয়ের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ঝুওঝৌতে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ভারী বৃষ্টিতে বন্যায় ১৫ জনের মৃত্যু, নয়াদিল্লির স্কুল বন্ধ
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং স্থানীয় সরকারগুলোকে আটকা পড়াদের উদ্ধার এবং জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে 'সর্বাত্মক প্রচেষ্টা' চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
বেইজিংয়ের পূর্বাঞ্চলীয় বন্দর তিয়ানজিনের সরকার জানিয়েছে, ইয়ংডিং নদীর তীরবর্তী এলাকা থেকে ৩৫ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
হেবেই প্রদেশের আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, শনিবার থেকে কোথাও কোথাও ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। কিছু এলাকায় ঘণ্টায় ৯০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন: ইতালির প্রাণঘাতী বন্যা জলবায়ু বিপর্যয়ের সর্বশেষ চরমতম উদাহরণ
চীনে বন্যায় ১১ জন নিহত, ২৭ জন নিখোঁজ
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, রাজধানী বেইজিংয়ের আশেপাশের পাহাড়ে বন্যায় ১১ জন নিহত হয়েছেন এবং ২৭ জন নিখোঁজ রয়েছে।
মঙ্গলবার (১ আগস্ট) দেশটির সিসিটিভি চ্যানেল জানিয়েছে, কয়েক দিনের ভারি বৃষ্টির কারণে কর্তৃপক্ষ ট্রেন স্টেশনগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। দুর্বল সম্প্রদায়ের লোকদের স্কুলের জিমে সরিয়ে নিয়েছে। বাড়িঘর ডুবে গেছে এবং রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে।
মৌসুমী বন্যা প্রতি গ্রীষ্মে চীনের বড় অংশে আঘাত হানে, বিশেষ করে আধা-ক্রান্তীয় দক্ষিণে।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে সমাবেশে বোমা হামলায় ৪৪ জন নিহত, আহত প্রায় ২০০
তবে দেশটির উত্তরাঞ্চলে এই বছর ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার খবর পাওয়া গেছে।
জুলাইয়ের শুরুর দিকে চংকিং-এর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চলে বন্যায় কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হয়েছিল এবং সুদূর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় লিয়াওনিং প্রদেশে প্রায় ৫ হাজার ৫৯০ জন লোককে সরিয়ে নিতে হয়েছিল।
হুবেই প্রদেশের মধ্যাঞ্চলে বৃষ্টি-ঝড়ে বাসিন্দারা বাড়িতে আটকে পড়ে।
সাম্প্রতিক ইতিহাসে চীনের সবচেয়ে মারাত্মক এবং সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক বন্যা ছিল ১৯৯৮ সালে। সেবার ৪ হাজার ১৫০ জন মারা গিয়েছিল।
২০২১ সালে হেনানের কেন্দ্রীয় প্রদেশে বন্যায় ৩০০ জনেরও বেশি লোক মারা গিয়েছিল। সেই বছরের ২০ জুলাই রেকর্ড বৃষ্টিপাতের ফলে প্রাদেশিক রাজধানী ঝেংঝো প্লাবিত হয়েছিল।
আরও পড়ুন: ব্রাজিলে কারাগারে দাঙ্গায় নিহত ৫
কুড়িগ্রামে ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। শুক্রবার (১৪ জুলাই) সন্ধ্যা থেকে সকাল ৯ টা পর্যন্ত জেলার সব কটি নদ-নদীর পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে।
তবে পানি কিছুটা কমলেও এখনও বিপৎসীমা সীমার উপরে রয়েছে দুধকুমার নদ ও ধরলা নদীর পানি। এতে জেলার ৯ টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ।
প্রত্যন্ত এলাকার গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা বিছিন্ন হওয়ার পাশাপাশি ঘরবাড়ি তলিয়ে দুর্ভোগে পড়েছে এই অঞ্চলের মানুষজন।
তিস্তা, ধরলা,দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকার নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।
এসব এলাকার বানভাসি মানুষেরা আসবাবপত্র ও গবাদিপশু পশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে উঁচু স্থানগুলোতে। স্যানিটেশন ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের সংকটে ভুগছেন তারা।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, জেলার ধরলা নদীর পানি কমে সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার এবং দুধকুমার নদের নুন খাওয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অন্যদিকে, ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেলেও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়ন কদমতলা গ্রামের হোসেন আলী বলেন, গত দু’দিন ধরে পানি বেড়েই চলছে। পানি বাড়ার কারণে এলাকার অনেক ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। ধানের বীজতলা ও পটলের খেত এখন পানির নিচে। সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় নৌকা ছাড়া বের হওয়ার কোনো উপায় নাই।
কুড়িগ্রাম সদরের চর জগমন গ্রামের মো. হযরত আলী বলেন, পানি ঘরে ঢুকে খাট তলিয়ে গেছে। রান্নার চুলা পানির নিচে, ঘরে চাল থাকলেও আগুন জ্বালানোর কোনো উপায় নেই।
