বিদ্যুৎ
তাপপ্রবাহের মধ্যে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় বেড়েছে মানুষের দুর্ভোগ
প্রচণ্ড গরমে তাপমাত্রার পারদ বাড়তে থাকায় গ্যাস ও কয়লা সংকটের কারণে সারাদেশের বিভিন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দুপুর ১২টায় দেশে আড়াই হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং হয়েছে। যদিও এটি সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় গ্রাহকদের কাছ থেকে তুলনামূলকভাবে কম চাহিদা রয়েছে।
এছাড়া বিপিডিবি’র প্রকাশিত অফিসিয়াল পরিসংখ্যান দেখা যায়, দিনে ১৪ হাজার মেগাওয়াট চাহিদা পূরণের জন্য দেশে ২ হাজার ৩৫৩ মেগাওয়াট ঘাটতি ছিল কারণ বিপিডিবি সারা দেশে সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৬৪৭ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছিল।
বিপিডিবি’র একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেছেন, ‘সন্ধ্যায় সর্বোচ্চ ঘাটতি বাড়তে পারে যখন চাহিদা আরও ১৫ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটে উঠবে এবং এই গরমে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট অতিক্রম করতে পারে।’
তিনি এই সংকটের জন্য গ্যাস ও কয়লা সরবরাহের ঘাটতি এবং জেনারেশন ইউনিটে পানির স্তর কমে যাওয়াকে দায়ী করে বলেন, এসব কারণে প্রায় ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, এছাড়া রক্ষণাবেক্ষণ ও অন্যান্য কারণে আরও ২ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন জেনারেশন ইউনিট চালুর বাইরে রয়েছে।
ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই অথরিটির (ডেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাউসার আমীর আলী বলেন, তার এলাকায় ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটের চাহিদা পূরণের জন্য দিনের সর্বোচ্চ সময়ে ২০০ থেকে ৩০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়।
আরও পড়ুন: নতুন রেকর্ড গড়ে বিদ্যুত উৎপাদন ১৫,৩০৪ মেগাওয়াটে
ডেসকো এলাকার ভোক্তাদের অভিযোগ, দিনভর তারা অতিরিক্ত বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।
রামপুরা এলাকায় বসবাসকারী এক ডেসকো গ্রাহক বলেন, ‘আমাদের ভোর থেকে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের সম্মুখীন হতে হয়েছে।
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান জানান, তার এলাকায় দিনে প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত ঘাটতি রয়েছে।
তিনি ইউএনবিকে বলেছেন, ‘ডিপিডিসি এলাকায় ১ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটের চাহিদা পূরণের জন্য আমাদের ৪০০ মেগাওয়াটের লোডশেডিং অবলম্বন করতে হয়েছিল।’
রাজধানীর বাইরের ভোক্তাদের অভিযোগ, তাদের চরম লোডশেডিংয়ের শিকার হতে হচ্ছে।
মাসুদুল হক, যিনি সম্প্রতি ময়মনসিংহে তার গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন, গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী লোকেরা দিনে ৩ থেকে ৫ ঘন্টা বিদ্যুত পেতে পারে।
অন্যান্য গ্রামীণ এলাকা থেকেও একই ধরনের অভিযোগ আসছে।
আরও পড়ুন: সরকার আন্তর্জাতিক বাজার অনুযায়ী বিদ্যুত ও গ্যাসের দাম নির্ধারণ করবে: নসরুল
বাংলাদেশে ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে ১৭০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন: নসরুল
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ১৭০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন।
মঙ্গলবার ওয়াশিংটন ডিসিতে ইউএস চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত ‘ইউএস-বাংলাদেশ ইকোনোমিক পার্টনারশিপ: শেয়ারড ভিশন ফর স্মার্ট গ্রোথ’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা সভায় ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ভবিষ্যৎ শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক সেশনে বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আরও পড়ুন: মার্চে আদানির বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই: নসরুল
