���������������
মারিউপোল থেকে নাগরিকদের সরিয়ে নিতে যাচ্ছে বাসের বহর
ইউক্রেনের অবরুদ্ধ শহর মারিউপোল থেকে নাগরিকদের সরিয়ে নিতে বৃহস্পতিবার শহরটির উদ্দেশে বাসের একটি বহর রওনা দিয়েছে।
রাশিয়ার সেনারা এই অঞ্চলে সীমিত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার পরে রেড ক্রস জানায়, তাদের টিমগুলো ত্রাণ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ে মারিউপোলের দিকে যাচ্ছে এবং শুক্রবার বেসামরিক নাগরিকদের বিপর্যস্ত শহর থেকে সরিয়ে নিতে সাহায্য করবে বলে আশা করছে।
তবে এর আগে এ ধরনের মানবিক করিডোর প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা ভেস্তে যায়।
আরও পড়ুন: রাশিয়া-ইউক্রেন নিয়ে আরও আলোচনার প্রস্তাব তুরস্কের
রুশ সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মারিউপোল থেকে ইউক্রেন-নিয়ন্ত্রিত শহর জাপোরিঝিয়া পর্যন্ত যুদ্ধবিরতিতে অঙ্গীকার করেছেন।
ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশচুক বলেছেন, শহরটি থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নিতে ৪৫টি বাস পাঠানো হবে। শহরটিতে সপ্তাহব্যাপী অবরোধ ও বোমাবর্ষণের কারণে খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সরঞ্জাম কমে গেছে।
আরও পড়ুন: ইউক্রেন ‘টার্নিং পয়েন্টে’: জেলেনস্কি
রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটি জানিয়েছে, তাদের টিমগুলো ইতিমধ্যে মারিউপোলের উদ্দেশে রওনা হয়েছে।
এক বিবৃতিতে রেড ক্রস বলছে, ‘এই অপারেশনটি হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মারিউপোলের হাজারো মানুষের জীবন এর ওপর নির্ভর করছে।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: শরণার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ
রুশ আগ্রাসনের কারণে ইতোমধ্যে প্রায় ৪০ লাখ লোক শরণার্থী হিসেবে ইউক্রেন ছেড়েছে। তবে সম্প্রতি শরণার্থীর ঢল কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দেশটির বর্ডার গার্ড ও বিভিন্ন সাহায্যকারী সংস্থা এসব তথ্য জানিয়েছে।
এছাড়া দেশের পক্ষে যুদ্ধ করতে কিছু ইউক্রেনীয়কে তাদের দেশে আটকে রাখা হয়েছে, কেউ কেউ আবার নিজেদের বাড়ি ছাড়লেও শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ কোনদিকে আগায় তা বোঝার জন্য দেশের অন্য প্রান্তে বসে অপেক্ষা করছে। কিছু বয়স্ক ও অসুস্থব্যক্তি এবং কিছু মানুষ নিজ ইচ্ছায়ই এখনও নিজেদের বাড়িতেই রয়ে গেছে।
২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া রুশ আগ্রাসনের পর বোমা হামলা থেকে বাঁচতে প্রথম দুই সপ্তাহেই ইউক্রেনের যুদ্ধ-পূর্ব জনসংখ্যার চার কোটি ৪০ লাখের মধ্যে প্রায় ২৫ লাখ দেশ ছেড়ে চলে যায়।
সোমবার জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) ঘোষিত সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, মোট শরণার্থীর সংখ্যা এখন ৩০ লাখ ৮৭ হাজারে পৌঁছেছে।
তবে, আগের ২৪ ঘন্টায় শুধুমাত্র ৪৫ হাজার মানুষ ইউক্রেনের সীমানা অতিক্রম করেছে।
আরও পড়ুন: নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত জেলেনস্কি
পোলিশ সীমান্ত রক্ষীদের একজন মুখপাত্র আনা মিচালস্কা বলেন, যারা যুদ্ধ শুরু হলে চলে যাওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল তারা প্রথম দিকেই দেশ ছেড়েছে।
ইউএনএইচসিআর বলেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে খারাপ শরণার্থী সংকটের সূত্রপাত করেছে এই যুদ্ধ। পোল্যান্ড, রোমানিয়া, মলদোভা, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়ায় বিপুল সংখ্যক ইউক্রেনীয় আশ্রয় নিয়েছে। শুধুমাত্র পোল্যান্ডেই ২৩ লাখ শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে। অন্যদিকে রোমানিয়ায় রয়েছে প্রায় ছয় শরণার্থী। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
সিরিয়ায় ১১ বছর ধরে চলা বিধ্বংসী যুদ্ধেও এত দ্রুত, এত অধিক সংখ্যক শরণার্থী সংকট তৈরি হয়নি।
পোল্যান্ডে ইউএনএইচসিআর-এর জ্যেষ্ঠ জরুরি সমন্বয়কারী অ্যালেক্স মুন্ড বলেছেন, আমরা আশা করি নতুন করে শরণার্থীর ঢল হ্রাস পাবে। তবে আমি বিশ্বাস করি যুদ্ধের একটি রাজনৈতিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত, এটা হওয়ার কোনও গ্যারান্টি আছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থাও (আইওএম) অনুমান করেছে, ইউক্রেনের আরও ৬৫ লাখ মানুষ রুশ আগ্রাসনের ফলে তাদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত হয়েছে, কিন্তু তারা দেশের অভ্যন্তরে বাস্তুচ্যুত হয়ে রয়েছে।
আরও পড়ুন: দোহা ফোরামে জেলেনস্কির ভিডিও বার্তা
রাশিয়াকে থামাতে বিলম্ব করেছে ইউরোপ: জেলেনস্কি
রাশিয়াকে থামাতে বিলম্ব করেছে ইউরোপ: জেলেনস্কি
রাশিয়াকে থামাতে ইউরোপ বিলম্ব করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
তিনি বলেন, ‘আপনারা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। আমরা কৃতজ্ঞ। এগুলো শক্তিশালী পদক্ষেপ। কিন্তু একটু দেরি হয়ে গেছে...। একটা সুযোগ ছিল।’
এছাড়া প্রতিরোধমূলক নিষেধাজ্ঞা যদি থাকত তাহলে হয়তো রাশিয়া যুদ্ধে যেতে পারত না বলেও জানান জেলেনস্কি।
ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কাউন্সিলের শীর্ষ সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে এসব তথ্য জানানো হয়।
এছাড়া নর্ড স্ট্রিম-২ গ্যাস পাইপলাইনের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেছেন এটা যদি আগে ব্লক করা হতো তাহলে রাশিয়া গ্যাস সংকট তৈরি করত না।
কিয়েভে গোলার আঘাতে রুশ সাংবাদিক নিহত
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রাশিয়ান বাহিনীর গোলার আঘাতে এক রুশ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
নিহত ওই সাংবাদিকের নাম ওকসানা বাউলিনা। তিনি কিয়েভ ও দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লভিভ থেকে অনুসন্ধানী ওয়েবসাইট দ্য ইনসাইডারের জন্য কাজ করতেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি অনুসন্ধানী ওয়েবসাইটটির বরাত দিয়ে এ তথ্য জানায়।
আরও পড়ুন: মস্কো থেকে আমেরিকান কূটনীতিক বহিষ্কার
বাউলিনা পডিল জেলায় ক্ষয়-ক্ষতির চিত্রধারণের সময় মারা যান বলে জানায় ওয়েবসাইটটি।
এর আগে বাউলিনা রাশিয়ার বিরোধী ব্যক্তিত্ব আলেক্সি নাভালনির দুর্নীতিবিরোধী ফাউন্ডেশনের হয়ে কাজ করেছিলেন এবং রাশিয়া ত্যাগ করেন তিনি।
দ্য ইনসাইডার জানায়, এ সময় গোলার আঘাতে আরেকজন নিহত ও আরও দুজন আহত হন।
বাউলিনাকে নিয়ে ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের এক মাসে পাঁচজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনে ৭ থেকে ১৫ হাজার রুশ সেনা নিহত: ন্যাটো
মারিউপোলবাসীদের আত্মসমর্পণের আহ্বান রাশিয়ার
ইউক্রেনের শহর মারিউপোল অবরুদ্ধ করার পর এবার রাশিয়া শহরটির নাগরিকদের আত্মসমর্পনের আহ্বান জানিয়েছে। বিনিময়ে তারা ইউক্রেনীয়দের শহরের বাইরে নিরাপদ স্থানান্তরের ব্যবস্থা করে দেয়া ও হামলা বন্ধ করার আশ্বাস দেয়। তবে ইউক্রেন রাশিয়ার এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছে।
যুদ্ধের শুরু থেকেই কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তীব্র লড়াই চলেছে দুই পক্ষের মধ্যে।
রুশ কর্নেল জেনারেল মিখাইল মিজিনসেভ বলেছেন,তারা মারিউপোল শহরের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানান্তরের জন্য দুটো করিডোরের অনুমতি দেবে। একটি পূর্বে রাশিয়ার দিকে, অন্যটি পশ্চিমে ইউক্রেনের অন্যান্য অংশের দিকে।