চর জগমন গ্রামের ছালেহা বেগম বলেন, কিছুদিন আগে পানি উঠার সঙ্গে সঙ্গে নেমে গেছে। এবার পানি বাড়ার ধরন আলাদা। ঘরের অর্ধেক পানিতে ডুবে গেছে। গত দু’দিন ধরে ঘরের জিনিসপত্র ও হাঁস-মুরগি নিয়ে তাবু টাঙিয়ে ব্রিজে আছি। কেউ আমাদের খোঁজ-খবর নেয় না।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এই পানি বৃদ্ধির অবস্থা তিন থেকে চারদিন পর্যন্ত উঠানামা করতে পারে। তারপর পানি নেমে যাবে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, কুড়িগ্রামে বন্যায় ১২হাজার পরিবার পানিবন্দী এবং নদী ভাঙনের শিকার ১৫০০ পরিবার। এসব বন্যাকবলিতদের জন্য সাড়ে ৮ লাখ টাকা, ২৭৫ মেট্রিক চাল এবং ৩০০ শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আমরা বন্যার্তদের তালিকা করছি, তালিকা পেলে উপবরাদ্দ দেওয়া হবে।
গত ১৪ জুলাই শুক্রবার বিভিন্ন বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে জেলায় ৮০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বন্যায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
কুড়িগ্রামের সবকটি নদীর পানি বাড়তে শুরু করায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার এবং ধরলার পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে দুধকুমার নদের পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে স্থানীয় সড়ক তলিয়ে গিয়ে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গত ৩-৪দিন ধরে বন্যায় প্লাবিতরা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
বাড়ির ভেতরে পানি ওঠায় তারা ঠিকমতো রান্নাও করতে পারছেন না। স্যানিটেশন ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছেন বন্যাকবলিত এসব পরিবার।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বন্যায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বন্যার্তদের তালিকা করা হচ্ছে। এছাড়া বন্যাকবলিত ৮ শতাধিক পরিবারে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এই পানি বৃদ্ধির অবস্থা ৩ থেকে ৪দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। তারপর পানি নেমে যাবে।
কুড়িগ্রাম পাউবো’র কোনো বাঁধ বন্যায় ডুবে যায়নি বলে নিশ্চিত করে তিনি জানান, নাগেশ্বরী উপজেলায় একটি সড়ক সংস্কারের কাজ করেছে পাউবো। সেটির দুটি অংশ প্লাবিত হয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, ইতোমধ্যে ৬৫ মেট্রিক টন চাল উপজেলাগুলোতে উপবরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আমাদের কাছে ৫৮৫ মেট্রিকটন চাল, ১০ লাখ টাকা এবং ১ হাজার ৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার মজুদ রয়েছে। আমরা বন্যার্তদের তালিকা করছি, তালিকা পেলে উপবরাদ্দ দেওয়া হবে।
এদিকে, শুক্রবার বিভিন্ন বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসন থেকে ৮০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপরে
কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে
কুড়িগ্রামে বন্যায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী
কুড়িগ্রামের দুধকুমার নদের পানি বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) থেকে হু-হু করে বেড়ে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। ফলে জেলার প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
শুক্রবার (১৪ জুলাই) দুপুর দেড়টার দিকে কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার পোড়ারচর গ্রামের শাপলা জানান, সকালে রান্নাঘরের মেঝে তলিয়ে যাওয়ায় রান্না করতে পারছেন না। জিনিসপত্র সরাতে দুপুর গড়িয়ে গেছে।
তার স্বামী বাবুল আলী এক সন্তানকে কোলে নিয়ে আছেন, অপর সন্তানটি তার শরীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। শাপলা তখন চাল আর কাঁঠালের বিচি ভাজছেন। এই খেয়েই তাদের দিন পার করতে হবে। বন্যা হলেই এমন দুর্দশায় পড়ে এসব পরিবার।
পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ ভগবতীপুর গ্রামের নার্গিস নামের আরেক নারী বলেন, চার দিন থেকে পানিবন্দী হয়ে আছি। কেউ খোঁজখবর নেয় না। ঘরের চৌকিতে পানি ওঠায় পাশের উঁচু বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে আছি। এই গ্রামে প্রায় ৪৫/৫০টি বাড়িতে পানি উঠেছে।
নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া ইউনিয়নের চর কাফনা গ্রামের নুর বখত জানান, গতকাল থেকে পানির তোড় বেড়েছে। নিচু এলাকার বাড়িঘরে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। লোকজন গবাদিপশু নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপরে