বন্যা
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এসএসসি পরীক্ষার্থীরা নতুন বই পাবে: শিক্ষামন্ত্রী
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার এসএসসিপরীক্ষার্থীদের মাঝে আগামী ২৪ জুলাইয়ে মধ্যে নতুন বইপত্র সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
সোমবার সকালে সিলেট সার্কিট হাউজে শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় শিক্ষামন্ত্রী এ কথা জানান।
এসময় মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অ্যাসেসমেন্ট করেছি, কতজন শিক্ষার্থীর বই নষ্ট হয়েছে বা হারিয়ে গেছে। সেই অ্যাসেসমেন্ট অনুযায়ী আমরা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বইগুলো নিয়ে এসে দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। এই মাসের ২৪ তারিখের মধ্যে আমাদের সকল এসএসসি পরীক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে যাবে। এসএসসি ছাড়াও অন্যান্য ক্লাসের শিক্ষার্থীরা যারা আছে, তাদের হাতেও বই পৌঁছে যাবে।’
মন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে যে লার্নিং গ্যাপটা হয়েছে, সেটা পূরণের জন্য আমরা গবেষণা করে বের করেছি যে কোথায় কোথায় সমস্যা আছে। সেটার পূর্ণ একটা পরিকল্পনা করে রেমেডিয়াল ক্লাসের পরিকল্পনা হয়তো আমরা এক সপ্তাহ-দশদিনের মধ্যে প্রকাশ করবো। তেমনি পরীক্ষার্থী যারা, বিশেষ করে বন্যা উপদ্রুত এলাকায় পরীক্ষার্থী যারা, তারা একটু হয়তো পিছিয়ে পড়েছে। শিক্ষকরা সহযোগিতা করলে তাদের সুবিধা হবে।
আরও পড়ুন: স্কুল থেকে বন্যার পানি নেমে গেলেই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা: শিক্ষামন্ত্রী
দীপু মনি বলেন, ‘সিলেটের নেতৃবৃন্দের কাছে শুনলাম প্রায় ১২০ বছরের মধ্যে এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা। হঠাৎ করেই হয়েছে (বন্যা)। বহু কিছু, বহু সম্পদ রক্ষা করা যায়নি। এই বন্যার মধ্যে আমাদের পড়াশোনা বন্ধ রাখতে হয়েছে, আমাদের পরীক্ষা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এখানে আমাদের শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আছেন, তারা সেগুলোর (ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের) একটা অ্যাসেসমেন্ট করে আমাদের কাছে দ্রুত পাঠাবেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমরা চেষ্টা করবো ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার কাজ করতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে যাচ্ছে, তবে এখনও অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন। সবাই আশা করছেন, তারা দ্রুত ফিরে যাবেন (নিজেদের বাড়িতে)। আমরা যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিতে পারি, সেটার চেষ্টা করতে হবে। তার আগে শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রস্তুত করতে হবে।’
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘বাংলাদেশের যে উন্নয়ন, আমাদের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটি অর্জন করতে হলে এর মূল হাতিয়ার কিন্তু শিক্ষা। আমাদের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য যতো চ্যালেঞ্জ আছে, যতো সম্ভাবনা আছে, এসব মোকাবিলা করে সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে শিক্ষাই মূল হাতিয়ার। আমরা কিন্তু এখন আর শিক্ষায় আধুনিকায়ন, পরিবর্তন বা সংস্কার করতে বলছি না। এখন আমরা বলছি একেবারে রূপান্তর ঘটাতে হবে, ট্রান্সফরমেশন হতে হবে। শুধু চেইঞ্জ বা রিফর্ম না। সেজন্য আমরা নতুন কারিকুলাম করেছি।’
আরও পড়ুন: দেশবিরোধী অপশক্তি পাঠ্যবই নিয়ে গুজব ছড়িয়ে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করছে: শিক্ষামন্ত্রী
মন্ত্রী বলেন, ‘সারাদেশে ৬২টি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন কারিকুলামের পাইলটিং চলছে। এর মধ্যে সিলেটের তিনটি প্রতিষ্ঠান আছে।’
সিলেট শিক্ষা বোর্ডের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে যা কিছু করা প্রয়োজন, তা করার আশ্বাস প্রদান করেন শিক্ষামন্ত্রী।
এছাড়াও সভায় বন্যাপরবর্তী সময়ে সিলেট জেলার শিক্ষা কার্যক্রম, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,পাঠ্যপুস্তকের চাহিদা, এসএসসি’র নতুন পাঠ্যক্রম, এমপিওভুক্তি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
সভায় সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবুর রহমান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ (মাউশি) সিলেটের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল মান্নান খান, সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান রমা বিজয় সরকার এবং এ বিভাগের চার জেলার শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞান সৃষ্টির জায়গা: শিক্ষামন্ত্রী
বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১২৩
রবিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট জেলায় আরও দুজনের মৃত্যু হওয়ায় দেশে ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১২৩ জনে দাঁড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, তারা দুজনই বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। এছাড়াও, এই সময়ের মধ্যে প্রায় ২০ হাজার ১৩৪ জন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত ১৭ মে থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত মোট মৃত্যুর রেকর্ড করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত
মোট মৃতের মধ্যে বন্যার পানিতে ডুবে ৯৬ জন, বজ্রপাতে ১৫, সাপের কামড়ে দুই, ডায়রিয়ায় একজন এবং অন্যান্য কারণে নয়জনের মৃত্যু হয়েছেন। তাছাড়া মৃতদের মধ্যে সিলেট জেলায় ৬৯ জন, ময়মনসিংহে ৪১ জন, রংপুরে ১২ জন এবং ঢাকা বিভাগে একজন মারা গেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বন্যা কবলিত ৭০ উপজেলার মধ্যে সিলেট বিভাগে ৩৩, রংপুর বিভাগে ১৬, ময়মনসিংহ বিভাগে ২০ এবং চট্টগ্রাম বিভাগে একটি উপজেলা রয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যায় লণ্ডভণ্ড সিলেট-ছাতক রেলপথ
সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কুড়িগ্রাম সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা। এই সব জেলাগুলোতে যথাক্রমে ১৩, ১১, ১০ ও নয়টি উপজেলা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
চীনে আকস্মিক বন্যায় ১২ জনের মৃত্যু
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে আকস্মিক বন্যায় অন্তত ১২ জন মারা গেছেন এবং আরও কয়েক হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রবিবার দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এতথ্য জানিয়েছে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন নিউজ আউটলেট সিজিটিএন জানিয়েছে, দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ সিচুয়ানে মুষলধারে বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় কমপক্ষে ছয়জন মারা গেছেন এবং আরও ১২ জন নিখোঁজ রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ৩০০ নাগরিককে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারকারী সিসিটিভি জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ গানসুর লংনান শহরে ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এবং তিন হাজার জনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
গত প্রায় দুদিনে দেশটির সর্বোচ্চ বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে ৯৮ দশমিক ৯ মিলিমিটার, যা জুলাইয়ের গড় বৃষ্টিপাত থেকে প্রায় দ্বিগুণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ ধরনের চরম আবহাওয়ার ঘটনা ঘটছে। উষ্ণ হাওয়ার কারণে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
আরও পড়ুন: চীনে বন্যার কারণে কয়েক হাজার লোককে বাড়ি থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে
চীনে প্রবল বর্ষণে নিহত ১৫, নিখোঁজ ৩
বন্যায় ভেসে গেছে ৮ কোটি টাকার মাছ-চিংড়ি-কাঁকড়া
সাতক্ষীরায় খোলপেটুয়া নদীর উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ ভেঙে পানির স্রোতে ভেসে গেছে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের মাছের ঘের ও কাঁকড়া খামার। বাঁধ ভাঙার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও বাঁধ মেরামত করা যায়নি। এ কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বাঁধ ভেঙে পানিতে ভেসে গেছে এক হাজার ৬৫৫ হেক্টর চিংড়ি ও কাঁকড়া খামার। এর মধ্যে পুকুর রয়েছে ১০০টি। চিংড়ি, কাঁকড়া, সাদা মাছ, মাছের পোনাসহ আনুষঙ্গিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আট কোটি ২৮ লাখ টাকার।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা প্রস্তুত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তালিকা প্রস্তুত সম্পন্ন হলে সেটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় প্রণোদনার চেষ্টা করবেন।
আরও পড়ুন: বন্যা: সিলেট নগরীর সড়কে ক্ষতি ২০০ কোটি টাকা
এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু ১৫ সেপ্টেম্বর: দীপু মনি
বন্যার কারণে স্থগিত হওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
রবিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা আগস্টের মাঝামাঝি পরীক্ষা শুরু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আগস্টে দেশে আরেকটি বন্যার সম্ভাবনা থাকায় আমরা সেপ্টেম্বরে পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
অল্প সময়ের মধ্যেই এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান দিপু।
সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এখনো সিলেটের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কিছু সমস্যা রয়েছে এবং আমরা ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে বন্যা কবলিত জেলার শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করতে পারব।
আরও পড়ুন: এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা: রবিবার ঘোষণা হতে পারে নতুন রুটিন
তিনি বলেন, সিলেটে মোট ৬৮৩ সেট পাঠ্যবই এবং সুনামগঞ্জে ১০ হাজার ৫৮৬টি বই বিতরণ করা হবে।
উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, নভেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু করতে পারবো বলে আশা করছি।
তিনি বলেন, ‘আমরা ২০২৩ সালে ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু করতে সক্ষম হব।
দেশে বন্যা পরিস্থিতির কারণে ১৯ জুন থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকা সব শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ১৭ জুন স্থগিত করা হয়।
আরও পড়ুন: স্কুল থেকে বন্যার পানি নেমে গেলেই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা: শিক্ষামন্ত্রী
এর আগে করোনভাইরাস মহামারির কারণে এ পরীক্ষা প্রায় চার মাস পিছিয়েছিল। সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসে এসএসসি পরীক্ষা হয়।
গত ৬ জুলাই দীপু মনি বলেন, বন্যা কবলিত এলাকার যেসব শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই হারিয়েছে তাদের নতুন বই দেয়া হবে।
বই বিতরণ শেষ হলে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে একটু সময় দিতে হবে বলে যোগ করেন তিনি।
বন্যার্ত শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যপুস্তক হস্তান্তরের পরই সরকার স্থগিত এসএসসি পরীক্ষা নেবে বলেও জানান মন্ত্রী।
সাতক্ষীরায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি
জোয়ারের পানির স্রোতে খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ১০টি গ্রামের প্রায় সাড়ে তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ বিশেষ করে নারী ও শিশুরা খাদ্য, পানীয় জল এবং তীব্র স্বাস্থ্য সংকটে পড়েছে। এছাড়া জোয়ারের পানিতে এক হাজার একর মাছের ঘের ও ফসলি জমি ভেসে গেছে, এতে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, প্রবল জোয়ারের চাপে পশ্চিম দুর্গাবাটির সাইক্লোনশ্লেটার সংলগ্ন এলাকায় খোলপেটুয়া নদীর ২০০ ফুট এলাকাজুড়ে উপকুল রক্ষা বেড়িবাঁধ ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার পরিবারের হাজার হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হয়।
আরও পড়ুন: বন্যায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১০: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
শিগগিরই ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কার করা না হলে উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড স্থানীয়দের সহযোগিতায় ইতোমধ্যে বাঁধের পাইলিং কাজ শুরু করেছে।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. হুমায়ুন কবির, শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম আতাউল হক দোলন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আক্তার হোসেন, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম প্রমুখ ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে বন্যায় ১৪০ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি
ডিসি হুমায়ুন কবির জানান, জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে খাওয়ার পানি ও খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে। এছাড়া এলাকার মানুষ যেন স্থায়ী সমাধান পায় সেজন্য ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কারের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বন্যা: সিলেট নগরীর সড়কে ক্ষতি ২০০ কোটি টাকা
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেট নগরীর ছোট বড় একশ’র ওপর সড়কে ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আর পুরো জেলার ক্ষতির পরিমাণের প্রায় দশগুণ বেশি।
সওজ, এলজিইডি, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে- পাহাড়ি ঢলে এবার সবচেয়ে বড় ধকল গেছে সড়কের ওপর দিয়ে। আর সড়ক ডুবে যাওয়ার পরও যানবাহন চলাচল অব্যাহত ছিল। এতে করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বেশি হয়েছে।সিলেট নগরের ভেতরে রয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ দু’টি সড়ক। এর মধ্যে একটি আম্বরখানা থেকে শুরু হওয়া সুনামগঞ্জ রোড ও অপরটি কুমারপাড়া হয়ে সুবহানীঘাট সড়ক। দুটি সড়কের ওপরেই ছিল পানি। যানবাহনও চলেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ দুটি সড়ক। এরই মধ্যে সড়ক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন সিটি মেয়র ও প্রধান প্রকৌশলী। দুটি সড়কে আপাতত ইট-সুরকি ফেলে যান চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। বর্ষার মৌসুমের পর স্থায়ীভাবে সমাধানের আশ্বাস দেয়া হয়েছে।সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় ৬৫ কিলোমিটার সড়ক পানির নিচে নিমজ্জিত ছিল। ওই সময় সড়ক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পানি নেমে যাওয়ার পর ধ্বংসচিত্র ভেসে উঠেছে।