মারিউপোলের বাসিন্দাদের রাশিয়ার এই প্রস্তাবে সাড়া দেয়ার জন্য সোমবার ভোর ৫টা পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছিল। তারা এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে রাশিয়া কী ব্যবস্থা নেবে তা এখনও জানায়নি রাশিয়া।
ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশচুক এই প্রস্তাবের জবাবে ‘না’ বলেছেন।
দেশটির প্রাভদা নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ইরিনা বলেন,রাশিয়া অস্ত্র প্রত্যাহারের আত্মসমর্পণ নিয়ে কোনো কথা হতে পারেনা। আমরা ইতোমধ্যে রাশিয়ান পক্ষকে আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমি তাদের কাছে আট পৃষ্ঠার একটি চিঠিতে বলেছি, সময় নষ্ট না করে, করিডোর খুলুন।
বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স ইউক্রেন অনুসারে, মারিউপোলের মেয়র পিওর আন্দ্রুশচেঙ্কোও রাশিয়ার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি এক ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, রাশিয়ানদের কথার জবাব এবং অভিশাপ দেয়ার জন্য তাকে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না।
আরও পড়ুন: যুদ্ধের মূল্য রাশিয়াকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে দিতে হবে: জেলেনস্কি
এর আগে রাশিয়ার অনুমোদিত নিরাপদ করিডোর দিয়ে মারিউপোল এবং অন্যান্য ইউক্রেনীয় শহরগুলোর বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়ার অধিকাংশ প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে।
সোমবার এক ভিডিও ভাষণে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, বোমাবর্ষণ থেকে বাঁচতে প্রায় ৪০০ বেসামরিক লোক একটি আর্ট স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিল। ওই স্কুলটা রুশ বোমার আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, তারা সবাই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে। আমরা জানি না তাদের মধ্যে কতজন এখনও বেঁচে আছে।
জেলেনস্কি আরও বলেন, শুধু জানি আমরা নিশ্চিতভাবেই সেই পাইলটকেও গুলি করে হত্যা করব, যে এই বোমাটি ফেলেছে। যেমন আমরা ইতোমধ্যে প্রায় ১০০ জন গণহত্যাকারীকে শেষ করেছি।
জেলেনস্কি সিএনএনকে বলেন, ইউক্রেনীয়রা রুশ সেনাদের ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানায়নি, তাদের হাতেও অস্ত্র রয়েছে।’
এদিকে বন্দর নগরী মারিউপোলের কর্মকর্তারা এবং সাহায্যকারী সংস্থাগুলো বলছে, মারিউপোলে খাদ্য, পানীয় এবং বিদ্যুতের অভাব তীব্র হয়ে উঠছে। যুদ্ধের কারণে মানবিক সাহায্য এসেও পৌঁছাতে পারছে না।
শহরটিতে তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বোমাবর্ষণ করছে রুশ বাহিনী এবং যুদ্ধের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব পড়েছে এই শহরে।
শহরটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই শহরের অন্তত দুই হাজার ৩০০ জন মানুষ মারা গেছেন। তাদের অধিকাংশকে গণকবরে সমাহিত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ৯ হাজার মানুষ অবরুদ্ধ মারিউপোল ত্যাগ করেছেন: জেলেনস্কি
ইউক্রেনের রাজধানী ও লভিভের উপকণ্ঠে রুশ হামলা
যুদ্ধের মূল্য রাশিয়াকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে দিতে হবে: জেলেনস্কি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তার দেশের ওপর আক্রমণ করার জন্য ‘প্রজন্মের’ পর প্রজন্ম ধরে মূল্য দিতে হবে রাশিয়াকে।
শনিবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট একটি ভিডিও বার্তায় ক্রেমলিনকে ইচ্ছাকৃতভাবে ‘একটি মানবিক বিপর্যয়’ তৈরি করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন এবং রক্তপাত বন্ধ করার জন্য রাশিয়ারুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে তার সঙ্গে দেখা করার আবেদন করেছেন।
