বন্যা
আগামী মাসে আরেকটি বন্যার পূর্বাভাস রয়েছে: কৃষিমন্ত্রী
দেশে আগামী মাসে (আগস্টে) আরেকটি বন্যা হতে পারে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, ‘দেশের কৃষি প্রকৃতিনির্ভর এবং কৃষি সবসময়ই বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকে। সাম্প্রতিক বন্যায় সিলেট, সুনামগঞ্জসহ ১২টি জেলায় ফসলের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আগস্টে আরেকটি ভয়াবহ বন্যার পূর্বাভাস রয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছে, এটি একটি রুটিন কাজ। আমরা ব্যাপক পুনর্বাসন কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। একইসাথে, নাবী জাতের (লেইট ভ্যারাইটি) ধান চাষে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।’
বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের কনফারেন্স রুমে কৃষিখাতে সরকারি বেসরকারি অংশিদারিত্ব (পিপিপি) নিয়ে পর্যালোচনা সভায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, কৃষিতে বন্যা, খরা, সাইক্লোনসহ যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার্বক্ষণিক প্রস্তুতি রয়েছে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষিতে সরকারের এখন মূল লক্ষ্য হলো কৃষিকে সত্যিকার অর্থে বাণিজ্যিকীকরণ করা, যাতে কৃষকের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটে। সেলক্ষ্য সরকার কাজ করছে। তবে এক্ষেত্রে বেসরকারি শিল্পোদ্যোক্তাদেরও সহযোগিতা প্রয়োজন। বিশেষ করে কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও যান্ত্রিকীকরণে বেসরকারি শিল্পোদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। কৃষিযন্ত্র অনেক ব্যয়বহুল, ৯০ শতাংশ যন্ত্র আমদানিনির্ভর। এসব কৃষিযন্ত্র আমরা দেশে উৎপাদন করতে চাই। পিপিপি এখানে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারবে।
বেসরকারি শিল্পোদ্যোক্তারা এগিয়ে আসলে তাদেরকে প্রযুক্তিগত, অর্থনৈতিক, পলিসিসহ সকল বিষয়ে সহযোগিতা প্রদান করা হবে বলে জানান মন্ত্রী। এছাড়া, বর্তমানে ডাল, তেলসহ যেসব কৃষিপণ্য আমদানি করতে হয়, তা উৎপাদনে ৪ সতাংশ সুদে ঋণ দেয়া হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে সকল কৃষিপণ্যে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়ার প্রচেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
সভা শেষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী বলেন, চাল আমদানির ফলে কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই। ‘বাজার স্থিতিশীল রাখতেই সরকার চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে।
তিনি বলেন, চাল আমদানির আমাদের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টার্গেট আছে। সেই পরিমাণ চাল দেশে এসে গেলে আমদানি বন্ধ করে দেয়া হবে। আমরা প্রতিদিনই নিবিড়ভাবে বাজার মনিটর করছি। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয় একত্রে কাজ করছে। কাজেই চাল আমদানির ফলে দেশীয় কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই।
কৃষিসচিব মো. সায়েদুল ইসলামের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সংস্থা প্রধান এবং কৃষি-শিল্প উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
পড়ুন: দেশের নির্বাচনে বিদেশিরা ভূমিকা রাখতে পারবে না: রাজ্জাক
বন্যা থেকে বাঁচতে নদীগুলো খনন করতে হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বন্যা: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১৮ জনে পৌঁছেছে
দেশের অধিকাংশ জায়গায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকলেও বুধবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় নেত্রকোণা ও হবিগঞ্জে আরও দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে বন্যায় মোট প্রাণহানির সংখ্যা ১১৮ জনে দাঁড়িয়েছে।
নিহতদের সবাই বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
১৭ মে থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত মৃত্যুর এ সংখ্যা রেকর্ড করা হয়েছে।
মোট মৃতদের মধ্যে বন্যার পানিতে ডুবে ৯১ জন, বজ্রপাতে ১৫ জন, সাপের কামড়ে দুজন, ডায়রিয়ায় একজন এবং অন্যান্য কারণে নয়জন মারা গেছেন।
নিহতদের মধ্যে সিলেটে ৬৪ জন, ময়মনসিংহে ৪১ জন, রংপুরে ১২ জন এবং ঢাকা বিভাগে একজন মারা গেছেন।
বন্যা কবলিত ৭০টি উপজেলার মধ্যে সিলেট বিভাগে ৩৩টি, রংপুর বিভাগে ১৬টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ২০টি এবং চট্টগ্রাম বিভাগে একটি উপজেলা রয়েছে।
সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা ও কুড়িগ্রাম সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা যেখানে যথাক্রমে ১৩, ১১, ১০ ও ৯টি উপজেলা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে নামছে বন্যার পানি
বন্যা থেকে বাঁচতে নদীগুলো খনন করতে হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
গাছের ডালে জুলেখা ও রাকিবের ১৭ দিন!