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এলএনজি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, স্মার্ট গ্রিড, স্মার্ট ডিস্ট্রিবিউশন, বৈদ্যুতিক যানবাহন অবকাঠামো, উপকূলীয় এবং অফশোর হাইড্রোকার্বন অনুসন্ধানের মতো বিভিন্ন খাত এবং উপ-খাতে লাভজনক বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গ্যাসের অবকাঠামো উন্নীতকরণ, পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প স্থাপন, জিএইচজি নির্গমন কমানো, স্মার্ট গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন হচ্ছে এমন খাতগুলোর মধ্যে যেখানে মার্কিন কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ করতে পারে এবং সরকার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিশেষ প্রণোদনা দেবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন।
তিনি বলেন, ভিশন বাস্তবায়নের জন্য আর্থিক বিনিয়োগের পাশাপাশি প্রযুক্তিগত এবং জ্ঞান-ভিত্তিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
তিনি আরও বরেন, বিনিয়োগ শুধুমাত্র বহুপক্ষীয় উন্নয়ন সংস্থা থেকে নয়, সরকারি ও বেসরকারি খাত থেকেও আসা উচিত।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন, শেভরনের বাংলাদেশ অফিসের প্রেসিডেন্ট এরিক ওয়াকার এবং এক্সন মবিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. জন আরডিল।
আরও পড়ুন: প্রতিদিন প্রায় ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে: নসরুল
জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে দিনাজপুরে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন: নসরুল হামিদ
বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহের মধ্যে ব্যবধান: দেশব্যাপী ১৫০০ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং
দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহের ব্যবধান বাড়ছে। ফলে সোমবার সারাদেশে এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং হচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) অফিসিয়াল তথ্যানুসারে, রবিবার দেশে ১৬ হাজার মেগাওয়াটের চাহিদার বিপরীতে প্রকৃত বিদ্যুত ঘাটতি ছিল প্রায় এক হাজার ৪০১ মেগাওয়াট।
এদিন সন্ধ্যায় পিক আওয়ারে মোট বিদ্যুত উৎপাদন ছিল ১৪ হাজার ৫৯৯ মেগাওয়াট।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে লোডশেডিং: সরকারের পক্ষে অবস্থান পাক জ্বালানি মন্ত্রীর
বিপিডিবি আরও জানায়, দেশে ১৬ হাজার মেগাওয়াটের চাহিদার বিপরীতে ১৫ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এছাড়া লোডশেডিংয়ের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সন্ধ্যায় পিক আওয়ারে সন্ধ্যঅ ৭টা থেকে রাত ১১টায় মোট ৮৪০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হবে।
তবে বিপিডিবির অধিকাংশ শীর্ষ কর্মকর্তা মনে করেন, বিভিন্ন কারণে আজকের পূর্বাভাস অনুযায়ী অপারেটিং প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে না।
তারা বলেন, উচ্চ তাপমাত্রার কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্র বিঘ্নিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
এছাড়া বিপিডিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কিছু প্ল্যান্টের মেশিন উচ্চ তাপমাত্রা এবং ট্রিপ সহ্য করতে পারে না।
বিপিডিবি পরিসংখ্যানে জানা যায়, দেশে মোট এক হাজার ২৯১ মেগাওয়াট লোডশেডিং হবে, যার মধ্যে খুলনা অঞ্চলে ৩৫০ মেগাওয়াট সর্বোচ্চ লোডশেডিং হবে। তারপরে ময়মনসিংহে ২৪৯ মেগাওয়াট, কুমিল্লা ২৪০ মেগাওয়াট, রাজশাহী ২১০ মেগাওয়াট, রংপুরে ১৩২ মেগাওয়াট, সিলেটে ১০০ মেগাওয়াট এবং ঢাকায় লোডশেডিং হবে। তবে চট্টগ্রাম ও বরিশালে কোনো লোডশেডিং থাকবে না।
এতে আরও জানা যায়, বিআইএফপিসিএলের কয়লাচালিত রামপাল মৈত্রী সুপার থার্মাল প্ল্যান্ট দুইদিন আগে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে আর চালু করা যায়নি। ফলে প্ল্যান্ট থেকে ৬১৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছে না জাতীয় গ্রিড।
অন্যদিকে বিপিডিবির আরেক কর্মকর্তা জানান, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গ্রিডের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে, যার ফলে বিদ্যুত ঘাটতি বাড়ছে।
আরও পড়ুন: ফেনীতে লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ
খুলনায় তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন
শুল্ক সমস্যা অমীমাংসিত রেখেই বাংলাদেশে আদানির বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু
বাংলাদেশ প্রায় ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির জন্য আদানি পাওয়ারের গোড্ডা ঝাড়খণ্ড প্ল্যান্টের বাণিজ্যিক কার্যক্রম৭ এপ্রিল শুরু হয়েছে। তবে শুল্ক সমস্যার বিরোধ নিষ্পতি করা হয়নি এখনও।
প্রাথমিকভাবে, আদানি গত ৯ মার্চ পরীক্ষামূলক ভিত্তিতে বাংলাদেশে তার বিদ্যুৎ রপ্তানি শুরু করে।