উল্লেখ্য মস্কো তার বিপর্যস্ত শক্তির সমর্থনে একটি গণসমাবেশ করার পর এই মন্তব্য করে জেলেনস্কি।
জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়া যে দুই লাখ মানুষ নিয়ে সমাবেশ করেছে, সেই পরিমাণ সেনা মস্কো ইউক্রেনে মোতায়েন করেছে।
আরও পড়ুন: ৯ হাজার মানুষ অবরুদ্ধ মারিউপোল ত্যাগ করেছেন: জেলেনস্কি
তিনি বলেন, মস্কোর এই ইভেন্টটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের বৃহত্তম স্থল সংঘাতের ঝুঁকির চিত্র তুলে ধরেছে।
তিনি আরও বলেন, নিজের অবস্থার দিকে তাকান। দেখুন মস্কোর সেই স্টেডিয়ামে ১৪ হাজার লাশ এবং আরও কয়েক হাজার আহত এবং পঙ্গু হয়েছে। এগুলি পুরো আক্রমণ জুড়ে রাশিয়ার ব্যয়।
শুক্রবার ২০১৪ সালে ইউক্রেন থেকে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ায় সঙ্গে যুক্ত করার অষ্টম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পুতিন তার দেশের সামরিক বাহিনীর প্রশংসা করেন।
২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের পর তিন সপ্তাহ ধরে রাশিয়ার আগ্রাসন অব্যাহত রয়েছে।
কিয়েভের আঞ্চলিক প্রশাসন জানিয়েছে, রুশ হামলায় শনিবার উত্তর-পশ্চিম কিয়েভের শহরতলি বুচা, হোস্টোমেল, ইরপিন এবং মোশচুনের আগুন লেগেছে।
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অবরুদ্ধ বন্দর নগরী মারিউপোলে ইউক্রেনীয় ও রুশ বাহিনীর মধ্যে লড়াই চলছে।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনের রাজধানী ও লভিভের উপকণ্ঠে রুশ হামলা
দক্ষিণ কোরিয়ায় ওমিক্রনে মৃত্যুর হার দ্রুত বাড়ছে
৯ হাজার মানুষ অবরুদ্ধ মারিউপোল ত্যাগ করেছেন: জেলেনস্কি
গত একদিনে ৯ হাজারের বেশি মানুষ ইউক্রেনের অবরুদ্ধ শহর মারিউপোল ত্যাগ করতে সক্ষম হয়েছেন বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এ নিয়ে সব মিলিয়ে এক লাখ ৮০ হাজারের বেশি মানুষ মানবিক করিডোর দিয়ে নিরাপদে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন বলেও জানান তিনি।
জেলেনস্কি বলেছেন, একটি ‘মানবিক বিপর্যয়’ সৃষ্টি করতে রুশ সেনারা দেশটির সবচেয়ে বড় বড় শহর অবরোধ করছে। রাতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃত একটি কৌশল।’
এছাড়া তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব আবারও দেন। জেলেনস্কি বলেন ‘এটি সাক্ষাতের সময়, আলোচনার সময়।’
৯ রুশ সৈন্যের বিনিময়ে মুক্তি পেলেন মেলিটোপোলের মেয়র
৯ রুশ সৈন্যের মুক্তির বিনিময়ে ইউক্রেনের মেলিটোপোলের মেয়রকে মুক্তি দিয়েছে রাশিয়া। বুধবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট অফিসের এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
এর প্রায় এক সপ্তাহ আগে ইউক্রেন রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে মেয়র ইভান ফেডোরভকে অপহরণ করার অভিযোগ আনে। এক ভিডিওতে দেখা গেছে, মেয়রকে সিটি হল থেকে বের করে আনা হচ্ছে, রুশ সৈন্যরা তাকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে।
আরও পড়ুন: পুতিনকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ বলায় রাশিয়ার কড়া প্রতিক্রিয়া
বর্তমানে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন দক্ষিণ-পূর্বের একটি শহর মেলিটোপোলের বাসিন্দারা মেয়রের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করছে।
বুধবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট অফিসের প্রধানের মুখপাত্র দারিয়া জারিভনা বলেছেন, ফেডোরভকে বন্দিদশা থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে এবং রাশিয়া ‘তার বন্দি সৈন্যদের’ মধ্যে নয়জনকে বুঝে পেয়েছে।
মস্কো প্রাথমিকভাবে ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য নিয়োগপ্রাপ্তদের পাঠানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছিল। কিন্তু পরে রাশিয়ান সামরিক বাহিনী স্বীকার করেছে যে কিছু কর্মী আক্রমণে জড়িত ছিল এবং এমনকি ইউক্রেনের বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছিল।