বন্যায় ঘর হারিয়ে এতিম দুই ভাই-বোন গাছের ডালে বাস করেছে। ১৭ দিন মাঁচা বেঁধে থাকার পর এখন তারা এক প্রতিবেশির বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাক ইউনিয়নের ঢালাগাঁও গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।
বোন জুলেখার বয়স (২২) ও ছোট ভাই রাকিবের বয়স (১৩)।
নিঃস্ব এই পরিবারটি প্রধানমন্ত্রীর ১০ হাজার টাকা সহায়তা পেয়েছে। এই সহায়তা পেয়ে তারা খুশি। তবে এ টাকা দিয়ে একটি ঘর নির্মাণ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে তারা। এলাকাবাসী এতিম এ দুই ভাই-বোনের পাশে দাঁড়াতে বিত্তশালীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে নামছে বন্যার পানি
জানা যায়, শিমুলবাক ইউনিয়নের ঢালাগাঁও গ্রামে একটি মাঁচা বেঁধে বাস করত জুলেখা ও রাকিব। তাদের বাবা জবান আলী ও মা অনেক আগেই মারা গেছেন। এতিম দুই ছেলেমেয়ে সাহায্য সহায়তায় নিয়ে দিনাযাপন করে আসছে। বন্যায় ঘরের সব মালামালসহ মাথা গোঁজার ঠাঁইটি ভাসিয়ে নেয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়ে তারা। কোথায়ও আশ্রয় না পেয়ে বড় একটি গাছের ডালে আশ্রয় নেয়। এখানেই ১৭ দিন কাটে তাদের।
জুলেখা জানায়, হঠাৎ করে বন্যার পানি এসে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে। আমরা দুই ভাই-বোন ভয়ে কাঁপতে থাকি। ১৭ তারিখ সকাল বেলা দেখি চোখের সামনেই বানের তোড়ে ঘরটি ভেসে যাচ্ছে। চারদিকে নৌকাও নেই। আশ্রয়ের কোন জায়গাও নেই। সবার ঘরে পানি। দিশেহারা হয়ে ভেসে যাওয়া বাঁশ, টিন, কাঠ ও ঘরের আসবাবপত্র কোন রকম ধরে পাশের একটি গাছের ডালে ওঠাই। এবং এখানেই দুই ভাইবোন মিলে মাঁচা বাঁধি। এভাবেই ১৭ দিন খেয়ে না খেয়ে থাকার পর দালান একটি বাড়িতে উঠি।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘর নির্মাণের জন্য ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। কয়েকদিন পরে ঘর নির্মাণে হাত দিব।
শিমুলবাক ইউপি চেয়ারম্যান শাহিনুর রহমান শাহিন জানান, ‘অসহায় এ পরিবারকে চাল, ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু খাবার দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর ১০ হাজার টাকা হাতে পৌঁছে দিয়েছি এবং অন্য একটি বাড়িতে তাদের থাকার ব্যবস্থা করেছি। আমি নিজ উদ্যোগে এতিম ছেলেমেয়ে দুটির থাকার জন্য মাটি ভরাট করে একটি ঘর তৈরি করে দেব।’
আরও পড়ুন: বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১৩: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
সুনামগঞ্জে নামছে বন্যার পানি
ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলের কারণে সৃষ্ট বন্যায় সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় প্লাবিত অঞ্চলগুলোর পানি কমতে শুরু করেছে।
বন্যার পানি উপজেলার নিন্মাঞ্চলের জনবসতি থেকে নামলেও বসত বাড়িঘরের নাজুক অবস্থার জন্য এখনো ঘরে ফিরতে পারেনি বানবাসি লোকজন। তারা বাধ্য হয়েই বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। বন্যায় এ উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে হলে জানা গেছে।
বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে ১নং আটগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আন নোমান জানান, তার ইউনিয়নে প্রায় তিনশ’ পরিবারের বসত ঘর সম্পূর্ণরূপে ও দুই হাজার পাঁচশ’ বাড়ির আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যায় আরও ২ জনের মৃত্যু, নিহত বেড়ে ১১২
তিনি আরও জানান, পশুখাদ্য নষ্ট হয়েছে প্রায় কোটি টাকার ওপরে।
২নং হবিবপুর ইউপি চেয়ারম্যান সুবল চন্দ্র দাস বলেন, তার ইউনিয়ন এলাকায় চলতি বন্যায় প্রায় তিনশ’ পরিবারের বসত ঘর সম্পূর্ণরূপে ও তিন হাজার তিনশ’টির বেশি পরিবার আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং প্রায় দেড় কোটি টাকার ওপরে পশু খাদ্যের ক্ষতি হয়েছে।