সরকারি সূত্র অনুসারে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার (এনার্জি অডিট) এর নেতৃত্বে 3 সদস্যের একটি কারিগরি দল পরিদর্শনের পরে একটি বাণিজ্যিক অপারেশন তারিখ (সিওডি) অনুমোদন করেছে।
নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে সূত্রটির একজন ইউএনবিকে জানিয়েছেন,‘প্রযুক্তিগত দলটি মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে ভারতে গিয়েছিল এবং এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে আদানির গোড্ডা পাওয়ার প্ল্যান্টে প্রায় ১০ দিন কাটিয়ে দেশে ফিরে আসে।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু ট্যারিফের বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়নি। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আপত্তির পরে, আদানি পাওয়ার কয়লার দাম কমানোর প্রস্তাব দেয়, তবুও এটি বাংলাদেশের অবস্থান মেনে চলছে না।
তিনি উল্লেখ করেছেন যে আদানি আইসিআই-৫০০ কয়লার জ্বিএআর ব্যবহার করে, যা নিম্নমানের কয়লা, কিন্তু আইসিআই-৬৫০০ -এর জিএআর মূল্য উদ্ধৃত করতে চায়।
তিনি বলেছেন, ‘উদাহরণস্বরূপ একটি আইসিআই-৬৫০০ -এর দাম হলো ১৭৯ দশমিক ৮৪, যেখানে আইআইসিআই-৯৫ দশমিক ৫০। এই ক্ষেত্রে, আদানি কয়লার দাম ১৭৯ দশমিক ৮৪ ডলার উদ্ধৃত করতে চাইছে যা বাংলাদেশের পক্ষে গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে বাংলাদেশে আদানি এবং বিপিডিবির মধ্যে সাম্প্রতিক আলোচনার পরে, আদানি দাম কমাতে সম্মত হয়েছে এবং এটি পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শুল্কের মধ্যে রাখতে চায়।
বিপিডিবির সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা কয়লার মূল্য নির্ধারণের একটি নির্দিষ্ট সূত্রে আটকে থাকে না যা বাংলাদেশের জন্য সমস্যাযুক্ত কারণ প্রতি মাসে বিপিডিবিকে শুল্ক ইস্যুতে আদানির সঙ্গে আলোচনা করতে হবে যা বাংলাদেশের জন্য কাম্য নয়।’
এর আগে, আদানি গ্রুপের একটি উচ্চপর্যায়ের দল ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আসে এবং ‘বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির (পিপিএ) কয়লা মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি’ সংক্রান্ত সমস্যাগুলো সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করে।
আরও পড়ুন: আদানি গ্রুপের সঙ্গে 'রাষ্ট্রবিরোধী' বিদ্যুৎ চুক্তি বাতিলের দাবি ডা. জাফরুল্লাহর
উভয় পক্ষ একে অপরের কথা শুনেন এবং তারা ইস্যুতে নিজ নিজ পক্ষের পক্ষে তাদের পয়েন্ট উপস্থাপন করেন। আদানির প্রতিনিধি তাদের জানিয়েছিলেন যে তারা পিপিএ-এর কয়লা মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতিতে বিপিডিবি’র অবস্থান তাদের শীর্ষ ব্যবস্থাপনার কাছে জানাবে এবং তারা আরও ফলো-আপ মিটিংয়ে বসবে।
বাংলাদেশ সরকার আদানি পাওয়ার লিমিটেডের সঙ্গে ভারতের ঝাড়খন্ডের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ২৫ বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য সই করা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির (পিপিএ) সংশোধন চেয়েছিল। মনে হচ্ছে প্রকল্পের জ্বালানি হিসেবে কেনা কয়লার দাম বিতর্কের প্রধান হাড় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
বিপিডিবি’র একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেছেন। বিপিডিবি ঝাড়খন্ডের এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট প্ল্যান্টের জন্য জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত কয়লা আমদানির জন্য এলসি (ভারতে) খোলার বিষয়ে প্রাপ্ত একটি অনুরোধের পরে আদানি গ্রুপকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিল।’
যেহেতু কার্যত ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডা জেলায় অবস্থিত প্ল্যান্টের উৎপাদিত সমস্ত বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রপ্তানি করা হবে। আদানি পাওয়ারের জন্য বিপিডিবি থেকে একটি ডিমান্ড নোট প্রয়োজন যা কয়লা আমদানির বিপরীতে এলসি খোলার আগে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করতে পারে।
বন্দর থেকে প্ল্যান্ট পর্যন্ত পরিবহন সহ কয়লা আমদানির খরচ শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ বহন করবে, যার মূল্য পিপিএ- এর শুল্ক কাঠামোর সঙ্গে যুক্ত।