আরও পড়ুন: বন্যা: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১২১সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, টাকার অঙ্কে সিলেট নগরের সড়কে ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।নগরের উপ-শহরে ছোট-বড় মিলিয়ে রয়েছে একশ’র ওপরে রাস্তা। এছাড়া সুরমা নদীর তীরবর্তী এলাকার সব সড়কই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভিআইপি সড়ক তালতলা থেকে শেখঘাট পয়েন্ট পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর মধ্যে কিছু কিছু স্থানে মেরামত করা হচ্ছে। তবে সব এখনও করা সম্ভব হয়নি। সওজ’র যে সড়কগুলো রয়েছে সেগুলো দ্রুত মেরামতের জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে।সিলেট সিটি করপোরেশনের ২২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এডভোকেট সালেহ আহমদ সেলিম জানিয়েছেন, তার ওয়ার্ডে ১০৮টি সড়ক রয়েছে। সবক’টি সড়কই ক্ষতিগ্রস্ত। দুই দফা বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে উপ-শহরের সড়ক। মানুষের কষ্ট লাঘবে দ্রুততম সময়ে ভেঙে যাওয়া সড়ক মেরামতের দাবি জানান তিনি।
আরও পড়ুন: আগামী মাসে আরেকটি বন্যার পূর্বাভাস রয়েছে: কৃষিমন্ত্রী
বন্যা: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১২১
দেশের অধিকাংশ জায়গায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকলেও শনিবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট জেলায় আরও দুই জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে বন্যায় মোট প্রাণহানির সংখ্যা ১২১ জনে দাঁড়িয়েছে।
নিহত দুজনই বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
১৭ মে থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত মৃত্যুর এ সংখ্যা রেকর্ড করা হয়েছে।
মোট মৃতদের মধ্যে বন্যার পানিতে ডুবে ৯৪ জন, বজ্রপাতে ১৫ জন, সাপের কামড়ে দুজন, ডায়রিয়ায় একজন এবং অন্যান্য কারণে নয়জন মারা গেছেন।
নিহতদের মধ্যে সিলেটে ৬৭ জন, ময়মনসিংহে ৪১ জন, রংপুরে ১২ জন এবং ঢাকা বিভাগে একজন মারা গেছেন।
বন্যা কবলিত ৭০টি উপজেলার মধ্যে সিলেট বিভাগে ৩৩টি, রংপুর বিভাগে ১৬টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ২০টি এবং চট্টগ্রাম বিভাগে একটি উপজেলা রয়েছে।
সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা ও কুড়িগ্রাম সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা যেখানে যথাক্রমে ১৩, ১১, ১০ ও ৯টি উপজেলা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন: আগামী মাসে আরেকটি বন্যার পূর্বাভাস রয়েছে: কৃষিমন্ত্রী
সুনামগঞ্জে নামছে বন্যার পানি
বন্যা: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১৯
দেশের অধিকাংশ জায়গায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকলেও শুক্রবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় মৌলভীবাজার জেলায় আরেকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে বন্যায় মোট প্রাণহানির সংখ্যা ১১৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
নিহত ব্যক্তি বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
১৭ মে থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত মৃত্যুর এ সংখ্যা রেকর্ড করা হয়েছে।
মোট মৃতদের মধ্যে বন্যার পানিতে ডুবে ৯২ জন, বজ্রপাতে ১৫ জন, সাপের কামড়ে দুজন, ডায়রিয়ায় একজন এবং অন্যান্য কারণে নয়জন মারা গেছেন।
নিহতদের মধ্যে সিলেটে ৬৫ জন, ময়মনসিংহে ৪১ জন, রংপুরে ১২ জন এবং ঢাকা বিভাগে একজন মারা গেছেন।
বন্যা কবলিত ৭০টি উপজেলার মধ্যে সিলেট বিভাগে ৩৩টি, রংপুর বিভাগে ১৬টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ২০টি এবং চট্টগ্রাম বিভাগে একটি উপজেলা রয়েছে।
সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা ও কুড়িগ্রাম সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা যেখানে যথাক্রমে ১৩, ১১, ১০ ও ৯টি উপজেলা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে বন্যায় ৭২ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত: জাতিসংঘ
বন্যা থেকে বাঁচতে নদীগুলো খনন করতে হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
৬৬ বছরের মধ্যে জুলাইয়ে সিলেটে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা!
বৃহস্পতিবার সিলেটে ৩৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যা এ জেলায় গত ৬৬ বছরের মধ্যে জুলাই মাসের উষ্ণতম দিন।
৬৪ বছরের মধ্যে জুন মাসে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের পর জেলাজুড়ে ব্যাপক বন্যার পর সিলেটে এখন তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যৈষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের উচ্চ তাপমাত্রা জেলায় সর্বশেষ ১৯৫৬ সালের জুলাই মাসে রেকর্ড করা হয়েছিল। বুধবার তাপমাত্রা ৩৭ দশমিক ৩ ও মঙ্গলবার ৩৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।’
আরও পড়ুন: ২৭ জেলায় মৃদু তাপপ্রবাহ
বৃহস্পতিবার সিলেট নগরীর সড়কগুলো ছিল জনশূন্য। মুষ্টিমেয় লোকজন যারা বিকালে বের হয়েছেন তাদের হাতে ছাতা ও পানির বোতল দেখা গেছে।
এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, চলমান তাপপ্রবাহ আরও এক বা দুদিন অব্যাহত থাকতে পারে এবং ৭২ ঘণ্টা পর বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ তারিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, ‘কিছু জায়গায় সামান্য বৃষ্টি হতে পারে। তবে তা গরম কমাতে যথেষ্ট হবে না। ১৭ বা ১৮ জুলাইয়ের পরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়তে পারে।’