৩নং বাহাড়া ইউনিয়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, এই ইউনিয়নে প্রায় ৩৫০টির বেশি বসত ঘর সম্পূর্ণরূপে ও এক হাজার পাঁচশ’টির বেশি পরিবার আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং পশুখাদ্যের ক্ষতি হয়েছে কোটি টাকার ওপরে।
এছাড়া ৪নং শাল্লা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার মিয়া জানান, তার ইউনিয়নে মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের দেয়া প্রায় সবকটি ঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। তাছাড়া প্রায় ২৫০টির বেশি পরিবারের বসত ঘর সম্পূর্ণরূপে ও তিন হাজার দুইশ’টির বেশি পরিবার আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে বন্যায় ৭২ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত: জাতিসংঘ
তিনি আরও জানান, তার ইউনিয়ন এলাকায় প্রায় তিন কোটি টাকার পশুখাদ্যের ক্ষতিসহ কৃষকদের সংরক্ষিত প্রায় ছয়শ’ মেট্রিক টন খাদ্যশস্যের ক্ষতি হয়েছে।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু তালেব বলেন, বন্যায় লোকজনের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনো চুড়ান্ত ভাবে নির্ধারণ করা হয়নি। তবে, প্রাথমিকভাবে পূর্ণাঙ্গ ক্ষতিগ্রস্থ ছয়শ’ ৩০টি পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল হতে নগদ ১০ হাজার টাকা করে মোট ৬৩ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, উপজেলা প্রশাসন এখন পর্যন্ত ৩০কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করতে পেরেছে।
বন্যায় ত্রাণ বিতরণ বাড়ানোর আহ্বান রাষ্ট্রপতির
দেশের বন্যা কবলিত মানুষের কাছে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিতে সকলের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
রবিবার বঙ্গভবনে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, সরকার দেশের বন্যা কবলিত উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
দেশের বিত্তবানদের ত্রাণ কার্যক্রম জোরদারে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি।
বঙ্গভবনের দরবার হলে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় শেষে তিনি এ আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: বঙ্গভবনে ঈদের নামাজ আদায় করলেন রাষ্ট্রপতি
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিকে চাপে ফেলেছে।
তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে প্রণোদনা প্যাকেজ প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।’
ঈদের আগে পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার তিন কোটি মানুষের জন্য আশীর্বাদ বলে উল্লেখ করেন আবদুল হামিদ।
বন্যা থেকে বাঁচতে নদীগুলো খনন করতে হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বন্যা থেকে বাঁচতে নদী খননের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেন, ‘বন্যা থেকে বাঁচতে নদীগুলো খনন করতে হবে। অন্যথায় পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা নেই। প্রকৃতিকে অস্বীকার করে চলা যায় না। তাই বন্যা নিয়ন্ত্রণে প্লানিং করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
শনিবার (৯ জুলাই) সকালে সদর উপজেলার নয়াবাজারে সিলেট জেলা যুবলীগের উদ্যোগে বন্যাদুর্গতদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী ও ঈদ উপহার বিতরণকালে তিনি এসব কথা বলেন।