সেই সময়ে যখন বিশ্ববাজারে জ্বালানি মূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে একটি বিশাল অস্থিরতা বিরাজ করছিল, তখন আদানি পাওয়ার সম্প্রতি বিপিডিবিকে চাহিদা নোট ইস্যু করার জন্য একটি অনুরোধ পাঠিয়েছে, যেখানে কয়লার দাম প্রতি মেট্রিক টন (এমটি)৪০০ মার্কিন ডলার উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই মূল্যকে বিপিডিবি কর্মকর্তারা অনেক বেশি মনে করেন, আন্তর্জাতিক বাজারের বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় এটি দেওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: আদানির সঙ্গে বিদ্যুতের চুক্তি বাতিলের দাবি বিএনপির
কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘আমাদের দৃষ্টিতে, তারা যে কয়লার মূল্য উদ্ধৃত করেছে প্রতি মেট্রিকটন ৪০০ মার্কিন ডলার তা অত্যধিক। বরং এটি প্রতি মেট্রিকটন ২৫০ মার্কিন ডলারের কম হওয়া উচিত, যা আমরা আমাদের অন্যান্য তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে আমদানি করা কয়লার জন্য পরিশোধ করছি।’
বিপিডিবি কর্মকর্তা রামপাল পাওয়ার প্ল্যান্টের কয়লা সংগ্রহের কথা উল্লেখ করেছেন যেখানে সরবরাহকারী বসুন্ধরা গ্রুপ জেটিতে পণ্য পৌঁছানোর জন্য প্রতি টন ২৩২ দশমিক ৩৩ ডলারে কয়লা সরবরাহের চুক্তি জিতেছিল। যদিও পরে কয়লার দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়।
একই সূত্রে আরও বলা হয়েছে যে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাইট পরিদর্শনের সময় আদানি পাওয়ারের কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানানো হয়েছিল।
আরও পড়ুন: আদানি প্ল্যান্ট থেকে বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে পরীক্ষামূলক বিদ্যুত সঞ্চালন শুরু
অবিলম্বে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ১৭০০-৩৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে বাংলাদেশ: আইইইএফএ
ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইইএফএ) দেখেছে যে বাংলাদেশ তাৎক্ষণিকভাবে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের উৎস থেকে এক হাজার ৭০০ মেগাওয়াট থেকে তিন হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। যেখানে প্রচলিত জীবাশ্ম জ্বালানি খরচ প্রতি ইউনিট আট দশমিক ৮৪ টাকার বিপরীতে পাঁচ দশমিক ২৫ টাকা থেকে সাত দশমিক ৬০ টাকার মধ্যে কম খরচ হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা এনার্জি ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইইএফএ) তার বিশ্লেষণ থেকে আরও দেখিয়েছে যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ৪০ মিলিয়ন শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য ২০৪১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের বার্ষিক এক দশমিক ৭১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের অগ্রগতি পরিদর্শনে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত
বুধবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে গড় বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বাংলাদেশি টাকায় (টাকা) দ্বি-সংখ্যা অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রতিবেদনের লেখক ও আইইইএফএ-র জ্বালানি অর্থ বিশ্লেষক শফিকুল আলম বলেছেন, “আমাদের বিশ্লেষণ দেখায় যে বিদ্যমান বিদ্যুৎ ব্যবস্থা অবিলম্বে দিনে এক হাজার ৭০০ মেগাওয়াট (মেগাওয়াট) থেকে তিন হাজার ৪০০ মেগাওয়াট সৌরশক্তি অন্তর্ভুক্ত করতে পারে এবং অবস্থানের সম্ভাব্যতা এবং পর্যাপ্ত বাতাসের গতির উপলব্ধতার সাপেক্ষে, রাতে আড়াই হাজার মেগাওয়াট থেকে চার হাজার মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ ব্যয়বহুল ফার্নেস অয়েল-ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবহার কমাতে পারে।’
এই ধরনের পদক্ষেপ গড় বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ কমাতেও সাহায্য করবে।
প্রতিবেদন অনুসারে, অনুমান দেখায় যে ছাদ এবং ইউটিলিটি-স্কেল সোলার থেকে বিদ্যুতের সমতলিত খরচ যথাক্রমে (এলসিওই) প্রায় পাঁচ দশমিক ২৫ টাকা/কিলোওয়াট-ঘন্টা (শূন্য দশমকি ০৫ মার্কিন ডলার) এবং সাত দশমিক ছয় কিলোওয়াট-ঘন্টা( শূন্য দশমিক ০৫ কিলোওয়াট মার্কিন ডলার।
অন্যদিকে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) গড় বিদ্যুত উৎপাদন খরচ ছিল আট দশমিক ৮৪ টাকা/কিলোওয়াট ঘণ্টা (মার্কিন ডলার শূন্য দশমিক ০৮৪/কিলোওয়াট)। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এটি টাকায় দ্বিগুণ অঙ্ক অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে।
নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ২০৪১ সালের মধ্যে তার মোট বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতার ৪০ শতাংশ করার জন্য নবায়নযোগ্য উৎসগুলোর লক্ষ্য রাখা উচিত। দেশটি তার বিদ্যুৎ খাতকে ব্যয়বহুল আমদানি করা জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার এবং এর ক্রমবর্ধমান ভর্তুকির বোঝা কমানোর পথ তৈরি করে।
প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে যে ২০৪১ সাল নাগাদ (স্টোরেজ সুবিধা ছাড়া) ৪০ শতাংশের অধিক উচ্চাভিলাষী ক্লিন এনার্জি ক্ষমতার লক্ষ্যমাত্রার জন্য ২০২৪ থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত এক দশমিক ৫৩ বিলিয়ন থেকে এক দশমিক ৭১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বার্ষিক বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে, যা বিদ্যুৎ খাতের অর্থবছরের তুলনায় ২০২১-২২ (অর্থ বছর ভর্তুকির বোঝা কম।
এটি যোগ করে যে নবায়ণযোগ্য শক্তিতে একটি দ্রুত রূপান্তর আর্থিক সংস্থানগুলোকে মুক্ত করবে যা অন্যথায় ভর্তুকি অর্থপ্রদান হিসাবে শেষ হবে।
আরও পড়ুন: নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৪০% বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশের প্রয়োজন ২৬.৫ বিলিয়ন ডলার
শফিকুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের মডেল একটি সুস্পষ্ট উত্তরণ পথ ছাড়া টেকসই বলে মনে হচ্ছে। তাই, নীতিনির্ধারকদের উচিত তাদের নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের লক্ষ্যমাত্রা বাড়াতে হবে এবং আসন্ন ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যানে (আইইপিএমপি) একই প্রতিফলন ঘটাতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের উচিত নবায়ণযোগ্য জ্বালানি নীতির লক্ষ্যমাত্রাকে অগ্রগতি শনাক্ত করার জন্য একটি মনিটরিং প্রক্রিয়া দ্বারা সমর্থিত একটি বছরভিত্তিক কর্ম পরিকল্পনায় অনুবাদ করা উচিত।’
প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে জীবাশ্ম জ্বালানির উচ্চ মূল্য এবং এর ফলে বিদ্যুত উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির ফলে দেশের বিদ্যুৎ খাতে প্রয়োজনীয় ভর্তুকি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য, ভর্তুকি ২৯৭ বিলিয়ন টাকায় পৌঁছেছে (দুই দশমিক ৮২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), যা ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে প্রায় ১৫২ শতাংশ বেশি এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় ৩০১ শতাংশ বেশি৷
আলম বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান ভর্তুকি শেষ পর্যন্ত সরকারকে ক্রমবর্ধমান খরচ গ্রাহকদের কাছে দিতে বাধ্য করে। এর ফলে দ্রুত পর্যায়ক্রমে বিদ্যুত এবং বিভিন্ন জ্বালানির দাম বৃদ্ধির আভাস দেখা দেয়। এই মূল্যবৃদ্ধি সত্ত্বেও, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি বোঝা আগের বছরের তুলনায় এখনও বেশি হতে পারে।’
পরিবর্তে, প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিদ্যুৎ খাতের স্থানান্তরকে ত্বরান্বিত করা আর্থিক সংস্থানগুলোকে মুক্ত করতে পারে এবং দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বাড়াতে পারে।
প্রতিবেদনে সরকারকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি গ্রহণের প্রচারে নীতি পরিবর্তনের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিবেদনে প্রস্তাব করা হয়েছে যে সরকার শিল্প ও বাণিজ্যিক ভবনগুলোর অনুমোদিত লোডের ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাদে সৌর ইনস্টলেশন ক্ষমতার বর্তমান ক্যাপ তুলেছে।
একইভাবে, এটি ছাদে সৌর প্রকল্পের জন্য ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৫৮ দশমিক ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ফাইবার-রিইনফোর্সড পলিমার (এফআরপি) ওয়াকওয়ে, আমদানি করা ইনভার্টার, মাউন্টিং স্ট্রাকচার এবং ডাইরেক্ট কারেন্ট (ডিসি) তারের উপর প্রযোজ্য শুল্ক মওকুফ করার সুপারিশ করে।
আলম বলেছেন, ‘এই ধরনের পদক্ষেপ বিদ্যুৎ খাতের উত্তরণের জন্য সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে সঠিক বাজার সংকেত পাঠাবে।’
পরিশেষে, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের স্থানীয় সম্পদ ও আন্তর্জাতিক উৎসসহ অর্থায়নের চ্যানেলের মানচিত্র থাকা দরকার। এর জন্য বাংলাদেশ ইন্দোনেশিয়া থেকে শিক্ষা নিতে পারে এবং ভিয়েতনামের জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশন পরিকল্পনা থেকে তার বিদ্যুৎ খাতে রূপান্তরের জন্য অর্থায়ন করতে পারে।