আরও পড়ুন: ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ: ভিডিও লিঙ্কে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে দুই পক্ষ
কিয়েভ-মস্কো আলোচনা বাস্তবসম্মত হয়ে উঠছে: জেলেনস্কি
রুশ হামলায় কিয়েভে আগুন, পরিদর্শনে ইইউ এর ৩ নেতা
রাশিয়ার অব্যাহত বোমাবর্ষণের মধ্যেই ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে কিয়েভ সফরে যাচ্ছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত তিনটি দেশের নেতা।
এদিনও ভোর হওয়ার কিছুক্ষণ আগে একটি আবাসিক এলাকায় সিরিজ আঘাত হেনেছে রুশ বাহিনী। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ জানায় রুশ আর্টিলারি হামলায় কিয়েভজুড়ে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটে। হামলায় একটি ১৫ তলা অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে আগুন ধরে যায়। এসময় অন্তত একজন নিহত হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন ভকনটির ভেতরে আটকা পড়েছে।
এছাড়াও বিস্ফোরণে একটি আন্তঃনগর পাতাল রেল স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহরটির কর্তৃপক্ষ বিস্ফোরণের একটি ছবি টুইট করে বলেছে, এই স্টেশনগুলোতে আর ট্রেন থামবে না।
রাশিয়া কিয়েভের ওপর আক্রমণ ক্রমান্বয়ে বাড়াচ্ছে। পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভেনিয়ার নেতারা এর মধ্যেই ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে মঙ্গলবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিশনে কিয়েভ পরিদর্শনে যাবে।
চেক প্রধানমন্ত্রী পেত্র ফিয়ালা এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘এই সফরের উদ্দেশ্য ইউক্রেন ও এর স্বাধীনতার প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্ব্যর্থহীন সমর্থন প্রকাশ করা।’
তার সঙ্গে যোগ দেবেন স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী জেনেজ জানসা, পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতেউস মোরাউইকি এবং জারোস্লো কাকজিনস্কি, যিনি পোল্যান্ডের নিরাপত্তার জন্য উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং রক্ষণশীল শাসক দলের নেতা।
আরও পড়ুন: আলোচনা চলমান সত্ত্বেও ইউক্রেনে রুশ হামলা অব্যাহত
সম্প্রতি কিয়েভের উপকণ্ঠে লড়াই তীব্র হয়েছে এবং রাজধানীর চারপাশে বিক্ষিপ্তভাবে বিমান হামলা চালানো হচ্ছে। মঙ্গলবার ভোরে আর্টিলারি হামলায় পশ্চিম কিয়েভের স্ব্যাতোশিনস্কি জেলা ও ইরপিনের শহরতলির সংলগ্ন এলাকা বিধ্বস্ত হয়েছে। কিয়েভের উত্তরের পডিলস্কি জেলার একটি ১০ তলা অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং গোলাবারুদের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কিয়েভের মেয়র ওলেক্সি কুলেবা বলেছেন, রুশ বাহিনী ইরপিন, উত্তর-পশ্চিম কিয়েভ শহরতলির হোস্টমেল এবং বুচাতেও রাতে হামলা চালিয়েছে।
একটি ইউক্রেনীয় টেলিভিশনে কুলেবা বলেন, অনেক রাস্তা (ওই এলাকার) ইট ও ইস্পাতের টুকরোর স্তূপে পরিণত হয়েছে। নাগরিকেরা কয়েক সপ্তাহ ধরে বেসমেন্টে লুকিয়ে আছে এবং এমনকি হামলার ভয়ে বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছে।
গত ১০ দিন বা তারও বেশি সময় ধরে প্রাণঘাতী হামলায় মারিউপোল শহরের নাগরিকদের বাড়িঘর এবং অন্যান্য ভবনকে চূর্ণ করে দিয়েছে। এবং মানুষ খাবার,পানীয়,বিদ্যুৎ ও ওষুধের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে৷
সোমবার শহরটির কাউন্সিলর জানিয়েছে, ১৬০টি বেসামরিক গাড়ির একটি কনভয় একটি মানবিক পথ দিয়ে নাগরিকদের বন্দর নগরী মারিউপোল থেকে অন্যত্র নিয়ে গেছে।