আব্দুল মোমেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন সিলেটে কোন নদী সংস্কার হয়নি, পানি নিস্কাশনের কোন ব্যবস্থা নেই। এক সময় সিলেট শহর দীঘির শহর ছিল, চারপাশে পুকুর ছিল। আজ কিছুই নেই। শুধু বিল্ডিং আর বিল্ডিং। যত জলাশয় ছিল, দখল হয়ে গেছে। সাগরদিঘীতে এক ফুটা পানিও নেই। এসব কারণেই তো এতো বড় বন্যা দেখা দিয়েছে।’
মন্ত্রী বলেন, বন্যার সময় আমাদের সফলতা হলো- তড়িৎ গতিতে মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তাদেরকে খাবারের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। যার ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকটা কমেছে।
তিনি বলেন, ১৬ জুন রাতে স্থানীয় একজন চেয়ারম্যান রাত ৩টার দিকে আমাকে বন্যার ছবি দিলেন। আমি দেখলাম, আমার সিলেট পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। তখনই দুর্যোগ মন্ত্রীকে ফোন দিলাম, বললাম- আমার সিলেট শেষ। তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। মন্ত্রী বললেন- চিন্তার কোন কারণ নেই, প্রয়োজনীয় খাবার, টাকা-পয়সা আছে। যা লাগবে বলবেন।
মোমেন বলেন, বন্যার মানুষ থেকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চাইলাম। প্রধানমন্ত্রী নৌকার ব্যবস্থা করে দিলেন। সেনাবাহিনী পাঠিয়ে মানুষকে উদ্ধার করার ব্যবস্থা করলেন। এবারের বন্যায় সিলেটে সরকারের পক্ষ থেকে যা সাহায্য এসেছে তা আর কখনও আসেনি।
আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বন্যায় সময় নেতাকর্মীরা যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তা প্রশংসার দাবি রাখে। তারা শুকনো খাবার দিয়েছেন, ত্রাণ দিয়েছেন। এজন্য বলি, আওয়ামী লীগ সরকার বারবার দরকার। আওয়ামী লীগ জনগণের সরকার। জনগণের মান উন্নয়নে এ সরকার কাজ করে।
জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ ভিপির সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শামীম আহমদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
পড়ুন: বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১৩: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
সিরাজগঞ্জে বন্যায় ১৪০ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি
বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১৩: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
দেশের অধিকাংশ জায়গায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকলেও শুক্রবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় হবিগঞ্জে আরও এক জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে বন্যায় মোট প্রাণহানির সংখ্যা ১১৩ জনে দাঁড়িয়েছে।
নিহতদের সবাই বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
১৭ মে থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত মৃত্যুর এ সংখ্যা রেকর্ড করা হয়েছে।
মোট মৃতদের মধ্যে বন্যার পানিতে ডুবে ৮৫ জন, বজ্রপাতে ১৫ জন, সাপের কামড়ে দুজন, ডায়রিয়ায় একজন এবং অন্যান্য কারণে নয়জন মারা গেছেন।
নিহতদের মধ্যে সিলেটে ৬০ জন, ময়মনসিংহে ৪০ জন, রংপুরে ১২ জন এবং ঢাকা বিভাগে একজন মারা গেছেন।
বন্যা কবলিত ৭০টি উপজেলার মধ্যে সিলেট বিভাগে ৩৩টি, রংপুর বিভাগে ১৬টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ২০টি এবং চট্টগ্রাম বিভাগে একটি উপজেলা রয়েছে।
সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কুড়িগ্রাম সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা যেখানে যথাক্রমে ১৩, ১১, ১০ ও ৯টি উপজেলা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পড়ুন: বাংলাদেশে বন্যায় ৭২ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত: জাতিসংঘ
বন্যায় আরও ২ জনের মৃত্যু, নিহত বেড়ে ১১২
বাংলাদেশে বন্যায় ৭২ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত: জাতিসংঘ
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ৯ জেলায় আকস্মিক বন্যায় প্রায় ৭২ লাখ মানুষ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এবারের বন্যা মে মাসে শুরু হয় এবং এর দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয় ১৫ জুন।
ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলো হলো- সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ ও শেরপুর।
এই ৯ জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোণা।
বিবৃতি অনুযায়ী, গত ২ ও ৩ জুলাই জাতিসংঘের একটি যৌথ মিশন, মানবিক দাতা (ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য) ও এনজিও অংশীদাররা বন্যা কবলিত জেলা সিলেট ও সুনামগঞ্জ পরিদর্শন করেন।
মিশনের লক্ষ্য ছিল- বন্যার প্রভাব পর্যবেক্ষণ ও সাড়াদান, ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ এবং সমবেদনা জানানো।
আরও পড়ুন: বন্যায় আরও ২ জনের মৃত্যু, নিহত বেড়ে ১১২
মিশন বন্যার মাত্রা দেখতে; ক্ষতিগ্রস্ত কিছু মানুষের কাছ থেকে শুনেছে; সরকারের সাড়াদান প্রদান করা প্রধান প্রধান স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে এবং জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় সরকার প্রদত্ত সাড়াদানের মাত্রা ও সুযোগের ধারণা পেতে সক্ষম হয়েছে। সরকারের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বৃহৎ পরিসরে সমন্বিত সাড়াদান অভিযান চলছে।
৪ লাখ ৭২ হাজার মানুষকে এক হাজার ৬০৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরিত করেছে সরকার। আমরা যে সব সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বলেছি তাদের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য সহায়তা পেয়েছেন।
জাতিসংঘ ও এনজিও অংশীদাররা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে খাদ্য সহায়তা, পানীয় জল, নগদ অর্থ, জরুরি ওষুধ, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, মর্যাদা ও স্বাস্থ্যবিধি কিট ও শিক্ষা সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে এই প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করছে।
এসব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বন্যার মাত্রার কারণে এমন কিছু এলাকা রয়েছে যা এখনও দুর্গম। উদ্ধার বা ত্রাণ থেকে বিচ্ছিন্ন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সম্প্রদায়ের অনেক প্রবীণ এই বন্যাকে তাদের জীবদ্দশায় দেখা যে কোনো বন্যার চেয়ে ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছেন।
এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার প্রায় ৬০ হাজার নারী গর্ভবতী। তাদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার আগামী মাসে সন্তান জন্মদান করবেন। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো তলিয়ে যাওয়া ও অকার্যকর হওয়ায় এসব নারীদের বেশিরভাগই স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকার সীমিত বা নেই।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে বন্যায় ১৪০ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি
যেখানে পানি কিছুটা কমেছে সেখানে আরও পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িতে ফিরে যাবে; অন্যদের এই ক্ষত নিয়ে পুনর্নির্মাণ করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ল্যাট্রিন ও পানির উৎস মেরামত করা দরকার। শিশুরা ইতিমধ্যে তিন সপ্তাহের স্কুলে পড়া হারিয়েছে এবং তাদের বই ভেসে গেছে। ২০২০-২০২১ সালে করোনায় স্কুল বন্ধের কারণে শিক্ষার ক্ষতিতে এটা শীর্ষে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, চলমান প্রয়োজনের মুখে ও বাংলাদেশ সরকারের চলমান প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন মানবিক এনজিওকে এক দশমিক দুই মিলিয়ন ইউরো এবং বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্টের মাধ্যমে দুই লাখ ইউরো বরাদ্দ দিয়েছে; যুক্তরাজ্য ৬ লাখ ৩৬ হাজার ৫৪৮ পাউন্ড বরাদ্দ দিয়েছে; সুইডেন ১৩ মিলিয়ন এসইকে দেয়ার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্র ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে আড়াই লাখ মার্কিন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে।