আইইইএফএ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের অভিজ্ঞতা থেকে, প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে ঝুঁকি প্রশমনের ব্যবস্থা, যেমন ঝুঁকি গ্যারান্টি তহবিল, প্রকল্পের বিকাশকারীদের রক্ষা করবে। অধিকন্তু, নিলামের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক নবায়নযোগ্য জ্বালানি সংগ্রহ নবায়নযোগ্য জ্বালানি শুল্ক কমাতে সাহায্য করবে এবং বাংলাদেশকে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।’
আরও পড়ুন: আদানি গ্রুপের সঙ্গে 'রাষ্ট্রবিরোধী' বিদ্যুৎ চুক্তি বাতিলের দাবি ডা. জাফরুল্লাহর
সারাদেশে একদরে গ্যাস বিক্রি হবে: বিইআরসির চেয়ারম্যান
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান মো. নুরুল আমিন জানিয়েছেন, সারাদেশে এক দামে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি নিশ্চিত করা হবে।
এসময় বন্ধ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির রক্ষণাবেক্ষণ শেষে দ্রুত উৎপাদন শুরুর তাগিদ দেন বিইআরসি চেয়ারম্যান।
চাঁদপুর ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপের সময় তিনি এ কথা বলেন।
আরও পড়ুন: বিইআরসিতে ৩ সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে
এদিকে, বাংলাদেশ অ্যানার্জি রেগুলেটরি কমিশনের নির্ধারিত নতুন দামে ভোক্তা পর্যায়ে ১২ কেজি সিলিন্ডার গ্যাস এক হাজার ৪২২ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু ডিলার থেকে শুরু করে খুচরা বিক্রেতারা সেটি মানেন না। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কোথাও কোথাও রাখা হয় ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি।
এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সারাদেশে এক দামে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি নিশ্চিত করা হবে। এ জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
এ সময় ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রকৌশলীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে একটানা ১০ বছর জাতীয় গ্রিডে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে চাঁদপুরের কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। সম্প্রতি বেশকিছু যন্ত্রাংশ অচল হয়ে পড়ায় রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গত ডিসেম্বর পুরোপুরি বন্ধ করা হয় এ কেন্দ্রের উৎপাদন।
প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী নুরুল আবছার জানিয়েছেন, তারা আবারও এ কেন্দ্রের মাধ্যমে উৎপাদনে ফিরতে দিনরাত কাজ করছেন।
আরও পড়ুন: জাতীয় সংসদে বিইআরসি আইনের সংশোধনী পাস
বিইআরসি ছাড়াই জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ করবে সরকার, মন্ত্রিসভায় সংশোধনী অনুমোদন
খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম আবারও ৫ শতাংশ বাড়ল, বুধবার থেকে কার্যকর
খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম আবারও পাঁচ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে, যা বুধবার থেকে কার্যকর হবে।
মঙ্গলবার একটি গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে প্রশাসনিক আদেশের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিভাগ এই মূল্য বৃদ্ধি করে।
বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান ইউএনবিকে বলেন, বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
দুই মাসে টানা তৃতীয়বারের মতো বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো। এতে খুচরা পর্যায়ে প্রতিবার গড়ে ৫ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
নতুন আদেশ অনুযায়ী ভোক্তাদের বিভিন্ন পর্যায়ে খুচরা শুল্ক বাড়ানো হয়। খুচরা পর্যায়ের ভোক্তাদের জন্য প্রতি ইউনিট চার দশমিক ১৪ টাকা (প্রতি কিলোওয়াট ঘন্টা) থেকে শুল্ক গড়ে পাঁচ শতাংশ বাড়িয়ে চার দশমিক ৩৫ টাকা করা হয়েছে।তবে এবার বাল্ক ট্যারিফ বাড়ানো হয়নি।
এর আগে চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি সরকার খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধি করে যা ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয় এবং ১২ জানুয়ারি আবারও পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধি করে, যা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে।
আরও পড়ুন: পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ল, কার্যকর ১ ফেব্রুয়ারি