বেসামরিক লোকদের সরিয়ে নেয়ার এবং চার লাখ ৩০ হাজার নাগরিকের এই শহরটিতে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেয়ার পূর্ববর্তী প্রচেষ্টা যুদ্ধের কারণে ব্যর্থ হয়েছিল।
চেচনিয়ার রাশিয়ান অঞ্চলের ক্রেমলিন-সমর্থিত নেতা একটি মেসেজিং অ্যাপে বলেছেন যে চেচেন যোদ্ধারা মারিউপোল আক্রমণের নেতৃত্ব দিচ্ছে।
আরও পড়ুন: রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় অগ্রগতির ইঙ্গিত ইউক্রেনের
এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত সামরিক অবস্থা বাড়াতে এবং যুদ্ধের জন্য ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী পুরুষদের দেশে রাখতে চাইছেন।
অন্যদিকে,রাশিয়ান সামরিক বাহিনী বলেছে যে পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রিত শহর ডোনেৎস্কে ইউক্রেনীয় বাহিনীর ছোড়া একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ২০ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। তবে এ তথ্যটি যাচাই করা যায়নি।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ২১তম দিনে রাশিয়া ও ইউক্রেনের নীতিনির্ধারকেরা দ্বিতীয় দিনের মতো আলোচনার পরিকল্পনা করছে। সোমবার ব্যর্থ হওয়ার পরে মঙ্গলবার পুনরায় রুশ ও ইউক্রেনীয় আলোচকদের মধ্যে আলোচনা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। উভয় পক্ষ আলোচনার বিষয়ে কিছু আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সহযোগী মাইখাইলো পোদোলিয়াক বলেছেন,‘শান্তি, যুদ্ধবিরতি, অবিলম্বে সেনা প্রত্যাহার এবং নিরাপত্তা গ্যারান্টি’ নিয়ে আলোচনা হবে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর থেকে জাতিসংঘ কমপক্ষে ৫৯৬ জন বেসামরিক নাগরিক মৃত্যুর কথা জানিয়েছে। যদিও তাদের ধারণা প্রকৃত মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
ইউক্রেন দাবি করেছে, মারিউপোলের যুদ্ধে ইউক্রেনীয় বাহিনী ১৫০ জন রুশ সেনাকে হত্যা করেছে এবং দুটি রাশিয়ান ট্যাঙ্ক ধ্বংস করেছে।
ইতোমধ্যে ২৮ লাখেরও বেশি ইউক্রেনীয় পোল্যান্ড এবং অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোতে পাড়ি জমিয়েছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইউরোপের বৃহত্তম শরণার্থী সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধের মাধ্যমে।
আরও পড়ুন: রাশিয়ার সাথে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি জেলেনস্কির
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় অগ্রগতির ইঙ্গিত ইউক্রেনের
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চতুর্থ দফা শান্তি আলোচনা সোমবার সকালে শুরু হয়েছে। এদিকে আলোচনার শুরুর পর থেকে এ নিয়ে ইউক্রেনীয় জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তারা রূপরেখা দিচ্ছেন।
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের উপপ্রধান ইহোর জোভকভা বিবিসিকে বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন মস্কোর অবস্থান আগের চেয়ে এখন আরও গঠনমূলক।
রবিবার তিনি রেডিও ফোরে বলেন, ‘আমাদের আলটিমেটাম, রেড লাইন বা আত্মসমর্পণ করতে বলার পরিবর্তে তারা (রাশিয়া) এখন গঠনমূলক আলোচনা শুরু করবে বলে মনে হচ্ছে।’
এদিকে ইউক্রেনীয় আলোচক মাইখাইলো পোডোলিয়াক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, ‘চতুর্থ দফা আলোচনায় যুদ্ধবিরতি, রুশ সেনা প্রত্যাহার ও ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব দেয়া হবে।’
পোডোলিয়াক জানিয়েছেন, মস্কোর তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হওয়া পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের ধরন কেমন হবে সে বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে অস্বীকার করবে দেশটি।