বন্যায় আরও ২ জনের মৃত্যু, নিহত বেড়ে ১১২
দেশের অধিকাংশ জায়গায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকলেও বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত হত ২৪ ঘণ্টায় মৌলভীবাজারে আরও দুজনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ নিয়ে মোট প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১২ জনে।
নিহতদের সবাই বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
১৭ মে থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত মৃত্যুর এ সংখ্যা রেকর্ড করা হয়েছে।
মোট মৃতদের মধ্যে বন্যার পানিতে ডুবে ৮৫ জন, বজ্রপাতে ১৫ জন, সাপের কামড়ে দুজন, ডায়রিয়ায় একজন এবং অন্যান্য কারণে ৯ জন মারা গেছেন।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে বন্যায় ১৪০ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি
নিহতদের মধ্যে সিলেটে ৫৯ জন, ময়মনসিংহে ৪০ জন, রংপুরে ১২ জন এবং ঢাকা বিভাগে একজন মারা গেছেন।
বন্যা কবলিত ৭০টি উপজেলার মধ্যে সিলেট বিভাগের ৩৩টি, রংপুর বিভাগের ১৬টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ২০টি এবং চট্টগ্রাম বিভাগের একটি উপজেলা রয়েছে।
সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কুড়িগ্রাম সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা যেখানে যথাক্রমে ১৩, ১১, ১০ ও ৯টি উপজেলা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত
সিলেটে ফের বাড়ছে পানি
সিলেটে বুধবার সূর্যের দেখা মিলেনি। বৃষ্টি হচ্ছে মঙ্গলবার রাত থেকেই। ফলে আবার বাড়ছে সিলেটের নদনদীর পানি। এতে প্লাবিত এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে পাওয়া তথ্যমতে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ৬ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে এক সেন্টিমিটার বেড়েছে। এই সময়ে কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বেড়েছে ২ সেন্টিমিটার। তবে অন্যান্য পয়েন্টে পানি কমেছে। এছাড়া সারি নদীর পানি ১০ সেন্টিমিটার ও লোভা নদীর পানি ৭ সেন্টিমিটার বেড়েছে। তবে কিছুটা কমেছে ধলাই নদীর পানি।
ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা মোশারফ হোসেন বলেন, মঙ্গলবার পানি কিছুটা কমেছিল। বৃষ্টিতে আজ সকালে আবার পানি বেড়ে গেছে। ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারে এখনও হাঁটু পানি বলে জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপ সহকারী একেএম নিলয় পাশা বলেন, বৃষ্টির কারণে সিলেটে নদনদীর পানি কিছুটা বেড়েছে। বৃহস্পতিবারও বৃষ্টি থাকতে পারে বলে জানান তিনি।
সিলেট জেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বুধবার পর্যন্ত সিলেটে ৩১৪ টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু আছে। এতে আশ্রিত আছেন ২২ হাজার ১৭৬ জন। ২৩৫ টি পশুও আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে।
বন্যার্তদের চিকিৎসায় জেলায় ১৪০টি মেডিকেল টিম ও পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য ৪০টি মোবাইল টিম কাজ করছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত
বন্যায় লণ্ডভণ্ড সিলেট-ছাতক রেলপথ