গত বছরের ২১ নভেম্বর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকরভাবে বাল্ক বিদ্যুতের দাম ২০শতাংশ বাড়িয়ে প্রতি কিলোওয়াট ছয় দশমিক ২০ টাকা করেছে।
সরকার সম্প্রতি বিইআরসি আইন সংশোধন করে বিদ্যুৎ বিভাগকে যে কোনো সময় প্রশাসনিক ক্ষমতার মাধ্যমে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম জ্বালানির দাম বাড়ানোর ক্ষমতা দিয়েছে।
সেই সংশোধিত আইনটি প্রয়োগ করে, জ্বালানি নিয়ন্ত্রকের কর্তৃপক্ষকে পাশ কাটিয়ে বাল্ক এবং খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য নতুন গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল।
এদিকে, জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্তটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মেনে এসেছে যা সম্প্রতি বাংলাদেশকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে।
আরও পড়ুন: কেন আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বেশি দামে বিদ্যুত নেয়া হচ্ছে, প্রশ্ন এমপি চুন্নুর
বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম কমানোর দাবিতে বরিশালে বিএনপির পদযাত্রা
খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দিদের মুক্তি এবং বিদ্যুৎ-গ্যাসসহ নিত্যপণ্যের দাম কমানোসহ ১০ দফা দাবিতে বরিশালে পদযাত্রা করেছে বিএনপি। শনিবার দুপুরে নগরীর সদর রোডের বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে এ পদযাত্রা শুরু করে মহানগর বিএনপি।
এছাড়া এর আগে সকাল থেকে দলীয় কার্যালয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসতে শুরু করেন নেতাকর্মীরা।
আরও পড়ুন: শাহজাদপুর থেকে মালিবাগ বিএনপির পদযাত্রা শুরু
তারা বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন ও প্লাকার্ড নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে জড়ো হন।
সকাল থেকেই বিএনপির কর্মসূচিকে ঘিরে নগরীর সদর রোডের অশ্বিনী কুমার হল ও এর আশপাশে অবস্থান নেয় মেট্রোপলিটন পুলিশ। যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যাবস্থা জোরদার করা হয়।
এদিকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেব পদযাত্রার আগ সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান।
তিনি বলেন, এই পদযাত্রা থেকেই আমরা স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটাবো। আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তি, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আন্দোলন করছি। এই আন্দোলনে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা সরকার পতন ঘটাবো।
এ সময় তিনি বিএনপির চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি সব জেলা শহরে পদযাত্রা কর্মসূচির ঘোষণা করেন।
সমাবেশে কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, বিএনপির এই আন্দোলন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন; খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিত্য পণ্যের মূল্য কমানোর আন্দোলন। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে হবে।
আরও পড়ুন: বিএনপির পদযাত্রা: নারায়ণগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ১২ নেতাকর্মী আহত
আদানি গ্রুপের সঙ্গে ঢাকার বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি নজিরবিহীন বৈষম্যমূলক: টিআইবি
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বাংলাদেশ সরকারকে আদানি গ্রুপের সঙ্গে অস্পষ্ট এবং বৈষম্যহীন বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিকে পুনর্বিবেচনা করতে এবং প্রয়োজনে বাতিল করতে বলেছে। এটি নজিরবিহীন বৈষম্যমূলক চুক্তি হিসেবে বিবেচিত হবে।
শুক্রবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে যে শেয়ার জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত ভারতের আদানি থেকে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার জন্য বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের সই করা অসম, অস্বচ্ছ ও বৈষম্যমূলক চুক্তি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত এই বিতর্কিত কোম্পানির কাছে জিম্মি হতে পারে।
এই সংস্থাটি বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে এর শর্তাবলি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করতে বলেছে। একই সঙ্গে জাতীয় স্বার্থে বিশেষ করে এই চুক্তির চূড়ান্ত বোঝা দেশের জনগণকে বহন করতে হবে বলে সতর্ক করে দিয়ে প্রয়োজনে চুক্তিটি বাতিল করার পরামর্শ দিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় অবস্থিত আদানি পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি হবে। আবার, বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে (পিপিএ) আদানি পাওয়ার থেকে এই উচ্চ মূল্যে বিদ্যুৎ কেনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
আরও পড়ুন: মার্চে আদানির বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই: নসরুল
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আন্তর্জাতিক নির্ভরযোগ্য বিশ্লেষণে এই চুক্তিটি বাংলাদেশের জন্য অসাম্য ও অস্পষ্ট এবং নজিরবিহীন বৈষম্যমূলক চুক্তি হিসেবে বিবেচিত।
তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে চুক্তিটি বাংলাদেশের স্বার্থকে উপেক্ষা করে আদানি গ্রুপের স্বার্থকে এমনভাবে সমর্থন করেছে যে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত এই কোম্পানির হাতে জিম্মি হয়ে যেতে পারে। এই বোঝা এদেশের মানুষকেই বহন করতে হবে।’
অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক ‘আদানি ওয়াচ’ সহ নির্ভরযোগ্য আন্তর্জাতিক সূত্রে প্রকাশিত তথ্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘গোড্ডা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যে কয়লা ব্যবহৃত হবে তা আসবে আদানির মালিকানাধীন ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিতর্কিত খনি থেকে। এগুলো আদানির জাহাজে ও রেলে করে পরিবহন ও খালাস হবে আদানির মালিকানাধীন বন্দরে। আবার উৎপাদিত বিদ্যুৎ পরিবহন করা হবে আদানিরই নির্মিত সঞ্চালন লাইনে।
আরও জানা যাচ্ছে, জ্বালানি খরচসহ এই পুরো প্রক্রিয়ার ব্যয় বইতে হবে বাংলাদেশকে। যেটি বৈশ্বিক বিদ্যুৎ খাতের অভিজ্ঞতায় অভূতপূর্ব।
ফলে এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের জন্য দেশের অন্য যে কোনো সরবরাহকারী থেকে প্রাপ্ত বিদ্যুতের তুলনায় অস্বাভাবিক বেশি হারে মূল্য দিতে হবে।
একইভাবে, আদানির গোড্ডা প্রকল্পের ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ দিতে হবে দেশি-বিদেশি উদ্যোগে পরিচালিত অন্য যে কোনো প্রকল্পের তুলনায় অগ্রহণযোগ্য বেশি হারে।’
আরও পড়ুন: নেপাল, ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানিতে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে ভারত: পররাষ্ট্র সচিব
গ্যাস ও বিদ্যুৎ পেতে গ্রাহকদের প্রকৃত খরচ দিতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য গ্রাহকদের প্রকৃত খরচ পরিশোধ করতে হবে।
রবিবার ঢাকার আগারগাঁও এলাকায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নবনির্মিত ‘বিনিয়োগ ভবন’ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যেতে পারে যদি সবাই ক্রয়ের খরচ দিতে সম্মত হয়। কতটা ভর্তুকি দেয়া যেতে পারে? আর আমরা কেন ভর্তুকি দিতে থাকব? সরকার দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনে ভর্তুকি দিচ্ছে।’
আরও পড়ুন: ‘রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নোবেল পুরস্কার পাওয়া উচিত’
বিনিয়োগ ভবনটি তিনটি সংস্থার কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হবে, সেগুলো হল- বিডা, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এবং জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ)।
শেখ হাসিনা বলেন যে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ১২ টাকা, কিন্তু দাম মাত্র ছয় টাকা। এর পরও বিদ্যুতের শুল্ক নিয়ে সরকারের সমালোচনা হচ্ছে। যুক্তরাজ্যে বিদ্যুতের দাম দেড়শ’ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। আমরা এখনও সেই পর্যায়ে পৌঁছাইনি (এমন খারাপ পরিস্থিতি)।
প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে খাদ্য ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে বিশেষ করে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে বলেছেন, যা এখন সারা দেশে গড়ে উঠছে। কোভিড-১৯ মহামারি ও চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে খাদ্যের উচ্চ চাহিদা রয়েছে। খাদ্যের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান এবং উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া।
আরও পড়ুন: রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রী ২৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন রবিবার
বিরোধীরা আমার ব্যর্থতা খুঁজে পেলে সংশোধন করব: সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা